নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক
সুমন এক ভাবেই জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে ! কিছুটা আনমনা হয়ে । আজকে অফিসে আসার পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে । ঝুম বৃষ্টি ! এই রকম বৃষ্টিতে ভিজতে পারলে ভাল লাগতো কিন্তু সেই উপায় নাই ! অফিস ছুটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ।
অবশ্য অফিস ছুটির আর খুব একটা বাকীও নাই । সুমন ঘড়ি দেখলো । ঘন্টা খানেক বাকি আছে ।
কি করবে ?
একটু আগে কি আজকে বের হয়ে যাবে ?
যাওয়া যায় । বস আজকে আসে নাই । বকা দেওয়ার কেউ নাই । সুমন আর অপেক্ষা করলো না। বাইরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মন হচ্ছে বৃষ্টি আর অনেক্ষনই হবে কিন্তু সুমনের অপেক্ষা করতে মন চাইছে না । এখনই বাসায় যেতে হবে তারপর ছাদে উঠে ভিজতে হবে !
সে নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল ।
-এই সুমন ভাই ? দাড়ান !
সবে মাত্র অফিসের গেট দিয়ে বের হয়েছে তখনই ডাকটা শুনতে পেল । অহিনের ডাক ।
পেছন ঘুরে তাকাতেই অহীন একেবারে লাফ দিয়ে সুমনের ছাতার নীচে চলে এল !
-আরে আস্তে !
-হুম ! আস্তে আসলে তো ভিজে যেতাম দেখছেন না !
-আমাকে তো বলা যেত ! আমি নিয়ে আসতাম । !
-হুম ! হয়েছে । এখন চলেন !
সুমন খানিকটা অবাক হয়ে বলল
-কোথায় ?
-আপনি বৃষ্টিতে ভিজতে যাচ্ছেন না ?
-আপনাকে কে বলল ?
-দেখুন , আমি কিন্তু আপনার অনেক খবরই জানি ! এখন চলেন ! আজকে আপনাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাবো সারা জীবনে মনে রাখবেন !
-কোথায় নিয়ে যাবেন ?
-আরে চলুন না ! বৃষ্টিতে ভেজার জন্য অতি উত্তম জায়গা ! আসুন আসুন !
বৃষ্টির দিকে ট্যাক্সিটা পাওয়া অনেক ঝামেলার একটা ব্যাপার । সুমন নিজে খানিক্ষন চেষ্টা করে দেখলো কিন্তু কোন কাজই হল না । কোন ট্যাক্সি বা সিএনজি থামতে চাইছে না !
যখন হাল ছেড়ে দিলো তখনই একটা সিএনজি এসে হাজির !
অফিসের দুইতালা থেকে সুমন আর অহীনের পুরো দৃশ্যটা মুনিয়া দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিল ! হঠাৎ করেই মুনিয়ার মনে হল ওর রাগ উঠছে । ঠিক কারনটা ও ঠিক মত ববুঝতে পারছে না !
রাগ ওঠা রকোন কারন তো নাই !
কিন্তু তবুও রাগ উঠছে কেন ?
অহীনকে সুমনের পাশে দেখে সহ্য হচ্ছে না ?
কিন্তু তা তো হওয়ার কথা না ! কোন কারনই নাই ! তাহলে কেন রাগ হচ্ছে ? মনে হচ্ছে ঐ অহীনের নামনের মেয়েটাকে একটা জোরে চড় লাগাতে ।
ছেলে মানুষের সাথে তো মাখা মাখি কেন ?
আর সুমন টাও হয়েছে এমন ?
আসলেই ছেলে মানুষ এমনই হয়ে থাকে । একটা মেয়েকে ছেড়ে যেতে অন্য মেয়ের কাছে যেতে ওদের বিন্দু মাত্র সময় লাগে না !
এই তো কদিন আগেই সুমন মুনিয়াকে প্রোপোজ করেছিল ! এমন একটা ভাব যেন মুনিয়াকে ছাড়া ও বাঁচবেই না ! আর এখন দিব্যি অন্য মেয়ের সাথে ঘুর বেড়াচ্ছে ।
আশ্চর্য !
মুনিয়া যদিও সুমনের প্রোপোজ এক্সসেপ্ট করে নি তবুও কি এক মাসের ভিতরে অন্য মেয়ের দিকে ঝুকে পরতে হবে ?
এমন কেন হবে ?
মাঝখানে মুনিয়ার একবার মনে হয়েছিল যে সুমন প্রোপোজাল ফিরিয়ে দিয়ে ও মনে হয় ভুলই করলো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঠিক ই করেছে । এই রকম ছেলের সাথে বিয়ে করার কোন মানে নাই ।
মুনিয়া নিজের মন থেকে সুমন আর অহীনের চিন্তা দুর করার চেষ্টা করলো ! কন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে কিছু ঝেড়ে ফেলতে পারছে না । ঘুরে ফিয়ে ঐ দৃশ্যটাই চোখের সামনে আসছে ।
সুমন দাড়িয়ে আছে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় দিয়ে আর অহীন দৌড়ে এসে ছাতার ভিতর ঢুকে পড়লো !
একেবারে সিনেমার নায়িকা দের মত । জীবন টা সিনেমা পেয়েছে ।
ফাজিল মেয়ে !!
থাপড়িয়ে দাত খুলে ফেলা দরকার !
মুনিয়ার রাগ বাড়তেই থাকে !
-ঐটা কি ছিল ?
অহীন সিএনজির গ্রিল দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছিল ! সুমনের কথায় ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল
-কোনটা কি চিল ?
-আরে ঐ ভাবে কেউ লাফ দিয়ে আসে । তাও অফিসের সামনে কলিগরা কি মনে করবে ?
-করুক না ? সমস্যা কি ?
-অহীন ! আপনার কাজ কারবার আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ।
অহীন কিছুক্ষন সুমনের তাকিয়ে বলল
-আপনি এতো টেনশন নিয়েন না তো ! দেখবেন কাজ হবে । অপেক্ষা করেন !
দুই
সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছিল ! বৃষ্টি হলেই আমার মন বিষন্ন হয়ে ! আর ইদানিং কেন জানি আরো বেশি মন খারাপ হয় ! মুনিয়া আসে পাশে থাকলেই এমন টা হয় ! আচ্ছা মেয়েটার মনে আমার জন্য কি কোন ফিলিংস ই নাই ?
কি রকম কঠিন মুখে আমার সামনে দিয়ে চলাচল করে !
আশ্চর্য হয়ে যাই !
এখন মনে হচ্ছে মেয়েটাকে পছন্দ করে ভুলই করেছিলাম ! যে মেয়েটা আমার জন্য বিন্দু মাত্র কিছু অনুভুব করে না তার জন্য মন খারাপ করে কি লাভ ?
তবে আজকে সময় আসলেই অনেক ভাল কেটেছে । অহীন আমাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাবে ভাবতেই পারি নি । আফতাব নগরে এমন একটা বাড়ি আছে আমি তো জনতামই না !
বৃষ্টির ভিতরে সিএনজি থামলো একদম বাড়িটা গেটের সামনে । একেবারে শেষ বাড়িটা ! আমি যখন বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম তখন মনে হল যেন আমি অন্য কোন জগতে চলে এসেছি !
পুরো বাড়িটা গাছগাছালীতে ভরা ! তার উপর আবার আকাশে মেঘ ! কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আছে ।
অহীন আমাকে টেনে নিয়ে গেল বাড়ির ভিতরে !
-এটা কার বাড়ি ?
অহীন আমার কথার ঠিক মত জবাব না দিয়ে বলল
-কেন ? এ বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করবেন ?
-আরে আশ্চর্য ! এভাবে যে কারো বাড়ির ভিতর ঢুকা ঠিক নাকি ?
-সুমন সাহেব, আপনি মনে হয় দেখেন নাই যে আমি চাবি দিয়ে গেট খুলেছি ! তারমানে কি দাড়ায় ?
আমি সত্যিই অবাক হয়েছি ! বললাম
-এটা তোমার বাসা ?
-হুম !
-সরি এটা আপনার বাসা ? এটা আসলে অবাক হয়েছিলাম এতো যে হঠাৎ করেই তুমি বের হয়ে গেল !
অহীন হেসে বলল
-তুমিই ঠিক আছে ! আর আমরা যে প্রযেক্ট হাতে নিয়েছি তাতে মনে হয় আমাদের তুমিতেই আসা ভাল ! তাই না ?
আমি কিছুক্ষন চুপ করে অহীনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটাকে আমি ঠিক মত বুঝতে পারছি না ! মেয়েটা আসলে কি করতে চাইছে !
আর কেনই বা করতে চাইছে !
মুনিয়া যেদিন আমার প্রোপোজ ফিরিয়ে দিল সেদিন মনটা অনেক খারাপ ছিল ! অহীন পুরো ব্যাপারটা কোথা থেকে যেন জানতে পারে ! হয়তো মুনিয়া নিজেই বলেছে ।
অহীন একেবারে সরাসরি আমার কাছে এসে বলল
-আপনি কি হার মেনে নিবেন ?
আমি অহীনের কথা ঠিক মত বুঝতে পারলাম না ! । বললাম
-মানে কি ? আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না আপনার কথা !
তারপর অহীন আমাকে যা বলল তাতে আমি সত্যিই অবাক হলাম । কেবল বললাম
-কাজ হবে ?
-অবশ্যই হবে ! কেবল আমি যা করতে বলবো তাই করতে হেব ! পারবেন তো !
তিন
-আসবো ?
সুমন একটু চমকালো ! দরজায় মুনিয়া দাড়িয়ে ! হাসি মুখে !
সুমন অনুভব করলো ওর বুকের ভিতর হার্টবিট বেড়ে গেছে ! এই মেয়েটা এখানে কি করে ! এতো দিন ধরে এখানে কাজ করে খুব কমই ওর সাথে কথা হয়েছে । মুনিয়া আর সুমনের ডিপার্টমেন্ট আলাদা তাই খুব একটা দরকার হয় না দেখা করার । তাহলে আজকে কি দরকার পড়লো ?
-আসুন !
সুমন অনুভব করলো কথাটা বলার সময় ওর গলাটা কেমন যেন একটু কেঁপে উঠল !
মুনিয়া ওর সামনে বসতে বসতে বলল
-একটা দরকারে আসলাম !
-বলুন !
-তার আগে বলুন আপনি আমার উপর এখনও রাগ করে নেই তো !
-কোন ব্যাপারে ?
-দেখুন আপনি ভাল করেই জানেন কোন ব্যাপারে ! আসলে জীবনে সব কিছুই মন মত হয় না ! তার পরেও তো সবার সাথেই মানিয়ে চলতে হয় !
-হুম ! তা তো অবশ্য ! বলুন !
-আপনি নাকি গ্রাফিক্স জিজাইন জানেন ?
-এই একটু জানি আর কি ?
-আমার একটা প্রেজেন্টেশন তৈরি করে দিতে হবে !
-কখন ?
-আজকেই ! লাঞ্চ আওয়ারের আগেই লাগবে । দেখুন কালকে হলে আমি কিছু একটা করে ফেলতাম কিন্তু হঠাৎ করেই ঝামেলা টা বেঁধে গেছে । কিছু উপায় খুজে পাচ্ছি না !
-আচ্ছা ঠিক আছে ! আমার কিছু থিম করা আছে ! দেখা আপনার কাজে লাগে নাকি !
মুনিয়া খুশি হয়ে উঠল ।
-আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো !
-না না ! ঠিক আছে । আগে আপনার উপরকারে আসি তারপর !
মুনিয়া চলে যাওয়ার পরেও সুমন কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলো ! মনে মনে একটা অনন্দ অনুভব করছে ।
কাজ কি তাহলে সত্যি হচ্ছে ?
চার
সুমন ছেলেটা প্রথম থেকেই কেন যেন লাগতো ! দেখতে শুনতে খারাপ তা কিন্তু না ! কিন্তু তবু কেন জানি ভাল লাগতো না ! তাই ছেলেটা যখন প্রপোজ করে বসলো একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম ! কিন্তু ছেলেটাকে যখন অহীনের সাথে আবার দেখলাম কেন জানি ভাল লাগলো না ! আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না এমন একটা কেন হচ্ছে ! এমন তো হবার কথা না ।
সুমনের কোন কিছুই ঠিক অপছন্দ করার মত না । অফিসের সবাই তাকে পছন্দ করে । সেই হিসাব মত আমারও তাকে পছন্দ করার কথা ।
সারাক্ষন কথা বলছে নিজে হাসছে আবার অন্যকে হাসাচ্ছে ! এমন ছেলে সবাই পছন্দ করে ! আমিও করি ! কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয়েছিল সুমন আমাকে একটু আগে ভাগেই প্রোপোজ করে ফেলে । এমনটা কেন হবে ?
আমাকে পছন্দ কর । ভাল কথা ! কিন্তু আগে তো আমার মন জোগাবে !
তা না আমি সামনে আসলেই কেমন চুপ করে যায় । আমি নিজেওওর সাথে কয়েকদিন কথা বলেছি কিন্তু আমাকে আকারে ইঙ্গিতে তেমন কিছুই সে বোঝাই নি ! বা বোঝাতে পারি নি !
আমি ওর মনভাব প্রথম টের পপাই সাবরিনার কাছ থেকে । শুনে খানিকটা অবাক হয়ে গেছিলাম । পরে আস্তে আস্তে টের পেতে শুরু করি আসলেই সুমন আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে !
সুমনের মত ছেলেকে সবাই পছন্দ করে কিন্তু তাই বলে এমন হুট করে কিছু বলে উঠবে ?
আগে কি ওর উচিৎ ছিল না আমি দিকটা দেখা ! আমার মনটা কি ওর আগে জয় করার দরকার ছিল না ?
তা না !
তাই প্রথমে খানিকটা বিরক্তই হয়েছিলাম ওর আচরন দেখে কিন্তু সব চেয়ে বেশি বিরক্ত হলাম অহীনের সাথে ইতিস পিটিস করতে !
আমি ওকে রিফিউজ করেছি দুইদিনও হয় এরই ভিতরে নতুন একজন ?
কি রে ভাই ?
কটাদিন অপেক্ষা করলে হত না ?
প্রথমে ভেবেছিলাম সম্পুর্ন ভাবে সুমনকে ওভোয়েড করবো । কিন্তু সেদিন যখন ওদের দুজন কে একসাথে বৃষ্টির ভিতর বের হতে দেখলাম কেন জানি ভাল লাগলো না !
ওরা যখন হাসছিল বুকের ভিতর একটা কাটা বিঁধছিল ! মনে হচ্ছিল ঐ জায়গাতে আমি থাকতে পারতাম !
আমি ঐ মেয়েটার জায়গায় হাসতে পারতাম !
পাঁচ
সুমনের মুখ দেখে মনে হচ্ছ যেন ওর মনের আর আনন্দ আর ধরছে না । অহীন এক মনে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । কি বলছে সেটা কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না । কেবল একটা কথাই মনে হচ্ছে যে ছেলেটার সাথে মনে হয় আর এভাবে বসে আড্ডা দেওয়া হবে না । হবে না । এমন করে অন বাহনা নিয়ে আর কথা বলা হবে না । একসাথে রিক্সা করে আর ঘোরাঘুড়ি হবে না !
সুমন বলল
-তুমি কি শুনছো ?
-হুম ! শুনছি তো !
-তাহলে মুখ শুকনা কেন ? শরীর খারাপ নাকি ?
এই কথা বলেই সুমন খুব স্বভাবিক ভাবেই ওর কপালে হাত দিল জ্বর দেখার জন্য !
-কই ? শরীর তো ঠান্ডা !
অহীন কেবল মনে মনে বলল
ছেলে কেবল কপালে ছুয়েই সব কিছু বোঝা যায় ! তুমি যদি সব কিছু বুঝতে পারতে তাহলে আজকে আমার মন এমন হত না ! আসলে সত্যি কথা বলতে কি অহীন কিছুতেই সুমন কে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে নি । এগিয়ে এসেছিল যাতে করে কয়েকটা দিনের জন্য হলেও সুমনের কাছাকাছি থাকার কথা চিন্তা করে ।
অফিসে সুমন মুনিয়া টপিক টা যখন চুঙ্গে অহীন বেশ মন খারাপ করেই এই সব আলোচনা শুনতো চুপচাপ । কেন জানি ওর খুব কান্না পেত । সবার পছন্দের সুমন কে অন্য সবার মত সেও পছন্দ করতো । একটু যেন বেশিই পছন্দ করতো ! কিন্তু চুপচাপ স্বভাবের জন্য সেটা আর বলা হয়ে ওঠে নি । কিন্তু যখন জানতে পারলো যে মুনিয়া সুমনের প্রপোজাল টা মানা করে দিয়েছে তখন নিজের ভেতরে আর চুপ করে থাকতে পারে নি ।
মনে হয়েছে ভাগ্য হয়তো তাকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছে । তাই সাহায্য করার নামে এগিয়ে গেছে সুমনের কাছে । নিজের মুখ বুঝে থাকা স্বভাব টা বিষর্যন দিয়ে কথা বলা শুরু করেছে ।
তারপর থেকে ওদের কথা হতে থাকে নিয়মিত । দেখা সাক্ষাত এমন ভাবে হতে থাকে যেন সেটা মুনিয়ার চোখে পড়ে । কিন্তু এদিকে অহীন আকারে ইঙ্গিতে নানা ভাবে বোঝাতে থাকে যে দেখো তোমাকে অন্য কেউ ও পছন্দ করে ! কিন্তু সুমন সেটা বুঝতে পারে নি । এদিকে প্রতিদিন মুনিয়ার সাথে কি হল না সেটা বলতে থাকে ! অহীন সেটা মুখ বুঝে সহ্য করে ! তবে সেটা কিছুতেই সহ্য হত না ! মুনিয়া অসম্ভব হিংসা হত ওর । বারবার মনে হত মেয়েটা কি ভাগ্য নিয়েই না জন্মেছে !
সুমনের কথা বলা শেষ হলেও অহীন চুল করে থাকে । বাইরে তাকিয়ে থাকে ! সুমন বলল
-কি হল আজকে তোমার ?
-কিছু না !
-আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ । চল আজকে বৃষ্টিতে ভিজি !
-আজকেও !
-আহা ! চল না ! আজকের পর হয়তো আর সুযোগ হবে না !
অহীনের মন টা আরও একটু খারাপ হয়ে গেল । সুমনের এই কথাটার মানে ও খুব ভাল করেই জানে । মুনিয়া সম্ভবত রাজি হতে যাচ্ছে । আর রাজি হওয়া মানে ওর সাথে মেলা মেশা বন্ধ ! প্রজেক্ট শেষ !
ছয়
ঝুম বৃষ্টির ভেতরে কান্নার একটা সুবিধা হচ্ছে সেটা বাইরে দেখে খুব ভাল করে বোঝা যায় না ! আমি যে কাঁদছি সুমনের দিকে কোন লক্ষ্য নেই । ছেলেটা এমন কেন ? একটুও কি বুঝতে পারে না আমাকে !
সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছি আমার সাথে কেবল এমনই হয়েছে । সব থেকে পছন্দের মানুষ গুলো কেন জানি আমার কাছ থেকে সব সময় হারিয়ে যায় ! আমি কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি তাদের চলে যাওয়াটা !
বাবা মায়ের চলে যাওয়ার দিন কেবল আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম । কিছু বলতে পারি নি । কিছু বলার মত তখন আমার বয়সই ছিল না ! তারপর থেকে সারাটা জীবন টা একা একাই কেটেছে কেবল !
সুমনের সাথে কাটানো এই কটা দিন আসলে আমার কাছে অন্য রকম ছিল ! অফিস শেষে ওর সাথে ফুসকা খাওয়া । বাসা পর্যন্ত আমাকে এগিয়ে দিতে আসতো । কোন কোন দিন বাসায় এসেও চা খেয়ে যেন । আর রাতে ফোনে কথা তো ছিল । কেমন স্বপ্নের মত দিন কেটে যাচ্ছি । কিন্তু সব স্বপ্নের যেমন শেষ আছে তেমনি ভাবেই এটারও শেষ হয়ে যাচ্ছে ।
মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে ওকে জোর করে জড়িয়ে ধরে বলি তুমি কি কিচ্ছু বুঝো না ! কিন্তু পারি না ! পারলে ভাল হত ! এখন আমাকে কাঁদতে হত না লুকিয়ে !
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি থেমে যাচ্ছে । সেই সাথে ওর সাথে শেষ ভেজা টাও মনে হয় !
-এই কি কর ?
আমি ফিরে চাইলাম !
-কিছু না !
আমার দিকে এগিয়ে এসে ও খুব সহজে আমার হাত ধরলো ! আমার চোখে চোখ রেখে বলল
-আমি বুঝতে পারছি তোমার কিছু একটা হয়েছে । কি হয়েছে বল আমাকে ?
আমার কেন জানি চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হল তোমাকে ভালবাসি তুমি বুঝতে পারছো না ! তুমি কেন আমাকে ছেড়ে যাবে ? কেন ? আমি কি দেখতে সুন্দর না !
কিন্তু বলতে পারলাম না !
সুমন আমার হাত ছেড়ে না দিয়েই বলল
-আচ্ছা তোমার নামে এই বাড়িটা ছাড়া আর কি কি আছে বল তো ?
আমি কিছু না বুঝতে পেরে বললাম
-কি ? কি বলছো ?
-নামে মানে তুমি আর কোন কোন জিনিসের মালিক ?
-সুমন তুমি কি বলছো আমি ঠিক বুঝতে পারছি না !
-না মানে আমি যদি মুনিয়াকে প্রপোজ না করে তোমাকে প্রপোজ করি তাহলে আমার কপালে আর কি কি আসবে সেটার একটা ক্যালকুলেশন করতে চাচ্ছি আর কি !
আমার পুরো শরীর টা যেন কেঁপে উঠলো ! সুমন কি বলল ? কেন বলল ?
ও কি আমার সাথে ইয়ার্কি করছে ?
আমি কেবল অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । বুঝের ভেতরে কেমন একটা ধড়ফড়ানী শুরু হল । ব্যাখ্যাতীত একটা উত্তেজনা !
পরিশিষ্টঃ
অহীন কোন কথা না বলে কেবল তাকিয়ে আছে সামনে দাড়ানো ছেলেটার দিকে । কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না ওর সাথে যা হচ্ছে । নাকি ও স্বপ্ন দেখছে এখনও !
সুমন বলল
-তুমি আমাকে কি মনে কর বল তো ?
-কেন ?
-না মানে আমি কি কিচ্ছু বুঝি না নাকি ?
অহীন কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো ! সুমন বলল
-মানুষের অনুভুতি বুঝতে পারবো না এতো বড় গাধা আমি নই । হ্যা আমার প্রথম নির্বাচন টা হয়তো ভুল ছিল কিন্তু দিনের পর দিন যার সাথে আমি মিশেছি তাকে তো চিনতে ভুল হওয়ার কথা না !
-কিন্তু তুমি মানে মুনিয়াকে....।
-আরে বোকা মেয়ে ওগুলো কেবল আমি বানিয়ে বলেছি ! মুনিয়ার সাথে আমার কোন যোগাযোগ হয়নি কেবল একদিন ছাড়া । আমি ওর কথা আর চিন্তাও করি নি । তোমার সাথে মিশার পর আমার অন্য কারো কথা মনেও পড়ে নি !
অহীন কেবল সুমনের দিকে তাকিয়েই রইলো ! বৃষ্টি মাঝে একটু থামার মত হয়েছিল এখন আবারও জোরে পড়তে শুরু করেছে । সুমন বললল
-আমি কেবল তোমার মুখের ভাব টা দেখতা যখন মুনিয়ার কথা বলতাম ! আমার খুব মজা লাগতো !
-তাই ! আমাকে কষ্ট দিয়ে মজা নিতে ! ছাড়ো আমাকে! ছাড়ো !!
নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অহীন বাড়ির দিকে রওনা দিল । মুখ ফিরিয়ে নিলেও ওর এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না ! মনের ভেতরে একটা চাপা আনন্দ কাজ করছে যেটা ও কিছুতেই চেপে রাখতে পারছে না !
-আরে কই যাও ?
বলতে বলতে সুমন ছুটে এল ! ঠিক পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ওকে । তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
-শুনো মেয়ে তোমাকে এই ভাবে চলে যেতে দিবো ভাবলে কিভাবে শুনি !! হুম !!
অহীন কেবল চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে রইলো ! ওর এখনও বিশ্বাস হতে চাইছে না । কেবলই মনে হচ্ছে চোখ খুললেই মনে হয় এই সব গায়েব হয়ে যাবে ! এই অনুভুতি টুকু হারিয়ে যাবে নিমিষহিতেই ! তাই চোখ বন্ধ করেই এই অনুভুতি টুকু সম্পুর্ন ভাবে নিজের করে অনুভব করে নিতে চাইছে ।
(গল্পটা অন্যভাবে শেষ করবো ভেবেছিলাম কিন্তু শেষ করলাম সম্পূর্ন আরেক ভাবে)
২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৩২
অপু তানভীর বলেছেন: অনেক দিন পর আমি আবার লিখতে পারলাম
২| ২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:০৬
মায়াবী রূপকথা বলেছেন: ভালোলেগেছে
২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৩২
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:০১
আশিক ইলাহি বলেছেন: অনেক ভালো লেখা।
২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:০৯
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !
৪| ২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:০৬
গোল্ডেন গ্লাইডার বলেছেন: আমার কাছেও লুূতুপুতু প্রেম মনে হইতেছে
২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:০৯
অপু তানভীর বলেছেন: লুূতুপুতু প্রেই তো
৫| ২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩৭
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: খুব ভাল্লাগলো
২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:০১
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১২:২০
আনস্মার্ট বলেছেন: অনেক ভাল লাগল। লং স্টুরি
২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১২:৫০
অপু তানভীর বলেছেন: ভাল লাগলেই ভালু
৭| ২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১২:৩৮
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: জাত গেল জাত গেল
২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:২৫
অপু তানভীর বলেছেন: ভালু !
৮| ২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:৩৩
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: এই সমাপ্তিই ভালো হইছে। কখনো কখনো ভালোবাসা কারো জন্য হ্যাং কইরা রাখার মানে নাই। লাইফ চলতেই থাকে, হুট করে আরো অন্যকিছু চইলা আসে...
২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:৪৩
অপু তানভীর বলেছেন: কথা অতি সইত্য !
কারো জন্য হ্যাং কইরা রাখা টাও চরম বোকামী !!
৯| ২৪ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১০:০৪
ঘুড়তে থাকা চিল বলেছেন: হঠাত করেই এররম একটা অনুভুতি পাওয়ার ইচ্ছা জাগছে মনে
২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩৬
অপু তানভীর বলেছেন: হঠাৎ করেই কেন আমার তো সারাটা সময় কেবল এই অনুভুতি পাইতে ইচ্ছে জাগে মনে !
১০| ২৪ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১০:১৯
রিকি বলেছেন: কাল থেকে মন্তব্য করার চেষ্টা করে করে ব্যর্থ--- ভাল লেগেছে as usual....
২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩৮
অপু তানভীর বলেছেন: ব্যর্থ চেষ্টা অবশেষে সফল হইছে !
অভিনন্দন !
১১| ২৪ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:০৭
নীল আকাশ বলেছেন: আপনার লেখা সব গল্প গুলি ভালো লাগে পরতে।
২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৪০
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !
১২| ২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:২৯
জেন রসি বলেছেন: বৃষ্টি নামুক কিংবা না নামুক আজ বসন্ত!!
গল্প ভালু লেগেছে।
২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৪১
অপু তানভীর বলেছেন: বৃষ্টির জন্যই এই আকাঙ্খা অনেক দিনের কিন্তু সত্যিকারের জীবনে সেই বৃষ্টি আর এল না !
থেঙ্কু
১৩| ২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩৩
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: পুরাই গুগলি , ঠিক শেন ওয়ার্ন এর মত।
তবে গল্পটা এবারের ঈদে একটি নাটক বা টেলিফিল্ম হতে পারে।
আরো সুন্দন সুন্দর প্রেমের গল্পের অপক্ষোয়।
২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৪৩
অপু তানভীর বলেছেন: হতেই পারে ।, আসলেই গল্প লিখতে চেয়েছিলাম অন্য ভাবেই কিন্তু শেষে এসে এই দিকে থেমেছে !
১৪| ২৪ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:১৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: ... কিন্তু অহিন কিভাবে সুমন আর মুনিয়া প্রজেক্ট সফল করার উদ্দেশ্যে কাজ করছিলো সেটা গল্পে মোটেও লেখা নাই। থাকলে ভালো হতো। এমনিতে মোটামুটি হৈসে।
২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৪৪
অপু তানভীর বলেছেন: প্রজেক্টটাই হল মুনিয়ার মনে খানিকটা ঈর্ষা তৈরি করে । কিন্তু প্রজেক্ট অন্য দিকে ঘুরে গেছে !
১৫| ২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:০৪
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: বর্ষাকালে মানানসই রোমান্টিক গপ্প। শুভেচ্ছা।
২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৪৬
অপু তানভীর বলেছেন: দুঃখ কেবল গল্পেই এমনটা হয় !
১৬| ২৫ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৫৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: মিষ্টি প্রেমের গল্প বড়ই ভালো লেগেছে ভ্রাতা। মাঝে মাঝে এরকম গল্প পড়লে মনটা হালকা হালকা লাগে। +++
ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।
২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:৫৮
অপু তানভীর বলেছেন: জীবনে প্রেম ছাড়া আর আছে কি ! যার জীবনে প্রেম নাই তার কিছু নাই
১৭| ২৮ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১০:০৫
অপ্সরা বলেছেন: ভাইয়া এইবার বই বের করতেই হবে।
৩০ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩১
অপু তানভীর বলেছেন: টেকাটুকা নাই আপু ! বই কিভাবে বের করিবো !!
১৮| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:০২
দ্বীন মুহাম্মদ সুমন বলেছেন: আপনি অসাধারণ লিখেন ভাই .।.।.।
০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:১০
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
১৯| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৪৯
সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: ঘটক যেখানে পাত্রী
ঘটকালির-ই ছলাকলায়
প্রেম চলছে দিবা রাত্রি
০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:৩২
অপু তানভীর বলেছেন: হে হে হে হে !
কথা সত্য !
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অনেক দিন পর আবার লুতুপুত প্রেমের গল্পে হারিয়ে গেলাম
+++++++++++++