নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
২৩ মে, ২০১৮ইং বাংলা ভাষার সংবাদপত্রের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। ১৮১৮ সালের এই দিনে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর মিশনারি কেন্দ্র থেকে প্রথম বাংলা সংবাদপত্র সমাচার দর্পণ .আমাদের বাংলা ভাষায় সংবাদপত্রের প্রচলন হয়েছিল সমাচার দর্পণ এর হাতে ধরে, আজ থেকে ঠিক ২০৩ বছরে আগে, ১৮১৮ সালে। তবে এর আগে ১৮১৮ সালের এপ্রিল মাসে “দিগদর্শন” প্রকাশিত হয়। এটিকে অনেকেই প্রথম বাংলা সংবাদপত্র বলে মনে করলেও এটি প্রথম বাংলা সংবাদপত্র নয়। এটি ছিল একটি সাময়িকী পত্র। প্রথম বাংলা সংবাদপত্র হচ্ছে “সমাচার দর্পণ” যা ১৮১৮ সালের ২৩ মে অর্থাৎ আজকের দিনেই প্রকাশিত হয়, ঠিক ২০৩ বছর আগে!। পত্রিকাটি ছিল সাপ্তাহিক। পত্রিকাটি যথেষ্ট মানসম্পন্নভাবে প্রকাশে তাঁরা ছিলেন সচেষ্ট। প্রকাশক-পরিচালকরা নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেন। যেমন, ফারসি সংস্করণ প্রকাশ, দ্বিভাষিক অর্থাৎ বাংলা ও ইংরেজি রূপে প্রকাশ, বুধ ও শনি – সপ্তাহে দু দিন প্রকাশ ইত্যাদি। ফারসি সংস্করণটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি এবং বুধবারের সংখ্যাটিও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। সামাচার দর্পণে প্রকাশিত হতো দেশ-বিদেশের নানা খবর, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প, আইন, নতুন আবিষ্কার, বই-বিবরণ, ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস ইত্যাদি নানা বিষয়। পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশের পর প্রথম তিন সপ্তাহ পত্রিকাটি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি মাসে দেড় টাকা। ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই জুলাই থেকে 'সমাচার দর্পণ' ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হতে থাকে। কলকাতা শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে এই সংবাদপত্রটি প্রকাশিত হয়। এটি ছিল একটি সাপ্তাহিক প্রত্রিকা যা প্রতি শনিবার করে প্রকাশিত হতো। জন ক্লার্ক মার্শম্যান এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন। এছাড়াও বিভিন্ন খ্যাতিমান বাঙালি পণ্ডিতগণ এই সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন। কথিত আছে, তাদের অনুপস্থিতিতে নতুন কোনো সংবাদ এই পত্রিকায় ছাপা হতো না। শ্রীরামপুর খ্রিস্টান মিশনের সহযোগিতায় ও অর্থায়নে প্রকাশিত হলেও এতে কোনো ধর্মীয় বিভেদের দেখা মেলেনি, ছিলো না কোনো ধরণের ধর্মীয় গোঁড়ামিও। হিন্দু- মুসলিম নির্বিশেষে সকলের খবরকেই এই পত্রিকায় সমান প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশ করা হতো। অন্যদিকে এ পত্রিকায় সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সংবাদ, সরকারি বিজ্ঞপ্তি, ব্রিটেনের খবর, ইউরোপ এর বিভিন্ন সংবাদ, সাহিত্য ও সমাজের নানা চলতি বিষয় এবং সেই সাথে ভারত ও বাংলার ইতিহাস- ঐতিহ্যের খবর তুলে ধরা হতো। প্রথম সংবাদপত্র হলেও ধীরে ধীরে এটি সমাজের সকলের কাছে সমাদৃত হতে শুরু করে। তাই পণ্ডিতগণ এই পত্রিকাকে সপ্তাহে দুইবার করে বের করার প্রয়োজন অনুভব করেন। ১৮৩২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে বুধবার ও শনিবার দুই দিন করে এটি প্রকাশিত হয়। এদিকে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটায় ১৮২৯ সাল থেকে এটিকে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় ছাপা হয়। সম্ভবত ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে, দেশীয় লোকদের ইংরেজি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ জন্মে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লিখিত তথ্যাদির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে, ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই জানুয়ারি থেকে পত্রিকাটি শনিবার ছাড়াও প্রতি বুধবারও প্রকাশিত হতে থাকে। এই সময় পত্রিকার দাম ধার্য হয় মাসিক দেড় টাকা। পত্রিকাটি ধর্মীয় বির্তকে না জড়িয়ে খ্রিস্টান মতবাদের প্রতি পক্ষপাত দেখাত। এই পত্রিকাটি প্রকাশের সময়ে মিশনারিদের মধ্যে মতভেদ হয়েছিল। বিশেষ করে উইলিয়াম কেরি পত্রিকা প্রকাশ করে সরকারের বিরাগভাজন হতে চান নি। পরে স্থির হয় যে, প্রথম সংখ্যাটির ইংরাজি অনুবাদ-সহ একখানি কপি সরকারকে পাঠান হবে এবং অনুমতি পেলে তবেই পত্রিকা প্রকাশ চালিয়ে যাওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে মার্শম্যান, ভাইস প্রেসিডেন্ট এডমনস্টোন, চিফ সেক্রেটারি ও গভর্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস-এদের প্রত্যেককে অনুবাদ-সহ পত্রিকার প্রথম সংখ্যা পৌঁছে দেবার জন্য কলকাতায় রওনা হন। লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস স্বহস্তে চিঠি লিখে মার্শম্যানকে এদেশে জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর সঙ্কল্পে পত্রিকা প্রকাশের জন্য প্রশংসা করেন। এরপরে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।পরবর্তীকালে এই পত্রিকাটি সপ্তাহে দুবার করে প্রকাশিত হতে থাকে। জয়গোপাল তর্কালঙ্কার বাংলা সংবাদ রচনা ও সঙ্কলনে সম্পাদকের সহায়ক ছিলেন বলে তা উন্নতমানের সংবাদপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল। সংবাদ, ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক বিষয়াদির বিবরণ এই পত্রিকায় স্থান পেত। সে আমলে প্রগতিশীল পত্রিকা হিসেবে এর বিশেষ গুরুত্ব ছিল। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পত্রিকাটি অস্তিত্ব রক্ষা করেছিল। তবে পরেও কয়েকবার এই পত্রিকা পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিল। সমাচার দর্পণের মত সাময়িকপত্রের মধ্যে দিয়ে শিক্ষিত বাঙালি প্রথম গদ্যরচনার রস গ্রহণ করতে শেখে। তখনকার বাংলা সাহিত্য বলতে সবই পদ্য রচনা ছিল। সমাচারদর্পনের প্রকাশ হবার ফলে পাঠকের সংখ্যা বাড়তে লাগল এবং আরো সাময়িকপত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেল। এর ফলে বাংলা গদ্য সাহিত্যের ভবিষ্যৎ উন্নতির পথও খুলে গেল। সমাচার দর্পণ পত্রিকার সাবলীল ভাষায় সংবাদ প্রকাশের দক্ষতা এবং এর জনপ্রিয়তা দেখে প্রকাশিত হতে থাকে একের পর এক বাংলা পত্রিকা। এদের মধ্যে প্রধান ছিল সংবাদকৌমুদী (১৮২১) এবং সমাচারচন্দ্রিকা (১৮২২)। যাঁরা বাংলা ভাষা জানতেন না, তাদের জন্য একটি ফার্সি সংস্করণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই মে থেকে এই ফার্সি সংস্করণ প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়, তবে এটি দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় নি।
(জন ক্লার্ক মার্শম্যান)
পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান। তবে তিনি ছিলেন নামেমাত্র সম্পাদক। বাঙালি পণ্ডিতরাই আসলে সমাচারদর্পণ সম্পাদনা করতেন। জয়গোপাল তর্কালঙ্কার বাংলা সংবাদ রচনা ও সঙ্কলনে সম্পাদকের সহায়ক ছিলেন বলে তা উন্নতমানের সংবাদপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল। শুরুর দিকে সম্পাদকীয় বিভাগে ছিলেন পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার। ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি ওই কলেজে কাব্যের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর এই পত্রিকার সম্পাদনার সহযোগী হিসেবে যোগদান করেছিলেন পণ্ডিত তারিণীচরণ শিরোমণি। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে তারিণীচরণের মৃত্যু হয়। এরপর পত্রিকাটির সম্পাদনায় সহযোগিতা কে করেছিলেন, তা জানা যায় না। নব পর্যায়ের সাপ্তাহিক 'সমাচার দর্পণ' প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই নভেম্বর শনিবার। ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জুলাই, জন ক্লার্ক মার্শম্যান-এর উপর 'গবর্মেন্ট গেজেট' নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এই কাজের জন্য মার্শম্যান ‘সমাচার দর্পণ’ থেকে পদত্যাগ করেন। উপযুক্ত সম্পাদক না পাওয়ায়, ‘সমাচার দর্পণ’- সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এই পর্যায়ে এর শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৮৪১ সালের ২৫শে ডিসেম্বর। ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে, রামগোপাল ঘোষ ও তাঁর কয়েকজন বন্ধুর চেষ্টায় পত্রিকাটি পুনরায় প্রকাশিত হয় ইংরিজি ও বাংলা ভাষায়। ইংরিজি ও বাংলা উভয় ভাষার সংস্করণের সম্পাদক ছিলেন ভগবতীচরণ চট্টোপাধ্যায়। এই পর্যায়ের ‘সমাচার দর্পণ’ ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাস সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল। এরপরে শ্রীরামপুর মিশন পত্রিকাটি পুনরায় প্রকাশ করবার ব্যবস্থা করে। এই পর্যায়ে ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মে, শনিবার থেকে এর প্রকাশনা শুরু হয়। বছর দেড়েক এটি চলেছিল। পরে ১৮৪১ সালের ২৫ ডিসেম্বর পত্রিকাটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে এই পত্রিকাটির অত্যন্ত গুরুত্ববহ। উনবিংশ শতকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নবজাগরণে সমাচার দর্পণের যথেষ্ট অবদান ছিল।কারণ “সমাচার দর্পণ” পত্রিকাটি সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চার একটি নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছিল। এর মাধ্যমে বাংলায় প্রথম সংবাদপত্রের সূচনা হয়। নিত্যদিনের নানা ঘটনার পাশাপাশি নানা তথ্য, বিনোদন মাধ্যম, জ্ঞানচর্চা প্রভৃতির মাধ্যম ও বাহক হিসেবে মানুষ সংবাদপত্রকে বেছে নেয়া শুরু করে। সেই সাথে নতুন নতুন সব সংবাদপত্রের দেখা মেলে।
সূত্রঃ gkplanet
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম ফেসবুক-১ ফেসবুক-২
[email protected]
২৩ শে মে, ২০২১ রাত ১০:৪৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
খানসাব এই কারেনেই আমি আপনাকে
পছন্দ করি! গর্বেজ হোক দামী হোক,
হীরে হোক বা কাঁচ হোক সব কিছুই
আপনার কাছে সমান গুরুত্বপূণ।! অন্যন্যা
ব্লগারা যখন ক্যাচাল পোষ্টে নরক
গুলজার করছে তখন আপনি আমার
এ পোষ্টটিও আপনার মন্তব্য থেকে
বঞ্চিত হয় নি।
সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন নেওয়া এখন
খুব কঠিন। চাহেনতো একটা সংবাদপত্র
কিনে নিতে পারেন।
২| ২৩ শে মে, ২০২১ বিকাল ৪:৫৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
টিকার কি হলো, কতটুকু হলো?
২৩ শে মে, ২০২১ রাত ১০:৪৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গাজীসাব অপ্রসাঙ্গিক মন্তব্য
আপনার গ্রহণযোগ্যতাকে
হ্রাস করে দিচ্ছে! । আপনার
কাছ থেকে দ্বায়িত্বশীল আচরণ
প্রত্যাশা করি।
৩| ২৩ শে মে, ২০২১ রাত ১০:২৮
মা.হাসান বলেছেন: মাসে দেড় টাকা ২০০ বছর আগে অনেক বড় ছিলো।
সরকার বিরোধি লেখার কারণে ঐ সময়ে একটা পত্রিকা নিয়ে কিছু মামলা চলেছিলো, সমাচার দর্পন কি না মনে নেই। সাংবাদিকদের মাঝে নীতিবানরা এখনো নিগৃহিত।
২৩ শে মে, ২০২১ রাত ১০:৫৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অবশ্যই ২০০ বছর আগের দেড় টাকা
অবশ্যই আজকের দিনে বেশ বড় অংক!
সৎ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিকরা এখন এ
পেশা পরিত্যাগ করছেন বিভিন্ন কারনে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে মে, ২০২১ বিকাল ৪:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: আমার একটা সংবাদপত্র প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে।