নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
বড় বোন হঠাৎ ফোন দিয়ে বলল, এলাকার এক লোক অ্যাকসিডেন্ট করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে। আমি যেন সময় করে একবার দেখে আসি।
ব্যস্ততা ছিল আমার। নতুন চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তাও রয়েছে অনেক। তাই রুমমেটকে বললাম, সে যেন যায়। এর আগে, বড় বোনের কাছ থেকে যোগাযোগের নম্বর নিয়ে ফোন দিলাম। ধরলেন এক স্ত্রীলোক। বোন জানিয়েছিল, রোগীর ছেলের বউ সাথে আছে।
যাহোক, জিজ্ঞেস করলাম, আপনার সাথে কে কে আছে?
উনি বললেন, আমার বাপ-ভাই।
তাহলে তো আজকে আর কেউ না এলেও চলে। কাল আমার রুমমেট আসবে।
পরদিন রুমমেট ঢাকা মেডিকেলে গেল। টিউশনি শেষ করে আমি অফিসের উদ্দেশে রওনা দিলাম। এর আগে, খোঁজ নিলাম রুমমেট ঠিকমতো গেল কি না।
সে জানাল, ঠিকমতো পৌঁছেছে। রোগীর সাথেই রয়েছে।
পরবর্তী অবস্থা জানতে চাইলে সে বলল, আইসিইউতে নেওয়া দরকার। কিন্তু সিট ফাঁকা নেই। ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে না। ডাক্তার-নার্স তেমন পাত্তা দিচ্ছে না।
আমার বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা বেজে গেল। দেখি রুমমেট বসে আছে। হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে তার টিউশনি ছিল। খুব ক্লান্ত লাগছে তাকে।
কথা প্রসঙ্গে সে বলল, রোগীর ছেলের বউ এখানে ১৫ দিন ধরে আছে। নাওয়া-খাওয়ার ঠিক নেই।
আমি বললাম, বাসায় নিয়ে আসতে।
সে বলল, এতদূর যাওয়া-আসা। তাছাড়া কখন কী হয়ে যায় কে জানে।
আমি বললাম, কাল খাবার নিয়ে যেও।
পরদিন টিউশনি থেকে বের হতেই রুমমেটের ফোন। বলল, কোথায় আছেন?
আমি বললাম, তিতুমীর কলেজের কাছেই।
ওখানেই থাকুন। ওই রোগী মারা গেছে। ঢাকা মেডিকেলে যেতে হবে।
হাতে টাকা নেই। রুমমেট আসতে আসতে নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু টাকা উঠালাম। ভাবতে লাগলাম, হুট করে লোকটা মরে গেল? রুমমেট বলেছিল, ঢাকায় আসার পর রোগীর নাকি জ্ঞান ছিল! অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হওয়ার পর পাঁচদিন ধরে জ্ঞান নেই। ডাক্তারের অবহেলা নেই তো?
আইন পদক্ষেপ নেওয়ার মতো কেউ নেই। কী আর করা যাবে?
১৫ মিনিটের মধ্যে রুমমেট চলে এলো। দেওয়ান বাসে উঠে শাহবাগের উদ্দেশে রওনা দিলাম দু’জন। পথে প্রচণ্ড যানজট। পৌঁছতে কতক্ষণ লাগে কে জানে। লাশ নিয়ে রওনা দিয়ে দিল কি না ভাবছিলাম।
রুমমেটকে বললাম, রোগীর ছেলের বউকে ফোন দেওয়া দরকার।
সে বলল, এখন কীভাবে কথা বলব?
সে আমাকে বলল, আপাকে যেন ফোন দেই।
আমি বললাম, শাহবাগ নেমে ফোন দেব।
শাহবাগ থেকে রিকশা নিলাম। শহিদ মিনারের পাশে ইমারজেন্সি গেটের সামনে গিয়ে থামল রিকশা। আইসোলেশন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখি রোগীর লাশ বা স্বজন কেউ নেই। কোথায় গেছে জিজ্ঞেস করতেই একজন বলল, লাশ মর্গে। আর মহিলা শাহবাগ থানায়।
রোগীর মেয়ের জামাইয়ের সাথে দেখা। আমরা তিনজন রিকশায় করে চললাম রমনা থানায়। গিয়ে দেখি মহিলাটা সেখানে নেই। ফোন দেওয়া হলো। সে বলতে পারছে না কোথায় আছে। বড় বিপদে পড়া গেল। শেষে জানা গেল মেডিকেল মর্গে আছে তারা।
মেয়ের জামাইকে এখানে রেখে আমরা দু’জন মেডিকেল মর্গে এলাম। এর পাশেই একটা ছাউনিতে দেখি রোগীর ছেলের বউ আর তার ভাই বসে আছে। এক লোক কাগজপত্রে কিছু লিখছে। আমরা যাওয়ার পর আমাদের স্বাক্ষর নিল। মূলত তিনজনের স্বাক্ষরের অভাবে দেরি হচ্ছে।
হঠাৎ দেখি এক ত্রিশোর্ধ্ব নারী এসে উচ্চস্বরে কান্না করছে। তার কান্নায় আকাশ বাতাস কেঁপে উঠেছে। জানলাম, তুচ্ছ এক ঘটনায় তার স্বামী খুন হয়েছেন। তার কাছে খুনের তথ্য গোপন করা হয়েছে। কিন্তু সে বোধহয় ঠাহর করতে পারছে ভয়ঙ্কর কিছু একটা হয়েছে।
আমার মনটা অনেক খারাপ হলো। চেয়ে দেখি রুমমেট ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
এদিকে, আমার অফিসের সময় কাছাচ্ছে। রুমমেটেকে বললাম, সে যেন এখানেই থাকে। কিছু নাস্তা এনে দিলাম। সবাই রাত থেকে না খাওয়া।
রিকশা নিয়ে শাহবাগ। এরপর বাসে করে সৈনিক ক্লাব। আসতে আসতে ভাবছি, লোকটাকে দেখার বা নেওয়ার জন্য রক্তের একটা লোকও এলো না। আহারে কী জীবন!
কাজের চাপ। এরমধ্যে রুমমেটকে ফোন দিলাম, সব ঠিকঠাক চলছে কি না। সে বলল, ভালুকা থেকে ক্লিয়ারেন্স আসছে না। বাড়ি থেকে কেউ ভালুকা থানায় যায়নি। মেয়ের জামাই ঘুস দিয়ে সব ঠিক করার চেষ্টা করছে।
বিকেলের দিকে ফোন দিলাম আবার। কোথায় আছে জানতে চাইলে বলল, মহাখালীর কাছাকাছি।
রাতে বাসায় আসার পর রুমমেটের সাথে কথা হলো বিস্তারিত। সে বলল, লাশ দাফন নিয়েও সমস্যা। দাফন করার জায়গা নেই।
লোকের সংসারে লোক কয়জন?
রুমমেট জানাল, লোকের বউ আর একটা কিশোরী মেয়ে আছে। একটা ছেলে আছে। সে বিদেশে থাকে।
খরচাপাতি কেমন গেল চিকিৎসায়?
পাঁচদিনেই আশি হাজার গেল।
কেমনে কী?
ওয়ার্ড বয়, ওয়ার্ডের খালা, ট্রলি বয়, পুলিশ সবাইকে টাকা দিতে হলো। এসবের বাইরে আরও খরচ তো আছেই।
সরকারি হাসপাতালেই এত খরচ। বেসরকারি হলে তো খবর ছিল। মানুষ ব্যবসা করে লাশ নিয়েও। বিবেক কোন জায়গায় পৌঁছেছে। আমি ভাবি, কীসের জন্য এ জগৎ-সংসার? একজন লোক মারা গেল। তাকে নিতে রক্তের কেউ এলো না। আবার এই থেকেও টাকা উপার্জন করছে কেউ কেউ। মনে প্রশ্ন এলো, সেই টাকা যারা ভোগ করবে, তারা কি নিদানকালে উপার্জনকারীর পাশে থাকবে?
ছবি: সংগৃহীত
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গরিবের জন্য আরও কঠিন।
২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৭
শায়মা বলেছেন: ভয়ংকর কষ্টের !!!
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৫২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গা সওয়া হয়ে গেছে।
৩| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:০৬
নীল আকাশ বলেছেন: শেষের লাইনটা নির্মম মানব জীবনের আসল কাহিনী।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৫৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মানুষ সময় মতো উপলব্ধি করতে পারে না।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: জীবন বড় কঠিন