নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

সত্যপথিক শাইয়্যান

আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে

সত্যপথিক শাইয়্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শৈশবের স্মৃতিঃ আমার আব্বার ছেঁড়া স্যান্ডেল

০৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ১২:৪৮

আমি ছোটবেলা থেকেই খুব পাঁজি ছিলাম। যাকে বলে একদম পাঁজির পাঝাড়া! প্রত্যেক ঈদের সময়ে আমার বাঁদরামো সীমা ছাড়িয়ে যেতো। বিশেষ করে ইদের নতুন পোশাক কেনার সময় আমার গোয়ার্তুমি ছিলো দেখার মতো। এমন কোন ঈদ ছিলো না যখন আব্বার সাথে ইদের কাপড় কিনতে গিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি করে কাঁদিনি! কিন্তু, ক্লাস সেভেনে উঠার পরে এক ঈদে এমন এক ঘটনা ঘটেছিলো, যার পর থেকে আমি আর কখনোই নতুন কাপড় কেনার জন্যে ঝামেলা পাকাইনি।

আমার আব্বা ছিলেন একজন সরকারী কর্মকর্তা। সততার জন্যে তাঁর খুব নামডাক ছিলো। তাঁর শেষ চাকুরী জীবনে তাঁকে নিশান পেট্রোল জীপ দেওয়া হয়েছিলো। আমার যত দূর মন পড়ে, তিনি খুব কমই সেই গাড়িটি পরিবারের জন্যে ব্যবহার করেছেন। এমনকি অফিস থেকে দেওয়া পেন্সিল বা কলমও তিনি আমাদেরকে ব্যবহার করতে দিতেন না। এমনই ছিলো তাঁর সততা।

যাহোক, আমি তখন ক্লাস সেভেনে ধানমণ্ডি বয়েজ হাই স্কুলে পড়ি। চাঁদ রাতে ইদের কাপড় কিনতে আমি ও আমার ছোট ভাই আব্বুর সাথে বেড়িয়েছি। আমার ছোট ভাই বরাবরের মতোই পিতার অনুগত বাধ্য ছেলে। সেই রাতে আমিই সবার আগে ইদের কাপড় কিনলাম। আমি যেটা পছন্দ করলাম আব্বু সেটাই কিনে দিলেন। আমি বেশ খোশ মেজাজে আছি। কিন্তু, বিপত্তি ঘটলো জুতা কিনতে গিয়ে। এলিফেন্ট রোডের একটি 'একদর' সাইনবোর্ড ঝুলানো দোকানে আমার একটি জুতা খুব পছন্দ হলো। কিন্তু, কি কারণে যেন আব্বা আমাকে সেটা কিনে দিলেন না। এরপরে সারা এলিফ্যান্ট রোড ঘুরেও আমার আর জুতা পছন্দ হয় না। শেষতক আব্বু সেই দোকানে ফিরে এসে আমাকে আমার পছন্দের জুতাটি কিনে দিলেন। আমি মহা খুশি মনে বাসায় ফিরে এলাম।

পরের দিন ইদের জামাতে যাওয়ার জন্যে আব্বুর সাথে নতুন কাপড় পড়ে রওনা হলাম। মসজিদের কাছে আসতেই দেখি আব্বার হাঁটার গতি স্লথ হয়ে এলো। আমি একটু বিরক্ত হয়ে পিছন তাকিয়ে দেখি - আব্বু উবু হয়ে বা পায়ের স্যান্ডেল খুলে হাতে নিয়ে আমাদের সাথে সাথে আসছেন। মসজিদের কাছে এসে আমাদেরকে একটু দাঁড়াতে বললেন। আমাদের আসাদগেট নিউ কলোনির মসজিদের উলাটা পাশে একজন হিন্দু মুচি বসতেন। আব্বু তাঁর কাছে নিজের পুরনো স্যান্ডেল জোড়া দিয়ে আমাদেরকে বললেন- চল, সে ঠিক করুক। আমরা নামাজের পরে স্যান্ডেল নিয়ে নিবো।

আমি মুচির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আব্বুর কথা আমার কানে যাচ্ছে না। মুচি আংকেল ততক্ষণে ছেঁড়া স্যান্ডেল জোড়া লাগাতে লেগে গিয়েছেন। আব্বু আবারো ডাকলেন। আব্বুর ডাক আবারো আমার কানে গেলো না। চোখ ছলছল করে একবারে আমার পড়া দামী নতুন জুতার দিকে তাকাচ্ছি, আর একবার মুচির হাতে ধরা আব্বুর স্যান্ডেলের দিকে।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ১২:৫৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: মর্মস্পর্শী কাহিনী। :)

০৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ১:০৭

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:


জী, আমার জন্যে।

ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার বাবার যে কাহিনী সেটা শত শত বাবার কাহিনী। বাবারা এরকমই হয়।
একদিন রাতে আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। ফ্রিজে দেখি দুটা আপেল আছে। ভাবলাম একটা খেয়ে নিই। আপেলটা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলাম। তারপর ফ্রিজে রেখে দলাম। খাইনি। কারন আমার কন্যা আপেল অনেক পছন্দ করে।

০৬ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৫

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:


সব বাবাই এক্সেপশোনাল।

বাবার জাতিটা এক হলেও, প্রত্যেকের বাবা প্রত্যেকের কাছে এক্সেপশোনাল, অন্যদের সাথে মিল খায় না।

আমার বাবা আমার কাছে তা-ই!

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৩| ০৬ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:৩২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
বাবারা সবসময় ত্যাগী হয়। আপনার বাবার জন্য শুভকামনা।

০৬ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৬

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:


ধন্যবাদ নিরন্তর।

৪| ০৭ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১০:৩৬

শেরজা তপন বলেছেন: বড্ড আবেগী কাহিনী।
আপনার আব্বা বড় ভাল মানুষ ছিলেন। এমন মানুষ সমাজে বিরল তবে এমন বাবা সমাজে বিরল নন।
তিনি কি বেঁচে আছেন?

০৭ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১০:৫৩

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:


জী না। উনি বেঁচে নেই।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৫| ০৭ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: সব বাবাই এক্সেপশোনাল।
বাবার জাতিটা এক হলেও, প্রত্যেকের বাবা প্রত্যেকের কাছে এক্সেপশোনাল, অন্যদের সাথে মিল খায় না। আমার বাবা আমার কাছে তা-ই! শুভেচ্ছা নিরন্তর।

মাঝে মাঝে যখন মনে পড়ে আমার বাবা বেঁচে নেই। বুকের ভেতর টা মোচর দিয়ে ওঠে।

০৯ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:১৪

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



সময়ের আবহে সব ঠিক হয়ে যাবে, রাজীব ভাই।

শুভেচ্ছা নিরন্তর

৬| ০৯ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৬

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা
আপনার আব্বার জন্য দোয়া করছি, আল্লাহ পাক যেনো আপনার আব্বাকে বেহেস্ত নসীব দান করেন। আমীন।

০৯ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩২

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:


ঠাকুরমাহমুদ ভাই, দোয়া করার জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.