নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটবেলায় গুরুজনদের মুখে একটি উপদেশ হর-হামেশা শুনতাম “লেখাপড়া করে মানুষ হও”। আমরা হু-হা বলে মাথা নাড়তাম। তবে এ বাক্যের এ “মানুষ হওয়ার” বিষয়টি বোধগম্যের বাইরে ছিল। ভাবতাম, আমরাতো মানুষই আছি, আর কিসের মানুষ হবো ?! লেখা-পড়া না করে কি মানুষ হওয়া যায় না ?
ছেলে বেলায় শোনা সে উপদেশ বাক্যটি আজও যেন বোধগম্যের বাইরেই রয়ে গেল। রয়ে গেল এজন্যই যে, কেন, কি পড়েছি, কি পড়লে মানুষ হওয়া যায় আর ‘মানুষের’ সজ্ঞা-ই বা কি, অতীতের এবং বর্তমানের এত শত বই-পুস্তকের মধ্য থেকে তা খুজে বের করা আমার মতো জ্ঞানহীন অধম ব্যক্তি তো নয়ই এমনকি “আলাদীনের চেরাগ” এর পক্ষেও সম্ভব নয় বলেই আমার বিশ্বাস ! কারন বাংলা, ইংরেজী, ব্যাকরন, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, গনিত, অর্থনীতি, জীববিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন শাস্ত্র ইত্যাদির কোথাও ‘মানুষ হওয়ার’ কোন কৌশল কিংবা কিভাবে মানুষ (!) হতে হবে তার কিছুই লেখা নেই। আরও বড় কারন হলো, লেখা-পড়া করে মানুষ শিক্ষিত হয় কিন্তু শিক্ষিত হলেই কি মানুষ হয় ? এ দু’টিতে তো আসমান-জমিন ফারাক ! লেখা-পড়ার সব তো ধরাবাধা রুটিন বিষয়। পড়, মুখস্ত কর, পরীক্ষা দাও, পাশ কর, আবার পরের ক্লাসে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এগুলো নেহাতই জানায় বিষয়। পড়লাম, জানলাম প্রয়োজনে জাগতিক ক্ষেত্রে কাজে লাগালাম, ব্যাস। তারপর ক্রমান্বয়ে কোর্স শেষ করা। এরপর চাকরী খোজা। চাকরী হলে বিয়ের জন্য পাত্রী খোজা কিংবা পূর্ব থেকেই পছন্দের মানুষকে বিয়ে করা। তারপর সংসার, তারপর সংসার, তারপরও সংসার। কালেভদ্রে দু’একজন এর ব্যাতিক্রম হলেও বেশির ভাগের পরিনতি হয় একই। আসলেই কি একজন প্রকৃত মানুষ হওয়ার জ্ঞান আহরনের মত শিক্ষা আমাদের এবং বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার কোথাও কিংবা কোন বই পুস্তকে, নীতিসাস্ত্রে বলা থাকে, না আছে ? বাস্তবে কিন্তু দেখা যায় যে, শিক্ষা মানুষের খোলস পরিবর্তন করেছে মাত্র। এর আড়ালে মানব মন আদিম যুগের মতই, এমন কি কোন ক্ষেত্রে তার চেয়েও নীচে নেমে গিয়েছে।
তা হলে লেখা-পড়া শিখে মানুষ হওয়ার উপায় কী ? আরও কোন্ সে বিষয় যা শিক্ষা নিয়ে অবয়বেই শুধু নয়, প্রকৃতই মানুষ হওয়া যাবে ? এ প্রসঙ্গে আসার আগে লেখা-পড়ার বর্তমান উপযোগীতা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন। যদি অধ্যায়নরত সকল শ্রেনীর শিক্ষনার্থীদের প্রশ্ন করা হয়- শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কি অথবা কেন লেখাপড়া করছো ? উত্তরে তাদের কত পার্সেন্ট বলবে যে “লেখা-পড়া করে মানুষ হবো”! বরং এভাবেই হয়তো বলবে যে- ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, ব্যারিস্টার, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, রাজনীতিক, কুটনীতিক, ব্যবসায়ী ইত্যাদি-সিত্যাদি হবো।
এর পর যদি প্রশ্ন করা হয় কেন এসব হবে ? উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে এটা “আমার জীবনের লক্ষ্য”, “একটা স্ট্যাটাস দরকার” অথবা “জীবনে প্রতিষ্ঠা হওয়ার জন্য”। বস্তুতঃ বর্তমান বিশ্বে ‘টাকা’ এবং ‘ক্ষমতা’ সবকিছুর নিয়ন্তা হয়ে যাওয়ায়, এমনকি শিক্ষকেরাও এদের কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মানসিকতার এরূপ পরিবর্তন অস্বাভাবিক নয় এবং তাদেরকে এককভাবে এব্যাপারে দায়ীও করা যায় না। বাস্তবতার নিরিখেই তারা হতাশ ও লক্ষহীন হয়ে দ্রুত উপরে উঠার সিড়ি খুজছে। এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ও অনৈতিক পন্থায় যোগ্যতাহীনদের বিত্তশালী হওয়ার নজির এবং কিছু কিছু অভিভাবকের চাওয়া-পাওয়ার লাগামহীন প্রতিযোগিতা ও সীমাহিন অতৃপ্তিই মূলতঃ দায়ী। লেখা-পড়া করে আরো আরো অনেক পেশায় জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ, নিজ নিজ পেশায় উন্নতি করে সুখ-সমৃদ্ধি-নিরাপত্তা ও স্বস্থির সাথে সময় কাটানো, সন্তানের ভালো ভালো স্কুলের পড়া, লেটেস্ট মডেলের গাড়ী, দক্ষিনমূখী বারান্দার ফ্লাট আর টাকা অর্জন, এগুলোই যেন শিক্ষা লাভের প্রধান ও মূখ্য বিষয় হয়ে গিয়েছে। ক্ষুদেদেরও বর্তমানে চিন্তা একটাই, লেখা-পড়া করে বড় হয়ে অমুক হবো, তমুক হবো। মানুষ হওয়া কিংবা মানুষ হওয়ার জন্য মানুষ্যত্বের সংগা খোজার বিন্দু মাত্র সময়ও তাদের কোথায় ? দিনমান স্কুল, কোচিং, নোট-গাইডের ফটোকপি (পরীক্ষার আগে কারও কারও প্রশ্ন খোজা ) ক্ষনে-বিক্ষনে মোবাইলে চ্যাটিং আর এর বাইরে গোটা বিশেক দিবস উদযাপন তাদের পরিপূর্ণ যান্ত্রিক জগতে নিয়ে গিয়েছে। দূ:জনক এবং সত্য এটাই যে, শুধুমাত্র লেখা-পড়া করা থেকে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে বিবেক-কে দিয়ে ভালোমন্দ, সত্য-মিথ্যা, সুখ-দুঃখ, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য নিরুপন, মানবিক মূল্যবোধ, সুচিন্তা, সততা ও সুবোধ দ্বারা আত্মাকে পূর্ণ করা কিছুতেই যে সম্ভব নয় তা যুগ যুগ ধরেই প্রমানিত সত্য। শুধু অস্তিত্ব সংকটের আশংকায় এট মানতে চাই না ! বর্তমান বিশ্বের পারিবারিক, সামাজিক ও মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহ যে চিত্র, সেটি অন্ত:সারশুন্য শিক্ষারই ফলাফল মাত্র। বর্তমানে শিক্ষার প্রভূত উন্নতির সাথে সাথে জ্ঞান বিজ্ঞানের স্বর্ণ শিখরে আরোহন করা সত্বেও পৃথিবীর কোনও একটি জনপদের মানুষও কি সুখ-শান্তি ও নিরাপদে বসবাস করতে পারছে ? কেন আজ বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা, মানবতা উধাও ? এত বিদ্যা অর্জন করেও মানবজাতির এত বিবর্ন ও করুন পরিনতির কারন কী ? অবাক বিস্ময়ে দেখছি, সর্বোচ্চ শিক্ষা লাভ করা মানুষ (!) গুলোই তো সর্বক্ষেত্রে অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করে অন্যান্য কম জানা মানুষদের (!) উপর জোর-জুলুম, নির্যাতন, নিষ্পেষন, খুনের হুকুমদারীত্বে বর্তমানের পৃথিবীটা বসবাসের অযোগ্য করে দিচ্ছে। কেন এমনটা ঘটছে ? গলদটা কোথায় ? আসলে ‘অসম্পূর্ণ এবং ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা’ কারিগরী ও বৈষয়িক উন্নতি ঘটালেও জগতে ‘মানুষ’ গড়ার প্রনোদনা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই আজ ‘মানুষদের’ কোন্ ‘মানুষ’ হতে হবে তা তারা বেমালুম বিস্মৃত হয়েছে। ফলে ঘটে যাচ্ছে বিপত্তি ! এখন পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে শান্তি ও সুস্থ্য ধারা প্রবর্তনের জন্য উদ্ভাবিত কোন ফর্মুলাই তাই কাজে আসছেনা।
সমাজ কিংবা মনোবিজ্ঞানী অথবা কোন বিশেষ যোগ্যতা বা ক্ষমতার অধিকারী না হয়েও লেখা-পড়া নিয়ে এরূপ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য পূর্ণ লেখার পর গুরুতর অভিযোগ এবং মারাত্মক প্রশ্নের তীর আমার দিয়ে ধেয়ে আসতে পারে। নানা অভিযোগে আমি অভিযুক্ত হতে পারি, শুনতে হতে পারে অনেক বিরূপ মন্তব্যও। যা হয় হোক। কিন্তু আসলেই কি আমি ভুল করছি কিনা তার ধারনা পাওয়ার জন্য আমাদের নিজ নিজ পরিবার এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি পর্যালোচনাই যথেষ্ঠ বলে মনে করি।
এবার মানুষ এবং মনুষ্যত্ব প্রসংগে কিছু কথাবার্তা বলে লেখার পরিসমাপ্তি ঘটাবো।
লিভিং এনিমালদের মধ্যে মানুষ কেন সম্পূর্ণ আলাদা প্রকৃতির ? মূলত: ‘বিবেক’ থাকার কারনেই অন্যান্য লিভিং এনিমাল (প্রানীদের) এর চেয়ে মানুষ সবচেয়ে উন্নত এবং এগিয়ে রয়েছে। মানুষের ‘বিবেক’ হলো সেই ‘সুপ্ত নির্ধারক’ যা ভালো-মিথ্যা, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পূন্য ইত্যাদি সমস্ত বিচারিক বিষয়ের পার্থক্য এবং সঠিক পথ নির্ণয়ের যোগ্যতা সৃষ্টি করে। ‘বিবেক’ বিশেষায়িত জ্ঞান দ্বারা আলোকিত হয়ে অবয়বধারী মানুষ্য প্রানীকে প্রকৃত মানুষ হওয়ায় সাহায্য করে। প্রশ্ন হতে পারে ‘বিবেক’ তো built-in ভাবেই থাকে, সব মানুষ তা ব্যবহার করলেই হলো। আসলে ধারনায় বিষয়টি যত সহজ মনে করা হচ্ছে বাস্তবে তার ছোয়া পাওয়া মানবাত্মার জন্য সবচেয়ে কঠিন ও জটিল। এখানেই লেখা-পড়া তথা জ্ঞানের উৎসের প্রসংগ এসে যায়। এর পরের বক্তব্যের জন্য পাঠকেরা নিশ্চয়ই আমাকে বোকা কিংবা মূর্খ উপাখ্যান দিবেন। কিন্তু তার পূর্বে পাঠকদের কাছে আমার সবিনয় প্রশ্ন, পৃথিবীতে আগমনকারী মহা-মানবেরা কোন্ কোন্ পাঠ্য পুস্তক কিংবা কোন্ কোন্ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করে ডিগ্রীধারী হয়েছিলেন ? তাঁদের আর্থিক সক্ষমতাই বা কতটুকু ছিল ? মহা-মানবদের চাল চলন, চরিত্র কেমন ছিল? তাঁদের শিক্ষা গুরুইবা কে ছিলেন ? কি বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে তাঁরা মহা-মানব হয়েছিলেন ? এ সব প্রশ্ন আর এর উত্তর অত্যন্ত সহজ সরল এবং বোধগম্য মনে হয় কী !!
২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: একটানা না লিখে। প্যারা প্যারা করে লিখুন। তাতে লেখাটা যে পড়বে তার আরাম লাগবে।
৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:১৬
ফুয়াদের বাপ বলেছেন: মাশাআল্লাহ, সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন।
জন্মগত দিক থেকে আমরা রক্তে-মাংসে মানুষ (প্রানী) বটে, তবে কেন আবার মানুষের মতো মানুষ হতে বলা হয়। কথায় আছে না "নোয়ালে কাঁচা বাঁশ পাকলে করে ঠাসঠাস"। ঠিক তেমনি সত্যিকারের মানুষ হবার অনুশীলন শুরু হয় শিশু থেকেই। পরিবার তার প্রথম পাঠশালা। সমাজ তথা তার চারপাশ শিক্ষাউপকরন।
পুঁথিগত বিদ্যা উপেক্ষা করার উপায় নেই। শিক্ষা মানুষের মনের দ্বার খুলে দেয়। ভালো মানুষ হবার পথে দ্রুত এগুতো পারে যথাযথ পুঁথিবিদ্যার দক্ষতায়। তবে হ্যাঁ শুধু পুঁথিবিদ্যা উচ্চশিক্ষার একটা সনদ প্রদান করবে মাত্র মানুষ বানাবে না।
কচি ভাই, আপনার লেখার কাচি চলুক বিরামহীন। পড়ে আরাম পাই।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:২২
সামছুল আলম কচি বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার !!
৪| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২৪
সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: সুন্দর একটা বিষয়ের আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।
৫| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৯
কামাল১৮ বলেছেন: পরিসংখ্যানে দেখা গেছে নর্ডিক অঞ্চলের লোকজনই সবথেকে বেশি শুখী।জাপানিরাও শুখী জাতি।আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে বলে মানবিক হওয়া মানেই মানুষ হওয়া।মানবিকতা কি?অন্য মানুষের শুখ দঃখের অংশিদার হওয়া।আরো বিস্তারিত লিখা যায়।সংক্ষেপে এটাই বুঝি।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:২৩
সামছুল আলম কচি বলেছেন: সুন্দর ব্যাখ্যা !! ঠিক বলেছেন । ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার !!
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:২১
জুল ভার্ন বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন। প্রাচীনকালের সেই মহামানব সক্রেটিস বলেছেন “নো দ্যাইসেলফ”- এই কথাটি জীবন চলার চাবিকাঠি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে কী বলতে চেয়েছিলেন সক্রেটিস তার এই কথাটিতে! কেন যেন মনে হচ্ছে একজন ভালো মানুষ হতে হলে প্রথমেই নিজেকে জানতে হবে। আর নিজেকে জানার চেষ্টা করলেই সত্য আমাদের ডাকে সাড়া দিবে।
ধন্যবাদ।