নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
দারুল উলুম দেওবন্দ ভারতের সাহারানপুরের দেওবন্দে অবস্থিত একটি মাদরাসা। স্বয়ং রাসুল আকরাম (সাঃ) যে মাদরাসার নির্মাণে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটারের পথ পশ্চিম উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ। ওই অঞ্চলের আখের খেতের বুক চিরে গেছে যে মহাসড়ক, সেটাই আপনাকে নিয়ে ফেলবে ধূলিধূসর এই জনপদে। যার এক প্রান্তে বিশাল ক্যাম্পাসজুড়ে দারুল উলুম মাদ্রাসা। এই মুহূর্তে বিশ্বের নানা দেশের প্রায় হাজার ছয়েক মুসলিম ছাত্র পড়াশোনা করছেন সেখানে। ভারতের তো বটেই, বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তান-মালয়েশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য কিংবা ব্রিটেন-আমেরিকা-দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও ছাত্ররা শিক্ষা নিতে আসেন এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থ হলো ও বাহাদুর শাহ জাফরকে গ্রেপ্তার করে রেঙ্গুনে নির্বাসিত করা হলো। ভারতীয় মুসলিমরা তখন ভাবলেন ক্ষমতা হাতছাড়া হলেও নিজেদের ধর্মীয় পরম্পরা তো রক্ষা করতে হবে।‘সেই ভাবনা থেকেই আজ থেকে ১৫৪ বছর আগে ১৮৬৬ সালের ৩১ মে দেওবন্দের ছত্তেওয়ালি মসজিদে মাত্র একজন ওস্তাদ ও একজন সাগরেদকে নিয়ে এই মাদ্রাসার জন্ম। ঘটনাচক্রে যাদের দুজনের নামই ছিল মেহমুদ!’ অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন মাওলানা রশীদ আহমেদ গাঙ্গুহী, মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবি ও হাজী সাইদ আবিদ হুসাইন। মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবি তাদের প্রধান ছিলেন। প্রতিষ্ঠাকালীন বিশেষ কোনো নাম নির্ধারণ করা হয়নি দারুল উলুম দেওবন্দের৷ লোকমূখে তখন মাদরাসাটি দেওবন্দ আরবী মাদরাসা নামে পরিচিত হয়ে এটিই মাদরাসার নাম হয়ে যায়। ১২৯৬ হিজরিতে তৎকালীন সদরুল মুদাররিসীন (প্রধান শিক্ষক) মাওলানা ইয়াকুব নানুতুবীর প্রস্তাবে মাদরাসার নামকরণ করা হয় ‘‘দারুল উলুম দেওবন্দ’’। সেদিনের সেই ছোট্ট মাদ্রাসাই আজ মহীরুহের মতো এক বিশাল প্রতিষ্ঠান যার স্বীকৃতি ও সম্মান গোটা ইসলামি বিশ্বজুড়ে। দেওবন্দে আরবি বিভাগে শেষ বর্ষের বাঙালি ছাত্র জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার সময় মূল ভাবনাটাই ছিল বিশ্বের মাজারে ইসলামি কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে তুলে ধরা- আর সে লক্ষ্যে আজও এই প্রতিষ্ঠান ১০০ ভাগ সফল!’ এই মাদ্রাসার ছাত্র পুরো পৃথিবীতে অবদান রেখেছেন। বর্তমানে দারুল উলুম দেওবন্দ ইতিহাসখ্যাত ও বিশ্বখ্যাত এক দীনি বিদ্যাপীঠের নাম। এই মাদ্রাসার ছাত্র পুরো পৃথিবীতে অবদান রাখছে। আজও হিন্দুস্তানসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে এখানকার ছাত্ররা, সারা দুনিয়া আকৃষ্ট হচ্ছে দেওবন্দের প্রতি।’
মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার ইতিহাসঃ দেওবন্দ ছিল মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবির শ্বশুরালয়। সেখানে গেলে তিনি সাত্তা মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। হাজী আবেদ হোসেন ছিলেন সাত্তা মসজিদের ইমাম। মাওলানা জুলফিকার আলী ও মাওলানা ফজলুর রহমান অত্র এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এসব ব্যক্তিবর্গ নামাযান্তে হাজী আবেদ হোসেনের হুজরায় প্রায় সমবেত হতেন। দেশের এহেন পরিস্থিতি তাদেরকেও ভাবিয়ে তুলেছিল ভীষণভাবে। তারা সবচেয়ে বেশি ভাবতেন ইসলামী শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে! কিন্তু বিকল্প কোন পথ কেউ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। দীর্ঘ ৬/৭ বছর এভাবে কেটে গেল। ১৮৬৬ সালে মাওলানা কাসেম নানুতুবী দেওবন্দের দেওয়ান মহল্লায় স্বীয় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। বাড়ি সংলগ্ন সাত্তা মসজিদের ইমাম হাজী আবিদ হোসানের সাথে মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হওয়ার পর সেখানেই একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করেন।
যেভাবে শুরু হয় মাদরাসা নির্মাণের কাজঃ
একদিন সাত্তা মসজিদের ইমাম হাজী আবেদ হোসেন ফজরের নামাজান্তে ইশরাকের নামাজের অপেক্ষায় মসজিদে মোরাকাবারত ছিলেন। হঠাৎ তিনি ধ্যানমগ্নতা ছেড়ে দিয়ে নিজের কাঁধে রুমালের চার কোণ একত্রিত করে একটি থলি বানালেন এবং তাতে নিজের পক্ষ থেকে তিন টাকা রাখলেন। অতঃপর তা নিয়ে তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন মাওলানা মাহতাব আলীর কাছে। তিনি সোৎসাহে ৬ টাকা দিলেন এবং দোয়া করলেন। মাওলানা ফজলুর রহমান দিলেন ১২ টাকা, হাজী ফজলুল হক দিলেন ৬ টাকা। সেখান থেকে উঠে তিনি গেলেন মাওলানা জুলফিকার আলীর নিকট। জ্ঞানানুরাগী এই ব্যক্তিটি দিলেন ১২ টাকা। সেখান থেকে উঠে এই দরবেশ সম্রাট “আবুল বারাকাত” মহল্লার দিকে রওয়ানা হলেন। এভাবে ২০০ টাকা জমা হয়ে গেল এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত জমা হল ৩০০ টাকা। এভাবে বিষয়টি লোকমুখে চর্চা হতে বেশ টাকা জমে যায়। জনগণের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে তিনি মিরাটে কর্মরত মাওলানা কাসেম নানুতুবির নিকট এই মর্মে পত্র লিখেন যে, আমরা মাদ্রাসার কাজ শুরু করে দিয়েছি আপনি অনতিবিলম্বে চলে আসুন। চিঠি পেয়ে নানুতুবী মোল্লা মাহমুদকে শিক্ষক নিযুক্ত করে পাঠিয়ে দিলেন এবং তার মাধ্যমে মাদ্রাসার কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে চিঠি লিখে দিলেন। এভাবেই গণচাঁদার উপর ভিত্তি করে ছোট্ট একটি ডালিম গাছের নিচে দেওবন্দ মাদ্রাসার গোড়াপত্তন হয়। মোল্লা মাহমুদ সর্বপ্রথম শিক্ষাদান করেন সর্বপ্রথম ছাত্র মাহমুদকে। যিনি পরবর্তীতে শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। দারুল উলুম দেওবন্দের পণ্ডিতদের একটি বড় অংশ ভারত ভাগ করে দুই রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরোধিতা করেন। মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানি পাকিস্তান ধারণার বিরোধিতাকারী পণ্ডিতদের অন্যতম ছিলেন। এ সময় তিনি মাদরাসার শায়খুল হাদিস হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং আলেমদের সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নেতৃত্ব দেন।
বিশ্বের বহু দেশের মুসলিমরাই তাদের ধর্মীয় পথনির্দেশনার জন্য তাকিয়ে থাকেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের দিকে। বাংলাদেশে প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করে থাকে যে তাবলিগ জামাত, তারাও এই দেওবন্দের অনুসারী বলেই পরিচিত। বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামের প্রধান আহমেদ শফি কিংবা প্রবাদপ্রতিম রাজনীতিবিদ মরহুম মৌলানা ভাসানিও পড়াশুনো করেছিলেন এই দেওবন্দেই। ভারতেও বদরুদ্দিন আজমল বা মাহমুদ মাদানির মতো রাজনীতিবিদ, কিংবা মালয়েশিয়া-পাকিস্তানের মতো দেশেও অনেক ইসলামি নেতার শিক্ষাদিক্ষা এই প্রতিষ্ঠানেই। কাজেই দেওবন্দের আকর্ষণ যে আন্তর্জাতিক, তা বলার কোনও অপেক্ষা রাখে না। জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত দেওবন্দ কখনো এক পয়সা সরকারি বা রাষ্ট্রীয় সাহায্য নেয়নিÑ ফিরিয়ে দিয়েছে রাজা বাদশাহদের অনুদানও। দারুল উলুমের প্রতিষ্ঠাতাদের বিধান ছিল সে রকমই। ফলে আজও এই প্রতিষ্ঠান চলে পুরোপুরি সাধারণ মানুষের দানে আর তাদেরই সাহায্যের ভরসায়। বলা হয়ে থাকে, যে পরিবার দেওবন্দকে সামান্য এক মুঠো চালও দিয়েছে - তাদের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক রয়ে যায় বংশপরম্পরায়, নাড়ির টান থেকে যায় আজীবন। আর সে কারণেই দেশভাগের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূগোল হয়তো বদলে গেছে - কিন্তু বাংলাদেশ বা পাকিস্তান বা ভারতের মুসলিমদের সঙ্গেও দেওবন্দের ইতিহাসের টান আজও অটুট আছে। দেশভাগের এত বছর পরও বাংলাদেশ-পাকিস্তানেরও বহু মুসলিম ধর্মীয় বিষযয়ে দেওবন্দের ব্যাখ্যার ওপরই ভরসা রাখেন।
সূত্রঃ
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম ফেসবুক-১ ফেসবুক-২
[email protected]
২| ০১ লা জুন, ২০২১ রাত ১২:০৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভারতের মুসলমানদের বস্তিবাসী করার কারখানা!
৩| ০১ লা জুন, ২০২১ রাত ১২:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: হ্যাঁ আমি এই মাদ্রাসা সম্পর্কে জানি।
আপনার সব তথ্য সঠিক।
৪| ০১ লা জুন, ২০২১ রাত ১২:৫৯
কামাল১৮ বলেছেন: অনেক জংঙ্গী এখান থেকে তৈরী হয়েছে।।
৫| ০১ লা জুন, ২০২১ রাত ৯:৪১
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই উপমহাদেশের জন্য দেওবন্দ একটা শক্ত খুঁটি। আধ্যাত্মিক উন্নয়নের ধারাকে এরা অব্যাহত রেখেছে। কিছু নির্লোভ সূফীবাদী মানুষের চেষ্টায় এটা গড়ে উঠেছে। আপনার লেখা থেকে অনেক কিছু জানলাম।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে মে, ২০২১ রাত ১১:৪১
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: তথ্য বহুল গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। দ্বীন ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা দান ও প্রাপ্তি ঘটে থাকে এই ঘরানার মাদ্রাসা থেকে
।
সুন্দর +