নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

শের শায়রী

হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই।।

শের শায়রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"বোস আইনষ্টাইন কনডেনসেট থিওরী" এবং সৈয়দ মুজতবা আলীর "পন্ডিত মশাই"

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৫২


ঢাকা ভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদ

বোসন কনা, ঈশ্বর কনা, হিগস বোসন পার্টিকেল’স এ শব্দগুলো হয়ত অনেকের কাছেই পরিচিতি ঠেকবে কিন্তু যখনই বলা হবে এর অরিজিন্যাল আবিস্কারকর্তা কে? তখনি অনেকে আমার মত মাথা চুলকানো শুরু করবে, সেটাই স্বাভাবিক আমরা দেশী ঠাকুর ফেলে বিদেশি কুকুরের মূল্য বেশী দেই। এটাই আমাদের কালচার হয়ে দাড়িয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। যাক আসল কথায় আসি।

আইনষ্টাইনের নাম বললে কারো চিনতে বাকী থাকে না, থিওরী অভ রিলেটিভিটির প্রচারে এমন অবস্থা তৈরী হয়েছে দুনিয়ার প্রায় সব প্রান্তে এর নাম প্রায় সবাই জানে এবং E=mc² এক নিঃশ্বাসে বলে দেবে আইনষ্টাইনের যুগান্তকারী আবিস্কার হিসাবে। আবার যদি জিজ্ঞাস করেন বিশ্বের সব থেকে বড় মেশিনের নাম কি তাও প্রায় সবাই বলতে পারবে লার্জ হার্ডন কলিডার (LHC)। কারা বানিয়েছে তাও প্রায় সবারই জানা ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশান ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (CERN)? যদি জিজ্ঞাস করা হয় আচ্ছা এই হিগস বোসন কনা বা গডস পার্টিকেলের বোসন কনার নামটা কোথা দিয়ে আসছে তখনি আমাদের মাথা চুলকানো বিরক্তি শুরু হবে।

আপনি যদি সুইজারল্যান্ডের বার্নে আইনষ্টাইনের বাড়ীতে যান দেখতে পাবেন সেখানে একটা “বোস আইনষ্টাইন কনডেনসেট” নিবন্ধটি একটি ডিসপ্লেতে রাখা হয়েছে। “বোস আইনষ্টাইন কনডেনসেট” এবং “বোস আইনষ্টাইন ষ্ট্যাটিসটিকস” দুটো থিওরীতেই আইনষ্টাইনের নামের আগে “বোস” নামে আর একজন বিজ্ঞানীর নাম আছে যার নামেই “বোসন কনা” (পার্টিকেলস) র নামকরন করা হয়েছে, যে “হিগস বোসন” কনা আবার “ঈশ্বর কনা” নামে পরিচিত। “বোসন” কথাটি এসেছে মুল “বোস” কথাটি থেকে। যার মুলে রয়েছে একজনের নাম তিনি সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলে সমাদৃত হলেও নিজ ভুমে অনেকটা উপেক্ষিত। তার নাম সত্যেন্দ্রনাথ বোস।

বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞানী মহলে সত্যেন্দ্রনাথ নাথ বোস (বাংলায় উচ্চারন বসু ১৮৯৪-১৯৭৪) এবং এনরিকো ফার্মি (১৯০১-১৯৫৪) নাম দুটো কিংবদন্তী তুল্য। কারন পৃথিবীর তাবৎ পার্টিকেল (কনা) দুটো পর্যায়ে বিভক্ত। একটি হল বোসন কনা আর একটা হল ফার্মিওন কনা। এটা নিশ্চয়ই আর বলতে হবে না উপরোক্ত দুজনের নাম থেকেই উক্ত কনা দুটোর নাম এসেছে। বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু বাঙালী আর এনরিকো ফার্মি ইতালিয়ান।

ফার্মিয়ান আর বোসন কনার মাঝে মূল পার্থক্য হল বোসন প্রকৃতিতে দলবদ্ধ হয়ে থাকে আর ফার্মিয়ান কনা প্রকৃতিতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় থাকে। এই ফার্মিয়ান কনা আবিস্কারের জন্য এনরিকো ফার্মিকে ১৯৩৮ সালে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়, ইতালির বিভিন্ন স্থানে তার নামে স্কুল কলেজ রাস্তা সহ অনেক কিছুর নাম করন করা হয়, কিন্তু ভারতীয় হবার পরো যিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পার করেছেন তার নামে ঢাকায় তো কোন কিছু দূরে থাক কয়জনে আমরা জানি যে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন? এই ঢাকাতে থাকা অবস্থাতেই তিনি বোসন তত্ত্ব আবিস্কার করেন! আইনষ্টাইন, ফার্মি, মেরি কুরির সম পর্যায়ের বিজ্ঞানী হবার পরো তিনি তাদের তুলনায় প্রচারের আলো থেকে অনেক দুরে। ওদিকে দেখুন সত্যেন্দ্রনাথ নাথ বোসের সাথে যে কয়জন বিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ্য করছি তাদের সবাই বিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন কিন্তু বোস নোবেল পান নি। কেন? চলুন দেখি কারনটা কি?

আইনষ্টাইন নোবেল পেয়েছেন আর তার থিওরী অভ রিলেটিভিটির নাম সবাই জানেন, কিন্তু তিনি কিসে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন তা কি জানেন? থিওরী অভ রিলেটিভিটির জন্য তিনি কিন্তু নোবেল পান নি, তিনি নোবেল পেয়েছিলেন “দ্যা ল অভ ফটোইলেক্ট্রিক ইফেক্ট” এর জন্য ১৯২১ সালে কারন থিওরী অভ রিলেটিভি আবিস্কার করলেও সেটা ছিল সে সময়ের তুলনায় অগ্রসর আবিস্কার মানে "থিওরী অভ রিলেটিভিটি” যখন তিনি আবিস্কার করেন তখন সেটা তিনি তাত্ত্বিক ভাবে বর্ননা দিয়েছিলেন কিন্তু প্রমানিত করার উপায় ছিল না নানা কারনে যা আমার পূর্বের একটি পোষ্টে উল্লেখ্য করছি। একই কথা খাটে সত্যেন্দ্রনাথ বোসের বেলায়ও তিনি যে আইনষ্টাইনের সুত্রের কারেকশান করতে গিয়ে যে “বোস আইনষ্টাইন কনডেনসেট” এবং “বোস আইনষ্টাইন ষ্ট্যাটিষ্টিকস” থিওরীর সুত্রপাত করেন এবং তার পরম্পরায় বোসন কনা থেকে ঈশ্বর পার্টিকেল আবিস্কার বা প্রমান এই সেদিন হয়েছে। বোসনের উপর গবেষণা করে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন Carlo Rubbia এবং Simon van der Meer, ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে David M. Lee, Douglas D. Osheroff, Robert C. Richardson, এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে Martinus J. G. Veltman ও Gerardus ‘t Hooft, ২০০১ খ্রিস্টাব্দে Eric Allin Cornell, Carl Edwin Wieman এবং Wolfgang Ketterle) নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন৷

তাদের নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়ঃ for the achievement of Bose-Einstein condensation in dilute gases of alkali atoms, and for early fundamental studies of the properties of the condensates.

“S. N. Bose’s work on particle statistics (c. 1922), which clarified the behaviour of photons (the particles of light in an enclosure) and opened the door to new ideas on statistics of Microsystems that obey the rules of quantum theory, was one of the top ten achievements of 20th century Indian science and could be considered in the Nobel Prize class.”

এবার চলুন অল্প কথায় দেখি এই থিওরী দুটোর মুল কি? নিজের কাছেই খুব খটোমটো মনে হয়েছে জানি না, কতখানি বুজতে পারছি বা লিখতে পারব, তাও চলুন দেখি,

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সেখানে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে রিডার হিসেবে যোগদান করেন তখন মাসিক বেতন ছিল চারশ’ টাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসু তত্ত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞান ও এক্সরে ক্রিস্টোলোগ্রাফির ওপর কাজ শুরু করেন। এছাড়া তিনি ক্লাশে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা পড়াতেন। ক্লাসে একদিন আলোক তড়িৎ ক্রিয়া ও অতি বেগুনি বিপর্যয় পড়ানোর সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বর্তমান তত্ত্বের দূর্বলতা বোঝাতে এই তত্ত্বের সঙ্গে পরীক্ষালব্দ ফলফলের পার্থক্য তুলে ধরেন। সে সময় তিনি ঐ তত্ত্ব বোজাতে গিয়ে একটি “ভুল!” করেন। পরে দেখা যায় তার ঐ ভুলের ফলে পরীক্ষার সঙ্গে তত্ত্বের অনুমান মিলে যাচ্ছে! বসু পরবর্তীতে তার ঐদিনের লেকচারটি একটি ছোট নিবন্ধ আকারে Planck’s Law and the Hypothesis of Light Quanta নামে প্রকাশ করেন চার পৃষ্ঠার এই প্রবন্ধটি পাঠালেন ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান সাময়িকী ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিনে। কিন্তু সেখানে লেখাটি প্রকাশের যোগ্য বিবেচিত হলো না। এতে দমে গেলেন না সত্যেন বসু। তিনি লেখাটি পাঠিয়ে দিলেন জার্মানিতে খোদ আইনস্টাইনের কাছে। সত্যেন বসু আইনস্টাইনকে লিখলেন, “Respected Sir, I have ventured to send you the accompanying article for your perusal and opinion”।


বোস আইনষ্টাইন

সত্যেন বসুর কাছে লেখা আইনস্টাইনের চিঠির সূত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সত্যেন বসুর জন্য দুই বছরের শিক্ষাছুটি মঞ্জুর করলো। ১৯২৪ সালে সত্যেন বসু গেলেন ইউরোপে। জার্মানিতে গিয়ে দেখা করলেন আইনস্টাইনের সাথে। খোলামেলা বৈজ্ঞানিক আলোচনা করলেন আইনস্টাইন ও সত্যেন বসু। জার্মানি থেকে প্যারিসে গিয়ে মাদাম কুরির সাথে দেখা করলেন। মাদাম কুরির ল্যাবোরেটরিতে কিছু কাজ করারও সুযোগ পেলেন সত্যেন বসু। দ্য ব্রগলির ল্যাবেও কাজ করেছিলেন কিছুদিন। ১৯২৪ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত ইউরোপের বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানীদের সাথে বৈজ্ঞানিক সাক্ষাৎ সত্যেন বসুর গবেষণা ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। দেশে ফেরার পর ১৯২৭ সালে সত্যেন বসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার প্রধান অধ্যাপক এবং সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডিন নির্বাচিত হন।


আইনষ্টাইনকে লেখা সত্যেন্দ্রনাথ বসুর চিঠি

বিশ্বনন্দিত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন সত্যেন বসুর প্রতিভাকে চিনতে ভুল করলেন না। তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রবন্ধটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে ‘সাইটশ্রিফ্‌ট ফ্যুর ফিজিক’ (Zeits Fur Physik) জার্নালে নিজের মন্তব্য সহ প্রকাশের ব্যবস্থা করলেন। সত্যেন বসুর প্রবন্ধ সম্পর্কে আইনস্টাইন লিখলেন, “আমার মতে বোস কর্তৃক প্ল্যাঙ্কের সূত্র নির্ধারণ পদ্ধতি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।” কেননা ১৯২৪ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত প্রবন্ধটিতে প্লাঙ্কের “কোয়ান্টাম তেজস্ক্রিয়তা নীতি” ক্লাসিক্যাল পদার্থ বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়াই ব্যাখ্যা করা এবং একই কনার সাহায্যে পরীক্ষা পরবর্তী দশার সংখ্যা গণনার একটি চমৎকার উপায় বর্ণনা করেন এছাড়াও এই নিবন্ধটি ছিল মৌলিক এবং কোয়ান্টাম পরিসংখ্যানের ভিত্তি রচনাকারী।


প্ল্যাঙ্ক এবং বোস

প্লাঙ্কের “কোয়ান্টাম তেজস্ক্রিয়তা নীতি”তে দুটো ফোটনকে একই শক্তি ভাবা হত। আর বসুর “ভুল” সঠিক ফলাফল দেওয়ার কারণ হলো একটি ফোটনকে আর একটি ফোটন থেকে আলাদা করা। বোস বললেন দুইটি ফোটনকে একদম একই শক্তি ভাবাটা ঠিক নয়। উদাহরন হিসাবে দুইটি মুদ্রার তুলনা আনলেন যার একটির নাম ফোটন আর একটির নাম বোসন। একটি ফোটন আর একটি বোসন হয় তবে দুইটি হেড হওয়ার সম্ভাবনা হবে এক তৃতীয়াংশ । বসুর ভুল এখন “বোস‌-আইনস্টাইন ষ্ট্যাটিষ্টিকস” নামে পরিচিত। আইনস্টাইন এই ধারণাটি গ্রহণ করে তা প্রয়োগ করলেন পরমাণুতে। এই থেকে পাওয়া গেল নতুন “প্রপঞ্চ” (Treachery) যা এখন “বোস‌-আইনস্টাইন কনডেনসেট” নামে পরিচিত। সত্যেন বসুর কয়েকটি গবেষণা দেখে আইনস্টাইন প্রশংসা করে কয়েকটি চিঠি লেখেন। তার কর্মকে আইনস্টাইন ‘ইটস আ বিউটিফুল স্টেপ ফরোয়ার্ড’ বলে আখ্যায়িত করেন।


এস্রাজ বাজাচ্ছেন বোস

আইনস্টাইন যেমন বেহালা বাজাতেন, গণিতজ্ঞ পিন্‌লে বাজাতেন পিয়ানো, রিচার্ড ফাইনম্যান বাজাতেন বঙ্গো ড্রাম, তেমনি সত্যেন্দ্রনাথ বসুও বাজাতেন এস্রাজ – পেশাদারী দক্ষতায়। বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তিনি মনেপ্রাণে ধারণ করতেন। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত কর্মঠ ও দেশপ্রেমে পরিপূর্ণ সত্যেন বসু স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামী বিপ্লবী নেতাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন। আমি গর্ববোধ করি এই মহান বিজ্ঞানী যেখানে শিক্ষা দিয়েছেন আমি সেই শিক্ষাঙ্গনে সেই অনুষদে (যদিও অন্য বিভাগে) পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম।

সব শেষে সৈয়দ মুজতবা আলীর “পন্ডিতমশাই” গল্পটা দিয়ে লেখা শেষ করি

বাঙলা ভাষার প্রতি পন্ডিত মশাইয়ের ছিল অবিচল, অকৃত্রিম অশ্রদ্ধা – ঘৃণা বললেও হয়ত বাড়িয়ে বলা হয়না। বাঙলাতে যেটুকু খাঁটি সংস্কৃত বস্তু আছে তিনি মাত্র সেটুকুই পড়াতে রাজী হতেন- অর্থাৎ কৃৎ, তদ্ধিত, সন্ধি এবং সমাস।

পন্ডিতমশাই যত না পড়াতেন তার চেয়ে বকতেন অনেক বেশি এবং টেবিলের উপর দু’পাখানি তুলে ঘুমাতেন তার চেয়েও বেশি। যে সে ঘুম নয় একেবারে নাক ডাকিয়ে ঘুম। হেডমাস্টারকে একদমই পরোয়া করতেন না কারন হেডমাস্টারও পন্ডিতমশাইয়ের কাছে ছেলেবালায় সংস্কৃত পড়েছিলেন এবং তিনি যে লেখাপড়ায় সর্বাঙ্গনিন্দনীয় হস্তীমুর্খ ছিলেন সে কথাটি পন্ডিতমশাই অহরহ উচ্চকন্ঠে ঘোষনা করতেন। আমরাও সে কাহিনী শুনে বিমলানন্দ উপভোগ করতাম, আর পন্ডিতমশাইকে খুশি করবার দরকার পড়লে ঐ বিষয়টি নতুন করে উত্থাপন করতাম।

পন্ডিতমশাই শ্যাম বর্ণ ছিলেন। মাসে একবার গোঁফ কামাতেন এবং পরতেন হাঁটু জোকা ধুতি। দেহের উত্তমার্ধে একখানা দড়ি প্যাঁচানো থাকতো – অজ্ঞেরা বলতো সেটি নাকি দড়ি নয়, চাদর। ক্লাসে ঢুকেই তিনি সেই দড়িখানা টেবিলের উপর রাখতেন, আমাদের দিকে রক্তচক্ষু গরম করে তাকাতেন, আমাদের স্কুলে না এসে মাঠে হাল চাষ করতে যাওয়াটা অধিক সমীচীন এই কথাটি তিনি বারংবার স্মরণ করিয়ে দিতে দিতে পা দুখানা টেবিলের উপর লম্বা করিয়া দিয়া যে কোন একটা অজুহাত ধরে আমাদের এক চোট বকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। নিতান্তই যেদিন কোন অজুহাতই খুঁজে পেতেন না সেদিন দুচারটি কৃৎ-তদ্ধিত সম্বন্ধে আপনমনে কিন্তু বেশ জোর গলায় আলোচনা করে উপসংহারে বলতেন, “কিন্তু এই মুর্খদের বিদ্যাদান করার প্রচেষ্টা বান্ধ্যাগমনের মত নিষ্ফল নয় কি? অতঃপর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে টানা-পাখার দিকে একদৃষ্টে অনেকক্ষন তাকিয়ে থেকে ঘুমিয়ে পড়তেন।

সে সময় আসামের চীফ-কমিশনার ছিলেন এন ডি বীটসন বেল। সাহেবটির মাথায় একটু ছিট ছিলো। প্রথম পরিচয়ে তিনি সবাইকে বুঝিয়ে বলতেন তার নাম আসলে ‘নন্দদুলাল বাজায় ঘন্টা’।

এন.ডি তে হয় ‘নন্দদুলাল’ আর বীটসন বেল অর্থ ‘বাজায় ঘন্টা’।

সেই নন্দদুলাল এসে উপস্থিত হলেন আমাদের শহরে।

ক্লাসের জ্যাঠা ছেলে ছিল পদ্মলোচন। সেই একদিন খবর দিলো লাট সাহেব আসছেন স্কুল পরিদর্শন করতে।

সাহেব যেদিন আসবেন সেদিন স্কুল শুরুর এক ঘন্টা আগেই আমরা স্কুলে হাজিরা দিলুম। হেডমাস্টার ইস্কুলের সর্বত্র চর্কিবাজীর মতন তুর্কীনাচন নাচছেন। যেদিকে তাকাই সে দিকেই হেডমাস্টার – নিশ্চয়ই তার অনেকগুলো জমজ ভাই আছেন, আর ইস্কুল সামলাবার জন্য সেদিন সব ক’জনকে রিকুইজিশন করে নিয়ে এসেছেন।

পদ্মলোচন বলল, ‘কমন রুমে গিয়ে মজাটা দেখে আয়’।

কমনরুমে গিয়ে দেখি আমাদের পন্ডিতমশাই একটা লম্বা-হাতা আনকোরা নতুন হলদে রঙের গেঞ্জি পরে বসে আছেন আর বাদ বাকি মাস্টাররা কলরব করে সে গেঞ্জিটার প্রশংশা করছেন।

চাপরাসী নিত্যানন্দ দুর থেকে জানালো ‘বাবু আসছেন’।

তিন লম্ফে ক্লাসে ফিরে গেলুম।

সেকেন্ড পিরিয়ডে বাংলা। পন্ডিতমশাই আসতেই আমরা সবাই ত্রিশ গাল হেসে গেঞ্জিটার দিকে তাকিয়ে রইলুম। শাস্ত্রে সেলাই করা কাপড় পরা বারন বলে পন্ডিতমশাই পাঞ্জাবী শার্ট পরেন না, কিন্তু লাট সাহেব আসছে খালি গায়ে ইস্কুলে আসা চলবে না তাই গেঞ্জি পরে এসেছেন। গেঞ্জি বোনা জিনিষ, সেলাই-করা কাপড়ের পাপ থেকে পন্ডিত মশাই এই কৌশলে নিষ্কৃতি পেয়েছেন।

গেঞ্জি দেখে আমরা এতই মুগ্ধ যে পন্ডিতমশাইয়ের গালাগাল শোনার জন্য আমরা তখন তৈরি কিন্তু কেন জানিনে তিনি তার রুটিন মাফিক কিছুই করলেন না। বকলেন না, চোখ লাল করলেন না, লাট আসছেন কাজেই টেবিলে ঠ্যাং তোলার কথাও উঠতে পারেনা। তিনি চেয়ারের উপর অত্যান্ত বিরস বদনে বসে রইলেন।

পদ্মলোচনের ভয় ডর কম। আহ্লাদে ফেটে গিয়ে বলল, ‘পন্ডিতমশাই গেঞ্জিটা কত দিয়ে কিনলেন’? আশ্চর্য, পন্ডিতমশাই খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠলেন না, নির্জীব কন্ঠে বললেন, পাঁচ সিকে’।

আধ মিনিট যেতে না যেতেই দেখি পন্ডিতমশাই মুখ বিকৃত করে গেঞ্জির ভিতর হাত চালান করে পাগলের মত এখানে ওখানে খ্যাঁস খ্যাঁস করে খামচান। একে তো জীবনভর উত্তমাঙ্গে কিছু পরেননি, তার উপর গেঞ্জি, সেও আবার নতুন কোরা গেঞ্জি।

লাট এলেন; সঙ্গে ডেপুটি কমিশনার, ডাইরেকটর, ইন্সপেক্টর, হেডমাস্টার, নিত্যানন্দ – আর লাট সাহেবের এডিসি ফেডিসি কি সব বারান্দায় জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ‘হ্যালো পানডিট’ বলে সাহেব হাত মিলালেন। রাজসম্মান পেয়ে পন্ডিতমশাইয়ের সব যন্ত্রনা লাঘব হলো। বার বার ঝুকে সাহেবকে সেলাম করলেন –এই অনাদৃত পন্ডিত শ্রেণী সামান্যতম গতানুগতিক সম্মান পেয়েও যে কি রকম বিগলিত হতেন তা তাদের সে-সময়কার চেহারা না দেখলে বিশ্বাস করার উপায় নেই।

লাট সাহেব ততক্ষন হেডমাস্টারের সাথে পন্ডিত শব্দের মূল নিয়ে ইংরেজীতে আলোচনা জুড়ে দিয়েছেন।

হেডমাস্টার কি বলেছিলেন জানিনে তবে রবীন্দ্রনাথ নাকি পন্ডিতদের বিদ্রুপ করে বলেছেন – যার সব কিছু পন্ড হয়ে গিয়েছে সেই নাকি পন্ডিত।

সে কথা যাক। লাট সাহেব চলে গেলেন। যাবার পূর্বে পন্ডিতমশাইয়ের দিকে একখানা মোলায়েম নড করাতে তিনি গর্বে চৌচির হয়ে ফেটে যাবার উপক্রম। আনন্দের আতশয্যে নতুন গেঞ্জির চুলকানির কথা পর্যন্ত ভুলে গিয়েছেন। আমরা দুতিনবার স্মরণ করিয়ে দেবার পর গেঞ্জিটা তার শ্রীঅঙ্গ থেকে ডিগ্রেডেড হলো।

তিনদিন ছুটির পর আবার বাংলা ক্লাশ বসেছে। পন্ডিতমশাই টেবিলের উপর পা তুলে দিয়ে ঘুমচ্ছেন, না ঠিক চোখ বন্ধ করে আছেন ঠিক ঠাহর করা যাচ্ছেনা।

কারো দিকে না তাকিয়েই পন্ডিতমশাই হঠাৎ ভরা মেঘের ডাক ছেড়ে জানতে চাইলেন – লাট সাহেবের সাথে আর কে কে এসেছিলো বলতোরে?

আমি সমস্ত ফিরিস্তি দিলুম। চাপরাসী নিত্যানন্দকেও বাদ দিলুম না।

বললেন, হল না। আর কে ছিলো?

বললুম, ঐ যে একগাদা এডিসি না প্রাইভেট সেক্রেটারি কিন্তু তারা তো ক্লাসে ঢোকেননি।

পন্ডিতমশাই রেগে গিয়ে মেঘের গুরু গুরু ডাক ছেড়ে শুধালেন – এক কথা বার বার বলছিস কেন রে মূড়? আমি কালা না তোর মত অলম্বুষ?

আমি কাতর হয়ে বললুম – আর তো কেউ ছিলোনা পন্ডিতমশাই।

পন্ডিতমশাই হঠাৎ চোখ মেলে আমার দিকে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বললেন, ওঃ উনি, আবার লেখক হবেন। চোখে দেখতে পাসনা কানা, দিবান্ধ। কেন? লাট সাহেবের কুকুরটাকে দেখতে পাসনি? এই পর্যবেক্ষন শক্তি নিয়ে-

আমি তাড়াতাড়ি বললুম হ্যাঁ হ্যাঁ দেখছি।

পন্ডিতমশাই বললেন, কুকুরটার কি বৈশিষ্ট ছিলো বল তো?

ভাগ্যিস মনে পড়ল। বললুম, আজ্ঞে একটা ঠ্যাং কম ছিলো বলে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছিলো।
হুঁ বলে পন্ডীতমশাই আবার চোখ বন্ধ করলেন।

অনেকক্ষন পর বললেন শোন! শুক্রবারদিন ছুটির পর কাজ ছিলো বলে অনেক দেরিতে ঘাটে গিয়ে দেখি আমার নৌকার মাঝি এক অপরিচিতের সাথে আলাম করছে। লোকটা মুসলমান। আমাকে দেখে সেলাম টেলাম দিয়ে পরিচয় দিল সে লাট সাহেবের আরদালি, সাহেবের সঙ্গে এখানে এসেছে।

পন্ডিতমশাই বললেন, লোকটার সাথে কথাবার্তা হল। লাট সাহেবের সব খবর জানে। লাট সাহেবের কুকুরটার একটা ঠ্যাং কি করে ট্রেনের তলায় কাটা যায় সে খবরটাও বেশ গুছিয়ে বলল।

তারপর পন্ডিতমশাই ফের অনেকক্ষন চুপ থাকার পর আপন মনে আস্তে আস্তে বললেন, আমি, ব্রাক্ষণী, বৃদ্ধা মাতা, তিন কণ্যা, বিধবা পিসি, দাসী মোট আটজনা।

তারপর হঠাৎ কথা ঘুরিয়ে ফেলে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মদনমোহন কি রকম অংক শেখায় রে’?

মদনমোহন বাবু আমাদের অংকের মাস্টার-পন্ডিতমশায়ের ছাত্র। বললুম ভালই পড়ান।

পন্ডিতমশাই বললেন বেশ বেশ। তবে শোন – লাট সাহেব তার কুকুরের পিছনে মাসে খরচ করেন পচাত্তর টাকা। এইবার দখি তুই কি রকম অংক শিখেছিস। বল তো দেখি – যদি একটা কুকুরের পিছনে মাসে পচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর সেই কুকুরের তিনটে ঠ্যাং হয় তবে প্রতি ঠ্যাং এর জন্য কত খরচ হয়?

আমি ভয় করেছিলুম পন্ডিতমশাই খুব মারাত্মক রকমের অংক কষতে দিবেন। আরাম বোধ করে তাড়াতাড়ি বললুম, আজ্ঞে পঁচিশ টাকা। পন্ডিতমশাই বললেন – সাধু সাধু।

তারপর বললেন - আমি, ব্রাক্ষণী, বৃদ্ধা মাতা, তিন কণ্যা, বিধবা পিসি, দাসী মোট আটজনা, আমাদের সকলের জীবনধারনের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। এখন বল তো দেখি এই ব্রাক্ষ্মন পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের কটা ঠ্যাঙের সমান?


আমি হতবাক।

‘বল না’।

আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। শুধু আমি না, সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ।

পন্ডিতমশাই হুংকার দিয়ে বললেন ‘উত্তর দে’।

মুর্খের মত একবার পন্ডিতমশাইয়ের মুখের দিকে মিটমিটিয়ে তাকিয়েছিলুম। দেখি সে মুখে লজ্জা, তিক্ততা, ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে।

ক্লাসের সবাই বুঝতে পেরেছে, পন্ডিতমশাই আত্ম-অবমাননার কি নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে মাখছেন আমাদের সাক্ষী রেখে।

পন্ডিতমশাই যেন উত্তরের প্রতিক্ষায় বসেই আছেন। সেই জগদ্দল নিস্তদ্ধতা ভেঙে কতক্ষন পরে ক্লাস শেষের ঘন্টা বেজেছিলো আমার হিসেব নেই।

এই নিস্তব্ধতার নিপীড়ন স্মৃতি আমার মন থেকে কখনও মুছে যাবে না।

আমরা যদি যোগ্যদের সন্মান না দিতে পারি অন্ততঃ তাদের অপমান যেন না করি।।

অনেক আগে এদের নিয়ে একটি লেখা লিখছিলাম কয়েকজন মহান বাংলাদেশি বিজ্ঞানী---- যারা নোবেল পেতে পারতেন অথবা পাবেন



কৃতজ্ঞতায়ঃ States of Matter: Bose-Einstein Condensate

প্ল্যাংকের কোয়ান্টাম তত্বটি বুঝিয়ে বলবেন কি?

Bose–Einstein condensate

Bose–Einstein statistics

“আমাদের বোস মশাই”

বোস-আইন‌স্টাইন সাংখ্যায়ন

ঈশ্বর-কণার আবিষ্কারক বাঙালি সত্যেন বসু আজও অবহেলিত

Prof. S. N. Bose Archive এবং আরো অনেক।।

অনুপ্রেরনাঃ কিছুদিন আগে আইনষ্টাইন এবং নিউটনের স্পেসটাইমের রোমাঞ্চকর দ্বন্দ্ব লেখার কমেন্টে শ্রদ্ধেয় ডঃ এম এ আলী ভাই এই লেখাটা লিখতে উৎসাহী করছিলেন, তাই লেখার সমস্ত কৃতিত্ব উনার, আর যদি কোথাও ভুল হয় সে দায়িত্ব একান্ত আমার।।


মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫৯

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: আমাদের সত্যেন বোস অনেকবড় বিজ্ঞানী ছিলেন।
কিন্তু আমাদের অনেকেই তাঁকে আজও চেনেন না!!!
আমরা আজও দেশ ও দেশের মনীষীদের ভালোবাসতে শিখিনি!!!
রতনে রতন চেনে। তাই, আইনস্টাইন তাঁকে চিনেছেন।
ভালো লিখেছেন।
কিন্তু ভাই “কণা” বানান কি এমনটি হবে না?

কবি ঈশ্বর গুপ্ত এজন্য আক্ষেপ করে বলেছিলেন:

কতরূপ স্নেহ করি
দেশের কুকুর ধরি
বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া।

শুভেচ্ছা নেবেন ভাই।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১১

শের শায়রী বলেছেন: রফিক ভাই ঠিকই বলেছেন, কাজী নজরুল, বা সুকান্ত এরা যে ধরনের ভার্সেটাইল জিনিয়াস ছিলেন, সে তুলনায় এদের কোন নাম ই নাই। অথচ বিদেশের যদু মধুর নাম ও আমাদের মুখস্থ।

আপনি ঠিক ই ধরেছেন "কণা" হবে, আরো কিছু টাইপো আছে সেগুলোও ঠিক করতে হবে, অশেষ কৃতজ্ঞতা বানান টি ঠিক করে দেয়ায়।

পাঠে কৃতজ্ঞতা।

২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৪:১৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
বসু-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান নিয়ে কোন লেখা উইকিপিডিয়াতে আছে কিনা দেখতে গিয়ে সেখানে দেখা যায় নিন্ন্মের কটি লাইন ভেসে আসে ।
ঠিক এই নামে উইকিপিডিয়ায় কোনো নিবন্ধ নেই। দয়া করে বিকল্প শিরোনাম বা বানানের জন্য উইকিপিডিয়ায় বসু-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান নামে অনুসন্ধান করুন।
•বসু-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান নিবন্ধটি শুরু করুন, নিবন্ধ উইজার্ড ব্যবহার করে, অথবা এটির জন্য একটি অনুরোধ যোগ করুন।
•বসু-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান। পাতাটি খুঁজুন
•উইকিপিডিয়ায় এই শিরোনামের সাথে সংযুক্ত আছে, এমন পাতাগুলো দেখুন


এর প্রেক্ষিতে এই ব্লগের একজন বিজ্ঞান বিষয়ক শক্তিমান লেখক হিসাবে আপনাকে এই বিষয়ে একটি নিবন্ধ লেখার জন্য আপনার ঐ পোষ্টে মন্তব্যের ঘরে একটি অনুরোধ করেছিলাম । এত অল্পসময়ের মধ্যে এমন একটি অভুতপুর্ব ও অসাধারণ লেখা নিয়ে আসবেন তা ছিল কল্পনারো বাইরে। এই অসাধরণ মুল্যবান নিবন্ধটি উৎসর্গ করে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন ।

লেখাটিতে সুন্দরকরে তথ্য সহকারে তুলে ধেরেছেন একজন বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী সতেন্দ্রনাথ বসু কিভাবে আরেকজন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে যৌথভাবে বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান প্রদান করেন, যা পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে বিবেচিত হয়ে আসছে দুনিয়ার সর্বত্র ।

কর্মজীবনে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন বৃহত্তর বাংলার তিন শ্রেষ্ঠ শিক্ষায়তন কলকাতা, ঢাকা ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। আপনি সুন্দর করে তুলে ধরেছেন এককালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে অভিহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত গবেষণা কর্ম ও এর কৃতিমান শিক্ষক ও বিশ্বমানের গবেষনার কথা । তিনি তার পান্ডিত্যের জন্য একদিকে যেমন পেয়েছিলেন মাদাম কুরীর মত পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের সান্নিধ্য তেমনি পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রমুখ মণীষীর সান্নিধ্য । আবার অনুশীলন সমিতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগও রাখতেন দেশব্রতী সত্যেন্দ্রনাথ। সত্যেন্দ্রনাথ বসু শুধুমাত্র বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রবল সমর্থকই ছিলেন না, সারা জীবন ধরে তিনি বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ধারাটিকেও পুষ্ট করে গেছেন। এই প্রসঙ্গে তাঁর অমর উক্তি, যাঁরা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান হয় না, তাঁরা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না বিশেষভাবে প্রনিধান যোগ্য।

আলোর দ্বৈত চরিত্রের স্বরূপ বিষয়ে থাকা কিছু অস্বাচ্ছ্যন্দ কি ভাবে দূর হয়েছিল বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোসের একটি প্রবন্ধ (১৯২৪ সালের জুন মাস) – প্লাঙ্কস ল’ অ্যান্ড দ্য হাইপোথেসিস অফ লাইট কোয়ান্টা’মে তা সুন্দরভাবে উঠে এসেছে আপনার লেখাটিতে । প্রচলিত পারিসাংখ্যিক বলবিদ্যায় প্রত্যেক অণুর একটি নিজস্ব পরিচয় আছে; প্রত্যেক অণুকে আলাদা ভাবে চিহ্ণিত করতে পারা যায়। বিপরীতক্রমে বোসের চিন্তায় আলোককণারা সবাই এক ও অভিন্ন। বোসের চিন্তায় দু’টি একই ধরনের কণা; স্থানান্তর করলে নূতন সজ্জা পাওয়া যাবে না। এর ফল হল কৃষ্ণবস্তু বিকিরণের ফর্মুলার নতুন প্রমাণ।আইনস্টাইন বুঝতে পেরেছিলেন বোস-এর পরিসাংখ্যিক পদ্ধতি সাধারণ পরমাণুদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে। তিনি ১৯২৪ সালেই বোস-এর কাজের উপর ভিত্তি করে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন; জন্ম নিল নূতন এক সাংখ্যায়ন, ‘বোস-আইন‌স্টাইন সাংখ্যায়ন’।

জানা গেল অতি অল্পের জন্য আমরা বঞ্চিত হলাম আরোএকজন বাঙ্গালীর নোবেল পুরস্কার বিজয় হতে । এই আফসোস আমাদের থেকেই যাবে। যাহোক এই ক্ষনজন্মা বিজ্ঞানীরা যথাযথ প্রচারের অভাবে তেমনভাবে সমজের সকলের কাছে পরিচিতি না পেলেও তাঁরা বেচে থাকবেন তাদের অবিস্মরনীয় কর্মের মাঝে জগতজোরে। কামনা করি তাঁর নমে নামকরন হোক দেশের গুরুত্বপুর্ণ কিছু শিক্ষায়তন ও সংস্লিষ্ট স্থাপনা সমুহের । তাঁর কর্মের মুল্যায়ন হোক সকল স্তরে ।

সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা গল্পে পন্ডিত মশাই প্রসঙ্গ

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জাতীয় চেতনাবোধ সম্পন্ন এবং হাস্যরস-কৌতুক উদ্দীপ্ত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা পন্ডিত মশাই পর্বটিও অতি চমতকারভাবে তুলে ধরেছেন লেখাটিতে । বলা হয়ে থাকে কোন শিশু বা প্রাপ্ত বয়ষ্ক নারী-পুরুষ প্রচ- আঘাতে মানসিকভাবে বিপদগ্রস্ত হয়ে ওঠলে, ডাক্তার প্রয়োজন হবে না যদি কেউ একনিষ্ঠ মনে সৈয়দ মুজতবা আলীর গল্পগুচ্ছ তথা রম্য রচনা পড়েন। কেবল হাস্যরস তৈরিতেই তিনি শ্রেষ্ঠ নন, মানুষের মৌলিক ও মূল্যবোধ জাগ্রত করতে যে নিপুণতার পরিচয় দিয়েছেন সেটিও অনন্য। তবু কেন জানি বর্তমান প্রজন্মে এসে তিনি অনেকটাই কম পাঠ্য।

সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের করিমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটে আসলে তার মেধার কারণে তিনি শান্তি নিকেতনে পড়ার প্রস্তাব পেয়ে যান এবং নিজেকে আগামীর জন্য তৈরি ও বিকশিত করার সুযোগ পেয়ে যান। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখায় শিক্ষা ব্যবস্থার দুরবস্থা ও শিক্ষকদের প্রতি অবহেলার কারণ সুন্দরভাবে উঠে এসেছে ।

বাংলা ও সংস্কৃত শিক্ষকদের প্রতি বৃটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যস্থায় ছিল চরম অবহেলা, যাতে এদেশের শিক্ষার শিকড় পাল্টে যায়। আর এসব শিক্ষকদের প্রতি নিগ্রহের কথা তুলে ধরে সৈয়দ মুজতবা আলী বলেন, কাব্য, অলঙ্কার দর্শন ইত্যাদিতে এদের পা-িত্য ছিল অন্যান্য শিক্ষকদের তুলনায় অনেক বেশী কিন্তু সম্মান এবং পারিশ্রমিক এঁরা পেতেন সবচেয়ে কম। যে ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।

আর দিকে সংস্কৃত পন্ডিতেরা বাংলাকে একেবারেই যে দেখতে পারতেন না তাও উঠে এসেছে তাঁর লেখায় । তাঁর পাদটিকা গল্পের মূল চরিত্র পন্ডিত মশাইয়ের বাংলা ভাষার প্রতি ছিল “অকৃত্রিম অশ্রদ্ধা-ঘৃণা”। প-িতমশাই যত না পড়াতেন, তার চেয়ে বকতেন ঢের বেশী গল্প করেন, এবং টেবিলের উপর পা দু’ খানা তুলে দিয়ে ঘুমুতেন সব চেয়ে বেশী। বেশ নাক ডাকিয়ে এবং হেডমাস্টারকে একদম পরোয়া না করে। আমাদের শিক্ষক সমাজ কি এর চেয়ে বেশী কিছু করেন না বর্তমানে শ্রেণিকক্ষে? তা ভাবনার বিষয় । শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেই নিজের গুণকীর্তন, ছেলে-মেয়ের গল্প এবং নিজের ক্ষমতার জয়গান করে থাকেন অনেকেই। আর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নির্লজ্জের মত প্রাইভেট পড়তে উদ্ভোদ্ধ করেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াশোনার কথা বলেন না, তারা রাজনৈতিক ও নিজস্ব মতাদর্শ স্বার্থকে চরিতার্থ করার প্রাণান্ত চেষ্টা করেন। গল্পে পন্ডিত মশাই জানেন হেডমাস্টারের দুর্বলতা, বিশেষ করে তিনি কিভাবে পাশ করেছেন এবং কোন উপায়ে এ পদে আছেন। ফলে, সুযোগ পেলেই তিনি হেডমাস্টারের দুর্বলতাগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরেন। আর এ কাজটি আমাদের শিক্ষক সমাজও করেন। কোন শিক্ষার্থীকে পছন্দ না হলে পন্ডিত মশাইয়ের মতো কালির দোয়াত ছুঁড়ে মারেন এবং অন্য শিক্ষক সম্পর্কে আজে বাজে বলে শিক্ষার মূল পরিবেশকে নষ্ট করে তুলেন।

আসামের লাট সাহেব স্কুল পরিদর্শনে আসবেন বলে হেডমাস্টার ইস্কুলের সর্বত্র চর্কিবাজীর মতন তুর্কীনাচন নাচছেন। যেদিকে তাকাই সে দিকেই হেডমাস্টার- নিশ্চয়ই তাঁর অনেকগুলো যমজ ভাই আছেন, আর ইস্কুল সামলাবার জন্য সেদিন সব ক’জনকে রিকুইজিশন করে নিয়ে এসেছেন। সময়ের সাথে আমাদের শিক্ষকদের অবস্থার কি কোন পরিবর্তন ঘটেছে? মোটেও না। কেননা, অশিক্ষিত নেতা-মন্ত্রীদের আগমন এবং সরকারী আমলাদের আগমনে তাদের হুঁশ থাকেনা কারণ এতদিনে নিজেদের যে অপকর্ম রয়েছে তা ঢাকতে হবে।

লাট সাহেব এসে একটু কথা বলার কারণে পন্ডিত মশাইয়ের যে উচ্ছাস প্রকাশ পেয়েছে তা আমাদের শিক্ষক সমাজের মধ্যেও প্রকাশ পায় আনুকূল্য পাবার আশায়। বিশেষ সুবিধাভোগী শিক্ষক ডেপুটেশনে কোন সরকারী উচ্চ পদে নিয়োজিত থেকে পরে নিজ পদে ফিরে এসেও লিখেন প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা সস্পন্ন।

আবার লাট সাহেব স্কুল পরিদর্শন শেষে ফিরে গেলে পন্ডিত মশাইয়ের যেমন আত্ন আবমাননার অনুভবথেকেপরিবর্তন ঘটে তেমনি আমাদের বর্তমানের শিক্ষক সমাজও পন্ডিত মশাইএর মত আত্ম-অবমাননা সইতে না পেরে মাঝে মধ্যে নামেন রাজপথে। তাঁদের ভাববার প্রয়োজন এ অপমানের মূল কারণ কোথায়।

ভাল লাগল লেখাটিতে থাকা পন্ডিত মশাই প্রসঙ্গটি

পোষ্টটি প্রিয়তে গেল ।

নব বর্ষের শুভেচ্ছা রইল

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৬

শের শায়রী বলেছেন: আসলে আগের পোষ্টে আপনার মন্তব্য দেখার পরই এই ব্যাপারটা মাথায় ঘুরছিলো। যার কারনে তখন থেকেই বিভিন্ন লিঙ্ক যোগাড় করতে থাকি দেখতে থাকি। কিন্তু বাস্তবতা হল উনার ওপর লিখিত কোন বই আমি নিউ মার্কেটে বা নীল ক্ষেতে পেলাম না। বড়ই আক্ষেপ। অন লাইনে এক জায়গায় দেখলাম, উনার প্রপৌত্র উনাকে নিয়ে নাকি একটি বই লিখবে সেই ২০০৮ এ, জানি না সে বই বাংলাদেশে আসছে কিনা, অন্ততঃপক্ষে ঢাকা ভার্সিটির সংগ্রহে বা উনার এখানকার কর্মজীবন নিয়েও কেউ উদ্যেগ নিলে একটা দারুন বই লেখা হবে। কিন্তু কোণ উদ্যেগ কি নেয়া হয়েছে?

আক্ষেপ থেকে আরো অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু পরিস্থিতি লিখতে বাধা দেয়। আমি আসলে পন্ডিত মশাই গল্পটি দিয়ে সত্যেন বসুর অসন্মানের কথাটা বুজাতে চেয়েছি। এদেশে লাট সাহেবের কুত্তার এক ঠ্যাং এর পেছনে ২৫ টাকা খরচ হতে পারে, কিন্তু একজন শিক্ষক (আবার সব শিক্ষক না) যিনি কিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের ঢাকা ভার্সিটির নাম পরিচিত করতে পারেন তার নামে ২৫ টাকাও খরচ নেই।

যাই হোক আপনার মন্তব্য থেকেই উনাকে নিয়ে লেখার প্রেরনা পেয়েছি যা আমি আগেই উল্লেখ্য করেছি। কৃতজ্ঞতা জানুন শ্রদ্ধেয় ভাই।

৩| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৩৮

জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার একটি বিষয় নিয়ে লিখার জন্য ধন্যবাদ।
আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা আমাদের দেশের জ্ঞানী গুনীজনদের নিয়ে জানতে পারি না, কিন্তু সানি লিওন এর বাপের নাম, ক্যাটারিনা কাইফের রোজনামচা মুখস্থ রাখি!

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:১০

শের শায়রী বলেছেন: আফসুস ভাই কিন্তু এটাই সত্যি।

৪| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: আমি বিজ্ঞানের ছাত্র না, তবু বিজ্ঞানের প্রতি আমার সীমাহীন ভালোবাসা আছে।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:১৭

শের শায়রী বলেছেন: জ্ঞানের স্পৃহা থেকেই বিজ্ঞান। আপনার ভাই সেটা পুরা মাত্রায়ই আছে।

পাঠে কৃতজ্ঞতা।

৫| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১১

আলামিন১০৪ বলেছেন: আইনস্টাইন কিন্তু প্রথম জীবনে প্যাটেন্ট অফিসের কেরানী ছিলেন । তাঁর বেতন বোধ করি লাট সাহেবের কুত্তার চেয়ে বেশী ছিলনা। বিজ্ঞানের আবিস্কারে বিশ্বে ইউরোপের নাম সর্বজনবিদিত হলেও এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে, ইউরোপীয় গবেষকদের মো্টা বেতন-ভাতার ফলেই এঁদের মগজে উর্বরতা প্রাপ্তি ঘটেছে। ইতিহাস ঘাটলে দেখবেন ইউরোপিয়ানরা বাণিজ্যের নাম নিয়ে উপনিবেশ স্থাপন করে দস্যু বৃত্তি আর শোষণের মাধ্যমেই তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত রচনা করেছে। আর তাদের আবিস্কারের জোয়ার এর পূর্বেই এসেছিল যখন প্লেগ মহামারিত এরা বিপর্যস্ত।

পূর্বের মন্তব্যটি মুছে ফেলার অনুরোধ রইল।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:১৯

শের শায়রী বলেছেন: আগের মন্তব্যটি মুছে দিয়েছি। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৬| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৪২

আহমেদ জী এস বলেছেন: শের শায়রী,





বিজ্ঞান যদিও কঠিন বিষয়, তার উপরে কোয়ান্টাম ফিজিক্স তাই বৈঠকী ঢংয়ে বললে না বোঝার কোনও কারন নেই। আপনি তেমনটাই করেছেন। অল্পের ভেতরে সুন্দর করে ঈশ্বর কণার ঈশ্বরকে তুলে এনেছেন, যে ঈশ্বরকে আমরা অবহেলায় বিস্মৃতির অতলে ঠেলে ফেলে দিয়েছি অনেককাল আগে।
সহব্লগার শ্রদ্ধেয় ডঃ এম এ আলীর মন্তব্য থেকে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অমর উক্তি আবারও তুলে ধরলুম, "যাঁরা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান হয় না, তাঁরা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।"

লেখাটি, যারা "হিগস-বোসন" বিষয়ে জানেন না এমন সাধারণ পাঠকদের উৎসুক করবে।
আর মুজতবা আলীর কুত্তার এক ঠ্যাংয়ের দাম ২৫ টাকা, এই নিদারূন ব্যাঙ্গের ঠ্যাঙানি আমাদের কখনও বোধদয় ঘটাবে কিনা জানিনে!

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৮

শের শায়রী বলেছেন: শ্রদ্ধেয় আহমেদ জী এস ভাই, আপনার প্রেরনা দায়ক মন্তব্য সব সময়ই আমাকে ভালো লাগা দেয়। আমি নিজেও খুব একটা ভালো বুজি না, সামান্য কিছু বোজার চেষ্টা করি মাত্র, সেখান থেকে লেখার ব্যার্থ চেষ্টা চালাই, আসলে কিছু লিখতে গেলে সবার আগে নিজের কিছু তা যত সামান্যই হোক জানা হয়।

আমার সব থেকে খারাপ লাগে ঢাবি তে সত্যেন বোসের নাম তার ডিপার্টমেন্টের বাইরে ( ডিপার্টমেন্টের ভেতর ও কয়জন জানে তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ) কেউই তেমন জানে না।

আমার মনে হয় না সৈয়দ সাহেব বেচে থাকলেও এখন যে পরিস্থিতিতে আমরা বেচে আছি তাতে আমাদের বোধদয় ঘটাতে পারত।

পাঠে কৃতজ্ঞতা জানবেন।।

৭| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:১৬

ইসিয়াক বলেছেন: অসাধারণ একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বরাবরের মতো পোষ্টে ভালো লাগা । শুভকামনা।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২৩

শের শায়রী বলেছেন: পাঠে কৃতজ্ঞতা প্রিয় ভাই।

৮| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫৫

সোহানী বলেছেন: বলরেত পারেন কখন কাকে কিভাবে কোন গুনীজনকে আমরা সন্মান দিয়েছি? আমি অন্তত দেখিনি। অপমান অপদস্থ করে দেশ থেকে বের না করা পর্যন্ত আমরা শান্তি পাইনি।

বিশ্বের বড় বড় ইউনিভার্সিটিতে আমাদের মেধাগুলো কাজ করে কিন্তু কখনো কি দেখেছেন কোন পত্রিকায় তাদের নাম?

যাক এসব বলে দু:খ পাওয়া বন্ধ করেছি কারন আমার নিজের কাহিনীইতো আরো লম্বা চওড়া। প্রায়ই মনে করি লিখবো এ নিয়ে শেষে আর হয়ে উঠে না।

বরাবরের মতই অসাধারন লিখা। হাঁ, বোসন কণা নিয়ে অবশ্যই জানতাম কিন্তু আপনি যেভাবে সহজ সরলভাবে ব্যাখ্যা দিলেন তা মনে হয় কোথাও পাইনি।

সবসময়ই অনেক ভালো থাকেন আর লিখতে থাকেন আমাদের জন্য এমন করে।

(আর আলী ভাইতো অন্য মাত্রার জিনিয়াস, ।আমি উনার সাক্ষাৎ ভক্ত)

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০২

শের শায়রী বলেছেন: প্রিয় বোন

আপনার মন্তব্য সব সময়ই প্রেরনা দায়ক। হ্যা গুনীজনের সন্মান দিতে আমরা ভীষন কঞ্জুস। নিজেরো সামান্য অভিযোগ আছে কিন্তু কাকে বলব? তাই তো বলিনা।

আলী ভাইর প্রতি এই কয়দিনে আমার শ্রদ্ধা তৈরী হয়েছে।

কৃতজ্ঞতা বোন।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.