নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা,অল্পবিদ্যা, কুশিক্ষা এবং ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দৃষ্টিকোণ না থাকলে প্রকৃত বাঙ্গালি হওয়া যায় না।
অবশেষে উত্তরের ভ্রমণ শেষ হলো। হাতের সাথে কবজির মিল নেই রঙের। যেখানে ঘড়ি ছিলো সেখানে আরো অমিল। যেহেতু কবজি পর্যন্ত ঢাকা যায়নি। ঠোট শুকিয়ে গেছে। ঠিক ফাটেনি কিন্তু এখনো ঠিক হয়নি। এটা ঠিক বোঝা গেলো না কেন হয়েছে। এখন তো শীতকাল না। মেরিল কিনে দেবার পরেও ঠিক হয়নি।
সর্বশেষে রাজশাহী। বরেন্দ্র জাদুঘর দেখে তো চোখ ছানাবড়া। এতো প্রাচীন মূর্তি আমি একসাথে কখনো দেখিনি। সবগুলো অনেককাল আগের। মুঘলদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র আছে। হাতে লেখা কোরান। সবচেয়ে ছোট কোরান। বিষ্ণু মূর্তি, বুদ্ধমূর্তি শিব মূর্তি, বিভিন্ন অবতারের মূর্তি। এর একেক টি এক হাজার কেজি পর্যন্ত। অনেকগুলো বাইরে পড়ে আছে। কিছু মুর্তিতে সিদুর-আবির ও লেগে আছে দেখতে পেলাম। আরো আছে মুঘলদের এবং অন্যান্যদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সহ অস্ত্র - সস্ত্র। আমরা কতটা সমৃদ্ধ ছিলাম ভাবতেই ভাল লাগছিলো। সবারই একবার অন্তত বরেন্দ্র জাদুঘরে যাওয়া উচিত। নিজেদের কে চিনতে দেয়া উচিত। এগুলো তৈরিতে যে মুন্সিয়ানা দেখানো হয়েছে তাতে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আছে বোঝা যায়। নিখুঁত এবং জীবন্ত মনে হলো। চোখ বড় বড় করে কেবল দেখেই গেলাম। ছবি তোলা নিষেধ। আর তাতে আপত্তিও ছিলো না। স্বার্থপরের মতো ভাবছিলাম সবাই নিজে এসে কেন দেখবে না। আমার বয়েই গেছে। গল্প করলে অতিরঞ্জিত ভাববে। অথচ কত কম বলা হবে বললে। প্রত্যেকটি জিনিসের একেকটি গল্প রয়েছে। । প্রত্যেক্টি মুর্তি পুজিত হতো। কোরানের প্রত্যেকটি পৃষ্ঠা পড়া হতো। কারা ছিলেন সে সব ব্যাক্তিরা হয়তো জানা যাবে না। হয়তো সকালে কোন পুরোহিত ব্রাম্মণ ভক্তি ভরে ফুল বেল পাতা দিতেন কোন এক মুর্তিতে। এর কোন এক বুদ্বমুর্তির স্থান হতো কোন রাজার ব্যাক্তিগত মন্দিরে। হাজার বছরের অতীতের সাক্ষ্য দিচ্ছে এসব রেলিকস। অনেকগুলোর ব্যাপারে প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে কিছুই জানাই যায়নি। পড়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। কিন্তু আমার চেয়ে শতগুন সময় অতিবাহিত করে। বাহিরের একটির ছবি তুলে ফেলেছি সাহস সঞ্চয় করে। আমার মতো প্যারানয়েড মানুষের জন্য অসামান্য কাজ। একটি বিকট শাহী থালা দেখে তার উপরের খাবারের প্রাচুর্য কল্পনা করছিলাম। আরো অনেক খোদাই করা পাথর, মাটির ব্যবহার্য জিনিস পত্র, পিতলের মুর্তি কতকিছুই এখন ভুলে গেছি আমার দূর্ভাগা স্মরণশক্তির প্রতারণায়।
সুন্দর একটি শহর। একজন রিক্সাওয়ালা লোকাল গাইডের মতো সব ঘুরিয়ে দেখালেন। এর জন্য অযাচিত ভাড়া নিয়েছেন বলে পরে ক্ষমা করে দিয়েছি। উনার একটা কথা খুব হাসি পেয়েছে," কথার মাঝে মাঝে একটু হু হা করবেন মামা। না হয় কথা বলতে ভাল লাগে না।" আমিতো সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে চুপ হয়ে আছি তখন। ভার্সিটির ভেতরটা দেখলাম। কি বিশাল জায়গা। বন্ধের দিন বিধায় আরো ভালো লেগেছে ঘুরতে। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো শিয়াল দেখতে পেয়েছি। নিজের ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অনুজ আমাকে দেখালো আমার কুকুর প্রীতি আছে জেনে। আমি বললাম, হামি দিচ্ছে দেখ । রিক্সাওয়ালা হাসতে হাসতে বললেন, ওটা কুকুর নয়। এখন পেছনে যাওয়া যাবে না জানতাম। জনহীন জায়গা বিধায় এসে পড়েছে সামনে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাগ্যবান মনে হলো। এ যেনো বিশাল এক স্বপ্নরাজ্য।
.
হোটেলে ফিরে রেস্ট নিয়ে পদ্মার পাড়ে রওনা হলাম। শুকিয়ে যাওয়ায় তেমন বিশেষ কিছুই মনে হয়নি সর্বনেশে পদ্মাকে। কিন্তু অবাক হওয়া বাকি ছিলো। একটু তাড়াতাড়ি যাওয়ায় বুঝে উঠতে পারিনি। বিকেল গড়াতে মুক্ত মঞ্চের দিকে হাটা ধরলাম। ওখানে না বসে প্রথমেই পদ্মার পাড়ে গেলাম। কি স্থির! জলে কোন আলোড়ন নেই। নৌকা গুলো মনে হলো আকাশে ভেসে আছে। ওপারে বালুময় চর। সব দেখা যাচ্ছে স্পস্ট। সুর্যটা লাল রঙ নিয়ে ডুবে যাওয়ার আগে আমাদের দেখার জন্য অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করে উপহার দিয়ে গেলো। একটা প্রশ্বাস বেরিয়ে গেলো ভেতর থেকে। ও বিকেল টা যারা দেখেনি তাদের জন্য কস্টই হচ্ছে। পদ্মার পাড়ের বিকেল এতো সুন্দর হতে পারে যারা দেখেনি তাদের প্রথমবার দেখলে বিশ্বাসই হতে চাইবে না। এই বিশাল নিপুণ সৃস্টির আর্টিস্টকে দেখার প্রবলতা টের পেলাম। পদ্মার পাড়েই গিয়েছি তিন বার। অনুজের খুব ছবি তোলার ঝোক ছিলো।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো। মুক্তমঞ্চে এই সময়টায় অনেক মানুষ হয়। এই শহরের সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক জায়গাটিতে মানুষের মিলনমেলায় মুখরিত হয়ে পড়ে। ওখানে বসে ভ্রমণের সামারি টানছিলাম মনে মনে। কিছু কিছু প্রাপ্তিতে মানুষ এমন শকড হয়ে বসে থাকে। দীর্ঘসময় কথা বেরুলো না। এর মধ্যে একটা পরিবার কে দেখলাম। খালামনি ছোট বাচ্চাটিকে খাইয়ে দিচ্ছে। ছোট্ট মেয়েটি মায়ের কপট রাগ উপেক্ষা করে খালামনির আদর নিয়েই যাচ্ছে। এই ব্যাপারটা দেখে আমার খুব সংসার করার লোভ হলো কিছু সময়ের জন্য। নিজেকে বড্ড একা মনে হলো। হুমায়ুন স্যার বলে গেছেন, প্রকৃতি মানুষের মনে বিষন্নতার চর জাগিয়ে তোলে। এটা প্রকৃতিরই একটা ইম্প্যাক্ট বুঝে গেলাম । পরক্ষণেই মনে হলো,,,
নাহ! তাহলে এসব করবে কে? পুরো ট্যুরে একটা আক্ষেপ রয়েই গেলো। পদ্মার পাড়ে রাতের দৃশ্য দেখতে আবার গিয়েছি। অবাধ্য চাঁদটা ওসময় না উঠে যখন ডিনার করে ফিরছিলাম তখন উঠেছিলো। চাঁদের আলোয় নদীর জল দেখা হলো না। ভেতরটা আবার ভিজে স্যাতস্যাতে হয়ে গেলো। মনে হলো আবার আসতেই হবে উত্তরে!।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৪৭
রাজীব নুর বলেছেন: আমি দক্ষিনে যাবো।