নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে। সেই সময়ের ছাত্ররা ছিল পরিবর্তনের মশাল বাহক, যারা জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিল একটি নতুন ভোরের দিকে। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে সেই একই ছাত্র সমাজ, রাজনৈতিক দল এবং রাষ্ট্রযন্ত্র নিজেদের স্বার্থে টিকে থাকার জন্য যে রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তা আমাদেরকে অতীত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়েছে।
১৯৬৯ সালের ছাত্র আন্দোলন যেখানে জাতীয় চেতনার পুনরুত্থান ঘটিয়েছিল, আজকের ছাত্র সংগঠনগুলো অধিকাংশই রাজনৈতিক দলের পা-চাটা বাহিনী হয়ে গেছে। একসময় যেসব ছাত্ররা জাতির মুক্তির জন্য রাস্তায় নামত, আজ তারা দলীয় স্বার্থে অস্ত্রধারণ করছে, চাঁদাবাজি করছে। তাদের টিকে থাকার অস্ত্র এখন জ্ঞানের চেয়ে সহিংসতা, ক্ষমতার সান্নিধ্য। এভাবেই ছাত্র রাজনীতি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আর তারা রূপান্তরিত হয়েছে ক্ষমতার লোভী বাহিনীতে।
১৯৭১ সালের পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল দেশকে গড়ে তোলা, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও বদলে গেছে। তারা আজ নিজেদের স্বার্থে একাধিক রঙ বদলে টিকে আছে। দেশের ভবিষ্যতের চেয়ে তাদের কাছে নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখাটাই মুখ্য। এরা একসময়ের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলগুলো হলেও, আজ তাদের মধ্যে আর কোনো আদর্শের ছোঁয়া নেই। এখন ক্ষমতার পালাবদল মানে শুধুই নতুন রঙে পুরনো দুর্নীতি, প্রতিশ্রুতির বদলে প্রতারণা।
আমলাতন্ত্রের ক্ষেত্রেও আমরা একই ধরনের রূপান্তর দেখছি। একসময় যে আমলারা দেশকে সুশাসনের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করত, আজ তারা নিজেরাই দুর্নীতির চক্রে জড়িয়ে পড়েছে। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে তারা আজ নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে ক্ষমতা ও অর্থের জন্য। ঘুষ আর অসৎপন্থা এখন তাদের টিকে থাকার নতুন কৌশল। আমলা থেকে শুরু করে পুরো প্রশাসনিক কাঠামো আজ এক নতুন রূপে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের টিকে থাকার উপায় হলো—প্রতিবেশী, জনসাধারণ, এমনকি সরকারেরও শোষণ।
বিগত দশকগুলোতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজ একাধিকবার বদলেছে। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জায়গায় আজ আমরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার এক নিরন্তর প্রতিযোগিতার মধ্যে আছি। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনগুলো, বিশেষ করে কোটা সংস্কার আন্দোলন বা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আমাদের দেখিয়েছে যে, একটি প্রজন্ম তাদের অধিকারের জন্য জেগে উঠলেও, রাষ্ট্রযন্ত্র সেই আন্দোলনগুলোকে দমন করতে বা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে সক্ষম। এই দমন-পীড়নের মধ্যেও ছাত্র আন্দোলনগুলো টিকে থাকছে, কিন্তু সেই টিকে থাকার পথে তাদের আদর্শ হারিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো, যারা একসময় জনগণের পাশে দাঁড়াত, আজ তারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে এমনভাবে নিজেদের রূপান্তর করেছে যে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং দলীয় স্বার্থপরতার মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটি বিশাল অংশ জাতীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এই টিকে থাকার সংগ্রামে আমরা জাতি হিসেবে এমন এক রূপান্তরিত সমাজে বাস করছি, যেখানে সবাই নিজেদের স্বার্থে, ক্ষমতা ও অবস্থান রক্ষায় ব্যস্ত। একসময়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত জাতি আজ নৈতিকতাহীন রাজনীতি, দুর্নীতিপ্রবণ প্রশাসন এবং সহিংস ছাত্র রাজনীতির কবলে। টিকে থাকার লড়াই আজ আর নৈতিকতার ভিত্তিতে নয়, বরং ক্ষমতার খেলা এবং রূপান্তরের মধ্য দিয়ে।
আজকের বাংলাদেশে, আমরা একটি জাতি হিসেবে টিকে আছি ঠিকই, কিন্তু সেই টিকে থাকা মানে নিজেদের পুরনো চেতনা বিসর্জন দিয়ে, নতুন নতুন রঙে রূপান্তরিত হয়ে বেঁচে থাকা। আমরা যেকোনো পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারছি, কিন্তু এতে আমাদের আদর্শ, মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৫০
raselabe বলেছেন: সহমত,,,,সবাই আজকে ক্ষমতার কেন্দ্রে ধাবিত হতে চায়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫৬
ছোট কাগজ কথিকা বলেছেন: অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। ১৯৬৯ সালের ছাত্র আন্দোলনের আদর্শিক শক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে রেখে আজকের সমাজের রাজনৈতিক, ছাত্র, এবং প্রশাসনিক পরিপ্রেক্ষিতের অবক্ষয় খুবই দুঃখজনক। ক্ষমতার লোভ এবং ব্যক্তিস্বার্থের রূপান্তরে আমাদের মূল্যবোধ, নৈতিকতা, ও আদর্শ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।