নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কলকাতামূখী বাংলাদেশী শরণার্থীর ভীড়ে ব্যথিত এ্যালেন গিন্সবার্গ লিখেছিলেন ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। কবির মত কবিতাটাও বিখ্যাত হয়েছিল। বিশ্ববাসী পরিচিত হয়েছিল বেনাপোল থেকে কলকাতামূখী এই সড়কের সাথে। সাম্প্রতিককালে সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড-এ সুরারোপের পর কন্ঠ দিয়ে বিখ্যাত হয়েছেন মৌসুমী ভৌমিক।
মুক্তিযুদ্ধ শেষ। আমরা এখন স্বাধীন। তবুও যশোর রোডে বাংলাদেশীদের ভীড় রয়েছে আগের মতই। পরিবর্তন শুধু পরিচয়ে, এরা শরণার্থী নয়, রোগী।
কলকাতা এপোলোতে প্রসিডিউর রুমের সামনে অপেক্ষা করছি, আমার রোগীর এন্ডোস্কপি করা হবে। আমার মত আরো অসংখ্য স্বজনেরা নিজ নিজ রোগীর প্রসিডিউর শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। অধিকাংশই বাংলাদেশী। বেশভূষা এবং কথাবার্তায় খুব সহজেই তাদের আলাদা করে ফেলা যাচ্ছে। এক ভারতীয় ভদ্রলোক বাংলাদেশীদের জটলায় এগিয়ে আসলেন। লেখক এবং সাংবাদিক মানুষ। জানতে চাইলেন, কেন বাংলাদেশীরা চিকিৎসার জন্য এত অধিক সংখ্যায় ভারতমূখী হচ্ছে। গোপালগঞ্জের মামুন, যাত্রাবাড়ির শফিক সাহেব, বরিশালের সুজন ভাই, ঝিনাইদহ ডিসি অফিসের ওই কর্মী, সবাই মিলে যা বলার, সেটাই বলতে থাকলেন।
আমি আস্তে করে পেছনে সরে আসলাম। নিজের দেশের অতিমাত্রায় লোভী, চুড়ান্তভাবে দায়িত্বহীন, আন্তরিকতাহীন, অতি বুঝদার এইসব ডাক্তার আর রোগীর প্রতি ডাক্তারদের অবহেলা এবং ব্যর্থ চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে কিভাবে বলব অন্য দেশের এক সাংবাদিককে? বাংলাদেশীদের সম্মিলিত প্রতিত্তুরে ভারতীয় ভদ্রলোক ঠিক কি বুঝলেন, তা উনিই ভালো বলতে পারবেন, তবে উপসংহার যা দাড়ালো, সেটা হল আমাদের চিকিৎসকদের পড়াশুনা কম!!
আমরা বাংলাদেশীরা জানি, ঘটনা এমন নয়, আমাদের দেশে প্রচুর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক আছেন। তবুও তার এই ভুল ভাঙানোর কোন প্রবৃত্তি হলো না। আরো যে কদিন আমি কলকাতায় ছিলাম, হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করেছি, বিভিন্ন সময় সাধারণ ভারতীয়দের সাথে কথাবার্তায় একটা বিষয় জানলাম, সেটা হল কলকাতার গড়পড়তা মানুষের ধারণা বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার ভালো ব্যবস্থা নেই বলেই বাংলাদেশীরা ভারতে চিকিৎসার জন্য যায়।
সাধারণভাবে, মারাত্মক হ্যাপা পার করে পাসপোর্ট করা, তারপর ভারতীয় হাই কমিশনের রুঢ় ব্যবহার সয়ে ভিসা নিয়ে অন্য একটা দেশে গিয়ে চিকিৎসা করা খুব সহজ কাজ নয়। আর্থিক সংগতি থাকলে একটা কথা। তবুও দেখা যায়, এ দেশের দরিদ্র মানুষটিও চুড়ান্ত পর্যায়ে নিজের সর্বস্ব বিক্রি করে হলেও চিকিৎসার জন্য ন্যূনতম কলকাতা যায় এবং যে একবার যায়, পরবর্তীতে সে সামান্য অসুস্থতায়ও ভারতে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হয়। উপরন্তু, বিনামূল্যে ভারতীয় চিকিৎসাব্যবস্থার বিজ্ঞাপন করতে থাকে।
যারা বিভিন্ন কাজে কলকাতায় গিয়েছেন, তারা সবাই স্বীকার করবেন যে কলকতাবাসীর মত অভব্য মানুষ সারা বিশ্বে বিরল। কথাবার্তায় তাঁরা রুক্ষ, আচরণে অসহিঞ্চু, আতিথ্যে কৃপণ, সহযোগিতায় অনিচ্ছুক। এমন একটা যায়গায় আমাদের মত উদার ও তরল মনের মানুষ কেন বার বার যায় সেটা আমরা যারা যাই, তারা খুব ভালো করে জানি। দুঃখের বিষয় হলো, যাদের জানার কথা সেই ডাক্তার সম্প্রদায় আমাদের এই মনোভাবকে থোড়াই কেয়ার করে।
আমাদের ছোট্ট এই ভূখন্ডে জনসংখ্যাধিক্য, খাদ্যে ভেজাল, বাতাসে ধূলা-ময়লাসহ বিভিন্ন কারণে রোগীর সংখ্যাও বেশি। আমাদের দেশে ডাক্তার ও রোগীর ক্ষেত্রে তাই অর্থনীতির ডিমান্ড-সাপ্লাই থিওরি কার্যকর হয় না। এই পেশাজীবিরাও তাই পেশাদার হয়ে ওঠে না, চেষ্টাও করে না। পরিকাঠামোর যে সীমাবদ্ধতাটুকু আছে, সেটা তাঁরা অতিক্রম করতে পারতেন আন্তরিকতা দিয়ে, পেশাদারিত্ব দিয়ে। কিন্তু এই চাওয়াটুকু এই বাংলাদেশে অসম্ভব।
আমি যে রোগীকে নিয়ে গিয়েছিলাম, তার সমস্যা নিতান্তই সামান্য। কিন্তু আমার দেশের তাবড় তাবড় ডাক্তারগণ সেই সামান্য সমস্যাটাই সনাক্ত করতে তো পারলেন নাই, বরং গত দুই বছর ধরে ভূল চিকিৎসা করে সমস্যা জটিল করে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত অহংবোধ আমাদের ডাক্তারদের এতটাই বেশি যে তারা কোন রোগীকেই অন্য ডিসিপ্লিনের কোন বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করাকে রীতিমত অপরাধ গণ্য করে থাকেন।
আমাদের ভারতবন্ধু সরকার দরকারী অদরকারী বিভিন্ন কাজে ভারতীয়দের ইনভলব করছেন। সরকার যদি আরেকটু এগিয়ে আমাদের দেশের মেডিকেল শিক্ষায় ‘এটিকেট এন্ড ম্যানার’ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে ভারতীয় ডাক্তারদের এই কোর্সে নিয়োগ করে তো জাতী উপকৃত হত। বিভিন্ন চেতনা ও রঙে রাঙানো ডাক্তারি সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে, আখেরে আপনাদেরই লাভ। আমরা তো খরচ বেশি হলেও ভারত যাব, আরো বেশি টাকা থাকলে থাইল্যান্ড, সিংগাপুর, যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রে।
আমাদের অতি শিক্ষিত ডাক্তারদের অর্বাচীন আচরণের জন্যই প্রতিবছর কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ভারতে চলে যাচ্ছে, তা জানতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই, যশোর রোড দিয়ে একদিন কলকাতা গেলেই বোঝা যায়। চেন্নাই, ভেলোর, দিল্লীতো বাদ থাকলোই। চেন্নাই-দিল্লীতে আজ এশিয়া ছাড়াও ইউরোপ-আফ্রিকা-দক্ষিণ আমেরিকা থেকে রোগী আসছে। চিকিৎসা নিয়ে সানন্দচিত্তে দেশে ফিরে যাচ্ছে। অথচ আমাদের ডাক্তারদের সুযোগ ছিল এই বাজারটা ধরার। যদি তাঁরা একটু নিবেদিত হতেন।
ঠাঁট বাড়ানো, প্রদর্শনপ্রিয় সংস্কৃতির কারণে আমাদের সরকার বড় বড় স্থাপনা তৈরীকেই উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। ফলে, শিক্ষা, খাদ্য, চিকিৎসার মত মৌলিক বিষয়গুলো, যেখানে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিল, সেগুলো আজ অবহেলিত, মৃত। আজ তাই বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও সরকার দেনার দায়ে গলা পর্যন্ত ডুবে থাকে, জিপিএ ফাইভ এর বিস্ফোরণেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষায় পাশের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসে, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ফরমালিন আর ভেজালের কারণে মৃত্যুহার বাড়তে থাকে আর বিদেশে ঔষধ রফতানি শুরু করলেও দেশের রোগীরা সব কষ্টার্জিত টাকা ঢেলে আসে বিদেশে।
যশোর রোডে বাংলাদেশী রোগীদের এই যাত্রা সহসাই কমবে, এরকম কোন লক্ষণ পূর্বাকাশে দেখা যাচ্ছে না বরং আরো বাড়বে, সে সম্ভাবনাই প্রবল। আমাদের মহামহিম ডাক্তারবৃন্দ এই সত্যকে মোকাবেলা করতে না পারলে খুব শীঘ্রই গুলশান বনানীর ফ্ল্যাট আর ব্যক্তিগত বিলাসবহুল বাহনের স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হবে।
আপনারা প্রস্তুত আছেন তো?
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪০
পদ্মপুকুর বলেছেন: কি ঘটনা? শেয়ার করুন
২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমাদের প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানসহ সরকারী ও পার্টির লোক মরেছে সিংগাপুর, থাইল্যান্ডে; আমাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট কথায় কথায় থাকে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে; খালেদা যান আরব, শেখ হাসিনা যান ইউএস; বিএনপি'র মন্ত্রী মরলো সেদিন বিদেশে।
এরা বিদেশে চিকিৎসা নেয়; ফেল, দেশের চিকিৎসা নিয়ে মাথা ঘামায় না; মরার পর, এদের লাশ আনতে বাধা দিলে, হয়তো চোখে পড়বে।
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪২
পদ্মপুকুর বলেছেন: দেশ নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেইরে ভাই
৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫০
মার্কো পোলো বলেছেন:
ইন্ডিয়ানদের চেয়ে আমাদের দেশের ডাক্তারগণ কম নয়। ওরা যাই মনে করুক দোষ হচ্ছে আমাদের দেশের লোকের ও কিছু অসাধু ডাক্তার। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ডাক্তারগণ কমিশন পেতে তৎপর।
"কলকতাবাসীর মত অভব্য মানুষ সারা বিশ্বে বিরল। কথাবার্তায় তাঁরা রুক্ষ, আচরণে অসহিঞ্চু, আতিথ্যে কৃপণ, সহযোগিতায় অনিচ্ছুক।"
বাস্তব কথা বলেছেন। তাদের ম্যানার বলতে কিছু নেই। আমি তাদের সম্পর্কে এরকম অনেক অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি।
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৫
পদ্মপুকুর বলেছেন: টাকার লোভেই তো দেশটা গেলো
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২৬
কালীদাস বলেছেন: ১৪বছর আগে আমার অসম্ভব প্রিয় একজন মানুষ চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল ইন্ডিয়ায়। কিছু ঘটনা শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি আশা করি সবাই হয়ত একরকম না।