নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফরাসীতে শহরের নাম মঁ ইংরেজীতে মান। আইভরি কোষ্টের বাণিজ্যিক রাজধানী আবিদজান থেকে ৫৯০ কিলোমিটার উত্তরে। মঁতে যেতে হলে রাজধানী ইয়মাসুকুরো হয়ে দালোয়া দিয়ে যেতে হয়। আবিদজান সমতল ও লেগুনের শহর। মঁতে যাওয়ার পথে বহু ছোট ছোট জনপদ পাড়ি দিতে হয় এবং দুটো নদীও পার হতে হয় তবে ফেরীতে না, সুন্দর ব্রিজ আছে নদীর উপর। সাসান্দ্রা নদী তার মধ্যে একটা, এই নদীর মধ্যে অনেক মরা গাছের ডালপালা দেখা যায়, মনে হয় পানির মধ্যে আগাছা হিসেবে গাছ জন্মে তা পরে মরে গেছে। জনপদ গুলো পার হওয়ার সময় স্থানীয় বাজার এর কাছে লোকজন মোটা মোটা ইদুর বিক্রির জন্য হাতে করে ঝুলিয়ে রাখে, আমাদের মুরগীর মত। তাছাড়া কাসাভা ও নানা ধরণের ফল ও বাজারে পাওয়া যায়। প্লানটেন বা বড় কাঁচা কলার মত সব্জীও বেশ দেখা যায় বাজারে। মৌসুমে আম, আনারসের ও পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকে আম প্রায় সারা বছর হয় এখানে। লোকজনের প্রধান খাদ্য অবশ্য কাসাভা। মাটির নীচে জন্মানো আলুর মত এক ধরনের শেকড়। নদীর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় আট দশ জন জেলে জেলেনি রাস্তার পাশে মাছের পশরা মেলে রেখেছে। দুরে নদীতে ডিংগী নৌকায় একা একা কয়েকজন জেলে সময়কে ভুলে গিয়ে মাছ ধরছে। কালো কালো মানুষ গুলো হাসিখুশী এবং বেশ সরল,তবে হঠাৎ হিংস্র হয়ে গেলে নরহত্যায় বিন্দু মাত্র হাত কাঁপবে না এদের। কারো কারোর চোখ লাল, চেহারা দেখে আফ্রিকায় নবাগত লোকজনের একটু সমস্যা হলেও হতে পারে।
মঁ শহরে
আবিদজান থেকে মঁ এ গেলে মনে হবে একটা গ্রাম এ এসেছি এবং গ্রামটা যুদ্ধ বিধ্বস্থ। রাস্তাগুলো ঠিক থাকলেও মাঝে মাঝে গর্ত। অনেক দিন রক্ষণাবেক্ষণ নেই বুঝা যায়। বাজারের চেহারাও করুন। দেখলে অভাব আছে মনে হয়। সাধারণ মানুষের ময়লা পোষাক জৌলুস এর অভাব। মন খারাপ হয়ে যায় । এলাকাটা পাহাড়ী। যে কোন জায়গা থেকে তাকালে দুরে পাহাড় দেখা যায় । কোনটা পাথরের কোনটা আবার গাছ পালায় সবুজ। মঁ তে যাবার রাস্তা পিচঢালা, তেমন ট্রাফিক নেই মাঝে মাঝে দু চারটা স্থানীয় গাড়ী,ট্রাক,কন্টেইনার ক্যারিয়ার চলে। শহর অঞ্চলের পাশ দিয়ে চলার সময় অবশ্য অন্য রকম চিত্র। মহিলারা পিঠে বাচ্চাকে বেধে বহুদুর পথ হেটে কাঠ কিংবা খাবার জোগাড় করে আনে। রাস্তাঘাটে ,বাজারে মহিলাদের সংখ্যাই বেশী । ফল বিক্রেতা ,মাছ বিক্রেতা সবাই বিভিন্ন বয়সের মহিলা,পুরুষরা দশাশই হলেও অলস ও আরাম প্রিয়। মঁ তথাকথিত বিদ্রোহীদের এলাকায়, আইভরি কোষ্টের সরকার সমর্থিত অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট বাগবোর অনুগত বাহিনী দক্ষিনাঞ্চলে আধিপত্য কায়েম করেছে আর বিরোধীদের নিয়ন্ত্রনে উত্তরের এলাকা।
সবুজে ঢাকা পাহাড় বনভূমি - মঁ
মঁ তে পাত্থরে পাহাড়, সবুজে ঢাকা পাহাড়, বনভূমি, সমতল সবই আছে। রাস্তার পাশের একদম খাড়া পাহাড় রাস্তা অন্ধকার করে যেন দাড়িয়ে আছে।
জাতিসংঘ বাহিনীর তৎপরতায় মঁতে প্রান ফিরে আসলেও জীবন যাত্রা পুরোপুরি আগের মত প্রান চঞ্চল হতে অনেক সময় লাগবে। একদা ছেড়ে যাওয়া কোন জনপদে দশ হাত উচু এলিফান্ট ঘাষ জন্মে এলাকাটা নিকস অন্ধকারে পরিণত করেছে। এই ঘাস কেটে পরিস্কার করে এলাকাকে প্রায় সভ্য জনপদে পরিণত করার কৃতিত্ব শান্তিরক্ষী বাহিনীর। এ এলাকায় আনারস, আম গাছে এখন ভরে গেছে। ছোট ক্লিনিকে সকাল থেকে বহু স্থানীয় মা শিশু বৃদ্ধ লাইন দিয়ে চিকিৎসা পেয়ে ফিরে যায় তার কালো মুখের হাসিতে কিছুটা আশার আলো কি ঝিলিক দেয়না? তাই মঁতে প্রান এসেছে বলা চলে।
আবিদজান থেকে ইয়ামাসুকুরু ও দালোয়া হয়ে মঁ তে আসতেই চারটা বেজে গেল। রাতে হোটেলে থাকার প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি। শহরের ভিতর কিছুক্ষণ চলার পর মূল রাস্তা ছেড়ে আমরা একটু ভেতরের দিকে ঢুকে পড়লাম। সামনেই ছোট পাহাড়ের মত উচুনিচু জায়গা। পাহাড়ের বুক চিরে আঁকা বাকা রাস্তা একদম উপরে উঠে গেছে। এখানে একটা চার্চ আছে। চার্চ এর ব্যবস্থাপনায় সুন্দর রেষ্ট হাউজের ব্যবস্থা। এজায়গাটাকে স্থানীয়রা বলে ‘সেন্টার বাথানী’, এখানে বেশকিছু লোকজনকে দেখলাম হাতের তৈরী বিভিন্ন সামগ্রী বানাচ্ছে। চার্চর ব্যবস্থাপনায় এদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং তাদের বানানো জিনিষ প্রদশনী ও বিক্রির ব্যবস্থা করে। সাথেই একটা ঘরে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা আছে। বিকেল ্হয়ে গেছে বলে আস্তে আস্তে সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তখন সন্ধ্যা হয় হয়, একজন কর্র্মী আমাদেরকে গাইড করে রেষ্ট হাউজের দিকে নিয়ে গেল প্রত্যেককে রুম বুঝিয়ে দিল। পাহাড় থেকে পথ নীচে চলে গেছে এবং কিছুদূর গিয়েই বেশ সুন্দর থাকার জায়গা। প্রতিটা রুমের সামনে বারান্দা এক এক ব্লকে ৩/৪ টা করে রুম। বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে। এসি, ফ্যান দুটোই আছে। গরম ও ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা ও আছে এখানে যা মঁ এর মত বলতে গেলে অজপাড়া গাঁ টাইপ শহরে আশা করাই ঠিক না। তবে একটা জিনিষের অভাব দেখলাম তা হলো টেলিভিশন। যেহেতু স্থানীয় ষ্টেশন নেই তাই তাদের এখানে কোন টিভির ব্যবস্থা নেই। যাদের সামর্থ আছে তারা স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখে। মঁ যেহেতু তথাকথিত বিদ্রোহীদের এলাকা,বাগবো সরকারের তাই এদের দিকে তেমন খেয়াল রাখেনি। সন্ধ্যা বেশ জাকিয়ে নেমে এসেছে, চারিদিকে বেশ অন্ধকার আসার পথে রাস্তায় বিদ্যুৎ দেখিনি। বেশ জংলী পরিবেশ তাই অন্ধকার গাঢ় হয়ে নেমেছে। রাতের বেলা গোসল করে ফ্রেস হয়ে ঘুম দিলাম। প্রায় ৫৯০ কিঃমিঃ এর মত জার্নি করে শরীর মোটামুটি ছেড়ে দিয়েছে। ঘুম বেশ গাঢ় হলো। আগে ঘুমানোতে বেশ ভোরেই উঠে গেলাম। সকাল বেলা রেষ্ট হাউজের আশেপাশের সৌন্দর্য দেখে একেবারে তাক লেগে গেল। সেন্টার বাথানী থেকে রেষ্ট হাইজের দিকে নেমে আসা ঢালু রাস্তাটাকে প্রায় একটা টানেলের মত লাগছে। দুপাশের ঝোপমত গাছ গুলো রাস্তার উপরের অংশ ঢেকে দিয়েছে। রুম থেকে বের হয়ে দেখলাম নানা ধরনের রংবেরং এর পাতাবাহার ও অন্যান্য ফুল গাছ। গাছ গুলোতে অনেক নাম না জানা রংগীন ফুল ধরে রয়েছে। সকালের ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব তখনো আছে এসময় এলাকাটাতে একটা স্বর্গীয় ভাব বোধ করছিলাম। সবাই মিলে অনেক ছবি তুললাম। এখানে বিশাল গোল পাথরের চাই আছে কয়েকটা, চার পাঁচ ফুটের মত উচু। এত বড় পাথর সাধারনত সমতলে দেখা যায় ন্ া। জায়গাটার ল্যান্ডস্কেপিং এর জন্য পাহাড় থেকে নিয়ে এসেছে মনে হয়। সবুজ ঘাষ সুন্দর করে ছাঁটা,গাছের পাতা ঝড়ে পড়ে আছে ঘাষের উপর । এসময় সূর্যের আলো ঘাষের উপর পড়ছে, অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। এ ধরনের দৃশ্য হয়ত প্রতিনিয়তই ঘটে তবে এরকম ভাবে দেখার মত সময় মন বা ধৈর্য্য হয়ত আমাদের থাকে না। এবারে মান এসে সেন্টার বাথানিতে থেকে বেশ ভাল লাগল।
মঁ শহরের দৃশ্য
শহরের মিল ফ্যাক্টরী বন্ধ, ব্যাংক গুলো এখন কাজ করছে না। দোকান পাট ও তেমন জমজমাট ন্ াজিনিষপত্র মুলত পাশের দেশ মালি ও বুরকিনা ফাসো থেকে আসে। কিছু কিছু জিনিষ আবিদজান থেকেও আসে তবে তা বেশ কম। মূল রাস্তা থেকে যে সব রাস্তা বেরিয়ে এসেছে সেগুলো খুব কমই পিচঢালা, ইট বা নুড়ি বিছানো কিছু রাস্তা আছে তবে বেশির ভাগ শক্ত লাল মাটির কাঁচা রাস্তা। বিল্ডিং ও আছে তবে বেশির ভাগ একতলা ও শ্রীহীন। বহু দিন ধরে মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষণ না হওয়ায় জীর্ণদশা। মান মুসলিম প্রধান এলাকা। শহরের মধ্যে মসজিদ আছে তবে ধর্ম নিয়ে তেমন বাড়াবাড়ি নেই। টুপি মাথায় ও কাউকে দেখা যায়। এরা মূলত মালি ও আশেপাশের দেশ থেকে আসা মানুষ কিংবা তাদের বংশধর। আইভরি কোষ্টের দক্ষিণ ভাগে এরাই সংখাগরিষ্ট এবং প্রেসিডেন্ট বাগবো এদের কাছে ক্ষমতা যেন না যায় সেজন্য তার ক্ষমতার মেয়াদ ছলে বলে কৌশলে বাড়িয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছেন। দেশের গৃহযুদ্ধ দেশকে এখন দুটো ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। মধ্যখানে রয়েছে জোন অব কনফিডেন্স। জাতিসংঘ বাহিনী এবং ফরাসী বাহিনী লিকর্ন দুই এলাকাতেই টহল দেয় ও যুদ্ধ বিরতী কার্যকর করার জন্য নিয়োজিত।
পাহাড়ের উপর উঠলে মোটামুটি শহরটা সুন্দর ভাবে দেখা যায়। আশেপাশের পাহাড় গুলোতে এধরনের বসার ও দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে মঁ শহরকে চেনার উপায় হচ্ছে তার টুইন পিক, দুটো জমজ পাহাড় চুড়া বেশ উচু পাত্থরে। তবে গা পুরোপুরি পাথরের হলে ও সবুজে ছাওয়া, দুর থেকে গাঢ় অন্ধকার অন্ধকার মনে হয়।
পাহাড়ের উপর থেকে মঁ শহরের দৃশ্য
মঁতে সুন্দর একটা ঝর্ণা আছে। শহর ছাড়িয়ে বনপথে বেশ যেতে হয়। গাড়ী যাওয়ার কাঁচা রাস্তা। মানুষজন সে পথে গভীর বনের দিকে কিংবা আশেপাশের গ্রামে চলাচল করে। রাস্তা থেকে সিড়ি দিয়ে নীচে নামতে হয়। গাছের ডাল কেটে সুন্দর মাটির সিড়ি। নীচে নেমে গাছের ডাল দিয়ে বানানো সাঁকো। সাঁকোর নিচে ক্ষীণ পানির একটা ধারা বয়ে চলছে। দুরে ঝর্ণার শব্দ শোনা যায় সেখান থেকে। বর্ষায় পানির স্রোত তীব্র থাকে এবং ঝরণা প্রমত্তা হয়ে যায়। শীতে শীর্ণ হয়ে পাত্থরে পাহাড়ের চেহারা দেখা যায়। তখন পাথর বেয়ে বেশ খানিকটা উপরে উঠে ছবিও তোলা যায়। পাহাড়ের উপর থেকে পানির ধারা নেমে আসছে। আসে পাশের লোকজন মাঝে মাঝে এখানে বেড়াতে আসে।
লা কাসকাঁদ
ঝর্ণা দেখতে টিকেট লাগে একশত সিএফএ টিকেটের দাম। গৃহযুদ্ধের সময় পর্যটকের শূণ্যতায় কাউন্টার ক্লার্কের বেতন ও সংকুলান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই কাউন্টার প্রায় খালি থাকে। বিদেশী দেখলে টিকেট বিক্রেতা তার কাছাকাছি আবাস থেকে দৌড়ে চলে আসে । ফেরার পথে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। বিশাল গাছ গুলোর ক্যানোপির ফাঁক দিয়ে সূর্যের ছায়া মেশানো আলো মাটিতে পড়ছে। মহিলারা ঝুড়ি ভরে কাসাবা মাথায় নিয়ে বাড়ী ফিরছে। বজুঁ বলাতে হাসিমুখে প্রত্যুত্তর বজুঁ বলছে সাথে বলছে সাভা ? মেরসি, ভালতো ধন্যবাদ সহৃদয়তা কমেনি গাঁয়ের মাহিলা গুলোর। এই কাসাবাই তাদের মূল খাদ্য। এগুলো শুকিয়ে গুড়ো করে তারা খায়। কেউ হেটে হেটে কাসাবা খেতে খেতে যাচ্ছে। বনপথে অন্ধকার নেমে আসার আগেই কাঁচা রাস্তা দিয়ে বন পেরিয়ে মূল সড়কে চলে এলাম।
ঠিক হলো মঁ থেকে ৮০/৯০ কিলোমিটার পথ লাইবেরিয়ার সিমান্তের কাছাকাছি দানানেতে যাব । দানানের দানতে নদীর পাড়ে বেড়ানোর জন্য বেরিয়ে পড়লাম। মঁ থেকে রাস্তা পিচঢালা তবে যতই এগিয়ে যাচ্ছি রাস্তায় গার্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বুঝা যায় বহুদিন মেরামত হচ্ছে না রাস্তা গুলো। দুপাশে বন আর বন। জনপদ তেমন নেই। পথের মধ্যে একটা গ্রাম পেলাম তুলুপুলু নাম। গাড়ী থামিয়ে গ্রাম দেখতে গেলাম। বেশ গরীব মানুষ গুলো, বিকেল বেলাতেই তাদের অল্প কিচ’ রান্নার কাজ শেষ বাড়ীর বাইরে চুলার আগুন তখনো নেভেনি। ছোট ছোট বাচ্চা গুলো উদোম। গ্রামের কিছু ছবি তুললাম। বাজার ও তেমন জমজমাট ন্ াঅল্প কিছু মহিলা আনাজ কলা ও কিছু পাকা কলা নিয়ে এসেছে। আনাজকলার সাইজ বেশ বড় এরা এটাকে প্লানটেন বলে। কয়েকজন পথে বড় সাইজের ইদুর ঝুলিয়ে বিক্রি করছে। এগুলোকে স্থানীয় ভাষায় আগুটি বলে। এদের মাংশ নাকি বেশ সুস্বাদু।
তুলুপুলু গ্রাম ছেড়ে প্রায় মেঠো পথে দানতে নদীর দিকে চলছি। পথে বেশ বিপজ্জনক সেতু। দুটো তিনটে গাছের গুড়ি দিয়ে সেতু বানানো। একটা গাড়ী কোনমতে বিপজ্জনক ভাবে পার হতে পারে। সেতু পার হয়ে নদীর পাড়ে গেলাম। বর্ষাকালে এই নদীতে বেশ স্রোত থাকে তখন বর্ষাছিল না বলে নদী শান্ত তবে বোঝাযায় খরস্রোতা নদী। পাশের পাহাড় থেকে ঝরণা নেমে এসে নদীতে পড়ছে। এই ঝরণা গুলোর পানিই বর্ষাকালে বেড়ে গিয়ে নাদীকে খরস্রোতা করে। নদীর পাড়ে ছোট্ট গ্রাম,লোকজন নদীতে গোসল করছে কেউ কেউ কাপড় চোপড় ধুয়ে নিচ্ছে। গাড়ী ও বিদেশী মানুষজন দেখে বাচ্চকাচ্চারা সব জড়ো হলো আশে পাশে। বিকেলে চা নাস্তার আয়োজন নিয়ে এসেছিলাম গাড়ীতে। বাচ্চাদেরকে কিছু বিস্কিট দিয়ে দেওয়াতে ওরা বেশ খুশী মেরসি বলে হাসিমুখে ধন্যবাদ দিয়ে একটু দুর সরে গেল। আমরা দ্রুত চা নাস্তা খেয়ে নিলাম। সন্ধ্যা তখন হয় হয়। রাত বেশ অন্ধকার ,এই বন পথে আমাদের ফিরে যেতে হবে ৯০ কিলোমিটার দুর মঁ তে। দ্রুত সব গুছিয়ে ফিরতি যাত্রা করলাম। রাস্তা ফাঁকা তবে মাঝে মাঝে গর্ত বলে সাবধানে চালাতে হচ্ছিল। প্রায় রাত সাড়ে আটটার দিকে মঁ তে পৌছে স্বস্থি ফিরে পেলাম।
আবিদজান জৌলুসময় শহর , বিশাল রাস্তাঘাট ছেড়ে প্রকৃতির কোলে টুইন পিক লা, কাসকাদ ঝর্ণা ,দানতে নদীর দৃশ্য এবং সেন্টার বাথানীর আতিথেয়তায় মুগ্ধ মনে মঁ ছেড়ে আবার আবিদজানের পথে পরদিন রওয়ানা হলাম। আরো বহুদুর যেতে হবে। আবিদজান পৌছেুতে প্রায় ছশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে নিজেদের সাময়িক বাসস্থানে ফিরতে হলে। এই পথ চলাতেই যেন আনন্দ।
‘ মঁ ’ র পথে যেতে
মঁ কে আমি মান বলে কি ভুল করেছি
ফ্রাংকো ফোনের দেশে মঁ ই বলতে হবে
বহুদুর পথ তবুও নতুনের হাতছানিতে
আবিদজান থেকে বিরামহীন পথ চলা
বিশাল বনপথের বুক চিরে বানানো মোটরওয়ের উপর দিয়ে,
দুপাশে আকাশ ছোয়া গহীন বনের মাঝ দিয়ে বানানো পথে।
কোথাও কাকাও গাছ কোথাও বা নাম না জানা অজস্র বৃক্ষ,
বাওয়ার গাছও আছে এদের সাথে
পথ চলতে চলতে এক চিলতে দেখে যাওয়া।
মাঝে মাঝে দেখা হয়ে যায় কাল পাথরে খোদাই করা মানুষ গুলোর সাথে
ওরা বয়ে নিয়ে চলছে কাসাভা কিংবা প্লানটেনের বোঝা
ওরা পথ চলে ,মাটির দিকে তাকিয়ে ঘামে ভেজা শরীরটা টেনে নিয়ে চলে
তার ছ্ট্টো কুড়ের কাছে, বা কখনো স্থানীয় বাজারে।
পথে যেতে যেতে গাড়ীর উপর হুমড়ী খেয়ে পড়ে
কোন আগুটি বিক্রেতা হাতে পাঁচ ছটা ঝুলানো স্বস্থ্যবান ইদুর,
আনারস কিংবা কলা বিক্রেতারাও থাকে পথের পাশে পাশে যদি কেউ কেনে ফলমুল।
বহুদুরে চলে গেছে মোটর ওয়ে, বাঁকহীন সোজা
মাঝে মাঝে গ্রামের কাছে দিয়ে যাওয়ার সময়
কুকুর গুলো চিৎকার করে গাড়ীকে ধাওয়া করে
তারা গ্রামের জাগ্রত প্রহরী যেন শত্র“ বিনাশ করবেই
গ্রামগুলো নিষ্প্রান, ছোট্ট কুড়ে গুলোতেই মানুষের দিন গুজরান
গ্রাম, বাজার, নানা ফল, বুশমিট, আগুটি
সাসান্দ্রা নদী থেকে ধরে আনা পঁয়সো বিক্রি হচ্ছে।
এরা সব খেটে খাওয়া নিতান্ত দরিদ্র মানুষ।
প্রাচুর্যের দেশের মানুষ হয়েও এরা বিচ্ছিন্ন প্রাচুর্য থেকে ।
এক সময় রাজধানী ইয়ামাসুকুর দিগন্ত দেখা যায়
তারপর বাসিলিক ডানে ফেলে দালোয়ার পথ তাও কয়েকশো মাইল রাস্তা,
বামে সানপেড্রোর সোজা পিচ ঢালা পথ রেখে ডানে মঁ অভিমুখে যাত্রা।
সাসান্দ্রা নদী, একলা নৌকায় জেলে ,পানির মধ্যে বিশাল সব ডাল পালা।
স্থির নদীর পানি দেখে দেখে বনপথ ধরে দ্রুত মঁ র পথ।
দূর থেকে টুইন পিক দেখা গেলেই মনটা নেচে উঠে মঁ এসে গেছে।
দীর্ঘপথ ভ্রমনের শেষ গন্তব্য এসে গেছে তবে শুধু আমাদের জন্য।
এই পথ চলে গেছে ওডিয়েন, ফার্কে সুদুগু হয়ে বুরকিনা ফ্রাসো কিংবা মালির ভেতর,
তবে তা বহুদুর পথ আরো এক যাত্রায় তার শেষ হবে।
©somewhere in net ltd.