নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈশপের গল্প! আধুনিক সংস্করণ !!

২১ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৫


ঈশপের গল্প! আধুনিক সংস্করণ !!
নূর মোহাম্মদ নূরু

কোনো এক বনে বউকে নিয়ে বাস করতো এক কাঠুরিয়া। ভারি গরিব ছিলো তারা। রোজ কাঠ কাটতে বিনে যেত সে। দৈনিক কাঠ বিক্রি করে যা রোজগার করত তাই দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে-না খেয়ে দিন চলত তাদের। বউটি ছিলো বেজায় লোভী আর ঝগড়াটে। বউয়েরা যেমন হয়! সংসারের অভাব নিয়ে বউ প্রতিদিন তার সাথে ঝগড়া করতো। একদিন বউয়ে উপর রাগ করে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়েএক নদীর ধারে সে গেল কাঠ কাটতে। সেখানে গিয়ে একটা গাছে যেই কুড়াল দিয়ে ঘা মেরেছে, অমনি তার হাত ফসকে কুড়ালটা গভীর পানির মধ্যে পড়ে গেল। খরস্রোতা নদী। তা ছাড়া তাতে কুমিরের ভয় ছিল ভয়ানক। তাই নিরুপায় হয়ে কাঠুরিয়া সেই গাছের গোড়ায় বসে কাঁদতে লাগল।
সে এতই গরিব যে তার আবার একটা কুড়াল কেনার মতো সংগতি ছিল না। তাই কী উপায় করবে, গাছের গোড়ায় বসে বসে সে ভাবতে লাগল। যত ভাবে ততই তার চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
এমনি করে কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর হঠাৎ এক জলপরী নদীর মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কাঁদছ কেন?
কাঠুরিয়া বলল, আমি বড় গরিব, আমার কুড়ালটা পানিতে পড়ে গেছে, তাই কাঁদছি।
জলপরী বলল, আচ্ছা তোমার কুড়াল আমি এনে দিচ্ছি, তুমি কেঁদো না। এই বলে তৎক্ষণাৎ নদীতে ডুব দিয়ে একখানা সোনার কুড়াল তুলে এনে জলপরী জিজ্ঞাসা করল, এটা কি তোমার ?
কাঠুরিয়া ভালো করে দেখে বলল, না।
সঙ্গে সঙ্গে আবার পানির মধ্যে ডুব দিয়ে একটা রুপার কুড়াল নিয়ে এসে জলপরী জিজ্ঞাসা করল, তবে এটা কি তোমার ?
এবারও কাঠুরিয়া বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করে বলল, না, এটাও নয়।
তখন জলপরী আবার ডুব দিয়ে একটা লোহার কুড়াল এনে তাকে দেখাল। কাঠুরিয়া এতক্ষণ পরে নিজের কুড়ালখানি চিনতে পেরে সানন্দে বলে উঠল, হ্যা, এটাই আমার।

জলপরী কাঠুরিয়ার এই সততা দেখে মুগ্ধ হল। সে তাকে তার নিজের কুড়ালটি তো ফিরিয়ে দিলই, উপরন্তু সোনার ও রুপার কুড়াল দুটিও উপহার দিয়ে পানির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।
ঈশপের নীতি কথার এই গল্পটি মোটামুটি কম বেশী সবার জানা!
গল্পটির আধুনিক সংস্করণঃ
কাঠুরিয়া খুশি মনে সোনা, রূপা ও লোহার তিনটি কুড়াল নিয়ে যখন বাড়ি ফিরে বউকে সব খুলে বললো, লোভী বউটি পরদিন আবার কাঠুরিয়াকে সেই নদীর ধারে কাঠ কাটার জন্য যেতে বললো আর পরামশ' দিলো ইচ্ছা করে লোহার কুড়ালটি নদীতে ফেলার জন্য। কিন্তু তার লজ্জা বোধ হওয়াতে কাঠুরিয়া তাতে রাজী হলোনা। বউ অনেক গাল মন্দ করার পরেও যখন তাকে রাজী করানো গেলোন তখন রাগে গজরাতে গজরাতে নিজেই লোহার কুঠারটি নিয়ে সেই নদীর কাছে গিয়ে কাঠ কাটার অভিনয় করতে লাগলো। কিন্তু অনভিজ্ঞতার কারণে কাঠ কাটার সময় পা পিছলে ওই নদীতে পড়ে গেলো। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয় কিন্তু বউয়ের বাড়ি ফিরার নাম গন্ধ নাই। চিন্তায় পড়ে গেলো কাঠুরিয়া। ঝগড়া করুক আর গাল মন্দ করুক দুবেলা দু মুঠো রান্নাতো করতো! তা ছাড়া এই বনে সেইতো ছিলো একমাত্র সুখ দঃখের সাথী। পুরুষ মানুষ যেমন হয়! বউয়ের খোঁজে কাঠুরিয়া সেই নদীর ধারে গিয়ে দেখতে পেল সেখানে কুঠারটি আছে কিন্তু বউ নাই। বউ নদীতে পড়ে গেছে বুঝতে পেরে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলো কাঠুরিয়া।
এমনি করে কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর আবার সেই জলপরী নদীর মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কাঁদছ কেন?
কাঠুরিয়া বলল, আমি বনের মাঝে আমার বউকে নিয়া বাস করতাম, সে ছিলো আমার সুখ দুঃখের সাথী। আমি সারা দিন বনে বনে কাঠ কাটি আর বউ আমার জন্য দু'বেলা দু'মুঠো রান্না করে খাওয়াতো। সেই বউটা নদীতে পড়ে গেছে, তাই কাঁদছি। জলপরী কাঠুরিয়ার দুঃখে অনেক মায়া হলো।
জলপরী বললো, আচ্ছা তুমি কেঁদোনা। আমি তোমার বউকে এনে দিচ্ছি। এই বলে তৎক্ষণাৎ নদীতে ডুব দিয়ে এক রাজকন্যাকে তার সামনে হাজির করে বললো এটাইকি তোমার বউ?
কাঠুরিয়া সাথে সাথে জবাব দিলো হ্যাঁ, জলপরী এটাই আমার বউ। যার সাথে আমি বহুদিন ধরে এই বনে বাস করছি

জলপরী তাজ্জব বনে গেলো কাঠুরিয়ার লোভ দেখে! যে কঠুরিয়ার সততায় মুগ্ধ হয়ে তাকে সোনা রূপার কুঁড়াল উপহার দিয়েছিলো, সে কিনা রূপবতী রাজকন্যার লোভে তার এত দিনের সুখ দুঃখের সাথী বউকে ভুলে গেলো! না হয় তার বউ ঝগড়াটে আর একটু বেশী লোভ ছিলো! জলপরী কোন ভাবেই আগের সৎ কাঠুরিয়ার সাথে এই লোভী কাঠুরিয়ার মাঝে মিল খুঁজে পাচ্ছেনা। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়! তবে সে রাগ না করে ভাবতে লাগলো সমস্যা কোথায়!

কোন সুরহা করতে না পেরে জলপরী কাঠুরিয়াকে প্রশ্ন করলো। তুমি মিথ্যা কেনো বলছো? আনি জানতাম তুমি আকজন সৎ মানুষ! তোমার কোন লোভ নাই, মিথ্যা বলোনা। আজ সুন্দরী রাজকন্যাকে দেখে তোমার কোভ কেনো হলো? তাহলে লোকে যে বলে স্যন্দরী নারীর কাছে দেবতারাও বশ হয়; তাই সত্য?
কাঠুরীয়া হাত জোড় করে বিনয়ের সাথে বললো, যদি অভয় দাও তা হলে সত্যি বলবো! জলপরী তাকে অভয় দিলে কাঠুরিয়া বললোঃ
আগের বারে আমার লোহার কুঠার পানিতে পড়ে গেলে তুমি পর পর আমাকে সোনা, রূপার কুঠার দেখাও। আমি সত্যি বলায় তুমি আমাকে সোনা, রূপা এবং আমার লোহার কুঠারসহ তিনটি কুঠার উপহার দিয়েছিলে। জলপরী বললো হ্যাঁ, আমার তা স্মরণ আছে। কিন্তু আজ সুন্দরী রাজকন্যা দেখে তুমি তোমার লোভ সম্বরণ করতে পারো নাই, তাই আমি খুবই অসন্তষ্ট তোমার উপর।
কাঠুরিয়া আবারো তাকে রাগ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলতে লাগলো,
জলপরী আমি যদি রাজকন্যাকে দেখে বলতাম এটা আমার বউ না, তা হলে পরের বার মন্ত্রীর সুন্দরী কন্যাকে দেখিয়ে বলতে এটা আমার বউ কিনা; আমি তাকেও আমার বউ না বললে তুমি আমার আসল বউকে হাজির করতা আর আমি বলতাম হ্যা এটাই আমার বউ। তখন তুমি আনার সততায় মুগ্ধ হয়ে রাজকন্য, মন্ত্রী কন্যাসহ তিনটি বউ উপহার দিতে!
তখন আমি পড়তাম মহা যন্ত্রণায়! একটা বউ নিয়ে আমি যে যন্ত্রণায় আছি সেখানে তিন তিনটি বউ নিয়ে আমি নরক যন্ত্রণা ভোগ করতাম। তাই তুমি যাতে মিথ্যা বলায় আমার উপর রাগ করে আরো দুইটা বউ উপহার দিতে না পারো তাই এই বুদ্ধিটা করলাম! আশা করি আমার দূরবস্থার কথা বুঝতে পারছো! এখন আমার আসল বউটি রেখে বাকী দুইটি ফিরিয়ে নিয়ে আমাকে দয়া করো।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
প্রকাশকালঃ ঢাকা-২১ জুন ২০২২ ইং

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৫

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: হাহা শেষে জলপরী জবাবে আবার কি কহিল জানার আগ্রহ রহিয়া গেলো।

২১ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জলপরীর জবান বন্ধ!
সোনা ভাইর বহুত কালা, ধলা,
লম্বা, খাটো, মোটা পাতলা, দেশী
বিদেশী নারীদের নিয়া কেলেঙ্কারির
কথা বলেছেন তার জবানীতে! তিনি
ভালো বলতে পারবেন জলপরী কি
কহিয়াছিলো!

২| ২১ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২২

সোনাগাজী বলেছেন:


সুন্দর বনে বরিশালের কাঠুরিয়া।

২১ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জলপরীকে জিজ্ঞাসা করতে হবে!
শুনালাম জলপরী সিলেটের পরে
চট্টগ্রাম যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে!

৩| ২১ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৩

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ভাল লাগল...

২১ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ।
খুশি হয়ে তাল গাছ
আপনাকেই দিলাম।

৪| ২২ শে জুন, ২০২২ রাত ১২:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: মজার ছিলো।

২২ শে জুন, ২০২২ রাত ১২:১৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ
মজা পাবার জন্য।

৫| ২২ শে জুন, ২০২২ ভোর ৪:৫৪

সোনাগাজী বলেছেন:



গল্পের নতুন সংস্করণটা দিলেই হতো।

২২ শে জুন, ২০২২ দুপুর ২:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আধুনিক আর নতুন এই শব্দ দুটির
মানে বুঝুন আগে! আমি দিয়েছি
আধুনিক সংস্করণ আপনি খুঁজছেন
নতুন সংস্করণ।

৬| ২২ শে জুন, ২০২২ সকাল ৯:৩৬

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

ঈশপ এটা পড়লে এখনো কোমায় থাকতো।

২২ শে জুন, ২০২২ দুপুর ২:৫৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কথা সত্য,
ঈশপ বাবু মইরা
বেঁচে গেছে।

৭| ২২ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৫৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: বাই দ্য ওয়ে, এটা ঈশপের গল্প না মনে হয়। এটা একটা রূপকথা। ঈশপের গল্প সাধারণত, পশু পাখিদের নিয়ে হত...

২২ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
যদি বলেন বিচার মানেন, তালগাছ আপনার তা হলে
বলার কিছু নাই। তবে এটা ঈশপেরই গল্প! আর
রকটু খোঁজ খবর নেন তা হলে বুঝবেন তালগাছটা
আসলে কার! ধন্যবাদ!

৮| ২২ শে জুন, ২০২২ রাত ৮:০০

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ২৪ ঘণ্টায়ও পোস্ট ২য় পাতায় যায়না। উস্তাদ দেখলাম প্রথম পাতা থেকে নিজের পোস্ট নিজে সরিয়ে দিয়েছেন। এখন আমি পোস্ট দিলে পোস্টের প্রতিযোগিতা শুরু হবে। পোস্ট কাল সকাল পর্যন্ত থাকবে মনে হচ্ছে প্রথম পাতায়।

২৩ শে জুন, ২০২২ রাত ১:১৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কে আসলো কে গেলো তা দেখার
উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি! হয়তো
এমনি করে একদিন বিরাণ হবে
সবুজ বন ভূমি!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.