নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বাংলা গানের কালজয়ী সুরস্রষ্টা, কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী ও সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। অবিস্মরণীয় সুরের আগুন যিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সমগ্র বাংলায়, বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে সমগ্র উপমহাদেশে । তিনি ছিলেন একজন খ্যাতিমান বাঙালি কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক এবং প্রযোজক। তিনি হিন্দি সঙ্গীত জগৎ এ তিনি হেমন্ত কুমার নামে প্রসিদ্ধ। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অসংখ্য গানের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু গান:
"পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মাগো, বলো কবে শীতল হবো"
"ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে"
"আয় খুকু আয়,আয় খুকু আয়"
"মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে"
"ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলোনা, ও বাতাস আঁখি মেলোনা"
"আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি,আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি"
"এই রাত তোমার আমার, ঐ চাঁদ তোমার আমার…শুধু দুজনে"
"মেঘ কালো, আঁধার কালো, আর কলঙ্ক যে কালো"
"রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে"
"আজ দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে"
"আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা,আর কতকাল আমি রব দিশাহারা"
"বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও,মনের মাঝেতে চিরদিন তাকে ডেকে নিও"
"আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ"
"কেন দূরে থাকো, শুধু আড়াল রাখো"
"ওলিরও কথা শুনে বকুল হাসে"....আজ এই খ্যাতিমান সঙ্গীত শিল্পীর একশত দুইতম জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। শিল্পীর জন্মদিনে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।
হেমন্ত মুখপাধ্যায় ১৯২০ সালের ১৬ জুন ভারতের বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছোটবেলা কাটে তিন ভাই এক বোন নীলিমার সাথে। বড় ভাই তারাজ্যোতি ছোটগল্প লিখতেন। ছোটভাই , অমল মুখপাধ্যায় কিছু বাংলা ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন এবং ১৯৬০ এর দশকে কিছু গান ও গেয়েছিলেন। হেমন্ত ভবানিপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ছিলেন। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। কিন্তু, তিনি সঙ্গীতের জন্য আপন শিক্ষা ত্যাগ করেন। সেখানেই তার বাল্যবন্ধু ও কবি সুভাষ মুখপাধ্যায়ের সাথে পরিচয়। প্রথমে তাঁর সাহিত্যিক হবার ইচ্ছে ছিল। কিছুদিন, তিনি দেশএর জন্যে লেখেনও। কিন্তু যাঁর হবার কথা সঙ্গীতশিল্পী, তিনি কি অন্য কোনো কাজে মন বসাতে পারেন! ১৯৩৩ সালে শৈলেশ দত্তগুপ্তের সহযোগিতায় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’র জন্য প্রথম গান ‘আমার গানেতে এল নবরূপী চিরন্তন’ রেকর্ড করেন হেমন্ত। কিন্তু গানটি সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। শেষতক ১৯৩৭ সাল থেকে তিনি পুরোপুরি প্রবেশ করেন সঙ্গীত জগতে। এই বছর তিনি নরেশ ভট্টাচার্যের কথা এবং শৈলেশ দত্তগুপ্তের সুরে গ্রামোফোন কোম্পানী কলম্বিয়ার জন্য ‘জানিতে যদিগো তুমি’ এবং ‘বলো গো তুমি মোরে’ গান দুটি রেকর্ড করেন। বাল্যবন্ধু কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাকে গান গাইবার জন্য ইডেন গার্ডেনের স্টুডিওতেও নিয়ে গিয়েছিলেন একবার। এরপর থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই তিনি ‘গ্রামোফোন কোম্পানী অফ ইন্ডিয়া’র জন্য গান রেকর্ড করেছেন। ১৯৪০ সালে, সঙ্গীত পরিচালক কমল দাসগুপ্ত, হেমন্তকে দিয়ে, ফাইয়াজ হাস্মির কথায়ে "কিতনা দুখ ভুলায়া তুমনে" ও "ও প্রীত নিভানেভালি" গাওয়ালেন।
১৯৪১ সালে এই শিল্পী তাঁর প্লে-ব্যাক সংগীত জীবন শুরু করেন ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবির মাধ্যমে। এরপর থেকেই তিনি ভারতীয় বাংলা সিনেমার একজন অপরিহার্য শিল্পী হিসেবে পরিগণিত হন। ফলে দর্শক-শ্রোতা একের পর এক কালজয়ী বাংলা গান উপহার পেয়েছেন। ১৯৪৪ সালে ‘ইরাদা’ ছবিতে প্লে-ব্যাক করে হিন্দী গানের শ্রোতাদেরকেও নিজের জাত চিনিয়েছিলেন হেমন্ত। একই বছরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রথম নিজের কম্পোজিশনে দুটো গান করেন। গান দুটির গীতিকার ছিলেন অমিয় বাগচী। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড বের করেছিলেন। তবে তিনি প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন ১৯৪৪ সালে ‘প্রিয় বান্ধবী’ সিনেমাতে। এছাড়াও কলম্বিয়ার লেবেলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড বের করেছিলেন তিনি। তবে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে হেমন্ত আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৪৭ সালে ‘অভিযাত্রী’ সিনেমার মাধ্যমে। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকেই হেমন্ত নিজেকে সম্ভাবনাময় শিল্পী এবং কম্পোজার হিসেবে সবার নজর কাড়েন। সেসময় তিনিই ছিলেন একমাত্র পুরুষ কণ্ঠশিল্পী যিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে কাজ করেছিলেন। ১৯৫৪ সালে বলিউডি সিনেমা ‘নাগিন’ এর সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি। এই ছবির গান সেসময় দুই বছর ধরে টপচার্টের শীর্ষে অবস্থান করেছিল এবং এই সিনেমার জন্যই হেমন্ত ১৯৫৫ সালে ‘ফিল্মফেয়ার বেস্ট মিউজিক ডিরেক্টর’ এর পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি বাংলা সিনেমা ‘শাপমোচন’ এর সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই ছবিতে তিনি উত্তম কুমারের জন্য চারটি গান করেছিলেন। তারপর থেকেই যেন উত্তম কুমারের ছবি মানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান। পরবর্তী সময়ে এই জুটি পেয়েছিল অসম্ভব জনপ্রিয়তা।
(বেলা মুখপাধ্যায়, গীতা দত্ত, হেমন্ত মুখপাধ্যায়, শ্রী অরূপ, স্বরোজ সেন গুপ্ত)
ব্যাক্তিগত জীবনে ১৯৪৫ সালে হেমন্ত মুখপাধ্যায়ের সাথে বেলা মুখপাধ্যায়ের বিবাহ হয়। ১৯৪৩-এ বাংলা ছায়াছবি, কাশিনাথে, সঙ্গীত পরিচালক পঙ্কজ মল্লিক বেলাকে দিয়ে কিছু জনপ্রিয় গান গাইয়েছিলেন, কিন্তু বিবাহের পর তিনি আর সঙ্গীত জগৎ এ প্রবেশ করলেন না। হেমন্তর দুই সন্তান - পুত্র, জয়ন্ত, ও কন্যা, রাণু। রাণু মুখপাধ্যায় ১৯৬০-৭০ এ গান গাইতেন। ‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে, আমি যদি আর নাই আসি হেথা ফিরে’ মৃত্যুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ঢাকায় এসে এই গানটি শুনিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথিতযশা এই শিল্পীর জীবনাবসান ঘটে। তবে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে যে এই শিল্পীর স্বরলিপি চিরদিনের জন্য খোদাই করা হয়ে গেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি কন্ঠশিল্পি, সঙ্গীত পরিচালক এবং প্রযোজক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের আজ একশত দুইতম জন্মবার্ষিকী। শিল্পীর জন্মদিনে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন পত্র পত্রিকা।
লেখাটি ২০২০ সালে শিল্পীর শততম জন্মবার্ষিকতে
সামুতে প্রকাশিত, আজ পুনঃপ্রকাশ।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৪:০৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দাদা, আমারতো তার সব গানই পছন্দের
রবীন্দ্র সংগীত অসাধারণ পরিবেশন করে
শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছেন, যা আজও
অব্যাহত আছে।
২| ১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৪:২২
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: বিনম্র সম্মান ও শ্রদ্ধা।
১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৩১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ
শিল্পীর জন্মদিনে
শুভেচ্ছা জানানোর
জন্য।
৩| ১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:১৯
সোনাগাজী বলেছেন:
বাংলার মানুষের অন্তরে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।
১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৩৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনি তার গান শুনেছেন?
আজ আপনার জীবনের একটি
স্মরণীয় দিন! প্রথম একটি সরল
সহজ মন্তব্য প্রদানের জন্য।
৪| ১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো শিল্পী।
১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৪৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
শুধুই ভালো?
৫| ১৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:১৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমার সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গীত শিল্পী হেমন্ত কুমার মুখারজি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই মহান শিল্পীর ভুমিকা আমরা হয়ত অনেকেই জানি না। সেই সময় আবিদুর রহমানের কথায় ও নিজের সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় রেকর্ড করেছিলেন দুটি গান। তার মধ্যে একটি ছিল ‘বাংলার দুর্জয় জনতা মুজিবের মন্ত্রের দীক্ষায় ঝঞ্জার বেগে আজ ছুটছে/সাত কোটি ধমনীতে রক্ত টগবগ টগবগ ফুটছে…’ এবং ‘অপরটি ছিল ‘হরিণের মত তার সুমধুর চোখ দুটি মেলে’। বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে এবং অর্থ সংগ্রহের অনেক আয়োজনে উনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ওনার গলাতেও গাওয়া হয়েছে ঐ সময়।
ওনার পুত্রবধূ হলেন জনপ্রিয় বাংলা এবং হিন্দি সিনেমার নায়িকা মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়। হেমন্ত ছোটবেলায় বেশ অর্থ কষ্টে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে অনেক মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতকে জনপ্রিয় করতে দুইজন সঙ্গীতজ্ঞের ভুমিকা বেশী। প্রথম জন হলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন হেমন্ত।
বিনয়ের সাথে বলতেন 'আমি ক্লাসিক্যাল জানি না’। কিন্তু এটা বিনয় ছাড়া আর কিছু না। ক্লাসিক্যালের রাস্তায় বেশীদিন না হাঁটলেও অনেক ক্লাসিক্যালের ওস্তাদ ওনার গানের প্রশংসা করেছেন অকুণ্ঠচিত্তে।
১৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:২২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সাড়ে চুয়াত্তর ভাই,
গুণি এই শিল্পীর জন্ম দিনে চমৎকার মন্তব্য করে
তাকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।
৬| ১৬ ই জুন, ২০২২ রাত ১১:৩০
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
পুরোনো রাস্তায় হাটছেন মনে হয়।
১৭ ই জুন, ২০২২ রাত ২:৫৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
পুরান নিয়েই থাকবো
নতুন রাস্তায় অনেক
খানা খন্দক!
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৫৫
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হেমন্তের কিছু কিছু গান সব সমই মনজুড়িয়ে দেয়, দিবে।