নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার কাছে ঘুমের মত আরামদায়ক আর দামী জিনিস আর কিছু নেই এই দুনিয়াতে । সব কিছু ত্যাগ করে আমি কেবল ঘুমাতেই পছন্দ করি । মাঝে মাঝে সকালে মা এসে আমাকে উঠানোর চেষ্টা করে । অবশ্য যখন ক্লাস থাকে তখন না উঠে পারা যায় না । এখনও বাবার বাসায় থাকি তাই না উঠে কোন উপায় নেই । কিন্তু যখন ছুটির দিন গুলোতে এসে এরকম বিরক্তিকর কাজ করতে থাকে তখন মনে হয় দুনিয়া ছেড়ে চলে যাই বনে জঙ্গলে ।
ছুটির দিন গুলোতে একটু সকাল হলেই মা এসে বলবে
-এই উঠে পড় । রোদ উঠে গেছে ।
আমি ঠিক বুঝি না রোদ উঠার সাথে আমার ঘুম থেকে উঠার সম্পর্ক কি । আমি তো গাছ না যে সকালে রোদ উঠলেই আমাকেও সালেকসংস্লেশন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে । কিন্তু এই কথা মাকে কিভাবে বুঝাবো !
আজকে ছুটির দিনে যখন আরতি এসে আমাকে উঠতে বলল আমি তখন ওকে বিরাট একটা ধমক দিলাম । আরতি তাতে বিন্দু ভ্রুক্ষেপ না করে মুচকি হেসে বলল
-তলে তলে এতো দুর ? আমাকেও বললি না ?
আমি এক চোখে খুলে ওর দিকে কিছু সময় বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে রইলাম । বললাম
-যাবি না মাইর খাবি ?
-আজকে কে মাইর খায় দেখা যাবে ।
-কি আজে বাজে কথা বলতেছিস ।
-তুই বিয়ে করেছিস একবার বললিও না আমাকে ?
আমি এবার খানিকটা চমকালাম । আমি বিয়ে করেছি আর এটা আমি নিজেও জানি না । স্বপ্ন দেখছি না তো । আমি আবার বিয়ে করলাম কবে ? কিন্তু আরতির মুখ দেখে কেন জানি মনে ও ইয়ার্কি মারছে না । আরতি বলল
-তোমার বউ ড্রয়িং রুমে বসে আছে । দেখো গিয়ে । কাবিন নামা সাথে করে নিয়ে এসেছে ।
আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে সোজা দৌড় দিলাম ড্রয়িং রুমের দিকে । অন্যান্য দিনে এই সময়ে বাবা অফিসে চলে যায় । আজকে ছুটির দিন বিধায় বাসায় আছে । আমি ড্রয়িং রুমে এসে একটা বড় ধরের ধাক্কা খেলাম । আব্বার সামনে নাইরা বসে আছে মাথা নীচু করে । কালো রংয়ের একটা সেলেয়ার কামিজ পরে আছে । মাথায় কাপড় দেওয়া । আমি রুমে ঢুকতেই দুজনেই আমার দিকে তাকালো । বাবার চোখে দেখে মনে হল আমাকে পারলে এখনই চিবিয়ে খেয়ে ফেলে । কিন্তু নাইরা আমার দিকে এমন চোখে তাকালো যে আমি বুঝে গেলাম যে আমার আসলেই খবর আছে । এই মেয়ে পারে এমন কোন কাজ নেই ।
দুই
নাইরা আমার সাথেই পড়াশুনা করে । আরও ভাল করে বলতে গেলে ক্লাসে আমাদের সাথেই ঘোরাফেরা করে । আমাদের বলতে আমাদের যে গ্রুপটা আছে তার সাথে । ওর সাথে আমার পরিচয়ের ব্যাপারটার মধ্যে একটা গল্প আছে । যখন প্রথমে আমরা ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম সেই সময়ে নাইরার দিকে আমাদের ক্লাসের সবারই চোখ ছিল । থাকারই কথা, সুন্দরী মেয়েদেরকে সবাই পছন্দ করে আমিও তার ব্যতীক্রম না ।
প্রায় সব সুন্দরী মেয়েদের মত নাইরার ভেতরেও তার সৌন্দর্য্য নিয়ে খানিকটা গর্ব ছিল । সে যা বলবে সব ছেলেই সেটা করবে এমন একটা আত্মবিশ্বাস তার ভেতরে ছিল । এবং বছর খানেক যেতে না যেতেই সেটা হতেও লাগলো । আমিও যে ওর অনুরোধ ফেলতে পারতাম না সে কথা আমি অস্বীকার করবো না । আস্তে আস্তে ও আমাদের গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে গেল । আমরা এক সাথে আড্ডা দিতাম । গল্প করতাম সব কিছুই চলতো । আমি যে ওকে টুকটাক পছন্দ করতাম সেটা ও খুব ভাল করেই বুঝতে পারতো । এই জন্য ওর অবদার খানিকটা আমার উপরে থাকতো বেশি । আমি খুশি মনেই কাজ গুলো করতাম । ওর ভাল লাগলে আমারও লাগতো । এভাবে চলতে গিয়েই একদিন ঝামেলা বেধে গেল । ওর সাথে শপিং এ গেছি । আরও ভাল করে বলতে ওর কেনা ব্যাগ গুলো টানতে গেছি । যাই হোক আমার সমস্যা ছিল না । ওর সাথে থাকতে পারতেছি এটাই আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় ছিল । কেনা কাটা শেষে ও ওয়াশরুমের দিকে হাটা দিল । ওয়াশরুমের সামনে এসে ওর হ্যান্ড ব্যাগটা আমার দিকে বাড়িয়ে বলল
-এটা একটা রাখো তো !
আমি কিছু সময় ওর ব্যাগের দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম
-ব্যাগটা সাথে করে নিয়ে যাও !
-কেন রাখলে সমস্যা কি ?
-সমস্যা আছে । আমি মেয়েদের ব্যানিটি ব্যাগ ধরবো না !
নাইরা খানিকটা সময় আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল
-কেন ? শপিং ব্যাগ গুলো নিতে পারলে এই ব্যাগ নিতে সমস্যা কোথায় ?
-সমস্যা আছে । তুমি বুঝবে না । শপিং ব্যাগ, বাজারের ব্যাগ সব নিতে রাজি আছি কিন্তু ভ্যানিটি ব্যাগ না !
-আমি বলছি রাখো, দু মিনিট লাগবে !
-নাইরা আমি বলেছি না দুমিনিট কেন দুই সেকেন্ড লাগলেও আমি তোমার হ্যান্ড ব্যাগ ধরবো না । আর তুমি কেন এদেশের প্রধানমন্ত্রী এসে বললেও আমি সেটা করবো না !
নাইরার মুখে এবার একটু রাগ দেখতে পেলাম । যে মেয়েটা সব সময় হ্যা শুনে এসেছে তার জন্য না শুনতে পারাটা একটু অস্বাভাবিকই বটে । আমার হাতের অন্যান্য শপিং ব্যাগ গুলো ও হাতে নিয়ে সোজা ওয়াশ রুমের দিকে হাটা দিল । মনে মনে বললাম মনে হয় এবার একটা ঝামেলা শুরু হয়ে গেল । ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আমার দিকে না তাকিয়ে সোজা হাটা দিল । এমন একটা ভাব যেন আমাকে চিনেই না । ডাকতে গিয়েও আমি ওকে ডাকলাম না । দাড়িয়ে রইলাম কিছু সময় ।
এরপর থেকে নাইরাকে একেবারে আমার লাইফ থেকে গায়েব করে দিলাম । ও ভেবেছিলাম আমি হয়তো পরের দিনই ওকে গিয়ে সরি বলবো । এমনটা আর হবে না এমন কিছু একটা বলবো কিন্তু আমি ওর ধারে কাছে যাওয়া বন্ধ করে করে দিলাম । আমাদের বন্ধুদেরও ব্যাপারটা বুঝতে দেরি হল না যে নাইরার সাথে আমার কিছু একটা হয়েছে ।
নাইরার সাথে অবশ্য আমাদের গ্রুপের ছেলে মেয়েরা ঠিক ঠিকই মিশতে লাগলো । আমাদের আড্ডাতেও সে আসতে লাগলো নিয়মিত । তীব্র ভাবে মানুষকে যেমন করে ইগনোর করা সম্ভব ঠিক সেভাবেই আমি ওকে ইগনোর করা শুরু করলাম । এবং এটাই মনে হয় ওর ঠিক সহ্য হল না । সুন্দরী মেয়েরা অবহেলা জিনিসটা কিছুতেই সহ্য করতে পারে না । এক সময় ও যখন বুঝলো যে আমি কোন ভাবেই আর ওর কাছে যাবো না তখন ও আমার কাছে আসার কথা ভাবলো । আসলে আমি ওকে বাদ দিয়ে আমাদের গ্রুপের অন্য সব মেয়েদের সাথে কথা হাসি ঠাট্টা এমন কি গ্রুপের বাইরে ক্লাসের মেয়েদের সাথে আড্ডা চালিয়ে যাচ্ছিলাম ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছিলাম না এটা ওর মনে হয় সহ্য হচ্ছিলো না । এভাবে আরও মাস তিনেক কেটে গেল ।
তিন
আমার সত্যি সত্যিই ভয় লাগতে শুরু করলো । এই মেয়ের সমস্যা কি ! এখানে কেন ? আর সামনে ওটা কি !
আমি তাকিয়ে দেখি বাবার সামনের টেবিলে একটা কাগজ রাখা । বাবার চোখ ওটার দিকে ! আমার এখন কি করা উচিৎ ?
একবার মনে হল সামনের খোলা দরজা দিয়ে একটা দৌড় দেই কিন্তু পরে মনে হল যাবো তো যাবো কোথায় ? পরে তো আবার এখানেই আসতে হবে । আমি আরও একটু সামনে এগিয়ে গেলাম । নাইরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি তোমাকে বলেছিলাম আমি চলে আসবো ?
-কবে বললে ? কি বললে ? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না !
বাবা চিৎকার করে উঠলো ।
-হারামযাজা বুঝতে পারছিস না ? একা একা বিয়ে করে বুঝতে পরছিস না ? এক্ষুনি বের হয়ে যা । আমার বাড়ি থেকে এক্ষুনি বের হয়ে যা !
আমার বাবা অবশ্য রাগ এমনিতে বেশি । সে মাঝে মাঝেই আমাকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে । কেবল আমাকে না আমার মা বোন বাড়ির চাকর সবাইকেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে । এমন কি যারা এ বাড়িতে থাকে না তাদের কেও বলে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে । আমি আব্বাকে বলার চেষ্টা করলাম যে
-আমি আসলেই কিছু জানি.....
কিন্তু আরেকবার ধমক খেলাম । মনে হল আব্বাকে কিছু বলা বৃথা । আমি নিজের ঘরের দিকে রওনা দিলাম । বুঝতে পারলাম আসলে কি করবো । আব্বার সামনে যে কাগজটা রয়েছে সেটা খুব সম্ভবত বিয়ের কাবিন নামা । আব্বার দেখছে তার মানে সেটা ভুল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এমন টা কিভাবে হল ? কাবিন নামায় আমার সাক্ষর টা কিভাবে পেল ওরা !
আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল তখনই দেখলাম যে নাইরা আমার ঘরের দরজায় দাড়িয়ে । আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই নাইরা বলল
-খুব অবাক লাগছে ?
-তুমি আসলে কি করছো কিংবা করতে চাচ্ছো আমি বুঝতে পারছি না ?
-বুঝতে পারছো না ? পারবে ! ভাল করেই পারবে ।
-মানে কি এসবের ?
-মানে তো আসেই । আমাকে তুমি যেভাবে ইগ্নোর করেছে এর ফল তোমাকে পেতে হবে ।
-মানে কি ?
-মানে এটাই । এখন থেকে আজ থেকে তুমি আমাকে সহ্য করে যাবে ! যেতে বাধ্য হবে ।
চার
ধানমন্ডির আল-ফ্রাস্কোর সামনে দাড়িয়ে আছি বেশ কিছুক্ষন । বন্ধুদের একটা আড্ডার কথা আছে এখানে । আমি দাড়িয়েই আছি । একটু আগে সজিবকে ফোন দিলাম । ও বলল যে আসতেছে । কিন্তু আসার নাম নেই । তখনই নাইরা কে নামতে দেখলাম রিক্সা থেকে । এবং রিক্সা থেকে আমার দিকে তাকিয়ে খুব সহজ ভাষায় বলল
-তোমার কাছে ২০ টাকা হবে ? আমার কাছে ভাঙ্গতি নেই ?
এমন একটা ভঙ্গিতে বলল যে আমার সাথে ওর কত দিনের পরিচয় ! না মানে, পরিচয় আছে অনেক দিনে । কিন্তু এভাবে স্বাভাবিক ভাবে কথা তো বলি নাই আমরা । আমি কিছু না বলে পকেট থেকে ২০ টাকা বের করে দিলাম ।
রিক্সাওয়ালাকে টাকা দিয়ে নাইরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-চল ভেতরে যাই ?
আমি যথা সম্ভব স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম
-তুমি যাও আমি আসছি । ওরা আসুক !
-ওরা চলে আসবে । আসো প্লিজ ! আমি একা একা বসে কি করবো !
একবার মনে হল বলি যে তুমি একা একা কি করবে সেটা আমি কিভাবে বলবো । কিন্তু সেটা বললাম না । আর কদিন থেকেই নাইরাকে কেমন যেন একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে !
আমি ওর সাথে করেই রেস্টুরেন্ট ঢুকলাম । একটা টেবিল থেকে দুজন বসলাম । এমন মানুষের সামনে বসে থাকা খানিকটা অস্বস্থিকরই বটে যার সাথে আমি কথা বলা বন্ধ করেছি অনেক আগে ।
-অর্ডার দেই ?
-ওরা আসুক !
-দিয়ে দেই । ওরা আসতে থাকুক !
ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে গেলে আমার কেমন জানি সন্দেহ হল । আমি ফোন বের করে সজিবকে ফোন দিতে যাবো তখনই নাইরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কাকে ফোন দিচ্ছো ?
-ওরা কত দুর দেখি !
-ওরা কেউ আসবে না ।
-মানে কি ?
-মানে ওরা কেউ আসবে না । আমি আর তুমি ?
-এসেবের মানে কি ?
-আসলে তুমি তো আমাকে এভোয়েড করেই চলেছো এই একটা বছর ধরে ! আমার আচরন তোমার কাছে ভাল লাগে নি তাই বলে এভাবে কাউকে ইগ্নোর করতে হয় ?
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম ।
নাইরা বলল
-কি করলে আবার সব কিছু আগের মত হবে বলবে আমাকে ?
আমি তখনইও চুপ করে রইলাম ।
-দেখো, আমার ঐ কাজটা করা উচিৎ হয় নি । আসলে সব সময় আমি এমন করি আর সবাই মেনেও নেয় তো তাই । অভ্যাস হয়ে গেছিলো ! সরি !
আমি কিছুটা সময় চুপ করেই রইলাম । কি বলবো বুঝতে পারলাম না । একবার মনে সব কিছু ভুলে যাই আবার মনে হল হঠাৎ এই মেয়ে আমাকে সরি কেন বলছে । কোন কারন কি আছে । অবশ্য এই একটা বছর আমি ওকে আসলেই প্রবল ভাবে ইগ্নোর করে চলেছি । ওর সাথে এমন ভাবে আচরন করেছি যেন ও আমার জীবনে নেই ই । চোখের সমানে এমন করে চললে যে কারো পক্ষে সেটা স হ্য করা একটু কষ্টকরই বটে ! আমি আর রাগ ধরে রাখলাম না !
ব্যাস তারপর থেকেই আবারও নাইরার সাথে মিল হয়ে গেল । কিন্তু একটা ব্যাপার ঠিকই লক্ষ্য করতাম যে নাইরা আমার সাথে আগের থেকেও যেন একটু বেশি বেশি মিশতে শুরু করলো । আমার অবশ্য খারাপ লাগছিলো না ব্যাপারটা ।
পাঁচ
আমি নাইরার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আর নাইরা এমন একটা ভাব করছে যেন কিছুই হয় নি । আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না কি করবো । কারন বাবার সামনে যে কাগজটা রয়েছে সেটা আসলেই আমার আর নাইরার কাবিন নামাই । আর আমার সাক্ষরটাও জাল না । কিন্তু আমি কোন ভাবেই মনে করতে পারলাম না যে আমি কবে এখানে সাক্ষর করলাম ।
বাবা এবার আমার দরজার সামনে এসে হুংকার দিয়ে বলল
-কি তুই এখনও বের হস নাই বাসা থেকে !
-বাবা শুনবে .....।
-চুপ । একটা কথা না । এই মুহুর্তে বের হ আমার বাসা থেকে । এক্ষুনি !
আমি আর কথা বাড়ালাম না । এখন কিছুই আমার হাতে নেই তাই বের হয়ে যাওয়াই ভাল । আমাকে বের হতে দেখে দেখি নাইরাও আমার পেছন পেছন আসতে লাগলো । তখন আবারও বাবার হুংকার শুনতে পেলাম । তবে এবার আমার উদ্দেশ্য করে কিছু বলল না । নাইরে বলল কথাটা !
-কি ব্যাপার তুমি কোথায় যাচ্ছো ?
নাইরা কি বলবে খুজে পেল না ।
-তোমার বের হতে বলেছি ! ব্যাগ নিয়ে আরতি রুমে যাওয়া । তোমাদের ব্যবাস্থা আমি পরে করছি । কিন্তু এই গাধাটা থাকবে না আমার বাসায় !
আমি বাসা থেকে বের হতেই আমার মাথার ভেতরে একটা কথা মনে পড়ে গেল । সপ্তাহ খানেক আগে রবিন কি একটা কাজে যেন সবার সাক্ষর নিচ্ছিলো । আমার যতদুর মনে পড়ে কি যেন কাজে আমাদের সই লাগবে বলেছিলো । আমি না দেখেই সই করে দিয়েছিলাম ।
ঐ রবিনই কালপ্রিট !
দাড়া শালা আজকে পেয়ে নেই ।
আমি ফোন বের করে ফোন দিতে যাবো তার আগেই সজিবের ফোন এসে হাজির !
-নাইরা কি চলে গেছে তোদের বাসায় ?
-আমাকে বলবি এসব কি হচ্ছে ?
-সরি দোস্ত দেখ আমার কোন দোষ নাই ,
-তুই সব জানতি ?
-প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর । আমি ওদের কে মানা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু নাইরার জন্য পারি নি । মেয়েটা তোর উপর সত্যি সত্যি ফল করেছে । এমন ভাবে আমাদের কে ধরলো যে .....
-এটা আমাকে সরাসরি বলা যেত না .....?
-যেত কিন্তু নাইরার মনে ভয় ছিল তুই আবার ওকে যদি ইগনোর করিস ! ও আসলে .....
-তোদের আমি সামনে পাই । একটাকেও আস্ত রাখবো না । শা^$&
মুখে যা আসলো বললাম । ফোন কেটে দিলাম । তারপর সেটা বন্ধ করে দিলাম ভাবতে লাগলাম কি করবো এরপরে ! কিন্তু কিছুই মাথায় এল না । আসলে নাইরার কাছে এমন কিছু আছে সেটা সবাই বিশ্বাস করবে । আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না ! আমার ওর সাথে আমার সম্পর্ক তো আবার ভাল হয়ে গেছে খুব । সবাই সাক্ষী দেবে যে এমন কাজ আমি করতেও পারি !
ছয়
সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরলাম । বাসার কাছেও গেলাম না কিন্তু রাতের বেলা তো বাসায় না গিয়ে উপায় নেই । বাসার সামনে গিয়ে দেখি আমার বারান্দার উপর আরতি আর নাইরা মনের সুখে গল্প করছে । আমাকে দেখে আরতি বলল
-ভাইয়া সারা দিন কোথায় ছিলি ? ফোনও বন্ধ রেখেছিস ? বাবা খুজছিলো তোকে !
-জাহান্নামে ছিলাম !
নাইরা একটা হাসি দিয়ে বলল
-ওটা তো এখানে । বাসায় আসো তারপর টের পাবা !
-তোমাকে আমি দেখে নেবো । এই ছিল তোমার মনে !!
-নিজেকে দেখানোর জন্যই চলে এলাম একদম ! হা হা হা !
আমি নাইরার দিকে না তাকিয়ে আরতীকে বললাম
-বাবা কেন খুজছিলো আমাকে ? বাসা থেকে তো বেরই করে দিয়েছে !
আরতী বলল
-বাসায় আসো । আসলেই দেখবা !
-কেন কি হয়েছে ?
আমার কেন জানি একটু সন্দেহ হল । অবশ্য বাবা আমাকে মাইর দেবে এটা বিশ্বাস ছিল । মুখে রাগা রাগি করলেও গায়ে হাত তুলে নি কোন দিন । আমি ভয়ে ভয়ে দরজা দিয়ে ঢুকেই দেখি বসার ঘরে বেশ কয়েকজন অরিচিত মানুষ বসে আছে । আমি অপ্রস্তুত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম । আমাকে এভাবে বোকার মত দাড়িয়ে থাকতে দেখে বাবা ধমক দিয়ে বলল
-গাধা দাড়িয়ে আছিস ক্যান ? তোর শ্বশুরকে সালাম কর !
আমি তবুও কি করবো খুজে পেলাম না । কোর্ট টাই পরা ভদ্রলোকের দিকে এগিয়ে গেলাম । এটাই তাহলে নাইরার বাবা ! আমি রোবটের মত গিয়ে তাকে সালাম করলাম । নাইরার বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার কথা নাইরা আমাকে বলেছিলো কিন্তু তোমরা একম কাজ করে ফেলবে আমি কোন দিন ভাবিও নি !
আমার কেবল বলতে ইচ্ছে হল বিশ্বাস করেন এই সবের পিছনে আমার কোন হাত নেই । সব বুদ্ধি আপনার ঐ বদ মেয়ের ! কিন্তু কিছু বলতে পারলাম না । বললেও কেউ আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না । আমি আরও কয়েকজনকে সালাম করলাম তারপর ঘরের ভেতরে চলে গেলাম ।
বাসায় একটা উৎসব উৎসব ভাব চলে এসেছে । আজকে নাকি আবারও আমাদের বিয়ে হবে । বাবা প্রথমে রাগ করলেও নাইরার বাবা নাকি আমি যাওয়ার পরপরই চলে এসেছিলো । নাইরা নাকি কাল রাতেই ওর বাবা কে এসব বলেছে । মানে আমি ওকে বিয়ে করেছি, এখন ওকে চিনছি না, এই সব । এক মাত্র মেয়ে বলে সে রাজি না হয়ে পারে নি । তিনিও বাবাকে এসে অনুরোধ করাতে সব কিছু শান্ত হয়েছে । কিন্তু বাবার ইচ্ছে নাকি আরেকবার বিয়ে হতে হবে আমাদের । আগের চলবে না !
আমি আমার ঘরে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলাম । কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । সকাল থেকে এতো এতো টেনশনের ভেতরে ছিলাম যে কিছুই মাথায় আসে নাই । একবার মনে হল আবারও বাবার কাছে গিয়ে সব বলি । কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল থাকে, দরকার নেই । নাইরাকে তো আমি পছন্দ করিই । যদিও একটু তাড়াহুড়াই হয়ে যাচ্ছে তবে সমস্যা কি এতে ! যা হচ্ছে হোক !
নাইরা আমার পাশে এসে বসলো একটু পরেই । ওর মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছিলো যেন ওর আনন্দের সীমা নেই । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি জনাব, কেমন দেখলেন ? সামনে আরও অনেক কিছু দেখার বাকি আছে আপনার !
-কি দেখাবে তুমি শুনি ?
-সেটা দেখতেই পাবে । আর আমার হ্যান্ড ব্যাগ আমি তোমাকে দিয়ে টানাবোই !
আমি নাইরার দিকে তাকিয়ে বলল
-দরকার হলে তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেব তবুও তোমার হ্যান্ডব্যাগ টানবো না !
-দেখা যাবে !!
-দেখা যাবে না ? দেখা যাবে ...
এই বলে নাইরাকে ধরতে গেলাম । ও উঠে দৌড় দিতে গেলো একটু সরে গেলেও আমার হাত থেকে ছাড়া পেল না । ওকে চেপে ধরলাম দেওয়ালের সাথে ।
-কি টানাবে হ্যান্ডব্যাগ ? বল বল
নাইরা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও যখন পারলো না তখন বলল
-না না প্লিজ না !! ওকে ওকে টানাবো না.... সত্যি বলছি.....
তারপর ...... থাক সেটা নতুন কোন গল্পের শুরু । এই গল্পের শেষ এখানেই !
১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১৩
অপু তানভীর বলেছেন: বাস্তবে তো এসব হয় না । এসব হয় কেবল গল্পেই
২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:২২
কলকণ্ঠ বলেছেন: কাল্পনিক কিন্তু স্বপ্নময়। ^_^
১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:০৭
অপু তানভীর বলেছেন: হুম....
৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:২৮
মেহেদী হাসান সাব্বির বলেছেন: আমিও আপনার সাথে একমত ।
কোন ভাবেই বৌ এর ভ্যানিটি ব্যাগ টানা যাবে না ।
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৫৬
অপু তানভীর বলেছেন:
৪| ০১ লা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৬
খাঁজা বাবা বলেছেন: ওকে
বাকিটা আপনার কল্পনাতেই থাক
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৩২
দিগন্ত জর্জ বলেছেন: ইশ, মেয়ের বাবা-মায়েরা যদি এতো সহজে মেয়ের প্রেমের ব্যাপারটা মেনে নিতো, তাহলে কতই না ভালো হতো।
গল্প ভালো লাগছে।