নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই।।
ঢাকার বাঈজী কাহিনী (প্রথম পর্ব)
ঢাকার বাঈজী কাহিনী (দ্বিতীয় পর্ব)
বাংলার ইতিহাসে প্রথম নারী অভিনেত্রী বিনোদিনী দাসীর কথা
আগের পর্ব গুলো
ঢাকার বাঈজীদের নিয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যায় হেকিম হাবিবুর রহমানের লেখায়। এলাহীজান উত্তর ভারত থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। নওয়াব আবদুল গনির কাছ থেকে তিনি নিয়মিত মাসোহারা পেতেন। নবাব সাহেবের কাছ থেকে আরো অনেকে মাসোহারা পেতেন যাদের কথাও হেকিম সাহেব তার লেখায় উল্লেখ্য করেছেন। আন্নু, গান্নু আর নওয়াবীন ছিলেন তিন বোন। এদের মধ্যে সবচেয়ে ডাকসাইটে ছিলেন নওয়াবীন।
এই তিন বোন ১৮৮০ সালে নভেম্বরে ‘পূর্ববঙ্গ রঙ্গভূমি’ ভাড়া করে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে ‘ইন্দ্রসভা’ নাটকটি মঞ্চস্থ করেছেন। ঢাকা প্রাকাশ এর সংবাদ অনুযায়ী মঞ্চস্থ নাটকটিতে শুধু বাঈজীদের অংশ গ্রহনের কারনে অনেকেই এর বিরোধিতা করেন। ঘটনাটি আমাদের মঞ্চ নাটকের জন্য ও খুব গুরুত্বপূর্ন কারন কারন ঢাকায় শুধু মহিলাদের উদ্দ্যেগে মঞ্চনাটক এই প্রথম। ইন্দ্রসভা ছাড়া তারা ‘যাদুনগর’ নামে আর একটি নাটক মঞ্চস্থ করে।
হেকিম হাবিবুর রহমান তার লেখায় আচ্ছি বাঈকে নবাব সাহেবের সব থেকে পেয়ারী বাঈজী বলে উল্লেখ্য করেন। লক্ষৌর এই বাঈজী ছিলেন নৃত্যে সুনিপুনা। হেকিম সাহেবের মতে ঢাকায় এরপরে এত বড় মাপের আর কোন নর্তকী আসেনি। হীরা বাঈজী নাকি নাচে খুব দক্ষ ছিলেন, হীরা বাঈজী যখন নাচতেন তখন তার গায়ের কালো রঙ থেকে নাকি আলো ঠিকরে পড়ত। হীরা বাঈজীর মেয়ে পান্না কিন্তু গজল গেয়ে সুখ্যাতি অর্জন করেছিল।
আমীরজান বাঈজী আর রাজলক্ষী বাঈজীর কথা লিখতে গেলে ঢাকার পানীয় জল সরবরাহের কথা লিখতে হয়। ১৮৭০ এর দশকে ঢাকায় পানিয় জলসরবরাহের নিমিত্তে নবাব আবদুল গনি গন্যমান্যদের নিয়ে একটি সভা ডাকেন। আমন্ত্রন জানানো হয় রাজলক্ষী আর আমীরজান কে। সে সভায় সব বড় বড় জমিদারদের আহ্বান জানান সবাই যেন কিছু কিছু দিয়ে সাহায্য করে।
ওই বৈঠকে আমীরজান আর রাজলক্ষী টাকা দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছিল আর কোন নবাব বা জমিদার কিন্তু কোন সাহায্য প্রস্তাব দেয়নি। নবাব গনি সে সাহায্য না নিয়ে পুরো প্রকল্পের ব্যায়ভার নিজের কাধে তুলে নেন। রাজলক্ষী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত জিন্দাবাহার গলির মুখে কালী মন্দির সংস্কার করেছিলেন।
সত্যেন সেনের লেখায় মালকাজান সন্মন্ধ্যে জানা যায়। মালকাজান মুজরো করতে ঢাকা আসতেন। সে সময় তিনজন মালকাজান ছিলেন। আগ্রাওয়ালী মালকাজান, বেনারসের চুলবুলিয়া মালকাজান ও ভাগলপুরী মালকাজান, উপমহাদেশের বিখ্যাত বাঈজী গওহরজান ছিলেন বেনারসের চুলবুলিয়া বা বড় মালকাজানের কন্যা। অসামান্য রূপসী মালকাজানের পূর্ব নাম ছিল লেডী এডেলাইন। আর্মেনিয়ান ঈহুদী। স্বামী রবার্ট ইঊয়ার্ডের সাথে বিচ্ছেদ হলে পরে এডেলাইন বাঈজী বৃত্তি গ্রহন করে।
এরপর ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে নিজের নাম রাখেন মালকাজান আর মেয়ে এঞ্জেলিনার নাম রাখেন গওহরজান। আধুনিক নায়িকাদের মত সেকালে মালকাজানের ছবি অধিকাংশ ঘরেই টানান থাকত, এত ছিল তার রূপ। মালকাজানের কিছু রেকর্ড বের হয়ে ছিল। ভারতের বাঈজী মহলে গওহরজান কিন্তু সম্রাজ্ঞীর আসন করেছিলেন। একে ছিলেন অসামান্য সুন্দরী তায় গুনী শিল্পী। ১৯০২ সালে তার গাওয়া গানের রেকর্ড বের হয়। এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত পোষ্ট দেব। সৈয়দ মুহান্মদ তৈফুর ১৮৯০ এর দশকে ঢাকার কালীবাড়ীর এক বিয়েতে তাকে নাচতে আর গাইতে দেখেছেন।
গওহরজান ছিলেন ভীষন শৌখিন আর ফ্যাশন সচেতন। নিজেকে সব সময়ই সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করতেন। বস্তুত গওহরজানের হাত ধরেই কিন্তু শিল্পীদের ফ্যাশন সচেতনতা এ দেশে শুরু হয়। তার গানের রেকর্ড ছিল বেশ উল্লেখ্যযোগ্য। তিনি কিছু গানও রচনা করেছিলেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানের গুরু ওস্তাদ জমির উদ্দিন কিন্তু গওহর জানের শিষ্য ছিল।
গওহরজানের মা মালকাজানের সৎবোন ছিল জদ্দন বাঈ। জদ্দনের মা ইসলাম গ্রহন করে আর জীবিকার কারনে মেয়েকে বাঈ হিসাবে তৈরী করে। জদ্দন বাঈ বেশ কয়েক বার বিয়ে করেন। জদ্দন বাঈ ঢাকার বিভিন্ন মেহফিল মাতিয়ে রাখতেন। তিনি ঢাকার নবাব এর ঘনিষ্ট সান্নিধ্য পেয়েছিলেন বলেও জানা যায়। জদ্দনের শেষ স্বামী উত্তম চাদ মোহন জদ্দনের প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে মুসলমান হন আর তাকে বিয়ে করেন। মোহন নিজের নাম রাখেন আবদূর রশীদ।
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এ বিয়েতে সাক্ষী হন। জদ্দন বাঈজী পেশা ছেড়ে চলচিত্রের সাথে যুক্ত হন। রশীদ আর জদ্দানের ঘরে জন্ম নেন নার্গিস। এই সেই নার্গিস ভারতের চিত্র জগতে তিনি কিংবদন্তী তুল্য মর্যাদা পেয়েছেন। সে যুগের সেই সব বাঈজীরা কিন্তু শিক্ষিত নারীদের চলচিত্রে আসার পথ খুলে দিয়েছিলেন। বলা যায় বাঈজীদের ঘর থেকেই মেয়েরা প্রথম অভিনয়ের পথে আসেন।
১৮৭৩ সালে কলকাতার মেয়েরা যখন যখন রঙ্গমঞ্চে আসার অনুমতি পেলেন, তখন নিষিদ্ধ পল্লীর সংগীতে পারদর্শীরাই কিন্তু মঞ্চে এসেছিল। তখন থেকে বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশক পর্যন্ত কিন্তু সমস্ত অভিনেত্রীরাই সুগায়িকা ছিলেন। এ প্রসঙ্গে বিনোদিনী, তিনকড়ি, তারাসুন্দরী থেকে বিংশ শতাব্দীর আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা পর্যন্ত অনেকেরই নাম করা যায়। কানন দেবী এখনো অনেকের ই প্রিয়। আমারো কিন্তু কানন দেবীর গান ভাল লাগে। তিনি কিন্তু সুঅভিনেত্রী ও ছিলেন।
ঢাকার প্রথম পূর্নাঙ্গ নির্বাক চলচিত্র ছিল ‘দ্য লাষ্ট কিস’ এর নায়িকা ছিল লোলিতা তাকে বাদামতলীর নিষিদ্ধ পল্লী থেকে নিয়ে আসা হয়। তার আসল নাম ছিল বুড়ী। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। ছবির কাজ শেষে বুড়ী আবার পুরানো পেশায় ফিরে যায় এর বেশি কিন্তু লোলিতার সন্মন্ধ্যে জানা যায় না। মঞ্চে তাদের অভিনয় করানোর জন্য অনেক পত্র পত্রিকায় জোর প্রতিবাদ জানানো হয়। তাদের সঙ্গে যে এক মঞ্চে উপবেশন করাই অসন্মানের। দ্যা লাষ্ট কিসের সহ নায়িকা চারুবালাকে আনা হয় কুমারটুলী পতিতালয় থেকে জিন্দাবাহার লেন থেকে আনা হয় দেববালাকে।
কৃতজ্ঞতাঃ হেকিম হাবিবুর রহমান, ডঃ মুনতাসির মামুন, শামীম আমিনুর রহমান, ইন্টারনেট।
সমাপ্ত
১৫ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:০৫
শের শায়রী বলেছেন: অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা ভাই
২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৪৬
শায়মা বলেছেন: +++
অনেক অনেক ভালো লাগা ভাইয়া।
১৫ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:০৬
শের শায়রী বলেছেন: অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা শায়মা।
৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৪১
আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: ++++++++আবারো পড়বো রাতে।
১৫ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:০৫
শের শায়রী বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ বোন
৪| ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১৪
মাক্স বলেছেন: বরাবরের মতই অনেক নতুন কিছু জানলাম। চলতে থাকুক++++
১৫ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৭
শের শায়রী বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই
৫| ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪২
ঝটিকা বলেছেন: আমার জানতে ইচ্ছা করছে ঐসব বাইজি আর এখনকার পতিতাদের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল কি। যদি নাই থাকে তবে তখনকার রাজ- রাজড়ারা প্রকাশ্যে বাইজি রাখত কোন রাঘ ঢাক ছাড়ায়!! খুব যে বেশিদিন আগের কথা তাও না।
১৬ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:১৬
শের শায়রী বলেছেন: আপু আপনি বিরাট একটা ধাঁধার মধ্যে আছেন। তবে এটা শুধু আপনি না অনেকেই এই ব্যাপারটা এক করে ফেলে। বাঈজীর সংজ্ঞা আমি আমার প্রথম লেখায় দিয়েছিলাম। বাঈজী আর পতিতা এক না।
কিন্তু কালক্রমে সে কালের সমাজ ব্যাবস্থায় বাঈজী কালচার চলে আসে শুধু পুরুষদের মনোরঞ্জনে, আর স্বাভাবিক ভাবে যখন ই নারী চলে আসে পুরুষের মনোরঞ্জনে যৌন তা সেখানে অবশ্যাম্ভাবী।
তখনকার রাজারা মূলত বাঈজী রাখত মূলত নাচ আর গানের পিপাসা নিবারন করার জন্য। তাদের দরবারে কিন্তু পুরুষ ওস্তাদ কলাকার ও থাকত। পরে সেখানে অবধারিত ভাবে যৌনতা আসত।
আজকে আমরা যে সব তথাকথিত বাঈজী দেখি তারা আসলে যৌন কর্মী যারা বাঈজী নাম ধারন করে আদের অভিজাত্য গ্রহন করতে চায়। বাঈজী হওয়া অত সোজা ব্যাপার ছিলনা, যেমন টা আজকের যুগে নাচে সর্বোচ্চ বুৎপত্তি অর্জন করা।
ভাল থাকুন বোন
৬| ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:২১
জাকারিয়া মুবিন বলেছেন:
যাক, বাইজী সিরিজ শ্যাষ হয়নাই তাইলে।
১৬ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:১৬
শের শায়রী বলেছেন:
৭| ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫২
মনিরা সুলতানা বলেছেন: নার্গিস কাহিনী জানলাম
১৬ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:৪৫
শের শায়রী বলেছেন:
৮| ১৬ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:২৭
বাংলাদেশী দালাল বলেছেন: ললিতা পতিতা ছিল শুনে কস্ট পাইলাম। আহারে কি মিস্ট ছিল দেখতে।
১৬ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:৪৬
শের শায়রী বলেছেন: হরে ভাই আমারো আপ্নের মত মনে হইছে।
৯| ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:১৬
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
চলুক
১৮ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৪:২৬
শের শায়রী বলেছেন: ভাই আর বেশী চালানোর ইচ্ছে নাই। মনে হয় পরের পর্বেই শেষ করে দেব
১০| ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯
লাবনী আক্তার বলেছেন: পড়ে ফেললাম ভাইয়া। অনেক কিছু জানলাম। আপনার সব পোস্টই তথ্যবহুল।
১৮ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৫৬
শের শায়রী বলেছেন: অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আপু
১১| ২২ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:২১
সেচ্ছাসেবক বলেছেন: ভাই আমার মনে হয় আমাদের দেশীয় বাঈজীদের সাথে জাপানী গাইসা (Geisha)দের অনেক মিল আছে।
২২ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৩
শের শায়রী বলেছেন: একজাক্টলী আগের কালের বাঈজীদের সাথে গেইসাদের মিল খুজে পাওয়া যায়। আপনার মত লোকের কাছ থেকে মন্তব্য পাওয়া ও বিরাট ব্যাপার।
ভাল থাকুন ভাই
১২| ২২ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৭
কালোপরী বলেছেন: ++++++++
২২ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:১১
শের শায়রী বলেছেন: কৃতজ্ঞতা কালোপরী
১৩| ২২ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:০৮
সেচ্ছাসেবক বলেছেন: ভাই, আমার মত লোকটা কিন্তু খারাপ না ... একটু পাগলা আর কি ...
২২ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৩১
শের শায়রী বলেছেন: আর আমার একটু মাথা খারাপ বছর তিনেক হেমায়েতপুর ছিলাম। ভালই মিলবে মনে হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:২৫
ঢাকাবাসী বলেছেন: চমৎকার প্রান্জল বর্ণনা, সেই একইরকম সুন্দর। প্রিয়তে, আর ভাল থাকুন।