নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা,অল্পবিদ্যা, কুশিক্ষা এবং ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দৃষ্টিকোণ না থাকলে প্রকৃত বাঙ্গালি হওয়া যায় না।
২০১৬ সাল পর্যন্ত আমার মতো লক্ষ্যহীন মানুষের লক্ষ্য ছিলো শুধুই জীবন যাপন করা। তার জন্যে একটি সহজ চাকরি সাথে কিছুটা সম্মান হলে মন্দ হবেনা। এরপরেই আমার জীবনে ঘটে যায় একটি দুর্ঘটনা। আমার বন্ধুরাও আমাকে খুব বাস্তব চিন্তাধারার এক হার্টলেস মানুষ হিসেবেই জানতো। কিন্তু যেদিন মফিজ স্যার মারা গেলেন আমি নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। তখন আমার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। সামনে নোভেল পরীক্ষা। কিন্তু আমার সাথেই উপন্যাসের মতো ঘটনা ঘটে গেলো। আমি আমার জীবনে কোথাও কোন গ্রহনযোগ্যতা পাইনি। মনে হতো আমি যেন এক্সিস্টই করিনা। স্যার আমার খুব ভেতরে জায়গা নিয়ে নিয়েছিলেন। সময় করে খবর নিতেন আর বলতেন, You are not done yet Idiot. তুই অনেক ইনফ্লুয়েনশিয়াল। তোর আশেপাশের মানুষগুলো তোর কারনেই ভাল থাকবে।
আমি নিজেকে আয়নায় দেখে থমকে যাই। ভোরে স্যার কে ওরা নিয়ে যাচ্ছিলো। কফিনে সাদা কাপড়ে মোড়া । জানাজা হচ্ছিলো। আর আমি দূর থেকে একটা ঘোরের মতো দেখে যাচ্ছিলাম। অনেক ঘটনা মনে হয় যেন কয়েক সেকেন্ডে ঘটেছিলো। আমার কান্না দেখে আমার বন্ধুরা কি করবে বুঝতে পারছিলো না। আমি নিজেও বুঝতে পারছিলাম না। জানাজার পরে হঠাৎ আমার খেয়াল হলো, চারদিকে কতো মানুষ, কতো ছাত্র ছাত্রী, সবার চোখ ভেজা। সিনিয়র আপু,ভাইয়ারা যাদেরকে আমি এড়িয়ে যেতাম মুখচোরা স্বভাবের কারনে তারাও আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। বাসায় ফিরলাম। ফিরতেই হতো,পরীক্ষা কাল।
স্যারের জানাযায় গিয়ে আমার শিক্ষক হবার যে ভূত মাথায় চেপেছিলো তা ব্রহ্ম দৈত্যে রুপান্তর হলো। এতো মানুষ, এতো সন্তান, আহ! What a life! মৃত্যু নিয়ে আমি বরাবরই রোমান্টিক। আমার শেষকৃত্যে এতো সন্তান থাকবে ভেবে আমার লোভ হলো। এর শেষ পরিণতি হলো আমার এই পেশাতে আসা।
পরীক্ষা থেকে জয়েনিং পর্যন্ত সময়টা অনেক দীর্ঘ এবং অনিশ্চিত ছিলো। রীটের কারনে আমরা জয়েন করতে পারিনি। অনেক হাইকোর্ট, উকিল, জেলা ভিত্তিক কাউন্টডাউন শেষে জয়েন করতে পারলাম। কিন্তু তিনদিন ক্লাস করার পরই করোনা হানা দিলো। শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ হলো, অনলাইনে সম্ভপর হয়নি বিধায় মোবাইল ফোনে পাঠদান চলতে লাগলো। অনেক অনলাইন মিটিং হলো, ট্রেনিং হলো ঘরে বসে। সরকার আমাদের বেতন ভাতা বন্ধ করলেন না। তাতে করে জনসাধারণের পাশাপাশি নিজেদের উর্ধতন কর্মকর্তা সহ সিনিয়র শিক্ষকরাও " বসে খাচ্ছি" তকমা দিলেন। তাদের পাশাপাশি আত্মীয়রা এলাকার সদ্য চাকরি পাওয়া বড় ভাইয়েরা খুব ঈর্ষান্বিত হলেন। অথচ আমরা বিস্কুট বিতরণ সহ অন্যান্য কার্যক্রম অব্যহত রাখলাম। আমি সহ অনেক শিক্ষক শিক্ষিকার পাঠদানের জন্য কিছু কিছু বাড়িতে যেতে হলো। কেননা ক্যাচম্যান্ট এরিয়ার সুবিধা বঞ্চিত কিছু শিশুদের অভিভাবকদের মোবাইল ফোনই নেই। ফোন করলেও কেউ কেউ দোকানে থাকেন পরে বলে দেবেন বলেন, কেউ কেউ রং নাম্বার বলে বকে দেন, কেউ কেউ ধরতে চান না , বিস্কুট কবে দেবে জিজ্ঞেস করেন । কিন্তু কেউ কেউ খুব আগ্রহী ছিলেন বটে।
প্রথম বেতনের জন্য কাজ করতে গিয়ে টের পেলাম যে সম্মানের জন্য এই পেশা আমার ভেতরে এতো জায়গা নিয়েছে সেই সম্মানটুকু আসলে কালেভদ্রে অভিভাবকদের থেকে পাওয়া যায়। অফিস, শিক্ষকদের উপদ্রবের মতই মনে করেন। কিছু টাকা পকেটে ঢুকার সমূহ সম্ভাবনায় তাদের চোখ চকচক করতে থাকে। অনেকে ভুলবশত (নাকি ইচ্ছে করেই) কম্পিউটার অপারেটরকেই স্যার বলে ফেলেন। তাদের শিক্ষকদের সাথে করা ব্যবহার গুলো যেকোন নতুন শিক্ষককেই তাদের এই ডিপার্টমেন্টে নিজস্ব অবস্থান সম্পর্কে স্পস্ট ধারণা দেয়। আমি জীবনে কোনদিন আমার কোন কাজে স্পিডমানি দেয়ায় বিশ্বাস রাখিনি, লাইন ভাঙ্গিনি , আমাকে দেরী করেই সবকিছু পেতে হয়েছে। ভোগান্তি হয়েছে অনেক। কিন্তু এ যাত্রায় অরাজকতায় সামিল হতে হলো।উল্লেখ্য, প্রথম বেতন পেতে অফিস থেকে বিলের কাগজ নিয়ে ব্যাংকে জমা দিয়ে আসতে হয়েছে কেননা করোনায় অফিস থেকে পাঠানোর জন্য কেউই যেতে আগ্রহী ছিলেন না। প্রায় ২৭ কি মি সাইকেল চেপে, লক ডাউনে যানবাহনের অভাব থাকায় স্কুল এরিয়ার লাগোয়া ব্যাংকে যেতে হয়েছে। তারপরেও কাজ আটকে ছিলো।
অবশেষে উপলব্ধি হলো যে, তাহলে বোধয় জীবনের প্রথম বেতন পেতে উৎকোচ দিয়েই আমার ঘটনাবহুল শিক্ষক জীবন শুরু হলো।
২১ শে জুন, ২০২২ ভোর ৬:০০
ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার জন্যও শুভকামনা রইল
২| ১৪ ই জুন, ২০২২ রাত ৯:৫০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমার পিতা প্রাইমারী স্কুলের সহকারী প্রধান
শিক্ষক ছিলেন। তার সাথে কোথাও গেলে পথে
প্রায় সবাই মাষ্টার সাব বলে সালাম দিতো, শ্রদ্ধা
করতো, দেখে খুব গব' হতো।
তিখন ভেবে ছিলাম আমিও শিক্ষিক হবো, কিন্তু
বিধি বাম, হতে হলো সংবাদকমী'!
আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই।
২১ শে জুন, ২০২২ ভোর ৬:০৪
ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: আপনার পেশায় ও আমার পেশার মতো বৈচিত্র্য আছে। একটু গর্ব হবে বলে শিক্ষকতায় আসা। দেখা যাক। শুভকামনা।
৩| ১৫ ই জুন, ২০২২ সকাল ১০:০৭
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: আমার এবং ততকালীন সময়ের শিক্ষকদেরকে আমি প্রচন্ড শ্রদ্ধা ও সম্মান করি কিন্তু বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের অবস্থা দেখে মনে হয় শিক্ষকরা নীতিনৈতিকতা একেবারেই বিসর্জন দিয়েছে সেই সংগে আমার শ্রদ্ধাও উঠে গিয়েছে। শ্রদ্ধা ওঠার কারণ হলো আমার বাচ্চাদের শিক্ষকদের আচরণ ও তাদের পাঠদেয়ার অবহেলা দেখে; স্কুলে শতকরা ১০ ভাগ পড়াও হয়না সব শিক্ষকের মানষিকতা এখন ব্যবসায় পরিনত হয়েছে।
২১ শে জুন, ২০২২ ভোর ৬:০৮
ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: শিক্ষকদের এমন আচরণের কারণ কী বলে আপনি মনে করেন? আর তা আপনার দেশেই কেন?
৪| ১৫ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:০১
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
২১ শে জুন, ২০২২ ভোর ৬:০৯
ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ।
৫| ১৫ ই জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৪
জগতারন বলেছেন:
কি ভাবে যে মন্তব্য করবো ভেবে পাচ্ছি না।
বাংলাদেশের অবস্থা সত্যিই দুঃখজনক।
দেশে সব জায়গায় প্রতিটি স্তরেই ঐ একই সমস্যা।
এই ব্লগার ৎৎৎঘূৎৎ -এর প্রতি সুভকামনা র'ল।
(এনার এই ব্ল নামটি আমি উচ্চারনই করতে পারছিনা, তার পর ইনি পুং নাকি স্ত্রী লিংগ বুঝা যায় না।
আর এই ব্লগ লিখাটি এনার বাস্ত জীবনের ঘটনা নাকি গল্প তাও বলা যায় না।)
২১ শে জুন, ২০২২ ভোর ৬:১৪
ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: আমি আপনার মন্তব্যের কি প্রত্যুত্তর করবো তা ভেবে পাচ্ছিনা। আমি একজন শিক্ষক। আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই জুন, ২০২২ রাত ৯:০৮
মনিরা সুলতানা বলেছেন: অনেক শুভ কামনা আপনার জন্যে।