নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
-অপু !
পিছনে ফিরেই ছোট খাটো একটু ধাক্কার মত খেলাম !
লিরা ! এখানে ?
এতোদিন পরে আবার লিরা কে এখানে এভাবে দেখবো ঠিক আশা করি নি ! তাও আবার এভাবে ?
আগের থেকে দেখতে অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে ! নীল আর আকাশী রংয়ের মিশ্রনের একটা শাড়ি পরে আছে । শাড়িতে যেন আরও বেশি সুন্দর লাগছে ! আমি কেবল কিছুটা সময় লিরার দিকে তাকিয়ে রইলাম ! মুখে সেই চিরায়িত হাসি নিয়ে লিরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই লিরা বলল
-আগের মতই আছো ?
একটু হেসে বললাম
-আছি আর কি ! তুমি তো অনেক বদলেছো দেখছি ! চিনতেই পারছি না !
-এখানে ? তোমার তো ভিড় পছন্দ না !
আসলেই আমার ঠিক ভিড় পছন্দ না ! মানুষ জন যেখানে থাকে আমি সেখান থেকে অনেক দুরে থাকি । কিন্তু অফিসের বসের আমন্ত্রন কি ভাবে অগ্রাহ্য করি ?
২
-এমন কেন করছো ?
-জানি না ! ভাল লাগছে না ! মনে হচ্ছে সব কিছু ছেড়ে চলে যাই !
-একজনের জন্য কি জীবন থেমে থাকে ? বল ? নাকি থামিয়ে রাখা উচিৎ ?
-আমি জানি না ! তবে আমার কিছু ভাল লাগছে না ! নিচের অন্ধকার গুলো কে খুব বেশি কাছে মনে হচ্ছে ! খুব বেশি !
-তোমার পায়ে পড়ি ! প্লিজ ! রেলিং থেকে নামো ! নামো বলছি !
-তুমি কেন চিন্তিত হচ্ছ এতো ! আমি তোমার কে হই ?
-কেউ হও না ?
আমি চট করেই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না ! আসলেই কি হই না ? তাহলে মেয়েটা আমাকে নিয়ে কেন এটো চিন্তা করছে ? কেন এতো ভাবছে ?
গত কদিন থেকেই মেসেঞ্জার ওপেন করলেই মেয়েটার মেসেজ এসে হাজির ! কত রকমের কথা ! আসলে আমার মত মেয়েটাই একজন কাছের মানুষকে হারিয়েছে তো তাই মনে হয় আমার কষ্টটা ও খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে । এখন আমার মনের অবস্থা কেমন হওয়া উচিৎ সেটাও ও খুব ভাল করেই জানে ! তাই হয় তো আমাকে একটু সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছে ! আমি যাতে একেবারে ভেঙ্গে না পড়ি এই জন্য আমার পাশে থাকতে চাচ্ছে !
কিন্তু কেন ?
কি লাভ ওর ?
৩
-এখনও তো গল্প লেখো তাই না ?
একটু ভিড় এড়িয়ে আমরা দুজন বসলাম । এখান থেকে মুল অনুষ্ঠান টা পরিস্কার দেখা গেলেও মানুষ জনের নজর আমাদেরকে ঠিক লক্ষ্য করবে না ! আসলে এতো দিন পরে লিরা কে এখানে দেখে আমি আসলেই অনেক খুশি হয়েছি ! সে দিনের সেই আমাকে না বলে চলে যওয়াটার কারন টা যদি আজকে জানতে পারি !
আমাদের মাঝে যা হয়েছিল তাতে আমাদের দুজনেরই সম্মতি ছিল ! কথা ছিল একদিন আমরা একে অন্যের কাছ থেকে দুরে সরে যাবো !
ওর অনেক আপত্তি ছিল এই কারনে যে দুরেই যদি চলে যাবো তাহলে কেন এই কাছে আসা !
যদি পরে আর কোন কথা হয় না ! একটা বছর আমরা ছিলাম অনেক ভাল ! সত্যি বলতে কি ঐ একটা বছরে ও যদি আমার পাশে না থাকতো তাহলে আমি মনে নিজেকে ধরে রাখতে পারতাম না !
বললাম
-কেন তুমি পড় না ?
কথাটা সরাসরি জবাব না দিয়ে লিরা অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমি খুব ভাল করেই জানি লিরা ঠিকই আমার গল্প পড়ে !
-এখন আর সময় পাই না ! ঘর সংসার চাকরি নিয়ে অনেক বিজি থাকি !
-বাহ ! চাকরিও কর নাকি ?
-কেন করবো না ?
-হাজব্যান্ড কি করে ?
-ব্যবসা করে ?
-আর তুমি চাকরী ?
-হুম !
৪
দেখতে দেখতে মেয়েটার সাথে কিভাবে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল । আমি নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না । মনেহয় ওর দিক থেকেও ও নিজেকে আটকে রাখতে পারে নি । আসলে এমন টাই হয় । দুজন ভেঙ্গে পড়া মানুষ যখন একে অন্যের খুটি হয়ে পড়ে তখন একে ওপরের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । জুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটা ধরে বাঁচতে চায় তেমনি খড়কুটাও সেই মানুষটাকে ধরে আরও একটু এগিয়ে যেতে চায় ! আমাদের অবস্থা টাও ঠিক তেমনই হয়েছে ।
মেসেঞ্জার থেকে ফেসবুক, ফেসবুক থেকে ফোন আর ফোন থেকে বাস্তব । কিভাবে মেয়েটা আমার একেবারে বাস্তব জীবনে চলে ভাবলেই অবাক লাগে !
আগে তো মেসেজে আমার খোজ খবর নিতো এখন প্রতিদিন ফোন করে খোজ খবর নেওয়া চলে ! আরও ভাল করে বললে আমার উপর খবরদারি চলে !
-এই তুমি এই মেয়ের ছবি কে লাইক দিছো কেন ?
-আরে লাইকই তো দিছি আই লাভ ইউ আর বলি নি !
-কি ? তার মানে তুমি ঐ পেত্নীটাকে আই লাভ ইউ বলতে চাও ?
-দেখো ! কার ছেলে কার কোলে দিবে !
-কি আমি কার ছেলে কার কোলে দেই ! এই খবরদার কথা ঘুরাবা না ! একে বারে খুন করে ফেলবো কিন্তু !
-তা আমাকে খুন করলে পুলিশ তো তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে ! তখন কি ভাল লাগবে বল ? আমার বাবুটাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে আমার অনেক কষ্ট লাগবে !
-আহা ঢং !
-সত্যি বলতেছি !
-হয়েছে রাখো ! আর কথা বলবা না ! আর কোন মেয়ের ছবি লাইক দিতে যেন না দেখি !
৫
-তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ?
ওর চেহারা দেখে মনে যেন ও ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে আমি ওকে কি কথা জানতে চাইবো !
লিরা বলল
-না জানতে চাইলে হয় না ?
-আমি অনেক দিন ধরে ব্যাপার টা ভেবেছি ! কিন্তু কোন উত্তর পায় নি ! শ্রাবণের কথা মনে আছে তো ?
-হুম ! কেন মনে থাকবে না ! তোমার জীবনে সব থেকে জরুরী মানুষটার কথা আমি কিভাবে ভুলি !
লিরার কথায় একটু যেন কাঠিন্য বুঝতে পারলাম । বুঝলাম এখন শ্রাবনের প্রতি ওর রাগ টা চলে যায় নি ! অবশ্য যাওয়া টা উচিৎও না মনে হয় !
আমি বললাম
-তুমিও তার মত করে আমাকে ছেড়ে চলে গেলে ! কারন টা না বলেই ! কেন ?
-শুনতেই হবে ?
-হুম ! আজকে দেখা না হলে হয় তো এতো জরুরী হত না !
-ব্যাপার না ! আস্তে আস্তে সয়ে যাবে ! আমার যেমন সয়ে গেছে !
-বলবা না ?
-কিছু কথা না হয় নাই বলি !
-কিছু কথা জানা জরুরী হয়ে পড়ে মাঝে মাঝে !
৬
-পারবে আমাকে বিয়ে করতে !
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম ! কদিন থেকেই মেয়েটি কেমন যেন যেন হয়ে গেছে । বিশেষ করে সবুজের পালিয়ে বিয়ে করার কথা শুনার পর থেকেই ও এমন টা করছে । যে কথা গুলো আমাদের মাঝে কোন দিন আসে সেই কথা শুলোই চলে আসছে বারে বার !
বার বার আমার অপারোগতাটা সমনে টেনে আনছে ।
আমি বললাম
-তুমি কি তাই চাও ?
-আমি কি চাই তার থেকেই বড় কথা তুমি কি চাও ?
-তুমি জানো আমি কি চাই !
-হুম ! আমি খুব ভাল করেই জানি ! তুমি কেন তোমার জীবন টাকে ঐ একটা জায়গায় আটকে রেখেছো ? কেন ?
-আমরা এই বিষয় নিয়ে কথা না বলি !
-কেন বলবে না ! আমি শুনতে চাই ! আজকে তুমি আমাকে বড় তোমাকে কে বেশি জরুরী ! আমি নাকি সে !
-দেখো এটা একটা ফাউল ! এই প্রশ্নের উত্তর নেই আমার কাছে !
-থাকবে না , আমি জানতাম !
এমন তো হওয়ার কথা ছিল না ! সম্পর্ক শুরু আগে আমরা তো কোন দিন এর পরিনতির কথা ভাবি নি ! সে ও ভাবে নি , আমিও ভাবি নি ! ভাববো না এমন কথাই ছিল ! কেবল আমাদের অনুভুতির আদান প্রদান হবে কথা ছিল ! কোন দাবী থাকবে না কোথায় !
সব কিছু ঠিকই ছিল কিন্ত তারপরেই সব কিছু বদলে গেল ! এমন টা তো হওয়ার কথা ছিল না ! আমাদের মাঝে সুন্দর সম্পর্ক টা নষ্ট হতে শুরু করলো !
মেয়েটি আর আমি কো ছবিতে লাইক দিলাম কি দিলাম না সেই নিয়ে কোন কথা বলা বন্ধ করে দিল ! যা আমাকে পিড়া দিতো ! আমি চাইতাম সে আমার উপর খবরদারি করুক কিন্তু সেই অধিকার মনে হয় আমি হারিয়ে ফেলেছি !
৬
-আচ্ছা অন্য কথা বল ! তোমার দিন কেমন যাচ্ছে ! নতুন কাউকে পেয়েছো ? বিয়ে করবা কবে ?
-করবো না ।
-কেন ?
আমি হাসি ! বললাম
-ঠিক সেই কারনে তোমাকে বিয়ে করি নি, ঠিক একই কারন !
-এখনও সেখানেই আটকে আছো ?
আমি খানিকটা সময় চুপ করে থেকে বলি
-আমি কথা দিয়েছি ! কথা কিভাবে ভাঙ্গে ফেলি বল ?
-তাই বলে জীবল টা এভাবে নষ্ট করে ফেলবে ?
-কে বলল নষ্ট করছি ! আমি তো বেশ আছি !
-আসলেই কি !
কেন জানি লিরার এই প্রশ্নের উত্তর টা আমি দিতে পারলাম না !
৭
-আমাদের মনে হয় রিলেশন টা এন্ড করা উচিৎ !
-তুমি তাই চাও ?
-তুমি কি চাও সেই টা বল !
-আমার কোন চাওয়ার নেই ! তুমি যেইটা চাও সেইটাই হবে !
-আচ্ছা !
-আমার সাথে কি তাহলে আর যোগাযোগ করবা না ?
-যোগাযোগ কেন করবো না ?
তারপরও যোগাযোগ হতে থাকে আমাদের মাঝে ! তবে অনেক কম ! সে কাজ নতুন জব ধরে । চাকরি নিয়ে বিজি থাকে সারা দিন ! তারপর একদিন হঠাৎ করেই তার ফোন নাম্বার দুটো বন্ধ দেখায় । অনলাইন একটিভিও বন্ধ !
প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো অনেক বেশি ! বিশেষ করে যখন মন খুব অস্থির হত, সেটা বলার মত কাউকে খুজে পাতেম না ! মন শান্ত হত না কিছুতেই !
৮
-আচ্ছা আজ তাহলে যাই ! আমার হাজব্যান্ড ডাকছে !
-যাবে ?
-হুম ! যাই তাহলে ?
লিরা যেন যাওয়ার অনুমুতি চাইলো ! যেন আমি যদি বলি যেও না তাহলে সে যেতে পারবে না !
যখন আমাকে ও উঠে দাড়ালো কেন জানি অদ্ভুদ রকমের একটা কষ্ট হতে লাগলো ! অনেক দিন পর যেন পুরানো কষ্ট ফিরে এ এবার ! মেয়েটা আমার জীবনে এক অমূল্য সম্পদ ছিল ! জীবনের একটা বছর আমি খুব আনন্দের কাটিয়েছি এই মেয়েটার জন্য ! মেয়েটা চলে যাওয়ার পরে আবার আগের জীবনে ফিরে গেছি ! হয়তো একটা সুন্দর স্বপ্নের পর জেগে ওঠার মত !
মাঝে মাঝে মনে হয় আচ্ছা চাইলেই কি আমি সেই স্বপ্নের ভিতর বসবাস করতে পারতাম ?
তাহলে হয়তো জীবন অন্য রকম হত । অথবা হত না !
২৬ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:০১
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২৬ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:১৪
আহসানের ব্লগ বলেছেন: ভাল লিখেছেন ।
২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:০৮
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২৬ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:০৪
আমি দিহান বলেছেন: ভাইয়া গল্পটা কি এখানেই সর্বপ্রথম প্রকাশ করেছেন?
নিরন্তর শুভকামনা রইলো।
২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:১১
অপু তানভীর বলেছেন: জি গল্প টা এখানেই সর্ব প্রথম প্রকাশ করেছি ! তারপর পরে ফেসবুকে দিয়েছি ।
৪| ২৬ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: হ্যাপি এন্ডিং চাই।
২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:১২
অপু তানভীর বলেছেন: হোক না কিছু বিষাদময় !
৫| ২৬ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৬
ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লাগল।
২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:২৩
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !!
৬| ২৬ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৩
মদন বলেছেন: +
২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:২৩
অপু তানভীর বলেছেন:
৭| ২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:১০
পার্সিয়াস রিবর্ণ বলেছেন: চমৎকার গল্প । গল্পে বাস্তবতার অনেকটা ছোঁয়া আছে মনে হলো ।
২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:২৩
অপু তানভীর বলেছেন: হয়তো আছে আবার হয়তো নাই !
ধন্যবাদ !
৮| ২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:৩৯
পার্সিয়াস রিবর্ণ বলেছেন: গল্প তো বাস্তব জীবনেরই প্রতিরুপ । কাল্পনিক চরিত্রের আড়ালে লেখক হোক কিংবা পাঠক গল্পের এক একটি চরিত্র হয়ে যায় ।
২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪২
অপু তানভীর বলেছেন: হুম ! হয়তো সেরকমই কিছু একটা !
৯| ২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৫০
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: ভাই, আমার থিউরিটা হল, বাস্তব জীবনে তো খুব কমই হ্যাপি এন্ডিং দেখি তাই অন্তত গল্প, নাটক, সিনেমায় যেন সেটা দেখতে পাই। সব গল্পের শেষ আমার মতে হওয়া উচিত .....and they lived happily ever after... দিয়ে।
আগেও মনে হয় কোথাও বলেছিলাম এটা। খুব সম্ভবত আপনার কোন গল্পেই।
২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ৩:০৪
অপু তানভীর বলেছেন: কি জানি কোথায় বলেছিলেন মনে নেই । আমি এই থিউরী মেনে চলি এই জন্যই আমার ৯৫ ভাগ গল্পেই কিন্তু হ্যাপি এন্ডিং হয় ! দু একটা হয় মন খারাপের !
১০| ২৮ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:০৫
মুদ্দাকির বলেছেন: সুন্দর বস্তবতা সুন্দর স্বপ্নের চেয়ে অনেক সুন্দর !
২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:০৮
অপু তানভীর বলেছেন: এটা অবশ্য সত্য কথা !
কিন্তু তা কজনের কপালে জটে বলেন ?
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৮
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: পড়লাম গল্পটা --- সুন্দর সাবলীল বর্ণনা ------
ভীষণ ভাল লাগলো