নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুরু আগে
ড. নিলান ডাস্টি নিজের সব শক্তি ব্যয় করে দৌড়াচ্ছে । চাঁদের আলোতে পথ দেখতে খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না । অভ্যাস না থাকার কারনে কষ্ট হচ্ছে তবুও জানে সামনে বেঁচে থাকার জন্য তাকে দৌড়াতে হবে । পেটের ডান দিকের ক্ষতটা থেকে অনবরত রক্ত পড়ছে । ডান পা টা যেন অবশ করে দিতে চাইছে কিন্তু ড. ডাস্টি জানে যদি সে এখন থেমে যায় তাহলে তাকে মরতে হবে । এতো চেষ্টা বৃথা হয়ে যাবে । বৃথা হয়ে যাবে ৪২ জন মানুষের জীবন । ডাস্টি আরেকবার বাচ্চাটাকে দেখলো ।
বুকে জড়িয়ে রেখেছে । বাচ্চাটা এখনও নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে, নড়াচড়াতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না ঘুমে । আসন্ন বিপদ সম্পর্কে বাচ্চাটা কিছুই জানে না । জানার কথাও না । নিলান ধারনা করতে পারে এতোক্ষনে তার খোজ শুরু হয়ে গেছে ল্যাবে । তাকে খুজতে আরও সৈন্য পাঠানো হবে কিংবা ইতি মধ্যেই হয়েছে । পালানোর সময়ে সে নিজে দুজন কে ঘায়েল করেছে । একজন তাকে গুলিও করেছে । প্রথমে তার পেছনে কারো শব্দ শুনতে পাচ্ছিলো তবে এখন আর পাচ্ছে না । আশার কথা হচ্ছে সে যে এই বনের পথ টা ধরতে পারে কেউ এই কথা ভাবতে পারবে না । এই পথেই রাশান সৈন্য এগিয়ে আসছে । তারা কোন ভাবেই রাশান সৈন্যের সামনে পড়তে চাইবে না । এমন কি সে নিজেও সেটা চাইবে না । জাতিতে সে ইহুদি হলেও সে কাজ করতো নাজিদের জন্য । এটা বের করতে রাশানদের মোটেই কষ্ট হবে না । তখন তার অবস্থা কি হবে সে সেটা বলতে পারছে না । তারা যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে । পরিক্রমাশীল হিটলারের পতন হচ্ছে ।
১৯৪৫ সাল । ২য় বিশ্ব যুদ্ধ শেষের পথে । জার্মানদের পরাজয় একেবারে নিশ্চিত । জার্মান সেনারা সব নিজেদের ব্যারাক থেকে বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যাচ্ছে । সেই সাথে গোপন ল্যাব গুলোও যাওয়ার পথে ধ্বংশ করে চলেছে । কোন কিছু শত্র পক্ষের হাতে পড়া চলবে না । পরবর্তিতে বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম চালানোর জন্য কিছু কিছু বিজ্ঞানীকে সাথে করে নিয়েও যাচ্ছে তারা, সেই সাথে তাদের সকল কাগজ পত্র । বাদিদের ভাগ্যে লেখা রয়েছে কেবল একটা করে বন্দুকের গুলি !
তেমন একটা গুলি ড. নিলান ডাস্টির কপালেও লেখা ছিল কিন্তু সেই গুলি ফাঁকি দিয়ে সে দৌড়ে চলেছে । বুকে জড়িয়ে রেখেছে তার এবং আর বাকি ৪২ জন বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ ৪ বছরের পরিশ্রেমের ফসল । যেভাবেই হোক বাচ্চাকে বাঁচাতেই হবে । অন্তত নাজিদের হাতে পড়া চলবে না কিছুতেই । ডা। ডাস্টি এগিয়েই চলেছে । তার ভাগ্যে কি আছে সেটা তার জানা নেই ।
এক
খবরটা অনেকের কাছেই পৌছে গেছে কিন্তু কেউ সেটা প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছে না । প্রশাসন থেকে কড়া নিষেধ এসেছে কোন ভাবেই যেন এই খবর মিডিয়াতে প্রকাশ না করে হয় । কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর টা প্রকাশ করলেও প্রশাসন থেকে সেটা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে ।
দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মেয়েকে কিডন্যাপ করা হয়েছে । এবং সেটা বলতে গেলে দিনে দুপুরে । খুব স্বাভবিক ভাবেই মন্ত্রীর মেয়ে নিকিতা রহমান প্রতিদিনকার মত আজকেও বুয়েট ক্যাম্পাসের জন্য বাসা থেকে বের হয় । সেখানে একটা ক্লাসও করে । পরের ক্লাসটা অফ ছিল তাই ক্যাম্পাসের এক পাশে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো । এক সময় একজন মাঝ-বয়সী কালো-স্যুট পরা লোক তার সামনে এসে বলে যে তাকে নাকি এখনও বাসায় যেতে হবে । তার বাবা তাই চান । লোকটাকে এর আগে দেখেনি নিকিতা তবে তার বুকে ব্যাচটা দেখে ধরে নিয়েছে যে লোকটা তার বাবা লোকই হবে । মাঝে মাঝে এরকম ভাবে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় । তার নিরাপত্তার একটা ব্যাপার আছে । নিকিতা বন্ধুদেরকে রেখে লোকটার সাথেই রওনা দিল ।
ক্লাস শেষ করে ওর বন্ধুরা যখন বাইরে বের হয়ে এল তখন নিকিতার জন্য অপেক্ষারত ড্রাইভার এবং বডিগার্ড তাদের কাছে জানতে চাইলো যে নিকিতা কোথায় । বন্ধুরা অবাক হয়ে বলল সে অনেক সময় আগেই নাকি নিকিতা চলে গেছে । তার বাবাই নাকি লোক পাঠিয়েছিলো ।
ব্যস, যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে বডিগার্ডের কিন্তু ততক্ষনে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে । সে সরাসরি নিকিতার বাবাকেই ফোন দেয় । পুরো পুলিশ ফোর্স লেগে গেল কাজে কিন্তু কিছুতেই বের করতে পারলো না নিকিতাকে কে বা কারা নিয়ে গেছে । কিডন্যাপের ৯ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও এখনও কোন প্রকার ফোন আসে নি কিংবা তাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় নি । কিডন্যাপার কি করতে চায় কিংবা কিসের জন্য নিকিতাকে কিডন্যাপ করেছে সেটা সম্পর্কে পুলিশ কিছু বের করতে পারছে না । তারা ফোনের জন্য অপেক্ষা করছেন ।
নিকিতার বাবা আজিজুর রহমান গম্ভীর হয়ে বসে আছেন । তার মা বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন । মাত্র কদিন আগে মেয়ে সুস্থ হয়েছে । এক প্রকার আশা যখন ছেড়েই দিয়েছিলো তখনই মেয়েটা হঠাৎ করেই সুস্থ হয়ে ওঠে । সিঙ্গাপুর থেকে চেক করিয়ে আনা হয়েছে । ওরাও বেশ অবাক হয়েছে এভাবে হঠাৎ করেই নিকিতার সুস্থ হয়ে ওঠাটা । ওরা আরও কিছু পরীক্ষা করতে চেয়েছিলো কিন্তু নিকিতার বাবা এতো কিছু চিন্তা করে নি । এতো উত্তর তার জানার দরজারও নেই । তার মেয়ে সুস্থ হয়েছে এটাই তার জন্য যথেষ্ট ।
দুই
নিকিতা চোখ মেয়ে প্রথমে বুঝতেই পারলো না কোথায় আছে । কয়েক সেকেন্ড বোঝার চেষ্টা করলো কোথায় আছে । মাথার ভেতরে তখন কেমন একটা ভার ভার অনুভব হচ্ছে । তার সব কিছু মনে পড়তে আরও কিছুটা সময় লাগলো । আরও মিনিট দুয়েক পরেই তার সব কিছু মনে পড়ে গেল । মনে পড়তেই উঠে বসলো বিছানা থেকে ।
ক্যাম্পাসে সেই লোকটাকে নিকিতা মোটেই সন্দেহ করে নি । পোষাক পরিচ্ছেদে আর চালচলে আসলেই সরকারী গোয়েন্দা বিভাগের লোকই মনে হয়েছে । সে যখন এসে তাকে নিয়ে যেতে চাইলো সে মোটেই অবাক হয় নি । মাঝে মাঝেই এমনটা হয়ে থাকে । তার বাবা তাকে অনেক বারই বলেছে বাইরে গিয়ে পড়াশুনা করতে কিন্তু সে দেশেই থাকতে চেয়েছে সব সময় । দেশে এতো চমৎকার সব বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে কেন বাইরে দুর দেশে গিয়ে পড়ে থাকতে হবে । নিকিতা তাই দেশেই ছিল । তাই তার সিকিউরিটিটার ব্যাপারটা দেখতে হত তার বাবাকেই । মাঝে মাঝে কোন ঝামেলা হলে তাকে লোক পাঠিয়ে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে আসতে হত । আর সর্বক্ষণিক একজন ড্রাইভার আর একজন বডিগার্ড তো থাকতোই তার জন্য ।
কিন্তু আজকে কি হয়ে গেল । নিকিতা কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকটা কিছু একটা পুষ করে দিলো তার কাঁধের কাছে । সাথে সাথেই নিকিতার মাথা ঘুরে উঠলো । নিকিতার তখনই মনে হল কিছু একটা ঠিক হয় নি । সে ভুল করে ফেলেছে । কিন্তু তার তখন কিছুই করার নেই । চোখের সামনে কেবল অন্ধকার হয়ে এল ।
আর এখন এই তার চোখ মেলে উঠলো ।
ক'ঘন্টা অজ্ঞান ছিল নিকিতা জানে না । হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো । ঘর অন্ধকার হলেও রেডিয়াম ঘড়ির কাঁটা ঠিক ঠিক বোঝা যায় । এখন বাজে প্রায় নয়টা !
রাতই মনে হচ্ছে যদিও বাইরের জানালা বন্ধ । তবে দিন হলে জানলা থেকে আলো বের হয়ে আসতো নিশ্চয়ই । তার মানে প্রায় নয় ঘন্টা পার হয়ে গেছে । তার বাবা কি জানে ? মায়ের জন্য মনটা কেমন করতে লাগলো । সেই সাথে একটা ভয় পেয়ে বসলো ওকে ।
কিডন্যাপাররা ওর সাথে কি করবে ?
ওর বাবার কাছে টাকা চাইবে ?
নাকি অন্য কিছু !!
টাকা চাইলে হয়তো ওর বাবা যে ভাবেই হোক ম্যানেজ করে দিবে কিন্তু যদি কোন অপরাধীকে ছেড়ে দিতে বলে ?
তাহলে তার বাবা কোন দিন সেটা করবে না । তখন ?
তখন কি হবে ?
নিকিতা আর ভাবতে চাইলো না ।
বিছানার হাত দিল নিকিতা দেখলো বিছানাটা বেশ নরম । সে একজন বন্দী । তার জন্য এতো নরম বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
কারন কি !
নিকিতা বিছানা থেকে নামতে যাবেন ঠিক তখনই দরজা খোলা আওয়াজ হল । সেই সাথে ঘরে আলো জ্বলে উঠলো । নিকিতা তাকিয়ে দেখলো ক্যাম্পাসের সেই মাঝ বয়সী লোকটার সাথে আরও একজন বুড়ো মত লোক দাড়িয়ে আছে তার সামনে । বুড়ো মত লোকটাই যে বস সেটা কাউকে বলে দিতে হল না । চোখে কোন হিংস্রতা নেই বরং সেখানে একটা স্মিত হাসি দেখতে পেল নিকিতা । বুড়ো মত লোকটা বলল
-মিস নিকিতা, এরকম ভাবে আপনাকে এখানে আনার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি । আপনার নিশ্চয়ই বেশ ক্ষুধা পেয়েছে । আপনি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে আসুন । খেতে খেতে আমরা কথা বলি !
একজন কিডন্যাপারের কাছ থেকে এতো ভাল আচরন নিকিতা কোন ভাবেই আশা করে নি । লোকটা বাংলাতে কথা বললেও কথাতে খানিকটা বিদেশী টান । কোন দেশী টান সেটা অবশ্য এখনও ধরতে পারলো না । নিকিতা কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই অনুভব করলো আসলেই তার খুব ক্ষুধা লেগেছে । সেই সকাল বেলা নাস্তা করে বাসা থেকে বের হয়েছিলো । এই পুরো সময়টা সে অজ্ঞানই ছিল । কিছু খাওয়া হয় নি । এখন ক্ষুধা অনুভব হচ্ছে বেশ ।
নিকিতা কোন কথা না বলে পাশের ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এল । দরজা খোলাই ছিল । কিন্তু সেই লোকটা দরজার পাশেই দাড়িয়ে ছিল । ওকে পথ দেখিয়ে নিয়ে এল । নিকিতার যতই এগোতে লাগলো ওর কাছে ততই অবাক লাগলো । এটাকে কোন ভাবেই কারো কয়েদখানা মনে হচ্ছে না । বরং এটাকে ঠিক রিসোর্ট টাইপের মনে হচ্ছে !
জায়গা কোথায় হতে পারে ?
এন.গঞ্জ কিংবা গাজিপুর ?
এই দুটোর এক জায়গা হওয়াই স্বাভাবিক ।
লোকটা তাকে একটা বড় হল রুমের ভেতরে নিয়ে গেল । সেখানে রাখা ডাইনিং টেবিলের দিকে বসতে ইংঙ্গিত করে লোকটা আবারও চলে গেল দরজার কাছে । একটু পরেই সেই বুড়ো মত লোকটা ফিরে এল । বসলো ডাইনিং টেবিলে শেষ মাথায় । খাওয়া সার্ভ করা হল ।
নিকিতা তখনই কোন কথা বলে নি । চুপচাুপ খেয়েও চলেছে । লোকটা বলল
-আশা করি আপনি আমার লোকেদের এই রকম আচরনে কিছু মনে করবেন না ! আসলে আমাদের আর কিছু করার ছিল না !
নিকিতার তখনই মনে হল এই লোক তাকে কোন ভাবেই টাকার জন্য কিডন্যাপ করে নি । অন্তত এই বাসা বাড়ি আর লোকটা ভাব আচরন দেখে মনে হচ্ছে না সে টাকার জন্য তাকে কিডন্যাপ করেছে । তাহলে কেন করেছে ?
নিকিতা বলল
-আপনি আমাকে এখানে জোর করে ধরে আনবেন আর আমি কিছু মনে করবো না ?
লোকটা আবারও হাসলো । বলল
-মাই এপোলজি । আমি আশা করবো আপনি আমাদের সহযোগিতা করবেন । তাহলে দুজনের কারোই কোন ক্ষতি হবে না । দেখুন এখনও কিন্তু আপনার সাথে আমরা কোন প্রকার খারাপ ব্যবহার করি নি । আর আমরা করতেও চাই না ।
নিকিতা কোন কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে চলল । লোকটা সত্যি কথায় বলছে । কিডন্যাপারদের ব্যাপারে যে কথা শুনে এসেছে নিকিতার সাথে তেমন কিছুই করা হয় নি । বরং নিকিতার মনে হচ্ছে না যে সে কিডন্যাপ হয়েছে । মনে হচ্ছে কোথায় বেড়াতে এসেছে ।
লোকটা বলল
-আরে আমি তো নিজের পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি । আমার নাম ফ্যডরিক ডিল । আমার কিছু চাওয়ার আছে আপনার কাছে ।
নিকিতা আবারও চুঐ রইলো । ওর কেবল মনে হল চুপ থাকাটাই ভাল । ফ্যডরিক বলল
-আমি চাই খাওয়া শেষে আপনি একজনকে ফোন করবেন ! ব্যস আপনার কাছে আমাদের আর কোন চাওয়ার নেই । কোন ক্ষতিও হবে না আপনার । আমাদের কাজ য়ে গেলেই আপনাকে বাসায় পৌছে দেওয়া হবে ।
নিকিতা খেতে খেতে বলল
-আমার বাবাে ফোন করে কি বলতে হবে বলুন ? কি চান আপনারা আমার বাবার কাছে ?
ফ্যডরিক অবাক হয়ে নিকিতার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনার বাবার কাছে আমরা কি চাইবো ? আর আপনার বাবার কাছে তো আপনাকে ফোন করতে হবে না !
এবার অবাক হওয়ার বাবা নিকিতার ! তার বাবার কাছে লোকটা কিছু চায় না । তাহলে কার কাছে চায় ! নিকিতা বলল
-তাহলে ? কাকে ফোন করবো ?
ফ্যডরিক একটু হাসলো । তারপর বলল
-খাওয়া শেষে আপনি আপনার বয়ফ্রেন্ডকে ফোন দিবেন !
নিকিতা অবাক হয়ে বলল
-বয়ফ্রেন্ড ! আমার তো কোন বয়ফ্রেন্ড নেই !
ফ্যডরিক তখনও হাসছে । মুচকি হেসেই বলল
-আর ইউ সিওর এবাউট দ্যাট ?
তখনই নিকিতা বুঝতে পারলো ফ্যডরিক কাকে ফোন দিতে বলছে ।
কিন্তু কেন ?
ওর সাথে এদের কি কাজ থাকতে পারে ?
তিন
নিকিতার এই দেশে থেকে পড়াশুনা করার ব্যাপারটা নিকিতার বাবার মোটেই পছন্দ ছিল না । নিকিতার বাবার মোটেই ইচ্ছে ছিল না মেয়েকে দেশে রাখবে । শেষে একটা শর্ত দিল যে যদি নিকিতা বুয়েটে চান্স পায় তাহলেই তাকে দেশে সে থাকতে পারবে নয়তো তাকে বাইরেই যেতে হবে । এবং সেই সাথে আরও একটা শর্ত দিয়ে দিল যে ফারিজের সাথে একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে । তাকে কোন ভাবেই আগের মত ইগনোর করা যাবে না ।
নিকিতার এখানের সব কিছুই তার ভাল লাগে কেবল একটা জিনিস বাদে !
এই ফারিজ !
ওর বাবার এক শিল্পপতি বন্ধুর ছেলে । ওর পেছনে কবে থেকে লেগে আছে । বাবার জন্য কিছু বলতেও পারে না । বাবাকে সে কথা দিয়েছে । ফারিজকে ইগনোর করবে না । তাকে সময় দিবে ।
আজকেও তাকে ইগনোর করতে পারছে না । ক্লাস শেষ হয়ে গেছে । বাসার দিকে যাবে তখনই ফারিজ এসে হাজির । এখন যদি শোনে যে ক্লাস শেষ তাহলে তার সাথে যেতে হবে এবং সেটা নিকিতা কোন ভাবেই চায় না !
ফারিজ হাসি মুখে এগিয়ে এল নিকিতার দিকে ।
-আজকে কিন্তু আমার লং ড্রাইভে যাওয়ার কথা ছিল ।
-না মানে আজকে .....
-হ্যা ! দেখো এখন ক্লাসের বাহনা দিবা না । আমি জানি তোমার ক্লাস শেষ । সো...
-না মনে আসলে .....।
-নিকি !
নিকিতা খানিকটা চমকে উঠলো ডাকটা শুনে । ও আর ফারিজ যেখানে দাড়িয়ে আছে সেখান থেকে কিছু দুরে রাফা দাড়িয়ে আছে । নিকিতা প্রথমে ঠিক মত বুঝতেই পালো না যে কি হচ্ছে ! রাফা যে ওকে ডাকতে পারে এটা ও ভাবতেই পারে নি ।
ওদের ক্লাসের সব থেকে দুর্দান্ত ছাত্রের নাম রাফা । রাফায়েল আহমেদ । ওদের কেবল থার্ড সেমিস্টার চলতে এর ভেতরেই সবাই জেনে গেছে রাফা কি জিনিস । ছেলেটা প্রত্যেকটা সেমিস্টারে ফোর আউট অব ফোর পেয়ে এসেছে । সামনের গুলোতেও পাবে এমনটা সবাই জানে । । ক্লাসে ঠিক ঠাক মত কারো সাথেই কথা বলে না । ভাল ছাত্ররা নিজেদের ভেতরেই থাকে । প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথাও বলে না । ক্লাসের অন্যান্য ছাত্ররা রাফাকে ভিন গ্রহের প্রাণী বলে । আজকে সেই ছেলে ওকে ডাকছে । তাও আবার নিকি বলে । এটা ওর পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কেউ ডাকে না ।
রাফা বলল
-ল্যাবে যাবে না ? আজকে ল্যাব মিস করলে কিন্তু ঝামেলায় পড়বে । শরিফ স্যারকে তো চেন !
নিকির কয়েক সেকেন্ড লাগলো ব্যাপারটা বুঝতে । আসলে রাফা ওকে ফারিজের হাত থেকে বাঁচাতেই এটা করছে । নিকির মুখের হাসি বিস্তৃত হল । বলল
-আরে হ্যা তো । আমি তো ভুলেই গেছিলাম ।
তারপর ফারিজের দিকে তাকিয়ে বলল
-সরি যেতেই হবে । অন্য কোন দিন !
অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও ফারিজ কিছু বলল না । নিজের গাড়ির দিকে হাটা দিল । নিকিতা রাফার সামনে এসে বলল
-থ্যাঙ্কস !
-মেনশন নট !
আর কিছু না বলে রাফা আবারও হাটা দিল নিজের পথের দিকে । নিকিতার কি মনে সেও রাফার সাথে সাথেই হাটতে লাগলো ।
-একটা কথা বলবো ?
-হুম !
-তুমি আমাকে চেন ?
-মানে ?
-না মানে আমরা মনে করি তুমি বই ছাড়া আর কাউকেই ঠিক মত চেন না ।
রাফা দাড়িয়ে পড়লো । তারপর নিকিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
-মিস নিকিতা রহমান, আমি এমন আরও অনেক কিছু করি, জানি, যা জানলে তোমার হার্ট ফেইল হয়ে যাবে ।
ঐ দিন থেকেই শুরু । তারপর থেকেই রাফার সাথে নিকিতার একটা যোগাযোগ শুরু হয়ে হল । এবং সেটা আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো । রাফার সাথে কথা বলতে নিকিতার ভাল লাগতো । বিশেষ করে ছেলেটার চিন্তা ভাবনা আর জ্ঞানের পরিধি দেখে অবাক না হয়ে পারতো না । এতো কম বয়সে ছেলেটা এতো কিছু কিভাবে জানে কে জানে !
চার
ফ্যডরিক বলল
-আপনি কি ফোন করবেন ?
-কেন ফোন করবো ? আর আমার ফোন পেয়ে ও কেনই বা আসবে ?
-কারন হচ্ছে রাফায়েল আপনাকে পছন্দ করে । আপনি সেটা জানেন, জানেন না ? আপনার বিপদ শুনলে সে যেখানেই থাকুক চলে আসবেই ।
-আপনারা ওকে নিয়ে কি করবেন ?
-সেটা আমাদের ব্যাপার !
-ওকে তাহলে আমি ওকে ফোন করবো না ! যদি চান যে আমি ওকে ফন করি তাহলে আমাকে বলেন ওকে নিয়ে আপনারা কি করবেন ?
ফ্যডরিক কিছু সময় নিজের কাছেই চিন্তা করলো । নিজেকে খানিকটা বোঝানোর চেষ্টা করলো যে নিকিতা সব বলা ঠিক হচ্ছে কি না ! তারপর নিজের সাথে কথা শেষ করে বলল
-আচ্ছা আপনার যেমন ইচ্ছে । তবে কথা দিতে হবে যে কথা শুনে আপনি ওকে ফোন দিবেন । শুনতে খানিকটা অদ্ভুদ লাগলেও আমি যে যে কথা গুলো বলবো সেগুলোর একটাও মিথ্যা নয় এটা আমি আপনাকে নিশ্চিৎ করেই বলতে পারি !
কিছু সময় থামলো ফ্যডরিক । তারপর বলল
-আচ্ছা সবার আগে একটা প্রশ্ন আপনাকে করি ! বলুন তো আপনার বয়ফ্রেন্ড রাফায়েলের বয়স কত হবে ?
নিকিতা খানিক সময় ফ্যডরিকের তাকিয়ে বলল
-এটা কি ধরনের প্রশ্ন হল ?
-আহা বলুন না ?
-এই আমার সমান ই । আমার থেকে দু এক বছরের বড় হতে পারে ।
-অনুমান ?
-এই ২২/২৩ হবে !
ফ্যডরিক যেন খুব মজা পেল ওর কথা শুনে ! তারপর বলল
-রাফায়েল চৌধুরীর বর্তমান বয়স ৪৪ !
-কি যা তা বলছেন ! হতেই পারে না !
-আমি জানতাম আপনি বিশ্বাস করবে ন না । যাক সেটা আপনার ব্যাপার ।
এই কথা বলেই ফ্যডরিক ওর দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিল । নিকিতা সেদিকে তাকিয়ে দিল সেটা একটা বার্থ সার্টিফিকেট । নাম লেখা রাফিস আহমেদ । জন্ম ৩ জানুয়ারি ১৯৭২ । নিকিতা ঠিক বুঝতে পারলো এটা তাকে দেখানোর মানে কি ! নিকিতা বলল
-এটা কার বার্থ সার্টিফিকেট ?
-আপনার বয়ফ্রেন্ডের ।
-হতেই পারে না !
-আচ্ছা আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে না । আমি বলি কেন আমাদের ওকে দরকার ।
গল্পটা আজ থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগের কথা । তখন ২য় বিশ্ব যুদ্ধ চলছে । ও তার আগে বলে নি আমি জাতিতে একজন জার্মান । আপনি নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন যুদ্ধের শুরু থেকে আমাদের মহা নায়ক হিটলারের অন্য অনেক কাজের ভেতরে একটা কাজ ছিল গোপন পরিক্ষা নিরীক্ষা চালানো । এবং সেটা মানুষের উপর । আরও উন্নত প্রজাতির মানুষ তৈরি করা । তিনি বিশ্বাস করতেন বিজ্ঞান দিয়ে মানুষ শরীরের যত দুর্বলতা আছে সেগুলো দুর করা সম্ভব ।
নিকিতা এসব জানে । কিন্তু ওকে এসব বলার কোন মানে খুজে পাচ্ছে না ।
ফ্যডরিক বলে চলল
-সমস্ত ল্যাবের বিভিন্ন জিনিসের উপর কাজ চলতো । কোনটা কেবল উন্নত ধরনের অস্ত্র তৈরির জন্য । আবার কোন টা হিউম্যান প্রজেক্টের উপরে । ঠিক তেমন একটা প্রজেক্টের নাম ছিল "প্রজেক্ট উবামেসেলিস" । বাংলায় যা অর্থ করলে দাড়ায় "অতিমানব"
-আপনি আমার সাথে ইয়ার্কি মারছেন, তাই না !
-আহ মিস । শুনতে থাকুন !
নিকিতা আর কোন কথা বলল না । ফ্যডরিক বলল
-এমন মানুষ তৈরি করা যাদের ভেতরে সব কিছু বেশি থাকবে । যেমন রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থেকে শুরু করে জড়াকে কাবু করার শক্তি । যুদ্ধ তৈরি ক্ষত দ্রুত ঠিক হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা । নাজির এরকম বেশ কয়েকটা ল্যাবে এই প্রজেক্ট চলতো । বলতে গেলে বছরের পর বছর সেই পরীক্ষা গুলো কেবল অন্ধকারই দেখছিলো । আলোর মুখ যেন দেখতেই পাচ্ছিলো না । একটা সময়ে একটা ল্যাব থেকে খবর এল যে তারা সফল হয়েছে এবং তারা এমন একজন বেবিকে এখনও পর্যন্ত বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে । কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে । আমরা যুদ্ধে হেরে গেছি । কিন্তু আমাদের এই সাফল্য তো আমরা রাশান কিংবা আমেরিকানদের হাতে পরতে দিতে পারি না । তাই আমরা আমাদের সকল রিসার্চওয়ার্ক গুলো গোটাতে লাগলাম কিন্তু .....
পাঁচ
নিকিতা আর রাফার সম্পর্ক টা দিন দিন সামনের দিকে এগোতে লাগলো । নিকিতার একটা সময়ে মনে হল ওর অসুখের কথাটা রাফাকে বলা যায় । সব কিছু শুনে রাফা বলল
-মানে এটার কোন কিউর নেই ?
-নাহ ! প্রতি দুই মাস পরপর আমাকে কিছু হরমন নিতে হয় শরীরে । নয়তো আমার শরীর রক্ত প্রডিউস করতে পারে না । মাঝে মাঝে রক্তও দেওয়া লাগে । গতবারে যখন সিঙ্গাপুর থেকে চেকিং করে আসলাম ডাক্তারদের চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হল যে আমার অবস্থা বেশি ভাল না । আসলে এই জন্যই আমি বাইরে থাকতে চাই না । বাবা মায়ের কাছ থেকে দুরে থাকতে চাই না । বাবা এটা বুঝতে চায় না ।
ঐদিন রাফার মন অনেক খারাপ হয়েছিল । ঠিক তার সপ্তাহ খানেক পরেই নিকিতার শরীর খারাপ হয়ে গেল হঠাৎ করেই । ওকে এপোলেতো নিয়ে যাওয়া হল । আগে তিন মাস পরপর হরমনটা নেওয়া লাগতো এখন সেটা কমে এসে দুই মাসে এসে দাড়িয়েছে । আস্তে আস্তে এই ব্যবধান টা কমছেই ।
নিকিতা নিজের কেবিনে শুয়ে শুয়ে এটা ভাবছিল তখনই জালনায় কারো টোকার শব্দ হল । রাত তখন দুইটা বেজে গেছে । কেবিনের পাশের ঘরের মা ঘুমাচ্ছে । পরশুদিন ওকে নিয়ে যাওয়াহবে সিঙ্গাপুরে । আরেকবার আওয়াজ হল । একবার মনে হল কোন পাখি । নিকিতার সেদিনে খেয়াল না দেওয়ার চেষ্টা করলো । তখনই মোবাইলটা বেজে উঠলো ।
রাফা !
-হ্যালো ! তুমি এতো রাতে ?
-ব্যালকুনির দরজা টা খুলবে ?
-মানে ?
-কোন মানে নেই খুলো প্লিজ !
নিকিতা নিজের বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে ব্যালকুনির দরজাটা খুলে দিল । তাকিয়ে দেখলো রাফা দাড়িয়ে । নিকিতা কিছু ভেবে পেল না আসলে কি হল আর কেমন করে হল ! ওর কেবিনটা ছয় তলায় । এখানে এই ছেলে কিভাবে এল ? তাও আবার ব্যালকুনিতে !
-তুমি !!
-বলেছিলাম না আমি এমন সব কাজ করি যে যা জানলে তুমি অবাক হয়ে যাবে !
-তাই তো দেখছি !
-পরশু চলে যাবে ?
-হুম ! কবে আসবো জানি না ! জানো রাফা আমার কেন জানি খুব বাঁচতে ইচ্ছে করে এখন ? যে কটা দিন বেঁচে আছি তাতে মন ভরছে না ! কিন্তু ....... কিছু করার নেই ।
হঠাৎ করেই নিকিতার বুকটা হহুহু করে উঠলো । আসলেই মাঝে মাঝে ওর বেশ বাঁচতে ইচ্ছে করে । বাবার সাথে মায়ের সাথে আরও কটা দিন থাকতে ইচ্ছে করে । রাফা সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করে । ছেলেটার ভেতরে অন্য কিছু আছে যা ওকে প্রবল ভাবে আকর্ষন করে বেড়ায় ! কিন্তু সেটা নিকিতা ঠিক বুঝে পারে না ।
হঠাৎ করেই নিকিতা অনুভব করলো রাফা ওকে জড়িয়ে ধরেছে । কোন বাঁধা না দিয়ে নিকিতা নিকেও ওকে জড়িয়ে ধরলো । কতক্ষন নিজেকে রাফার শরীরের সাথে জড়িয়ে রেখেছে নিজেও জানে না কেবল মনে হচ্ছিলো রাতের পুরো সময়টা যদি ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখা যেত !
একটা সময় রাফা ওকে নিয়ে এসে কেবিনের বিছানায় শুইয়ে দিল । তারপর কপালে একটা চুম খেয়ে বলল
-ডু ইউ ট্রাস্ট মি ?
-মানে ! ট্রাস্ট ? কোন বিষয়ে ?
-এই যে আমি কোন দিন তোমার কোন ক্ষতি করবো না কিংবা ক্ষতি হতে দিবো না ?
-হ্যা করি ! কিন্তু কেন ?
-তাহলে কোন প্রশ্ন করো না । আমি কি করি সেটা দেখো কেমন !
তারপর নিকিতা অবাক হয়ে দেখলো রাফা একটা সিরিজ হাতে নিল । ওর কেবিনের র্যাকেরই ছিল । তারপর সেটা নিজের হাতের এক পাশে ঢুকিয়ে এক সিরিঞ্জ রক্ত বের করলো নিজের শরীর থেকে । রাফা যতটা দক্ষতার সাথে কাজটা করলো তাতে মনে রাফা এর আগেও কাজটা করেছে । রাফা বলল
-আমি যে কাজটা করতে যাচ্ছি তা তোমার কাছে ঠিক অদ্ভুদ মনে হতে পারে তবে আমার বিশ্বাস এতে কাজ হবে !
-কি করতে যাচ্ছো তুমি ?
-এটা তোমার শরীরে পুশ করবো !
নিকিতার মাথায় কিছুই এল না । রাফার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? নিজের শরীরের রক্ত এভাবে ওর শরীরে নিয়ে কি লাভ ! কিন্তু কোন কথা বলল না । কোন প্রতিবাদও করলো না । নিজের বা হাতটা এগিয়ে দিল ।
রাফা খুব সাবধানে সেটা পুশ করলো ওর হাতে । কিছুই হল না । কোন পরিবর্তন হওয়ার কথাও না । রাফা বলল
-তুমি ঘুমাও কেমন ! আর এই কথাটা কাউকে বল না ! আমি যাচ্ছি !
-চলে যাবে ?
-হুম ! তবে ভয় নেই আমাদের বারবার দেখা হওয়াটা বন্ধ হবে না । আই প্রমিজ ইউ দ্যাট !
নিকিতার নিজেরও খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হল কথাটা । কিন্তু কোন মিরাকেল ছাড়া এটা সম্ভব না । খুব বেশি দিন নেই ওর হাতে ।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই ও নিজের ভেতরে পরিবর্তনটা লক্ষ্য করতে পারছিলো । কেমন যেন নিজেকে সুস্থ মনে হচ্ছে । এতো দিন ওর শরীরের যে একটা অসুখ বাসা বেঁধে ছিল এটা ও খুব ভাল করেই বুঝতে পারতো কিন্তু আজকে সকালে সেটা মনে হচ্ছে না । ডাক্তারকে কথাটা বলতে ডাক্তার খানিকা অবাক হলেও কিছু বলল না । শেষে নিকিতা নিজ থেকে আবারও ওর শরীরের কন্ডিশন চেক করতে বলল । ডাক্তার খানিকটা বিরক্ত হলেও না করলো না । কিন্তু পরদিন যখন সব রিপোর্ট এসে হাজির হল তখন ডাক্তারের মুখ হা হয়ে গেল । সব রিপোর্ট আগের থেকে ভাল দেখাচ্ছে । যেখানে দিন দিন নিকিতার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিলো । ওর বাবাকে কথাটা বলতেই প্রথমে যেন বিশ্বাসই হচ্ছিলো না । তিনি তবুও রিস্ক নিতে চান নি । পূর্ব নির্ধারিত ফ্লাইটেই নিকিতাকে নিয়ে হাজির হল সিঙ্গাপুরে । তারাও নিকিতার উপর টেস্ট করে চমকে গেল । নিকিতার শরীরের অবস্থা একেবারে নরমাল । ব্লাড সেল গুলো নাকি পূর্ন দমে কাজ করছে । ওর মিরাকেল ছাড়া আর কোন ব্যাখ্যা খুজে পেল না । ওরা আরও কিছু টেস্ট করতে চাইলো কিন্তু কিভাবে এসব হল জানতে আগ্রহী কিন্তু নিকিতার বাবা আর দেরি করেন নি । নিকিতাকে নিয়ে দেশে ফিরে এসেছে । তার মেয়ে সুস্থ হয়ে গেছে এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে ।
ছয়
ফ্যডরিক কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । তারপর আবারও বলতে শুরু করলো
-কিন্তু আমাদের হাতের আসল জিনিসটা এল না ।
-কেন ?
-নিলান ডাস্টি নামের একজন বায়োলজিস্ট সেই বাচ্চাকে নিয়ে পালিয়ে গেল । তাকে আর খুজে পাওয়া যায় নি ।
-আপনি বলতে চান সেই ছেলেটা রাফায়েল !
-নাহ ! তাহলে ওর বয়স আমি ৪৪ বলতাম না । আরও বেশি বলতাম ।
-তাহলে ?
-সেই বাচ্চাটা ছিল রাফায়েলের বাবা !
নিকিতা অনেক টা সময় ফ্যাডরিকের দিকে তাকিয়ে রইলো । ওর কথাটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না তবে কেন জানি মনে হচ্ছে ফ্যাডরিক সত্য কথা বলছে । তাকে মিথ্যা কথা বলার জন্য নিশ্চয়ই তাকে এভাবে নিয়ে আসা হয় নি ।
-ওর বাবা কোথায় ?
-ডেড !
-কিভাবে ?
-এতে আমাদের হাত নেই । আসলেই ১৯৪৫ এর পরেই আমরা নিজেদেরকে নিয়েই বাঁচি না ঐ বাচ্চাকে খোজার সময় কোথায় । ওর প্রথম খোজ পাই আমরা ১৯৬০ সালের দিকে । ভারতের একটা জায়গা থেকে । শোনা গিয়েছিলো যে এমন একটা ছেলে যে যার নাকি বয়সই বাড়ে না । এবং ছেলেটার নাকি অদ্ভুদ ক্ষমতা আছে । ঐ টুকু বয়েসেই অসাধারন বুদ্ধি আর শরীক শক্তি । তার রক্তে নাকি অদ্ভুদ ক্ষমতা আছে ।
এই বলে সে নিকিতার দিকে আরেকটা কাগজ এগিয়ে দিল । এটা একটা পেপার কাটিংয়ের স্ক্যানের কপি । সেখানে একটা ছেলের ছবি দেখা যাচ্ছে । যদি অস্পষ্ট তবে দেখে ১০/১২ বছরের বেশি মনে হচ্ছে না । লেখা গুলো হিন্দি কিংবা অন্য কোন ভাষা ।
ফ্যাডরিক বলল
-এখানে লেখা আছে ছেলেটার রক্ত অদ্ভুদ ক্ষমতা আছে । দুইজন সাঁপে কামড়ানো মানুষের কে বাঁচিয়েছে কেবল নিজের রক্ত সেই ক্ষত স্থানে ছুয়ে দিয়ে ! আমরা তখন সবে মাত্র একটু স্থিতু হতে শুরু করেছি । আমাদের বুঝতে কষ্ট হল না ছেলেটা কে হতে পারে ।
ফ্যডরিক থামলো । সামনে রাখা লাল রংয়ের একটা গ্লাস থেকে কিছু একটা চুমুক দিল । তারপর আবারও কথা বলা শুরু করলো ।
-কিন্তু আমরা তাকে ভারতে গিয়ে খুজে পেলাম না । পরে খোজ নিয়ে জেনেছি । ৭০ সালের দিকে এই দেশে আসে । তখন এই দেশের অবস্থা মোটেই ভাল না । এক বাঙ্গালী মেয়েকে বিয়েও করে ফেলে । ঠিক তারপর পরই দেশে যুদ্ধ বেঁধে যায় । এর ভেতরেই মেয়েটা গর্ভবতী হয়ে পড়ে । মেয়েটাকে ওর বাবা বাসায় রেখে যুদ্ধে চলে যায় রাফায়েলের বাবা । তবে সে কোন খানে যুদ্ধ করেছে কেউ বলতে পারে না । যুদ্ধের পর আর সে ফিরে আসে নি । ধারনা করা হয় সে যুদ্ধেই মারা পড়েছে । যুদ্ধের পরপরই রাফায়েলের জন্ম হয় কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে ওর মা ওকে জন্ম দিতে গিয়েই মারা পড়ে । ওর নানার কাছে বড় হতে থাকে রাফায়েল আহমেদ ওরফে রাফিস আহমেদ ।
আমরা অনেক পড়ে জানতে পারি রাফায়েলের কথা । কয়েকবার ওকে ধরার চেষ্টা করেও রাফায়েল হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে । এই ছোট বয়সেও রাফায়েল ছিল অনেক তীক্ষ বুদ্ধিমত্তার অধিকারি । ওর নানার মারা যাওয়ার পরে রাফায়েল যেন একেবারে গায়েব হয়ে গেল । জানেনই তো আপনাদের দেশের মানুষ কত সহজে হারিয়ে যেতে পারে । শেষে আবার আমরা ওকে ট্রেস করতে পেরেছি আপনার মাধ্যমে । আপনার সিঙ্গারপুরের পরীক্ষার নিরীক্ষা সব চলছিলো যে হাসপাতালে সেও আমার সাথে কাজ করে হিউম্যান টেকনোলজি নিয়ে, কিন্তু গোপনে । আপনাকে আমি তখন থেকেই চিনি । কারন রোগটা খুব রেয়ার । যে কারো হয় না । আমরা আমরা শরীরের রক্ত নিয়ে বেশ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি কিন্তু ফলাফল ছিল শূন্য । আপনি কিছুদিন পরে মারা যেতেনই । কিন্তু আপনার হঠাৎ এভাবে সুস্থ হয়ে যাওয়া নিয়ে ওরা বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিল সেই সাথে আমি নিজও কিন্তু পরে আমার বুঝতে মোটেই কষ্ট হল না যে আপনার সাথে কি হয়েছে । তখন থেকেই আপনার পেছনে লোক লাগিয়ে দিলাম । এবং রাফায়েলকে খুজে পেলাম আবারও ।
জানতাম যে আমারও যদি ওকে ধরতে যাই তাহলে আগের বারের মত আবারও হাত ফঁসকে চলে যাবে । তাই ওর দুর্বলতা খুজে বের করলাম । ও যে আপনাকে বাঁচাতে আসবে সেটা আমি শত ভাগ নিশ্চিৎ ।
-আপনারা ওকে নিয়ে কি করবেন ?
-সেটা আপনার জান জানলেও চলেবে ?
-না আগে বলুন !
-দেখুন আপনি জানতে চেয়েছিলেন আমি জানিয়েছি । আর নয় ! যদি আপনি আমাদের সাথে কো অপারেট না করেন তাহলে কিন্তু আমরা অন্য পথে যাবো !
-যা ইচ্ছে করেন ! আমি ওকে ফোন করবো না !
ফ্যাডরিকের মুখের ভাগ মুহুর্তেই বদলে গেল । চেয়ার থেকে উঠতে যাবে ঠিক তখনই বাইরে থেকে গুলির আওয়াজ ভেসে এল । তারপরই আর্তনাদের আওয়াজ !
ফ্যডরিকের মুখের ভাব আবারও স্বাভাবিক হয়ে এল । হাসি মুখে বলল
-যাক আপনাকে আর ফোন করতে হল না । পাখি নিজেই হাজির !
ফ্যডরিক সেই মাঝ বয়সী লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল
-একে নিয়ে যাও । মনে রেখো এ হচ্ছে আমাদের ইন্সুরেন্স ! সাবধানে রেখো ।
নিকিতার কেমন যেন কান্না আসতে লাগলো । কেন জানি নিজেকে বড় অপরাধী মনে হতে লাগলো ! মনে হতে লাগলো ওর জন্যই রাফা আজকে বিপদে পড়ে গেছে ।
সাত
বাইরে থেকে গোলাগুলির আওয়াজ এখন আর আসছে না, কিছু সময় আগেই সেটা বন্ধ হয়েছে । নিকিতাকে আগে যে ঘরে রাখা হয়েছিলো সেখানেই ওকে রাখা আছে । দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করা । সেই তখন থেকে এক ভাবে নিকিতার চোখ দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে । বারবার কেবল সেই একটা কথাই কেবল মনে হচ্ছে যে রাফা কেবল ওর জন্য ধরা পড়েছে । ওর আরও একটু সাবধান হওয়া দরকার ছিল । যদি আজকে এখানে না ধরা পড়তো তাহলে রাফাকে ওরা ধরতে পারতো না ।
মনটা পড়ে রইলো রাফার কাছে । ছেলেটার এখন কি অবস্থা কে জানে !
আর ঘন্টা খানেক পরেই দরজাটা খুলে গেল । নিকিতা তাকিয়ে দেখলো সেই মাঝ বয়সী লোকটা আবারও সামনে দাড়িয়ে ।
-আপনাকে আমার সাথে আসতে হবে ?
-কোথায় ?
-আসুন । গেলেই দেখতে পাবেন !
নিকিতা কোন কথা না বলে লোকটাকে অনুসরণ করলো । প্রথমে সে একটা বড় হল রুমে এসেছিলো কিন্তু এবার আর হল রুমের দিকে গেল না লোকটা । দরজা দিয়ে বের হয়ে খোলা প্রঙ্গলে চলে এল । সব জায়গায় আলো জ্বলছে । নিকিতা হাটার সময় খেয়াল করে দেখলো জায়গাটা আসলেই অনেক বড় । কোর রিসোর্ট কিংবা কারো বাগান বাড়ি হবে কারো ।
ওরা সামনের কোন একটা একতলা বাসার দিকে যাচ্ছে । সেখানে বেশ কয়েকজন মানুষ হাতে বন্দুক নিয়ে পাহারা দিচ্ছে । নিকিতা বারান্দায় উঠতেই আবারও সেই কথাটা মনে হল । ওকে নিয়ে আসা হয়েছে রাফার সাথে দেখা করানোর জন্য ।
শেষ দেখা !
সত্যি তাই হল । নিকিতাকে একটা ঘরের ভেতরের প্রবেশ করানো হল । অন্যান্য ঘর গুলোর মত এটাতে উজ্জল আলো নেই । তার বদলে একটা ৬০ পাওয়ারের আলো জ্বলছে । ঠিক তার রুমের মাঝখানে একটা চেয়ারে রাফা বসে আছে । মাথাটা একটু নিচু করা । মনে হচ্ছে ওকে টর্চার কথা হয়েছে মুখটা একটু নিচু করে রেখেছে কিন্তু সেখান থেকে রক্তের একটা ধারা নেমে এসেছে সেটা চিনতে নিকিতার কষ্ট হল না ।
একেবারে শেষ দিকে আরেকটা চেয়ারে ফ্যডরিক বসে আছে । হাতে চুরুট ধরা । নিকিতাকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে সেই মাঝবয়সী লোকটা নিজেও ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো । তারপর দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল ।
ফ্যডরিকে দেখে খুব হাসি খুশিই মনে হল । আপন মনেই সে নিজের চুরুটে টান দিয়ে চলেছে । নিকিতার দিকে তাকিয়ে বলল
-মিস নিকিতা রাফায়েলকে আমরা আজকেই এখান থেকে সিফট করবো । যাওয়ার আগে ও আপনার সাথে কয়েকটা কথা বলতে চায় । কিন্তু দুঃখের বিষয় কথা গুলো আপনাদের একান্তে বলার সুযোগ পাবেন না । আমাদের সামনে বলতে হবে ।
ফ্যডরিক যেন খুব মজা পেয়েছে এমন একটা মুখ করলো । দুজন প্রেমিক প্রেমিকা নিজেদের মনের কথা ওরা শুনতে পারে এমন একটা মজার বিষয় যেন ।
নিকিতা বলল
-আপনারা এমন টা করতে পারেন না । ওকে এভাবে নিয়ে যেতে পারে না না ।
-অবশ্যই পারি । মনে রাখবেন ও আমাদের প্রজেক্ট । আমার হাতের তৈরি । ওর ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত গ্রহনের অধিকার আমাদের আছে ।
-ভুল । ও কোন ভাবেই আপনাদের হাতের তৈরি না । কোন ভাবেই না । ও একজন মানুষ । ওকে আপনারা এভাবে নিয়ে যেতে পারেন না ।
ফ্যাডরিক আবারও হেসে ফেলল ।
-পারি না ? তাকিয়ে দেখুন মিস নিকিতা, ওকে আমরা বন্দী করেছি । ও আমার সামনে, আমাদের ঘরে বন্দী । ওকে নিয়ে যেতে বাঁধা কোথায় !!
নিকিতা কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই একটা হাসির আওয়াজ পেল । তবে এটা ফ্যডরিকের মুখ নয় কিংবা সেই মাঝ বয়সী লোকটার মুখ থেকেও নয় । হাসিটা আসছে রাফার মুখ থেকে । রাফা এতো সময় মাথাটা একটি নিচু করে ছিল । এখন উপরে তুললো । মুখে এক চিলতে হাসি লেগে আছে ।
-মিস্টার ফ্যডরিক ! কথাটা ভুল বললেন
ততক্ষনে ফ্যডরিকের মুখের হাসি মুছে গেছে । মাঝবয়সী লোকটাও সতর্ক হয়ে উঠেছে ।
-কোন কথা ?
-এই যে "ওকে আমরা বন্দী করেছি । ও আমার সামনে আমাদের ঘরে বন্দী" । এই লাইণটা কি ঠিক বললেন ? যে মানুষটাকে আপনারা গত ১০ বছর ধরে একটা বারের জন্যও ধরতে পারেন নি সে কোথায় আছে জেনেও আজকে এতো সহজে ধরে ফেললেন ?
ফ্যডরিকের মুখ ততক্ষনে আরও কঠিন হয়ে উঠেছে । নিকিতা লক্ষ্য করলো মাঝ বয়সী লোকটা পিস্তল বের করে ওর মাথার বরাবর ধরে ।
রাফা বলল
-আমাকে আপনারা আপনাদের ঘরে বন্দী করেন নি । ভাল করে বললে হয় আমি আপনাদের সাথে এই ঘরে এসেছি । এই রুমে আমার সাথে আপনারা রয়েছেন । আর এতো সময় আমি যার নিরাপত্তার জন্য ভয় পাচ্ছিলাম সেই মেয়েটাও আমার সামনে !
ফ্যডরিক বলল
-রাফায়েল তুমি যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে তাহলে এই মেয়েটা মরবে !
-তাই !!
কয়েক সেকেন্ড কোন কথা হল না । নিকিতার মনে হল যেন সময় থেমে গেছে । কোথায় যেন কোন শব্দ হচ্ছে না । নিকিতার কেবল মনে হল পৃথিবীর সব কিছু যেন থেমে গেছে ।
তারপরেই পুরো পৃথিবীরা যেন কেঁপে উঠলো । পুরো এলাকাটা বিকট শব্দে ভেসে গেল । চারিদিকে বিস্ফোরনের আওয়াজ আর মানুষের আর্তনাদের আওয়াজ আসতে লাগলো ।
কয়েক সেকেন্ড পার হয়েছে যেন নিকিতা দেখলো রাফা নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়েছে । ওর পেছনে হাত ছিল এতো এতোক্ষন সেটা সামনে চলে এসেছে । নিচে একটা হাতকড়া পড়ে আছে । ফ্যডরিক বলতে গেল
-খবরদা........
কিন্তু শব্দটা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই রাফা সেই মাঝ বয়সী লোকটার কাছে পৌছে গেল । কোন মানুষ এতো দ্রুত চলতে পারে নিকিতা নিজের চোখে না দেখলে সেটা বিশ্বাস করতো না ।
মাঝ বয়সী লোকটা পিস্তলের মুখটা চেপে ধরলো রাফা । তখনই গুলোর আওয়াজ হল তবে সেটা খানিকটা ভোতা মত শোনালো !
নিকিতা তাকিয়ে দেখে রাফা পিস্তলে মুখের মাথায় হাত দিয়ে রেখেছে । সেখান থেকে রক্ত পড়ছে । কিন্তু রাফার সেদিকে লক্ষ্য নেই । রাফা মাঝ বয়সী লোকটার মুখ বরাবর বা হাতটা দিয়ে একটা ঘুষি চালালো । এতোই দ্রুত যে লোকটা নিজের মুখটা সরানোর চেষ্টা পর্যন্ত করতে পারলো না ।
ব্যস ! ছিটকে গিয়ে পড়লো সামনের দেওয়ালে । আর উঠলো না !
পিস্তল টা তখন রাফার হাতেই ধরা । তবে উল্টো করে । নিকিতা তখন রাফাকে জড়িয়ে ধরেছে । রাফার বুকের মধ্যকার হৃদ স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে । রাফা নিকিতাকে বলল
-তুমি ঠিক আছো তো ? ওরা তোমাকে আঘাত করে নি তো !
নিকিতা বলল
-না । কিন্তু তোমার হাত !
-ও কিছু না ।
নিকিতাকে রেখে রাফা এবার তাকালো ফ্যডরিকের দিকে । লোকটা কয়েক মুহুর্তের ঘটনায় খানিকটা বিহব্বল হয়ে পড়েছে । কিছুই যেন বুঝতে পারছে না । এখনও বাইরে বিস্ফোরনের আওয়াজ আসছে ।
রাফা ফ্যডরিকের দিকে তাকিয়ে বলল
-আমার পেছনে লাগা বন্ধ করে দাও । এর পরের পরিমান ভাল হবে না মোটেও ।
তারপর পিস্তল সোজা করে দিয়ে সরাসরি ফ্যাডরিকের পায়ে দুইটা গুলি চালালো ! তীব্র একটা চিৎকারে দিয়ে উঠলো তবে বিস্ফোরণের আওয়াজে সেটা প্রায় ঢাকা পড়ে গেল ।
যখন ওরা বাইরে বের হতে যাবে তখনই পেছনে থেকে ফ্যডরিক বলে উঠলো
-আমরা আবার আসবো, আমি গেলে অন্যজন আসবে । তোমার পেছন আমরা ছাড়বো না । আমি চলে যাবো কিন্তু অন্যকেউ আসবে ঠিকই । আর এখন আমরা তোমার দুর্বলতার কথাও জানি ।
নিকিতাকে দরজার বাইরের বের করে দিয়ে রাফা দরজাটা আটকে দিল । নিকিতা তাকিয়ে দেখে একটু আগের দেখার জায়গাটার সাথে এখনকার জায়গার কোন মিল নেই । ওর সামনেই সেই গার্ড গুলো সবাই মাটিতে পড়ে আছে । কারো দেহে প্রাণ আছে কি না নিকিতা জানে না । একটু আগে যে বিল্ডিংয়ে ছিল সেটার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই । সাব জায়গায় আগুন জ্বলছে ।
পেছন থেকে আবারও দুইটা গুলির আওয়াজ এল । কি হল সেটা বুঝতে কষ্ট হল না ।
রাফা তারপরই দরজা খুলে বের হয়ে এল । ওকে নিয়ে দৌড়াতে লাগলো আগুন আর ধ্বংস জজ্ঞের মাঝখান দিয়ে ।
আট
-আমাদের মনে হয় আর দেখা হবে না ।
নিকিতার মনে হচ্ছিলো রাফা এই কথাটা বলবেই ।
-তুমি আমার সব কিছু জেনে গেছো ।
-আমার কোন সমস্যা নেই । তুমি বাবা কিভাবে এসেছে কিংবা কি করে তুমি এই পৃথিবীতে এসেছো । আমি কেবল জানি যে তুমি না থাকলে আমি হয়তো আজকে বেঁচেই থাকতাম না । আমি আর কিছু জানতে চাই না !
রাফা কিছুটা সময় নিকিতার দিকে তাকিয়ে রইলো ।
সেই রিসোর্টের পাশেই রাফার বাইকরা পার্ক করা ছিল । ভাঙ্গা দেওয়াল দিয়ে দুজন বের হয়ে বাইরে উঠে বসে । ততক্ষনে সামনের দরজার সাইরেন বাজিয়ে পুলিশ এসে হাজির হয়েছে । রাফার বাইকটা দ্রুত ছুটে চলতে লাগলো বনের রাস্তা দিয়ে । হাইওয়ে ধরতে ওদের আও মিনিট বিশেক লেগে গেল । তারপর সোজা ঢাকার পথে । পুরোটা পথ নিকিতা রাফাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো । মনে হচ্ছিলো যেন কিছুতেই এই ছেলেটাকে আর ছাড়া যাবে না । ওকে জড়িয়ে ধরে রাখতে হবে ।
একটু আগে নিকিতাদের বাসার ঠিক পেছন দিকে এসে থেমেছে বাইকটা । ওকে নামিয়ে দিয়ে রাফা কথাটা বলল ।
-তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম । অনেক কিছুই জানো না তুমি আমার ব্যাপার !
নিকিতা বলল
-তোমার বসয় কি আসলেই ৪৪ !
-হ্যা !
-সত্যি ?
-হুম ! আমার শরীরের আমার বাবার ডিএনএ রয়েছে । আমার বাবা যেমন টা ছিলেন আমিও তেমনই । যদিও বাবাকে ওরা ল্যাবরোটারিটে বানিয়েছিলো তবুও আমার আর বাবার শরীরের ভেতরের কোন পার্থক্য নেই । বলতে গেলে আমি আমার বাবার আরও ভাল সংস্করণ । আমার বয়সের অর্ধেকটা মত দেখায় ।
নিকিতা কি বলবে খুজে পেল না । রাফা বলল
-আমাদের আসলে আর দেখা না হওয়াই ভাল । আমি ভাবছি দেশ ছাড়বো । এখানে আর আসলেই থাকা যাবে না । হয়তো অন্য কোন দিন আবার আমাদের দেখা হয়ে যাবে ।
নিকিতা এখনও কোন কথা না বলে রাফার ঠোটে একটা একটা দীর্ঘ চুমু খেল । তারপর ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । ছেলেটার প্রতি ওর অদ্ভুদ একটা মায়া জন্মে গেছে । কিছুতেই ছাড়তে মন বলছে না । কিন্তু অনেক কিছুই না চাইলেও করতে হয় ।
পরিশিষ্টঃ
নিকিতার হাটতে পারছে না । নিহান তখনও দৌড়ে চলেছে ফুটপাত ধরে । ছেলেটা এতো দুরন্ত হয়েছে উঠেছে । নিকিতা পেছনে হাটতে হাটতে ফোনে কথা বলা স্বামীর দিকে তাকালো ।
জাহিদ এই জাহিদ
নিকিতার স্বামী জাহিদ ফোন রেখে বলল
-কি হল ?
-তোমার ছেলেকে সামলাও । আমি পারছি না ।
জাহিদ মৃদ্যু হেসে নিহানের দিকে দৌড়ে গেল । নিকিতা আর বেশি বসে পড়লো ফুটপাতের উপরে । অনেকেই ওর মত বসে আছে এখানে । একটু দুররের নায়াগ্রা ফলস । সেটা দেখতেই ওরা এসেছে !
নিকিতা চেয়ে দেখলো জাহিদ নিহানকে কোলে তুলে নিয়ে নায়াগ্রা ফলসের দিেক যাচ্ছে । ওর দিকে তাকিয়ে একবার ডাক দিল । নিহিত হাতের ইশারায় বলল ও আসছে, ওরা আবারও সামনের দিকে এগুতে লাগলো । নিকিতা উঠতে যাবে তখনই সামনে একজন হাত বাড়িয়ে দিল । নিকিতা চোখে মেলে সামনে দাড়ানো মানুষটার দিকে তাকিয়ে খানিকটা চমকে উঠলো ।
রাফায়েল !
প্রায় ১০ বছর পরে ওদের আবারও দেখা । ছেলেটা ঠিক আগের মতই আছে । একদম দেখতে । সেই তুলনায় নিকিতা অনেকটা বদলে গেছে ।
-তুমি !
রাফায়েল কেবল হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ।
-আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে তোমার সাথে আবার দেখা হয়ে গেছে !
-ম্যাডাম, আমি এমন অনেক কাজই করি যা অনেকের বিশ্বাস হতে চায় না !
(সমাপ্ত)
২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৫৬
অপু তানভীর বলেছেন:
২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৩৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ওয়াও!!
দারুন ভিন্নমাত্রার স্বাদ পেলাম! একেবারে ২য় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে সাইন্স ফিকশন উইদ চিরন্তনি সুইট লাভ
এই না হলে আমাদের অপু তানভীর
++++++++++++++++++
২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:২৭
অপু তানভীর বলেছেন: আমার গল্পে প্রেম ভালুবাসা থাকিবে না তা কি হয় নাকি
৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:০৯
রিপি বলেছেন:
এটা আপনি কিভাবে লিখে ফেললেন? অনুবাদ নাকি আপনার লেখা? মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।
আমার বড় কোনো গল্প পড়তে আজকাল আর ধৈর্য্য হয়না। তবে আপনার এই গল্প এক নিঃস্বাসে পরে ফেললাম। চমৎকার ভাবে লিখেছেন। আরো এরকম লেখা পড়তে চাই। অনেক অনেক ভালোলাগা রেখে গেলাম।
২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:২৮
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য ।
এরকম গল্প আরও আছে । খুজে দেখুন আমার ব্লগেই
৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৪৬
একজন বুদ্ধিমান পাগল বলেছেন: খুব খুব খুব ভাল!
অনেক বড় গল্প তবে একবারে পড়ে শেষ করে দিয়েছি।
কিন্তু একটা জায়গায় একটুখানি কৌতুহল থেকেই গেল!
নিকির ছেলেরও কি কোন রহস্য আছে??
২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:২৯
অপু তানভীর বলেছেন: সেটা অন্য কোন গল্প হয়তো
৫| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:১১
বিজন রয় বলেছেন: অনেক ভাল লাগল।
+++
২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৩০
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২৪
একজন বুদ্ধিমান পাগল বলেছেন: ঠিকাছে....
২৭ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:২০
অপু তানভীর বলেছেন:
৭| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২৪
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:
আমি এমন অনেক কাজই করি যা অনেকের বিশ্বাস হতে চায় না !
২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২৮
অপু তানভীর বলেছেন:
৮| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৩৮
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এতদিনে মনে হলো, অপু তানভীর একটা ভালো গল্প লিখেছেন
২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৪২
অপু তানভীর বলেছেন: কেবল এইটা চোখে পড়লো ? আরও আছে খোজ করিয়া দেখুন জনাব
৯| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:২৩
উল্টা দূরবীন বলেছেন: ভালো লাগলো।
২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৫৮
অপু তানভীর বলেছেন:
১০| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:১২
পলক শাহরিয়ার বলেছেন: বিশাল গল্প! পড়তে খুব একটা কষ্ট হয়নি। ভাললাগা রেখে গেলাম।
২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৪০
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
১১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:১৬
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এতোবড় গল্প!! পড়বো কখন ভাববোই বা কখন?? তার চেয়ে ভাল উপস্থিতির জানান দিয়ে পলায়ন।। ঠিক না??
২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৪০
অপু তানভীর বলেছেন: পড়ে ফেলেন । কোন সমস্যা নাই
১২| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৫৬
অতঃপর হৃদয় বলেছেন: অনেক সুন্দর গল্প
২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৪১
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
১৩| ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩
শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: মুগ্ধাটা আমার চোখে
২৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৩৪
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
১৪| ৩১ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৪
নিশির আলো বলেছেন: খুব ভালো লাগলো।ব্লগে এসে আমি গল্পই খুজি, আপনার ব্লগটা যেন গল্পের রাজ্য।
০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:০৯
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
১৫| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৫৬
খাঁজা বাবা বলেছেন: এই রাফায়েল শেষের দিকে অনেক বদলে গেছে
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৪৭
শায়মা বলেছেন: খুব খুব ভালো লাগা!