নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
রহিমুদ্দির আক্ষেপ (ছোট গল্প)
© নূর মোহাম্মদ নূরু
শীতের সকাল, বেলা গড়িয়েছে অনেক খানি। হাড় কাপানো শীতে ভালো ঘুম হয়নি রহিমুদ্দির। হাপানীর টান ছাড়াও আজ কাশিটাও বেড়েছে অনেক। তাই বিছানায় গড়া গড়ি দিতেও ভালো লাগেনি তার। এত বেলা হলো খাবারে কোন যোগাড় নাই। নাতিটা মায়ের আঁচল ধরে খাওয়ার বায়না ধরে ধমক ছাড়া কিছু পায়নি এখনো। একমাত্র নাতি মতির বয়স মাত্র সাত বছর। সে কি বুঝবে মায়ের রাগ বা অভিমান! অন্য দিন হলে মোনেনা তার জন্য গুড় মুড়ি অথবা রুটি ভাজির ব্যবস্থা করে দিতো। মতি দাদার সাথে বসে একসাথে নাস্তা করতো। কিন্তু আজ সকালটা ভালো যাচ্ছেনা।
রহিমুদ্দিন শেখ। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। এককালের বনেদি গেরস্ত। জমি জমা, হালের বলদ বউ বাচ্চা নিয়ে ছিলো সুখের সংসার। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আজ তা শুধুই গল্প। বউ মারা গেছে তিন বছর আগে, করোনা মহামারী বাঁচতে দেয়নি তাকে। সপ্তাহ খানেক যমে মানুষের টানাটানিতে শেষ পর্যন্ত যমেরই জয় হয়! তাতেও আক্ষেপ ছিলোনা রহিমুদ্দির। কিন্তু চার যুগের অধিক কাল সুখে দুঃখে একসাথে কাটিয়েও শেষ বারের মতো তার মুখটা দেখার সৌভাগ্য হলোনা তার। তার কবর কোথায় হয়েছে সে হদিসও জানেনা সে। হাসপাতাল কতৃপক্ষ কোথাও হয়তো দাফন করেছে। বউয়ের কবরের হদিস না জানার আক্ষেপ আমৃত্যু তাকে কুড়ে কুড়ে খাবে। বউয়ের সাথে সাথে গেছে সংসারের সুখ শান্তি আর জমি জিরাত। বয়সের ভারে কাজকর্ম করার ক্ষমতা হারিয়েছে অনেকদিন হলো। দেহে নানান ব্যমো বাসা বেধেছে; আছে হাপানী ! সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে একে একে খোয়াতে হয়েছে জমি-জিরাত, হালের বলদ; সব। এক সময়ের বনেদি গেরস্ত সব হারিয়ে আজ নিঃস্ব। একমাত্র বসত বাড়িটা ছাড়া সব বিসর্জন দিতে হয়েছে জঠর জ্বালা নিবারণের জন্য।
রহিমুদ্দির একমাত্র পুত্র, তার স্ত্রী মোমেনা আর নাতি মতি শেখ। এই নিয়ে ছিলো তাদের সংসার। গফুর শেখ চাকূরী করতো ঢাকার এক বেসরকারী সওদাগরী অফিসে। মহামারী করোনায় সে অফিস বন্ধ হয়ে গেলে চাকুরী হারায় গফুর শেখ। একদিকে মায়ের মৃত্যু অপর দিকে বেকার হয়ে যাওয়াতে গ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য হয় গফুরকে। বৃদ্ধ বাবা, নাবালক সন্তান আর বউয়ের ভরণ পোষণের দায়িত্ব পড়ে গফুরের উপর। জমি জিরাত বিহীন গফুরকে সংসারে হাল ধরতে হয় পরের জমিতে কামলা দিয়ে। কামলা ছাড়াও যখন যে কাজ পায় তাই করে গফুর শেখ। যে বছর দেশে ফসল ভালো হয় সে বছর তারও বেশ ভালো ভাবেই দিন কাটে। ন্যয্য পাওনার চেয়েও অতিরিক্ত কিছু বখশিস পায়। মোমেনা খুবই লক্ষী মেয়ে। খুব হিসেব করে সংসার চালায়। সারাবছরের খাবারের ব্যবস্থা রেখেও কিছু সঞ্চয় থাকে তার। এছাড়া বাড়িতে নানা ধরনের শাক সবজি ও হাস মুরগী ও একটি ছাগল লালন পালন করে বাজারে ডিম, দুধ ও তরী তরকারী বিক্রি করেও কিছু বাড়তি রোজগার আছে তার। দুর্দিনে যা তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও শশুরের অষুধ পথ্য এবং চা নাস্তার যীগান দেয় সে। শশুরের সেবা যত্নে কখনই অবহেলা করেনা মোমেনা। নিজের বাবা নাই; তাই শশুরকে নিজের বাবা জ্ঞানে সেবা যত্ন করে। শশুরের খুব ন্যাওটা হয়েছে মতি। সারা দিন তার সাথেই কাটে তার অষ্ট প্রহর।
গত রাতে বাড়ি ফেরেনি গফুর শেখ। শশুরকে রাতের খাবার খাইয়ে মতিকে ঘুম পাড়িয়ে গফুরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে মোমেনা। অন্য দিন মতি দাদার কাছেই শোয়। আজ গফুর বাড়ি ফেরেনি বলে মায়ের সাথেই রয়ে যায় মতি। সন্ধ্যা গড়িয়ে মাঝ রাত পেড়িয়ে ফজরের আযানের সময় হয়ে যায় কিন্তু গফুরের ফিরবার নাম নাই। গফুরের চিন্তায় তার রাতের খাওয়াও হয়নি। এমনতো কোন দিন করে নাই মতির বাপ! নানান কুচিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। কোন বিপদ আপদ হয়নিতো মানুষটার। তার কোন কোন কিছু হলে অকুল পাথারে ভাসতে হবে সবাইকে। সারারাত অনাহারে নির্ঘুম কাটে মোমেনার।
চারিদিকের মসজিদের মাইক থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে। এমন সময় টোকা পড়ে ঘরের দরজায়। সকল দুঃশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে বাড়ি ফিরে গফুর শেখ। দরজা খোলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় রহিমুদ্দি শেখের। একটা চাপা কান্নার আওয়াজ আসে গফুরের ঘর থেকে। মোমানা কাঁদছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে। মোমেনাতো সহজে কাঁদেনা! সে খুব শক্ত মেয়ে। সকল পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে বিচক্ষনতার সাথে! আজ কী এমন ঘটনা ঘটলো যে মোমেনা কাঁদছে?
চারিদিক ফর্সা করে পূব দিকে লাল সূর্য উদয় হয়। এসময় মুখ গোমরা করে ঘর থেকে বের হয়ে যায় গফুর শেখ। কালু মহাজনের উত্তরের ভিটি জমিতে আজ লাঙ্গল চালাতে হবে। দেরী করলে কথা শোনাবেন মহাজন। কিন্তু তার বুকের মাঝে যে লাঙ্গল চলছে তার হিসাব কেউ কী রাখে?
শীতের সকাল বলে রোদের তেজ নাই খুব একটা। তবুও একটা অসহ্য যন্ত্রণা তাকে চৈত্রের কাঠফাঁটা রোদের মতো পোড়াচ্ছে। রহিমুদ্দি কিনারা করতে পারছেনা কিসের আগুন তাকে পোড়াচ্ছে? তার মাথায় একটাই ভাবনা; কেন কাঁদছে মোমেনা! এত বছর এক সাথে থেকেও তিনি কারো কষ্টের কথা, ব্যথা বেদনার কথা জানতে পারলেন না; এই আক্ষেপ তার কোন দিনও যাবেনা!
প্রকাশকালঃ ২৯ আগস্ট ২০২২ ইং
২৯ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:২৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
শুধু কষ্ট নয়; আক্ষেপও বটে!
২| ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৩০
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: আক্ষেপের গল্প লেখা চমৎকার হয়েসে।
২৯ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৩৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
চমৎকার হয়তো হয়নি ! তবে চেষ্টা করে দেখলাম কিছু দাঁড় করানো যায় কিনা !
ভালো থাকবেন, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৪০
মোগল সম্রাট বলেছেন:
চলমান জীবনের প্রতিবিম্ব। ভালো লাগলো।
শুভকামনা ।
২৯ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৫৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ মোঘল সম্রাট,
বাস্তবতা বড়ই নির্মম!
৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৫৯
শাওন আহমাদ বলেছেন: মানুষ গুলো সারাটা জীবন ধরে কতশত অপ্রাপ্তি আর দীর্ঘশ্বাসের স্বাক্ষী হয়ে বেচে থাকে তার হিসেব কে রাখে!
২৯ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৫:১০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
মানুষ কখনোই পরিপূর্ণ সুখী নয়। তার জীবনের না পাওয়ার বেদনা;
ব্যর্থতা আক্ষেপ হয়ে তাকে কুড়ে কুড়ে খায় প্রতিনয়ত। যার সবটা
প্রকাশ করতে পারেনা বলেই তার এমন আক্ষেপ!
আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্য প্রদানের জন্য।
৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০১
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
শেষ প্রশ্নের জবাব আমারও জানবার চাই
২৯ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
রহিমুদ্দি শেখ এতদিন একসাথে থেমোমেনা কেন কাঁদছে তার সুরহা করতে পারেনি, আমি তবে কি করে জানবো এই প্রশ্নের উত্তর! এ আক্ষেপ যেমন রহিমুদ্দিন শেখের তেমনি আমারও। তবে পাঠক উত্তর খু্ঁজে নিতে পারে তার ইচ্ছামতো। সে স্বাধীনতা দেয়া হলো পাঠককে।
৬| ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৩
কামাল৮০ বলেছেন: গ্রামের একটা দিক তুলে ধরছেন গল্পে।মনে হয় চোখের সামনে দেখছি।কতো পরিবারের উত্থান পতন দেখেছি গ্রামে।বড় যৌথ পরিবার গুলো যখন কর্তার মৃত্যুর পর ভেঙ্গে যায় সেই সময় একটা পতন হয়।
রহিমুদ্দির পতনটা ঠিক বুঝা গেল না।আর শেষের দিকটা হেয়ালিতে ভরা।
২৯ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
রহিমুদ্দিন শেখ অশীতিপর বৃদ্ধ। জমি জিরাত ছিলো; মোটামুটি সচ্ছল পরিবার। কিন্তু স্ত্রী মারা যাবার পরে তাকে দাফন করতে না পারার যন্ত্রণা সংসারের প্রতি এক ধরণের উদাসীনতা ও অনীহা তাকে কর্ম বিমুখ করে তোলে। যার কারনে জমি বিক্রি করে দেওয়ার বিকল্প ছিলোনা তার। তা ছাড়া গফুরের চাকরী চলে যাওয়া ছিলো মরার উপর খড়ার ঘা। এভাবেই একটা সচ্ছল পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। গ্রামে একটা কথা প্রচলিত আছে, ঘরের লক্ষী চলে গেলে সে সংসারে আর ভাগ্যদেবী অবস্থান করেনা।
শেষ কথাটা হেয়ালীতেই রাখলাম যেনো পাঠক তার ইচ্ছামতো এর উত্তর খুঁজে নেয়। ছোট গল্পের এটাই রীতি, শেষ হয়েও হইলোনা শেষ!
৭| ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৭
আহমেদ জী এস বলেছেন: নূর মোহাম্মদ নূরু,
শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। আক্ষেপ রয়েই গেলো................
২৯ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:৩৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আহমেদ জী এস ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ।
আমি আগের মন্তব্যে আপনার কথারই
প্রতিদ্ধনী তুলেছি।
ছোট গল্পের এটাই রীতি, শেষ হয়েও হইলোনা শেষ।
ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা ছোট ছোট দুঃখকথা-
নিতান্তই সহজ সরল,
সহস্র বিস্মৃতিরাশি
প্রত্যহ যেতেছে ভাসি;
তারি দু'চারিটি অশ্রুজল।
নাহি বর্ণনার ছটা
ঘটনার ঘন ঘটা
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ,
অন্তরে অতৃপ্তি রবে,
সাঙ্গ করি মনে হবে-
শেষ হইয়াও হইলো না শেষ..."
রবীন্দ্রনাথের লেখা ছোট গল্পের সংজ্ঞা এটা।
৮| ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৪৪
রেজাউল৮৮ বলেছেন: রহিমুদ্দির বৌ মরসে তাতে সমস্যা কী? আরেকটা বিয়ে করে নিলেই পারে। উপ্রি কিসু যৌতুকো ঘরে আস্বে।
২৯ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:০০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এই বয়সে রহিমুদ্দির হয়তো সএ সাহস হয়নি!
তবে আপনাকে দিয়ে হলেও হতে পারে, বিচিত্র
কিছু নয়!
৯| ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:৩৮
পোড়া বেগুন বলেছেন:
গল্প ভালো লেগেছে।
৩০ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:০৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
পোড় খাওয়া মোমেনার মতো
আপনিও একজন পোড় খাওয়া মানুষ,
ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
১০| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ ভোর ৫:৫২
অমিত বিশ্বাস বলেছেন: এত দুঃখ কষ্ট আক্ষেপের কাহিনী ভাল লাগে না, যেখানে দুঃখ দিয়েই শুরু আর দুঃখ দিয়েই শেষ! মন খারাপ হয়ে যায়
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৪৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বাস্তবতাকে মেনে নেয়ার সাহস থাকতে হবে; তা নাহলে
মরার আগেই মরতে হবে। পুরুষ মরে একবাবার; কাপুরুষ
মরে বারবার।
ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য প্রদানের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:০৬
ইমরোজ৭৫ বলেছেন: কি কষ্ট!