নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুইটি অনুগল্পঃ মিতু

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৩

গল্পঃ এক

মিতুর আরেকবার ফোনটা কানে লাগালো । জানে এর ফলাফল কি হবে তবুও গত কয়েক ঘন্টা ধরে সে এই কাজটা করে যাচ্ছে । সুমনের ফোনটা বন্ধ জেনেও কিছু সময় পরপর কল করে যাচ্ছে । বারবার মনে হচ্ছে কখন চালু করবে ফোনটা ও ।

মোবাইলের সময়টা দেখে নিল । নয়টা বাজতে গেলে । সুমনের এখনও দেখা নেই । সুমনের ঠান্ডা একদম সহ্য হয় না । শীত কালে তাই যত দ্রুত সম্ভব সে বাসায় ফিরে আসে কিন্তু আজকে রাত নয়টা বাজতে গেলে তবুও তার দেখার নেই । এই তীব্র শীতের রাতে ছেলেটা কোথায় একা একা বসে আছে কে জানে । মিতুর আবার কান্না আসতে লাগলো ।
ঘরের আলো অনেক আগেই নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে । ঘর অন্ধকার করে বসে আছে সেই ঘন্টা দুয়েক হল । যদিও বাসায় কেউ নেই তবুও মিতু তার চোখের পানি আলোর ভেতরে ফেলতে চাচ্ছে না । মনে হচ্ছে ঘরের অন্ধকারের ভেতরে ওর চোখের পানি ফেললে কেউ দেখবে না । যদিও দেখার কেউ নেইও ।

মিতুর বারবার মনে হচ্ছে ও কাজটা কেন করতে গেল ? একটা ফোন করলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত ! আরেকটু কেয়ার কি ওর দেওয়া উচিৎ ছিল না ?

ওদের বিয়ের শুরু থেকে সুমন ওকে সব দিক থেকে সব সহযোগিতা করে এসেছে । ওদের বাসা থেকে মিতুর চাকরি করাটা পছন্দ ছিল না কিন্তু সুমন এটাতে মোটেই আপত্তি করে করে নি । বিয়ের পরেও যেখানে অন্যান্য হাজব্যান্ডরা বউদের বাইরে ঘোরাঘুর কিংবা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোটা পছন্দ করে না সেখানে সুমন এসবে কোন আপত্তি করি নি কোন দিন ।
কেবল ওর একটা জিনিসে সমস্যা ছিল । সেটা হচ্ছে মিতুর ছেলেদের সাথে ঘোরাঘুরি !
যেদিন ওদের মাঝে এই বিষয়টা নিয়ে কথা হয় সেদিনের কথা মিতু প্রায়ই ভাবে । সুমন অনেক টাই অস্বস্থি নিয়ে কথাটা বলেছিলো ওকে ।
মিতু বলল
-তার মানে তুমি চাচ্ছো যে আমি কোন ছেলের সাথে মিশবো না ?
-আরে না না !

সুমন হাসলো কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে । তারপর বলল
-আমি সেই কথা বলি নি । আসলে আমি ছোট বেলা থেকেই একটু ঈর্ষা পরায়ন ছেলে !
-হিংশুক ?
-হুম ! বলতে পারো । তবে সব দিকে না, কিছু কিছু দিকে । আমার কাছের মানুষ, আমার ভালবাসার মানুষটা যদি অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বলে কিংবা একটু হাসা হাসি, ঘোরাঘুরি করে এটা আমি ঠিক সহ্য করতে পারি না । আগে তো একদম পারতাম না । খুব রেগে যেতাম ।
-কিন্তু এটা তো ঠিক না ।
-আমি জানি এটা ঠিক না । রেগে যাওয়া ঠিক না । কিন্তু সব মানুষের কিছু চারিত্রিক লিমিটেশন থাকে । আমি যেহেতু মানুষ আমারও আছে । এটাই সেটা ।

কথাটা বলে সুমন কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । মিতুর মনে হল সত্যিই তো । সবারই কিছু না কিছু এমন ব্যাপার থাকে । যেমন রাতের বেলা ও কারো নাক ডাকা একদম সহ্য করতে পারে না । ওর দিকে কেউ যদি একটু অমনযোগি হয়ে সেটাও মিতু সহ্য করতে পারে না । আর ও নিজেও যদি তার স্বামীকে অন্য কোন মেয়ের সাথে হাসাহাসি করতে দেখে তাহলে নিজের কাছে সেটা খারাপ লাগবে ।

সুমন বলল
-দেখো আমি তোমাকে বলবো না তুমি অন্য কোন ছেলের সাথে মিশো না কিংবা কথা বল না । কেবল একটা অনুরোধ করি যে যখন এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তোমার কারো সাথে বাইরে যাওয়ার দরকার পরবে তখন আমাকে একটু জানাবে । এটুকুই । আমি যেন অন্য কারো কাছ থেকে এটা না জানতে পারি ।
-আচ্ছা । মনে থাকবে আমার ।

তারপরেও মাঝে এমন অনেক টা সময় গেছে যে যেখানে মিতু অফিস কিংবা বন্ধুদের সাথে বাইরে গেছে কিন্তু সুমনকে জানাই নি । কিংবা জানাতে ভুলে গেছে । মাঝে মাঝে যে জানাই নি তা নয় । কিন্তু ঘটনা টা যে এমন ভাবে হবে সেটা মিতু ভাবতেই পারে নি ।

আজকের দুপুরের কথা । অফিসের এক কলিগের সাথেই কাজে বের হয়েছিলো মতিঝিলের দিকে । কাজ অফিসের কাজে ছিল এই জন্যই ওর এতো কিছু মনে হয় নি । কাজ যখন প্রায় শেষ তখন তখনই ওর ফোনে সুমনের ফোন এসে হাজির ।
নিয়মিত যেমন ফোন করে তেমন ফোন মনে করেই মিতু ফোনটা ধরলো ।
-কোথায় তুমি ?

প্রথম প্রশ্নটা শুনেই মিতু একটু থতমত খেয়ে গেল । ঠিক তখনই তার মনে হল যে সুমন ওকে দেখতে পেয়েছে কোথা থেকে ।
-সুমন শোন প্লিজ আমি আসলে কাজে বের হয়েছি রফিক ভাইয়ের সাথে !
ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ এল না !
-হ্যালো শুনছো ? হ্যালো !

কোন জবাব নেই । তারপর ফোনটা রেখে দেওয়ার আওয়াজ হল । প্রায় সাথে সাথেই ফোন ব্যাক করলো । কিন্তু ফোন বন্ধ । মিতুর আর কোন সন্দেহই রইলো না যে সুমন ওকে দেখতে পেয়েছে । আর দেখতে পেয়ে ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে ।

মিতু কাজ শেষ করে অফিস না গিয়ে সুমনের অফিসে গিয়ে হাজির হল । সেখানে গিয়ে জানতে পারলো যে সুমনও কাজে মতিঝিলের দিকে গিয়েছিল । একটু আগে নাকি ড্রাইভার ফিরে এসেছে সব কাগজ পত্র নিয়ে । সুমন নাকি রাস্তার মাঝে নেমে গেছে ।

মিতুও আর অফিসে যায় নি । ভেবেছিলো হয়তো সুমন নিজেও বাসায় চলে আসবে কিন্তু আসে নি । তারপর থেকে সারাটা সময় মিতুর কেবল অস্থির সময় কেটেছে । পরিচিত সবার কাছে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছে যে সুমন ওখানে গেছে কি না । কিন্তু না সে যায় নি । সবার থেকে যখন না শুনা শেষ হল তখন বেড রুমে গিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করলো । বারবার মনে হচ্ছিলো যে একবার একটা ফোন করলে কি এমন ক্ষতি হত ওর । কিংবা একটা মেসেজ দিয়ে রাখলে ।

-------
রাত ১০ টার কিছু পরে যখন কলিংবেল বেজে উঠলো মিতু যেন একেবারে দৌড় দিয়ে দরজার কাছে চলে গেল । দরজা খুলে দেখে সুমন দাড়িয়ে আছে । চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে বিমর্ষ । কিছু সময় কেবল তাকিয়ে রইলো ওর দিকে । তার পর দরজা খুলা অবস্থায়ই ওকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে । এট আগে মিতু সুমন কে এতো জোরে জড়িয়ে ধরেছে কি না ওর জানা নেই । চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো নিরবে ।

কতক্ষন ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো মিতু জানে না সুমনের ডাকে ।
-দরজাটা বন্ধ করি । মানুষজন দেখলে কি বলবে ?
-বলুক যা ইচ্ছে । আমার স্বামীকে আমি জড়িয়ে ধরেছি । কার কি !
-আরে বাবা ঠিক আছে ।
-না আগে বল তুমি রাগ করে নেই আমার উপর ।
-আরে আমি কেন রাগ করে থাকবো তোমার উপর ?
-না আমি জানি তুমি রাগ করে আছো ? আমার কিছু একটা করা উচিৎ হয় নি কিন্তু আমি করেছি ।

সুমন ওকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে মুখোখুখি এনে বলল
-আমি তোমার উপর রাগ করি নি । তবে একটু মন খারাপ হয়েছে অবশ্য । তোমার সাথে ঐ লোকটা কে দেখে আমার মোটেি ভাল লাগে নি ।

সুমন দেখলো মিতুর চোখের পানি আবার পড়তে শুরু করলো । সুমন এটা দেখে বলল
-আচ্ছা বাবা এই দেখো আমি হাসছি । ঠিক আছে । তুমি কান্না কাটি করো না প্লিজ !

সুমন মিতুকে পাশে সরিয়ে রেখে দরজা বন্ধ করতে গেলে দেখলো মিতু এবার ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে । পিঠের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ধরে রইলো কিছুটা সময় । এইকাজ টা ও প্রায়ই করে । ওর হাত টা সামনে ওর বুকের কাছে চলে এসেছে । সেখানে তাকিয়ে দেখে মিতুর হাতে তাজা মেহেদী দেওয়া । হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি ।
এতো সময় সুমন লক্ষ্য করে নি এবার আবারও মিতুর দিকে তাকিয়ে দেখে মিতু হালকা আকাশী নীল রংয়ের শাড়িটা পরে আছে । এটাতে মিতুকে সব থেকে সুন্দর লাগে । মাঝে মাঝেই সুমন ওকে এই শাড়িটা পরতে বলে ।

সুমন কিছুটা সময় মিতুর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি কি আজকে ভুনা খিচুরী রান্না করেছো ?
মিতু জবাব না দিয়ে কেবল মাথা ঝাকালো ।
-বুদ্ধি ভালই পেয়েছো !

মিতু তাকিয়ে দেখলো সুমন ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে । আকাশী নীল রংয়ের শাড়ি, হাতে মেহেদী ভুনা খুচুরী, কাঁচের চুড়ি এসব সুমনের খুব পছন্দের । প্রিয় মানুষটার রাগ ভাঙ্গাতে প্রিয় জিনিস গুলোর কোন বিকল্প নেই । মিতু সুমনকে আরও একটাবার জড়িয়ে ধরলো । তারপর বলল
-আই প্রমিজ ইউ, আর কোন দিন এরকম টা হবে না । কোন দিন না ।
-আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে । এখন খেতে দাও জলদি । দুপুর থেকে কিছু খাই নি । আর জড়িয়ে ধরার জন্য পুরো শীতের রাত পরে আছে ।
---
(সমাপ্ত)



গল্পঃ দুই

মিতুর জন্য আমার বিয়ের প্রস্তাবটা প্রথমে আমার খালা এক বান্ধবীর কাছ থেকে আসে । তাদের বাসার পাশেই নাকি নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে । মেয়েটা দেখতে নাকি অনেক সুন্দর আর খুব নম্রভদ্র । আর তখন আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য এতো তোড়জোড় ছিল যে মেয়ের খোজ পেলেই খুব একটা খোজ খবর না নিয়েই মা সেখানে দৌড়ে চলে যেত দেখার জন্য । আমাকে প্রতিবার নিতে না পারলেও মাঝে মাঝে ঠিক ঠিক পাকড়াও করে নিয়ে যেত । সেদিনও নিয়ে গিয়েছিলো ।

প্রতিবারের মত আমি বিরক্ত হয়েই বসে ছিলাম । মায়েরা মায়েরা কথা বলছিলো । তার কিছু সময় পরেই মিতু ঘরে ঢোকে । আমি মিতুকে দেখে প্রথমে কিছুটা সময় কোন কথা বলতে পারলাম না । আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত হল । বারবার মনে হচ্ছিলো যে এই মেয়ে কোথায় ছিল এতো দিন কোথায় ছিল ? আমি কোন কথা না বলতে পেরে কেবল তাকিয়ে রইলাম মেয়ের দিকে । মেয়েটা কেমন লাজুক চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ।

আমার কেবল মনে হল যে এই মেয়েকে বিয়ে না করলে আমি ঠিকঠাক দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো । যে করেই হোক এই মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে । ঠিক তখনই ঝামেলা টা শুরু হল । তাড়াহুড়া করে খুব খোজা না নিয়েই আমার মা চলে এসেছিলাম কিন্তু এসে আসল খবর জানতে পারলাম ।
মিতু কথা বলতে পারে না । ছোট বেলায় গলায় একটা ইনফেকশন হয়েছিল, সেখান থেকে অপারেশন করার পর থেকে ও আর কোন দিন কথা বলে নি । মায়ের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল । আর বেশি কিছু না বলে মা বেরিয়ে এল । তারপর বাসায় এসে খালা আর সেই বান্ধবীকে সেই ঝাড়ি ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল যে আমি যেন ওসব মাথা থেকে বের করে দেই । জগতে কি মেয়ের অভাব আছে !!

কিন্তু আমি কিছুতেই মিতুকে মন থেকে বের করতে পারছিলাম না । পরদিন আবারও ওদের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম । আমাকে দেখে মিতুর বাবা একটু অবাক হল । অনেক কথা বলল । অনেকেই নাকি মিতুকে দেখে পছন্দ করে কিন্তু যখন শোনে ও কথা বলতে পারে না তখন ওরা পিছিয়ে যায় কিংবা মোটা যৌতুক দাবী করে । মিতুর বাবা মেয়েকে বিক্রি করবেন না বলেই দিলেন । দরকার হলে মেয়ে ঘরেই থাকবে । মিতু হাতের কাজ বেশ ভাল জানে । ও একটা বুটিক হাউজে চাকরি করে, পার্টনারশীপে । সেখান থেকে নাকি ভাল টাকাও পায় । জীবন পার করতে ওর কারো সাহায্য লাগবে না ।
আমি চুপ করে শুনে যাচ্ছিলাম । বারবার কেবল মিতুর চেহারাটা আমার চোখের সামনে ভাসছিলো । আমি বললাম
-আমি ওকে বিয়ে করতে চাই । কোন কিছুর বিনিময়ে না । কেবল ওকে চাই আর কিছু না ।
মিতুর বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললাম
-কিন্তু মা তো রাজি হবে না । তোমার পরিবার তো রাজি না । । আগে তোমার ফ্যামিলিকে রাজি করাও তারপর । আমাদের কোন আপত্তি নেই

আমি যখন কথা বলছিলাম দেখছিলাম যে দরজার আড়াল থেকে কে যেন উকি দিচ্ছে । সেটা যে মিতু আমার বুঝতে মোটেই কষ্ট হল না । আমার সাথে একবার চোখাচোখিও হয়ে গেল ।

বাসায় এই কথা বলতে মা যেন ফেটে পড়লো । পরিস্কার বলে দিল যে ঐ মেয়েকে তিনি কিছুতেই বাড়ির বৌ করে আনবেন না । এই কথা যেন তার সামনে দ্বিতীয়বার তোলা না হয় । বাবা টিভি দেখছিলো আমার দিকে তাকিয়ে কেমন করে যেন হাসলো ।

মা রান্না ঘরের যেতেই বাবা বলল
-মেয়ে নাকি কথা বলতে পারে না সত্যি নাকি ?
সোফায় বসতে বসতে বললাম
-হুম !
-এই সুযোগ হাত ছাড়া করিস না !
-মানে ?
-আরে যে স্বামীর বউ চুপ থাকে তার থেকে ভাগ্যবান আর কে আছে । পছন্দ হলে বিয়ে করে ফেল । শেষে তোমার মায়ের পছন্দ মত বিয়ে করলে দেখবি সে তার মতই টিভি সংবাদ পাঠিকা ধরে এনেছে । সারাদিন ননস্টপ চলতেই থাকবে !
আমি হাসলাম কেবল । বাবা আবার বলল
-শোন একজনকে একবার ভাল লেগে গেলে সেটা ছাড়ানো মুশকিল । সারা জীবন আফসোস থাকবে । তার চেয়ে সাহস করে কাজটা করে ফেললেই হল ।

-তুমি কি বললে ?
কখন যে মা পেছনে চলে এসেছে আমরা দুজনেই লক্ষ্যই করি নাই । আমি আর বসে থাকলাম না । উঠে চলে এলাম । এবার বাবা আর মায়ের ব্যাপার তাদের ভেতরে চলুক !

প্রায় প্রতিদিনই মিতুদের বাসায় যেতে লাগলাম । মিতুর বুটিক হাউজেও হানা দিতে লাগলাম । মিতু আমাকে দেখতো আর কেমন চোখে তাকিয়ে থাকতো আমার দিকে । আমি আরও একটু বেশি পাগল হয়ে যেতাম ।
এইসব কথা আমার বাসায় জানতেও খুব একটা দেরি হল না । একদিন মিতুদের বাসায় গিয়ে দেখি মিতুর বাবা খুব গম্ভীর হয়ে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-বাবা তুমি আর আমাদের বাসায় এসো না ।
-কেন ? কি হয়েছে ?
-তোমার মা এসেছিলো । আমাকে আর আমার মেয়েকে অনেক কিছু বলে গেছে । এসব কথা আমি আর শুনতে চাই না ।
-কি বলেছে ?
-সেটা তুমি তোমার মায়ের কাছ থেকেই শুনে নিও । তুমি আর এসো না !

আমি ওখান থেকেই বাসায় ফিরে এলাম । মায়ের কাছে জানতে চাইলাম সে কি বলেছে মিতুর বাবা কে । মায়ের কাছে কথা শুনে এমন রাগ হল যে মনে মনে ঠিক করে নিলাম যে আমি মিতুকেই বিয়ে করবো, অন্য কাউকে নয় ।

পরদিন আবারও মিতুদের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম । মিতুর বাবাকে কেবল বললাম যে আমি আজকের পর থেকে আর এখানে আসবো না কেবল মিতুকে আজকে যেন আমার সাথে বাইরে যেতে দেই । মিতুর বাবা কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর রাজি হয়ে গেল । মিতু বের হয়ে এল কিছু সময় পরেই । ও বুটিক হাউজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলো ।
আমি কেবল ওর দিকে তাকিয়ে আরও কিছুটা সময় হারিয়ে গেলাম কোথায় যেন । এই মেয়ে যদি আমার বউ না হয় তাহলে আমি আসলেই দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো । কোন ভুল নাই ।

রিক্সায় যখন ওকে নিয়ে যাচ্ছিলাম ও চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল । অবশ্য ও চুপ করে থাকা ছাড়া আর কি করতে পারে । আমার নিজেরও খানিকটা কেমন যেন অস্বস্থি লাগছিলো তবে সেই সাথে ভালও লাগছিলো খুব ।

মিতু আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । কেবল আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । আমি কি করতে যাচ্ছি যেটা যেন ও ঠিক ঠিক বুঝতে পারলো তখনই । যখন আমাদের রিক্সাটাকে আমি মগবাজার কাজী অফিসের সামনে দাড়াতে বললাম তখন ও চোখে বিশ্ময় দেখতে পেলাম । আমি রিক্সা থেকে নেমে মিতুর দিকে তাকিয়ে বললাম
-মিতু তোমার সামনে এখন দুইটা পথ খোলা আছে । তুমি রিক্সা থেকে এখন নামতে পারো আমার সাথে । অথবা এই রিক্সা নিয়ে চলে যেতে পারো । আমি বাঁধা দিবো না ।

মিতু যেন দ্বিধায় পরে গেল । কি করবে ঠিক বুঝতে পারলো না । আমি ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম
-আমি জানি তুমি আমাকে ঠিক মত চিনোও না । কদিন থেকে দেখছো মাত্র । তাই হয়তো ঠিক ভরশা করতে পারছো না তবে আমার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখো ।

মিতু আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । সোজা আমার চোখের দিকেই ।
আমি আবার বললাম
-আজকে যদি তুমি আমার এই হাতটা ধর তাহলে যতদিন আমার বেঁচে থাকতো তোমার হাত ছেড়ে দিবো না কোন দিন । এমন কি মরার পর ভুত হয়ে তোমার আসেপাশে থাকবো । তুমি চাইলে সেই গল্প লিখে পাঠাতেও পারবে ভুত এফএমের রাসেল ভাইয়ের কাছে ।
মিতু কথা গুলো কেবল শুনে গেল গভীর চোখে । আমি বললাম
-যাবে আমার সাথে ?

কিছুটা সময় ও কেবল তাকিয়েই রইলো আমার দিকে । আরও কিছুটা পরে মিতুর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই দেখলাম ওর চোখ থেকে একটু পানি বের হয়ে এল । তবে সেটা বিষন্নতার নয় অন্য কিছুর । ওর চোখের পানি নিয়েই আমার হাত ধরলো । যদিও কেবল চেয়েই রইলো আমার দিকে ওর চোখের দৃষ্টি স্পষ্ট বলছে যে "আমি বিলিভ ইন ইউ" !

ওর হাত ধরেই কাজী অফিসের ভেতরে ঢুকলাম । নতুন জীবনের শুরুটা এখানেই ....


(সমাপ্ত)

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৭

আশিক ইলাহি বলেছেন: একটানা পড়ে শেষ করলাম!!

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৫৪

অপু তানভীর বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ :)

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৪

দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: শুভেচ্ছা রইল

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৫৪

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্য্যবাদ :)

৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫০

অবনীল মানব বলেছেন: শুভ কামনা রইল। ।।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৫৪

অপু তানভীর বলেছেন: আপনার জন্যও :)

৪| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৪

তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: ভাল লাগা রেখে গেলাম ভাইয়্যা :)

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৫৫

অপু তানভীর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :)

৫| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:০৬

gazi rakibul islam (rakib) বলেছেন: দ্বিতীয় গল্পটি বেশি ভাল লাগলো :) :D

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫১

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৬| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৯

বৃতি বলেছেন: নায়িকা বারবার বদলে যায়, নায়ক কেন বদলায় না!!?? এই নায়ক কতবার যে মগবাজার কাজী অফিসে ঢুকলো :P :P

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২

অপু তানভীর বলেছেন: নায়ক যে কতবার মগবাজার কাজী অফিসে ঢুকেছে সেটা নায়কের নিজেরও মনে নাই :D

৭| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১১

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: নায়ক বদল এখন জাতির দাবি হে অপু :-/

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২

অপু তানভীর বলেছেন: জাতির দাবি অপু তানভীর মানিয়া লইবে না কিছুতেই :D

৮| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনু গল্প এতো বড়!
যাই হোক, পড়েছি| ২য়টা আগেরটার চেয়ে বেশি ভাল্লাগছে

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৩

অপু তানভীর বলেছেন: আমার অনু গল্প এমনি হয় :):)

৯| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫১

আজমান আন্দালিব বলেছেন: -আরে যে স্বামীর বউ চুপ থাকে তার থেকে ভাগ্যবান আর কে আছে।
কথাটা পছন্দ হইছে। সাথে গল্প দুইটাও...

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৪

অপু তানভীর বলেছেন: কথা কিন্তু মিথ্যা না B-))

১০| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩২

সোহানী বলেছেন: হিংসুটে স্বামী!!!!!!!!! হাহাহাহা...........

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৪

অপু তানভীর বলেছেন: আমিও এই রকমই !! সব কিছুতে ছাড় দিলেও এই বিষয়টাতে কুনো ছাড় নাই :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.