নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-তোমার বাবা ঘটকালি করে ?
ইরার মুখ দেখে মনে হল কিছু একটা হয়েছে । গম্ভীর কিছু একটা । আমি ভয়ে ভয়ে বললাম
-কি বল ? ঘটকালি কেন করবে ? বাবা তো সরকারি চাকরি করে ।
আমার কথা শুনে ইরার মুখটা বিরক্তিতে ভরে গেল । বিরক্তি নিয়েই বলল
-সরকারি চাকরী করে সেটা আমিও জানি ।
-ও ! আসলে বাবা অনেক মানুষের সাথে জানা শুনা আছে তো তাই মাঝে মধ্যে মানুষ ভাল পাত্র-পাত্রীর সন্ধান চায় বাবা কাছে । কেন কি হয়েছে ?
আমি আসলে ঠিক কি ঘটছে বুঝতে পারছিলাম না । ইরার এমন রেগে যাওয়ার কারন কি ? ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে মনে হল কোন কারনে বেশ বিরক্ত কিছু একটার উপরে । না জানি আমার বাবার পার্ট টাইম ঘটকালি আবার কি দোষ করলো কে জানে ?
-আজকে তোমার বাবা আমাদের বাসায় গিয়েছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ।
-মানে কি ?
-মানে বোঝো না ? উনি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে আমাদের বাসায় ?
আমি সত্যি সত্যি আকাশ থেকে পড়লাম । আমি বাবাকে কিছু বলি নাই । বাবা কি কোন ভাবে জেনে গেছে যে ইরার সাথে আমার কিছু চলছে ? হঠাত আমাকে কিছু না জানিয়েই একেবারে বিয়ের প্রস্তাব ।
আমি বললাম
-আমার বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে ?
-সজিব গাধার মত কথা বলবা না ? তোমার সাথে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলে আমি এভাবে রিএক্ট করতাম ?
কথা সত্য ! আর আমার বাবা তো এখন জীবনেও আমার বিয়ের কথা বলবে না । সবে মাত্র চাকরীতে ঢুকলাম । এখনও দু তিন বছর তো বিয়ের নামও আনবে না সে !
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম
-কার বিয়ে নিয়ে গেছে ?
-কোন এক ছেলে , ইঞ্জিনিয়ার না কি ? খুব নাকি ভাল ছেলে । বাবা তো শুনে একেবারে গলে গেছে !
-গলে গেছে ?
-হুম !
-এখন ?
-আমি কি জানি ? তোমার বাবা ঝামেলা বাঁধিয়েছে । সে ঠিক করবে । আমি কিছু জানি না ।
-তা তুমি তোমার বাবাকে বলবা না ?
-তুমি বল তোমার বাবা কে ?
-আরে আমি এখন কি বলবো ? বাবা তো এতো জলদি আমার বিয়ের জন্য রাজি হবে না ।
-তাই না ? শুনো সজিব !
ইরা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হুমকি দেওয়ার ভংগি করে বলল
-যদি তুমি কিছু না করতে পারো, যদি তুমি তোমার বাবাকে না বলতে পারো তাহলে আমি এখানে বিয়ে করে ফেলব । তখন বুঝবা !
ইরা আর বসল না । ব্যাগ নিয়ে উঠে চলে গেল । আমি বোকার মত বসে রইলাম ।
কি এক ঝামেলায় পড়া গেল । সব কিছু ঠিক মতই চলছিল । চাকরীটা সবে মাত্র পেয়েছি । ইরার পড়া লেখা চলছিল ঠিকঠাক । ওর পড়া লেখা শেষ করতে করতে আমি নিজেও ততদিনে গুছিয়ে নিতে পারবো । কিন্তু মাঝখানে বাবা আবার কি একঝামে বাধিয়ে দিল । বাবা তুমি কেন ঘটকালি করতে গেলা ? আর গেলাই যখন ঐ বাড়িতে গেন গেলা ?
দুনিয়ার মেয়ে নাই নাকি ?
রাতের খাওয়ার সময় বাবাকে ঘটকালির কথাটা বললাম । বাবা ভাত খেতে খেতে বলল
-হ্যা ! মেয়েতা বেশ ভাল ।
-তো ! ভাল তাই বলে কি তোমার কি ঠ্যাকা পড়েছে তার বিয়ে ঠিক করার ?
-আরে এমন করে কেন বলতেছিল ? তুই কি জানি স না আজকাল একটা ভাল মেয়ে পাওয়া কত ঝামেলা । সফিক বলল ওর ছেলের জন্য একটা ভাল মেয়ে খুজতে । আরিফ কে তুই তো চিনিস খুব ভাল ছেলে ।
-ভাই ছেলে বুঝলাম । তাই বলে ঐ মেয়ের সাথে ?
-কেন সমস্যা কি ? তুমি মেয়ে কে চিনিস নাকি ?
-আমি ! ইয়ে মানে হ্যা চিনি ।
-কেন মেয়ে কি ভাল না ? আমি তো খোজ নিয়ে জানলাম ভাল মেয়ে !
-না মানে মেয়ে ভাল । তবে ......
-তবে কি ? এতো ভাল একটা মেয়ে ...।।
এখন বাবাকে কিভাবে বলি তবে কি ? ইচ্ছে হল চিৎকার করে বলি মেয়ে যখন এতোই ভাল তা নিজের ছেলে চোখে দেখো না ? নাকি নিজের ছেলের সাথে ভাল মেয়ের বিয়ে দিবা না ? কিন্তু কিছুই বলা হয় না । অর্ধেক ভাত রেখেই উঠি পড়লাম ।
ইরার আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিল । ওই দিন খাওয়ার পরে ইরা ফোন দিয়ে জানতে চাইলো আমি বলেছি কি না ? বললাম যে বলতে পারি নাই । ইরা রাগ করে ফোন রেখে দিয়েছে । আর আমার সাথে কথা বলছে না ।
এদিকে প্রতিদিন খাবার টেবিলে বাবা বিয়ের অগ্রগতি নিয়ে কথা বলে । আমি দাঁতে দাঁত চেপে তা শুনি । গলা দিয়ে ভাত নামতে চায় না । বারবার চোখের সামনে দেখি ইরার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে । আরিফ ভাইয়ের সাথে ইরা হানিমুনে যাচ্ছে । মনে হয় বাড়ির ছাদের থেকে অরিফ বেটা কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই । বিয়ে করার আর সময় পেলি না ?
একদিন গেলাম আরিফ ভাইয়ের কাছে । আমাকে দেখে আরিফ ভাই খাতির করে বসালেন নিজের অফিসে ।
এটা ওটা বলতে গিয়ে বিয়ের কথা তুললাম ।
দেখলাম আরিফ ভাইয়ের মুখ কেমন লাল হয়ে গেল । বললাম
-মেয়ে দেখেছেন ?
-হুম !
-দেখেছেন ?
-আঙ্কেলের সাথে গিয়েছিলাম সেদিন বাবাকে নিয়ে । আঙ্কেল মানে তোমার বাবা তো মেয়ের প্রসং৬শায় পঞ্চমুখ ।
-তারপর ? মেয়ে পছন্দ হয়েছে ?
-হ্যা ! তবে মনে হচ্ছে মেয়ে কোথায় রিলেশন ছিল বুঝলে !
-কিভাবে বুঝলেন ?
-আরে আজকাল রিলেশন ছাড়া মেয়ে কোথায় ? আর এসব দেখলেই বোঝা যায় বুঝলে ! তবে মেয়ে ভাল ! আমার পছন্দ হয়েছে ।
-অন্য জায়গায় রিলেশন আছে জেনেও বিয়ে করবেন ?
-আরে সমস্যা নেই । ওর সাথে সামনের সপ্তাহে দেখা করার কথা আছে । ওই দিনই সব ঠিক করে নেব । ফাইনাল কথা আর কি ! প্রেম তো আমিও করেছি ভার্সিটি লাইফে, তাই না ? এটা ত মেনে নিতেই হবে ! হাহাহা !
আমি বিরস মুখে উনার অফিস থেকে চলে আসি । কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । ইরা এদিকে আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে । মেয়েটা এমন জেদ ধরে । কোথায় এখন দুজন মিলে একটু আলাপ আলোচনা করে ঠিক করে বের করবো কি করা যায় তা না উনি এখন রাগ করে বসে আছে ।
বাবা তুমি কেন ঘটকালী করতে গেলে ? আর মানুষ খুজে পেলে না ?
আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ।
আকারে ইংগিতে বাবাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টাও করতে লাগলাম । কিন্তু কোন কাজ হল না । বাবার মনোযোগ এখন সব তার ঐ বন্ধুর ছেলের বিয়ের দিকে । এদিকে তার নিজের ছেলে যে বিয়ে করার জন্য বসে আছে সে দিক কোন লক্ষ্য নাই ।
এটা কোন কথা হল !
ঠিক করলাম ইরা নিয়ে পালিয়ে যাই । কিন্তু কোথায় যাবো ? ও কি রাজি হবে ? রাজি না হোক ওকে রাজি করাতে হবে । যে ভাবেই হোক রাজি করাতে হবে ।
আমার কথা শুনে প্রথমে ইরা কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-সত্যি পালাবে ?
-হুম ! চল । এখনই চল !
আমার কথায় এমন কিছু হয়তো ছিল যে ইরার মুখে হাসি ফুটলো । ও বলল
-আচ্ছা আমি দেখছি ।
-কি দেখছি ?
-তোমার বাবাকে আর ঐ বেটা কে !
-তাহলে এতো দিন কেন দেখো নাই !
-এতো দিন তো আর তুমি আমাকে এই ভরশা দাও নাই, তাই না ?
ইরা হাসলো । হাসি দেখে জানে একটু পানি এল । কিন্তু তবুও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারলাম না !
পরের শুক্রবারে বিকেলে ইরা ফোন দিয়ে বলল
-তোমার পালানোর কথা মনে আছে তো ?
-হুম ! আছে তো !
-ওকে ওটা মাথায় রেখো । ওটা শেষ উপায় ! তবে আজকেই কাজ হয়ে যাবে আশা করি !
-মানে কি ?
-রাতে তোমার বাবার কাছ থেকেই জানতে পারবা !
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম । রাতে খাবার টেবিলে বাবার মুখ কেমন গম্ভীর দেখলাম। এখন অবশ্য আমি খাওয়ার টেবিলে খুব বেশি কথা বলি না । যা বলার আব্বা নিজেই বলে । আজকে গম্ভীর মুখে খেতে দেখে মনে হল কিছু বলি । কিছু একটা কাজ হয়েছে মনে হয় ! কিন্তু কিছু জানতে চাওয়ার আগেই বাবা বলল
-তুই ঠিকই বলেছিলি !
-কি ঠিক বলেছিলাম ?
-আসলে নিজের খেয়ে অন্যের মোষ তাড়ানোর কোন মানে নেই ।
-মানে কি ?
-আরে ঐ মেয়ের কথা বলেছিলাম না ?
-হুম !
-বিয়ে টা মনে হয় হচ্ছে না !
আমি অবাক হয়ে বললাম
-কেন ?
-আরে মেয়ে একটা ফাজিলের ফাজিল । কোন বদ ছেলের সাথে মেয়ের রিলেশন আছে !
আমি কেশে উঠলাম ।
-কি হল ?
-না মানে গলায় ভাত আটকে গেছে ।
-পানি খা !
আমি পানির গ্লাস চুমুক দিলাম । কিন্তু কান বাবার দিকে । বাবা বিড় বিড় করে বলল
-আজকাল বিয়ের আগে সম্পর্ক থাকতেই পারে । মেয়েটার সাথে আজকে আরিফের দেখা হওয়ার কথা ছিল ।
-দেখা হয় নাই ?
-না । মেয়ে নাকি আরিফ কে ফোন দিছে । তারপর যাচ্ছে তাই বলেছে । এও বলেছে তার একটা রিলেশন আছে এবং যদি সে বিয়ের থেকে সরে না দাঁড়ায় তাহলে বিয়ের পরেও নাকি সে ঐ বদ ছেলের সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাবে । পালিয়েও নাকি যাবে বলেছে ! কত বড় বদের বদ মেয়ে দেখেছিস !
আমি হাসি আটকে বললাম
-আসলে এখন কার মেয়ে গুলা এমনই । একটু জেদি ! যা নিজে বুঝবে তাই করবে ।
বাবা আরও কিছু বলতে গিয়েও বলল না । বিরস মুখে ভাত খেতে লাগলো ! আর আমি অনেক দিন পর খুব আনন্দের সাথে ভাত খেতে লাগলাম ।
ঘরে গিয়েই ফোন দিলাম ইরা কে !
-কেমন আছো জান ?
-জান !!!
-তোমার বিয়ে ভেঙ্গে গেছে ?
-খুব আনন্দ হচ্ছে না ?
-আনন্দ হবে না । বউ হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছিল । আবার ফিরে পেয়েছি ।
-তুমি তো কিছু করলা না ?
-আরে তুমি থাকতে আমার চিন্তা কি !
-তাই না ? তা তোমার বাবা কি বলল !
বাবা যা যা বলল সব বললাম
ইরা হাসতে হাসতে বলল
-তা এখন আমার বিয়ে রকথা কিভাবে বলবে শুনি ?
-তাই তো ভাবছি ! পালানো ছাড়া তো কোন উপায় দেখছি না !
-আচ্ছা সময় আসুক ! আর তোমার যখন জানবে যে এই বদ মেয়েটা তার বদ ছেলেকে ভালবাসে তখন কিছু বলবে না বুঝেছো !
-হুম ! বলা যায় না !
যাক ঝামেলা একটা দুর হল শেষ পর্যন্ত ! এবার বাবাকে মানা করতে হবে । এই ঝামেলা যেন নিজের কাধে আর না নেন ! এই পরোপকারের জন্য কার না কার কপাল পুড়ে কে জানে !
শানে নূযুলঃ গল্পটা গল্প মনে হলেও এই গল্প আমার এক বন্ধুর জীবন থেকে নেওয়া । বন্ধু যে মেয়েকে বিয়ে করবে বলে ঠিক করে রেখছিল আজকে বন্ধুর বাবা সেই মেয়ের বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেছে অন্য ছেলের জন্য । আমার গল্পে না হয় ঘটনা সুখের দিকে গেছে না জানি বন্ধুর জীবনে কি ঘটে । সবার কাছে দুয়া প্রার্থী আমার ঐ বন্ধুর জন্য !
১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:২৭
অপু তানভীর বলেছেন: ঘটনা সত্য !
২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৩০
শাকিল ১৭০৫ বলেছেন: ভাই এ জন্য ই তো উনার জন্য আফসোস লাগছে!!
১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৩৩
অপু তানভীর বলেছেন: ঘটনা কেবল আজকের । দেখা যাক সামনে কি হয় !!
৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৩৭
মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: বাবা কেনু ঘটক?? কেনু কেনু??
১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৫১
অপু তানভীর বলেছেন: কেনু কেনু
৪| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৫৭
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: প্রেমের গল্পে ১ম ভাল লাগা ।
১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৪২
অপু তানভীর বলেছেন: থেঙ্কু !
৫| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:৫৯
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: গল্পটা পড়ে মজা পেলাম। শানে নূযুল পড়ে কিঞ্চিৎ খারাপ লাগছে। বেচারাদের জন্য দোয়া থাকলো।
১২ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৬
অপু তানভীর বলেছেন: বেচারা জন্য দুয়া করেন !
৬| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৩৭
অবাধ্য সৈনিক বলেছেন: চ্রম +++++
১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৫৬
অপু তানভীর বলেছেন:
৭| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৪৫
সানহিমেল বলেছেন: ভাল লাগলো
৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:১২
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:০৪
শাকিল ১৭০৫ বলেছেন: আহারে বেচারা