নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঁচ মিশালীঃ গল্প, ছড়া আর অনুভুতি

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৩:০৫


ভর দুপুরে এলাকাটা একটু যেন একটু বেশিই নির্জন হয়ে যায় । বিশেষ করে এই শীতের দুপুরে এলাকাটা একটু বেশিই শান্তই মনে হয় । মানুষ জন খুব একটা দরকার না পড়লে বাইরেও আসে না এই দুপুর বেলা । এমন সময়ে এই এলাকাতে ছিনতাইয়ের মত ঘটনা প্রায়ই ঘটে ।
রবিনের এখন ঠিক তাই মনে হচ্ছে । একটু ভয়ভয়ও করছে । যত দ্রুত সম্ভব এই এলাকা থেকে চলে যেতে হবে । নয়তো বিপদে পড়তে কতক্ষন ?
অবশ্য কাছে কেবল মোবাইল টা ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই । মানিব্যাগে খুব বেশি টাকাও নেই তবে স্বাধ করে কে আর বিপদে পড়তে চায় ?
রবিন একটু দ্রুত পায়ে পা চালালো । পুরো রাস্তায় একটা মানুষও নেই ! যখনই বড় রাস্তাটার মাথায় পৌছালো ঠিক তখনই একটা ঘটনা ঘটলো । একটা কালো রংয়ের মাইক্রোবাস ভুস করে সামনে এসে থামলো । এতোই দ্রুতই ঘটনা ঘটলো যে রবিন ঠিক মত কিছু ভাবার কিংবা করার সময়ই পেল না । মাইক্রোবাসটা ঠিক রবিনের সামনে এসে থামলো, দরজা খুলে গেল খুব দ্রুত । সাথে সাথে শক্ত সমর্থ্য দুজন মানুষ নামলো সেখান থেকে । দুজনের মুখেই কালো মুখোস পরা ।
কি হচ্ছে রবিনের বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো ।
তাকে কিডন্যাপ করা হচ্ছে ?
কিন্তু কেন ?
সে তো খুব বেশি বড় লোকের ছেলে নয় । তার বাবা একজন সাধারন চাকুরীজীবী । কথা সত্য যে সে সচ্ছল পরিবারের ছেলে কিন্তু কিডন্যাপ করে নেওয়ার মত এতো বড় লোক তারা নয় !
-তাহলে কি কেউ শত্রুতা করে তাকে কিডন্যাপ করছে ?
কিন্তু কেন ?
সে এমন কি করলো ?
তাকে কি মেরে ফেলা হবে ?
রবিন কিছু করার আগে দুজন কালো মুখোশ পরা লোক তাকে দুদিক থেকে চেপে ধরলো । তারপর প্রায় তুলে নিয়ে মাইক্রোবাসের ভিতর নিয়ে গেল ।
রবিন কোন বাঁধাই দিতে পারলো না । যখন সে মনে করলো চিৎকার করবো ঠিক তখনই একটা রুমাল চলে এল তার মুখের উপর । অদ্ভুদ মিষ্টি একটা সুগন্ধ তার নাকে এসে লাগলো । রবিনের আর কিছু মনে নেই । সে গভীর ঘুমে চলে গেল ।
রবিনের একটু একটু বুঝতে পারছে কি হচ্ছে । একটা ঘরে তাকে রাখা হয়েছে । তার হাতে কিছু একটা রয়েছে কিংবা ছিল একটু আগে । এখন আর নেই ! হাতটা একটু ব্যাথা করছে । যখন পুরোপুরি জ্ঞান ফিরলো তখন সে ভেবেছিল কোন নির্জন অন্ধকার ঘরে দেখবে । তার বদলে কেমন মানুষের কথা হইচই কানে আসছে । চারিপাশে সব আলো ঝলমল করছে ।
রবিন এক ঝটকায় উঠে দাড়ালো । চারিপাশে তাকালো ।
আশে পাশের জায়গাটা কোন অন্ধকার বদ্ধ ঘর মনে হচ্ছে না । বরং কোন হাসপাতাল মনে হচ্ছে ।
রবিনের মাথায় কিছু ঢুকছে না । সে এখানে কেন এল ?
তাহলে তাকে এই ক্লিনিকে ধরে এনে কিছু করা হয়েছে ?
শরীরের কোন অঙ্গ প্রত্যেঙ্গ খুলে নেওয়া হয়েছে ?
সে নিজেকে আরও ভাল করে দেখার চেষ্টা করলো । কোথাও কোন ব্যাথা কিংবা সেলাই আছে কি না !
না, তেমন কিছু পেল না ।
কিন্তু তখনই তার মাথাটা একটু চক্কর দিয়ে উঠলো । একটু যেন দুর্বল লাগছে শরীর লাগছে ।
-তো রবিন সাহেব ? কেমন আছেন ? কেমন লাগছে ?
রবিন ঘুরে তাকালো ।
-কে আপনি ?
-আমাকে আপনি চিনবেন না ! আমাকে মানুষ জন মাগুর বলে ডাকে !
-মাগুর ! মাগুর মাছ ?
-ঔ রকমই মনে করুন !
-আমাকে এখানে কেন ধরে এনেছেন ?
-কেন ?
মাগুর সাহেব একটু যেন হাসলো !
-আপনি যখন একটু ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন...
মাগুর সাহেব চুপ করে কি যেন ভাবলো । তারপর বলল
-আসুন আমার সাথে !
-কোথায় ?
-আসুন ! নিজের চোখেই দেখবেন ।
রবিন ঘর থেকে বের হয়ে দেখলো আসলেই এটা একটা হাসপাতাল । পুরো লবি জুড়ে মানুষ জনের ভিড় । রবিনের মাথায় কিছুই ঢুকছে না । কিছু সময় আগে একটা মাইক্রোবাসে করে তাকে ধরে আনা হল তারপর এখানে যখন তার জ্ঞান ফিরলো তখন সে নিজেকে এই হাসপাতালে দেখতে পেল ।
তারপর এই অদ্ভুদ নামের এই ভদ্রলোক তার সামনে এসে হাজির ! আর যাই হোক মাগুর নামের এই লোককে খারাপ মানুষ কিছুতেই মনে হচ্ছে না ! বিশেষ করে তার হাস্যজ্জল চেহারা কিছুতে খারাপ মানুষের ছায়া দেখতে পেল না সে !
রবিন মাগুর সাহেবের পিছন পিছন হাটতে লাগলো । মাগুর সাহেব একটা কেবিনের সামনে এসে থামলো । একটু কাশি দিতেই ভিতর থেকে যুবক বয়সের লোক বেরিয়ে এল ।
মাগুর সাহেব কে দেখেই লোকটা তাকে জড়িয়ে ধরলো !
রবিন কিছু বুঝতে পারছিল না । তবে যুবকের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল সামনের মানুষটার কোন বিশেষ উপকার মাগুর সাহেব করেছে ।
-আরে শফিক সাহেব ! থামুন ! আমি কিছু করি নি ! এই দেখুন আপনার বাচ্চাকে যে রক্ত দিয়েছে সে এই ছেলেটি !
এই বলে মাগুর সাহেব রবিন কে দেখলো !
রবিন কেবল অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো সামনে দাড়ানো শফিক নামের লোকটি রবিন কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিল !
রবিন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে দাড়িয়ে রইলো ! কি বলবে কিছুই মাথায় এল না !
কাঁদতে কাঁদতেই শফিক সাহেব বলল
-ভাই আমার ১১ দিন বয়সের ছেলেটা কেবল বেঁচে আছে আপনার জন্য ! আপনি দয়া করে এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন এই জন্য ! আমি......
শফিক সাহেব আর কিছু বলতেই পারলো না ! রবিন লক্ষ্য করলো ওর চোখ দিয়েও পানি পরতে শুরু করেছে । তার কিছু বুঝতে বাকি রইলো না !
তার রক্তের গ্রুপটা একটু রেয়ার সে জানতো । কিন্তু তবুও সে কোন দিন রক্ত দেয় নি এর আগে ! দিতে ইচ্ছা হয় নি !
তার এই ২১ বছর জীবনে নিজের মন এতোটা সিক্ত আর কোন দিন হয় নি । আজ এতো দিনের জীবনে তার মনে সে অজান্তে কিছু একটা করেছে । কিছু একটা ! মাগুর সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখে সে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ! রবিন খুব ভাল করেই জানে সামনের এই মানুষ টা অন্তত একটা মানুষের কাছে তাকে মহান করে তুলেছে ।
-আপনি আসুন আমার সাথে ! আমার ছেলেকে একটু দেখবেন ?
শফিক সাহেব রবিনের হাত ধরে কেবিনের ভিতর নিয়ে গেল ।
কেবিনের বেডে একটা ২৫/২৬ বছরের একজন মেয়ে ঘুমিয়ে আছে । ঠিক তার পাশে একটা শিশু ঘুমিয়ে আছে ।
রবিনের কেমন অদ্ভুদ একটা ভাল লাগা ঘিরে ধরলো । এতো চমৎকার পৃথিবীতে আর একটি আছে কি না রবিন জানে না !
শফিক সাহবে বলল
-ভাই আপনার নাম কি ?
-রবিন !
-আজ থেকে আমার ছেলের নাম রাখলাম রবিন ! আমার ছেলের নাম রবিন ! আপনার নামে নাম ! কারন যখনই সে নিজের নাম রাখার পেছনের কথা জানতে চাইবে তখনই তাকে বলব সে রবিন নামে এক ফেরেস্তা তাকে এসে বাঁচিয়েছিল !
রবিন কিছু আর না বলে ঘর থেকে বের হয়ে এল ! মাগুর সাহবে দরজার কাছেই দাড়িয়ে ছিল ! ওকে বেরিয়ে আসতে দেখে মাগুর সাহবে বলল
-তো রবিন সাহবে ? কিছু বলবেন আমাকে ?
-জি না !
-কোন অভিযোগ আছে আমার নামে ?
-জি না !
কিছুটা সময় চুল করে থেকে বলল
-এতো দিন পরে আমার মনে হল আমি একজন মানুষ ! আমার এই উপলব্ধির পেছনে আপনি আছেন ! মাগুর ভাই, এর পর থেকে যখন দরকার হবে আমাকে ডাকবেন ! দরকার হলে আমি আমার শরীরের সব রক্ত দিয়ে দেব !
-আরে সব রক্তের দরকার নেই । কেবল তিন মাস পরপর একবার করে রক্ত দিবেন ! তাহলেই চলবে ! ঠিক আছে ?
-অবশ্যই ঠিক আছে !
----------------
কাল্পনিক একটা গল্প । আশা করি কোন রক্তদাতাকে যেন এভাবে ধরে না আনতে হয় । নিজের ইচ্ছায় তারা যেন এমন ভাল কাজ গুলো করে চলে । যেমন করে রক্তযোদ্ধারা কাজ করে চলেছে !





আলতো করে নিশির গালটা ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হল । নিশি তখনও এক মনে টিভি দেখছে । ওর বাঁ গালটা ছুঁয়ে দিতেই নিশি খানিকটা চমকে উঠলো । আমার দিকে খানিকটা বিশ্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন । সেই বিশ্ময় একটু লজ্জায় রূপান্তর হতে সময় লাগলো ।
আমি বললাম
-সরি ।
-সরি কেন ?
-না মানে যদি রাগ কর আর কি !
-রাগ কেন করবো ? অবাক হয়েছি একটু ।
-কেন জানি তোমার গাল ধরতে মন চাইলো ।
একটা লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে নিশি বলল
-আর কি কি ইচ্ছে করে তোমার ?



লুকানো ছিল সেই কথাটা
লুকানো ছিল চিঠি
লুকিয়ে রেখেই জানিয়েছিলাম
আমার অনুভুতি !



সে জোরে হেসে উঠে ! ফোনের ভিতরেও তার হাসির আওয়াজে আমার বুকের ভেতরে একটা আলোড়ন তোলে । ঠিক যেমন আগে তুলতো ! কিচ্ছু বদলাই নি !
অনুভুতি গুলো বদলায় না কেন ?
তার হাসির আওয়াজ যেন সেই সমুদ্রের গাঢ় গর্জন ! আমি সমুদ্র পাড়ে একা দাড়িয়ে । ক্ষনে ক্ষনে সমুদ্র থেকে উঠে আসছে নোঁনা হাওয়ার ঝাপটা ! আমাকে সিক্ত করে দিয়ে যাচ্ছে ! আমি সিক্ত হচ্ছি । তার হাসি শুনে যেমন টা হতাম !
হাসতে হাসতেই সে বলে ওঠে
-মাঝে রাতে সংসারে অশান্তি !! হাহাহাহাহা !!
কদিন আগে রাতের বেলা একটা স্টাটাস দিয়েছিলাম যে মাঝে মাঝে মনে হয় মাঝে রাতে ফোন করে ওর সংসারে অশান্তি দেই । সে এই স্টাটাসে দেখেছে । তার মানে সে আমার অনেক স্টাটাসই দেখেছে ! আমি কি বলবো ঠিক বুঝলাম না ।
কিছুটা সময় চুপ থাকার পরে বললাম
-তুমি পড় আমার স্টাটাস ?
-হুম ! না পড়লে জানলাম কিভাবে ?
-তাও ঠিক !
আমি আর কোন কথা বলতে পারি না । সে কথা বলে যায় আমি শুনে যাই ! অনুভুতি গুলো কিছুতেই বলদায় না ! আগের মত আছে । আমি জানি আগের মতই থাকবে ।



-এই !
-হুম !
-এই ! এই !
-হুম !
-এই ! এই ! এই !
-হুম !
-দুর !
-হুম !



-সমস্যা কি ?
-সমস্যা কি মানে ?
-সমস্যা কি বুঝতে পারছেন না ? আপনি আমার ঘরে কি করেন ?
-আমার বাবার বাসা ! আমার যখন ইচ্ছা তখন আসবো ।
-আরে আপনার বাবা বাবা হইতে কি হইছে ! আমি ভাড়া নিয়েছি এটা ! এরপরে এখানে ঢুকতে হলে পারমিশন নিবেন ! নইলে ?
-কি ? নইলে কি শুনি ?
-নইলে থাপরাইয়া দাঁত ফালায়া দিবো বদ মাইয়া কোথাকার ! ম্যানার জানে না !
-মানে ? ম্যানার ? আমাকে ম্যানার শিখান ? আপনি জানেন আপনাকে আমি এই মুহুর্তে বাড়ি ছাড়া করতে পারি !
-জি না, পারেন না !
-আমি দেখবো আপনি কিভাবে এই বাসায় থাকেন ?
-চোখ দিয়ে দেখবেন । আর কোন দিক দিয়ে তো দেখার সিস্টেম উপরওয়ালা বানাই নাই, তাই না ?




মেয়েটা কিছু বলতে পারছে না । কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না । কিছু একটা যেন মেয়েটা বাঁধা দিচ্ছে বলতে ।
আমি নীরাকে আবার বললাম
-আপনি ঠিক আছেন ?
-হ্যা ! ঠিক আছি ! আছি !
ঠিক আছে বলার সময়ও নীরার গলা যেন একটু কেঁপে উঠলো । যখন মায়ের সামনে ছোট্ট মেয়ের কোন অন্যায় ধরা পরে মেয়েটি তখন যেমন করে সেটা লুকানোর চেষ্টা করে ঠিক তেমন মনোভাব দেখলাম ।
-নীরা আপনি কি আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন ?
নীরা কোন কথা বলল না । নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো । ওর মুখের মনে হল ওর কোন অপরাধ ধরা পড়ে গেছে ।
-নীরা !
-দেখুন আই এম সরি ! ইফ আই ...... মানে আপনি যদি বিরক্ত হন.....
আমি হেসে ফেললাম । আমার হাসি শুনে নীরা চট করে আমার দিকে তাকালো । আমি বললাম
-বিরক্ত কেন হব ? আপনার মত এতো চমৎকার ..... না ঠিক চমৎকার না....
নীরা আবার আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো ।
-কি !
-না মানে আপনি শুধু চমৎকার না ! আমি বলতে চাইছি আপনার মত এতো সুন্দরী একজন মেয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে আর আপনি বলছেন আমি বিরক্ত হবে ?
-তাহলে ? আপনি কি .....
-ইয়েস ! অফকোর্স ! আই লাইক দ্যাট ! আই.... লাভ দ্যাট !
-সত্যি !!
-অবশ্যই সত্যি ! আপনি না আসলে আমি আপনার কাছে যেতাম !
-সত্যি যেতাম ! আই সয়্যার !




মন মন মনতো চাইলো,
গার্লফ্রেন্ড আছে আমার তাতে কি হল ?
অনুভুতিরা কি বাধ্যতামূলক একই থাকে সারা বেলা ?
সে ছিল তখন একেলা,
আমি ছিলাম দোকলা,
প্রেমে পড়তে লাগে না রিলেশনশীপ স্টাটাস ।
চোখে লাগে না পেপসি নাকি কোকাকোলা ।
মন মন মনতো চাইলো,
গার্লফ্রেন্ড আছে আমার তাতে কি হল ?
অনুভুতিরা কি বাধ্যতামূলক একই থাকে সারাবেলা ?




ইলার চোখে পানি চলে এসেছে । কিন্তু এতো গুলো মানুষের সামনে চোখ দিয়ে পানি বের হলে লজ্জার সীমা থাকবে না । অন্যদিকে যার জন্য কান্না আসছে সেই পরে এটা নিয়ে হাসাহাসি করবে !
ইলা নিজের চোখের পানি সামলে সায়েম কে বলল
-এখনও ব্যাথা করছে ?
সায়েম এখনও চোখ বন্ধ করে আছে । মুখটা ব্যাথায় একটু একটু কাঁপছে ! কিভাবে সহ্য করছে কে জানে !
-এই ! এই !
-হুম !
-খুব কষ্ট হচ্ছে ?
মাত্র তিন টা শব্দ বলতেই ইলার গলা ধরে এল । নিজের চোখের পানির আটকানোর আপ্রান চেষ্টা করলো আবারও !
সায়েম এই এক সমস্যা । দিনের মধ্যে অন্ত দশ বারো বারো রগে টান পড়বে ! ইলা জানতো মানুষের কেবল পায়ের রগে রান পড়ে । কিন্তু সায়েমের হাত পায়ের রগে তো টান পরেই সাথে সাথে শরীরের অন্যান্য সব জাগয়ার শিরা উপশিরা সব জায়গা টান পরে । স্বাভাবিকের থেকে একটু এদিক ওদিকে নড়া চড়া করলেই হয় আর কোথায় যাবে !
এতো দিন ইলা কেবল শুনে এসেছে । আজকে নিজের চোখে সায়েমের ব্যাথা অনুভব করতে দেখলো ! ইলার কিছুতেই সায়েমের এই ব্যাথা পাওয়া সহ্য হচ্ছে না ! মনে হচ্ছে যেন ব্যাথা টা ও নিজে অনুভব করছে ।
আরও মিনিট পনের পরে সায়েম খানিকটা স্বাভাবিক হল । ওর মুখে ততক্ষনে ঘাম জমে গেছে । ইলা টিস্যু দিয়ে মুখের ঘাম মুছে দিল !
-এখন কি অবস্থা ?
-এখন ঠিক আছে । চল যাওয়া যাক !
রিক্সা নেওয়ার পরে সায়েম পুরিপুরি স্বাভাবিক হয়ে গেল । ওকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে একটু আগেও ব্যাথায় ওর মুখ টা নীল হয়ে ছিল । কথা বলছে, হাসছে, ইলাকে হাসানোর চেষ্টা করছে ।
কিন্তু ইলা এখনও স্বাভাবিক হতে পারে নি । এখনও ওর চোখের সামনে বারবার সায়েমের ব্যাথা মিশ্রিত মুখ টা ভেসে ভেসে আসছে । এখনও কান্না আটকাতে ওকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে !
হঠাৎ সায়েম ইলার হাত ধরে বলল
-তোমার খুব কষ্ট হচ্ছিল, তাই না ?
-হুম !
-তোমার চোখের পানির আটকানোর চেষ্টা দেখে আমার হাসি চলে আসছিল । না পারছিলাম হাসতে না পারছিলাম কিছু বলতে । এতোটা ছেলে মানুষ কেন তুমি ?
ইলা কোন কথা না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো । ততক্ষনে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে !
সায়েম বলল
-বোকা মেয়ে, এভাবে ভালবাসতে আছে ? আমি তোমার এই ভালবাসার ঋণ কিভাবে শোধ করবো বল ? তাকাও আমার দিকে । তাকাও !
ইলা সায়েম দিকে চোখ ফিরিয়ে তাকালো ! ওর চোখ দিয়ে তখন এক ভাবে পানি পড়ছেই । সায়েম ইলার চোখ মোছার চেষ্টাও করলো না ! এতোক্ষন কান্না আটকানোর চেষ্টা করে মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে । কাদুক একটু !
ও কেবল ইলার কপালে ছোট্ট করে একটা চুম খেল ! আর হাত টা আরও শক্ত করে ধরলো !



১০
মশা যখন কামড় দেয়,
তোমার অলি গলি ।
আমি একটু কামড়ে দিলেই
আমারে দাও গালি !
কি অপরাধ কিইবা দোষ
কি করিলাম আমি ?
আমার থেকে ঐ টাই
তোমার কাছে দামি ?
তবে তাই হোক পর জনমে
মশাই আমি হব
রাতের বেলা তোমার ঠোঁটে
হুল ফুটিয়ে যাবো



১১
দেখে তোমার মেহেদী রাঙ্গা হাত
আজ আমার মন খারাপ.........।।


১২
কমপলসারি বিষয় তুমি
বাকি সব অফশনাল...
তুমিই আমার ডেকে আনা
কুমিরওয়ালা খাল...


১৩
তুমি বললেই তোমার ছিলাম
তুমি বললেই নেই
তবুও তোমার দুরে যাওয়া টা
কষ্ট শুধু দেয় !


১৪
তুমিই শুরু তুমিই যে শেষ
তুমি যে মধ্যিখান ।
আনন্দ রাগ সবটা তুমি
আমার অভিমান ।
তুমি যে ভোর তুমি রাত্রি
তুমি সারাক্ষণ ।
সকল ক্ষমতার উত্‍স তুমি
তুমিই জনগন ।


১৫
তোমার দুচোখ
নাক মুখ ঠোট, আর লম্বা চুলের ঝুটি ...
হৃদয়হরণ
রক্তক্ষরণ, আর ভালবাসার খুটি ...


১৬
ইচ্ছে হল তোমায় ভাবি
আনব্রেকেবল মনের তালার তুমিই কেবল চাবি ।


১৭
মেয়েটির তো প্রেমিক আছে,
কদিন অন্য করো বউ সে হবে ।
কি হয়েছে ?
তাই বলে কি তার উপর ক্র্যাস খাওয়া বন্ধ রবে ?


১৮
শুনতে হবে বুঝতে হবে
বলতে হবে কথা ।
তাই বলে কি যতেচ্ছাতাই
হবে বাকস্বাধীতনতা ।


১৯
দৌড়টা তোমার জেনে রাখো
ফেসবুকেতেই রবে
কিইবা তুমি করেছো শুনি
কোন আটি ছিড়েছো কবে ?
মুক্তমনার ভেক ধরেছে
মনটা বদ্ধ করে
বিদ্বেষ দিয়ে আঘাত দিলেই
বিশ্বাস কি যায় নড়ে ?
ওরে বেটা ছাগলের দল
আগে অনুভুতিটা বুঝো
অন্যকে আগে সম্মান দিয়ে
পরে সত্যটা খুজো ।


২০
বাসায় এসে যখন দেখলাম নিশি নেই মনে হল নিশি চলে গেছে ভালই হয়েছে । ঝামেলা দুর হয়েছে । প্রতিদিন অফিস থেকে এসে সেই একই অভিযোগ শুনতে কেন জানি ভাল লাগে না ।
বিয়ে করেছি তার মানে এই তো নয় যে আমি আমার কাজ ফেলে সারাদিন তোমার আশে পাশে বসে থাকার কোন মানে নেই ।
কিন্তু পরক্ষনেই মনে হয় যে নাহ মেয়েটা চলে গিয়ে মোটেই ভাল কাজ করে নি । দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে যখন তার চেহারা না দেখি তখন কিছু ভাল লাগে না । এমন কি মাঝে মাঝে যখন ফিরতে খুব বেশি দেরি হয়ে যেত তখন নিশি ঘুমিয়ে পড়তো আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে । আমি চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঘরের ভেতরে ঢুকতাম । ওর ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে কেন জানি একটা অন্য রকম শান্তি লাগতো । এই শান্তিটা আজকে আমি পাচ্ছি না !
-কি চাই ?
-কি চাই মানে কি ? আমি তোমার স্বামী না ! স্বামী তার বউয়ের কাছে ফোন দিতে পারবে না ?
-স্বামী ? স্বামী হওয়ার কি দায়িত্ব তুমি পালন করেছো শুনি ?
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে ! আমি না পালন করি নি ! কিন্তু তুমি তো একটু পালন কর !
-মানে ?
-মানে ভাত কিভাবে রান্না করবো বলতো ? মানে চাল কোথায় ?
-কি বলছো এসব ?
-আরে তুমি তো জানো আমার বাইরে খাওয়ার অভ্যাস নেই । বাসায় এসে দেখি কিছু নেই ! তুমি তো কিছু রান্না না করেই চলে গেছো ! আমি এখন খাবো কি শুনি !
-আচ্ছা তাহলে নিজের জন্য আমাকে ফোন দিয়েছো ? আমার জন্য নয় !
আজকে অফিস থেকে এসেই দেখি নিশি নেই । টেবিলের উপর একটা কাগজ রাখা যেখানে একটা লাইনই লেখা আমি চলে যাচ্ছি ! তোমার সাথে আর থাকবো না !
কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । কয়েকবার ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু ফোন ঢুকলো না ! নিশিদের বাসায় ফোন দিলাম । শ্বশুর মশাই এমন ভাবে কথা শুরু করে দিল যেন কিছু হয় নি । মানে নিশি যে ঘর ছেড়ে চলে গেছে এটা সে জানেই না ! এই রাতের বেলা তাকে চিন্তায় ফেলতে মন চাইলো না !
কিন্তু সব থেকে বড় সমস্যা টা হল যে বাসায় কিছু রান্না করা ছিল না ! ফল মুল ছিল কিন্তু রাতে ভাতের খিদে কি আর মিটে । তাই চেষ্টা করলাম নিজেই কিছু রান্না করতে পারি কি না দেখি !
খনিক্ষন চুপ করে থেকে নিশি বলল
-ডিপের ভেতর মাংস আছে । গরম করে নাও !
-আচ্ছা নিতেছি !
-আর দেখো নীল একটা ছোট ড্রাম আছে রান্না ঘরের ডান কোনায় ! পেয়েছো ?
আমি রান্না ঘরে ঢুকে ডান দিকেই নীল প্লাস্টিকের ড্রাম পেয়ে গেলাম ।
নিশি ফোনের ওপাশ থেকে বলল
-পেয়েছো ?
-হুম !
-দেখো ভেতরে ভেতরে কৌটা আছে ! আছে না ?
-হুম !
-মেপে এক পট চাল হাড়ির তেতর দাও !
আমি মেপে এক পট চাল হাড়ির ভেতর দিলাম !
-দিয়েছো ?
-হুম !
-এভার ভাল করে পানি দিয়ে ধৌও !
-হুম ! এর পর
-এরপর হাড়ির অর্ধেক টা পানি দিয়ে ভর্তি করে ছুলায় বসিয়ে দাও !
আমি তাই করলাম !
-এই শুনো !
-আবার কি ?
-না মানে কখন ভাত হবে সেটা তো বলতে পারছি না তুমি এই ভাত হওয়া পর্যন্ত আমার সাথে একটু কথা বল প্লিজ ! রাগ করেছো ভাল কথা কিন্তু একজন অবল অভুক্ত স্ত্রী অস হায় মানুষের জন্য এই টুকু করবে না তুমি ?
-হয়েছে ! ঢং করা লাগবে না আর !
আমি মনে মনে বললাম কাজ তাহলে হয়েছে । নিশির রাগ কমছে আস্তে আস্তে আস্তে ! ফোন টাতে হেড গোন লাগিয়ে ওর সাথে কথা বলতে লাগলাম ! ও আমাকে বলে যাচ্ছে কিভাবে কি করতে হবে আমি তাই করে যাচ্ছি ! মানে করার চেষ্টা করছি ! সঠিক ভাব ফোনের ওপাশ থেকেই বলে যাচ্ছে কোথায় কি আছে !
আমি মনে মনে বললাম কি চমৎকার ভাবেই না সে সংসারের সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে নিয়েছে ।
-এবার দেখো ভাত হয়ে গেছে ।
-হয়ে গেছে ?
-হুম !
-নামিয়ে ফেলো !
-নামালাম ! এবার ?
-ভাতের মাড় ফেলতে হবে !
-কিভাবে ফেলবো ?
-দেখো একটা মালসা আছে ?
-মালসা কি ?
-মাসলা চিনো না ?
-না ! কি সেটা !
-দেখো বেসিনের নিচে একটা লাল মাটির বড় বাটির মত কিছু একটা আছে । পেয়েছো ?
-হুম !
-এবার ভাতের ঢাকনা দিয়ে ওটা ঐ মালসার উপর বসাও ! পারবে তো !
-হুম পারবো । এটা আবা.....। আআআআআআ !
আমি কথা শেষ করতে পারলাম না তার আগেই গমর ভাতের মাড় আমার হাতে উপর পরে গেল !
নিশি ফোনের ওপাশ থেকে চিৎকার করে উঠলো ।
-কি হয়েছে ? এই কি হয়েছে ? এই.....।
আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম কি করবো ! আগে ঠান্ডা পানি দিয়ে হাতের জ্বালা কমাতে হবে !
আমি ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি আনতে যাবো ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো ! বেশ ব্যস্ত হাতে কেউ বেল বাজাচ্ছে । বাজিয়েই যাচ্ছে !
আমি পানি নিয়ে দরজা খুলে দেখি নিশি । আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল
-একটা কাজ যদি পারো !
-ঠিকই আছে ! এটা কি আমার কাজ ?
-হ্যা ! সবই আমার কাজ ! কই দেখি সর !
নিশি এবার যত্ন করে আমার হাতে ঠান্ডা পানি ঢালতে লাগলো ! তারপর স্যভলন মলম দিয়ে হাতে কাপড় বেঁধে দিল !
জ্বালা একটু কমলে আমি বললাম
-তুমি এতো জ্বলদি কোথা থেকে এলে ? তুমি না আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে ?
নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-চলে যাবো আবার ?
-আর না না না ! আমি তাই বললাম নাকি !
-আর যেতে পারলাম কই ! মরন হয়েছে আমার ! না পরছি ধরতে না পরছি ছাড়তে !
-কোথায় ছিলে ?
-পাশের বাসায় ! আপার হাজব্যান্ড বাইরে ঢাকার বাইরে গেছে । তাই রাগ করে যখন চলে যাচ্ছিলাম তখন আপা আটকালেন । বললেন বাসায় গেলে তুমি সেখানে চলে যেতে পারো । এমন জায়গায় যাওয়া উচিৎ সেখানে তুমি আমাকে খুজে পাবে না ! কিন্তু....
দেখতে দেখতে নিশির মুখ টা কেমন হয়ে গেল ! বলল
-আমার জন্য তোমার হাত পুড়ে গেল !
-আরে আরে ....... কিছু হয় নি ! অল্প একটু ! কিচ্ছু হয় নি ! কিন্তু এরপর থেকে আর এরকম করবে না ! কেমন তো ?
-আচ্ছা !
-এখন আমাকে কিছু খাইয়ে দাও প্লিজ ! খুব ক্ষুদা লেগেছে !
-আচ্ছা আমি এখনই কিছু নিয়ে আসছি !
নিশি রান্না ঘরের দিকে দৌড় দিল !



(বানান ভুল থাকবে কিছু)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:০৬

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: পাঁচ মিশালি লেখা পড়ে পাঁচ মিশালি অনুভূতি হল। এখন কোনটার কথা বলবো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। :(
১নং এ রক্তদানের ব্যাপারটাকে মানবিক দিক দিয়ে খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু রবিনের রক্তের গ্রুপ কীভাবে মিলে গেলো সেটা একটা রহস্য হয়ে রইলো। আমি নিজেই একজন ব্লাড ডোনার। দেশে থাকতে নিয়মিত রক্ত দিয়েছি। লন্ডনে এসেও এটা অব্যাহত রেখেছি। :)
৯ নং এর ইলার ভালোবাসাটা বেশ ছুঁয়ে গেলো।
১৯ নং ছড়ায় কী বলতে চেয়েছেন জানি না। আশা করবো ইঙ্গিতটা নেতিবাচক দেন নাই।
২০ নং নিশির ভালোবাসার অনুরাগ অভিমান আর খুনসুটি ভালো লাগলো।
বাকীগুলো মোটামুটি লাগলো। কোনটা তেমন দাগ কাটে নাই।

এইভাবে পোস্ট সাজিয়ে পাঠককে বিভ্রান্ত করার যৌক্তিক কোন কারণ আছে কি? লেখকের চেষ্টা থাকা উচিৎ নিজের লেখায় পাঠককে ধরে রাখা। অথচ পাঁচ মিশালি লেখায় পাঠককে ধরে রাখা যে বেশ কষ্টসাধ্য একটা ব্যাপার সেটা আপনি নিজেও জানেন। ভালো থাকবেন অপু। নিরন্তর শুভ কামনা রইলো।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৫৩

শায়মা বলেছেন: হা হা হাসছি সাত সকালে উঠে বিদ্রোহীর ভাইয়ার বকাঝকা পড়ে! :P

অপুভাইয়া সবচেয়ে সুন্দর বদমাইশ হাসব্যন্ডের হাত পুড়িয়ে দেওয়া গল্পটা! :P

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:১৯

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: :(

৪| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:২১

এম এম করিম বলেছেন: বিদ্রোহী ভাইয়ের সাথে একমত।

পাঁচমিশালী পড়ে মাথার ভেতরটা একটু খিচুড়ি হয়ে গেলো!!!!

ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.