নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাফল্য—এ যেন এক জটিল শব্দ, যার ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে প্রতিটি মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ছবি আঁকে। প্রশ্নটি খুব সাধারণ মনে হলেও এর উত্তর কখনো সরল হয় না। কেউ অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্যে সাফল্যের মাপকাঠি খুঁজে পান, কেউবা খ্যাতির মোহে নিজেকে সফল বলে ভাবেন। তবে বাস্তবতা বলছে, সাফল্য তার রূপ পাল্টায় জীবনের প্রতি মুহূর্তে, বয়সের প্রতিটি ধাপে।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সাফল্যের সংজ্ঞা পরিবর্তিত হয়। তরুণ বয়সে আমাদের চোখে সাফল্য মানেই বড় স্বপ্নের ক্যানভাস। কিশোর বয়সের রঙিন চেতনায় সাফল্য মানে—উচ্চাকাঙ্ক্ষা, যশ, আর প্রতিযোগিতায় জয়ের আনন্দ বা প্রতিযোগিতার অনুপ্রেরণা। আমরা ভাবি, সমাজে নিজের জন্য একটি অনন্য উচ্চতর স্থায়ী স্থান করে নেওয়াই জীবনের শ্রেষ্ঠ সাফল্য। তাই দৌড় শুরু হয়, লক্ষ্য একের পর এক পাল্টে যায়। কেউ হয়তো স্বপ্ন দেখেন প্রকৌশলী হওয়ার, কেউ চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করার, আবার কেউবা বড় কোনো ব্যবসা গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষায় বিভোর থাকেন।
কিন্তু জীবনের বাস্তবতায়, অনেকে সেই স্বপ্নগুলোর সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হন। জীবনের অমোঘ বাস্তবতা সব সময় সহজ থাকে না। অনেকেই স্বপ্নগুলোর সঙ্গে আপস করে চলতে শিখেন। আর যারা সেই স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হন, তাদের মধ্যেও একসময় প্রশ্ন জাগে—এই প্রাপ্তির শেষ কোথায়?- হয়তো সেই চাওয়ার শেষে কিছুই নেই। এক সময় তারা অনুভব করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়ে, তখন উপলব্ধি হয় যে, প্রতিটি সাফল্যের পেছনে একটি সীমাবদ্ধতা থাকে। আজ যা সাফল্য মনে হয়, কাল তা অতীতের সাধারণ একটি ঘটনা মাত্র।
জীবন বোধের গভীরে প্রবেশ করতে পারলেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি, আসলে সাফল্য একটি বহুমাত্রিক বিষয়। আমাদের জীবনের সমস্ত স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কোনো এক শান্ত মুহূর্তে একটি গভীর অনুভূতি এসে মনে হয়, এই ব্যস্ততার মাঝে থেমে গিয়ে কিছু সহজ, নির্ভেজাল সুখ খুঁজে নেওয়া হয়তো সবচেয়ে বড় সাফল্য। প্রাপ্তির হিসাবটা যখন জীবনে ফিকে হয়ে আসতে শুরু করে, তখন হঠাৎ করেই যে অনুভব হয়, তা হলো, মা-বাবার মুখের হাসি, স্ত্রী-সন্তানের ভালোবাসা, আর নিজেকে তাদের মতো করে গড়ে তোলা—এটাই বড় সাফল্য।
জীবনের সাফল্য তখন আর ধন-সম্পদে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সেই সাফল্য নির্ধারিত হয়, যখন পরিবারের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে পারি, যখন মা-বাবার চোখে সন্তুষ্টির হাসি দেখতে পাই, যখন স্ত্রী-সন্তানের পাশে দাঁড়াতে পারি। বড় বড় স্বপ্ন না পাওয়ার বেদনা ভুলে আমরা তখন নতুন এক জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পথ চলতে থাকি। যে সাফল্যকে আমরা এতদিন বাহ্যিক অর্জনের মধ্যে খুঁজেছি, তা যেন একসময় ফিকে হয়ে যায়। মা-বাবার মুখে সন্তুষ্টির হাসি, প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য, আর জীবনের প্রতিদিনের ছোট ছোট প্রাপ্তিগুলো তখন গভীর মূল্যবোধের দিকে নিয়ে যায়। বাস্তবিক অর্থে, জীবনের প্রতিটি স্তরে, যেখানে নিজেকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাওয়া যায়, যেখানে আত্মার শান্তি পাওয়া যায়, সেই জায়গাটাই আসল সাফল্যের ঠিকানা মনে হয়।
তবে, সাফল্য কখনো ধরা দেয় না বাহ্যিক অর্জনের ভিত্তিতে। এটা পাওয়া যায় জীবনের প্রতিটি স্তরে, যখন আমরা নিজেকে আত্মিক পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে পারি। জীবনের প্রকৃত সফলতা সেই মুহূর্তে খুঁজে পাওয়া যায়, যখন আমরা থেমে যাই, চারপাশে তাকিয়ে দেখি, এবং উপলব্ধি করি যে আসলে আমাদের জীবনটি কতখানি অর্থবহ। সেই মুহূর্তগুলো, যা হয়তো একসময় অতি সাধারণ মনে হয়েছে, এখন সবচেয়ে মূল্যবান হয়ে ওঠে।
এই ছোট ছোট অনুভূতির সমষ্টি একদিন আমাদের সামনে তুলে ধরে জীবনের প্রকৃত সাফল্যের পথ। সাফল্যের মাপকাঠি তাই শুধু উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়, নয় কোনো বাহ্যিক পরিমাপ। এটি সেই জায়গা, যেখানে আত্মার শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে নিজেকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। জীবন তার গভীরতায় প্রবেশ করলে, তখনই আমরা বুঝতে পারি—সাফল্য আসলে বহুমাত্রিক, প্রতিটি মুহূর্তের নিজস্ব বোধ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:২৩
সোনাগাজী বলেছেন:
আপনার বয়স কত? ১০ বছর আগের থেকে এখন বেশী সফল?