নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমরত্বের প্রত্যাশাহীন এই শহরে থেকে যাক কিছু খুচরো কথা...

পদ্মপুকুর

একজন শভেনিস্ট ও স্মৃতিকাতর মানুষ

পদ্মপুকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

উম্মুখ চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া মহাসড়কে গ্রিনলাইনের বিলাসী বাসে আমরা...

১৬ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬

আড়পাড়া রোডে একটা বেইলি ব্রিজ ভেঙে গিয়েছে; ঢাকামূখী সব বাস এখন ঝিনেদা হয়ে যাচ্ছে। সবসময় নিউমার্কেট থেকে বাসে উঠলেও এখন তাই বাসের অপেক্ষায় আমি দাড়িয়ে আছি যশোরের পালবাড়ি মোড়ে।

পল পল করে সময় বয়ে যাচ্ছে; বাসের সুপারভাইজারের সাথেও ক্ষণে ক্ষণে যোগাযোগ হচ্ছে মুঠোফোনের কল্যাণে।

শহরের সামান্য বাইরে এই ত্রিমোহিনীতে অপেক্ষা করতে আমার খুব একটা খারাপও লাগছে না। আলো আধারীর মধ্যে ক্রমেই নিজের উজ্জ্বলতা বাড়াচ্ছে চাঁদ।

আমার বাস এসে পড়েছে। গ্রিনলাইন পরিবহনের বিলাসী এক বাস। বাইরে থেকে যেমন চাকচিক্যময়, ভেতরটাও তেমনি আরামদায়ক।

আমাদের সড়কে যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থায় একরকম বিপ্লবই হয়ে গেছে। এত দৃষ্টিনন্দন, মূল্যবান এবং আরমদায়ক বাস শুধুমাত্র উন্নত দেশগুলোতেই দেখা যায়।
মনে পড়ে, নব্বুই দশকের প্রথমার্ধে সোহাগ পরিবহন ‘সুপার সেলুন কোচ’র এক বিজ্ঞাপন ছেঁপেছিল সে সময়ের দৈনিক ইত্তেফাকে; সিলেটের চা বাগানের রাস্তায় চলছে চাঁকা লাগানো একটি বনেদি স্যুটকেস... পে-অফ লাইনটা মনে আসছে না এখন আর।

সোহাগের এক ঝাঁক অভিজাত বাসের হাত ধরে সে সময়েই বোধ হয় এদেশের সড়ক পরিবহন নতুন জগতে প্রবেশ করে।

তখন সোহাগেই আসা যাওয়া করতাম সাধারণত। একবার ঝিকরগাছায় সোহাগ কাউন্টারে বাসের জন্যে বসে আছি, কাউন্টারম্যান বলল- ‘বাস না ভাই, পেলেন বলেন, পেলেন.. ..’
আসলেও তাই। ঝকঝকে বাসগুলো উড়োজাহাজের অনুভূতিই দিতে পারতো। আর এখনকার বাসগুলোতো বিমানের এক্সিকিউটিভ ক্লাসকেও হার মানায়।

আমি বাসে উঠে পড়লাম। সেই অভিজাত বিলাসবহুল বাস। সদ্য ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করা বাংলাদেশি আর গুটিকয়েক ভারতীয়কে নিয়ে বাসটা বেনাপোল থেকে যাত্রা শুরু করেছিল ঘন্টা দু’য়েক আগে। যাবে দেশের অন্য প্রান্ত, চট্টগ্রাম তক।

দেশে ফেরার আনন্দে বাংলাদেশীরা সদ্যযৌবনা চড়–ইয়ের মত ছটফট করছে, কলকল করছে। তবে আমি আড্ডায় মন দিতে পারছি না, আগামী কার্যদিবসে আমার অফিস আছে। রাতে ভালো ঘুম দরকার।
হঠাৎ আদি ঢাকাইয়া এক মধ্য বয়সিনী উচ্চকিত হলেন- ‘ছুপার ভাইজান, ছুপার ভাইজান, বাচ থামান, প্যাছাপ লাগছে। যাওন লাগবো..’
সুপার ভাইজার বললো- এখন তো থামানো যাবে না আপা, ঘন্টা খানেক পর মধুখালীতে বিরতী দেব।
আবারো সলিড ঢাকাইয়া ভেসে আসলো- ‘ক্যান, থামাইবার পারবেন না ক্যালায়? অতক্ষন আটকাইয়া রাখবার পারুম না, ফাইট্যা যাইবো গা...’

পুরো বাসে অট্ট হাসির বান ডেকে গেল। বিশেষত পুরুষ কন্ঠের হাসি। আমিও ঠোট টিপে হাসছি আলো নেভানো বাসের অন্ধকারে। বেশি হাসতে পারছি না, পাশে আমার সেজ বোনের মেয়েটা বসে আছে। মাত্রই এসএসসি শেষ করে ঢাকা বেড়াতে যাচ্ছে। প্লাস একটু বিরক্তও লাগছে।

পেছন থেকে মৃদুকন্ঠের চাঁপা আওয়াজ আসছে-
-ব্যাফার কি? হেতির কি শরম টরম নাই নি?
-হেতি হুয়ালেয়া জানে ন?
-হ, ইগ্যিন কই হেতি নিজেঅতো মজা হাই মনে অয়।

বাস চলছে ঘন্টায় প্রায় আশি থেকে একশ কিলোমিটার গতিতে। ভেতর থেকে অবশ্য তা মালুম হচ্ছেনা একদমই। আমি সিটে মাথা হেলিয়ে দিলাম।

আমার ঠিক উলটো দিকের সিটে এক বিরাট বপু ইন্ডিয়ান বসেছে। ওয়েস্ট বেঙ্গলের না বলেই মনে হচ্ছে। হয়ত বাংলাদেশেই থেকে অবৈধভাবে কোন ব্যবসা করে। বাংলাটাও বলছে বাংলাদেশী টানে।
হঠাৎ ইন্ডিয়ান কারো ফোন আসায় হিন্দিতে কথা শুরু করল-
-মে আপকে সাথ জরুর মিলনা চাহতা থে, লেকিন উস দিন এক প্রব্লেম কিয়া... মাঝে মাঝে কলকাত্যা বাংলা শব্দের মিশেল আছে।

কথা শেষ হলো। এবার তাঁর লাগোয়া সিটে বসা বাংলাদেশীর আদিখ্যেতা শুরু হল। ওই ইন্ডিয়ানের সাথে খাতির জমানোর আলগা এক চেষ্ট। টানা টানা বাংলায় কলকাতার টান আনার চেষ্টা, সাথে কিছু হিন্দির দুর্বল যোগ।

আমার বিরক্তিটা চরমে উঠল। আমি নিজে বেশ কয়েকবার ভারত গেছি। তাদের অনেক কিছুই, বিশেষ করে দৃঢ় দেশপ্রেম আমাকে মুগ্ধ করে। কিন্তু সা¤্রাজ্যবাদী, অতি লোভী এবং কুটচালে সিদ্ধ ইন্ডিয়াকে আমার চরম অপছন্দ। তার এক প্রতিনিধির সাথে নিজ দেশের এক নাগরিকের এই গায়ে পড়া আদিখ্যেতা অসহ্য।

বোঝা গেল আমার মত আরো দুয়েকজন আছে বাসে, মধুখালীতে বাস থামালে এক পাশে টং দোকানে দাড়িয়ে গরম চা গিলছি। দু’জন শভেনিস্ট, চিটাগাংয়ের পোয়া, সমানে গালি দিয়ে ওই হিন্দিপ্রেমিক যাত্রীর গুষ্ঠি উদ্ধার করছে-
-বাঙালি শালার আদিখ্যেতা ন গেলো। বিদেশী দেখলিই গলি যায় গোই...
-পাছা বেড়াই এক্খান লাথি মারন দরকার, হারামজাদা, কি কন বদ্দা?

কুড়ি মিনিটের বিরতী শেষে বাস আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। ফরিদপুর ছাড়িয়ে বাস চলেছে রাজবাড়ির দিকে। বাসের ভেতরে তখনও চলছে প্রবল চাপান উতর। এ আর থামবে বলে মনে হয় না। কিন্তু আমার এ থেকে নিস্কৃতি পাওয়া দরকার, আগামীকাল অফিস।

আমি বাসের ভেতরকার কোলাহল উপেক্ষা করে জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালাম। দেখি নির্জন রাস্তার পাশে আদিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত ভেসে যাচ্ছে রুপোলী আলোর বন্যায়। সে আলোকিত প্রান্তরে দল বেধে চড়ে বেড়াচ্ছে মহিনের ঘোড়াগুলি।

আমিও নিমিষে মিশে গেলাম ওই দলে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:১৮

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: যশোরে কোথায় থাকেন?ঝিকরগাছাতে নাকি?
আমার বাড়ি যশোর ঝিকরগাছাতে।

১৯ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:০৬

পদ্মপুকুর বলেছেন: বহুদিন ধরেই থাকি ঢাকাতে, কিন্তু আমার বড় হওয়ার সময়টা মিশে আছে ঝিকরগাছায়...
মোবারাকপুরে থাকতাম আমরা। এখনও প্রায়ই যাই।

ভালো থাকবেন। শুভ ব্লগিং

২| ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৩১

আল ইফরান বলেছেন: " পাছা বেড়াই এক্খান লাথি মারন দরকার, হারামজাদা, কি কন বদ্দা "

উপযুক্ত কথা, ভালো লাগছে B-)) B-))

১৯ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:০৭

পদ্মপুকুর বলেছেন: আমি বদ্দা লাত্থিটাকে হাইলাইট করতে চাইনি। বাসের ভেতরকার পরিবেশটা বোঝাতে চেয়েছি। বুঝতে পারছি পুরোপুরি ফেইল করেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.