নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

শেরজা তপন

অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...

শেরজা তপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্ব ভরা পন্ডিতেরা (মঙ্গলে প্রাণ)

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:২৪


সারা বিশ্ব জুড়ে জ্ঞানী গুণী, কুতুব, আর পণ্ডিতে থিক থিক করছে - কেউ কারো কথা শুনতে চায় না, সবাই বলতে চায়। বাইরে যতই ভেক ধরুক না কেন, মোটামুটি সবাই নিজেকে সর্বোচ্চ লেভেলের জ্ঞানী ভাবতে পছন্দ করে। ভয়াবহ এই রোগে পুরো মানবজাতি আক্রান্ত - আমিও তার ব্যতিক্রম নই।

রহস্যময় মহাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত
কদল প্রাণের রহস্যের মূলে জেনে বসে আছে, একদল মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য ঠিকঠাক জেনে গেছে, কেউ কেউ ব্ল্যাক হোলের মাঝখানে বসে নিয়মিত আপডেট দিচ্ছে। হাজার আলোকবর্ষ এখন তুড়ির খেল, গ্যালাক্সির চেয়ে মহাবিশ্ব নিয়ে আলোচনা চলছে কত মিলিয়ন ইউনিভার্স আছে সেই নিয়ে। চিলির সাগরের নিচে শতাধিক নতুন সামুদ্রিক প্রাণী আবিষ্কার নিয়ে আরেক দল হুলস্থুল করছে - বিশেষ প্রজাতির মাছ যে পানির নিচে হাঁটে, তা দেখে তারা অবাক।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা তাদের মত চিকিৎসা শাস্ত্র বোঝাচ্ছে - আমরা দ্বার্থহীনভাবে বিশ্বাস করে তর্ক জুড়ে দিচ্ছি। ভাষাবিদেরা তাদের মত করে ভাষা শাস্ত্র বোঝাচ্ছে - আমরা তা ধ্যানে, মনে, জ্ঞানে বিশ্বাস করে জান কাবার করে দিচ্ছি। ধর্মীয় নেতারা আমাদের ধর্মশাস্ত্র বোঝাচ্ছে - আমরা দুনিয়ার আরাম আয়েশ ছেড়ে ত্যাগের পথ বেছে নিচ্ছি। রাজনীতিবিদেরা জাতীয়তাবাদ শেখাচ্ছে - আমরা দেশকে ভালোবেসে জান কোরবান করছি।
ইউক্রেনের নাগরিক জানে না তারা কী জন্য দেশহারা হয়েছে আর কী জন্য মরছে। রাশিয়ার নাগরিক জানে না তারা কী জন্য নিজের ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। বার্মায় একই অবস্থা! গাজার মানুষেরও সেই অবস্থা যেমন ইসরায়েলিদের, ওদেরও রাতের ঘুম হারাম।

মানুষের সীমাবদ্ধতা এবং অগ্রগতি
মানুষ সর্বোচ্চ সাড়ে বারো কিলোমিটার নিজের পায়ের নিচের মাটির নিচে সুরঙ্গ খুঁড়তে পেরেছে - তাও সুদীর্ঘ তিরিশ বছরে তিনবার ফেল মেরেছে। কিন্তু মাটির নিচে যেতে না পারলে কি হবে, উপরের দিকে মানুষ কিন্তু এগিয়ে গেছে দুর্দমনীয়ভাবে; এর মাঝে চাঁদে কয়েকবার মানুষ নেমেছে। মঙ্গলে সত্তরের দশকে যে যাত্রা গুটি গুটি পায়ে শুরু করেছিল ভাইকিং, সেটার পূর্ণতা পেয়েছে: In the meantime, NASA's Mars Global Surveyor (MGS) left Earth on Nov. 7, 1996। মানুষের সৌরজগতের বাইরে জানার অদম্য আগ্রহের প্রচেষ্টার শুরুর Voyager মিশন: Feb 17, 1998: Became the most distant human-made object after overtaking NASA's Pioneer 10। কিন্তু ওই তিনবার মাটি খুঁড়ে ফেল মেরে অর্থাভাবে না কি ভয়ে আর কখনো ওমুখো হয়নি।

কোলা সুপারডিপ বোরহোলের অভিজ্ঞতা
কোলা সুপারডিপ বোরহোল: যদিও গবেষণা প্রক্রিয়া পৃথিবীর অভ্যন্তর সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য পেয়েছিল, ফলাফলগুলি অনেকাংশে অপ্রত্যাশিত ছিল, এবং তাদের ভিত্তিতে পৃথিবীর আবরণের প্রকৃতি এবং মোহোরোভিবিক পৃষ্ঠের সারাংশ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না।

পাঁচ কিলোমিটার গভীরতায় তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে, সাত কিলোমিটারে - ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এবং ১২ কিলোমিটার গভীরতায় সেন্সরগুলি ২১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে। ১৫ কিলোমিটার গভীরে তাপমাত্রা এত বেশি যে সেখানে মানুষ্য নির্মিত আর কোনো ড্রিল মেশিন কাজ করার কথা নয়। বিজ্ঞানীদের জন্য, এই কূপ থেকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি হল যে গ্রানাইট থেকে ব্যাসাল্টে কোনো রূপান্তর প্রায় সাত কিলোমিটার (৪.৩ মাইল) গভীরতায় পাওয়া যায়নি। এই গভীরতায় কঠিন শিলার নিচে জল পরিপূর্ণ ছিল, যা আশ্চর্যজনক ছিল। এই জল, ভূপৃষ্ঠের জলের ঠিক বিপরীতে থেকে, গভীর ভূত্বকের খনিজ থেকে এসেছে যা পাথরের একটি অভেদ্য স্তরের কারণে পৃষ্ঠে পৌঁছাতে অক্ষম ছিল।

গভীর গবেষণার চমকপ্রদ আবিষ্কার
ভূপৃষ্ঠের ছয় কিলোমিটার (৩.৭ মাইল) নিচে মাইক্রোস্কোপিক প্লাঙ্কটন জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। আরেকটি অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার ছিল প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেন গ্যাস। গর্ত থেকে প্রবাহিত ড্রিলিং কাদার সাথে প্রচুর হাইড্রোজেন গ্যাস বের হয়ে আসছিল - যা উষ্ণ প্রস্রবণের মতো "ফুটন্ত" অবস্থায় চারদিকে তীব্রবেগে ছড়িয়ে পড়ছিল। ধারণা করা হয় যে ভূপৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীর কোরের দূরত্ব ২৮৯০ কিলোমিটার গভীরে। যদিও গর্তটি ৭.৫ মাইল গভীর, এটি আসলে পৃথিবীর মূলের খুব কাছাকাছি আসেনি। অনুমান সাপেক্ষে ধারণা করা হয় যা, কোলা সুপারদীপ বোরহোল গ্রহের ভূত্বকের মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র ০.২ শতাংশ পথ পেতে সক্ষম হয়েছে। ১২ কিলোমিটার গভীরে প্রবেশ করেই এত আশ্চর্যজনক আবিষ্কার হয়ে গেছে, বাকি ২৮৭৮ কিলোমিটারে কি আছে এটার সঠিক তথ্য দেবার মুরোদ কারো আছে?

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি
তবু বিজ্ঞানের কাছে আমরা প্রতিনিয়ত চরমভাবে ঋণী। মানুষের ক্ষুদ্র সামর্থ্য দিয়ে অসীমকে জয় করার দুর্দান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এবং থাকবে। প্রতিদিন একটু একটু করে অসীম ভাবনাকে জয় করছে মানুষ - গত এক শতাব্দীতে বিজ্ঞান এক লাফে যেন কয়েক মিলিয়ন যুগ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে।
~ চিলির আতাকামায় রোভার মহাকাশযানের পরিক্ষা চলছে।

ভবিষ্যৎ এবং অনিশ্চয়তা
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির এত অগ্রগতি সত্ত্বেও, আমরা এখনও অনেক অজানার মুখোমুখি। চিলির আতাকামায় রোভার মহাকাশযানের পরীক্ষা চলছে। 'অতি সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যাকটেরিয়া মহাকাশে বেঁচে থাকতে পারে। কিছু বিজ্ঞানী সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, মঙ্গলে পাঠানো মহাকাশ যানের সাথে পৃথিবী বা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে কোনো অনুজীব চলে যেতে পারে মঙ্গলে। বিজ্ঞানীরা সেটাই উল্টো মঙ্গলের অনুজীব মনে করে একটা ভয়ঙ্কর ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলতে পারেন। ২০২৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে, চিলির আতাকামা মরুভূমিতে অপরিচিত অণুজীবের একটি "অন্ধকার মাইক্রোবায়োম" (ইংরেজিতে 'ডার্ক মাইক্রোনায়াম';) এর সন্ধান পাওয়া গেছে, পৃথিবীর সেই অংশটুকুর পরিবেশ ঠিক মঙ্গল গ্রহের মতো।'

মহাকাশ বিজ্ঞান এবং ডার্ক মাইক্রোবায়াম
ডার্ক ম্যাটারের গল্প অনেক হয়েছে। যে ম্যাটারের অস্তিত্ব শুধু ধারণা করা যায় কিন্তু কোনোভাবেই প্রমাণ করা যায় না। 'ডার্ক মাইক্রোবায়াম' এর কাছাকাছি কিছু একটা কিন্তু এর অস্তিত্ব সম্ভবত প্রমাণ করা যায় তবে ব্যাস ওই পর্যন্ত! এখনো পর্যন্ত মঙ্গলে যতগুলো মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে, মঙ্গল চষে বেড়ে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি নেই সেটা খুঁজে দেখার জন্য তার কোনোটা

তেই সেই প্রযুক্তি নেই যে ডার্ক মাইক্রোবায়ামের মতো অনুজীব শনাক্ত করবে। তার মানে ২০২২ সালে যেসব জীববিজ্ঞানীরা পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছেন, তারা এমন দুটো অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না জেনেই আরো কত শত ভুল তথ্য জেনে বিদায় নিয়েছেন।'

উপসংহার
[আতাকামা মরুভূমির চিরশুষ্ক এই স্থানেই 'ডার্ক মাইক্রোবায়াম' বা 'রহস্যময় অনুজীবের' সন্ধান পাওয়া গেছে। (২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে)]
~ আতাকামা মরুভুমির চিরশুস্ক এই স্থানেই 'ডার্ক মাইক্রোবায়াম' বা 'রহস্যময় অনুজীবের' সন্ধান পাওয়া গেছে। (২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে)

(চিলির 'আতাকামা' মরুভূমিকে মঙ্গল গ্রহের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এর অন্য জাগতিক চেহারার কারণে, আতাকামাকে মঙ্গলগ্রহের দৃশ্যের চিত্রগ্রহণের স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষ করে টেলিভিশন সিরিজ স্পেস ওডিসি: ভয়েজ টু দ্য প্ল্যানেটে। ২০০৩ সালে, গবেষকদের একটি দল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, যেখানে তারা ভাইকিং ১ এবং ভাইকিং ২ ল্যান্ডারদের দ্বারা জীবন শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য প্রচেষ্টা চালায় এবং সেই মরুভূমির মাটিতে কোনো জীবনের লক্ষণ শনাক্ত করতে সক্ষম হয় নি। ধারণা করা হয় এই ক্ষেত্রে অঞ্চলটি সম্ভবত পৃথিবীতে অনন্য এবং মঙ্গল গ্রহে ভবিষ্যতের মিশনের জন্য যন্ত্র পরীক্ষা করার জন্য NASA দ্বারা ব্যবহৃত হয়। ২০০৮ সালে, ফিনিক্স মার্স ল্যান্ডার মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে পার্ক্লোরেট শনাক্ত করেছিল, যেখানে প্রথম জল আবিষ্কৃত হয়েছিল। এই ধরণের পার্ক্লোরেট আতাকামাতেও পাওয়া যায় যার সাথে সংশ্লিষ্ট জৈব উপাদান ও নাইট্রেট জমা রয়েছে, যা মাধ্যমে ধারণা করা হয় দেয় যে মঙ্গল গ্রহে জীবনের লক্ষণ অস্পষ্ট হলেও একেবারে অমূলক নয়। এখন অন্য এক সমস্যায় পড়েছে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা - সত্যিই যদি 'ডার্ক মাইক্রোবায়ামের মতো তেমন কোনো রহস্যময় অনুজীব থেকে থাকে মঙ্গল গ্রহে তবে ওখানে পাঠানো কোনো যান সেটা শনাক্ত করতে পারবে না - অবশ্যই মঙ্গলের মাটি পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে এসে রিসার্চ করতে হবে। তাহলে উপায়?? যেগুলো গিয়েছে চলে সেগুলোর তো ফিরিয়ে আনার আপাতত রাস্তা নেই। অতএব মঙ্গলে জীবন আছে কি নেই সেজন্য নিদেনপক্ষে দশ/বিশ বছর আরো অপেক্ষা করতে হবে।)

ব্যক্তিগত উপলব্ধি
[প্রিয় ব্লগার: মহাকাশ বিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি - এসব আমার জন্য অতীব কঠিন একটি বিষয়। যেগুলো আমি বুঝি না, তার উপযুক্ত অর্থ করা কঠিন। দেড় বছর ধরে অপেক্ষা করছি। ব্লগ তো বটেই ফেসবুকেও কেউ কিছু এই নিয়ে লিখছে না দেখে শুরুটা করলাম। এই বিষয়ে ভালো কারো ধারণা থাকলে অবশ্যই লিখবেন। শুরুটা করলাম আমি শুধু আমার স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে। আমার অজ্ঞতা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: প্রথম মন্তব্যের জায়গা দখল করিলাম
আসিতেছি পরে । অকা

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:১৬

শেরজা তপন বলেছেন: সেইরকম হুলস্থূল মন্তব্য কি আর ব্লগে হয় আপু যে, জায়গা দখল করতে হবে :(
তার উপরে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখায় সবাই আগ্রহ পায় না।

২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৮

মিরোরডডল বলেছেন:





ব্লগ তো বটেই ফেসবুকেও কেউ কিছু এই নিয়ে লিখছে দেখে শুরুটা করলাম।

কথাটা লিখছে দেখে না, লিখছে না দেখে হবে।


২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:১৪

শেরজা তপন বলেছেন: ভাল 'বুল' ধরেছেন :) ঠিক করিয়া দিলাম।

৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮

পারস্যের রাজপুত্র বলেছেন: সিসমোলজির অনুমানে আঁকা পৃথিবীর ভিতরের বিভিন্ন স্তরের ছবি অন্যভাবে প্রমাণ করতে গেলে কি সমস্যা?

বিরাট সমস্যা !

কারণ এতে পৃথিবীর ভিতরের থিওলজিক্যাল মডেলের আলোচনা আবার ফিরে আসবে। যতক্ষন পর্যন্ত ভুপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে ড্রিলিং প্রজেক্টগুলোকে কোন না কোন ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, ততক্ষন পর্যন্ত প্রচলিত অতি সরলিকৃত সেকু্লার গল্প বিক্রি করে যাওয়াও সম্ভব হবে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম দুইটা ফ্ল্যাগশিপ ড্রিলিং প্রজেক্টের ইতিহাস ঘাটলে উপরের কথার সত্যতা পাওয়া যায়।

প্রোজেক্ট মো-হোল
===========

প্রথম প্রজেক্টটির নাম প্রোজেক্ট মো-হোল (Project Mohole)। আমেরিকার মেইনস্ট্রিম (জায়নিষ্ট লবির আশির্বাদ পুষ্ট) বৈজ্ঞানিক কমিউনিটির বাইরের একটা গ্রুপ (American Miscellaneous Society) এই প্রকল্পের স্বপ্নদ্রোষ্টা ছিল। সমুদ্রের তলদেশে, যেখানে ধারণা করা হয় যে পৃথিবীর উপরিভাগের ক্রাস্ট সবচেয়ে পাতলা ( ৫- ১০ কি.মি.), সেখানে ড্রিল করে ক্রাস্টের নীচে আসলে কি আছে তা জানা ছিল এই প্রোজেক্টের উদ্দেশ্য।

শুরু থেকেই প্রোজেক্ট মো-হোল বাস্তবায়নে বিভিন্নরকম বিরুপ মন্তব্য, বাঁধা, নানান রকমের ষড়যন্ত্র হতে থাকে। অনেক বাঁধা অতিক্রম করে প্রকল্পটির প্রাথমিক ফেইজ অত্যন্ত সফল ভাবে শেষ করার পর এই প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট সবার সাথে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষনা করা হয় এবং শেষমেশ নানান অপবাদ গায়ে নিয়ে প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন পদত্যাগ করে কোন রকমে পালিয়ে বাঁচে। ১৯৬৩ সালে মার্কিন কংগ্রেসে যখন এই প্রকল্প নিয়ে শুনানি চলছিল, তখন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির জিওলজির অধ্যাপক হোলিস হেডবার্গ অত্যন্ত জোর দিয়ে বুঝনোর চেষ্টা করছিলেন যে "..this project can readily be one of the greatest and most rewarding scientific ventures ever carried out. I must also say that it can ..." এই কথা বলার কারণে উনাক্বে তিরষ্কার করা হয় এবং উনি পদত্যাগ করেন এবং প্রোজেক্ট মো-হোল খতম করে দেওয়া হয়। এর পরবর্তিতে নেওয়া এইধরণের প্রোজেক্টগুলো জায়নিষ্ট লবি নিয়ন্ত্রন করে। এবং পরবর্তি কোন প্রজেক্টেই এখন পর্যন্ত ক্রাস্টের নীচে আসলে কি আছে তা জানার চেষ্টা করা হয় নাই।

কোলা সুপারডিপ বোরহোল প্রোজেক্ট
======================
২য় প্রোজেক্টটির নাম Kola Superdeep Borehole Project, আমেরিকান মো-হোল প্রোজেক্টের মত এইখানে অবশ্য পৃথিবীর ক্রাস্টের নীচে কি আছে তা বের করা উদ্দেশ্য ছিল না। স্থলভাগের উপরে নেওয়া এই প্রোজেক্টটা ছিল সোভিয়েত ফিনল্যান্ড বর্ডারে। বৈজ্ঞানিক গবেষনার জন্য পৃথিবীর যতটা গভীরে যাওয়া যায় - এইরকম একটা উদ্দেশ্য নিয়ে সোভিয়েতরা এই প্রোজেক্টটা আরম্ভ করেছিল। ১৯৬৫ সালে হাতে নেওয়া এই প্রোজেক্ট পরবর্তী ৩০ বছর ধরে চলতে থাকে, এবং ১৯৭০ থেকে ৯২ সাল পর্যন্ত এইখানে কয়েকটা ফেইজ-এ ড্রিলিং চলে। একাধিক ফেইলুরের পরেও সোভিয়েতরা প্রায় ১২ কিলোমিটারের মত গভীরে যেতে সমর্থ হয় এবং এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে গভীর বোর হোল। কোলা সুপারডিপ বোরহোল প্রকল্প করতে যেয়ে কয়েকটি অপ্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায়।

সিসমিক সার্ভে অনুযায়ী ধারণা করা হয়েছিল যে ৭ কিলোমিটার গভীরে একটা গ্রানাইট-ব্যাসল্ট ডিকন্টিনিউইটি আছে। অর্থাৎ ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত গ্রানাইট পাথরের স্তর শেষ হলে ব্যাসল্টের স্তর পাওয়া যাবে। কিন্তু ড্রিলিং করে ৭ কিলোমিটারের পরও শুধু গ্রানাইটই পাওয়া গিয়েছিল। - এই পয়েন্টটা খুব গুরুত্বপূর্ন, কারণ এই আবিষ্কার রিফ্লেকটিভ/ রিফ্র্যাকটিভ সিসমোলজির গ্রহনযোগ্যতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয় এবং সিসমোলজির অনুমানের উপরে ভিত্তি করে তৈরী পৃথিবীর ভিতরের নানান স্তরের যেই বর্ননা দেওয়া হয়, তার ভিত্তিমূলে কুঠারাঘাত করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেংগে যাওয়ার পরে ইউরোপ আমেরিকার (জায়নিষ্ট সমর্থনপুষ্ট) বিজ্ঞানীদের একটি দলকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সিসমোলজির যন্ত্রপাতি নিয়ে কোলা বোরহোল প্রকল্পের এই গ্রানাইট-ব্যাসল্ট anomaly পরীক্ষার করে একটা গোঁজামিল টাইপের ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর জন্য ব্যপক দৌড়ঝাপ করতে দেখা যায়।

কোলা বোরহোলের ৩-৬ কিলোমিটার গভিরতায় পানি পাওয়া যায়, ভুপৃষ্ঠের এত নীচে পানি থাকবে এইটা কেউ আশা করে নাই। ৬ কিলোমিটার গভিরে কিছু মাইক্রো অর্গানিজমের ফসিল পাওয়া যায় - এইটাও কেউ আশা করে নাই। আরেকটা অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার ছিল বিপুল পরিমান হাইড্রোজেন গ্যাস। এছাড়াও অনেক গভীরে সোনার খনির অস্তিত্ব পাওয়া সহ আরও অনেক কিছু পাওয়া যায়।

রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় আরেকটি বোরহোল খুড়তে গিয়ে নাকি সোভিয়েতরা দোজখ পর্যন্ত চলে গিয়েছিল- এরকম একটা বিষয় অলটারনেটিভ মিডিয়ায় এত বেশি পরিমান প্রচার হয়, যে জায়নিষ্ট নিয়ন্ত্রিত মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে এই কথা রেগুলার বেসিসে ডিবাংক করতে হয়। অনেকে বলে কোলা সুপারডিপ বোরহোলেই এই ঘটনা ঘটেছিল এবং এজন্যই রাশিয়ান সরকার এই প্রজেক্ট বন্ধ করে দিছে।

রিফ্লেকটিভ/ রিফ্র্যাকটিভ সিসমোলজির অতি সরলিকৃত অনুমানে আঁকা পৃথিবীর ভিতরের কয়েক লেয়ার ডিমের কুসুমের মত যেই ছবি জায়নিষ্টরা প্রচার করে সেইটা সম্ভবত বিবর্তনবাদের পরে এদের তৈরী করা সবচেয়ে বড় গাঁন্জা। স্টিফেন মেয়ারের ডারউইনস ডাউট, সিগনেচার ইন দ্যা সেল - বইগুলি প্রকাশের পরে নিও ডারউইনবাদের গাঁন্জার মেয়াদ উত্তীর্ন হয়ে গেছে। যদিও কিছু জায়নিষ্ট লবি জান-প্রাণ দিয়ে এই মেয়াদ উত্তির্ন গাঁন্জা এখনও টেনে যাচ্ছে। আশা করা যায় আগামী কয়েক দশকের মধ্যে সেকুলারিজমের সমস্ত দর্শন আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।



তথ্যসুত্র:
https://en.wikipedia.org/wiki/Project_Mohole
https://en.wikipedia.org/wiki/Kola_Superdeep_Borehole
https://en.wikipedia.org/wiki/Reflection_seismology
https://en.wikipedia.org/wiki/Well_to_Hell
https://www.youtube.com/watch?v=L0-hgSjnomA&t
https://www.youtube.com/watch?v=eW6egHV6jAw&t
https://en.wikipedia.org/wiki/Earth's_inner_core

(সংগৃহীত)

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬

শেরজা তপন বলেছেন: বৈজ্ঞানিক বিস্তৃত ব্যাখ্যা ও গঠনমূলক সমালোচনা সমৃদ্ধ চমৎকার সুদীর্ঘ মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
মহলের ব্যাপারে কিছু জানা ছিল কিন্তু এর থেকে অনেক বেশী কিছু জানলাম আপনার সংগ্রহকৃত মন্তব্য থেকে। বিজ্ঞানভিত্তিত লেখা পড়তে আমি দারুণ মজা পাই কিন্তু কঠিন শব্দচয়ন ও বিশেষ কিছু শব্দের সঠিক ভাবার্থ করতে না পারায় মাঝে মধ্যেই সমস্যায় পড়ি।

এমন লেখায় আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকব। ভাল থাকুন।

৪| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমার আকাশযাত্রা গল্পটায় ইউনিভার্সে প্রাণের অস্তিত্ব বিষয়ে কিছু সাধারণ কথা লিখেছিলাম। অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্বের ব্যাপারে ইউটিউবে প্রচুর ক্লিপ পাওয়া যায়। বাল্যকাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও বইপত্রেও এ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি দেখেছি। কিন্তু কেউ জোর দিয়ে এবং প্রমাণ করে দেখাতে পারে নি যে আর কোথাও প্রাণ আছে, শুধু অনুমান নির্ভর বক্তব্য। এ থেকে আমার সাদামাটা একটা কথা হলো, পৃথিবীর বাইরে হোল ইউনিভার্সে আর কোথাও কোনো প্রাণ নেই। এই পৃথিবীর বহু বহু বছর আগেই ইউনিভার্সের সৃষ্টি। এই সেদিনের পৃথিবীতে যদি ১৮ হাজার মাখলুকাত থেকে থাকে, তাহলে এত প্রাচীন ইউনিভার্সে কয়েক বিলিয়ন প্রাণ থাকার কথা ছিল এবং তাদের আরো অনেক বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার কথা ছিল। এই যে আমরা তন্ন তন্ন করে খুঁজছি কোথায় প্রাণের অস্তিত্ব আছে, তারা কি ঘরের কোনায় বসে লুডু খেলতো, নাকি আঙুল চুষতো? তারাও কি এতদিন আমাদের খুঁজে বের করে তাদের গ্রহে নিয়ে গিয়ে আয়নাঘরে বন্দি করে রাখতো না?

ভূ-পৃষ্ঠের অভ্যন্তরের তথ্যগুলো সত্যিই বিস্ময়কর। কী একটা সিস্টেমের কথা শুনেছিলাম, পৃথিবীর মাঝখানে একটা হোল সৃষ্টি করা হবে, এ প্রান্ত থেকে বিপরীত প্রান্ত বরাবর, মাত্র ১২ সেকেন্ডে আপনি এপার থেকে ওপার চলে যাবেন। এ ব্যাপারে জানা থাকলে হাইলাইট কইরেন।

আমার কাছে লেখাটা খুব ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে।

শুভেচ্ছা শেরজা তপন ভাই।

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫

শেরজা তপন বলেছেন: আপনার আকাশযাত্রা ( রামালার প্রেম) পড়ার ইচ্ছে আছে। সময় করে অবশ্যই পড়ব।
ইউনিভার্সে অন্য কোথাও প্রান থাকার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। সেটা হয়তো আছে আমাদের অকল্পনীয় এক পরিবেশে অন্য কোন ফর্মে। যার অস্তিত্ব আমাদের সম্ভাব্য কোন ব্যাখ্যার সাথেই মিলবে না। হয়তো তারা মাদের কাছে অদৃশ্য অস্পৃশ্য হয়ে থাকবে আমাদের দৃষ্টি শ্রবণ ও অনুভবের দুর্বলতার কারণে। পৃথিবীতে এমন অনেক প্রাণীই আছে তারা যা শোন দেখে বা অনুভব করে সেটা আমরা করি না। যেমন ধরুন; কুকুর , ৪টা রঙ দেখে আমরা দেখি ৩টা কিন্তু ম্যান্টেস নামক এক ধরনের লবস্টার বা চিংড়ি দেখে ২০টা রঙ। সত্যিকারে তারা কি দেখে কত লক্ষ কোটি রঙের খেলা দেখে সেটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
আপনি পৃথিবী এফোঁড় ওফোঁড় করে যেই হোলের কথা বলেছেন সেটা পার হতে সম্ভবত বর্তমান প্রযুক্তিতে ১২ মিনিট লাগবে।
সুদীর্ঘ সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই ভাল থাকবেন।

৫| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


ইলন প্রথমে পুতিনকে নিয়ে মঙ্গল ঘুরে আসবে, তারপর আমাদের কথা ভাববে।

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬

শেরজা তপন বলেছেন: যদি সে আপনাকে ওখানে রেখে আসার ব্যাপারে প্রস্তাব দেয় আপনি কি যাবার জন্য রেডি আছেন?

৬| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:১৬

জুল ভার্ন বলেছেন: অনেক পরিশ্রমী লেখা! +

৭| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: বারো কিলোমিটার নিচে গিয়ে আর যেতে পারেনি। বিজ্ঞানিরা যতই হাউকাউ করুক না কেন। সৃষ্টি জগতের রহস্য বের করে শেষ করতে পারবে না। সব রহস্য আল্লাহ তাআলার কাছে।

৮| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কেমন আছেন শেরজা?
ব্যস্ততার কারনে ব্লগে কম আসছি। আপনার লেখা মিস করি।

৯| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৩৮

রানার ব্লগ বলেছেন: ভাই আমার আস্ত চার ঠাং ওয়ালা বা দুই ঠ্যাং ওয়ালা জীবন্ত প্রানী দরকার মংগলে তবেই বিশ্বাস করবো প্রানী পাওয়া গেছে। কোথাকার কোন ব্যক্টেরিয়া যাকে দেখতে লাগে হাজার টা কাচের আস্তর দেয়া লম্বা নালী। উহু, উহাতে আমার পোসাবে না। প্রানী মানে, হাইটা চইলা বেড়াবে, লাফাবে, তেড়ে আসবে। ল্যাদল্যাদা ব্যাক্টেরিয়া কে জীবন বা প্রানী বলে চালালে আমার দ্বিমত আছে৷

১০| ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৭

মিরোরডডল বলেছেন:





হা হা হা হা
রানার কমেন্ট :)
আমাদের রানা অনেক মজার মানুষ।

১১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৩:০৬

জটিল ভাই বলেছেন:
ভাই, এতো শক্ত টপিক নিয়ে লিখা দেখলেই বুঝা যায় ভাবী কতোটা সহজ-সরল মানুষ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.