নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-আমি কিন্তু আপনার সিক্রেট জানি !!
নাদিবা এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল আমি খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম । ওর চোখ দেখেই মনে হল আসলেই ও এমন কিছু জানে যেটা ওর জানার কথা না । আমি তবুও নিজেকে খানিকটা শান্ত রেখে বললাম
-কি জানো তুমি ?
-আমি ভেবে দেখেন আমি কি জানতে পারি । আর যদি বিশ্বাস না করে তাহলে পরে টের পাবেন । লাইণটা বলে ও আবারও হাসলো । দুষ্টামী ভরা হাসি । আমি নিজের কাছেই খানিকটা অসহায় বোধ করলাম । মনে হল মেয়েটা আসলেই সত্যটা জেনে ফেলেছে ।
আমি হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গী করে বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে । মানলাম যে তুমি জানো । এখন ?
-কি এখন ? এখন আব্বুকে বলে দিবো !
আমি বললাম
-নাহ ! তোমার আব্বুকে বলার কোন প্রকার ইচ্ছে তোমার নেই । কারন সেটা বলতে চাইলে তুমি এমনিতেই বলে দিতে । এখন বল কি চাও ?
নাদিবা আবারও সেই হাসি দিলো । তারপর বলল
-আপনি বুদ্ধিমান । কিছু তো একটা জিনিস চাই ই । তবে সেটার এখন বলবো না । আপাতত ৫০০ টাকা দিন ।
-মানে ?
-মানে একদম পরিস্কার । ৫০০ টাকা দিন ।
একবার মনে হল না করে দেই । আজকে দিলে পরে আবারও টাকা চাইবে । মিথ্যা যখন বলেছি তখন এর ফল তো ভোগ করতেই হবে। তারপর মনে হল থাক, দেখা যাক কতদিন এভাবে থাকা যায় । এই ঢাকা শহরে ব্যাচেলর বাসা ভাড়া পাওয়া কত যে কষ্টের একটা কাজ সেটা যে খুজেছে কেবল সেই জানে । সেই তুলনায় এই ৫০০ টাকা দিয়ে যদি আর কটা দিন থাকা যায় তাহলে সেটাই সই । আমি পকেট থেকে ৫০০ টাকা বের করে দিয়ে বললাম
-এটাই কিন্তু শেষ । আমি কিন্তু পরে টাকা দিতে পারবো না ।
নাদিবা টাকা নিতে নিতে বলল
-সেটা দেখা যাবে !
আর দাড়ালো না । দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল । আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না আমার এখন কি করা উচিৎ । শোভার সাথে একটু আলোচনা করে দেখবো ? নাহ, ওরই বা কি করার আছে !
নাদিবাদের বাসাতে আছি গত তিন মাস ধরে । বলতে গেলে ঢাকায় আসার পরে এতো সুখে আর কোথায় ছিলাম কি না আমার জানা নেই । অফিসের একদম কাছেই বাসা । হেটে গেলে মাত্র ৫ মিনিটেই অফিসে পৌছানো যায় । পানি গ্যাসের বিদ্যুতের কোন সমস্যা নেই । নাদিবার বাবা মানে বাড়িওয়ালা আঙ্কেলও খুবই ভাল । ভাড়াটিয়া দের সাথে তার সম্পর্ক খুব ভাল তিনি সবার সাথে খুব ভাল ব্যবহার করেন ।
সব কিছু ঠিক কেবল একটা সমস্যা । তিনি বাসায় ব্যাচেলর ভাড়া দেন না । তবুও আমি বাসাটা ভাড়া নিয়েছি । সমস্যার কথা বললাম সেটা এখানেই । আমি একটু মিথ্যা করে কথা বলেই বাসাটা ভাড়া নিয়েছি । নাদিবার বাবাকে বলেছি যে আমি বিবাহিত । এবং বউ হিসাবে শোভাকে দেখিয়েছি ।
শোভা আমার ক্লাস মেইট এবং খুবই ভাল বন্ধু । একই সাথে পাশ করার পরে একই অফিসে কাজ করি আমরা । যখন আগের বাসাটাতে একটু ঝামেলা হচ্ছিলো থাকার জন্য, তখনই এই বাসাটার খোজ পাই । সব কিছু ঠিক ছিল বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে অন্য সব কিছু কেবল বিয়েটা নিয়ে ঝামেলায় বেঁধে গেল । বাড়িওয়ালা পরিস্কার জানিয়ে দিল যে অবিবাহিত কোন ছেলেকে তিনি বাসায় ভাড়া দিবেন না । তখনই মিথ্যা কথাটা বলে ফেললাম ।
বললাম যে বিয়ে হয়েছে কেবল উঠিয়ে নেওয়া বাকি । আকদ হয়ে আছে ।
আমার কথা শুনে একটু যেন মত বদলালো মনে হল কিন্তু পরে এই শর্ত দিল যে বউ নিয়ে আগে হাজির হতে হবে । নয়তো কাজ হবে না । একটু চিন্তায় ছিলাম যে বউ কোথায় পাই তখনই শোভা এগিয়ে এল সাহায্যের জন্য । ব্যস তখন থেকেই শোভা আমার বউ হিসাবে অভিনয় করে আসছে । অফিস টা যেহেতু কাছেই মাঝে মাঝে ও আমার বাসায় এসে হাজিরা দিয়ে যায় । বাড়িওয়ালা খুশি আমিও খুশি । তিনটা মাস খুব চমৎকার ভাবে কেটে গেল ।
আর আজকে এই নতুন ঝামেলা শুরু । অবশ্য সত্য একদিন না একদিন ঠিকই ঠিকই বের হয়ে যাবে এটা আমি জানতাম কিন্তু এতো জলদি হবে সেটা তো ভাবি নাই । তবুও মনে হল আপাতত মেয়েটা ওর বাবাকে কিছু বলবে না । বললে বলে ফেলতো এতোক্ষনে আর আমি মালপত্র নিয়ে চলে যেতাম বাসার বাইরে । এখনও যখন বলে নি তবে দেখা যাক সামনে আরও কতদিন থাকা যায় ।
পরদিন ঠিক রাত দশটার দিকে আবারো নাদিবা আমার ফ্ল্যাটের সামনে এসে হাজির । হাতে একটা কেক দেখে একটু অবাক লাগলো । আমি বললাম
-কি ব্যাপার ? কেক কিসের জন্য ?
-বারে টাকা দিলেন, কেক খাবেন না ?
-টাকা আমি দেই নি, তুমি নিয়েছো !
-ঐ একই কথা । যাই হোক আসুন কেক কাটি !
-কিসের জন্য ?
নাদিবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আজকে আমার জন্মদিন ছিল । কারো মনে নেই তাই ভাবলাম নিজের টা নিজেই সেলিব্রেট করি । পরে ভাবলাম নাহ আপনার সাথে কেক কাটা যাক !
এই বলে বসার ঘরেরটি টেবিলের উপরে কেকটা রাখলো । আমার দিকে খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
-আপনার বাসায় মোমবাতি নেই ?
-আছে ।
-কোথায় ?
-রান্না ঘরে !
-আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি ।
নাদিবা আবারও খুব স্বাভাবিক ভাবেই ঘরের ভেতরে চলাচল করতে লাগলো । যদিও আমি খানিকটা গুছিয়েই রাখি । আমার বাসা দেখলে ঠিক ব্যাচেলর বাসার মত মনে হয় না, তার উপরে আমাকে মিথ্যাটা খানিকটা ঢাকতে হয় । ফ্যামিলি বাসার মতই আমার ফ্ল্যাট টা তবুও আমি তো জানি । এই বাসার ভেতরে একটা মেয়ে নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করলে একটু তো অস্বস্থি তো লাগারই কথা । নাদিবা মোম আর ম্যাচ নিয়ে এসে আমার সামনে এসে বসলো । তখনই আমার মনে হল মেয়েটা মিথ্যা বলছে । আজকে মেয়েটার জন্মদিন নয় কোন ভাবেই । যতদুর জানি পরিবারের এক মাত্র মেয়ে ও । ওর জন্মদিনের কথা ওর বাবা মায়ের ভুলে যাওয়ার কথা নয় মোটেও ।
আমি বললাম
-আজকে তোমার জন্ম দিন নয় ।
-কে বলল আপনাকে ? শুনুন সবাই আপনার মত মিথ্যা বলে না ।
-আমি মিথ্যা বলি না ।
-তাহলে বাবাকে কেন মিথ্যা বলেছেন ?
-কেন বলেছি তুমি জানো খুব ভাল করেই ।
-তাহলে এখন আমি কেন মিথ্যা বলছি সেটাও আপনার জানা উচিৎ !
এই লাইনটা বলে নাদিবা বেশ কিছুটা সময় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো এক ভাবে । আমি সেই চোখের দিকে বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারলাম না । চোখ সরিয়ে নিয়ে বললাম
-এতো রাতে আমার ঘরে এসেছো তোমার বাবা মা জানলে সমস্যা হবে না ?
-উহু । আব্বুর মাথা ধরেছে । শুয়ে আছে । আর আম্মু নামাজে ! লম্বা সময় লাগবে ! আসুন তো, কেক কাটি । খুব কেক কাটতে ইচ্ছে করছে ।
এই বলে নাদিবা মোম বাতি জ্বালালো । তারপর উঠে গিয়ে লাইট অফ করে দিলো । ঘরের ভেতরে কেবল মোম বাতির আলো জ্বলে আছে । আমি টি টেবিলের একপাশে বসলাম নাদিবা বসলো অন্য পাশে । সত্যি বলতে কি অন্য রকম লাগলো । আমার দিকে তাকিয়েই নাদিবা কেক কাটলো তবে মোমবাতি নেভালো না । কেক কেটে একটা কেটের টুকড়ো আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । আমি হাত দিয়ে নিতে চাইলে ও বলল
-উহু ! হাত দিয়ে নয় খাইয়ে দেই ।
-কেন ?
-কেন সমস্যা কি যদি আমি খাইয়ে দেই ?
-সমস্যা তো আছে । আসলে আমি তোমার আচরন টা ঠিক ধরতে পারছি না । তমি আমার কাছে কি চাচ্ছো ?
এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নাদিবা কেবল হাসলো । কেকের টুকরো টা আমার দিকে আরেকটু বাড়িয়ে দিল । আমি এক কামড় দিলাম ।
নাদিবা বলল
-এই কেক টা কেন খাওয়ালাম জানেন ?
-না । কেন ?
-জানবেন !
এই বলে আবারও সেই রহস্যময় হাসি । আমি আসলেই মেয়েটার আচরনের মাথা-মন্ডু কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । তবে মেয়েটা কোন কারনে খুব বেশি খুশি হয়ে আছে । সেই কারন টা আমি ঠিক ধরতে পারছি না । কিংবা মেয়েটা নিজেও সেটা জানে না ।
নাদিবা বলল
-আপনার ঘরের এক্সট্রা চাবি আছে না ?
-কেন ? কি দরকার ?
-আহ ! আপনি খুব বেশি প্রশ্ন করেন । এতো প্রশ্ন করবেন না । বিশেষ করে আমার কাছে এতো প্রশ্ন করবেন না । ঐ ঘরের চাবিটা আমাকে দিবেন !
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আসলে নাদিবা কি করতে চাচ্ছে ! আমার সাথে এমন আচরনই বা কেন করছে ? এমন আচরন করাটা কোন ভাবেই আমারকাছে ভাল লাগছে না !তবে আমার কাছ থেকে ফ্ল্যাটের চাবি সে ঠিকই নিয়ে গেল ।
এরপর থেকে আমি যখনই বাসায় আসতাম ঠিকই বুঝতে পারতাম কেউ আমার বাসায় ঢুকেছিলো । কে ঢুকেছিলো সেটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না । তবে আমি সেটা মেনে নিলাম । মেনে না নিয়ে অবশ্য কোন কিছু করারও ছিল না । নাদিবা আমার সিক্রেট টা জানতো । তবে মেনে নেওয়ার আরও একটা কারন ছিল যে মেয়েটা আমার বাসার চেহারা আস্তে আস্তে বদলে দিচ্ছিলো । বিশেষ করে মেয়েটা সব কিছু গুছিয়ে রাখতো । আর আমি প্রায়ই দিনেই বাসায় দেখতাম রান্না ঘরে নয়তো ফ্রিজে কিছু না কিছু রান্না করাই আছে । মানে ভারি কিছু না, হালকা নাস্তা কিংবা ডেজার্ট টাইপের কিছু ।
তবে সব চেয়ে মেজাজ গরম হত নাদিবা যখন আমার ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়তো । কোন বারন শুনতো না । আরও মাস খানেক যাওয়ার পরে একদিন অফিস থেকে বাসায় ঢুকতে যাবো দেখি ভেতর থেকে দরজা আটকানো । বুঝতে পারলাম নাদিবা ভেতরে আছে । কয়েকবার কলিংবেল বাজানোর পরে ভেতর থেকে পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল । দরজা খুলল একটু পরেই । আমি নাদিবা কে দেখে একটু ধাক্কার মত খেলাম । মেয়েটা আজকে শাড়ি পরে আছে । তার উপর মাত্রই গোসল করেছে বুঝতে পারলাম । আমার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-গোসল করছিলাম । একটু সময় তো দিবেন নাকি ?
আমি সংকিত কন্ঠে বললাম
-এখানে কেন গোসল করছো ?
-আমাদের বাসায় মেহমান ভর্তি । বাথরুম খালি পাওয়া যাচ্ছে না ।
আমার নিজের ঘরই আমার কাছে কেমন যেন অপরিচিত মনে হতে লাগলো । মেয়েটা পুরো ঘরের ভেতরে কেমন নিজের দখল কায়েম করে ফেলছে । তবে মাঝে মাঝেই ভয় পেতাম যে যদি ওর বাবা এসব জেনে ফেলে তাহলে কি হবে কে জানে !
মনের কথা মনেই রয়ে গেল । ঠিক তার পরের সপ্তাহে নাদিবার বাবা এসে আমাকে বাসা ছেড়ে দিতে বলল । আমি কারন জানতে চাইলেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন । আমি কিভাবে তাকে বোকা বানিয়েছি সেটা বললেন । তারপর আমাকে এই মাসের ভেতর বাসা ছেড়ে দিতে বললেন । আর বেশি কথা বললে কালকেই মাল পত্র নিয়ে আমাকে বাসা থেকে নামিয়ে দিবে এও বললেন ।
আমার তো মাথায় হাত । জানতাম এমন একটা দিন সামনে আসবে । তবে এতো জলদি আসবে সেটা আমি বুঝতে পারি নি । সব কিছু যখন ভালই চলছিলো ।
রাতের বেলা নাদিবা মাথা নিচ করে আমার রুমে আসলো । ওর মন খারাপ দেখেই বুঝতে পারছি না । সত্যি বলতে কি আমার বাসা ছাড়তে হবে এটা ভেবে যতটা খারাপ লাগছে তার থেকেও খারাপ লাগছে নাদিবার কাছ থেকে চলে যেতে হবে এটা ভেবে । মেয়েটার ভেতরে অন্য রকম কিছু আছে । আমি চাইলেও সেটা থেকে দুরে থাকতে পারছি না কদিন থেকে । বিশেষ করে কেমন যেন আপন মনে হচ্ছে ওকে ।
ওকে আমার সামনে বসতে বসতে কাঁদতে শুরু করলো । একটু অপ্রস্তুত হয়ে আমি বললাম
-আরে সমস্যা কিসের ? আমি তোমাদের বাসা ছেড়ে চলে যাবো, ঢাকা ছেড়ে তো আর যাচ্ছি না ।
-আমার জন্য আপনাকে চলে যেতে হচ্ছে । আমার জন্য !
-কেন ? তুমি আবার কি করলে ?
-আমি বাবাকে বলেছি যে আপনি বিবাহিত নন !
-সেকি! কেন ?
-বাবা আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখছে । কোথাকার কোন আমেরিকা ফেরৎ ছেলে দেশে এসেছে বিয়ে করতে । আমাকে একখন তার গলায় ঝুলে পড়তে হবে ।
-তারপর ?
-আমি বললাম আমি ওকে কিছুতেই বিয়ে করবো না । আমি আপনাকে বিয়ে করবো ।
আমি নাদিবার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম ! বললাম
-তুমি এই কথা তোমার বাবাকে সরাসরি বলেছো ?
-আমি যেমন করে আমার দিকে তাকাচ্ছেন বাবাও ঠিক একই ভাবে তাকিয়ে ছিল । বলল যে বিবাহিত মানুষকে কেন বিয়ে করবি ?
-আর তখন তুমি বলে দিলে যে আমি বিবাহিত নই !
-সরি ! আমি আর কি বলতাম !
আমি আর কি বলব খুজে পেলাম না । একটু আগে মেয়েটাকে ছেড়ে চলে যাবো এই ভেবে খারাপ লাগছিলো এখন মেয়েটার উপর মেজাজ গরম হচ্ছে । মেয়েটার জন্য আমার এতো চমৎকার থাকার জায়গাটা ছেড়ে দিতে হবে ।
-সরি !
-সরি বললে সব সমাধান হয়ে যাবে ?
-না !
-তাহলে বলে কি লাভ ?
নাদিবা বাচ্চা মেয়ের মত মুখ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি কি বলব খুজে পেলাম না । চুপচাপ বসে রইলাম । কাল থেকে আবার বাসা খুজে বের করতে হবে !
মাসের শেষ দিনে নাদিবার বাবা এসে হাজির ! আমার ঘরে ঢুকে খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর বলল
-কি ব্যাপার ? তুমি জিনিস পত্র গোসগাছ করছো না কেন ?
-কারন আমি যাচ্ছি না !
আমি ভেবেছিলাম নাদিবার বাবা আমার কথা শুনে রেগে যাবেন । তবে তিনি রেগে গেলেন না । আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন
-দেখি তুমি খুব ভাল ছেলে আমি জানি । তোমার সাথে আমি খারাপ ব্যবহার করতে চাই না । কালকের ভেতরে যদি বাসা না ছাড়ো তাহলে তোমাকে কিন্তু ....
তিনি আমাকে কি করবেন সেটা আর মুখ দিয়ে বললেন না । আমি বললাম
-আচ্ছা ভাড়াটিয়া হিসাবে আমি কেমন ছিলাম এই কয়মাসে একবার বলুন ? বাসা ছেড়ে দেওয়ার মত এমন একটা কাজও কি আমি করেছি ? বলুন করেছি ?
নাদিবার বাবা কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । ভাড়াটিয়া হিসাবে আমি আসলেই ভাল ছিলাম সেটা উনি কোন ভাবেই অস্বীকার করতে পারবেন না ।
নাদিবার বাবা বলল
-তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছো । আমার বাসায় কোন ব্যাচেলর থাকবে না !
-ব্যাচেলর না হলে সমস্যা নেই তো ?
-না ! নেই । কিন্তু তুমি ব্যাচেলর !
-কে বলেছে আপনাকে ?
-কে বলেছেন মানে ? নাদিবা বলেছে ! আমি খোজ নিয়েছি !
-তাই ? নাদিবা বলেছে ?
আমি জোরে নাদিবার নাম ধরে ডাক দিলাম । আমার ডাক শুনে নাদিবা আমার শোবার ঘর থেকে বের হয়ে এল । ওকে দেখে ওর বাবা আরও বেশি অবাক হয়ে গেল । উনি আসলে নাদিবাকে কোন ভাবেই এখানে আশা করে নি । আমি ওনাকে অবাক অবস্থায় থেকে আরও একটু অবাক করে দিতে নাদিবার দিকে তাকিয়ে বললাম
-তুমি নাকি বলেছো আমি অবিবাহিত ? তাই ?
নাদিবা একবার আমার দিকে তাকালো । তারপর ওর বাবার দিকে । তারপর ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-না বাবা । ও অবিবাহিত না । বিবাহিত !
নাদিবার বাবার মাথায় কিছু ঢুকছে না । উনি আসলে ঠিক বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে !
নাদিবা বলল
-আমরা গত সপ্তাহে বিয়ে করেছি বাবা !
আমি ভেবেছিলাম এই লাইণটা শোনার পর নাদিবার বাবা হুংকার দিয়ে উঠবে । কিন্তু তিনি কিছুই করলেন না । একবার আমার দিকে আরেকবার নাদিবার দিকে তাকাতে লাগলো । আমার তখনই মনে হল উনি এই ধাক্কাটা নিতে পারবেন না । সত্যি সত্যিই পারলেন না । ওনার পা দুটো একটু টলে উঠলো । আমি জলদি গিয়ে ওনাকে ধরে ফেললাম । নয়তো পড়ে যেতেন ।
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
-তোমরা এই কাজটা করতে পারলা ? আমি তোমাকে আমার ছেলের মত দেখতাম !
নাদিবে সামনেই দাড়িয়ে ছিল । ফট করে বলল
-বাবা আমরা সেই করেছি । তুমি ওকে ছেলের মত দেখতে আমি তোমার দেখাটা আরও একটু পাকাপোক্ট করে দিয়েছি । এখন কেবল জামাইয়ের মত দেখবা !
-এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো । বেয়াদব । নিজের বিয়ের কথা বলতে লজ্জাও করছে না !
আমি আমার সদ্য হওয়ার শ্বশুর মশাইকে আমার সোফায় উপরে বসিয়ে দিলাম । শকটা আপাতত কাটিয়ে উঠেছে মনে হচ্ছে । তবে আমার মনে হয় না উনি আর বেশি চিৎকার চেঁচামিচি করবেন । কারন জামাই হিসাবে আমি মোটেই খারাপ নই । আমি নাদিবার বাবাকে বললাম
-আমি কি আমার বাবার নাম্বারটা আপনাকে দিবো ? বাবা আপনার সাথে গত সপ্তাহ থেকেই কথা বলতে চাইছেন । ওনাদের সামনেই আমি নাদিবাকে বিয়ে করেছি । আন্টিও ছিল !
নাদিবার বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আন্টি মানে ?
আমি কি জবাব দিব, তার আগেই নাদিবা বলল
-তোমার বউ বাবা !!
আমি নাদিবার দিকে তাকালাম । মেয়েটার ভেতর থেকে এখনও ছেলে মানুষী গেল না ।
নাদিবার বাবা বলল
-বাহ । সবাই দেখি জানে ! কেবল আমিই জানি না ! বাহ খুব ভাল ! তাহলে আমি একা আর কি করবো !
তারপর কিছু সময় চুপ থেকে বলল
-দাও নাম্বার দাও । কথা বলি !!
পরিশিষ্টঃ
আমাকে আর বাসা বদলাতে হয় নি । এর পর থেকে আমাকে আর বাসাও ভাড়া দিতে হয় নি অবশ্য । যদিও এখনও ওকে তুলে নেই নি । বলেছি আগে ওর পড়ালেখা শেষ হোক তারপর না হয় ধুমধাম করে করে বিয়ে হবে । ততদিন পর্যন্ত আমি বিবাহিত ব্যাচেলর হয়েই থাকি !
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৮
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫৮
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গত ৩/৪ দিন থেকে বসে বসে আপনার গল্পগুলোই পড়ছি। আজ নতুন গল্পটি পড়লাম। অামি এমনিতে আপনার ভক্ত পাঠক।
অনেক ভাল লিখেন যার তুলনা আপনি নিজে। অপু তানভির ইজ দ্যা গ্রেট। ভাল থাকবেন সেই কামনাই ।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০১
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !! অনেক ধন্যবাদ
৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০৬
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ভালো।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:২৮
অপু তানভীর বলেছেন:
৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৭
মার্কো পোলো বলেছেন:
বাহ! চমৎকার।
ভাল লাগলো।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২৭
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহা!
আবার ব্যাচেলর হইতে মুঞ্চায়
+++++++++++
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৫
অপু তানভীর বলেছেন: হইয়া পড়েন । কেডা মানা করছে !
৬| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪২
মেহেরুন বলেছেন: গল্প বেশ ভালো লাগলো। ++++++
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৭
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১৫
মেহেদী হাসান সাব্বির বলেছেন: বরাবরের মতই অস্বাধারন গল্প ।
আপনার প্রায় প্রতিটি গল্প আমি পড়েছি। প্রায় প্রতিটির মধ্যে কেমন যেন আকর্ষণীয় ভাব থাকে ।
তবে আমার পড়ার মধ্যে সব চেয়ে সুন্দর গল্প হলো আপনার লেখা গল্পঃ দ্বিতীয় বাসর রাত
যখনই মন খারাপ থাকে এই গল্প টি পড়ি বেশ ভালো লাগে ।
আশা করি সামনেও এমন সুন্দর গল্প আমরা পড়তে পারব ।
ধন্যবাদ ।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪৫
অপু তানভীর বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ !
আমারও পছন্দের গল্প ওটা !
৮| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪২
rakhal rajib বলেছেন: চমৎকার বুনট।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪৭
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৯| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০৮
বর্ষন হোমস বলেছেন: মচৎকার লাগল
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩০
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
১০| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩৭
যোবায়ের মোমিন বলেছেন: বেশ অনেকদিন পর সামুতে এলাম। ভাল লাগলো গল্পটা
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩১
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
১১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩৯
রিপি বলেছেন: Congrats! he he
darun LagLo! Tobe repost mone hocche!!
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩২
অপু তানভীর বলেছেন: নাহ ! রিপোস্টের কোন চান্স নেই ।
১২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৪
মিজানুর সাই বলেছেন: সাধারন নয় গল্পটা! অনেক সুন্দর ধন্যবাদ তানভীর ভাই
২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
১৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৭
সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: দারুন
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:২৬
অপু তানভীর বলেছেন:
১৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১৬
চিন্তক মাস্টারদা বলেছেন: বেসম্ভব তো!
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০২
অপু তানভীর বলেছেন:
কি বেসম্ভব ? কোন কিছুই বেসম্ভব নয় !
১৫| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৪
বুলবুল ৩৩৩ বলেছেন: খুবই চমৎকার । আপনাদের জন্য অনেক শুভকামনা।
২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২২
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
১৬| ৩১ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৪
খাঁজা বাবা বলেছেন: বেশ বেশ
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৫
আলী আজম গওহর বলেছেন: গল্পের নাম ও কাহিনী দুটিই খুব মজার।চমৎকার গল্পের জন্য ধন্যবাদ অপু তানভীর ভাই।