নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা,অল্পবিদ্যা, কুশিক্ষা এবং ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দৃষ্টিকোণ না থাকলে প্রকৃত বাঙ্গালি হওয়া যায় না।
1.ইগো আছে
2.এরোগ্যান্ট
3.ক্যালাস
4.বাচাল
5.গ্রুপ ম্যাটারিয়াল না
6.যেটা চিন্তা করে তাই বলে ফেলে
7.মেয়েদের অপমান করতে পেলে নিজের চুড়ান্ত ফর্মে ফিরে যায়,,,,,,,,,,,,,,
একমনে অবাক চোখ নিয়ে লিস্টার দিকে তাকিয়ে আছে পাতা। এমন সময় আভা ঢুকে তার রুমে। ঢুকেই চিৎকার দিয়ে ওঠল সে,
- তোকে আমি খুন করে ফেলব একদিন। কি কথা ছিল? আর তুই অন্ধকার করে বসে আছিস। উঠ, কি পড়ছিস এটা?
- আমার জীবনে এমন অদ্ভুত মানুষ আমি দেখি নি এর আগে। ওর সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে। এর মাঝে হুট করে একদিন কল দিল, তারপর বলল ঠিকানাটা দিতে। চিঠি নাকি পাঠাবে। দিলাম। আর তিনি চিঠির বদলে এই পেজ পাঠিয়েছেন। পেছনে লেখা, আমার চরিত্র। বন্ধুদের থেকে যাচাইকৃত।
- কই দেখি? লাইট টা জ্বালা অলস।
পাতা নীরবে তার হাতে কাগজটি ধরিয়ে দিয়ে লাইট অন করল।
- বাপরে! ইন্টারেস্টিং তো। সে কি বিয়ে করতে চাচ্ছে না? নাকি অন্যকোন ঘটনা আছে? আর দেখ সবগুলো বিভিন্ন হাতের লেখা। তারমানে তার বন্ধুরাই লিখেছে।
- কি করব?
- তুই তাকে দেখেছিস?
- না।
- ও তুমিতো,,,,,, বাদ দে। ডাক তাকে একবার। দেখি, আমারও তো বিয়েরবয়স পার হচ্ছে। আর কত ওই গাধাগুলোকে পেছনে ঝুলাবো। তুই না করলে,,,,,,,
- করিস যাহ! অত শখ নেই আমার। বিয়ে ছাড়াও জীবন চলে।
- আচ্ছা মাদার তেরেসা, কল দিয়ে তাকে আসতে বল। দামী হতে হবে রেস্টুরেন্ট।
পাতা মোবাইল নিয়ে ইতস্তত করছে দেখে ধমকে উঠল আভা।
- কর তাড়াতাড়ি। আমি তোর জন্য আজ কোথাও ঘুরতে পারলাম না। এখনই কর।
- আচ্ছা করছি। বিরক্তিকর।
- হ্যালো, প্রীনন?
- পেয়েছেন?
- কি?
- একটা লেটার পোস্ট করেছিলাম।
- ও,,,,, ও হ্যা, হ্যা। আপনি,,,,,,,,,,,, একটু ধরুন
বলে মোবাইলের স্পিকার চাপা দিয়ে আভার দিকে তাকালো সে। আভা অনেক রাগী চোখে ইশারা করতেই আবার মোবাইল কানে নিল সে।
- ইয়ে মানে,,,,,,,,,,, আপনি একবার আসতে পারবেন? রেড রুফ ইন এ? একটু দেখা করার ছিল?
- এখন? এখন তো পারবো না। সোমবার আসি?
- আচ্ছা ঠিক আছে। বিকেল পাঁচটায়?
- ওকে।
- আর শুনুন?
- হু
- আমার বান্ধবী আভা থাকবে আমার সাথে।
- আচ্ছা বেশী করে নিয়ে বের হব।
- মানে?,,,,,,,,,, হ্যালো,,,,,,,,,হ্যালো?
মোবাইল রাখতেই আভা ভ্রু কুচকালো।
- কিরে? মুখের উপর রেখে দিল?
- ঠিক তা না? বলল বেশী করে নিয়ে বের হবে।
- ছিহ! আচ্ছা আমি কি পেটুক?
- এটার সাথে কি সম্পর্ক?,,,,,,ও আচ্ছা।
এই লোক তো টাকার কথা বলছে। হা হা হা।
- সাবধান হতে হবে বুঝলি। সারকাস্টিক।
- লাইট টা একটু অফ করবি? আমি একটু ঘুমাবো। কাল ঘুম হয়নি।
- হায়রে। ঘুমা তুই। আমি গেলাম
মাথা নাড়তে নাড়তে আভা চলে যায়।
দুদিন পর বিকেলে দুজন হুড়োহুড়ি করে ঢুকে রেস্টুরেন্টে। সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। তারা ভেবেছিল তিনি আগেই পৌছে গেছেন। তারা গিয়ে দেখলো একটি ছেলে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছে। তার পাশের টেবিল দখল করল তারা।
- কিরে? তোর বর কোথায়?
- এখনো হয়নি। হবে না বোধয়।
হঠাত পাশের ছেলেটি এসে সামনে দাড়ালো তাদের।
- আপনি বোধয় পাতা?
পাতা মাথা নাড়তেই ছেলেটি আবার কথা বলা শুরু করল।
- আমি প্রীনন। উনি বুঝি আপনার বান্ধবী? হ্যালো?
- আভা। আমার বোন বলতে পারেন। আমাদের চিনলেন কিভাবে? মিতু আন্টির কাছে ছবি দেখেছেন?
- নাহ। হেডফোনে গান চলছিল না।
এই কথা শোনার পর দুজন দুজনের দিকে তাকালো অবাক হয়ে। একটু পর ঘটনা বুঝতে পেরে লজ্জা পেল।
- কিছু অর্ডার করুন?
- না আমরা ঠিক আছি।
এমন সময় আভার পায়ের খোচা খেল সে। বুঝতে পেরে প্রীনন ওয়েটার ডাক দিল।
- আমার জন্য চিকেন নূডুলস আনবেন বেশী করে। আর দেখুন তারা কি চান।
ওয়েটার তার অর্ডার বুঝে নিয়ে মেকি হাসি ঝুলিয়ে চলে গেল। আভা জিজ্ঞেস করল,
- নুডুলস আপনার পছন্দ?
- ভীষন। অন্যকিছু ভাল লাগেনা তেমন।
এটা নিজেও ভাল রান্না করি আর সময় কম নেয় তো।
- ও।
- আচ্ছা ছাড়ুন। আপনাদের কিছু জিজ্ঞেস করার আছে ওই লেটার টা নিয়ে, আমি যেটা পাঠিয়েছিলাম।
- ও হ্যা। আভারই প্ল্যানটা ছিল দেখা করার। আই মিন,,, আমারো ছিল। আসলে অদ্ভুত লাগল,,,,,
- প্রথমত। আমার মায়ের ধারনা আমি বুড়িয়ে যাচ্ছি। সত্যিই কয়েকটা চুল পেকে গেছে আর তিনি আমার বাইরের আড্ডা টা মেনে নিতে পারছেন না। আমি মানুষ হিসেবে সুবিধার নই। মেয়েদের বেশীক্ষন নিতে পারিনা। কিন্তু অনেক চ্যাট, ফোনে কথা হয়েছে, টেকেনি। আর মনে কস্ট দেয়ার ব্যাপারটা আছে। যা যা লিস্টটায় ছিল না। বন্ধুদের অনেস্ট অপিনিয়ন। আড্ডা আর মাঝে মাঝে বুয পার্টি না হলে ভাল লাগেনা।
- কিন্তু এখন?
- আপনার কোন বয়ফ্রেন্ড ছিল না? বা আছে?
হঠাত আভা প্রশ্ন করে বসল,
- থাকলে?
- ঘটনাটাটা ঘুরিয়ে দেয়া যেত। আসলে আন্টি মাকে গিয়ারে ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু আমি শতভাগ নিশ্চিত আপনার বান্ধবী আমাকে নিয়ে সুখী হবেন না। নিন খাবার এসে গেছে। সস নিয়ে আসুন সজীব কোম্পানির যেটা আছে। তিনটা। ওয়েটারকে বলল সে।
চুপচাপ খাওয়া সারল সবাই। প্রীনন বিল টা পেমেন্ট করার পর বলল,
- আচ্ছা আমি কি আপনাদের নামিয়ে দেব? অফিস থেকে আমাকে গাড়িটা দেয় ব্যবহার করার জন্য।
- আর কিছুক্ষন বসি। আমি আর আভা পরে রিক্সা নিয়ে চলে যাবো।
- কিন্তু আমাকে উঠতে হবে। একটা সিগারেট,,,,, আপনারা পরে আসুন না হয়। কি ঠিক করলেন জানাবেন। ভাল থাকুন।
দুই বান্ধবী কিছুক্ষন কোন কথাই বলল না। এ কি ধরনের মানুষ? কাঠখোট্টা। যেমন এল আবার চলেও গেল। একটু পর আভা বলল,
- চল।
- তোর আজ আমার বাসায় থাকতে হবে।
- আচ্ছা।
।
বাসায় পৌছে পাতাই প্রথম মুখ খুলল।
- আমি একেই বিয়ে করে ছাড়বো।
- পাগল হয়েছিস। দেখেছিস ও কেমন অস্থির? পারবি মানিয়ে নিতে। আমার তো মনে হয় ও চাইছে তুই ওকে না বলার জন্য।
- হু। ও সব সাজিয়েই বের হয়েছে। কিন্তু কেন জানি ওর প্রতি আমার কৌতুহল বেড়ে গেছে।
- এটা লাইফ। তোমার ডিটেকটিভ কাহিনী না। স্রেফ কৌতুহলের বশে?
পাতা আর কিছু বলল না। কেমন যেন ভ্যাবদা মেরে গেল। কিছু একটা নাড়িয়ে দিয়েছে সে। কি সেটা?
এর কয়েকদিন পর প্রীনন তার জমজমাট আড্ডার আসরে এক বিরক্তিকর কল পায় ফোনে।
- মিউজিক টা কমা আরিফ । একটা কল আসছে আমার।
- তুই বাহিরে যা না দোস্ত।
বিরক্তি নিয়ে কল টা রিসিভ করল প্রীনন।
- হ্যালো
- আমি আভা। চিনতে পারছেন?
- হ্যা বলুন। আপনার বন্ধু কিছু বলেছে?
- ওর কথা পরে হবে। শুনুন। এই মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই বই পাগল। একটু কেমন জানি। দেখলেনই তো চশমা পড়ে। বাহিরের দুনিয়ায় ও মা বাবার পর আমাকেই ওর সব ভাবে। আমি ওকে আমার কাছ ছাড়া করিনি।
- সোজা কথায় আসুন প্লিজ।
- আপনি ভালই অপমান করেন তো। আচ্ছা বেশী সময় নিব না। ব্যাপার টা হচ্ছে, আপনার এসব আচরন ও নিতে পারবেনা। বুঝতে দেয় না ঠিকই তবে খুব অভিমানী। আপনি এই বিয়েটা করবেন না প্লিজ।
- আমিও তাই চাই। আচ্ছা বলুন তো সে কি বলেছে?
- না থাক। আপনার না শুনলেও চলবে।
- আপনাদের বন্ধুত্ব টা ভাল।সচরাচর দেখা যায় না। ওকে বোঝান। ভাল থাকবেন।
দাঁতে দাঁত চেপে ফোনটা রাখল আভা। ওর সামনে দাড়াতেই পারছে না। কিসের এত অহংকার ওর। চেহারাটার কারনে? তবে অকপট। এই দিকটা ভাল। অন্যান্যদের মত নয়। পাতার মতের নয় ও। এত অবহেলা সহ্য করতে পারবে না বেচারী। সারাজীবন হাত ধরে কাটালো। কখনো মায়ের বা কখনো বাবার। এরপরে আমার। জানে শুধু বইয়ে মুখ গুজে পরে থাকতে। কি করা যায়। আভার ভাবনা গুলোর লাগাম ছুটে যায়।
পরের দিন সকাল বেলা আভা পাতার বাড়ি আসে। পাতা সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে। এখনো বিছানা ছাড়েনি। তাকে দেখে মুচকি হাসি দিল।
- কিরে? সকাল সকাল।
- আন্টি কি রান্না করছে? আমার খুব খিদে। বল দুপুরে খাব।
- তুই গিয়ে বল না? আমি উঠতে পারবো না।
- উঠ। না হয় গেলাম?
- কি ব্যাপার বল তো? আচ্ছা। তুই বস আমি এখনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
- ভাল করে দাঁত মাজিস। আমার গালে একটা চুমু খেতে হবে।
- থাপ্পড় খাবি? হাত ধুয়ে আসি। হা হা হা
পাতা রুম থেকে বের হবার পর সিদ্ধান্ত টা নিয়ে ফেলল সে। কি ভাববে ও? আমি কি করছি? কিভাবে দেখবে? হাবিজাবি অনেক চিন্তায় বিভোর হয়ে গেল সে। পেছনে পাতা এসে দাড়িয়েছে টেরই পেল না।
- আচ্ছা আমি তোর কে পাতা?
- কি হয়েছে? দাড়া বলিস না। বুঝতে দে চেহারা দেখে।
- কি বুঝলি?
- তুই আমার সর্বনাশ করতে চলেছিস। একি তুই কাঁদছিস কেন?
- আ,,,আমি,,,
- বল। কোন সমস্যা নেই। বল।
পাতা আভাকে জড়িয়ে ধরল। বুঝতে পারল আভা ক্ষনে ক্ষনে কাঁপছে।
- কিছু বলবি তো?
- আমি প্রীননের প্রেমে পড়ে গিয়েছি।
- হা হা হা। তো?এর জন্য ভয় পাচ্ছিস? তুই আমাকে চিনিস না? আগে বোঝে নে ব্যাপারটা কি। তারপর নাহয় আমার ঘর ভাঙিস?
আভার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না। কত সহজে মেয়েটা বলে দেয়। ও কি বুঝেনা? নাকি বুঝেও চুপ করে থাকে। এত নির্লিপ্ত থাকে কি করে? কিছুক্ষন থেমে থেমে কাঁদছিল সে। পাতা বলল,
- আচ্ছা শোন। আমি ওকে ফোন করি। বলি যে, আপনার তো বিয়ে করতেই হবে। আপনি বরং ওকেই বিয়ে করে ফেলুন। একই কথা। আমার কৌতূহল তোর থেকেই মিটে যাবে। রাখ দেই একটা ফোন।
- না না।
- আরে দেখিইনা কি বলে। তোর পেছনে আমার মোবাইল, দে তো।
পাতা মোবাইল টা নিয়েই ফোন করল প্রীনন কে। দুবার কলেও কোন সাড়া নেই। এরপর প্রীননই ব্যাক করল।
- হ্যালো
- হু, কিছু বলবেন। আমি মিটিংএ ছিলাম।
- ইয়ে মানে। একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি বুঝলেন।
- দুনিয়ার সব ডিল গুলোই বিব্রতকর। বলে ফেলুন।
- আচ্ছা। আপনার তো বিয়ে করা দরকারই তাই না?
- মা বলে বিধায়।
- আপনি তো আভাকে চেনেনই। ওর আর আমার বন্ধুত্বটাও জানেন। আমিও আসলে বিয়েতে আগ্রহী নই। ওর আবার ক্যারিয়ারে আগ্রহ নেই। বুঝতেই পারছেন আমি কি বলতে চাইছি।
প্রীনন একটু গুলিয়ে গেল। এ কি হচ্ছে? আভা মেয়ে হিসেবে একটু চটপটে। কেনই বা ভাববো এসব? তখনই কোন জবাব এলো না মাথায়। কিছু তো বলতে হবে। ভাবলো সে। অপর প্রান্ত থেকেপাতা বলেই যাচ্ছে,
- শুনছেন?
- কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না। আমাদের দুই ফ্যামিলি এ সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছে।
- ওসব মানিয়ে নেয়া সম্ভব নয়?
- শুনুন আমাকে ছাড়তে হবে। পরে কথা বলব।
আভার উতসুক চোখ দেখে পাতা বলল,
- ব্যস্ত মনে হল। তুই মন খারাপ করে থাকিস না। আমার ভাল লাগছে না। আই নীড আ হাগ।
এর কয়েকদিন বাদে প্রীনন আভাকে একটি রেস্টুরেন্টে ডাকল। আভা যথারীতি এসে দেখল প্রীনন সেই আগের মতই হেডফোন গুজে রয়েছে। হাসি দেবে কিনা বুঝতে পারল না সে।
- বসুন
- আসলে আমি,,,,,
,,,,
হাত তুলে থামিয়ে দিল প্রীনন।
- কেন করছেন বুঝতে পারছিনা। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনিও চান না এই বিয়েটা হোক। কিন্তু আপনি আমার প্রতি দুর্বল, যা শুনলাম পাতার কাছ থেকে, তা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
- ও এসব বলেছে?
- হু।
- উফফ,,,,,,,,,
- আমি আসলে ও কেন কাউকেই সুখী রাখতে পারবো না। এই টার্মে বিয়ে করতে হবে। যাদের ম্যারিজ থেকে বাচ্চা ছাড়া আর কিছু চাওয়ার নেই।
- ও অনেক কস্ট পাবে এমন করলে। বাইরের জগত কিছুই বোঝেনা।
- আপনি হলে শোধরে নিতেন?
- হ্যা।
- তা শোভন চলে গেল কেন?
- আপনি জানলেন কিভাবে?
- ফেসবুকে আপনার ছবিতে সে কমেন্টকরে একদম রচনার মত। তারপর তাকে নক করলাম। বলল স্রেফ হালকা ভাবে নেবার কথা। আপনি সিরিয়াস টাইপ নন। কিন্তু একটা জিনিস বলল যে আপনি পাতাকে পাগলের মত ভালবাসেন। তার এত বড় ক্ষতি আপনি করতে পারেন না এসব।
- অত ডিটেইলে কেন গেলেন?
- বাচাল তো। সরি।
- বাট জানেন? আই এম ইন লাভ উইথ ইউ।
- ন্যাকা শোনালো। হা হা হা। আচ্ছা তাও একটা প্রশ্ন করি? আমার কোনদিকটা আপনার ভাল লেগেছে?
- আমি এখন পর্যন্ত যা দেখেছি সবকয়টা নমুনা পরবর্তিতে পেনজি হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু ব্যতিক্রমী ছিলেন আপনি।
- একদিনেই বুঝে গেলেন? আর যারা আপনাদের পেছনে ঘুরঘুর করে তাদেরকেই পেনজি টাইপ মনে হয়? কেন, পাত্তা দেয় বলে? কেয়ার করে বলে? আরে সবই তো ভন্ড প্রায়। সবার ভেতরই খারাপ ইচ্ছেটা থাকে। প্যাকেজে আটকানো। কেউ ধপ করে খুলে দেয় নিজেকে। আর কেউ আস্তে আস্তে। হা হা হা। আর আপনি আমাকে আলাদা করে ফেললেন? হাস্যকর।
- কিন্তু,,,,,,,,
- কোন কিন্তু নয়। আপনার আর সবকয়টা কেসের রোগই হয়েছে আর না হয় আপনি ভাবছেন আমি আপনার বন্ধুকে কস্ট দিতে পারি। আপনি আসুন প্লিজ।
আভা চেয়ার ছাড়লো। প্রীনন দেখল আভা চোখ মুছতে মুছতে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। কিছু সময় মানুষের মাথা ফাঁকা থাকে। ধুসর আকাশ মাথার ভেতরে ঢুকে যায়। সে সময়টায় চোখে সবকিছুই দেখা যায় কিন্তু তা ব্রেন পর্যন্ত পৌছায় না। অনেকক্ষন সে ঘোরের মধ্য থেকে প্রীনন বাসায় ফেরে। দরজা খুলতে তার মাকে দেখতে পায়।
- কিছু চিন্তা করছিস?
- আমি রান্নার বই কিনেছি একটা।
- মানে?
- আমি রান্না করে খাওয়াবো। সব কাজ করে দিব।
- বুঝেছি। এ ব্যাপারে কথা বলতে পারব না।
- তুমি আমার শত্রু সেটা জানো?
- হাত মুখ ধুয়ে আয়।
- মা!
বুঝল লাভ হবে না। টিভি অন করতেই পাতার কল। নাক মুখ কুচকে এলো তার।
- বলুন।
- আভা কি আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল?
- আপনি জানেন সেটা।
- কি কথা হল?
- শুনুন। ওর ব্যাপারে আমি জানি আগে থেকেই। কিন্তু কাঁদল কেন বুঝতে পারলাম না।
- আসলে,,,,,,,,,,ও,,,,,,,,,
- বাদ দিন। আমাদের বিয়েটা হচ্ছে। কিন্তু আপনার ব্যাপারটা আমাকে ভাবায়। আপনি কি পাবেন আমার থেকে?
- জানিনা।
- ভাল থাকুন।
বিয়ের দিন আভা এসে বসল প্রীননের গা ঘেঁষে। প্রীননের মনে হল আভা কিছু বলার জন্য উশখুশ করছে
- কিছু বলবেন?
- আমি আপনাকে সত্যিই ভালবেসে ফেলেছিলাম। ব্যাপার না। দেখা তো হচ্ছেই। তবে আমার এ গচ্ছিত জিনিসেরকোন রকম অবহেলার জন্যা খুন করতে পারি আমি।
- থ্রেটটার জন্য ধন্যবাদ। মেকাপ টা কম করলে পারতেন আজ। ভয়ংকর শোনালো বোধয় এর কারনেই।
- হি হি হি।
বিয়ের তিনদিন পর এক রাতে এক মোহমত্ত জ্যোৎস্না উঠে ঘুমের ঘোরে পাশ ফেরে পাতা। চোখ মেলে দেখে পাশে প্রীনন নেই। বাথরুমের লাইট নেভানো। উঠে গিয়ে চেক করতে লাগলো সে। কোথায় যেতে পারে সে। বারান্দায় খুজে এসে মেইন দরজায় এসে দাঁড়ায় পাতা। দরজা খুলতেই চাঁদের আলো চোখে পড়ে তার। বের হয়ে এসে বাঁদিক ঘুরতেই দেখতে পায় ছাদের গেট টা খোলা। ঢুকতেই প্রীনন কে দেখতে পায়। আপন মনে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাত খুক খুক কাশি দিয়ে উঠল পাতা।
- হলি,,,,,
- ওটা ফেলো। আমি সিগারেট নিতে পারিনা।
- তুমি ভয় পাইয়ে দিয়েছো অনেক। উফফ। এ সময় কি করছো এখানে?
- বলছি। আগে ফেলো।
- তুমি একটু দাড়াও দুই মিনিট। আসছি।
- তাও ফেলবে না?
- স্টকে আর নেই। তার উপর ভয় পেয়ে গেছি।
- কি ভাবছো?
- কিছু না।
- অমন চাঁদের দিকে তাকিয়েছিলে। আভা?
- কি যে বলো না।
- ও তোমাকে সত্যিই ভালবেসে ফেলেছিল জানো।
- ঘুমাতে চলো।
- তুমি এমন কেন? এই ছন্নছাড়া ভাব টা কি আড়াল? এই কেয়ারলেস এপ্রোচ?
- তুমি কি ভেতরকার ব্যাপার দেখতে পাও?
- না। আন্দাজ করতে চেস্টা করি। জানো? তুমি এখনো আমার নাম ধরে ডাকনি প্রীনন।
- অভ্যাস হয়নি।
পাতা কাছে গিয়ে প্রীননের হাতের উপর তার ডান হাতটি রাখল।
- আমাকে বলো প্রীনন।
প্রীনন পাতার আকুল প্রশ্নে একবারের জন্য চোখ রাখে পাতার চোখে। আবার আকাশে চোখ তুলে। তারপর বলতে লাগল,
- পাথর বহুত শক্ত তাই না?
- হু
- কিন্তু জানো, শক্ত কিছু দিয়ে যদি গভীর
আচড় টেনে দিতে পারো তাহলে ঐ আচড়ের দাগ আজীবন থেকে যাবে।
- তুমি কাওকে ভালোবাসতে?
- হা হা হা। তা নয়। আমার এক ছাত্রী ছিল। আসলে ও একটু পাগল ছিল। সব পড়া শেষ করে প্রায়ই বলতো, আই উইল নেভার লেট ইউ ডাউন। আমি খুশী হতাম। ভাবতাম জায়গাটা রেসপেক্টের।
এস এস সি পরীক্ষার আগে চলে আসি। আসার সময় একবার বললো, আই উইল কল ইউ। যখন পড়াতাম, তখন একটি কথাও বলতো না। খুব চুপচাপ।
- ওর কি হয়েছিল?
- পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবার পর একা একটি গোলাপী শাড়ি পড়ে মিস্টি নিয়ে বাসায় আসল সে। বোঝই তো। টিনেজ মেয়ে। কি করতে পারে। কঠিন তিরস্কার করেছিলাম। বুঝতে পারিনি এতটা হার্ট করে ফেলবে।
অস্ফুট এক গোঙানির শব্দ বেরিয়ে যায় প্রীননের মুখ থেকে। আবার বলতে শুরু করল,
- দুইদিন রুম অন্ধকার করে পড়েছিল। পরে দরজা ভেঙে যখন বের করা হল,,,,,,,,,,,,,,পরশু যে বের হয়েছিলাম? ওকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমার বিয়ের কথা বলব বলে। ভারসাম্য হারিয়েছে। আমাকে চিনতে পারেনি এবারে।আগে একটু মুভমেন্ট দেখতাম।
কিছুক্ষন চুপচাপ কেটে যায় ওদের। কিছু নিশ্বাসের শব্দ। তাল কেটে যাওয়া মধ্যরাতের সুর। দুজন গভীর শ্রোতা।
- একি তুমি কাঁদছ কেন?,,,,,,,,, পাতা?
পাতার হাতে জোর এক চাপ দেয় প্রীনন।
- কিছু না। চলো । অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।
প্রীনন রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষন বাদেই ভারী নিশ্বাসের শব্দ পায় পাতা। মোহগ্রস্তের মত ঐ মুখটিতে তাকিয়ে থাকে পাতা। ঠান্ডা বাতাসে হালকা গুটিয়ে যায় দেহটা। চাদর টেনে দেয় সে। তখনো চাঁদের আলো মেঘে লুকোয়নি। দরজার নীচ দিয়ে দেখা যায়। আবছা। খড়কুটোর মত ভেসে যাওয়ার আগেই প্রীননের টি শার্ট খামচে ধরে পাতা।
- আমাকে দেখাতে নিয়ে যাবে?
চোখের জলের একটি বিন্দু এসে ভিজিয়ে দেয় প্রীননের বামপাশটা। প্রীনন তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৪
ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। ভাল আছেন?
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৯
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: উফফফফ
কী গল্প!
প্রীনন চরিত্রটা আসলেই ইন্টারেস্টিং