নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সব সময় গান একটু উচু ভলিউমেই শুনি । আমার কাছে গান শোনার সময়ে ঘর না কাঁপলে কেন জানি ঠিক গান শুনে মজা লাগে না । এই জন্য বাবার চিৎকার আর ধমক আমাকে কম শুনতে হয় নি। আসে পাশের মানুষ জনের অভিযোগও কম শুনতে হয় নি । দিন নেই রাত নেই গান চলতেই আছে ।
শেষে যখন নিজেদের একটা ফ্ল্যাট কেনা হল তখন বাবা বাধ্য হয়েই আমার ঘরটা এমন ভাবে বানালেন যাতে সেটা দিয়ে খুব বেশি আওয়াজ বাইরে না বের হয় । একেবারে পুরোপুরি আমার ঘরটা সাউন্ড প্রুফ তা বলবো না তবে অনেকটাই কার্যকরি ! আমি জোরে গান শুনলে সেটা বাইরে থেকে খুব বেশি শোনা যায় না ।
আজকেও আমি ঘর কাঁপিয়ে গান শুনছিলাম । তখনই মা আমার ঘরে হুড়মুড় করে ঢুকে বলল
-এই জলদি চল নিচে চল !
আমি সাউন্ড কমিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি বললে ?
তখনই অনুভব করলাম আমার ঘর কাঁপছে । তবে এবার সেটা আমার গানের জন্য নয় । আসলেই কাঁপছে । তার মানে ভূমিকম্প হচ্ছে । যদিও আমার ভুমিকম্পে কোন দিনই ভয়-টয় লাগে না । আমার মনে হয় আমাদের দেশে ভূমিকম্পে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে না । কেন মনে হয় আমি বলতে পারবো না কিন্তু আমার এমনই মনে হয় । আমার খুব একটা ভয় লাগে না ।
মা আমাকে জোর করে টেনে তুললো । তারপর আমাকে টানতে টানতেই নিয়েই যেতে লাগলো বাইরে । আমার ভয় না লাগতে পারে কিন্তু আমার মায়ের তো আমার জন্য ভয় আছে ।
যখন সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলাম দেখি আমাদের এপার্টমেন্টের অনেকেই নামছে । যে মানুষ গুলো কোন দিন লিফট ছাড়া এক পাও নিচে নামে নি, তারাও আজকে সিড়ি দিয়ে নামছে । আমি ধীরে সুস্থে নামতে লাগলাম । নিচে নেমে দেখি আমাদের আগেই অনেকে নেমে গেছে । তখনও মাটি খানিকটা কাঁপছিলো । সবার চোখেই কেমন একটা আতংঙ্ক । ছোট ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে একেবারে বৃদ্ধরাও নেমে এসেছে ।
আমি ওদিকে বেশি লক্ষ্য না দিয়ে নিজের মনে মোবাইল টেপাটেপি করতে লাগলাম । মনে হল রুবেলকে একটু ফোন দেওয়া যাক । ওদের ওখানে কি অবস্থা কে জানে ! নিশিকে কি একবার ফোন দেন ?
নাহ ! দরকার নেই ।
নিশির বাসা আমাদের বাসা থেকে খুব বেশি দুরে না । হেটে গেলে মিনিট দশেকের পথ । আমি ওকে ফোন দিবো না বলেই ঠিক করলাম । রুবেলকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম । কিন্তু কয়েকবার চেষ্টা করার পরেও কাজ হল না । ওকে বাদ দিয়ে অন্য মানুষকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলাম । দেখি মোবাইলে কাউকেই কল দেওয়া যাচ্ছে না । এর আগেও আমি ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছি । ভূমিকম্প হলেই কেন জানি ফোনের নেটওয়ার্কে ঝামেলা করে । আমি আরও কয়েকবার চেষ্টা করে বাদ দিলাম ।
যখন মনে আর ঝাঁকিটাকি দিবে না তখন আস্তে আস্তে সবাই নিজেদের ঘরে ফিরতে লাগলো । আমরা নিজেদের বাসায় ফিরে এলাম । আবারও নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াবো তখনই আমাদের কলিংবেলটা বেজে উঠলো । মা খুলতে যাচ্ছিলো আমি বললাম আমি দেখছি !
দরজ খুলতেই দেখি সামনে নিশি দাড়িয়ে ! নিশির চোখ ভেজা ভেজা । ওকে দেখে মনে হল খুব একটা কিছু নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত, ভয় পেয়েছে । আর বেশ জোরেই দম নিচ্ছে । সম্ভবত দৌড়ে এসেছে ।
কিন্তু নিশি এখানে এভাবে কেন ?
ওর তো এখানে আসার কথা না !
আর তার উপরে আমাদের গত সপ্তাহ থেকে কথা বলা বন্ধ । ও এক প্রকার আমার সাথে ব্রেকআপই করে ফেলেছে । কথা বলা-বলি বন্ধ ! তাহলে এখানে কেন ?
কি চায় !
আমি নিশির চেহারা দেখেই বুঝে ফেললাম এখনও কি করতে যাচ্ছে ।
দরজার কাছে দাড়িয়েই ও আমাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলো । মনে হল যেন খুব দামী কিছু কিংবা অনেক আপন কেউ হারিয়ে গিয়েছিলো তারপর আবার তাকে ফিরে পেয়েছে । এই আনন্দে কাঁদছে ।
আমি বললাম
-আরে কি হল ? কান্না কাটির কি হল ?
নিশির কান্না তখনও থামে না !
পেছনে তাকিয়ে দেখি মা চলে এসেছে । একটা মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে এটা দেখে মা অবাক আর জিজ্ঞাসু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি মায়ের জিজ্ঞাসার কি জবাব দেব, আমি নিজেই তো এটার কোন উত্তর জানি না !
নিশির কান্না থামলো আরও আধা ঘন্টা পরে । মা ওর জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে এল । সেটা নিয়ে সোফার উপর বসে নিজেকে শান্ত করতে করতে আধা ঘন্টা মত পার হয়ে গেল ।
আমি তখনও ওর পাশেই বসে আছি । কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না । মাকে যদিও আমি নিশির কথা বলি নি, তবে মা তো মা-ই, ছেলে প্রেম করবে আর মা সেটা বুঝতে পারবে না সেটা তো হতে পারে না ।
মা আমাদের সামনে এসে বসে বলল
-কি নাম তোমার ?
-নিশি !
-আমার ছেলেকে কিভাবে চেনো ?
-আমরা এক সাথে পড়ি ।
-আচ্ছা বুঝলাম । এখন আমাকে বল তুমি ওমন সিনেমার নায়িকাদের মত এসে আমার ছেলেকে জড়িয়ে ধরলে কেন ? এতো কান্না কাটির কি হল ? ও কি তোমার সাথে কিছু করেছে ? এভাবে কান্না কাটি করার মানে কি !
নিশি মাথা নিচু করে রইলো । কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না । আমি কিছু বলতে যাবো মা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
-বল !
-আসলে .....
-কি আসলে ?
-ভুমিকম্পের পর শুনতে পেলাম যে আপনাদের কোন বিল্ডিং নাকি হেলে পড়েছে । ওর ফোনে ফোন দিতে গিয়ে দেখি কিছুতেই ফোন যাচ্ছে না । একবার দু বার তিনবার চারবার। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো ওর কিছু একটা হয়েছে । তাই আমি.... আমি ....।
দেখলাম নিশির চোখে আবারও পানি চলে এসেছে ।
আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না । মাও খানিকটা অবাক হয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে । অন্তত ওর চোখে যে আবেগটা এখন দেখা যাচ্ছে সেটার ভেতরে যে কোন ভেজাল নেই মায়েরও বুঝতে কষ্ট হল না । মা আর কিছু জানতে চাইলো না ।
মা চলে যাওয়ার পর আমি নিশির দিকে তাকালাম ভাল করে । মেয়েটা অনেকটাই সামলে নিয়েছে । আমি কেবল তাকিয়েই রইলাম । নিশি বলল
-কি দেখি এমন করে ?
-তোমাকে !
-আমাকে দেখার কি আছে ! যাও তোমার মিনা না টিনা ওর কাছে যাও ।
এই টিনা প্রসঙ্গেই ওর সাথে সেদিন আমার ঝগড়া বেঁধে ছিলো । আমি হেসে বললাম
-টিনাকে দেখবে কোন দুঃখে ? টিনা কি আমার জন্য এভাবে দৌড়ে আসবে ? আর আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরবে ? তবে যাই বল না কেন এভাবে যদি প্রত্যেক ভুমিকম্পে আমাকে তুমি জড়িয়ে ধর টাহলে চাইবো যেন প্রতেক দিন একবার করে ভূমিকম্প হোক । আরেকবার ধরবে নাকি !
-বদ ! যাও । আমি বাসায় যাবো ।
নিশি উঠতে গেলেও আমি ওকে উঠতে দিলাম না । ওর সাথে এখনও বোঝা পড়া বাকি আছে । তবে সেটা আপনাদের না শুনলেও চলবে । ভূমিকম্প যে কেবল ভাঙ্গনই ধরায় তা না কাছেও টানে !
(খানিকটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে । ব্লগার স্বর্ণমৃগ ভাইয়ের স্টাটাস পড়ে লেখা)
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:১১
অপু তানভীর বলেছেন: ভুমিকম্পের সাথে এই সবের কি সম্পর্ক আসলেই আমারও মাথায় আসে না ! এরকম কেন হল কে জানে !!
২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১
বিজন রয় বলেছেন: সারা বিশ্বে ভালবাসার ভূমিকম্প হোক।
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:১২
অপু তানভীর বলেছেন: এই কামনায় !
৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৫১
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আসলে পিতা-মাতার হিসাবে ভুল কমই হয়।। বিশেষ করে তাদের অভিজ্ঞ চোখে।। আমি নিজের বেলায়ও দেখেছি, আজ স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে সন্তান।। স্বাভাবিক।। এটাই ভালবাসা।।
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:২১
অপু তানভীর বলেছেন:
৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫১
ফয়সাল রকি বলেছেন: সবাই দেখি এরকম ভূমিকম্প চায়...
গল্পে প্লাস।
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩
অপু তানভীর বলেছেন:
৫| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:১৬
Safin বলেছেন: বুকের বাম পাশটা জ্বলতেছে!
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫৫
অপু তানভীর বলেছেন: সেকি !!
কেনু শুনি ?
৬| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫৬
উল্টা দূরবীন বলেছেন: তাহলে একটা বিশ্ব কম্পিত ভালোবাসা দিবসের খুব দরকার আছে।
গল্পে ভালো লাগা রইলো।
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:০৩
অপু তানভীর বলেছেন: অবশ্যই দরকার আছে ।
৭| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:০৪
এহসান সাবির বলেছেন: দেরিতে হলেও বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল
২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৪৫
অপু তানভীর বলেছেন: আপনাকেও শুভেচ্ছা
৮| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৫৪
রিপি বলেছেন: হমম এখানে বিয়ে হতে মনে হচ্ছে একটু দেরী আছে।
ভূমিকম্প এবং ভালবাসার গল্প চমৎকার হয়েছে।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:১৮
অপু তানভীর বলেছেন: এখানে আসলেই বিবাহ হতে দেরি আছে । তবে গল্পে কিন্তু খানিকটা সত্যতা আছে !
৯| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:১২
রিপি বলেছেন:
এত এত এত সত্য ঘটনা আপনার জীবনে ঘটেছে !!!!!!!
বাহ মাশাআল্লাহ ভাউ ..।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৪১
অপু তানভীর বলেছেন: ঘটনা আমার জীবনের না ঘটলেও অন্য কারো জীবনে ঠিকই ঘটছে এবং মোটামুটি এরকমই
১০| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৩
খাঁজা বাবা বলেছেন: ভূমিকম্পে এলাকার সব সুন্দরী মেয়েদের দেখা মেলে
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহালে.. কি গভীর ভালুবাস!!!!
আমারে এম্নে কেউ ভালুবাসলে- দিনে কয়েকবার ভূমিকম্প ঘটাতাম (পরের ষ্টাইল.. যা না জানলেও চলে )
তবে ভূমিকম্পে অদ্বুত একটা ঘটনা ঘটেছে আমার। ঐ সময় ফোনে যখন কেউ পাচ।ছিল না আমি ৪টা কলে ৪টাই কানেকশন পেয়েছিলাম। বাট এরপর- অদ্ভুত ঘটনা- এশার নামাজের পর ফোন অন করতেই- কল লিস্ট ব্লাংন্ক!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! ফোন বুক চেক করে দেখি পুরাই ব্লাক! মাথা খারাপ হবার জোগার!
রিষ্টার্ট করার পর ২৩৬টা নাম্বার ফেরত পেলেও আরও প্রায় ২৫০ টা বেমালুম গায়েব!!!!! ঐ ফোনের পর আর কনো কিছু করা হয় নি। শিউর। আর ১০ সেকেন্ড পরই অটো স্ক্রীন লক! সো অন্য কোন চাপ লাগার সুযোগ নেই!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
কোন ব্যখ্যা মাথায় আসছে না!!!!!!!!!!!!!!