নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেম নাকি অনেক সস্তা হয়ে গেছে।
এটা আমার নিজস্ব মতামত নয়, আমার এক
প্রেমিক বন্ধুর মতামত।
আমি যখন প্রেম করার চিন্তা করলাম
তখন বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রেম
বিষয়ক উপদেশ পেতে লাগলাম। এক এক
যেন প্রেম বিষয়ক জীবন্ত
এনসাইক্লোপিডিয়া । প্রেমের
ব্যাপারে আমার নিজের জ্ঞানের
ক্ষুদ্রতা দেখে আমি ক্ষুদ্র হয়ে গেলাম।
মনের মধ্যে প্রেমের আবহ তৈরি করার
জন্য, সারাদিন জীবনানন্দের প্রেমের
কবিতাগুচ্ছ পড়ছি। মনে হচ্ছে কিছু
পরিবর্তন আসছে।
জীবনানন্দকে মনে মনে ধন্যবাদ
জানালাম।
রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল।
পানি খাওয়ার জন্য গ্লাসের
দিকে হাত বাড়ালাম। দেখি আমার
চেয়ারে বসে কে যেন পা দুলাচ্ছে।
আমি ঘুম থেকে উঠেছি এতা বোধহয়
লোকটি বুঝতে পারলেন।
লোকটি ছোট্ট করে কাশি দিল।
আমি এই দিকে ভয়ে অস্থির।
আমি আস্থে করে লাইট জ্বালালাম।
আমি চেয়ারে বসা লোকটাকে দেখে হতবাক
হয়ে গেলাম । স্বয়ং জীবনানন্দ দাশ
আমার চেয়ারে বসে আছেন। আমি এক
লাফে উঠে পরলাম।
'ঘুম ভেঙ্গেছে তাহলে।
আমি তো ভাবলাম সকাল পর্যন্ত
বসে থাকতে হবে।"
আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছিনা, একটু
লজ্জাও লাগছে এতো বড় একজন কবির
সামনে বসে আছি।
"আপনি আমার এখানে আসবেন
আমি চিন্তাও করিনি"
"তুমি প্রেম করতে চাচ্ছ, তাই ভাবলাম
তোমাকে প্রেমের ব্যাপারে কিছু
উপদেশ দিয়ে যাই।"
আমি মনে মনে খুশিই হলাম,এত বড় একজন
কবির উপদেশ, ভাবাই যায়না।
"শোন প্রেম
করতে হলে তোমাকে প্রথমেই
একটি মেয়েকে পছন্দ করতে হবে।"
"জি স্যার, তাতো অবশ্যই ,
মেয়ে ছাড়া তো আর প্রেম হবেনা।"
"আমার কথা শেষ হয়নি ছেলে। আর
তুমি আমাকে স্যার বলছ কেন?
আমাকে কবি বলবে।"
"জী কবি"
"শোন প্রথমেই তুমি মেয়েটার
ভালো কয়েকটা গুণ খেয়াল করবে,
তারপর তার
গুণাবলী গুলো নিয়ে একটি সুন্দর
প্রেমের কবিতা লিখবে।
কবিতাটা মেয়েটার হাতে দিবে,
দেখবে প্রেম হয়ে গেছে।"
"কবি,এটা তো পুরাতন আইডিয়া,
এটাতে কি কাজ হবে?"
"তুমি এটা প্রয়োগ করে দেখ,তাহলেই
বুঝতে পারবে। আচ্ছা অনেক
কথা বললাম,এবার আমি বিদায়
নিচ্ছি।"
ঘুম থেকে উঠার পর আমার গত রাতের
কথা মনে পড়লো। আমি ফ্রেশ হয়েই
ছুটলাম আমি যে মেয়েটির
সাথে প্রেম করব তার বাসার দিকে।
আমি তার কলেজ যাওয়ার পথে তার
দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম।
আমি ওর দিকে থাকিয়ে আছি, এইসময়
আমার পিঠে কে যেন হাত রাখল।
পেছনে থাকিয়ে দেখি পাড়ার
বড়ভাই।
"কি ব্যাপার বাবু, কেমন আছো? শুনো ঐ
যে মেয়েটাকে দেখছ, তার
ব্যাপারে একটু খোঁজ
নিয়ে আমাকে জানিও তো।"
আমি জানাব
বলে কোনভাবে ছাড়া পেলাম।
প্রায় পাঁচদিন যাবত আমার
নাওয়া খাওয়া বন্ধ। কিছুতেই
কবিতা লিখতে পারছিনা।
কবিতা লেখা যে এত কঠিন
তা আগে কোনদিনই মাথায় আসেনি।
কবিতাটা মাথায়
আসলো টয়লেটে গিয়ে। যাই হোক
আমি আর্কিমিডিস এর মত দিগম্বর
হয়ে দৌড় না দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায়
বের হলাম।
বিকেল বেলা অনেক সেজেগুজে,
কবিতা নিয়ে আমি তার
বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম।
আমি তার হাতে কবিতা দিয়ে শক্ত
হয়ে দাড়িয়ে আছি। এই
পরিস্থিতিতেই হয়ত লোকজন
ধরণীকে দ্বিখণ্ডিত হতে বলে।
উচ্চহাসির শব্দে আমার ঘোর ভাঙল।
আমি শুনতে পেলাম সে তার বড়
বোনকে ডাকছে।
আমি এক দৌড়ে রাস্তায় চলে আসলাম।
আমি হাঁটছি, মনের মধ্যে প্রবল
লজ্জাবোধ। না জীবনানন্দের
কথা শুনা হয়নি উচিত হয়নি।
মাথা ভনভন করে ঘুরছে। সবকিছু কেমন
যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
কখন যে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার
মাঝে চলে এসেছি খেয়াল নেই।
পেছন
থেকে একটা গাড়ি এসে জোরে ধাক্কা মারল।
আমি ছিটকে গিয়ে দূরে পরলাম।
তারপর আর কিছু খেয়াল নেই।
চারদিকের পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ
হয়ে গেলাম। স্বর্গ যে এত সুন্দর
হতে পারে,
বেঁচে থাকতে তা কল্পনাও করিনি।
আমি একটা গাছের ছায়ায় বসলাম।
আমার প্রেমের করুন পরিনতির
কথা চিন্তা করে আমার মন খারাপ
হয়ে গেল। আমি চোখ বন্ধ করে আমার
লেখা কবিতাটা আবৃত্তি করতে লাগলাম।
চোখ খোলে দেখি অসাধারণ
সুন্দরী একটি মেয়ে আমার
সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার
চোখগুলো যেন পাখির নীড়, চুল যেন
কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা।
সে তার পাখির নীড়ের মত চোখ
তুলে আমাকে জিজ্ঞেস করল,"এতদিন
কোথায় ছিলেন?"
আমার মন আনন্দে লাফাতে লাগলো।
আমি তাকে তার নাম জিজ্ঞেস
করলাম।
'বনলতা সেন"
আমার আর বনলতার মধ্যে কঠিন প্রেম
চলতে লাগলো।
জীবনানন্দ দাশ আমার
বিরুদ্ধে মামলা করলেন। কিন্তু
বনলতা আমার সাথে থাকবে এটা সাফ
সাফ জানিয়ে দেয়।
জীবনানন্দ দাশের জন্য
মিষ্টি নিয়ে আমি দেখা করতে গেলাম।
"কবি আসলেই আপনি বস।আপনার
বুদ্ধি দারুন কাজে লেগেছে।
আমার কবিতা শুনেই তো বনলতা আমার
প্রেমে পরে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে।"
জীবনানন্দ দাশ আমার দিকে কটমট
করে থাকালেন। হয়তো উনি এখন উনার
বুদ্ধি দানের জন্য আফসোস করছেন।
আমি কবিকে রেখে চলে আসলাম,
বনলতা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
©somewhere in net ltd.