নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
আজ ২২শে রমজান ১৪৪২ হিজরী, ৫ মে ২০২১ ইং বুধবার। রমজানের তৃতীয় দশক অর্থাৎ নাজাতের দশকের ২য় দিবস। মাহে রমজান অফুরন্ত রহমত, বরকত, কল্যাণ ও মঙ্গল পূর্ণ মাস। মাহে রমজানে যেসব আমল দ্বারা বান্দা আল্লাহর নৈকট্যলাভে ধন্য হয়, তার মধ্যে সদকাতুল ফিতর আদায় করা অন্যতম। পবিত্র মাহে রামাদানে সদকাতুল ফিতর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই সদকার কেন্দ্র পবিত্র ঈদুল ফিতর। সহজ কথায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের সাথে সম্পৃক্ত বলেই এটাকে ‘সদকাতুল ফিতর’ বলা হয়। সুরা আ‘লার ১৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘সেই-ই সফলতা লাভ করেছে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে।’ হজরত কাতাদাহ (রহ.) এই আয়াতের ‘তাঝাক্কা’ তথা ‘পরিশুদ্ধ হওয়া’ শব্দ দ্বারা ‘সদকায়ে ফিতর’কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে বলে মত ব্যক্ত করেছেন। কেননা হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম সদকাতুল ফিতরকে ওয়াজিব করেছেন। যাতে করে রোজাদারদের রোজার যাবতীয় ভুলত্রুটি পরিশুদ্ধ করা যায় এবং গরিব লোকেরা আহারাদি পায়’ (মিশকাত ১৬০ পৃষ্ঠা)। ফিতরা বা সদকাতুল ফিতর হলো সেই নির্ধারিত সদকা, যা ঈদের নামাজের আগে প্রদান করতে হয়। একে জাকাতুল ফিতরও বলা হয়।আমাদের এ অঞ্চলে তা ‘ফিতরা’ নামে পরিচিত। সদকায়ে ফিতর এমন এক সদকা যা রমজানুল মোবারকের রোজা শেষ হবার পর ওয়াজিব হয়ে যায়। সদকাতুল ফিতর সর্ম্পকে হাদীসে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা দুইজন ব্যক্তির মাঝে এক সা’ গম কিংবা এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ যব আদায় করে দাও। এই বিধানটি প্রত্যেকটি গোলাম, স্বাধীন, ছোট ও বড় ব্যক্তির ওপর ফরয।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং : ২৩৬৬৩) হজরত রাসূলে কারিম (সাঃ) তা আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন এবং এর নিয়ম-নীতি শিক্ষা দিয়েছেন। এ কারণেই হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পবিত্র যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ ইসলামের অন্যান্য মৌলিক আমল ও ইবাদতের ন্যায় সদকাতুল ফিতরও নিয়মিত আদায় করে আসছে। ঈদের দিন সকালবেলায় যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বাহান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের ব্যবসাপণ্যের) মালিক থাকবেন, তাঁর নিজের ও পরিবারের ছোট–বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তাঁর প্রতি ওয়াজিব। রুপার হিসাবে বর্তমান বাজারমূল্যে এটি ৫০ হাজার টাকা প্রায়। এ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা নির্ধারণ করেছে। গত বছর ফিতরার এ হার ছিল সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা ও সর্বোচ্চ এক হাজার ৯৮০ টাকা। নিম্নে সদকাতুল ফিতরের ১০ টি মাসয়ালা উল্লেখ করা হলোঃ
১। সদকায়ে ফিতরের নিসাব যাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ। অর্থাৎ কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে।যাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল ক্বাদির ২/২৮১)
২। সদকায়ে ফিতর আদায় করার পদ্ধতি হলোঃ গম বা আটা দ্বারা আদায় করলে অর্ধেক সা’ অর্থাৎ পৌনে দুই সের দিতে হবে। আর খেজুর, যব কিংবা কিসমিস দ্বারা দিতে চাইলে পূর্ণ এক সা’ অর্থাৎ সাড়ে তিন সেরের চেয়ে কিছু বেশি দ্বারা আদায় করতে হবে অথবা এর মূল্য দিতে হবে। (রুদ্দুল মুহতার ৩/৩২২)
৩। সদকায়ে ফিতর আদায় করার পর ঈদের দিন যদি মূল্যমান বেড়ে যায় তাহলে ঐ অতিরিক্ত মূল্যও আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৪/৩৯২ )
৪। ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর বা ফেতরা আদায় করা উত্তম। তবে সেই সময়ের আগেও অর্থাৎ রমজানেও আদায় করা যেতে পারে। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে ফিতরা আদায় করা মুস্তাহাব। তবে পরে আদায় করলেও তা আদায় হবে। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: ১৪/৩৮৩ )
৫। সদকায়ে ফিতর আদায় করার সময় স্থানের ভিন্নতার কারণে মূল্য পার্থক্য ধর্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।বরঞ্চ যেই জায়গায় সদকায়ে ফিতর আদায় করবে সেখানকার মূল্য ধর্তব্য হবে। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: ১৪/৩৭৪)
৬। সদকায়ে ফিতর নিজের পক্ষ থেকে আদায় করা এবং পিতা হলে তার নিজ নাবালক সন্তানের পক্ষ থেকে আদায় করে দেওয়া ওয়াজিব।সাবালক সন্তান, স্ত্রী, চাকর-চাকরাণী, মাতা-পিতার পক্ষ থেকে দেওয়া ওয়াজিব নয়। হ্যাঁ, সাবালক সন্তান পাগল হলে তার পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজিব। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৪/৩৯৭)
৭। নিছফে সা’ এর পরিমাণঃ সদকায়ে ফিতর যদি গম দ্বারা আদায় করা হয় তাহলে জন প্রতি ‘নিছফে সা’ গম দিতে হয়। আর নিছফে সা’ এর পরিমাণ- এক সের ৬০ তোলা, যা ইংরেজি মাপ অনুযায়ী ১ কেজি ৬৬৩ গ্রাম। অর্থাৎ প্রায় পৌনে দুই কেজি। (ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ ৬/৩০৪)
৮। বিবাহিতা ছোট মেয়ে নিজে সম্পদশালী হলে সদকায়ে ফিতর তার সম্পদ থেকে আদায় করবে। আর যদি সম্পদশালী না হয় তাহলে ছেলে পক্ষ উঠিয়ে না নিলে নিজ পিতার ওপর ওয়াজিব হবে। আর উঠিয়ে নিলে কারও ওপর ওয়াজিব হবে না। (ফাতাওয়া আলমগিরি, ১/১৮২)
৯। রমজানের শেষ দিনেও যে নবজাতক দুনিয়ায় এসেছে কিংবা কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া আলমগিরি, ১/১৯২)
১০। কেউ ফেতরা আদায় না করে মৃত্যুবরণ করলে তার পক্ষ থেকে তার উত্তরাধিকারী ফেতরা দিলেও আদায় হয়ে যাবে। (রুদ্দুল মুহতার , ২/১০৬)
ইসলামের প্রতিটি বিধানের পেছনে মহান উদ্দেশ্য রয়েছে। তেমনিভাবে সদকাতুল ফিতর আদায়ের মধ্যেও ইহজাগতিক ও পারলৌকিক উভয় কল্যাণ নিহিত। এটি অনেকটা আধুনিক যুগের রিফাইনিং মেশিনের মত। যেটির মাধ্যমে পণ্যকে পরিশুদ্ধ করা হয়। অলিদের সর্দার হিসেবে খ্যাত হজরত আবদুল কাদের জিলানি রহ. রচিত বিশ্ববিখ্যাত কিতাব ‘গুনিয়াতুত ত্বালেবিন’র মধ্যে উলেখ রয়েছে, ‘রমজানের রোজার জন্য সদকাতুল ফিতর হচ্ছে নামাজের সাহু সিজদার ন্যায়। সাহু সিজদার মাধ্যমে যেমন নামাজের ত্রুটি সংশোধন করা হয় তেমনি রোজার যাবতীয় ত্রুটিকে সংশোধন করার মাধ্যম হচ্ছে সদকাতুল ফিতর’।
শুধু তাই নয়, সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে হতদরিদ্রের মাঝে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। সম্বলহীনরা পায় একটু সহানুভুতি। কিছুটা হলেও কেটে উঠে অভাবগ্রস্তদের অভাব। খুশির ঈদে ধনী-গরিব সবার মাঝে খুশি ছড়িয়ে পড়ে। নবীজির হাদিসেও সদকাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য হিসেবে ইরশাদ হয়েছে, ‘গরিব লোকেরা যেন আহারাদি পায়’ (মিশকাত)। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা (নিয়ামতের) কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তোমাদেরকে আরো বৃদ্ধি করে দেয়া হবে৷ আর যদি অস্বীকার করো, নিশ্চয় আমার আজাব অত্যন্ত কঠিন’ (সুরা ইবরাহীম, আয়াত-৭)। ইসলাম চিরসুন্দর। ইসলামের এ সৌন্দর্য চির আধুনিক। সদকাতুল ফিতর এ সৌন্দর্যের একটি অংশ। যেটি একাধারে ঘটে যাওয়া ভুলের সংশোধন ও অভাবগ্রস্ত হতদরিদ্রের মাঝে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। চলুন, যথাযথভাবে ইসলামী অনুশাসন মেনে সদকাতুল ফিতর আদায় করি। তা আদায়ে কোনো প্রকার কার্পণ্য যেন আমাদের স্পর্শ না-করে। আল্লাহই উত্তম প্রতিদানদাতা।
সূত্রঃ পুনঃপ্রকাশ
মাহে রমজানের আগের পর্বঃ
১। খোশ আমদেদ মাহে রমজা্ন- ১ম পর্ব
২। খোশ আমদেদ মাহে রমজান- দ্বিতীয় পর্বঃ
৩। খোশ আমদেদ মাহে রমজান- তৃতীয় পর্বঃ
৪। খোশ আমদেদ মাহে রমজান- ৪র্থ পর্বঃ
৫। খোশ আমদেদ মাহে রমজান- ৫ম পর্বঃ
৬। খোশ আমদেদ মাহে রমজান- ৬ষ্ঠ পর্বঃ
৭। খোশ আমদেদ মাহে রমজান-৭ম পর্বঃ
৮। খেশ আমদেদ মাহে রমজান-৮ম পর্বঃ
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম ফেসবুক-১ ফেসবুক-২
[email protected]
০৫ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:৪২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ রবিন হুড
লেখাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে
সুন্দর মন্তব্য প্রদানের জন্য।
২| ০৫ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: মুরুব্বী ঈদ কি ঢাকায় করেন না গ্রামে?
০৫ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:৪৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জামাই তোমরাতো আগামী ১৬ তারিখ পর্যন্ত
লকডাউন দিয়ে রেখেছো !! ইচ্ছা থাকলেও হয়তো
যাওয়া হবেনা ঢাকা ছেড়ে। তাই ঢাকাতেই আছি।
বাসার সবাইকে পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই মে, ২০২১ সকাল ৯:৫৯
রবিন.হুড বলেছেন: সদকাতুল ফিতরা ও যাকাত নিয়মিত আদায় করলে দারিদ্রতা হ্রাস পায় এবং সম্পদ পবিত্র হয়।