নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আফ্রোদিতির সাইপ্রাসে

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২০

সাইপ্রাস ভূমধ্যসাগরের সবুজাভ নীল জলের বুকে ছোট্ট একটা ভূখন্ড । এটা ভূমধ্যসাগরের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ এবং এর আয়তন ৯২৫১ বর্গ কিলোমিটার। দেশটা ইউরোপীয় পর্যটকদের জন্য ভূসর্গ। দলবেঁধে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশসমূহ, রাশিয়া ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে অনেক ভ্রমন পিপাসু লোকজন সেখানে ভীড় জমায়। সাইপ্রাসে পোর্ট অব এন্ট্রি ভিসা । সাইপ্রাস সময় বিকাল ৩ টায় লারনাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরন করে ইমিগ্রেশনে গেলাম , পাসপোর্ট চেক করে এক মাসের ট্যুরিষ্ট ভিসা দিল । এয়ার পোর্টে কোন ঝক্কি ঝামেলা নেই। সবাই প্রায় ইউরোপীয় পর্যটক। পাসপোর্ট দেখেই সীল দিয়ে দিচ্ছে। এশীয় বলতে আমি একাই। জনাকয়েক কালো চামড়ার লোক দেখলাম। বিমান বন্দরের ভিতর ব্যাংক এর শাখা আছে। পর্যটকদের জন্য আছে পর্যটন কর্তৃপক্ষের কাউন্টার।সেখান থেকে সাইপ্রাস সম¦ন্ধে জানার জন্য ম্যাপ ও বিভিন্ন বই বিনামূল্যে দেয়া হয় । লারনাকা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ফর্মালিটিজ শেষ করে বাইরে এলাম। ঝকঝকে দুপুর,সাথে সাগরের নির্মল বাতাস।



লিমাসল শহরে

বিমান বন্দর থেকে লারনাকা শহরে যাওয়ার জন্য একমাত্র মাধ্যম হলো ট্যাক্সি । ট্যাক্সি বুথ আছে । ৩ পাউন্ড দিয়ে শহরের যে কোন জায়গায় যাওয়া যায়। সাইপ্রাসের লিমাসল শহরে থাকব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তাই বিমান বন্দরের বাইরে এসে শহরে যাওয়ার জন্য একটা ট্যাক্সি নিয়ে ট্যাক্সি ষ্ট্যান্ডে এলাম । এখানে গ্র“প ট্যাক্সিতে করে অন্যান্য শহর গুলোতে যাওয়া যায়। ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর লিমাসলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। লারনাকা থেকে লিমাসল প্রায় ৬৯ কিঃ মিঃ দূরত্ব এবং সেখানে যাওয়ার জন্য বেশ ভাল হাইওয়ে আছে। এরকম প্রত্যেকটা শহরে যাওয়ার জন্য রাস্তা বেশ সুন্দর । লারনাকা শহর থেকে বের হওয়ার পর ভূমধ্যসাগরের পাশ ঘেষে মোটরওয়ে চলে গেছে, বামে সাগর ডানে পাহাড় ও উচু নিচু এলাকা, বসতি তেমন একটা নেই । পুরাকীর্তি আছে ঐ সব পাহাড়ী এলাকায় । সেজন্য মোটরওয়ে থেকে রাস্তা ডানে বা বামে চলে গেছে সেসব জায়গাতে । এ সব রাস্তা কোনটা পাকা, কোনটা এখনও মেঠো পথে, তবে গাড়ী যেতে পারে ও রাস্তা উন্নয়নের কাজ চলছে । ঐতিহাসিক ঘটনা সমৃদ্ধ এলাকা বা ধ্বংসাবশেষ তারা বেশ যতেœর সাথে সংরক্ষণ করছে । বামের নীল সাগর এর দৃশ্যই আমার মন টানছিল । এখানে সাগর বেলা প্রশস্ত না তবুও এদেশ অজস্র পর্যটক টেনে আনছে আর আমাদের প্রাকৃতিক সৈকত কক্সবাজার সেই তুলনায় পর্যটক শূণ্য বলা চলে। পর্যটনকে এরা একটা সুন্দর শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে এবং দেশের সমৃদ্ধির সিংহ ভাগ অবদান রেখেছে এই পর্যটন শিল্প।



লিমাসল শহরে

ট্যাক্সি দ্রুত গন্তব্যের দিকে চলছে। পর্যটকরা সাধারণত গ্র“প টেক্সিতে যাতায়াত করে না। স্থানীয় লোকজনের জন্য এই টেক্সি ব্যবস্থা। গ্রীক ভাষায় সবাই কথা বলছে, আচরণ বন্ধু সুলভ। দুপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে চল্লিশ মিনিটের মধ্যে আমরা নিমাসলে পৌঁছে গেলাম। আগেই আমি হোটেল ঠিক করে রেখেছিলাম । ট্যুরিষ্টদের জন্য এখানে অনেক তারকা খচিত হোটেল, তারকা বিহীন কিংবা এপার্টমেন্টস এবং মিতব্যয়ী ভ্রমনকারীদের জন্য সস্তার রেষ্ট হাউস আছে । বড় হোটেলগুলোর সামনে সাগরের সৈকতে রৌদ্রøান এর ব্যবস্থা আছে । তবে যে কেউ ইচ্ছা করলে সেখানে যেতে পারে এবং ছাতা বা বেড ভাড়া করে সময় কাটাতে পারে। এ সব সৈকতে প্যারা গ্লাইডিং, ওয়াটার স্কী ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের জলক্রীড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।



সাইপ্রাসের অকৃপণ সূর্যের আলো পোহাতে সুইডেন, নরওয়ে, জার্মান ইত্যাদি নানা ইউরোপীয় দেশের পর্যটক এসে থাকে। টাকার জন্য এরা মোটেও চিন্তিত না। এদের লক্ষ্য হচ্ছে বিনোদন ও আরাম করে সময় কাটানো। ভাল একটা সিংগেল রুম পেয়ে গেলাম। রুমের সামনে ব্যালকনি দিয়ে তাকালে দুরে সাগর দেখা যায়। পাশে একটা মসজিদ আছে। বের হলেই মার্কেট, পোষ্ট অফিস ও বিভিন্ন সরকারী দপ্তর। সেট হয়ে জিনিষপত্র গুছিয়ে খাবারের সন্ধানে বের হলাম। সাগরের পাড় ঘেষে নিমসল শহরের রাস্তা চলে গেছে। এটা নতুন ভাবে বানানো এবং এটা পর্যটকদের সুবিধার জন্য। মূল শহরের পুরানো এলাকার সাথে এই রাস্তার যোগাযোগ আছে। পর্যটকদের জন্য রাস্তার পাড়েই সব সুবিধাদি আছে তাই তাদেরকে শহরের মানুষ ও জীবন যাত্রার কাছাকাছি হওয়ার তেমন প্রয়োজন পড়ে না। রাস্তার একপাশে সুন্দর সুন্দর তারকা খচিত হোটেল,খাবারের রেষ্টুরেন্ট,স্যুভেনির সপ ও নানা পণ্যের দোকান। অন্য পাশে ছোট্ট বিচ,প্রায় প্রতিটি তারকা হোটেলের সামনে তাদের নিজস্ব বিচ আছে। সেখানে বিচ বেড ও ছাতা লাগানো। অগভীর পানির সীমানা চিহ্নিত করা আছে, যাতে পর্যটকরা বিপজ্জনক এলাকায় সাঁতার না কাটে। বিচ নেই যে সব জায়গাতে সেখানে রেলিং দিয়ে ঘেরা।



লিমাসল সাইপ্রাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং দ্বীপের প্রধান সমুদ্র বন্দর । এটা মদ শিল্পের কেন্দ্র এবং প্রসিদ্ধ হলিডে রিসোর্ট । লিমাসলকে বর্তমানে সাইপ্রাসের আকর্ষনীয় একটা সমুদ্র ঘেষা শহর যার অবস্থান, প্রকৃতি ও আকাশ অজস্র পর্যটককে আকর্ষন করে। বর্তমান লিমাসল শহর প্রাচীন দুটি অতি বিখ্যাত নগর রাজ্য নিয়ে গঠিত। একটা হলো এমাথুস যা বর্তমান শহরের পূর্ব ভাগ এবং অন্যটা হলো কুরিয়ন, শহরের পশ্চিম ভাগ । এ দুটো নগর রাজ্যই ব্যাপক ভাবে খনন কার্য পরিচালনা করে উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। শৈল্পিক ভাবে বানানো ও সাজানো কুরিয়ন থিয়েটার গ্রীষ্মকালে গ্রীষ্ম কনসার্ট ও অন্যান্য অভিনয় এর সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে । ক্রসেডাররা শহরের পশ্চিমে তাদের সদর দপ্তর বানিয়েছিল বর্তমানে এটা কলোসি মেডিয়েভেল ক্যাসেল নামে পরিচিত এখানে ডেজার্ট এর সাথে খাওয়ার জন্য মিষ্টি মদ তৈরী হত যা পৃথিবীর একটা অন্যতম প্রাচীন মদ হিসেবে সু-পরিচিত ।

বর্তমান লিমাসল রিসোর্ট ১০ মাইল ল¤¦া সাগর বেলার সাথে গড়ে উঠেছে । অজস্র দোকান পাট, রেষ্টুরেন্ট, ভ্রাম্যমান খাবারের দোকান এবং রাত্রি কালীণ আনন্দের জন্য বার, পাব, ডিসকো সবই রয়েছে। লিমাসলে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে নতুন পুরানো মিলিয়ে । যেমন লিমাসল ক্যাসেল যেখানে সাইপ্রাস মেডিয়েভাল মিউজিয়াম আছে । জেলা আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম, লোক শিল্প মিউজিয়াম, লিমাসল মিউনিসিপালিটি আর্ট গ্যালারী ও মিউনিসিপালিটি গার্ডেন । লিমাসল পুরানো বন্দরের কাছে একটা প্রাচীন মসজিদ আজো মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবং সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত আজান দেয়া হয় এবং নামাজ আদায় হয় । প্রকৃতির অফুরন্ত সৌন্দর্য দেখার জন্য পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা গ্রামগুলো দেখা যায় । সুন্দর ভাবে গোছানো এবং দূরত্ব বজায় রাখা । দেশটা ঘিঞ্জি নয়, সব কিছু আস্তে আস্তে তৈরী হচ্ছে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী। শহরটা পর্যটকদের দেখার জন্য ছকবদ্ধ ভাবেই সাজানো । প্রথম দিন হোটেলে আসার পর আর তেমন কোথায় ও যাইনি । বিকেল ৭-৩০ এ সব দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায় । রেষ্টুরেন্ট, বার, ডিসকো এগুলো আস্তে আস্তে খোলে তবে সন্ধ্যা হয় ৮ টার পর । রাতে সারা শহর আলোকিত থাকে । সাগরের পারের হোটেল থেকে সাগরের বাতাস ও রাতের শান্ত সাগর দেখতে কিংবা সাগর পারের পার্কে হাঁটতে বেশ ভালই লাগে । রাস্তার পাশে মাঝে মাঝে পার্ক আছে। সেখানে হাঁটার জন্য রাস্তা আছে। গাছপালা বেশ আছে। বিকেল বেলা সাগরের বাতাস উপভোগ করার সাথে সাথে সেখান থেকে সাগরের দৃশ্য দেখা যায়। খাবারের দোকানের ছবিগুলো দেখলে খেতে ইচ্ছে করে তবে খেতে গেলে তেমন ভাল লাগে না। দুপুরে খেতেই হবেতাই একটা খাবারের দোকানে রোষ্টেড পটেটোর ছবি দেখে খেতে গেলাম। ছবিতে আলুটা সুন্দর করে সেদ্ধ করে তার মধ্যে চিকেন দিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে। আমি ছবি দেখিয়ে বল্লাম এটা খাব। কিছুক্ষণ পর যা এনে দিল তা খেতে ইচ্ছে করছিল না। বিকেল বেলা আশেপাশের এলাকা ঘুরে বেড়ালাম। পরদিন সকালে হেঁটে প্রথমে খাবারের দোকানে গেলাম। হাসি দিয়ে আমাকে বার্গার এগিয়ে দিল। দোকানে বসেই খেয়ে নিলাম। এদের জিজ্ঞাসা করলাম নিকোসিয়া কিভাবে যাব। বলল সোজা ট্যাক্সি ষ্ট্যান্ডে যাও। সেখান থেকে গ্র“প ট্যাক্সি নিয়ে যেতে পারবে। টেক্সির জায়গা দেখিয়ে দিল। ৪ পাউন্ড দিয়ে ট্যাক্সিতে চড়ে বসলাম। নিমাসল থেকে টেক্সি ছুটে চলল নিকোসিয়ার দিকে। নিকোসিয়া সাইপ্রাসের রাজধানী শহর। সাইপ্রাস এর মাঝামাঝি জায়গায় রাজধানী নিকোশিয়া অবস্থিত । এটা এখন দুভাগে বিভক্ত। ১৯৭৪ সালে তুরস্ক এর কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে। নিমাসল থেকে শহরটা উত্তরে। লিমাসল থেকে নিকোশিয়া ৮০ কিঃ মিঃ এর পথ, রাস্তা ভাল এবং লিমাসল-লারনাকা রোডে চলার পর লারনাকার উপকন্ঠ থেকে রাস্তা দুইভাগ হয়ে এক ভাগ নিকোশিয়ার পথে চলে গেছে । সী ফ্রন্ট রোড ছেড়ে আমরা ভেতরের রাস্তায় চলে এলাম। এখানে দুরে পাহাড় দেখা যায়। জনবসতি তেমন একটা নেই। মাঝে মাঝে কিছু বাড়ীঘর।



নিকোশিয়া

ট্যাক্সি ভাড়া করে নিকোশিয়া যাওয়া যায় অথবা ট্যুরিষ্টদের জন্য গ্র“প ট্যাক্সিতে সস্তায় এক ঘন্টার ভিতর নিকোশিয়া পৌছানো যায় । নিকোশিয়া রাজধানী শহর হওয়াতে এখানে অনেক এ¤ে¦সির অবস্থান । আমাকেও ভিসা সংক্রান্ত কাজে নিকোশিয়া আসতে হয়েছিল এবং তখন নিকোশিয়া শহর ঘুরে দেখেছিলাম সারা দিন। এই হাজার বছরের পুরানো রাজধানী শহর পর্যটকদের দেখা অত্যন্ত প্রয়োজন। ১৬শ শতকে ভেনিশিয়ানদের তৈরী দূর্গ প্রাচীর পরিবেষ্টিত এই শহর । এই পুরানো সুন্দর শহরটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক স¥ৃতি স্তম্ভ, বাড়ীঘর ও ঐতিহাসিক স্থান এবং এর পাশাপাশি আছে দোকান পাট, ক্যাফে ও ভ্রাম্যমান খাবারের দোকান । নিকোশিয়ায় অলংকার এর মিউজিয়াম ও মিউনিসিপালিটি আর্ট সেন্টার দেখার জন্য বেশ ভাল জায়গা । রাজধানীর কাল্পনিক ইতিহাস উপস্থাপন করে লেভেনটিয়ান মিউনিসিপালিটি মিউজিয়াম ১৯৯১ সালে ইউরোপিয়ান মিউজিয়াম অব দি ইয়ার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলো। পুরানো শহরের মধ্যে দিয়ে হাঁটলে মনে হবে আমরা অতীতে চলে গেছি । রাস্তাগুলো সংকীর্ণ ও বাড়ীঘর বেশ পুরানো । বাড়ীগুলোর বেলকনি মাথা বের করে আছে এবং এর মধ্যেই হস্ত শিল্পীরা সেই পুরানো প্রথা অনুসরন করে তাদের শিল্প পণ্য তৈরী করছে । নিকোশিয়ার দুটো প্রধান সড়ক এর দুই পার্শ্বে অজস্র দোকান পাট ভরা এবং এই দুটো রাজপথ শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য । নিকোশিয়ার সাইপ্রাস মিউজিয়ামে সাইপ্রাসের অতীত ইতিহাসের অনেক সংগ্রহ রয়েছে এবং নিওলিথিক ও রোমান সময়কার অনেক সম্পদ এখানে সংগৃহীত আছে । এই পুরাকীর্তির পাশাপাশি আছে সমসাময়িক কালের সাইপ্রাসের চিত্রশিল্পীদের আঁকা চিত্র কর্ম । প্রধান সড়ক থেকে একটু দূরেই রয়েছে সাইপ্রাস হস্তশিল্প কেন্দ্র । নিকোশিয়া শহরে দেখার মত আরেকটা জিনিষ পুরানো ফামাগুস্তা গেইট যা বর্তমানে রিনোভেট করা হয়েছে । এটা পুরানো শহরে ঢোকার প্রধান ফটক । এই ফটকটা সু-সংরক্ষনের জন্য ইউরোপিয় পুরস্কার বা স¦ীকৃতি পেয়েছিল । শহরের এই অংশে লোকশিল্প ও বাইজেনটাইন মিউজিয়াম আছে । এই এলাকা ছাড়িয়ে একটু সামনে গেলেই সাইপ্রাসের কুখ্যাত গ্রীন লাইন যা এই প্রজাতন্ত্রকে দুই ভাগে ভাগ করেছে এবং এর উত্তরে বেআইনী অধিকৃত এলাকা । এই গ্রীন লাইন ১৯৭৪ সালে তুরস্ক কর্তৃক আগ্রাসন এর ফলে সৃষ্ট । তুরস্কের সেনাবাহিনী ৩৭% এলাকা দাবী করেছে ও দখল করে নিয়েছে এবং তুরস্ক অধ্যুষিত সাইপ্রাস কোন দেশের স¦ীকৃতি পায়নি একমাত্র তুরস্ক ছাড়া । আধুনিক নিকোশিয়া এই দেয়াল এর বাইরে গড়ে উঠেছে এবং এই শহরকে শপিং হার্ট অব সাইপ্রাস বলা হয়ে থাকে । এখনো অনেক রেষ্টুরেন্ট, বার ও ডিসকো আছে । এই শহরের কাছেই রয়েছে প্রাচীন নগর রাজ্য ইডালিয়ন এবং দুটো মন মুগ্ধকর গ্রাম ফিকারদু এবং কাকোপেটরিয়া ।



নিকোশিয়াতে অফিস আদালত গুলোতে মানুষের বেশ আনাগোনা, পরিস্কার শহর। এখানে ইউ এন শান্তিরক্ষী বাহিনীর পর্যবেক্ষণ চৌকি আছে। টেক্সি থেকে নেমে সরাসরি মিশর অ্যাম্বেসীর উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলাম। সবকিছু মোটামুটি হাঁটার দুরত্বে। ম্যাপ দেখে লোকেশন জেনে নিলাম। চেনা বেশ সহজ। মিশরীয় দুতাবাসে এসে ডেক্স ক্লার্ককে বললাম মিশর এর পিরামিড দেখতে যাব, ভিসা লাগবে। বলল পাসপোর্ট দেখাও, পাসপোর্ট দেখে তারা অবাক! আমি এখানে কি করছি। বললাম যে ইরাক থেকে এসেছি জাতিসংঘে কর্মরত। বলল তোমার নিজ দেশ থেকে ভিসা নিতে হবে। আমি বললাম এখন তো নিজ দেশে যাওয়া যাবে না। ২ দিনের জন্য ভিসা দিতে পারলে ভাল হয়। আমাকে বসতে বলল। একজন মধ্য বয়সী মহিলা অফিসার আমাকে দেখতে এলেন। বেশ হাসিখুশি ভাল ব্যবহার । আমি পরিচয় দিয়ে বললাম যদি সম্ভব হয় তাহলে যেন এই ট্যুর এর জন্য ভিসা দিয়ে দেয়। আমাকে পরদিন আসতে বলল এবং পাসপোর্ট জমা দিতে বলল। আমি তাদেরকে বললাম যদি ভিসা দেয়ার ইচ্ছা থাকে তবে আজই যেন দেয় কারণ পরদিন ভিসা পেলে আমার যাওয়া হবে না। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ভদ্র মহিলা ১ টার দিকে আসতে বললেন। এই সুযোগে আমি নিকোসিয়া শহরটা ঘুরে দেখতে লাগলাম। অফিস আদালত দোকানপাট সবই আছে রাজধানী শহরে তবে পর্যটকদের কমতি দেখা গেল। এখানে পর্যটকদের তেমন আনাগোনা নেই। সাগর ঘেষা এলাকাতেই পর্যটন কেন্দ্র ও হোটেল গুলো গড়ে উঠেছে। আশেপাশের এলাকা দেখতে দেখতে ১ টা বেজে গেল। মিশর দুতাবাসে সময়মত হাজির হলাম। ভিসা দিয়ে দিল। আর দেরী না করে টেক্সি ষ্ট্যান্ডে এসে গ্র“প টেক্সিতে উঠে পড়লাম নিমাসলের উদ্দেশ্যে। টেক্সিতে একজন তরুনী পোলো খাচ্ছিল, আমাকে একটা অফার করল। ধন্যবাদ দিয়ে তা নিলাম। মানুষগুলো আন্তরিকই মনে হলো।

নিমাসলে পৌঁছে তাড়াতাড়ি ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে গেলাম্ ডেক্সে বসা তরুনী হাসি দিয়ে বলল,কি সব হয়েছে ? আমি তাকে ভিসা দেখালাম। দ্রুত টিকেট রেডি করে দিল। বলল পরদিন ৩টায় নিমাসল হার্বার থেকে প্রিন্সেস মরিস্যা ছেড়ে যাবে। ঘন্টা ২ আগে সেখানে পৌছে বিভিন্ন কাজকর্ম সারতে হবে। বিকেল বেলা নিমাসল পোষ্ট অফিস ও আশেপাশের বাজারে ঘুরলাম। স্যুভেনিরের একটা দোকান বেশ পছন্দ হলো। দোকানীর নাম অ্যান্থনী। ভাল ব্যবহার হাসি খুশ্ ি ,সুন্দর সুন্দর পেতল এর সুভ্যেনির বিক্রি করে সে। আমি কয়েকটা কেনায় বেশ খাতির হয়ে গেল। ডিসকাউন্ট পেলাম। বলল যদি আরো দরকার লাগে ভাল দামে দিবে। পরদিন নিমাসলের নির্মল সকাল উপভোগ করার জন্য ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে বেরুলাম। সাগরের পাড় ঘেষা ওয়াকওয়েতে সাগরের বাতাস উপভোগ করতে করতে হাঁটলাম কিছুক্ষণ । ভুমধ্যসাগরের দ্বীপের দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল । নাস্তা সেরে নিলাম সেই আগের খাবারের দোকান থেকে। নাস্তা করে অলস সময় কাটাচ্ছিলাম। আশেপাশের এলাকা গুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। পর্যটন এলাকা পার হলেই আসল নিমাসল বসতি। সেখানে প্রাচুর্য আছে তবে তা উপচে পড়া না।









প্রিন্সেস মারিস্যায়-ভূমধ্যসাগরে

লিমাসল থেকে পোর্ট সাঈদ - ভূমধ্যসাগরের বুকে

লিমাসল সী ফ্রন্টে পড়ন্ত বিকেলে সুর্যাস্ত দেখতে দেখতে ভাবছিলাম এই নীল সাগরের বুকে বেড়াতে হবে। সূর্য ডুবতেই গাঢ় নীল পানির রং কালো হয়ে চারিদিকে অন্ধকার নেমে এলো। সাইপ্রাস থেকে পর্যটকদের জন্য ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন দ্বীপ ও দেশগুলোতে যাত্রীবাহী জাহাজে ভ্রমনের ব্যবস্থা আছে। বিভিন্ন ট্যুর কোম্পানী এগুলো পরিচালনা করে। প্রতিটা শহরে অনেক ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। সন্ধ্যার দিকে তাই একটাতে ঢু মারলাম। রিসিপসনে বসা তরুনী হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালো। কোথায় যাব জিজ্ঞাস করাতে বললাম কোথায় যাওয়া যায়? গ্রীস, ক্রেটা, ইসরাইল, ইতালি, মিশর আরো অনেক দেশের নাম বলল। মিশরের পিরামিড দেখা যেতে পারে, তাই বললাম মিশর যাব। ইসরাইল যাওয়ার অনুমতি নেই পাসপোর্টে। বলল তুমি ভাগ্যবান একদিন পর সোমবারে প্রিন্সেস মরিস্যা পের্ট সাঈদ এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে এবং সিটও খালি আছে। টিকেটের দাম পঞ্চাশ সাইপ্রাস পাউন্ড থেকে শুরু করে দু শ পঞ্চাশ পাউন্ড পর্যন্ত। নানা রকম সুবিধা সহ লাক্সারী রয়াল সেলুন এর দাম সবচেয়ে বেশী। একা যাচ্ছি এত সুযোগ এর দরকার কি, তাই পঞ্চাশ পাউন্ড এর কেবিন বুক করলাম। আমার পাশপোর্ট দেখিয়ে বললাম আমাকে আর কি কি ফর্মালিটিজ করতে হবে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেখে হঠাৎ বলল আমি একটু চেক করে দেখি তোমার ভিসা লাগবে কিনা। টেলিফোনে কথা বলে একটু পরে বলল সরি তোমার মিশরের ভিসা লাগবে। আগামী কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব। নিকোশিয়াতে মিশর দুতাবাস থেকে ভিসা নেয়া যেতে পারে। অনেকেই পায়, ভাগ্যবান হলে ভিসা জুটবে ও মিশর যাত্রা শুভ হবে। ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে এলাম ট্রাভেল এজেন্সি থেকে। মূলত স্কেন্ডেনেভীয় দেশের মানুষ ও কিছু পশ্চিম ইউরোপীয় নাগরিক এইসব ভ্রমণ প্যাকেজে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বেড়াতে যায়। বাংলাদেশের নাগরিক এর সংখ্যা নিতান্তই কম প্রায় নেই বললেই চলে এবং অনেক পাসপোর্টে কোন ভিসাই লাগে না। এন্টি পয়েন্টে ভিজিট ভিসা দিয়ে দেয়। পরদিন সকালে গ্র“প ট্যাক্সিতে করে সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়াতে এলাম। সী ফ্রন্ট দিয়ে চলতে চলতে একটা রাস্তা নিকোশিয়া ও অন্যাটা লারনাকার দিকে চলে গেছে। ভূমধ্যসাগরকে ডানে ও বামে পাহাড় ও সমতল রেখে রাস্তা বানানো। দুপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে মাসিডিজ ট্যাক্সিতে করে দশটার দিকে নিকোশিয়া পৌছালাম। কাছে ম্যাপ ছিল তাই ট্যাক্সি ষ্ট্যান্ড ােথকে সরাসরি মিশর দুতাবাসে চলে গেলাম ভিসা নিতে। দুতাবাসে মিশর ভ্রমনের কথা বলাতে প্রথমেই বলে দিল নিজ দেশ থেকে ভিসা নিতে হবে। আমি ইরাকে থাকি ভিসা নিজ দেশ থেকে কিভাবে নেয়া সম্ভব। আমার সংস্থার কাগজ পত্র দেখতে চাইল দেখালাম বলল অপেক্ষা কর। ভিসা বিভাগের একজন মধ্যবয়সী মহিলা এলেন, আমি সমস্যার কথা বললাম। সাইপ্রাস এসেছি প্যাকেজ ট্যুর এ এক দিনের জন্য তোমাদের দেশে যেতে চাই। আমি তোমার দেশে থাকার জন্য যাচ্ছি না। হেসে বলল ঠিক আছে কাল এসো। বললাম ভিসা যদি দিতেই চাও আজই দিতে হবে সন্ধ্যায় টিকেট কনফার্ম করব। বলল ঠিক আছে দুপুর ১টায় এসো। ধন্যবাদ দিয়ে নিকোসিয়া দেখতে বের হলাম। শহরটাতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী রয়েছে।

সাইপ্রাসের উত্তর অংশ ফামাগুস্তা এলাকা তুরস্কের দখলে তাই এখানে জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়েন আছে। নিকোসিয়া সাজানো শহর তবে পর্যটকদের ভীড় নেই। সাগর সৈকত, সূর্যøান এর জায়গা গুলোতে অকৃপন সূর্য়ের আলো নিতে সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক ও অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপীয় মানুষ সাইপ্রাসে আসে। তবে মহিলা পর্যটকদের সংখ্যা অবাক হওয়ার মত। তারা প্রায় সব সুইডেন, জার্মানী, ইউকে থেকে এসেছে। নিকোশিয়া ঘুরেফিরে দেখে দুপুর ১টার সময় আবার দুতাবাসে গেলাম। দেরী না করে পাসপোর্টে ভিসা দিয়ে দিল এক সপ্তাহের। থাক খুশী মনে ট্যাক্সি ষ্ট্যান্ডে চলে এলাম। দেরী না করে ট্যাক্সি নিয়ে সরাসরি লিমাসল ট্রাভেল এজেন্সীর অফিসে। কাউন্টারে বসা মেয়েটি আমাকে দেখে হেসে বলল কি কাজ হয়েছে ? আমি বললাম হ্যাঁ এবং তাকে কাগজ পত্র গুলো দিলাম। কিছুক্ষণ পর কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট নিয়ে টিকেট ও বোর্ডিং পাস দিয়ে দিল। ৩টায় জাহাজ ছাড়বে ১ টার সময় লিমাসল হারবারে থাকার জন্য বলল। আমি সময়মত হারবারে গিয়ে হাজি। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। আমিই প্রথম ব্যক্তি। হারবারের রেষ্ট এরিয়াতে বসে সাগরের দিকে তাকিয়ে থেকে সময় কাটাতে লাগলাম। ২ টার দিকে যাত্রীরা আস্তে আস্তে আসা শুরু করলো এবং অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে সব চেয়ার দখল হয়ে গেল। পরিচিত একটা মুখ বা বাংলা কথা বলার কোন মানুষ সেখানে ছিল না। সবাই সাদা চামড়ার, সর্বমোট তিনজন যাত্রী ইউরোপীয় ছিল না। একজন আফ্রিকান বংশোদ্ভুত জার্মান, স্ত্রী জার্মানীর, অন্য একটা মেয়ে এশিয়ান তবে দত্তক নেয়া আর আমি বাংলাদেশী। ভালই লাগছিল নিজের কাছে। এত মানুষের ভীড়ে বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে।



লিমাসল হারবার

৩ টার সময় বোডিং এর ঘোষণা দিল সবাই মালপত্র নিয়ে লাইনে দাড়ালো। বেশ লম্বা কয়েকটা লাইন। আস্তে আস্তে লাইন এগিয়ে যাচ্ছে। আমার সামনে সুইডেনের মা ও মেয়ে, তাদের পাসপোর্ট দেখেই সিল মেরে দিল। আমার পাসপোর্ট দেখার পর তা সরিয়ে রেখে অপেক্ষা করতে বলল। মনটা খারাপ হলো একটু। তারপর মোটামুটি সবার শেষে পাসপোর্ট ভিসা খুটিয়ে দেখে বোর্ডিং পাশে সিল দিল। সব যাত্রীরা এতক্ষনে জাহাজের দিকে চলছে। বিশাল একশত চৌত্রিশ মিটার লম্বা যাত্রীবাহী জাহাজ। ঢোকার মুখে চেক করে মাল পত্র রেখে দিচ্ছে ও রুমের লোকেশন দেখানো ম্যাপ, বিপদকালীন করনীয় কাজ ও বিপদকালীন অবস্থানের কার্ড হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। ম্যাপ দেখে নিজের কেবিনে চলে এলাম। ছোট্ট তবে সুন্দর কেবিন। উপরে নীচে মিলে দুই বার্থ রুমে একটা বেসিন আছে। রুম থেকে বেরোলে ওয়াস রুম ও শাওয়ার। আলোকিত করিডোর, আরো বহু পর্যটক আমার মত দুই কিংবা চার বার্থের রুম গুলোতে ঢুকছে। একটু পরেই মাইকে ঘোষনা শুনলাম। আমার নাম ধরে ডাকছে ও আপার ডেকে রিপোর্ট করতে বলছে। যথারীতি সেখানে উপস্থিত হলাম। আমার কাগজ পত্র, বয়স দেখল। কি কারনে এখানে আসলাম জিজ্ঞাসা করাতে বলল আমার সাথে কাকে দেয়া যায় তা দেখার জন্য আমাকে ডেকেছে। পরে ভাগ্য ভালই বলা যায় কেবিনে আমি একাই ছিলাম। কেবিনে সেট হতেই ইমার্জেন্সি বেল বেজে উঠল। জাহাজ কর্তৃপক্ষ আগুন ও অন্যান্য দুর্ঘটনা রোধে বেশ সতর্ক। প্রত্যেকে তাদের কার্ডে দেখানো অবস্থানে অ্যারো মার্ক দেখে দেখে পজিশন নিয়ে নিল। জাহাজের নিরাপত্তার লোকজন সব কাজ ও অবস্থান চেক করে নিল। লক্ষ্যণীয় যে, ইউরোপীয় পর্যটকরা এ ধরণের মহড়ার সাথে অভ্যন্থ এবং বেশ আগ্রহ নিয়ে তারা এই মহড়ায় অংশ গ্রহন করছে। মহড়া শেষে ব্রিফিং হলো। সন্ধ্যার পর ডিনার সবাইকে ফর্মাল ড্রেস ও সু পরে আসার জন্য বলল। প্রত্যেককে আলাদা টেবিল নম্বর ও সময় দিয়ে দিল। ২ টা ডাইনিং রুম আছে জাহাজে। ২/৩ ব্যাচে ডিনার এর ব্যবস্থা। কেউ টাইম ও রুম মিস করলে। ডিনার কিংবা অন্যান্য খাওয়া নিয়ে সমস্যা হবে বলে জানিয়ে দিল।



প্রিন্সেস মরিস্যা জাহাজে

ইতিমধ্যে জাহাজ চলা শুরু হয়েছে, আস্তে আস্তে লিমাসল হারবার ছেড়ে জাহাজ পোর্ট সাঈদ এর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সূর্য এখনো আকাশে। চারিদিক আলোকিত। ডেকে গিয়ে ভূমধ্যসাগরের বুকে থেকে লিমাসল পোর্টকে বিদায় জানাচ্ছি। সাগরে আরও অনেক মালবাহী জাহাজ ও ছোট ছোট কার্গো শিপ ও বোট আছে। কেউ বন্দরে যাচ্ছে কেউ বা বন্দর ছেড়ে গন্তব্যে চলছে। প্রিন্সেস মরিস্যা জাহাজে যাত্রীদের জন্য নয়টা প্যাসেঞ্জার ডেক আছে। ডেক গুলোতে চেয়ার আছে, যাত্রীরা সাগরের বাতাস খাওয়ার জন্য এখানে বসতে পারে। সাগরে সূর্যান্ত দেখা পর্যন্ত প্যাসেঞ্জার ডেকে রয়ে গেলাম। এ ছাড়াও পুরো জাহাজটা ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হলো। একদম উপরের ডেকে সানবাথ করার জন্য বেড ও ছাতা আছে। ইতিমধ্যে অনেক যাত্রী সূর্যের অকৃপন রোদ্র পোহাতে নিজেদেরকে মেলে দিয়েছেন।



ভূমধ্যসাগরে, প্রিন্সেস মারিশা জাহাজ থেকে

বেশিক্ষণ এখানে না থেকে অন্যান্য জায়গা গুলো ঘুরে দেখতে লাগলাম। ছবি তুলতে ইচ্ছা হলো তবে একা বলে তা সব সময় সম্ভব হচ্ছিল না। একজন গ্রীক পর্যটককে কয়েকটা ছবি তুলে দিতে বললাম। ছবি তুলে আমাকে কৃতার্থ করলেন তিনি। প্রিন্সেস মারিস্যা জাহাজে ডিউটি ফ্রি সপ, কনফারেন্স রুম, ছবি তোলা ও ওয়াস এর জন্য ফটোশপ, গ্যারেজ ও ক্যাসিনো আছে। টিভি ভিডিও দেখার রুম ও আছে একটা। মোটকথা জাহাজের মধ্যেই একটা শহর ও বিনোদন কেন্দ্র।

সূর্য অস্ত যাচ্ছে ভূমধ্যসাগরে। অপূর্ব দৃশ্য, আকাশে লালচে সূর্য নীচে নীল শান্ত পানি আস্তে আস্তে গাঢ় নীল হয়ে যাচ্ছে। সূর্যটা যখন সাগরে ডুব দিল তখন চারিদিক আবছা অন্ধকারে ঢেকে গেল। জাহাজের লাইট তখনো পুরোপুরি জ্বালানো হয়নি। আস্তে আস্তে কেবিনের দিকে রওয়ানা হলাম। দুপুর থেকেই সেট হতে হতেও হতে পারিনি তাই কেবিনে এসেই শাওয়ার নিতে গেলাম। ঠান্ডা ও গরম পানির ব্যবস্থা আছে। সব জায়গাতে সংযমী হবার উপদেশ। বেশী পানি নষ্ট না করার জন্য অনুরোধ সম্বলিত ষ্টিকার। গোসল করে ফ্রেস হলাম। ডিনারে যাওয়ার জন্য ফর্মাল ড্রেস জুতা পরে আপার ডেকের দিকে এলাম। সন্ধ্যা সাতটায় আমার ডিনার টাইম। ডাইনিং রুমে গেলাম সেখানে প্রত্যেকের জন্য সিট প্লান আছে। আমার টেবিল নাম্বার দেখে সেখানে বসতে গেলাম। এক টেবিলে পাঁচজন যাত্রী। আমার সাথে দুটো কাপল, ব্রিটিশ ও জার্মান দম্পতি। জার্মান দম্পতি তেমন কোন কথা বলে না। ব্রিটিশ ভদ্রলোক হাসি দিয়ে হালকা কথাবার্তা চালিয়ে গেলেন। ডিনার বুফের মতো টেবিলে সাজানো আছে। সেখান থেকে পছন্দমত খাবার এনে টেবিলে বসে খাওয়া। আমাদের খাওয়া হলে দ্বিতীয় দলের জন্য আবার ডাইনিং রুম রেডি করা হবে। খাওয়া দাওয়া চমৎকার প্রায় ছয়/সাত কোর্সের ডিনার। ডিনার করে বাইরের ডেকে এলাম। চারিদিকে নিথর রাত অন্ধকারে জাহাজ চলছে। জাহাজটাই যেন জীবন্ত একটা শহর। মাঝে মাঝে দুরের জাহাজের আলো এবং মেঘহীন আকাশের তারা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে ভেতরে এলাম। ডিউটি ফ্রি শপে বিভিন্ন জিনিষ পত্র কেনা বেচা চলছে। ভিউকার্ড,গেঞ্জি,জাহাজের ক্যাপ ইত্যাদি স্যুভেনির হিসেবে পর্যটকরা কিনছে। দাম ভালোই। জাহাজের কর্তব্যরত সেলস্্ গার্লরা এগুলো হাসিমুখে বিক্রি করছে। হালকা মিউজিক বাজছে বিভিন্ন জায়গায়। ডিউটি ফ্রি শপ পেরিয়ে গেলে ক্যাসিনো,বিশাল কক্ষের নানা জায়গায় খেলা চলছে। কেসিনো প্রীতি যাদের আছে তারা বসে গেল আর সুন্দরীরা তাস ও অন্যান্য খেলা পরিচালনা করছে। না খেললেও দেখতে তো দোষ নেই। ঘুরে ঘুরে দেখলাম টেবিল গুলোর কাছে গিয়ে। শ্লট মেশিন ও আছে। কয়েন ফেলে ভাগ্য পরীক্ষা করছে অনেকে। দেখতে দেখতে সময় কেটে যাচ্ছে। রাত ১১ টায় ফ্লোর শো আছে, প্রায় এক ঘন্টা চলবে সবাই শো রুমে জড়ো হচ্ছে। এই ফাকে কেবিনে এসে কিছুক্ষণ ডাইরী লিখলাম। সাড়ে দশটার দিকে আবার ডেকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। ্েশা রুমে পর্যটকরা বসে গেছে অনেকে। ১১ টার সময় যথারীতি ড্যান্স শো শুরু হলো। জাহাজেরই নিজস্ব শিল্পী আছে। এরা অন্যান্য কাজও করে সাথে রাতের বেলা ড্যান্সার হি্েসবে শোতে অংশ গ্রহন করে। বিভিন্ন ধরনের নাচে এক ঘন্টা কিভাবে যে পার হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। সবার চোখে মুখেই খুশীর ছ টা দেখা যাচ্ছে। আজ রাতে আর কোনো আয়োজন নেই শুধু ক্যাসিনো পাগল লোকজনের জন্য ক্যাসিনো খোলা থাকবে। রুমে ঘুমাতে চলে এলাম। এলার্ম এর শব্দে ঘুম ভাঙ্গল রাতে জাহাজের হালকা দুলুনিতে কখন যে ঘুম এসে গেয়েছিল টের পাইনি।

সকাল বেলা ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেতে গেলাম। ভাল আয়োজন। একই টেবিল এবং আমার সাথের দুই দম্পতি। নাস্তার পর আমাদের হাতে প্যাক লাঞ্চ দিয়ে দিল। জাহাজ মিশরের পোর্ট সাঈদ এর কাছাকাছি চলে এসেছে। পোর্ট সাঈদ এর নানা ফর্মালিটিজ শেষ করে নামতে নামতে ১০ টা বেজে গেল। নামার সময় জাহাজের হোষ্টেজরা পোর্ট সাঈদ লিখা প্যাকার্ড নিয়ে পোজ দিয়ে দাড়িয়ে আছে, সবার একটা করে ছবি তুলছে তাদের সাথে। ফেরার পথে ৫ সাইপ্রাস পাউন্ড দিয়ে এগুলো সংগ্রহ করা যাবে। পোর্ট সাঈদ থেকে, কায়রো মিউজিয়াম,প্যাপিরাস কারখানা ও গিজার পিরামিড দেখে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেল। জাহাজে উঠেই কেবিনে ফ্রেস হবার জন্য এলাম। সাথে মিশরের কিছু স্যূভেনির। রাতে জাহাজ আবার ভূমধ্যসাগরের বুক চিরে লিমাসল বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিল বিদায় পোর্ট সাঈদ।



আইয়ানাপা, সাইপ্রাস

মিশর দেখে ফিরে এসে আমি প্রথমে বিচ এলাকা আইয়া নাপা যাওয়ার প্লান করি । এই জায়গার কথা বেশ শুনেছিলাম । ভূমধ্যসাগর পাড়ের এই বিচ টিতে অসংখ্য পর্যটক এর সমাবেশ হয় , প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকেও এটা সুন্দর জায়গা, সমুদ্র ভ্রমন পিপাসুদের জন্য এটা আদর্শ এলাকা। লোকাল ট্যুর গুলোতে অন্য কোথাও যাওয়া যায় কিনা তা জানতে ট্রাভেল এজেন্সিতে গেলাম। সাইপ্রাস ন্যাশনাল ট্যুর কর্তৃপক্ষ কতগুলো ট্যূর প্রোগ্রামের আয়োজন করে। এসব ট্যূর স¤¦ন্ধে বিস্তরিত তথ্য বুকলেটে দেয়া থাকে । অসংখ্য ট্রাভেল এজেন্ট আছে সাইপ্রাসে, তাদের সাথে যোগাযোগ করে এ সমস্ত ট্যুরে সমস্ত সাইপ্রাস ঘুরে দেখা যায় । ট্যুর প্রোগ্রামের সুবিধা হলো এখানে গাইড থাকে এবং সে সব কিছু বুঝিয়ে বলে, চিনিয়ে দেয় তাছাড়া অত্যাধুনিক সুবিধাসহ এসি বাসে ভ্রমন বেশ আনন্দদায়ক। বাসগুলো পর্যটকদের হোটেলের সামনে থেকে নিয়ে যায় এবং ভ্রমন শেষে হোটেলে পৌছে দেয় ।



আইয়ানাপা, সাইপ্রাস

প্রতিদিন প্রায় বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠান থাকে এবং বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর বিভিন্ন দিনে এ সব শহর ভ্রমনের আয়োজন করে । আইয়ানাপা যাওয়ার ট্রিপ পেলাম। বাস পরদিন সকালে অফিসের সামনে থেকে পর্যটক সংগ্রহ করে প্রথমে লারনাকা যাবে। সেখানে সী ফ্রন্ট এ কিছুক্ষণ বিরতী । তারপর একটা অর্থডক্স চার্চে ঘোরার ব্যবস্থা এবং এরপর আইয়ানাপা বিচে দুপুর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত, ভালই ট্রিপ। গাইড থাকবে কাজেই যাত্রা পথের অনেক খবর জানা যাবে। ৮টার দিকে লিমাসল থেকে বাসে উঠলাম বাস ঘুরে ঘুরে সব হোটেল থেকে ভ্রমনকারীদের উঠালো । তারপর লিমাসল লারনাকা হাইওয়ে দিয়ে বাসে করে লারনাকার পথে রওয়ানা হলাম। হাইওয়ের অবস্থা বাংলাদেশের যে কোন রাস্তার চেয়ে ভাল তবুও তারা এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট না । তাই লিমাসল লারনাকা হাইওয়ে নিযে মজার কৌতুকটা গাইড শোনালো । গল্পটা এ ধরনের, বিল ক্লিনটন গডের কাছে গিয়ে বলল, গড আমেরিকা কবে পৃথিবী ডমিনেট করবে, গড বলল ৫ বছর পর, তা শুনে বিল ক্লিনটন কাঁদা শুরু করল । এর পর বরিস ইয়ালৎসিন গিয়ে বলল রাশিয়া কবে সমস্যা কাটিয়ে উঠে পৃথিবী শাসন করবে । গড বলল ৩৫ বৎসর, বরিস ইয়ালৎসিনও কাঁদতে শুরু করল । এরপর সাইপ্রাসের অর্থডক্স বিশপ সেন্ট জন গিয়ে গডকে বলল গড লিমাসল লারনাকা হাইওয়ে কবে ঠিক হবে গড এখন কিছু বলে না। ৫ মিনিট পর হঠাৎ গড নিজেই কান্না শুরু করল ।



লারনাকা

হাইওয়ের দক্ষিণ পার্শ্বে ভূমধ্যসাগর, বামে পাহাড় ও বন্ধুর এলাকা। এ সব জায়গায় রাস্তা বানানো হচ্ছে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য । তা ছাড়া নতুন নতুন এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ও তৈরী হচ্ছে । পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে পুরো দেশটা তাদের সব প্রচেষ্টা একত্রীভূত করেছে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে । এ ব্যাপারে আমার দৃষ্টিতে তারা বহুলাংশে সফল । লারনাকা হতে রওয়ানা হওয়ার ১ ঘন্টা (চলার) পর আমরা লারনাকা সি ফ্রন্ট এ এলাম । ৩০০-৪০০ গজ বিচ এলাকা এবং ১০/১৫ গজ মাত্র প্রশস্ত এই বিচ । একেই সাজানো হয়েছে চমৎকার করে । অনেক বিচ বেড আছে সানবাথ এর জন্য । অনেক বড় হোটেল বানানো হয়েছে এবং হোটেলের সামনে কফি শপ ও বসার ব্যবস্থা আছে । একটু দুরে ট্যুরিষ্ট শপিং সেন্টার । হাত বাড়ালেই সব পাওয়া যায় । অনেক ট্যুরিষ্ট বিচে সান বাথ করছিল, কেউ কেউ নানা ধরনের খেলা করছিল। ১ ঘন্টা বিরতি ছিল এখানে । সবাই বাস থেকে নেমে বিভিন্ন স্যুভেনির শপে গেল, দেখা ও কেনা কাটার জন্য । লারনাকা সিটি সেন্টার সামনেই কাজেই সেখানে ঘুরতে গেলাম, খাবারের জন্য ফাষ্ট ফুড এর দোকান ও অন্যান্য অনেক দোকানই আছে । সাইপ্রিয়ট ও ইউরোপিয়ান খাবারই বেশী । পর্ক বা শুকরের মাংস প্রায় সব খাবারেই আছে। এক ঘন্টা পর সবাই একত্র হলাম । বাস লারনাকা থেকে আইয়া নাপার পথে চলতে শুরু করল । ১৫ মিনেটের পথ । লারনাকায় দেখার মত অনেক কিছুই আছে । সময়ের তালে সাবলিল ভাবে এগিয়ে চলছে লারনাকা শহর । অতীতের সাথে এই শহরের সুক্ষ্ম নাড়ীর স্পন্দন সব সময় পাওয়া যায় । যে কেউ আধুনিক লারনাকা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রাচীন কিটিয়ন রাজ্যের প্রভাব বা উপস্থিতি অনুভব করতে পারবেন যা তার প্রাচীন ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেয় । দ্বাদশ শতাব্দীতে মাইসেনিয়ান গ্রীকরা এই শহরকে সাইক্লোপিয়ান দেয়াল দ্বারা সুদৃঢ় ভাবে সুরক্ষা করেছিল । অন্যদিকে ৯ম শতাব্দীতে ফোয়েনশিয়ানরা এখানে একটা শক্তিশালী রাজ্যের সন্ধ্যান পেয়েছিল । গ্রীক দার্শনিক জিয়ন এর জন্ম স্থান ছিল কিটিয়ন শহর । ১৮শ শতাব্দীতে এটা একটা বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে এবং সিট অব ইউরোপিয়ান কনসুলেটস হিসেবে পরিগনিত হয় । মনোরম পামবিথি এর দূর্গ ও এ শহরের পুরানো আবাস স্থল সমুহ লারনাকাকে মনোরম রুপে উপস্থাপন করেছে। এই শহরের অদূরে বিশাল লবন হ্রদ শীতকালে পাখিদের আকর্ষন করে এবং এই হ্রদের পাড়েই মুসলমানদের পবিত্র একটা মসজিদ এখনো মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে । লারনাকায় ঘোরার মত জায়গা হলো লারনাকা ফোর্ট, প্রাচীন শহর কিটন, হালা সুলতান টেকেসি মসজিদ,এটা শহর থেকে ৩ কিঃ মিঃ পশ্চিমে অবস্থিত এবং লারনাকা এয়ারপোর্টে যেতে এটা দেখা যায় । ১৮১৬ সালে এটা তৈরী করা হয়েছিল । কথিত আছে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর এক আত্মীয় ৬৪৯ সালে এখানে মৃত্যু বরণ করেছিলেন । তার সমাধির উপর এই মসজিদ প্রতিষ্ঠিত । প্রথম আরব আক্রমনের সময় এটা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটা তার চিহ্ন বহন করছে । এই মসজিদ মুসলমানদের জন্য একটা পবিত্র জায়গা । এছাড়া ভেনিশিয়ান সময়ের মনেষ্ট্রিও এ শহরে আছে । অনেক পুরানো গাঁথা ও উপকথা এসব মনেষ্ট্রিকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে । এগুলো অর্থডক্স খৃষ্টানদের জন্য পবিত্র স্থান । লারনাকায় আর দেখার মত হচ্ছে এর বিচ লাইফ, হাজার হাজার পর্যটক অকৃপন সূর্যের আলোতে স্নান করার জন্য দুর দুরান্ত থেকে এসেছে । বিচে তারা শুয়ে রৌদ্র স্নান করছে কিংবা হরেক রকম জল ক্রীড়ায় মেতে আছে । লারনাকায় বেশ কিছু ডাইভিং ¯কুল আছে । সেখানে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং দেয়া হয় । সাগরের পানি স¦চ্ছ ও অসংখ্য প্রবাল ও বিচিত্র সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী দেখার জন্য অনেক পর্যটক এই সব ¯কুলে গিয়ে সাগর তলের অতল রহস্যের সন্ধান করে । লারনাকা এলাকায় ঘুরেই মোটামুটি ২/৩ দিন পার করে দেয়া যায় সময়ের হিসেবে না রেখে ।



লারনাকা থেকে আইয়া নাপা সাগর পারের রাস্তা ধরেই যেতে হয় । ডান দিকে সাগর বামে দুরে গ্রাম ও ফসলের ক্ষেত । এই এলাকায় প্রচুর আলু জন্মে এবং সাইপ্রিয়টরা এই আলু রপ্তানী করে । আইয়া নাপার আগে পরিচিত ছিল ছোট জেলে গ্রাম হিসেবে, বর্তমানে তা পর্যটকদের জন্য একটা আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে । পথে যেতে যেতে গাইড আমাদের এই এলাকার খাবার পানির সমস্যার কথা জানাচ্ছিল । ২ টা পানি শোধনের কারখানা আছে এখানে । এই এলাকার কিছু অংশে একটা ব্রিটিশ নেভী বেইস আছে । বেস এর লোকজন এর জন্য অন্য একটা পানি শোধনের ফ্যাক্টরী আছে । সাগরের পানিকে লবন মুক্ত করে তা সরবরাহ করা হয় । ১৯৯৭ সালের আবহাওয়া চাষের জন্য তেমন অনুকুলে ছিল না তাই এবার তারা চাষের ক্ষেতে বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করবে বলে ধারনা করছে । আইয়া নাপা এখন একটা সুন্দর ট্যুরিষ্ট শহর । পর্যটকদের জন্য হরেক রকম স্যুভেনির, সুইমিং ড্রেস ও অন্যান্য জিনিসে শহর ভর্তি । রেন্ট-এ কার, ট্যাক্সি, বাস, হোটেল রেষ্টুরেন্ট সব কিছুই প্রচুর । সুন্দর ভাবে সাজানো তাই সবার মন কাড়ে । আমরা প্রথমে গেলাম ১৬শ শতাব্দীর একটা চার্চে । সে সময় এখানে একটা গুহা ছিল এবং জলদস্যুরা সেখানে আক্রমন করত । কিছু ধর্মপ্রান লোক জলদস্যুর ভয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল এবং কালক্রমে সেখানে এই চার্চ গড়ে উঠে । এখনও সেই প্রাচীন গুহা ও গুহামুখ সযতেœ সংরক্ষণ করা আছে । আইয়া নাপা শহর যেন পর্যটকদের জন্যই । সব কিছু এমন ভাবে সাজানো যে দেখতে ও কিনতে ইচ্ছে করে । স্যুভেনির, সুইমিং পোষাক, ড্রাইভিং গিয়ার ও অন্যান্য সব ধরনের জল ক্রীড়া ও বিচ এ সান বাথ করার জিনিস পত্রে ভর্তি । তবে আশ্চর্যের বিষয় এই যে সব জিনিস কোরিয়া, চীন ও তাইওয়ানের তৈরী, কিছু ইউরোপীয় সামগ্রী ও অবশ্যই সেখানে আছে । পূর্ব ইউরোপ, ফ্রান্স ও স্কেন্ডেনেভিয়ান লোকজনের আনাগোনাই বেশী । সবাই সূর্যের অকৃপন আলো পোহাতে সাগর সৈকতে জড়ো হয়েছে। কেউ কেউ সাঁতার কাটছে। বয়া দিয়ে সাঁতারের এলাকা চিহ্নিত করা আছে। একটু দূরে প্যারা গ্লাইডিং, ওয়াটার স্কি ও অন্যান্য জলক্রিয়া চলছে। সাগর সৈকতেই এ সব সেবা পরিচালনাকারীদের অফিস আছে । টাকা দিয়ে ঘন্টা কিংবা যতক্ষণ খুশি তা চড়া যায় ও মজা করা যায় । এসবের উপর ট্রেনিং দেয়ার জন্য কোচ ও কোর্স আছে। বিশেষ করে ড্রাইভিং এর জন্য বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক মানের কোর্সের ব্যবস্থা আছে । সাগরের পানি স¦চ্ছ বলে ডুবুরিরা সাগর তলের রহস্য দেখার জন্য প্রতিনিয়ত নামছে । প্রবাল ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ এর বিচিত্র সম্ভার সেখানে আছে। আমাদের প্রোগ্রাম আইয়া নাপা ছাড়িয়ে ফিগ টি বের দিকে। প্রোটারাস পারালিমনি এলাকার সাগর সৈকত। সেখানে যেতে যেতে লাঞ্চ এর সময় হয়ে গেল। লাঞ্চ ব্রেক হলো লোকাল একটা তিন তারা হোটেলে । এই হোটেলের সাথে ট্যুর অথরিটির যোগাযোগ আছে। বাইরে বুফে লাঞ্চের ব্যবস্থা । যার যার পছন্দ মত খাবার নিয়ে সবাই সাগরের দিকে মুখ করে সাগর দেখছে, খাচ্ছে। সাগরের মাঝে ভেসে বেড়ানো স্পীডবোট, স্কীরত মানুষ ও অন্যান্য সব দৃশ্য এখান থেকে দেখা যায়। এখানে সাগরে সাতার কাটার জন্য দুই ঘন্টার বিরতি । অনেকে সান বাথ এর জন্য চলে গিয়েছিল সৈকতে। বেড আছে হোটেলের সামনের বিচে, অনেকে সাঁতার কাটছে, পানিতে নামছে । সিড়ি দিয়ে সাগরে সাতারের জায়গায় যাওয়ার ব্যবস্থা করা আছে । সব কিছুই সুন্দর ভাবে পরিকল্পনা মাফিক সাজানো, পরিচ্ছন্ন হওয়া কিংবা গোসল করার জন্য সাওয়ার ও অন্যান্য ব্যবস্থাও রয়েছে । দুই ঘন্টার মত রোদের নীচে ঘুরে ঘুরে মানুষের আনন্দের সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিলাম । ভালই লাগল । যদিও এটা আমাদের কাছে অন্য ভুবনের মতই । অকৃপন সূর্যের আলো এ সব লোকজন কখনো পায়নি নিজভূমে, তাই তারা এসেছে ভুমধ্যসাগরীয় দ্বীপমালায় আনন্দের জন্য । ৫ টার দিকে আমরা ফেরার জন্য প্রস্তুত হলাম । এর পর দিরিনিয়া গ্রামে আমরা এলাম । এই গ্রাম থেকে ৫০০/৭০০ গজ দূরে ফামাগুস্তা শহর দেখা যায়। এটার বর্তমান নাম ঘোষ্ট টাউন ।



ফামাগুস্তা - সাইপ্রাস

এক সময় ফামাগুস্তা সাইপ্রাসের অন্যতম পর্যটক কেন্দ্র ছিল । তুরস্ক কর্তৃক ১৯৭৪ সালে আগ্রাসনের পর বর্তমানে সে এলাকা তুর্কী সাইপ্রিয়ট এ পড়েছে। দূর থেকে পরিত্যাক্ত বিচ ও বড় বড় অনেক হোটেল দেখা যায় । বর্তমানে এই শহরে কেউ থাকে না । জন মানব হীন এলাকা, দুই এলাকার মাঝে তারের বেড়া, দুটো দেশের সীমানা নির্দেশ করছে এবং দুই পার্শ্বেই প্রহরী মোতায়েন করা আছে । ফামাগুস্তার লোকজন এখন সাইপ্রাসের অন্যান্য এলাকায় বসবাস করছে । এক সময়ের জনারন্যে পূর্ণ এলাকা এখন জনশূণ্য, এটাই নিয়তি । তবে গ্রীক সাইপ্রিয়টরা তাদের এলাকা ফিরে পেতে প্রচারনা চালাচ্ছে এবং ভ্রমনকারীদের কাছেই এই ইতিহাস সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয় । এরপর আমরা তুর্কী সাইপ্রিয়ট সীমান্ত দিয়ে লিমাসলের পথে ফেরৎ যাত্রা করি । পথে আসতে আসতে অনেক তুর্কী বর্ডার পোষ্ট দেখা যায় রাস্তার বেশ কাছে, এক সময় তুর্কী সৈন্যরা রাস্তায় এসে ট্যুরিষ্টদের সাথে কথা বলত, দেখা করত । তবে ২/৩ মাস আগে তুর্কী সৈন্যরা ১ জন নাগরিককে কি কারনে যেন গুলি করে এবং এর পর তাদের আসা বন্ধ হয়ে যায় । চেক পোষ্টগুলো ছাড়া এই এলাকায় কোন জনবসতি নেই ৮/১০ মাইলের ভিতর । দূরে তূর্কী সাইপ্রাসের অযতেœ ফেলে রাখা জনশুণ্য এলাকা ও পাহাড় দেখা যায় । পাশাপাশি দুইটা এলাকা একটা সমৃদ্ধির পথে চলছে অন্যটা অবহেলিত জনবিহীন জনপদ । রাস্তার দুই পার্শ্বে ২ ধরনের পতাকা । এক দিকে গ্রীক ও গ্রীক সাইপ্রাসের পতাকা অন্য দিকে তুরস্ক ও তুর্কী সাইপ্রাসের পতাকা পাশাপাশি সহ অবস্থান যদিও সহনীয়নয় মোটেই । বাসে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যায় লিমাসলে পৌছলাম ।

পাফোস এলাকা দেবতাদের ক্রীড়া ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত । এটা সাইপ্রাসের পশ্চিম অংশের রাজধানী । ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ততা ছাড়াও এখানে রয়েছে সাইপ্রাসের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর । এই শহরের আকর্ষন হলো মৎস শিকার এবং পোতাশ্রয় । পাফোস দূর্গ এবং ক্যাফেগুলো স্থানীয় খাবার পরিবেশন করে ইউরোপীয় পর্যটকদের রসনা তৃপ্ত করে । এই পাফোস এর তটভূমিতে গ্রীক পুরানের প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির জন্ম । এখানে সাগর থেকে মাথা উচু করে দাড়ানো বিশাল প্রস্তর খন্ড আছে যাকে ভেনাস রক বলা হয় । আফ্রোদিতির অবস্থান ও উপস্থিতি দ্বীপটিকে একসময় আকর্ষনীয় করে তুলেছিল । কুকলিয়াতে দেবীর প্রথম দিককার অবস্থানের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল । এছাড়াও পাফোস এর আরেকটা পরিচিতি আছে, ১৯৪৫ সালে রোমান রাজত্ব কালে এইখানে প্রথম খৃষ্ট ধর্মের আলো লেগেছিল । সেন্ট পল এই দ্বীপের রাজাকে ধর্মান্তরিত করেছিল । এখানের সব কিছুই যেন একটা খোলা জাদুঘর এর মত । অনেক প্রাচীন গুহাও এখানে আছে । যে পিলারে বেঁধে সেন্ট পলকে চাবুক মারা হয়েছিল তা সংরক্ষণ করা আছে এবং রাজাদের সমাধি স্তম্ভও এখানে সংরক্ষিত । দেখার মত প্রাচীন ওডিয়ন থিয়েটার, বাইজাইন্টাইন মিউজিয়াম ও জেলা আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম । এখানে পাঁচ গ¤¦ুজ বিশিষ্ট বিখ্যাত বাইজাইন্টাইন চার্চ আছে এবং অনেক মনোষ্ট্রিতে তাদের নিজস¦ আংগুর থেকে মদ প্রস্তুত এর কারখানা আছে । পানো পানাজিয়া এলাকায় একটা ছোট্ট মিউজিয়াম এর সন্ধ্যান পাওয়া গিয়েছিল তা বর্তমানে সাইপ্রাস এর প্রথম প্রেসিডেন্ট আর্চবিশপ মাকারিওস এর নামে উৎসর্গীকৃত । এখান থেকে ড্রাইভ করে সিডারভেলিতে যাওয়া যায় । এই জায়গায় সাইপ্রাসের বিখ্যাত শিংযুক্ত ভেড়ার চারন ক্ষেত্র । সাগর তীরের ছোট লেম্পা নামক গ্রাম অনেক ঐতিহাসিক মূল্য বহন করে । এটার সামনেই সাগরের মনোরম দৃশ্য এবং এখানেই ক্যালিওলিথিক যুগের বসতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল । বর্তমানে কিছু বাড়ীঘর সুক্ষ্মভাবে পুনঃ নির্মানের ফলে এর অভ্যন্তর ক্যালিওলিথিক জীবন ধারা ও প্রবাহকে আমাদের সামনে তুলে ধরে । এর আরো উত্তরে শান্ত রিসোর্ট হলো পোলিস, সাগর ও মৎসচারন ক্ষেত্র সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এলাকা । পাফোস এর নিম্নাঞ্চল এলাকা কলাবাগান ও কলা চাষের জন্য বিখ্যাত এবং এর পরই পশ্চিম ট্রুডোস পর্বতমালা । আকামা পেনিনসুলাতে যাওয়ার এটাই গেইটওয়ে । আকামা পেনিন সুলা শ্বাসরোধকারী গিরিসংকট, সুন্দর তটরেখা ও অকৃত্রিম প্রাকৃতিক ট্রেইল সমৃদ্ধ ।

ট্রুডোস পার্বত্য এলাকা ভূমধ্যসাগরীয় বিচ লাইফ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । এই পার্বত্য এলাকা সাইপ্রাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছে এবং এর চুড়া চিওনিস্ট্রা নামক স্থানে ১৯৫২ মিটার পর্যন্ত পৌছেছে । এটাই মাউন্ট অলিম্পাসের সর্বোচ্চ চুড়া । শীতকালে এই এলাকায় স্কী করতে পর্যটকের সমাগম হয় । অন্য সময় এর প্রাকৃতিক ট্রেইল ধরে অনেক প্রকৃতি প্রেমিক হাইকিং এ বের হয় । এই এলাকায় চেরি, আপেল, পিচ প্রভৃতি ফল প্রচুর পরিমানে জন্মায় । লিমাসল, পাফোস কিংবা নিকোশিয়া থেকে সরাসরি রাস্তা আছে ট্রুডোস যাওয়ার । যারা প্রকৃতির মাঝে বিচরন করতে আগ্রহী তারা এই ট্রুডোস এলাকার সবুজ পার্বত্য ভূমিতে ভ্রমন করেন । এখানে থাকার জন্য এপার্টমেন্ট ও অন্যান্য হোটেল আছে । এখানে অনেক গুলো মনেষ্ট্রি আছে । কিককো মনেষ্ট্রিতে ভার্জিন মেরির একটা স¦র্ণের আইকন বা প্রতিকৃতি রক্ষিত আছে । যারা পাহাড় ও বনভূমি পছন্দ করে তাদের জন্য এর প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী অতীব মনোরম। শীত গ্রীষ্ম দুই সময়েই অনেক পর্যটক এ এলাকা ভ্রমন করে থাকে ।



লবণ হ্রদ, নারনাকা, সাইপ্রাস

সাইপ্রাসে অবস্থান শেষ পর্যায়ে, লারনাকা থেকে ফ্লাইট ধরতে হবে তাই একদিন আগে গ্র“প টেক্সি নিয়ে লারনাকায় চলে এলাম। সাগরের পাড়ে হোটেল। ২০ পাউন্ড ভাড়া সুন্দর রুম,পর্যটকে ভর্তি । আমার রুমে জিনিষপত্র রেখে সাগর পাড়ের রাস্তা ধরে হাঁটতে লবন হ্রদের পাড়ে চলে এলাম। বিশাল এলাকা। হ্রদে পানি নাই তবে লবনের সাগরের মত সাদা সাদা হয়ে আছে। হ্রদের অন্যদিকে এক কোনায় একটা মসজিদ, এক সময়ে মুসলমানদের এই দ্বীপে অবস্থানের সাক্ষী হয়ে আছে। এখনো এখানে কিছু সংখ্যক মানুষ নামাজ পড়ে। আজানও হয় তবে আমি শুনিনি। হোটেলে ফিরে এসে রাতের ডিনার এর প্রস্তুতি নিলাম। এক বোর্ডারের সাথে পরিচয় হলো। সৌদি আরবে চাকুরীরত ব্রিটিশ মহিলা । সৌদি আরবে বয়ফ্রেন্ড যেতে চায় না তাই তিনি এখানে এসেছেন। বয়ফ্রেন্ড এখানে এসেছে দুজনে সাইপ্রাসে ১৫ দিনের ছুটি কাটিয়ে যে যার গন্তব্যে রওয়ানা হয়ে যাবে। রাতে বাইরের হোটেলে খাবার খেয়ে নিলাম। রাতে রিসিপশনে ফ্লাইট টাইম জানিয়ে দিলাম। ভোরে ডেকে দিল। ট্যাক্সি নিয়ে এয়ারপোর্টে এলাম। বিদায় সাইপ্রাস । ভালই কাটল দিনগুলো।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৪

নেট ইনফিনিটি বলেছেন: Add picture to make it interesting...

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৪

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: দারুন অভিজ্ঞতা , দেখার কত কিছু আছে ...


আপনি অনেক ভাজ্ঞবান একজন । :)

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩১

শোভন শামস বলেছেন: উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ

৩| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২৫

হীরা ৪৪ বলেছেন: ছবি সাথে জুরে দিলে আরও ভালো লাগবে

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৭

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.