নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে
প্রিয় মামনি সোহানা,
আজ অজানা এক লেখকের একটি উক্তি পড়লাম। তিনি ইংরেজিতে যা লিখেছেন তা বাংলা করলে দাঁড়ায় - সাহস দেখাতে সব সময় চিল্লা - বাল্লা করা লাগে না, বরং, মাঝে মাঝে 'আমি আগামীকাল আবার চেষ্টা করবো' - এটা কানে কানে, চুপি চুপি বলাটাও সাহসের পরিচয়। আমার কাছে কথাটা খুব মনে ধরেছে। তাই, আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তোমাকে আজ আমার জীবনের কিছু সাহসী সিদ্ধান্তের কথা শোনাবো।
বুদ্ধি খাটিয়ে বিদেশে পড়তে যাবার টাকা জোগাড়
আমি যখন যুক্তরাজ্যে পড়তে যাই, তখন খুব কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে গিয়েছিলাম। আমার বাবা (তোমার দাদু) তাঁর বড় ছেলেকে বিদেশে যেতে দিতে রাজি ছিলেন না। এর অনেক কারণের একটি ছিলো তাঁর আর্থিক অবস্থা। তোমার দাদা খুব সৎ সরকারী অফিসার ছিলেন। নিজের ছেলেদের মানুষ করতে কখনোই অন্যায় উপায়ে পয়সা উপার্জন করেন নাই, সরকারী ক্ষমতাও ব্যবহার করেন নাই। এই অবস্থায় তিনি কিভাবে ছেলেকে লক্ষ লক্ষ টাকা দিবেন! তাই, আমি আমার ছোট খালুকে বললাম যে - আমাদের মিরপুরে যে জমি আছে, সেই জমিতে যখন একটি এপার্টমেন্ট হবে, তখন তা থেকে আমার নামে যেটা হবে সেটা তাঁকে দিয়ে দিবো। এর বদলে, তিনি আমাকে টাকা দিতে রাজি হলেন। আমি এরফলে বিদেশে মাস্টার্স করতে যেতে পারলাম। এটা ছিলো আমার অনেক সিদ্ধান্তের মাঝে এক সাহসী সিদ্ধান্ত!
আমি বিদেশে থাকাকালীন সব সময়ে মাথা উঁচু করে থেকেছি
আমি যত দিন বিদেশে ছিলাম, তত দিন মনে রেখেছি যে, আমি বাংলাদেশের এক সন্তান। কখনোই নিজ দেশের সম্মানকে খাটো করে দেখি নাই। এমন কাজ করি নাই যাতে দেশের অসম্মান হয়। এক পর্যায়ে, মাস্টার্স শেষ করে আমাকে একটি বাঙ্গালী রেস্টুরেন্টে চাকরী করতে হয়। কিন্তু, তবু, কারো কাছে মাথা নত হয়ে হাত পাতি নাই, কিংবা অসাধু উপায় অবলম্বন করি নাই।
আমি বিদেশে অসাধু উপায়ে থেকে যেতে পারতাম
আমার সাথের অনেকে অসাধু উপায়ে বিদেশে থেকে গিয়েছিলো। অনেকে দেশের মান-সম্মান ডূবিয়ে এসাইলাম নিয়েছিলো। আমি তাদের মতো হই নাই। জানতাম, দেশে এসে খুব কষ্ট করতে হবে, তবু, ফিরে এসেছি নিজ দেশে।
দেশে ফিরে ১ বছর বেকার ছিলাম
দেশে ফিরে কয়েক জায়গায় ইন্টার্ভিউ দিলাম। সবাই জিজ্ঞাসা করে - 'দেশে ফিরে এলেন কেন?' 'কোন কিছু কি করেছিলেন ঐ দেশে?' 'আপনার কোন উচ্চাশা নাই কেন?' এরকম প্রশ্নের জবাবে কি বলতে হয় আমার জানা ছিলো না। সত্য কথাটা ইন্টার্ভিউয়াররা গ্রহণ করেন নাই। তবু, হাল ছাড়ি নাই। শেষ পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের একটি রিসার্চ প্রজেক্টে কাজ পেলাম। আমার রিসার্চের কাজ খুব একটা জানা ছিলো না। কিন্তু, প্রজেক্টের ন্যাশনাল কনসাল্টেন্ট আমাকে খুব পছন্দ করলেন। ফলে, চাকরী নিয়ে নিলাম।
ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের জব যেভাবে ছাড়লাম
জবটা শর্ট টার্ম ছিলো। রিসার্চের জব তেমন একটা বুঝতে পারছিলাম না। শুধু বেতনের আশায় কাজটা করে যাওয়াটা ভালো বলে মনে হলো না। তাই, ছেড়ে দিলাম। এর এক মাসের মাথায় গোল্ডেন হারভেস্টের সাপ্লাই চেইন ডিপার্টমেন্টে চাকরীর ডাক এলো।
অসাধু ম্যানেজারের অধীনে কাজ না করে জব ছাড়লাম
গোল্ডেন হারভেস্টের আমাদের ডিপার্টমেন্টের হ্যাড যিনি ছিলেন, তিনি সাপ্লাইয়ারদের সময় মতো পে করতেন না। যেখানে ২ সপ্তাহের মধ্যে পে করার কথা, সেখানে ৪ মাসও লাগতো। ভালো ভালো সাপ্লাইয়াররা কোম্পানী থেকে চলে যেতে লাগলো। ম্যানেজার নিজের দোষ আমাদের মতো মিড লেভেলের কর্মকর্তার উপর চাপিয়ে দিতেন। এভাবে আর কত দিন চালানো যায়। চাকরী ছেড়ে দিয়ে নিজে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
টানা ৩ বছর ব্যবসায় কোন লাভ ছিলো না
২০১৭ -২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা ৩ বছর আমার ব্যবসায় কোন লাভ ছিলো না। এই সময়ে আমাকে খুব কষ্ট করতে হয়। এই অবস্থায় আমি তোমার মা-কে বিয়ে করি।
বিয়ে করাটা ছিলো অনেক সাহসী একটি সিদ্ধান্ত
টাকাপয়সা রোজগার নেই, এর মাঝে বিয়ে! আমার ছোট ভাইয়েরা ইতিমধ্যে বিয়ে করে ফেলেছে। তুমি জানো, তোমার চাচারা কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা ডাক্তার। তাঁরা এবং এবং তোমার দাদু এমন জোর করলেন যে, আমি বিয়েতে রাজী হলাম। এই প্রথম আমি বিয়ের জন্যে ধার-কর্জ করলাম।
২০২০ সালে এসে ব্যবসায় প্রথম মুনাফা আসা শুরু
বিয়ের তখন ১ বছর। একদিন আমি ব্রিটেনে ২০১৪ সালে যে মিডিয়া কোম্পানিতে চাকরী করতাম, সেই কোম্পানীর বাংলাদেশী চীফ টেকনোলজি অফিসার আমাকে ফোন করে একটা ব্যবসার প্রস্তাব করলেন। তাঁরা আমাদের দেশ থেকে সফটওয়্যার বানাতে চান। আই,টি, লাইনের প্রায় কিছুই বুঝতাম না। তবু রাজি হয়ে গেলাম। ব্যস, এরপর থেকে আমাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় নাই। আজ, আমার ফার্মের সর্বোচ্চ বেতনভোগী ইঞ্জিনিয়ারের বেতন ৩ লক্ষ টাকার অধিক, আর সর্বনিম্নে বেতন ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকারও বেশি!
এভাবেই চলছে। আশা করি, তুমি এ থেকে নিজে শিক্ষা নিবে, তোমার আশেপাশের বাকি সবাইকেও শিক্ষা দিবে।
ভালো থেকো নিরন্তর।
০৬ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩২
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
সবারই কিছু না কিছু গল্প থাকে।
আমি আমার জীবনের গল্প শেয়ার করলাম।
ধন্যবাদ নিরন্তর।
২| ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১১
সোনাগাজী বলেছেন:
ছবির মেয়েটা আপনার? দেখতে বাজিবের মেয়ের মতো।
০৬ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৩
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
জী, সোহানা আমাদের মেয়ে।
ধন্যবাদ নিরন্তর।
৩| ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১
কামাল১৮ বলেছেন: বিদেশে কি বাংলাদেশের খুব একটা মান সম্মান আছে?সৌদিরা আমাদের মিসকিন বলে।ইংরেজরা কি বলে?
০৬ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৩
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
ইংরেজরা আমাদের দেশের অনেক অবহেলিত মানুষকে তাঁদের দেশে জায়গা দিয়েছে।
ধন্যবাদ।
৪| ০৭ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর করে লিখেছেন।
লেখায় কোনো অহংকার প্রকাশ পায় নাই। বরং আপনার মানবতা ফুটে উঠেছে।
বড় হয়ে আপনার মেয়ে এই লেখা পড়লে, সে তার বাবাকে নিয়ে গর্ববোধ করবে। মেয়ের জন্য এরকম বেশ কিছু লেখা লিখে রালখবেন। এইসব লেখা থেকে আপনার কন্যা সাহস পাবে, ভরসা পাবে, শক্তি পাবে।
সোহানা ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক। আনন্দ নিয়ে বড় হোক।
০৭ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫২
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
একটু অহংকার প্রকাশগ পেয়েছে।
ধন্যবাদ নিরন্তর।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১০
সোনাগাজী বলেছেন:
১৯ কোটী লোকের মাঝে ১৪ কোটী গ্রামে থাকে, ৮/৯ কোটীর তেমন যায়গা জমি নেই; মিরপুর, বনানী, আগ্রাবাদে এদের জমি নেই; কিন্তু এদের ছেলেমেয়ে আছে, এদের সমস্যা হলো, এদের কোথয়াও কিছু নেই।