নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিতুর বিয়েটা ঠিক অন্যান্য মেয়েদের মত হয় নি । বাদ্য আর সানাই বাজিয়ে মিতুর বিয়ে হবে যে সেটা মিতু কোন দিন আশাও করে নি । একটা সময়ে এসে মিতুর মাঝে মাঝে মনে হত হয়তো ওর হাতে বিয়ের রেখা নেই । সেটার জন্য মিতুর খুব একটা দুঃখবোধও ছিল না । সংসারের দায়িত্বটা কাধে নিয়ে চলতে চলতে নিজের দিকে তাকানোর মত সময় ছিল না ওর । দেখতে আহামরি সুন্দরী না হলেও চেহারায় একটা স্নিগ্ধ ভাবটা মিতুর ছিল । ঠিকঠাক মত পোষাক পড়লে দেখতে খারাপ লাগে না ওকে । যে কারো বউয়ের ভূমিকায় ওকে মানিয়েই যেত কিন্তু মিতুর মনে হয়েছিলো সবার ভাগ্যে সব কিছু থাকে না ।
মিতুর বাবা যখন মারা যায় তখন মিতু সবে মাত্র অনার্সে ভর্তি হয়েছে । ওরা এমন আহামরি বড় লোক ছিল না যে পায়ের উপর পা রেখে সব কিছু সামাল দেওয়া যাবে । নিজেদের নামে ছোট একটা ফ্ল্যাট বাসা আর একটা দোকান ছিল বলেই বোধহয় কোন রকমে টিকে গেছে । তবুও সংসারের অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য মিতুকে সেই অনার্স থেকে চাকরির দিকে ঝুকে পড়তে হয় । তারপর কিভাবে দিন চলে গেছে সেটা মিতু নিজেও জানে না । মা আর ছোট বোনটার দিকে তাকাতে তাকাতে নিজের দিকে আর ভাল করে তাকানোর সময় হয়ে ওঠে নি ।
পড়ালেখা শেষ করে চাকরির পেছনে ছুটে বেড়ানো তারপর চাকরিতে প্রবেশ, এসব নিয়ে কখন যে আস্তে আস্তে মিতুর বিয়ের বয়স পার হয়ে যেতে লাগলো সেটা মিতু নিজেও লক্ষ্য করে নি । মিতু সব নিরবেই মেনে নিয়েছিল । নিজের জীবনে মা আর ছোট বোনটা ছাড়া আর কেউই ছিল না ওর । তবে মাঝে মাঝে যে মন খারাপ হত না তা নয় । দায়িত্ব পালন করতে করতে জীবনে অন্য পুরুষয়ের ভালবাসা আর পাওয়া হয়ে ওঠে নি কিংবা ও নিজেও সাহস করে নি সেদিকে পা বাড়ানোর । বিয়ের দিকে না এগোনোর আরেকটা কারন ছিল তার স্বামী তার মা আর ছোট বোন কে মেনে নিবে কি না সেই বিষয়টা ।
তারপর হুট করে মিতুর বিয়ে গেল রাশেদের সাথে । মিতু ঠিকঠাক মত বিশ্বাসও করতে পারে না যে আসলেই ওর বিয়ে হয়ে গেছে । গত ২৬ বছরের একটা মেয়ে জীবন সম্পর্কে সব কিছুই শিখে ফেলে খুব ভাল ভাবে । আর সেটা যখন কঠিন পথে হয় তখন খুব বেশি বাস্তববাদী হয়ে তাকে । সেখানে মিরাকেল ঘটনার কোন সম্ভাবনা থাকে না । তারপরেও বলতে গেলে মিতুর জীবনে সেই মিরাকেলটাও ঘটে গেল । মিতু ঠিক ঠিক যে যে কারনে বিয়ের প্রতি আগ্রহ বোধ করে নি রাশেদের সেগুলোতে কোন সমস্যা নেই । মাত্র একদিনের দেখাতেও মিতুকে রাশেদ বলেছিল সে সব কথা । মিতু আর কথা বাড়ায় নি । বিয়ের পরেও যে মিতু ওর ফ্যামিলিকে পূর্ন সাপোর্ট দিতে পারবে সেটা যখন রাশেদ মেনে নিয়েছে আর কিছু বলারও প্রয়োজন ছিল না ।
কোন প্রকার আয়োজন ছাড়াই ওদের বিয়ে হয়ে গেল । বিয়ের পর কোন রকম আনুষ্ঠানিতা ছাড়াই মিতু রাশেদের বাসায় এসে উঠলো । ঘুমাতে লাগলো একই সাথে । এমন আচরন করতে শুরু করলো যেন বহুদিন থেকেই ওরা স্বামী স্ত্রী ।
বাসর রাতের কথা মিতু খুব ভাল করেই মনে পড়ে । কোন ঘর সাজানো হয় নি । আসলে রাশেদের তেমন কেউ ছিলও না । এক মামা কাছেই বড় হয়েছে ও । বাবা মা অনেক আগেই মারা গেছে । মামাই ওকে বড় করেছে । পড়ালেখা শেষ করে বেশ ভাল একটা চাকরীও করে । এতো দিন কেন বিয়ে করে সেটা মিতুর মাথায় ঢোকে নি । যদি সন্দেহ ওর মনের ভেতরে আসে নি তা না তবুও মিতু মেনেই নিয়েছে । ওর মত মেয়ের জন্য সব কিছু ধরে বসে থাকলে চলে না । এদেশে মেয়েদের বিয়ে করতে গেলে অনেক হিসেব করতে হয় । অনেক কিছুই মিতু অনুকূলে ছিল না ।
বাসর ঘরে চুপ করে বসেই ছিল । রাশেদ আসলো, খাটের উপর বসে কিছুটা সময় চুপ করে বসে রইলো । মিতুর মনে হল যে কিছু বলতে চাচ্ছে আবার বলছে না । তারপর রাশেদ বলে উঠলো
-সামনে তাহলে আমার নতুন শুরু হতে যাচ্ছে ?
মিতু কোন কথা না বলে কেবল মাথা ঝাকালো ।
-দেখো আমি কথা খুব কম বলি ! মানুষের সাথে মিশিও কম । অন্যান্য স্বামীরা যেমন আচরন স্ত্রীদের সাথে করে তেমন টা হয়তো আমি করবে পাবো না !
অনেক কিছুই মিতু মেনে নিয়েছিল এটা আর মানতে কি এমন । রাশেদ আবার বলল
-আর আগেও যেমন টা বলেছি যে তোমার মা আর বোনের ব্যাপারে তুমি যেটা ভাববে সেটাই করবে । আমার কথা চিন্তা করতে হবে না । সেই সাথে যদি তাদের জন্য কোন কিছু দরকার হয় আমাকে নির্দ্বিধায় বলবে । এখন থেকে তারাও তো আমার ফ্যামিলি ! ইনফ্যাক্ট মাই ওনলি ফ্যামিলি । তাই না ?
এই কথাটা শুনে মিতুর কেন জানি খুব ভাল লাগলো । মনটা ভাল হয়ে গেল সাথে সাথেই । আরও কিছু আশা করেছিল কিন্তু রাশেদ আর কিছু না বলে ঘুমাতে চলে গেল । মিতু আরও কিছু টা সময় অপেক্ষা করে নিজেও শুয়ে পড়লো । যেরকম বাসররাত মানুষ আশা করে তার কিছুই হল না সেদিন । সারারাত ধরে গল্প সামনের জীবনের কত পরিকল্পনা আরও কত কিছু শুনে এসেছে কিন্তু এমন কিছুই হল না ।
সকাল থেকে ওদের স্বাভাবিক জীবন শুরু হয়ে গেল । যে যার মত অফিস চলে গেল । বিয়ের পরের দিন কেউ অফিস যেতে পারে মিতুর সেটা রাশেদ কে না দেখলে হয়তো বিশ্বাস হত না । দুই সপ্তাহ যখন পার হয়ে গেল তখন মিতুর মনের একটা ধারনা হল যে রাশেদের নিশ্চয় অন্য কোন সমস্যা আছে । কেবল যে ওর বাবা মা নেই এই জন্য সে এতো দিন বিয়ে করে নি এটা তো হতে পারে না । বরং যাদের কেউ নেই তারাই জীবনটা অন্য কারো সাথে শুরু করার জন্য একটু তাড়াহুড়া করে, সঙ্গী খুজে বেড়ায় । তাহলে রাশেদ কেন এতো দেরি করলো । হিসেব মত রাশেদ ওর থেকে আরও ৫ বছরের বড় । চাকরী করে আরও ৬ বছর আগ থেকে । বেতনও ভাল তাহলে বিয়ের দিকে কেন এগোই নি ।
মিতুর মনে ধারনা জন্মালো যে রাশেদের নিশ্চয় শারীরিক কোন সমস্যা আছে । নয়তো মানুষ যতই নিশ্চুপ আর কথা কম বলুক বিয়ের পরেও কেন সে মিতুর দিকে আগ্রহ বোধ করে নি । যখন মিতুর একটা বদ্ধমূল ধারনা জন্মাতে শুরু করেছে ঠিক সেদিনই ঘটনা টা ঘটলো ।
অফিসের পর রাশেদকে যেমন দেখা সেদিন অন্য রকম লাগছিলো । একটু যেন বেশি গম্ভীর । খাবার সময় মিতু একটাবার জানতেও চাইলো ওর কিছু হয়েছে কি না । রাশেদ ব্যাপার টা এড়িয়েই গেল । রাতে ঘুমানোর জন্য যখন লাইট বন্ধ করলো তখনই রাশেদ ওর খুব কাছে চলে এল । এর আগে এমন টা কোন দিন হয় নি । মিতুর বুঝতে কষ্ট হল এখন কি হতে যাচ্ছে । মিতু কেবল অনুভব করলো যে ওর বুকের ভেতরে এক অচেনা অনুভুতি হচ্ছে ! এই অনুভুতির কোন ব্যাখ্যা নেই ওর কাছে । যে ধারনা টা ও করছে সেটা ভুল প্রমানিত হতে যাচ্ছে ।
ঐ সকাল বেলা একটু যেন দেরি করেই ঘুম ভাঙ্গলো মিতুর । তাকিয়ে দেখে রাশেদ ওর পাশে নেই । রান্না ঘর থেকে আওয়াজ আসছে । মিতু কেমন যেন একটু লজ্জা লজ্জা লাগছিলো রাতের কথা মনে পড়ে তবে রাশেদের কাছে যাওয়ার জন্যও একটা তাড়না অনুভব করতে পারছিলো ভেতর থেকেই । যখন রান্না ঘরে ঢুকলো দেখলো রাশেদ সকালের নাস্ত বানাচ্ছে । কেবল অবাক হয়ে বলল
-কি করছো তুমি ?
-নাস্তা বানাচ্ছি । দেখতে পাচ্ছো না ? একা একা থেকেছি তো প্রায় দিনেই আমিই নাস্তা বানাতাম । এসব সব পারি আমি ।
রাশেদের বানানো গোল রুটির দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । ওর নিজের বানানো রুটিও এতোটা গোল হয় না । কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রাশেদের দিকে । গত কালকে রাশেদকে যতখানি গম্ভীর মনে হচ্ছিলো আজকে ততখানি মনে হচ্ছে না । বরং আগেও থেকেও কম গম্ভীর মনে হচ্ছে । মিতু কেবল অনুভব করলো যে ওর নিজের ভেতরেই একটা অন্য আনন্দময় অনুভুতি হচ্ছে । এমন কেন হচ্ছে সেটা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হল না ।
রাশেদ ওকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলল
-আরে অফিস যাবা না তুমি ? জলদি ফ্রেস হয়ে আসো ।
মিতু তখনও অবাক ভাবেই তাকিয়ে আছে । ভাবছে অন্য কিছু ।
সকালে তৈরি হয়ে নাস্তা খাওয়ার সময় মিতুর কেবল একটা কথাই মনে যে ও রাশেষকে ভালবাসতে শুরু করেছে । জীবনে প্রথমে কাউকে ও ভালবাসাতে শুরু করেছে ।
তারপরের কদিন মিতু যেন খানিকটা ঘোরের মধ্যেই কাটানো । সদ্য প্রেমে পরা বালিকার মত আচরন করতে শুরু করলো । আকারে ইঙ্গিতে রাশেদকে বোঝাতে চেষ্টা করলো যে ও রাশেদের প্রেমে পড়েছে । কিন্তু রাশেদ যে সেটা ঠিক মত ধরতে পারছে না । মিতুর সব সময় রাশেদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে রাশেদও যেন ওকে সব সময় ফোন দিক ওর খোজ খবর নিক । কিন্তু রাশেদ সেই আগের মত হয়ে আছে । যদিও গাম্ভীর্য খানিকটা কমেছে তবুও আগের মতই আছে । একদিন অফিস থেকেই রাশেদ কে ফোন দিল ও ।
-হুম বল !
-তুমি কি বাসায় চলে গেছো ?
-না । কেন ?
-একটু আমার অফিসের সামনে আসবা ?
-দরকার খুব ?
-না মানে .........।
মিতু কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । মিতুর সকাল থেকেই কেন জানি রাশেদের সাথে খুব রিক্সায় চড়তে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু কি কারনে ও ঠিক মত বলতে পারে নি । কখন বলতে পারে না । একটা অদৃশ্য দেওয়াল সেই শুরু থেকেই ওদের মাঝে ছিল । মিতু সব সময়ও মনে হত যে রাশেদ তখনও ওর কাছ থেকে কিছ লুকিয়েই চলেছে । কিছু যেন বলছে না । মিতু যে ওকে ভালবাসতে শুরু করেছে এটা যেন ঠিক বুঝেো বুঝছে না ।
রাশেদ বলল
-আচ্ছা আমি আসছি ।
যখন ওদের দেখা হল রাশেদ বলল
-কি ব্যাপার এতো জরুরী তলব ?
-কোন কারন নেই । তোমার সাথে রিক্সা যেতে ইচ্ছে করলো আজ !
-হঠাৎ ?
মিতু মাথা নিচু করে বলল
-হঠাৎ না । প্রতিদিনই করে !
-তাই ? কোন দিন তো বলো নি ?
-সব কথা কি বলতে হয় ?
-আচ্ছা তাহলে কাল থেকে আমরা প্রতিদিন এক সাথে যাবো বাসায় ।
-না এটার দরকার নেই । এভাবে একসাথে যেতে হলে তোমাকে অনেক টা পথ ঘুরে যেতে হবে । প্রতিদিন দরকার নেই । মাঝে হলেই চলেবে !
-আচ্ছা তাই হবে !
রাশেদ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই ওর চোখে কি যেন বাঁধলো । মিতু স্পষ্ট লক্ষ্য করলো যে রাশেদের মুড অফ হয়ে গেছে মুহুর্তেই । রাশেদ রিক্সাওয়ালাকে রাস্তার পাশে দাড়াতে বলেই রিক্সা থেকে নেমে গেল । তারপর পেছনের দিকে তাকিয়ে রইলো কার দিকে যেন । মিতু তাকিয়ে ছিল ওর দিকে । কিছুই বুঝতে পারছিলো না । একটু পরে রাশেদ ফিরে এল । মুখ যেন আগের থেকেও বেশি গম্ভীর । আবার রিক্সা চলতে শুরু করলে রাশেদ আর একটা কথাও বলল না । কোথায় যেন হারিয়ে গেল ও ।
রাতের খাবার সময় মিতু কয়েকবার জানতে চাইলেও কোন কথা বলল না । চুপ চাপ খেয়ে উঠে গেল । মিতুর কেন জানি খুব বেশি কান্না আসতে লাগলো । বিকেল টা কি চমৎকার ভাবেই কাটছিলো আর মাঝ দিয়ে কি এমন হয়ে গেল ।
------
দুইবারের ধাক্কাতেই রাশেদের ঘুমটা ভেঙ্গে গেল । রাশেদ তাকিয়ে দেখি ওর বউ মিতু ওর দিকে তাকিয়ে আছে । ঘরের লাইট জ্বলছে। একটু আগে সম্ভবত মিতু কান্না কাটি করেছে । সেই জন্য চোখ একটু ফোলা ফোলা লাগছে ।
-কি হয়েছে ?
-তুমি বল কি হয়েছে ?
-কিছু হয় নি ।
-তাহলে বিকেলে ওরকম কেন করলে ?
-মিতু সকালে অফিস আছে ! ঘুমাও ।
-কাল ছুটির দিন । অফিস নেই । তুমি আমাকে বল কি হয়েছে ? এমন কি দেখলে তুমি ? এতো সুন্দর একটা সময় কাটছিলো কি এমন হল ?
-কিছু হয় নি ! ঘুমাও ।
-আজকে বলতেই হবে !
-ঘুমাও !
রাশেদ দেখলো মিতু ওর দিকে কেমন ব্যাথিত চোখে তাকিয়ে আছে । নিজেকে হঠাৎই কেন জানি রাশেদের একটু অপারাধী মনে হল । মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট কেন দিচ্ছে ও ! কেন ?
মিতু বলল
-আমি আমার জীবনে আমার মা আর ছোট বোন ছাড়া আর কাউকে কোন দিন ইম্পর্টেন্স দেই নি । সবাইকে ছেড়ে দিয়েছি ওদের জন্য । কিন্তু যখন তোমার সাথে আবার জীবন শুরু করলাম তখন আচ্ছে আচ্ছে অনুভব করলাম যে কেবল ওরাই নয় আমার কাছে তুমিও খুব জরুরী কিছু হয়ে উঠেছো । খুব বেশি জরুরী । তোমাকে যে কি পারিমান ভালবাসাতে শুরু করেছি তুমি কি সেটা বুঝতে পারো ? চেষ্টা করেছো কোন দিন ? তোমার এরকম সব কিছুতে নিরব থাকাটা আমাকে কি পরিমান কষ্ট দেয় জানো তুমি ?
রাশেদ কিছুটা সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মিতু দিকে । ওদের বিয়ে হয়েছে প্রায় মাস আড়াই পার হয়ে গেছে এই প্রথম বারের মত মিতুর দিকে এভাবে তাকিয়ে দেখলো ও । হঠাৎই অনুভব করলো ওর ভেতরে কিছু একটা পরিবর্তন হচ্ছে । অদ্ভুদ ভাবে । হাত দিয়ে মিতুর চোখের পানি মুছে বলল
-এসো ঘুমাবে । কালকে বলবো সব । আজকে ঘুমাই ।
ঘুমানোর সময় মিতুকে নিজের বুকের উপরেই টেনে নিল ও ।
-এখানে মাথা রেখে ঘুমাও !
------
পরদিন দুপুর বেলা ।
মিতু ঠিক বুঝতে পারছে না ওকে এখানে কেন নিয়ে আসা হয়েছে । গতকাল রাতে যখন রাশেদের বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলো ওর মনের সেই কষ্টটা অনেকটাই কমে এসেছিলো, ওকে ভালবাসার কথাটা বলতে পেরে নিজের কাছেই একটু শান্তি শান্তি লাগছিলো । রাশেদ সেই রাতেই ওকে অনেক কথা বলেছিলো, যদিও সকালে বলার কথা ছিল । মিতু চুপচাপ শুনছিলো । ওর অতীত সম্পর্কে । কেন ও এরকম হয়ে গেল সেই সব ।
ঐ রাতেই মিতুর মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেল রাশেদের জন্য । ছেলেটা সারা জীবন ধরে কেবল কষ্টই পেয়ে গেল এই ভেবে । প্রথমে বাবা মা মারা গিয়ে এর পর যে মানুষটাকে ভালবাসতো তার কাছ থেকে । নিজের কাছেই একটা প্রতিজ্ঞা করলো মনে মনে । আজকের পর থেকে এই মানুষটাকে আর কোন ভাবেই একা ছেড়ে যাবে না । একা থাকতেও দিবে না ।
সকাল বেলা হঠাৎ করেই কোথায় যেন চলে যায় তারপর দুপুরে ফিরে এসে মিতুকে বলল তৈরি হয়ে নিতে । ওকে নিয়ে বের এল গুলশানের দিকে । তারপর একটা অভিজাত বাসার ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে হাজির ।
ওকে নিয়ে বসার ঘরের অপেক্ষা করতে লাগলো ।
-এটা কার বাসা ?
-এটা অরিনের বাসা !
অরিন !
নামটা ও গতরাতেই শুনেছে রাশেদের মুখে । অরিন রাশেদের ভালবাসার মানুষটির নাম । যে মেয়েটি ওকে ইচ্ছে করে ছেড়ে গেছে তার উপর এখনও ওকে কষ্ট দিচ্ছে ।
রাশেদ বলেছিলো যে অরিন খুব ভাল করেই জানতো রাশেদ ওর প্রতি কতখানি মানষিক ভাবে দুর্বল । এটা জেনেই ও ইচ্ছে করেি রাশেদকে কষ্ট দিতো । আরও ভাল করে বললে অরিন মজা পেত ওকে কষ্ট দিতে । প্রত্যেক মেয়ের ভেতরেই নাকি এই ব্যাপার টা আছে । তারা তাদের জন্য কষ্ট পাওয়া মানুষ গুলোর কষ্ট দেখে একটা অচেনা আনন্দ পায় !
মিতুর মাথায় ঢুকছিলো না আজকে এখানে ওকে নিয়ে আসার কারন কি । আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করার পরে একটা মেয়ে বসার ঘরে ঢুকলো ! মেয়েটা যে অরিন সেটা মিতুকে বলে দিতে হল না । বলা চলে মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দরী ! বয়স ওর মতই হবে কিংবা ওর থেকে একটু বেশি । ঠোটে গাঢ় লিপস্টিপ দেওয়া ।
-তুমি ?
রাশেদের দিকে তারপর মিতুর তাকালো মেয়েটা । আবার চোখে গেল রাশেদের দিকে ।
-হুম ! এলাম !
-হঠাৎ ? আর সাথে কে এটা ?
-আমার বউ !
-বউ ! বিয়ে করেছো শুনেছিলাম ! তা আমার কাছে কি চাও ?
মিতু লক্ষ্য করলো অরিনের চোখে একটা তাচ্ছিল্যের ভাব রয়েছে । নিজের কাছে কেমন যেন একটু ছোট ছোট লাগতে লাগলো ওর ।
রাশেদের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাশেদ যেন ব্যাপারটা আমলে নিচ্ছে না ।
-অরিন ! আজকে আমার জন্য বেশ আনন্দের একটা দিন জানো ।
-মানে ?
-বুঝবে ! সব বুঝবে ।
এই বলে রাশেদ কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । তারপর মিতুর হাত ধরলো । মিতু তখনই লক্ষ্য করলো যে অরিনের চেহারা একটা হালকা পরিবর্তন এসেছে ।
রাশেদ বলল
-তুমি সব সময় আমাকে খুব তাচ্ছিল্য করে এসেছো । ইচ্ছে করে কষ্ট দিয়ে এসেছো ! তবুও আমি তোমার কাছে বারবার ফিরে গেছি । তুমি কিন্তু আমাকে কোন দিন একেবারে দুরে তাড়িয়ে দাও নি । বরং চেয়েছো যেন আমি তোমার কাছে ফিরে আসি আর তুমি আমাকে কষ্ট দিতে পারো । তাই না ? আমাকে কষ্ট দিতে পেরে তুমি আনন্দ পেতে । সবার উপরে আমার কাছে তোমার যে গুরুত্ব আছে এটা জেনে তুমি একটা মানষিক শান্তি পেতে ।
অরিন কোন কথা না বলে চুপ করে তাকিয়ে রইলো রাশেদের দিকে ।
-আমি জানি তোমার হাজব্যান্ডের সাথে তোমার সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয় । তার কাছে তুমি খুব একটা গুরুত্ব পাও না । আর সেই জন্যই তোমার আমাকে দরকার ছিল । কষ্ট দেওয়ার জন্য । কারন আমার কাছে তোমার গুরুত্ব ছিল । কিন্তু গত রাতে একটা অদ্ভুদ ঘটনা ঘটেছে জানো ! আমার পাশের এই মেয়েটাকে দেখছো না ?
রাশেদ মিতুর দিকে তাকালো !
-এই মেয়েটা কি করেছে জানো ? তোমাকে আমার মনের ঘর থেকে বলতে গেলে লাঠি পেটা করে বের করে দিয়েছে । তারপর সেখানে নিজের দখল নিয়ে নিয়েছে । তুমি হাজার চেষ্টা করেও সেখানে আর ঢুকতে পারবে না ?
মিতু এই কথা শুনে একবার অরিনের দিকে তাকালো আরেকবার তাকালো রাশেদের দিকে । মেয়েটার চোখে একটু আগেও যে একটা তাচ্ছিল্যের ভাব ছিল, মিতুকে সে ভাবে দেখছি এখন সেটা নেই । বরং মিতুর প্রতি মেয়েটা যেন একটা ক্রোধ অনুভব করছে ।
রাশেদ কথা বলছে হাসি মুখে । তোমাকে কেবল এই কথাটাই আজকে বলতে এসেছি । আজ থেকে আমি মুক্ত । আমার কাছে তোমার আর বিন্দু মাত্র মূল্য নেই । কেবল এটাই বলতে এসেছিলাম !
তারপর মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল
-চল ওঠা যাক ! আজকে তোমার সাথে রিক্সায় চড়ার দিন !
মিতু হাত ধরে যখন রাশেদ দরজার কাছে যাবে তখনই অরিনের কন্ঠ শোনা গেল ।
-রাশেদ তুমি কোন দিন আমাকে নিজের মন থেকে বের করতে পারবে না ! কোন দিন না !
মিতুকে রেখে রাশেদ অরিনের দিকে ফিরলো !
-তাই ?
এই বলে রাশেদ একটু হাসলো । তারপর বলল
-লুক এট মাই আইস ! আশা করি তুমি তোমার উত্তর তুমি পেয়ে যাবে !
মিতু তাকিয়ে দেখলো অরিন রাশেদের দিকে তাকিয়ে আছে । একটু আগের ক্রোধের ভাবটা কেটে গিয়ে অনেক টা অসহায়ত্ব্যের একটা ভাব ফুটে ওঠছে ।
-----
রাশেদ আর কিছু না বলে মিতুকে নিয়ে বের হয়ে এল । যখন রিক্সা করে ওরা যাচ্ছো তখনও মিতু কেবল রাশেদের কথা গুলো ভাবছে । মনের ঘরে দখল নিয়ে নিয়েছে । রাশেদ কথা বলে যাচ্ছে এক ভাবে । এতো গম্ভীর মানুষ এতো কথা বলতে পারে মিতু জানা ছিল না ।
-বল আজকে কোথায় যাবে ?
-কি বললে ?
-বলালম আজকে কোথায় যাবে বল ? আজকে তুমি যেখানে যেতে চাইবে সেখানেই যাবো ।
-বাসায় চল !
-সে কি কেন ?
মিতু কথাটা বলতে লজ্জা লজ্জা লাগছে । কেন ও বাসায় যেতে চাইছে । তারপর নিজের মনকেই ধকম দিল । বলল এই মানুষটার সামনে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই । মানুষটাকে তুমি ভালবাসে আর আজকে জানতে পেরেছো মানুষটাও তোমাকে ভালবাসে । বলে ফেল । বলে ফেল ।
রাশেদ আবার বলল
-এখন বাসায় কেন যাবে ?
-আসলে !! তুমি ওখানে যা বললে ......
-আই রিয়ালি মিন দ্যাট !
-আই নো, আই ক্যান ফিল ইট !
-তো !
-আসলে তখন থেকেই তোমাকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে । এতো লোকজনে রসামনে সেটা করতে পারছি না !। তাই বাসায় চল । এখন তোমাকে আমি ঠিক-ঠাক মত জড়িয়ে ধরে চুম না খাই তাহলে শন্তি পাবো না ! প্লিজ চল !!
মিতুর দিকে তাকিয়ে রাশেদ হেসে ফেলল । ঠোঁটে আর চোখে সেই হাসি লেগেই থাকলো বেশ কিছুটা সময় তারপর বলল
-ঠিক আছে চল আজকে বাসায় ! তবে বাসায় গিয়ে আজকে তোমার খবর আছে বলে দিলাম । জড়িয়ে ধরার আসল মজা আজকে বুঝবে !! হাহাহাহা !!
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১১
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
এমনই হওয়া উচিৎ ! একদিন আমিও এমন হব ! সত্যিই হব একদিন !
২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৫
কল্লোল পথিক বলেছেন: চমৎকার গল্প
নিরন্তর শুভ কামনা জানবেন লেখক।
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩১
অপু তানভীর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৮
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: সেদিন জানতে পারলে আপনাকেও আজকের মতই স্বাগতম জানাবো।। জানাবো কি জানিয়েই রাখলাম।।
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৩
অপু তানভীর বলেছেন: আসলে মানষিক ভাবে প্রস্তুনি নেওয়া শেষ এবং আর যা যা দরকার সব কিছু করা শেষ । অবস্থাও আমার অনুকূল । এখন কেবল একটা সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি । একদিন ঠিক ঠিক চরম ভাবে প্রতিশোধ নিবো আমি । সত্যি সত্যিই নিবো !
৪| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫১
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: এত্ত সুইট গল্প কেমনে লেখেন? ! আপনি সবসময় এমন সুইট গল্পই লিখবেন, সিরিয়াস হবেন না।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১০
অপু তানভীর বলেছেন: জীবনে সিরিয়াস হইলে সিরিয়াস সমস্যায় পড়তে হয়
৫| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩৮
ঈশান আহম্মেদ বলেছেন: অনেক সুইট হয়ছে গল্পটি অপু ভাই।প্রতিটি অরিনের প্রতি এমনই প্রতিশোধ নেওয়া উচিত।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:২৪
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
আসলেই এমন ভাবেই প্রতিশোধ নেওয়া উচিৎ !
৬| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৪৯
অগ্নিপাখি বলেছেন: ভালো লাগলো খুব।
"আসলে তখন থেকেই তোমাকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে । এতো লোকজনে রসামনে সেটা করতে পারছি না !। তাই বাসায় চল । এখন তোমাকে আমি ঠিক-ঠাক মত জড়িয়ে ধরে চুম না খাই তাহলে শন্তি পাবো না ! প্লিজ চল !!"
আসলে ভেতরের ভালোবাসাগুলো এভাবেই প্রকাশ করতে হয়।
প্রিয়তে রাখলাম। লেখককে ধন্যবাদ।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৯
অপু তানভীর বলেছেন: ভালবাসার প্রকাশ গুলো এরকমই হওয়া উচিৎ ! কিন্তু সবাই এমন ভাবে প্রকাশ করতে পারে না এই যা তবে অনুভুতি গুলো এমনই হয় সবার বেলাতেই
ধন্যবাদ পড়ার জন্য
৭| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৮
এস এম. আজিম বলেছেন: এক কথায় অসাধারন, শুধুমাত্র লেখককে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যই রেজিস্ট্রশন করলাম।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৫
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৮| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৫
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: ভাল লেগেছে গল্প।
ভালোবাসার অনেক শক্তি। ভালোবাসা দিয়ে অনেক কিছুই অর্জন করে নেয়া সম্ভব।
তাচ্ছিল্য করার ফলে মানুষ ধীরে ধীরে দূরেই চলে যায়।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩০
অপু তানভীর বলেছেন: সত্য । কেউ কেউ দ্রুতই চলে যায় দুরে আর কারো কারো সময় লাগে যেতে তবে যায় এটা নিশ্চিত
৯| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৬
মনি সিহুম বলেছেন: অপু তানভীর বলেছেন: আসলে মানষিক ভাবে
প্রস্তুনি নেওয়া শেষ এবং আর যা যা দরকার
সব কিছু করা শেষ । অবস্থাও আমার অনুকূল ।
এখন কেবল একটা সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা
করছি । একদিন ঠিক ঠিক চরম ভাবে প্রতিশোধ
নিবো আমি । সত্যি সত্যিই নিবো !
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩১
অপু তানভীর বলেছেন: সত্যই নিবো ।
১০| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৫
gazi rakibul islam (rakib) বলেছেন: অনেক সুন্দর হইছে +++
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩১
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক
১১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫০
প্রামানিক বলেছেন: গল্প ভাল লাগল। ধন্যবাদ
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩২
অপু তানভীর বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ
১২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৯
আনন্দ বড়ুয়া বলেছেন: এমন গল্প আরও চাই দাদা
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৩
অপু তানভীর বলেছেন: এরকম গল্প আরও কয়েকশ আছে । খুজে দেখুন আমার প্রোফাইলেই
১৩| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৮
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অন্যগুলোর চেয়ে অনেক ভাল
১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১০
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
১৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:২৭
রাজু মাষ্টার বলেছেন: আমিও আপনার পথেই আছি...
শুধু এখন সময়ের অপেক্ষা...
অনেক সয়েছি আর না...
আজ এ লেখা দেখে খুব খুব ভালো লাগলো...
আপনার জন্যি অনেক দোয়া রইলো
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:০৪
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ ।
থাকুন আমার পথে জীবনে সুখে থাকিবেন !!
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৬
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: রাশেদকে অসংখ্য ধন্যবাদ যথাযত প্রতিশোধ নেবার জন্য।। গল্পটি মন ছুয়ে গেছে।। ধন্যবাদ।।