নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্প এক
মিতুর ঘুমন্ত চেহারাটা আমার সব সময়ই পছন্দ খুব কিন্তু বলা হয়ে ওঠে নি কোন দিন, কোন একদিন বলব ওকে । কেবল দুর থেকে চুপচাপ দেখেই গেছি । আজকেও মেয়েটার চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় । প্রতিদিন রাতেই এভাবে কেটে যায় অনেকটা সময় । একটু ঘুম ঘুম ভাব এলেই আমি উঠে দাড়াই । মিতুর পাশে থাকা যাবে না । মেয়েটার ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে ।
আমি আস্তে করে বিছানা থেকে উঠলাম । বারান্দায় একটা চেয়ার পাতা আছে । ১১ তলার উপরে থাকি তাই বারান্দার দরজাটা আটকানোর দরকার পরে না । আমি বারান্দায় গিয়ে বসলাম । রাতের নির্জনতা আমার ভালই লাগে । যদিও খুব একটা রাত জাগার অভ্যেস নেই তবুও মিতুর জন্য এখন রাত জেগেই থাকি । আমি ঘুমালে মেয়েটা ঠিক মত ঘুমাতে পারে না শান্তি মত ।
ঘুমাক একটু শান্তিমত । সারাদিন অফিস করে তারপর বাসায় এসে আমার জন্য রান্না করে । রাতে যদি আমার জন্য একটু শান্তি মত না ঘুমাতে পারে তাহলে মেয়েটার প্রতি অন্যায় করে করা হবে ।
আমি হয়তো ব্যাপার জানতামই না যদি না মিতুকে সেদিন ফোনে কথা না বলতে শুনতাম । ভাগ্য ভাল শুনেছিলাম নয়তো জানাই হত না যে মেয়েটার সমস্যা হচ্ছে । আমার অবশ্য সমস্যা খুব একটা হয় না । সকাল বেলা অফিস যাওয়ার আগে ঠিক মত একটা শাওয়ার নিলেই না ঘুমানোর ক্লান্তি কেটে যায় ।
হঠাৎই পেছনে তাকিয়ে দেখি মিতু দাড়িয়ে আছে আমার পেছনে । কখন মেয়েটার ঘুম ভাঙ্গলো কে জানে ? আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি এখানে কেন ?
আমি প্রথমেই কি বলবো ঠিক বুঝলাম না । তারপর কোন রকমে সামলে নিয়ে বললাম
-এই ঘুম আসছিলো না ! তাই বসে আছি ।
-মিথ্যা কথা !
মিথ্যা কথা শব্দটা মিতু এমন জোর দিয়ে বলল যে আমি নিজেই চমকে উঠলাম । তারপর আমার ঠিক সামনে এসে আমার কাছে হাটু মুড়ে বসে বলল
-সত্যি করে বলেন কেন এখানে বসে আসেন ? আমপনার চোখে ঘুম লেগে আছে । আমি দেখতে পাচ্ছি !
কি বলবো ঠিক বুঝলাম না কয়েক মুহুর্ত । তারপর বললাম
-আসলে আমি ঘুমালে তোমার ঘুমানোর ডিস্টার্ব হয় । নাক ডাকি তো ! এই জন্য !
-এই জন্য আপনি সারা রাত না ঘুমিয়ে জেগে থাকবেন ?
-কই জেগে থাকি না তো ! এখানে বসি । টিভি দেখি । সময় কেটে যায় ! আর আমার রাতে জেগে থেকে অভ্যাস আছে ।
মিতু আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি সেদিন আমার ফোনের কথা শুনে ফেলেছিলেন তাই না ?
আমি কেবল মাথা ঝাকালাম ।
-কদিন থেকে এমন করছেন ? ঐদিন থেকেই ?
আমি আবারও মাথা ঝাকালাম ।
-দুই সপ্তাহ আপনি আমার জন্য না ঘুমিয়ে রাত পার করে দিচ্ছেন । চোখের নিচে আপনার কালি এই জন্য পড়ছে । একবার আমাকে বলতেও পারেন নি ?
আমি তাকিয়ে দেখি মিতুর চোখে পানি ভরে গেছে । মিতু সেটা মোছার চেষ্টাও করছে না । আমি খানিকটা বিব্রত চোখেই তাকিয়ে রইলাম । কি বলা উচিৎ ঠিক বুঝতে পারলাম না । মিতু আমার দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলো ! আমি তখনও চুপ করে আছি । কেবল তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে ।
মিতু আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে ঘরের ভেতরে এল । বলল
-আর কোন দিন যদি এরকম করেছেন ! আপনি নাক ডাকুন মাইক বাজান আমার কোন সমস্যা হবে না । আসুন !
বিছানায় শোয়ার সময় অনুভব করলাম মিতু একেবারে আমার বুক ঘেসে চলে এসেছে কাছে । মেয়েটা এখন একটু একটু কাঁদছে ।
কষ্টে ?
আমি ওর জন্য না ঘুমিয়ে এই কটা দিন থেকেছি এই জন্য ?
নাকি আনন্দে ?
তার অসুবিধার জন্য কেউ একজন না ঘুমিয়ে আছে ।
-আচ্ছা কান্না বন্ধ কর !
-আপনি ঘুমান । আর নাক ডাকুন ! আজকে আপনার নাক ডাকা আমি শুনবো ।
আমি হাসলাম কেবল । মিতু যেন আরও একটু শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো । আজকে মেয়েটা আমার নাক ডাকা শুনেই ঘুমাবে মনে হচ্ছে !
গল্প দুই
-আমি আপনার ছেলেকে বিয়ে করবো না !
ঘরের ভেতরে যেন বোমা ফাঁটলো !
আমি কি যেন ভাবছিলাম । মনটা কেমন উদাস উদাস লাগছিলো । সুপ্তির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আমার চোখের সামনে দিয়ে আর আমি চুপচাপ দেখছি । কিছু বলছি না । ঠিক এই সময়ে সুপ্তি কথাটা বলল ।
আমি তাকিয়ে দেখি সুপ্তির বাবা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । তিনি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না তার মেয়ে এই কথাটা বলেছে । তারপর সুপ্তিকে যারা দেখতে এসেছিলো তাদের সবার চোখেই বিশ্ময় দেখতে পেলাম । তারা নিজেরাও কথাটা ঠিক হজম করতে পারছে না ।
বিয়ের কথা বার্তা মোটামুটি পাকাই বলা চলে । বিয়ের তারিখও ফাইনাল । পাকা কথা দেওয়া হয়ে গেছে এখন কেবল সুপ্তির হাতে আংটি পরাবে । হাতটা এগিয়ে দিতে বলল ওরা । সুপ্তিও বাধ্য মেয়ের মত হাত টা এগিয়ে দিচ্ছিলো । মাঝ পথে এসেই থেমে গেল । তারপর এক প্রকার চিৎকার করেই বলল কথা টা
সুপ্তি বাবার মুখে মুহুর্তেই লাল হয়ে গেল । মেয়ের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে রইলেন কিছুটা সময় । কিন্তু আমি অবাক হয়ে দেখলাম সুপ্তি সেই চোখ রাঙ্গানী সম্পূর্ন উপেক্ষা করে ছেলের মায়ের দিকে তাকিয়ে আবারও কথাটা বলল
-আপনার ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না !
সুপ্তির বাবা ধমক দিয়ে বলল
-সুপ্তি কি হচ্ছে এসব ?
-বাবা আমি ঠিকই বলছি । ইনার ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না । কোন ভাবেই না ।
-মেরে তোকে আমি নদীতে ভাসিয়ে দিব !
সুপ্তি শান্ত কন্ঠে বলল
-ভুল বললে বাবা । রেগে গেলে তোমার কথার থেই হারিয়ে যায় । কথাটা হবে তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে নাদীতে ভাসিয়ে দেব । মেরে হাড্ডি ভেঙ্গে দেব এটা হবে ।
সুপ্তির বাবা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন । এই মেয়েকে যেন তিনি চিনতে পারছেন না ।
-তুই একখুনি আমার সামনে থেকে বেরিয়ে যা । যদি এই খানে বিয়ে না করিস তাহলে তোকে আমি ঘরে রাখবো না !
-ফাইন !
সুপ্তি আবারও সবাইকে অবাক করে দিয়ে উঠে দাড়ালো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-সুমন চল ।
ঘরের প্রত্যেকটা চোখ আমার দিকে ঘুরে মুহুর্তেই ।
এই মেয়ের সমস্যা কি ! আমাকে কি ডুবিয়ে মারতে চায় ? আজকে ওর বাগদান হওয়ার কথা ছিল । ভাল মন্দ খাওয়া হবে তাই আমাদের বন্ধুদের কয়েকজনকে দাওয়াত দিয়ে ছিল । তার ভেতরেই আমি ছিলাম । কিন্তু এখানে এসে এ কি ঘটা শুরু করেছে !!
সুপ্তি বলল
-বাবা আমি যাচ্ছি, তোমার সামনে দিয়েই । এই সুমনকে দেখছো না একে আমি বিয়ে করবো । যদি মেনে নাও তাহলে তোমার সাথে আবার আমার দেখা হবে । নয়তো না । ভাল থাকো !
আমাকে সবার সামনে দিয়ে একটা টেনেই বের হয়ে এল । আমি ঘরের ভেতর থেকে যখন বাইরে বের হয়ে এলাম তখন কেবল কিছু অবাক করা চোখ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে । আমাদের বন্ধুরাও একটা কথা বলে নি ।
আমি বাইরে বেরিয়ে এসে বললাম
-এটা কি ছিল ?
-কেন দেখিস নি ?
-তার মানে কি ! তোর সমস্যা কি !
-কেন তুই আমাকে বিয়ে করতে চাস না ? বল ? যদি না চাস তাহলে আমাকে এখানে রেখে চলে যা ।
-আরে আমি কি তাই বলেছি নাকি ! জানতে চাইলাম এই সব করার দরকার ছিল কি !
-শোন আমি অনেক অপেক্ষা করেছি । তোর মত গাধার মুখ থেকে একটা বার কথাটা শোনার জন্য । কিন্তু .....
-আচ্ছা ঠিক আছে । তাহলে এখন ? এখন কি করবি ?
-রিক্সা ডাক । এটিএম বুথের কাছে যেতে হবে । টাকা পয়সা যা আছে তুলে ফেলি । সামনে কদিন গাছ তলায় থাকতে হবে ঠিক নাই ।
আমি রিক্সায় উঠটে উঠতে বললাম
-ভয় নেই । বাসায় চল । মা রাগ করবে না । নিশ্চিত থাক ।
-ঠিক তো ?
-হুম ঠিক ।
রিক্সা করে যখন বাসার দিকে রওনা দিলাম তখনও আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না । এই মেয়েটা হঠাৎ এমন একটা কাজ কিভাবে করে ফেলল !
গল্প তিন
নীলুর ঘুম টা বেশ পাতলা । সামান্যতম শব্দেই ঘুম ভেঙ্গে যায় । রাতে ঘুমাতে গেলে কতবার যে সে চোখ মেলে তাকাবে তার কোন ঠিক নেই । আজকেও যখন রান্নাঘর থেকে টুক টাক আওয়াজ আসছিল নীলুর ঘুম ভেঙ্গে গেল ।
যদিও ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই । বাসাটা নতুন হলেও নীলু জানে রান্না ঘরে কে আওয়াজ করছে । প্রতিদিনই এরকম আওয়াজ হয় ।
সাফায়েতের রাত জেগে থাকার অভ্যাস আছে । রাত বেশি হয়ে গেলে যখন খিদে লাগে তখনই সাফায়েত রান্না ঘরে যায় । কোন কোন দিন ফ্রিজে রাখা বাসি খাবার গরম করে অথবা নিজেই কিছু ভেজে নেয় ।
নীলু প্রতিদিন ভাবে রান্না ঘরে গিয়ে সে কিছুটা সাহায্য করে কিন্তু কেমন জানি সংকোচ হয় । নতুন বিয়ে হলেও স্বামী স্ত্রীর ভেতরে আসলে যে রকম সম্পর্ক থাকার কথা নীলু আর সাফায়েতের ভিতর সেরকম কিছু এখনও তৈরি হয় নি । দুইজন পাশাপাশি ঠিকই থাকে কিন্তু একে অপরকে খুব একটা চিনে কি না কে জানে । নীলুর অবশ্য ইচ্ছে করে মানুষ টাকে চিনতে কিন্তু সাফায়েত একটা অদ্ভুদ দেওয়াল সৃষ্টি করে রেখেছে নিজের সামনে । অন্য রকম এক গাম্ভীর্যের দেওয়াল । নীলু কিছুতেই সেই দেওয়াল ভেদ করতে পারে না !
হঠাৎই রান্না ঘর থেকে কিছু একটা পরার আওয়াজ এল । মাঝরাতে আওয়াজ টা বেশ ভালই শোনা গেল । এবার মনে হয় রুম ছেড়ে ওঠা যায় ! নীলু এতোক্ষন যেন এই সুযোগটার জন্যই অপেক্ষা করছিল !
নীলু রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো সাফায়েত উপুর হয়ে বসে কিছু একটা গোছানোর চেষ্টা করতে । সারা রান্না ঘরে ডিমের হলুদ সাদা অংশ পরে একাকার !
-সরুন ! আমি পরিস্কার করছি !
সাফায়েত পিছন ফিরে তাকিয়ে বলল
-আরে তোমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলাম দেখছি !
-আপনি উঠুন !
-আরে কোন সমস্যা নেই ! আমি পারবো !
-আপনি পারবেন বুঝলাম ! এখন উঠুন তো !
সাফায়েত কিছুটা সময় কি যেন ভাবলো ! তারপর রান্না ঘর থেকে উঠে গেল বেসিনের দিকে !
নীলু বলল
-অন্য কিছু কি বানিয়ে দেব ?
-না না দরকার নেই ।
আর কিছু না বলে সাফায়েত আবারও টিভির সামনে গিয়ে বসলো ! প্রতি রাতে ও কেবল এই কাজটাই করে ! ঘন্টার পর ঘন্টা টিভির সামনে বসে থাকে । সামনে রাখা টি-টেবিলের উপর একটা ল্যাপটপ খোলা থাকে । কিছু করে কি না ও নিজেই বলতে পারবে না !
-এই নিন !
টিভির দিকে তাকিয়ে থাকলেও সাফায়ােত যেন অন্য কিছু ভাবছিল । নীলুর কথা শুনে ফিরে তাকালো !
এক প্লেট ডিমে ভাজা পাউরুটি !
প্রায় দিন রাতেই সাফায়েত এটাই বানিয়ে খায় ! আজকে নীলু বানিয়ে এনেছে !
বাটিটা সাফায়েতের হাতে দিয়েও নীলু চলে গেল না ! পাশেই দাড়িয়ে থাকলো ! নীলুকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলল
-কিছু বলবে ?
-না !
না বললেও কেন জানি নীলুর যেতে ইচ্ছে করছে না । মনে হচ্ছে একটু দাড়িয়ে থেকে সাফায়েতের খাওয়া দেখতে ।
কদিন থেকেই কেন জানি এই অদ্ভুদ ইচ্ছে টা ওর প্রায়ই জেগে ওঠে । বিশেষ করে ও যখন খাবার খায় কিংবা অফিসের জন্য তৈরি হয় নীলুর সেটা দেখতে অদ্ভুদ ভাল লাগে ! কোন ব্যাখ্যা হয় তো নেই তবুও নীলুর ভাল লাগে !
-বসলে চাইলে বস ।
নীলু বসল !
কিছুটা সময় কেটে গেল চুপচাপ । সাফায়েত ততক্ষনে প্লেট থেকে একটা করে পাউরুটি নিয়ে খেতে শুরু করেছে । ওর চোখ টিভির দিকে ।
নীলুর খিল খিল করে হাসির শব্দে খানিকটা যেন চমকে যেন নীলুর দিকে ফিরে তাকালো ! অবাক হয়ে বলল
-হাসছো কেন ?
-আপনাকে দেখে ?
-আমাকে ? আমি কি করলাম ?
-না, মানে টিভিতে হাসির মুভি হচ্ছে আপনি দেখছে কিন্তু আপনার মন অন্য দিকে । আমি ঐ মুভি সিন দেখে হাসলাম ! আপনি দেখলে আপনিও হাসতেন !
-আমি টিভি দেখছি !
-হুম দেখছেন ! ছাতা দেখছেন !
সাফায়েত কি বলবে ঠিক বুঝলো না ! আসলেই সে টিভির দিকে তাকিয়ে ছিল ঠিকই তবে সে কিছু দেখছিলো না ! সাফায়েত বলল
-ছাতা ?
-হুম ! আমব্রেলা !
এই বলে নীলু আবার খিল খিল করে হেসে উঠলো ! টিভির শব্দ নামানো । সেটা ছাপিয়ে নীলুর হাসির আওয়াজ পুরো ঘরে জুড়ে বয়ে এক অদ্ভুদ ধ্বনিতে বাজতে লাগলো !
সাফায়েত কেবল অবাক হয়ে নীলুর হাসির দিকে তাকিয়ে রইলো । এতো প্রানবন্ত হাসি সাফায়েত এর আগে কোন দিন দেখেছে কি না সে বলতে পারবে না ! এই মধ্যরাতে সাফায়েতের কেন জানি নীলুর এই হাসিটা মোটেই খারাপ লাগছিলো না !
গল্প চার
আজকে রিক্সায় চড়াটা অন্য রকম লাগছে । চারি দিকে যাই দেখছি তাই ভাল লাগছে । অবশ্য এই ভাল লাগার একটা আলাদা কারন আছে । আজকে আমার পকেট ভর্তি টাকা । আজকে বেতন পেয়েছি । বেতনের সব কটা টাকাই ব্যাংক থেকে তুলে ফেলেছি । এখন সেটা পকেটে করে ঘুরে বেড়াচ্ছি ।
মানুষজন কে দেখাতে ইচ্ছে করছে ডেকে ডেকে ।
ভাই এই দেখেন আজকে বেতন পেয়েছি ।
নিজের টাকা !
একদম নিজের আয় করা টাকা !
এমন না পকেটে টাকা ছাড়া আমি কোন দিন ছিলাম । কিন্তু সেটা ছিল বাপের টাকা । চাইলেই পাওয়া যেত । এখনও পাওয়া যায় ।
কিন্তু আজকেরটা একদম নিজের আয় করা টাকা । নিজের পরিশ্রমের টাকা ! এর অনুভুতিই আলাদা !
রিক্সাটা ধানমন্ডির এক এ এসে আবারও জ্যামে পড়লো । কতটা সময় লাগে কে জানে ! নেমে যাবো কি না বুঝতে পারছি না । মিতুর অফিসটা এখন থেকেই দেখা যায় । হেটে গেলে ২ মিনিট লাগবে । অবশ্য রিক্সা করে গেলে একেবারে ওর অফিসের সামনেই নামা যেত তবে জ্যামের কারনে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে । আমি রিক্সা থেকে নেমে গেলাম । আজকে হাটতেও ভাল লাগছে ।
আচ্ছা মিতু আজকে আমাকে দেখে কি খুশি হবে ?
কিংবা আগের মতই বিরক্ত হবে ?
জানি না তবে ও যা বলেছিলো আমি তাই করেছি । কেবল ওর জন্য ।
আমি ওর অফিসের সামনে দাড়াতেই মিতুকে বেরিয়ে আসতে দেখলাম । ওর অফিসের আরও কয়েকজনের সাথে কথা বলতে বলতে সিড়ি দিয়ে নামছে । আমাকে এখনও দেখে নি । আমি নিজের মাঝেই কেমন একটা উত্তেজনা অনুভব করলাম । মেয়েটা প্রথমে আমাকে দেখে নিশ্চয়ই বিরক্তই হবে । কিন্তু আজকে মেয়েটাকে বলবো । বলবো যে আমি আগের মত নেই । তুমি যেটা করতে বলেছিলে সেটা আমি করে দেখিয়েছি !
আমি আরও কয়েক পা এগিয়ে যেতেই মিতু আমাকে দেখতে পেল । তারপরই কেমন থমকে দাড়ালো ।
চশমা পরা অবস্থায় মিতুকে আসলেই অন্য রকম সুন্দর লাগে । একটু গম্ভীর গম্ভীর লাগে কিন্তু সেটা ওর সৌন্দর্য্য কে আরও একটু বাড়িয়ে দেয় যেন ! আমার মনে আছে আমি ওকে এভাবে দেখেই প্রথমে ওর প্রেমে পরেছিলাম । এভাবে কারো প্রেমে আগে পড়েছিলাম কি না আমি জানি না । পাগলের মত মিতুর পেছনে ঘুরতে লাগলাম । কিন্তু ও আমাকে পাত্তা দিল না ।
মিতু আমাদের এলাকার মহিলা হোস্টেলে যখন উঠলো তখনও ঠিক চাকরী পায় নি । কেবল মাত্র পড়া লেখা শেষ করেছে । ও দুইটা টিউশনী করতো আর আমাদের এলাতেই থাকতো । কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন মেয়েটা আমাকে পাত্তা দিল না এবং তার উপর যখন আমার বাপের কাছে নালিশ চলে গেল তখন মেজাজ টা বেশ খারাপ হয়ে এল । বন্ধু-বান্ধব ঠিক করা ছিল টিউশনী থেকে ফেরার পথে ওকে জোর করে মাইক্রবাসে তুলে নিলাম ।
জায়গা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল । কাজীও ততক্ষনে হাজির । মিতু কঠিন মুখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । ওর চোখে এখনও অবিশ্বাস । এলাকার কমিশনারের ছেলে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে এসেছে এটা ভাবতে পারছে না । কদিন আগেই যে কমিশনারের কাছে সে ছেলের নামে নালিশ দিয়ে এসেছে ।
আমি মিতুকে শান্ত কন্ঠে বললাম
-তোমাকে এখনও কেউ কিছু বলে নি কেন জানো ? কারন হচ্ছে আমি তোমাকে অসম্ভব পছন্দ করি তাই । যদি আমাকে বিয়ে করতে না চাও ভাল, আমি এখনই এখান থেকে চলে যাবো তবে তোমার কি অবস্থা হবে আমি বলতে পারছি না ।
আমি মিতুর চোখে একটা ভয় দেখতে পেলাম । সেই সাথে একটা তীব্র ঘৃণাও । মিতু অবশ্য বিয়ের সময় খুব একটা উচ্চ-বাচ্চ করলো না । শান্ত ভাবেই সই করলো কাগজে । ভেবেছিলাম মেয়েটাকে আমি জয় করে নিয়েছি ।
বাসায় যখন ওকে নিয়ে এলাম বাবা কিছু সময় আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে রইলো, একটু ঝাড়িও দিন তবে বেশি কিছু আর বলল না । বলবে না জানতাম । তিনি কোন সময়ই কিছু বলেন নি । মা মিতুকে ঘরে নিয়ে গেল । মাকে খুব একটা চিন্তিত মনে হল না । বরং তিনি যেন খুশিই হয়েছেন !
আমি তো মহা আনন্দে ছিলাম । ভেবেছিলাম একবার যখন বিয়ে হয়ে গেছে তখন মিতু এবার ঠিক ঠিক আমাকে ভালবাসবেই । আমাদের দেশের মেয়েরা এমনই । বিয়ের পর স্বামীকে ঠিকই ভালবাসে তারা ! কিন্তু মিতু মনে হয় সেরকম মেয়ে ছিল না । আমি যখন ওর হাত ধরতে গেলাম তখন মেয়েটা ছোঁ মেরে নিজের হাত সরিয়ে নিল ।
মানে কি !
এখনই এই মেয়ে ঠান্ডা হয় নি ! নিজেকে বোঝালাম যে হবে । সময় আসলেই হবে ।
পরপর কদিন ব্যাপার টা ঠিক এই রকমই রয়ে গেল । দুদিন পরেই বাবা মিতুর বাবা মাকে ঢাকা ডেকে নিয়ে এলেন । আমার বাবার আবার মানুষকে বোঝানোর ক্ষমতা ছিল বেশ । কমিশনার তো । তিনি দুজনকে কি বোঝালেন কে জানে দেখলাম দুজনেই বিয়েটা মেনেই নিলেন । অবশ্য না নিয়ে কি বা করার ছিল তাদের তার উপরে আমাদের দেশে মেয়ের বাবারা সব সময়ই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে কি কি আছে সেটাই দেখে । কিংবা ছেলের বাবা কি আছে । সেই হিসাবে আমি পাত্র হিসাবে খুব একটা অপছন্দেরও ছিলাম না ।
কিন্তু সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও মিতুকে কিছুতেই গলাতে পারলাম না । বলা চলে মিতু যেন আরও বেশি শক্ত হয়ে গেল । একদিন রাতে ওকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলাম । মিতু কিছুটা সময় নিজেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করলো যখন বুঝতে পারলো যে পারবে না তখন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তীব্র কন্ঠে বলল
-কি করবে এখন ? শক্তি দেখাবে নাকি ভয় ? তোমাকে সাথে না শুলে তোমার বন্ধুদের হাতে তুলে দেবার ভয় দেখাবে !
আমি ওর হাত ছেড়ে দিলাম । মিতু বলল
-চাইলে আমাকে নিতে পারো তবে তোমাকে কোন দিন আমি আমার স্বামী হিসাবে মেনে নিবো না ।
-কেন নিবে না ? তোমার বাবা মা যেখানে এই বিয়ে মেনে নিয়েছে !
-যাও তাহলে আমার বাবা মায়ের কাছে, সেখানে ঘর জামাই হয়ে থাকো !
-একটু বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ !
মিতু কিছু টা সময় চুপ করে থেকে বলল
-বোঝার কিছু নেই । কি আছে তোমার শুনি ? বল নিজের কি আছে ? তোমার মত অকর্ম একটা ছেলেকে আমি কেন আমার স্বামী হিসাবে মেনে নিবো । যেদিন নিজে কিছু হতে পারবে সেদিন এসো !
তারপর থেকেই মিতুর সাথে আমার ঠিক কথা হত না । এই লাইনটা যেন আমার ভেতরে কেমন হতে লাগলো । আমার কি আছে । চাকরী পাওয়ার পরেই মিতু অফিসের কাছে আরেকটা বাসা নিয়ে চলে গেল । মা আটকাতে চাইলেন তবে মিতু থাকলো না ।
তারপরই থেকেই আমি নিজের ভেতরে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম । চাকরির জন্য চেষ্টা শুরু করলাম । সেই সাথে চাকরী পড়াশুনা । প্রায় ছয় মাস চেষ্টার পরে সত্যি সত্যিই চাকরি একটা জুটেও গেল । এই ছয় মাসে মিতুর সাথে আমার কথা হয় নি একবারও । ও মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসতো । মায়ের সাথে কথা বলে চলে যেত । আমার দিকে ফিরেও তাকাতো না । মাকে চাকরি পাওয়ার পর মাকে বলেছিলাম মিতুকে যেন কথাটা না বলে । আমি সময় হবে বলবো । আজকে প্রথম মাসের ভেতন পেয়েই অফিস থেকে এখানে এসেছি । আজকে মেয়েটাকে বলবো দেখো তুমি যেমন টা বলেছিলে আমি সেরকম হয়েছি ।
------
মিতুর আমার দিকে কয়েকটা মুহর্ত তাকিয়েই রইলো । তারপর হেটে আমার সামনে এসে দাড়ালো । আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । ছয় মাসের ভেতরে মিতুকে আমি দুর থেকে বেশ কয়েকবারই দেখেছি । কাছে আসা হয় নি । মিতু বলল
-এখানে ?
একটু অবাক হতে হল যে মিতুর কন্ঠে কোন বিরক্তি কিংবা ঘৃণা নেই । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই দেখি ওর সাথে যারা নামছিল তাদের মাঝ থেকে একজন আমাদের দিকে এগিয়ে এল ।
মিতু তাকে দেখে বলল
-রমা দি ! এ আমার হাজব্যান্ড !
হাজব্যান্ড !
আমি সত্যিই অবাক হলাম । মিতু আমাকে অন্যের কাছে নিজের স্বামী বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ।
রমা দি বলল
--ওমা তাই নাকি ! বেশ বেশ ! তোর বিয়ে তাহলে সত্যিই হয়েছে । তা কি করে ?
-ও এশিয়া ব্যাংকে আছে ।
আমি এবার সত্যিই অবাক হলাম । মিতু জানে আমি চাকরি করি । কিভাবে ? কোথায় চাকরি করি সেটাও জানে ?
নিশ্চয়ই মা বলেছে ! মাকে বলতে মানা করেছি তবুও বলল !!
মিতু সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমার সাথে এল । বলল
-আজকে আমার অফিসের সামনে ! হঠাৎ ?
-আব্বা আম্মার জন্য কিছু কিনতে চাচ্ছিলাম । তাই এলাম ।
-এই জন্য ! আর কিছু না !
-আরও অনেক কিছুর জন্য !
-তাই ?
মিতু হাসলো । আমি বললাম
-তুমি জানতে আমি চাকরি পেয়েছি ।
-হুম ! প্রথম থেকেই ।
-মা বলেছে ?
-হুম ! তুমি যে পরিশ্রম করছো সেটা আমি প্রতিদিন মায়ের কাছ থেকেই শুনতাম । রাতে জেগে জেগে পড়তে সেটাও আমি শুনেছি । আসলে ......
কি আসলে ?
-কিছু না চল ! কি কিনবে দেখি !
পুরো মার্কেট ঘুরে ঘুরে বাবা আর মায়ের জন্য পাঞ্জাবি আর শাড়ি কিনলাম । মিতুকে কিছু কিনে দিতে চাইলেই মিতু বলল
-আমার জন্য কিছু কিনতে হবে না ।
-সেকি কেন ?
-আরে আজকে মাসের দুই তারিখ । এখনই সব টাকা খরচ করে ফেললে চলবে কিভাবে সারা মাস ?
আমি বললাম
-আমার বউ ভাল টাকা বেতন পায় । সে চালাবে, চিন্তা কর না !
-তাই ?
মিতু আবারও হাসলো !
কেনা কাটা শেষ করে আরও অনেক জায়গায় ঘুরলাম এক সাথে । ফুচকা খেলাম । তারপর মিতুকে নিয়ে ওর বাসার সামনে হাজির হলাম । নামিয়ে দেওয়ার সময় ও হঠাৎ করেই বলল
-তুমি একটু দাড়াবে এখানে ? আমি আসছি !
-আচ্ছা !
ও প্রায় দৌড়ে ভেতরে চলে গেল । তারপর ফিরে এল কিছু সময় পরেই হাতে একটা শপিং ব্যাগ ।
আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-এগুলো তোমার ?
-কি এগুলো ?
-খুলে দেখো !
প্যাকেট খুলে দেখি গুনে গুনে ছয়টা শার্ট !
আমার জন্য !
মিতু বলল
প্রতি মাসে বেতন পেয়ে তোমার জন্য একটা করে শার্ট কিনতাম তোমার জন্য । ভাবতাম যেদিন চাকরি পাবে সেদিন তোমাকে দিন কিন্তু সংকোচের কারনে তোমাকে দিতে পারি নি । আসলে তোমার উপর আমার খুব বেশি রাগ ছিল । কিন্তু যখন দেখতে শুরু করলাম যে তুমি বদলাতে শুরু করেছো তখন কেন জানি আর রাগটা ধরে রাখতে পারি নি !
-তাহলে আসনি কেন এতো দিন ?
-ঐ যে বললাম সংকোচের কারনে ! আর একটা ভয় ছিল যে আমি আবার ফিরে গেলে তুমি হয়তো আবার আগের মত হয়ে যাবে !
-এখনও হতে পারি ?
-নাহ ! আর পারবে না !
আমি কিছুটা সময় শর্টের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি ব্যাগ নিয়ে আসো । আজকেই আমার সাথে বাসায় যাবে ।
-আজকেই !
-হ্যা ! আমি কিছু শুনবো না । যাও !
-আরে পরশু ছুটির দিন আছে ঐদিন আসি !
-না ! আজকে মানে আজকে ! এখনই !
আমি নিজের গলার স্বর শুনে নিজেই অবাক হলাম । কিভাবে মেয়েটার উপর আমি এতো জোর খাটাতে শুরু করলাম কে জানে ?
মিতু কিছু না বলে তাকিয়ে রইলো কিছু টা সময় !
আমি বললাম
-এখন সব কিছু নিতে হবে না । কেবল কয়েকটা জিনিস নাও । শুক্রবারে এসে সব কিছু নিয়ে যাবে !
------
যখন মিতু আমার সাথে আবারও রিক্সায় উঠলো তখন কেমন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হচ্ছিলো । সেবার যখন মনে হয়েছিলো মেয়েটাকে আমি জয় করেছি সেবারও এতো আনন্দ হয় নি । আজকে সত্যিই সত্যিই মেয়েটা আমি জয় করেই নিয়েছি ! একেবারে নিজের করে !
গল্পে কিছু বানান ভুল থাকবে । তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী !
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৬
অপু তানভীর বলেছেন: তিন নাম্বার টা অনেক আগের লেখা !!
ধন্যবাদ পড়ার জন্য
২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫
আরণ্যক রাখাল বলেছেন:
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৮
অপু তানভীর বলেছেন:
৩| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১২
মেহেদী হাসান সাব্বির বলেছেন: Vaiya golpo gulo onek valo laglo.
Toba 4 number ta best .
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৯
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৮
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: হৃদয় উষ্ণ করা মিষ্টি গল্প
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৯
অপু তানভীর বলেছেন: থেঙ্কু
৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৪
ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: ৪ নম্বরটা খুব ভালো লাগছে।
+ +
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০১
অপু তানভীর বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫০
আশিক ইলাহি বলেছেন: ১ আর ৪ নম্বরটা খুব ভালো লাগছে।৩ নম্বরটা আগেই পরেছি।