নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০০৬ সালে আল্লাহতায়ালা হজ্জ পালনের সৌভাগ্য দিয়েছিলেন। হজ্জ পালনকালীন সৌদি আরবের মক্কা মদিনা ও জেদ্দা শহরে থাকতে হয়েছে। হজ্জ পালনের পাশাপাশি পবিত্র মক্কা ও মদিনা নগরীর দর্শনীয় ও ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোর কিছু কিছু দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। ৫ ডিসেম্বর রাত ৩টা দশ মিনিটে বিমানের চার্টার করা এয়ার আটলান্টিসে করে পবিত্র হজ্জ পালনের উদ্দেশ্য রওয়ানা হই। ৪ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে হাজী ক্যাম্পে প্রথমে রিপোর্ট করতে হয়। বিভিন্ন ফ্লাইটের হাজীগন তাঁদের প্রয়োজনীয় ফর্মালিটিজ শেষ করে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছেন। এখানেই বোর্ডিং কার্ড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র দেয়া হয়। বাসে করে রাত ১টার দিকে হাজিক্যাম্প থেকে বিমান বন্দরে আমরা আসলাম সময় মত বিমান জেদ্দার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে গেল। ৭ ঘন্টা দশ মিনিট উড়ে বিমান জেদ্দার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করল। জেদ্দা বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রীজ দিয়ে নেমে ওয়েটিং রুম এক এ অপেক্ষার পালা। আসার পর হজ্বের নিয়ম কানুন এর বই ও ক্যাসেট দিল। ওজু ও বাথরুমের ব্যবস্থা আছে ওয়েটিং রুমে। এখানে ফ্রেস হলাম ও ওজু সারলাম।
জেদ্দা বিমানবন্দর
এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন ফর্মালিটি শেষ করার জন্য বসেই আছি। এসির ঠান্ডা আস্তে আস্তে বাড়ছে শীতে কাঁপছি। কিছু লোকজনকে পাশের রুমে নিয়ে যায় সেখানে ধাক্কাধাক্কি, খুব ধীরে কাজ করছে আরবের ইমিগ্রেশন অফিসাররা, যেন কারো কোন তাড়া নেই। বসে থাকতে থাকতে বিরক্তি ধরে গেল। প্রায় ৩/৪ ঘন্টা পর পাশের রুমে গেলাম। ইমিগ্রেশন অফিসাররা খুবই আস্তে আস্তে কম্পিউটারে নামের বানান করে করে ইনফরমেশন এন্ট্রি করছে। এভাবে এখানেই ১২টা ২৫ এর মত বেজে গেল। ইমিগ্রেশন চেক শেষ করে যেন হাঁপ ছাড়লাম। বাইরেও বিশাল ব্যাপার। বিভিন্ন দেশের হাজীদের জন্য আলাদা জায়গা। পতাকা দেয়া আছে। বাংলাদেশেরটাই বেশী অনুন্নত মনে হয়। জেদ্দার বাতাসে শ্বাস নিলাম। রোদের বেশ তেজ তবে ছাতার মত ছাদের নীচে ছায়া আছে এয়ারপোর্টের এরিয়াতে। এখানেও মালামাল নিয়ে বিশাল লাইন,আমাদের ট্রলি ব্যাগ বেশ সাহায্য করেছে। জিনিষপত্র যত কম নেয়া যায় ততই ভাল মনে হয়েছে। একটার সময় মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার জন্য বাসে উঠলাম। এসি বাস,বিয়াল্লিশ জন যাত্রী সব একজন মুয়াল্লেমের সাথে যাচ্ছি। ১-২০ মিনিটে বাস মদিনার পথে রওয়ানা হলো।
দুপুর ৩টা ১০ মিনিটে ওয়াজিসিতারা নামে এক জায়গায় হোটেলের সামনে বাস থামল। ১৫ রিয়েল দিয়ে ভাত, রুটি, মাংস, ডাল খেলাম। ওজু করে আছর কছর পড়লাম। অনেক বাঙ্গালী আছে হোটেলে। ত্রিশ মিনিট যাত্রা বিরতির পর আবার মদিনার দিকে রওয়ানা হলাম। মদিনার পথে চলতে চলতে দুপাশে মরু এবং কাল কাল পাথর দেখলাম মনে হলো পাথরের চাষ হচ্ছে, মাটিতে বড় বোল্ডার থেকে ছোট আকৃতি সব ধরণের পাথর এটাও আল্লার এক বিচিত্র সৃষ্টি। সন্ধ্যা ৬টা বিশ মিনিটে আবিয়েরমাস নামের ছোট্ট জনপদে মাগরেব এর নামাজ পড়লাম। আসতে আসতে বাস থেকে পূর্ণিমার চাঁদ ও সন্ধ্যার লাল আভা এক সাথে দেখছিলাম। এক নাইজেরিয়ান আমার সাথে জামাতে নামাজ পড়ল। সন্ধ্যা ০৭টা ৩০ মিনিটে পিলগ্রিম অফিস মদিনাতে বাস থামল। এশার নামাজ পড়লাম। বেশ সুন্দর পরিবেশ। অনেক গাড়ী পার্কিং এর ব্যবস্থা। হাত মুখ ধোয়ার ওয়াশিং রুম,মসজিদ, ক্যান্টিন,বসার জায়গা সব আছে এখানে। ২ ঘন্টা এখানে থাকতে হলো। ২০৩০ এ ও গাড়ীতে বসে আছি। তারপর আবার যাত্র শুরু। পথের মাঝে বাস একটা সাপ্লাই ডেপোতে থামল। এক প্যাক খাদ্য ও এক বোতল পানি দিল। বেশ মজা দুধ,জুস,খেজুর ও পেটিস এর মত। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ৩০০০ কিঃমিঃ দূরে। ২১৩৫ মিনিটে মদিনার খালেদ বিল্ডিং এর ৭ নং রুমে আমাদের ৩ জন এর জায়গা হলো। ছোট তবে ভাল রুম এটাচ বাথ ইংলিশ কমোড, ঠান্ডা, গরম পানির ব্যবস্থাসহ। রাতে ভাত,ডাল,মুরগীর মাংস দিয়ে ডিনার করলাম।
আল্লাহর রহমতে পরদিন সকাল ০৪টা ৩০ মিনিটে মসজিদে নবীতে গেলাম সুবহানাল্লাহ। জীবনের অনেক বড় একটা স্বাদ আল্লাহ পুরণ করলেন। তাহাজ্জুদ ও ফযরের নামাজ পড়লাম। সকালে বাইরে চা খেলাম। রাস্তার পাশে দোকানে ১ রিয়েল দিয়ে গরম পানি ও টি ব্যাগ দিয়ে মজার চা বানায়। দোকানীরা প্রায় সবাই পাকিস্তানী। ফুটপাতে কিছু চট্টগ্রামের লোক আছে,ব্যবসা করছে এই মওশুমে। ১১ টায় যোহরের নামাজ পড়তে গেলাম। আজ মসজিদে নববীতে রিয়াদুল জান্নাতে দুই রাকাত নামাজ পড়লাম। আলহামদুলিল্লাহ। জুতো ফেলে এলাম মসজিদে। ৪৫ রিয়েল দিয়ে মোবাইল ফোনের জন্য সিম কিনলাম। ফল কিনলাম,কলা কেজি ৫ রিয়েল,আপেল ৬ রিয়েল। বিকেলে চা খেলাম। মাগরেবের পর মসজিদে নববীর চারপাশে চক্কর দিলাম। রওজামোবারক এর সবুজ গম্বুজ এর সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া করলাম। এখানে টয়রেটের বেশ ভাল ব্যবস্থা, মাটির নীচে ২/৩ তলা, কাপড় ঝোলানো যায়।,গোসলের ও ব্যবস্থা আছে । এশার পর কেনা কাটা করলাম কিছুক্ষণ। একটা আরবী পাঞ্জাবী কিনলাম ২০ রিয়েল দাম স্থানীয় ভাষায় তোপ বলে। একটা আফগানীর দোকান থেকেকেনাকাটা হলো, ১০০% ঠকেছি এই দোকানে কিনতে এসে,খারাপ জিনিষ গছিয়ে দিয়েছে, না বুঝলে এমনই হয়। রাতে দুম্বার মাংস, আলু ভর্তা দিয়ে খেলাম। মদীনা শরীফে ওয়াক্তের নামাজের পর জানাজার নামাজ হয়। সবাই শরীক হয় এই নামাজে।
মসজিদে নববী
মসজিদে নববীতে এক ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব সহীহ হাদিসের বর্ণণা অনুযায়ী এক হাজার ওয়াক্তের চেয়ে বেশী। কোন কোন রেওয়ায়াতে একে ৫০ হাজার ওয়াক্ত নামাযের সমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মদীনা নবীর শহর। আরবীতে বলে মদিনাতুল নবী। আর মদীনার প্রানকেন্দ্র হলো মসজিদে নববী। মস্িজদে নববীর ভেতরে স্বয়ংক্রিয় ছাদের ব্যবস্থা আছে যা দিনের বেলা খুলে দেয়া হয় এবং রাতে তা বন্ধ করা হয়। ছাতার মত আস্তে আস্তে তা খুলে গিয়ে নীচের মুসল্লিদের ছায়া দেয়। মসজিদে নববীতে মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজ পড়ার জায়গা আছে। ভেতরে কিছুদুর পরপর পড়ার জন্য কুরআন শরীফ রাখা আছে। জমজম পানি খাবার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা আছে এর ভিতর। ছাদেও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে। এক্সেলেটর ও সিড়ি দিয়ে ছাদে যাওয়া যায়। বহু লোক ছাদেও নামাজ আদায় করেন।
মসজিদে নবী, মদিনা
মসজিদের ভেতর গেলেই মনটা শান্ত হয়ে যায়। মদিনা শান্তির শহর ও মসজিদে নববীতে শান্তির খোঁজ পাওয়া যায়। ভোরবেলা তাহাজ্জুদের নামাজ জামাতে হয়। তারপর ফজরের নামাজ শেষ রাতেই লোকজন মসজিদের দিকে রওয়ানা হয় ও মসজিদ নামাজীতে ভরে যায়। হাদিসে আছে নবী করিম (সঃ) ইরশাদ করেছেন ‘যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে এবং একটি নামাজও বাদ দিবে না তার জন্য দোজখ থেকে মুক্তির ছাড়পত্র লিখে দেয়া হবে’। মসজিদে নববীতে জামাতে নামাজ পড়ার বিশেষ চেষ্টা রাখতে হবে। এখানে অন্যান্য ইবাদত ও কুরআন তেলাওয়াতের সুন্দর ব্যবস্থা আছে ও হাজার হাজার মুসল্লী এখানে ইবাদাতে মগ্ন থাকেন।
মসজিদে নবী, মদিনা
মসজিদে নববীতে ঢোকার সাথে সাথে এক ধরনের ভালোলাগাতে চোখে পানি চলে আসে। মদীনাতে থাকার সময় রসুল (সঃ) এর রওজা জিয়ারাত এর সৌভাগ্য হয়েছিল। প্রানভরে জিয়ারত করে রওজার সামনের কাতারে দাড়িয়ে একবার এশার নামাজ পড়তে পেরেছিলাম। রওজা মোবারক জিয়ারতের জন্য মানুষের ভিড় লেগে থাকে তবে অনেক সময় ভাল সুযোগ চলে আসে ও সহজে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকা যায়। সবুজ গম্বুজের নীচে রসুল (সঃ) এর রওজা মোবারক পাশে হযরত ওমর (রাঃ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ) শায়িত আছেন। রওজার সামনে আসলে মন নরম হয়ে যায়,চোখে নিজ থেকেই পানি চলে আসে। দোয়া শেষে মুসল্লীদের কে অন্য দরজা দিয়ে আস্তে আস্তে বের হয়ে যেতে বলে নিরাপত্তা কর্মীরা। ঢোকা এবং বের হওয়া বেশ সুশৃংখল ভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয়। মহিলাদের জন্য আলাদা ভাবে পার্টিশান লাগানো হয় এবং তখন ভেতরের সব পুরুষকে নিরাপত্তা পুলিশ বের করে দেয়। রওজার পেছনেই আছে ‘আসহাবে সুফফা’ এখানেও অনেক মুসল্লী বসে আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে দোয়া করছেন,নামাজ পড়ছেন।
সকালে ফজরের নামাজের পর রওজামোবারক জেয়ারত করলাম। আমিন। এরপর মসজিদ এর উত্তর থেকে দক্ষিনে হাটলাম। মোটামুটি পরিচিত হচ্ছি ইনশাআল্লাহ। নতুন একটা পথে রুমে এলাম। রুটি,ডাল, চা ছিল নাস্তায়। আজ ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে মসজিদে গেলাম। তাহাজ্জুদ পড়া হচ্ছে। দুপুর ১১ টার সময় মূল মসজিদে গেলাম। নামাজ শেষে জানাজার নামাজ হলো। কই মাছ দিয়ে লাঞ্চ সারলাম সাথে সব্জী। নতুন ড্রেস পড়লাম। আছরের পর রুমে এসে গোসল করলাম। তারপর রাস্তার অন্য পারের দোকান গুলো দেখলাম। কেএফসির দোকান পেলাম,মসজিদের কাছাকাছি। এখানে হোটেলগুলোর নীচে পশ মার্কেট সব ফাইভ স্টার হোটেল তুর্কি,মরক্কোর লোকজনে ভর্তি। মাগরেব এর পর বাসায় এসেই আবার মসজিদে যেতে একটু দেরী হলো। ঠিক জায়গায় নামাজ না পড়ে একটু ঠান্ডা ফ্লোরে পড়তে হলো। নামাজ পড়ে হোটেলে ফিরে এলাম। ভোরে বেশ ঠান্ডা। ৪টা ৩০ এ মসজিদে এলাম। সকালে তাহাজ্জুদ ও ফজর পড়লাম। দুপুরে জুম্মার নামাজ, খুতবা,দোয়া হয় তারপর নামাজ। নতুন এলাকা দেখলাম আজ দুপুরে। মাগরেব এর পর রিয়াজুল জান্নাতে গেলাম আজ এশা পড়লাম রিয়াজুলে জান্নাতে। আলহামদুলিল্লাহ। এরপর রওজা জেয়ারত করলাম। মসজিদের ভেতরে মিম্বর দেখলাম। আজান দেয়া দেখলাম। ৩ জনের কোরবানী ও দম বাবদ ৭০০ সৌদি রিয়েল করে ২১০০ রিয়েল দিলাম নুর মোহাম্মদ কাকাকে, তিনি মক্কাতে ব্যবসা করেন । রাতে ১১ টার দিকে ঘুমালাম।
নুর মোঃ কাকা চলে গেল। রাতে এশার পর বের হলাম। ঘোরাঘুরি করে ১০টা ৩০ মিনিটে ইন। চাবির রিং,স্লিপিং ড্রেস ও জায়নামাজ কিনলাম নতুন এলাকা থেকে। দিনের বেলা মসজিদ ও হোটেলএ আসা যাওয়ায় সময় কেটে যায় তাই বাইরে যাওয়া হয় না। রাতে বাইরে গিয়ে নতুন দোকান দেখলাম। খেজুর এর মার্কেট আছে। মদিনার খেজুর বেশ বিখ্যাত, আজোয়া নাম কেজি প্রতি সর্বনিম্ন মূল্য ৪৫ থেকে ৬০ রিয়েল । সকাল ৮টার সময় আমরা মদিনার দর্শনীয় স্থান গুলো দেখতে বাসে করে রওয়ানা হলাম। বাসে কাফেলার সাথেও যাওয়া যায়, তবে ট্যাক্সি ক্যাব নিয়ে গেলে স্বাধীনভাবে সব জায়গা ঘুরে দেখা সম্ভব হয়। ট্যাক্সি ড্রাইভার এবং স্থানীয় বাংলাদেশীরা এব্যাপারে বেশ সহযোগিতা করে। প্রথমে মসজিদে কুবাতে গেলাম।
মসজিদে কুবা
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) মদিনায় এসে শহরের প্রবেশ দ্বারে প্রথম কুবায় নামাজ পড়েন। পরে এখানে মসজিদ বানানো হয়। এই মসজিদে দুই রাকাত নামাজ পড়ে বাসে এসে বসার পর আবার যাত্রা।
মসজিদে কুবা
তারপর কিবলাতাইন মসজিদ এ বাস থামল, এই মসজিদে একই নামাজ দুই কিবলা মুখী হয়ে পড়া হয়েছিল। নামাজ চলাকালীন ওহি পাওয়ার পর রসুল (সঃ) আল আকসা থেকে মুখ ঘুরিয়ে মক্কামুখী হয়ে নামাজের বাকী অংশ শেষ করেন।
কিবলাতাইন মসজিদ
এই জন্য মসজিদের নাম কিবলাতাইন বা দুই কিবলা মসজিদ রাখা হয়। মুল মসজিদ অক্ষত রেখে চারিদিকে মসজিদ বাড়ানো হয়েছে। মসজিদের বাইরে খেজুর ও অন্যান্য ফল বিক্রি হচ্ছে। কিছু কেনাকাটা করলাম। ছবি তুললাম কাফেলার কজন হাজী ভাই এর সাথে।
ওহুদ পর্বত এবং হযরত হামযা (রাঃ) এর কবর
ওহুদের মাঠের কাছে পার্কিং এ বাস থামার পর বেশ কিছুদুর হেটে যেতে হয়। প্রথমে হযরত হামজা (রাঃ) এর মাজার। বহু হাজী মাজার এ দোয়া করেন আল্লাহর কাছে ওহুদ প্রান্তরের শহীদদের জন্য। সামনে দুই চুড়া নিয়ে ওহুদের পাহাড় মাঝামাঝিতে কিছুটা নীচু। এটাই ওহুদ এর প্রান্তর। বালুময়,সবুজের সমারোহ নেই। হামজা (রাঃ) মাজার জেয়ারত করে কয়েকটা ছবি তুলে আবার বাসে ফিরে এলাম।
ওহুদ এলাকা
আছরের পর জান্নাতুল বাকী যেয়ারত করলাম । এখানে কবরস্থানে চট্টগ্রামের কিছু লোকজন চাকুরী করে । মসজিদে নববীর পাশেই জান্নাতুল বাকী কবরস্থান এখানে হযরত ফাতেমা (রাঃ) মা হালিমা ও হযরত ওসমান (রাঃ) সহ অগনিত সাহাবা (রা) শায়িত রয়েছেন। হযরত ওসমান (রাঃ) এর কবর এখানে। এছাড়াও আরো অনেক সাহাবীদের কবর আছে । সুন্দর ভাবে রাস্তা করা আছে । কবর যেয়ারতের জন্য দোয়া ইত্যাদি ৫/৬ টা ভাষায় আছে । দুর্ভাগ্য বাংলায় নেই । টার্কি, পাকিস্তানী, ইন্দোনেশিয়ার ভাষা আরো ২/১ টা ভাষায় বড় বোর্ড আছে । কিছু কিছু মানুষ এই কবরস্থানের মাটি প্যাকেটে করে নিয়ে যায় । নিজের কবরে দিবে বলে । পুলিশ ধরতে পারলে ঢেলে ফেলে । বিশাল এলাকাশ, অনেক নতুন গর্ত খোঁড়া আছে মৃতদের দাফনের জন্য । মাঝে মাঝে বাতাস আসে. ধুলা উড়ে। কবর যেয়ারত করলাম কিছুক্ষণ হাঁটলাম কবরগুলোর পাশের সরু রাস্তায় । একসময় এই শায়িত ব্যক্তিরা পৃথিবীতে আমার মতই চলতেন । আজ তাঁঁরা চির নিদ্রায় । আল¬াহ তাঁদের শান্তি দিক। দিল কেঁদে উঠে এই জায়গায় এলে। এখানে আসতেও প্রচন্ড ভীড়, আছরের পর জিয়ারতের জন্য খুলে দেয়, পরে আবার বন্ধ করে দেয়া হয় । মহিলারা এখানে ঢুকতে পারে না। ঢোকা ও বাইরে যাবার দরওয়াজা আলাদা । আজ একদম একা একা ঘুরে গেলাম । শেষ ঠিকানাইতো এই কবর । হে আল¬াহ ইমান আমলের সাথে মৃত্যু দিও , কষ্ট বিহীন মৃত্যু দিও । আমিন । প্রথম দুদিন এর কাছাকাছি ছিলাম কিন্তু খুজে পাইনি সঠিক লোকেশন। এর বাইরে মার্কেট,ফেরিওয়ালারা বিভিন্ন ওয়ানটাইম জিনিষ বিক্রি করছে সব চীনের তৈরী । আজ মসজিদে নববীর ছাদে নামাজ পড়লাম । এক্সসেলেটরে ও সিড়ি দিয়ে যাওয়া যায় । আছর থেকে এশা পর্যন্ত মসজিদেই ছিলাম হোটেলে আসিনি ।
সোম বার ১১ ডিসে¤¦র ২০০৬, আজ আছরের নামাজের পর ঘুরতে গেলাম । সোয়ারমা ও চা খেলাম চার রিয়েল দিয়ে । সন্ধ্যায় মসজিদের ছাদে মাগরেবের নামাজ পড়লাম। রাতে আল্লাহর রহমতে আসহাবে সুফফা ও মসজিদে নববীর রওজা ও রসুল (সাঃ) এর বাড়ীর পাশে (সংরক্ষিত এলাকা) এশার নামাজ ও যেয়ারত করলাম । আজ সকালে আল্লাহর কাছে এখানে নামাজ পড়ার সুযোগের জন্য প্রার্থনা করে ছিলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত যেতে পারিনি পরে আল্লাহ মিলিয়ে দিল ।
মঙ্গল বার ১২ ডিসে¤¦র ২০০৬ , আছরের পর ছবি তুললাম । বার্গার ও পেপসি খেলাম ৫ রিয়েল দিয়ে । কাজু বাদাম কিনলাম । রওজার ছবি ও জান্নাতুল বাকীকে পেছনে রেখে ছবি তোলা হলো । এশার পর রিয়াজুল জান্নাত এ গেলাম । মুল মসজিদে নববীর মি¤¦র এর পাশ থেকে রসুল (সঃ) এর রওজা মোবারক পর্যন্ত জায়গাটা জান্নাতের টুকরা, এর কার্পেটের রং অন্যান্য জায়গার কার্পেটের রং এর চেয়ে একটু হালকা । প্রথমে মানুষের ভীড়ে কিছু বোঝা যায় না ,পরে ইন্দোনেশিয়ার একজন হাজীকে জিজ্ঞাসা করলাম । তিনি আমাকে জায়গাটাতে নিয়ে এলেন । প্রথমে বুঝতে পারিনি । পরে দেখি আমি ঠিকই চলে এসেছি সোবহানাল্লাহ । ২ রাকাত নামাজ পড়লাম । অনেকে বসেই আছে আল্লাহর রহমতের আশায় । কষ্ট করে জায়গা পেতে হয় । তবে হাজীরা সাহায্য করে ২ রাকাত নামাজ পড়ার জন্য । পুলিশ এসে মাঝে মাঝেই জায়গা খালি করে । বিশেষ করে মহিলাদের আসার একটা সময় আছে । তখন পর্দা দিয়ে তা ঘিরে দেওয়া হয় । মহিলাদের মসজিদ থেকে আসার ব্যবস্থাও করা হয় । সেই পর্দার প্রাচীর দিয়ে । দ্বিতীয় দিনেই আল্লাহর রহমতে রিয়াদুল জান্নাতে গেলাম । আলহামদুলিল্লাহ । রাতে নেকষ্ট ডে মুভ টু মক্কার ব্রীফ হলো । ৭ দিন আল্লাহর রহমতে বরকতে কাটল আমিন । ফ্রেন্স, আফ্রিকান হাজীর সাথে কথা হলো । এবার ২৭,০০০ মুসলিম হজ্জে এসেছে ফ্রান্স থেকে।
আজ ১৩ ডিসে¤¦র ২০০৬- বুধবার, রিয়াজুল জান্নাতে ২ রাকাত নফল পড়লাম । তারপর রসুল (সাঃ) এর রওজার সামনের কাতারে এশার জামাত পড়লাম । আমিন । রাত ৯ টা ৩০ মিনিটের দিকে বাস মক্কার উদ্দেশ্যে ছাড়বে । সকালে রসুল (সাঃ) এর রওজা থেকে বিদায় নিলাম । রাতেও সুযোগ এলো । রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটের দিকে জুলহোলাইফা মসজিদে এলাম । মদিনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে এই মসজিদে গোসল ও ওজু করে ইহরাম এর কাপড় পড়তে হয় । দুই রাকাত ইহরাম এর নামাজ ও পড়া লাগে । রাতের বেলা এখানে এসে পৌছালাম । মদিনা থেকে গোসল করে এসেছিলাম। এখানে ওজু করলাম। তারপর মসজিদের ভেতর ইহরাম এর কাপড় পড়লাম । বাকী কাপড় চোপড় খুলে রাখলাম, নতুন অভিজ্ঞতা । মহিলাদের জন্য আলাদা বাবস্থা আছে । বিশাল এলাকা, বাস পার্কিং লটে রাখা । সবাই যার যার কাজ শেষ করে হজ্জ এর নিয়তে মক্কার উদ্দেশ্যে একত্র হয়ে বাসে উঠে বসলাম । ওমরার পর ইহরাম খুলে আবার নতুন করে ইহরাম পরবর্তীতে পড়তে হবে । মসজিদের বাইরে চা বিক্রি হচ্ছে মানুষ কিনে খাচ্ছে। আসলে না দেখলে বোঝা যায় না এই আরবে হজ্জকে কেন্দ্র করে কি বিশাল আয়োজন চলছে । রাত ১১ টা ৩০ এ মক্কার পথে যাত্রা শুরু হবে ইনশায়াল্লা । লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক । হজ্জের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেলো । ফি আমানিল্লাহ ।
২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪২
শোভন শামস বলেছেন: ইনশাআল্লাহ যেতে পারবেন। আমিন
২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬
ইয়ার শরীফ বলেছেন: আল্লাহ আমাদের সবাইকে ,এই তৌফিক দান করুন ...
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪০
শোভন শামস বলেছেন: ইনশাআল্লাহ যেতে পারবেন। আমিন
৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৫৮
ইলি বিডি বলেছেন: আল্লাহ আমাদের সবাইকে ,এই তৌফিক দান করুন ..সুন্দর বর্ণনা।
১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১০
শোভন শামস বলেছেন: ইনশাআল্লাহ যেতে পারবেন। আমিন
৪| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০৭
লিখেছেন বলেছেন: আল্লাহ আমাদের সবাইকে ,এই তৌফিক দান করুন ...
১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১০
শোভন শামস বলেছেন: ইনশাআল্লাহ যেতে পারবেন। আমিন
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১১
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আল্লাহ আমাদের সবাইকে ,এই তৌফিক দান করুন ...