নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহিমান্বিত মুক্তির পূণ্যময় রজনী ও দোয়া কবুলের রাতঃ আজ পবিত্র লাইলাতুল বরাত বা শব-ই-বরাত

২৯ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৩০


আজ ১৪ শাবান ১৪৪২ হিজরী, ২৯ মার্চ ২০২১ খ্রীষ্টাব্দ, ১৫ চৈত্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, সোমবার। আজ দিবসের সূর্য অস্ত গেলেই এক অপার্থিব পবিত্রতায় আবৃত রজনীর আবির্ভাব ঘটবে মহিমান্বিত মুক্তির পূণ্যময় রজনী ও দোয়া কবুলের রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত বা শব-ই-বরাত এবং আগামী শুক্রবার সূর্যোদয় অবধি এ রাতের মহিমাময় ফজিলত অব্যবহত থাকবে। পবিত্র শবে বরাতের বরকতময় রজনীকে কেন্দ্র করে সাত প্রকারের আমল করার ব্যাপারে আলেমরা উৎসাহ প্রদান করেছেন- (১) বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। (২) বেশি করে পবিত্র কুরআন শরিফ তিলাওয়াত করা। (৩) বেশি বেশি ইস্তিগফার করা অর্থাৎ গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। (৪) বেশি বেশি দান ছাদকা করা। (৫) কবর জিয়ারত করা (৬) মৃত ব্যক্তিদের কবরে ছাওয়াব পাঠানোর ব্যবস্থা করা। (৭) পরের দিন অর্থাৎ ১৫ শাবান রোজা রাখা। এ রাতে নফল নামাজের ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। যত রাকাত ইচ্ছা এবং যেকোনো সূরা দিয়ে অন্যান্য নামাজের মতোই পড়া যাবে।করোনা মহামারির কারণে গত বছর মসজিদে না গিয়ে মুসল্লিদের ঘরে বসে ইবাদত করার আহ্বান জানিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে এবার এমন কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। তাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে দেশ ও দেশের জনগণকে করোনার ছোবল থেকে রক্ষা করা। আর এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তবে পবিত্র শবে বরাত উদযাপন উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মাহিমান্বিত এ রাতে মহান আল্লাহর কাছে পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিস্কৃতি লাভের পরম সৌভাগ্যের রজনী শব-ই-বরাত বা মুক্তির রাত। মধ্য-শাবান হচ্ছে আরবী শা'বান মাসের ১৫ তারিখ, যা ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে শবে বরাত বা শব-ই-বরাত নামে পালিত একটি পূণ্যময় রাত। ‘শব-ই-বরাত’ দু’টি শব্দের সমষ্টি। প্রথম শব্দটি ‘শব’ ফারসি শব্দ, যার অর্থ রাত রজনী। দ্বিতীয় শব্দটি ‘বরাত’ আরবি শব্দ, যার অর্থ মুক্তি। এভাবে শব-ই-বরাত অর্থ মুক্তির রাত। বাংলা ভাষায় বরাত শব্দটি ব্যবহৃত ও প্রচলিত যার অর্থ ভাগ্য, অদৃষ্ট। এ ক্ষেত্রে শব-ই-বরাত অর্থ হবে ভাগ্যরজনী। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মুসলমানগণ বিভিন্ন কারণে এটি পালন করেন। তবে এক এক দেশে এই মহিমান্বিত রজনীর নাম আলাদা আলাদা। ইরান ও আফগানিস্তানে শবে বরাত নিসফে শাবান, মালয় ভাষাভাষীর কাছে নিসফু শাবান এবং আরবী ভাষাভাষীর কাছে এই বরকতময় রজনী নিসফ শাবান নামে পরিচিত। কোনো কোনো অঞ্চলে লাইলাতুল দোয়াও বলা হয়। আমাদের দেশে এই রাত ‘শবেবরাত’এবং লাইলাতুল বরাত নামে পরিচিত। হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, (হযরত মুহাম্মদ ইবনে মাইসারা ইবনে আখফাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে) তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, শাবান মাস থেকে পরবর্তী শাবান মাস পর্যন্ত মৃত্যুর ফায়সালা করে দেয়া হয়। এমনকি লোকেরা যে বিবাহ করবে, সেই বছর তার থেকে কত জন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তার তালিকা এবং তার মৃত্যুর তালিকাও প্রস্তুত করা হয় ওই বছরের অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শবেবরাতে।

হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, (হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত) তিনি বলেন, "সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন,কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত) হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-যারা ১৪ শাবান রজনীতে ইবাদত করবে তাদের জন্য মুক্তি। আর যে ব্যক্তি পরদিন রোজা পালন করবে, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না।’ পবিত্র এ রজনীতে ফজিলত ও ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম। নবী করিম (স) স্বয়ং এ রাতের অর্ধেক সিজদার মাধ্যমে অতিবাহিত করতেন। হাদিস শরীফে এ সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ) এসে নবী করিম (সঃ)-কে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি উঠুন, নামাজ পড়ুন এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। কারণ এটি ১৪ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য একশ’টি রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেন। আপনি আপনার উম্মতদের জন্য দোয়া করুন। কিন্তু মাদকাসক্ত, নেশাখোর, সুদখোর, জাদুকর, গণক, কৃপণ, পিতা মাতার অবাধ্য ও দুঃখদানকারী, জেনাকারী ও হিংসা বিদ্বেষকারীদের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করবেন নাকারন এদের জন্য আল্লাহর শাস্তি নির্ধারিত আছে, এসব লোক তওবা করে নিজ নিজ বদ কার্যাবলি পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত এ রাতে ক্ষমা করবেন না।

কুরআন কারিমে শব-ই-বরাত সম্পর্কিত স্পষ্ট কোনো আয়াত পাওয়া যায় না গেলেও আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রাতে হেকমতপূর্ণ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত করা হয়।’ (সুরা দুখান, আয়াত ২-৩) কোরআনের ব্যাখ্যাকারদের অনেকে আয়াতে উল্লিখিত ‘লাইল’ থেকে শবেকদর উদ্দেশ্য বললেও কয়েকজন ব্যাখ্যাকার এর অর্থ শবেবরাত বলেছেন। রাসূল (সাঃ) হাদিসে এবং প্রখ্যাত আলেম-ওলামা ও তাফসীরকারীগণ শবেবরাতের বহু তাৎপর্য এবং এই রাতের মহিমার কথা উল্লেখ করেছেন। এই রাত সম্পর্কে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এরশাদ করেছেন, এই রাতে ইবাদতকারীদের গুনাহরাশি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন। তবে কেবলমাত্র তারা ক্ষমার অযোগ্য যারা আল্লাহর সাথে শিরিককারী, সুদখোর, গণক, যাদুকর, কৃপণ, শরাবী (মদ্যপানকারী), জিনাকারী এবং পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারী। অপর এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ‘জিব্রাইল (আঃ) আমাকে বলেছেন, আপনি আপনার উম্মতদের জানিয়ে দিন, তারা যেন শবেবরাত রাতকে জীবিত রাখে।’ অর্থাৎ তারা যেন ইবাদতের মাঝে কাটিয়ে দেয়। রাসূল (সঃ.) আরেকটি হাদিসে বলেছেন, ‘এই রাতে আসমান থেকে ৭০ হাজার ফেরেশতা জমিনে এসে ঘুরে ফিরে ইবাদতকারীগণকে পরিদর্শন করেন এবং তাদের ইবাদতসমূহ দেখেন।’ অন্য হাদিসে এসছে, ‘যে ব্যক্তি শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতে ইবাদত করবে এবং ১৫ তারিখ দিনে রোজা রাখবে, দোজখের আগুন তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।’

প্রসঙ্গত হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছেঃনিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। যথাঃ (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”। এ ছাড়াও সিয়াহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ ছয়খানা হাদিস গ্রন্থের কোনো কোনো হাদিসে এই রাতের বিশেষত্ব নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও এই রাতের বিশেষত্বের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই রাতের কথা ইমাম তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে পাওয়া যায়, ঐ হাদিস মতে, এক রাতে আয়েশা [রাঃ] ঘুম থেকে উঠে পড়লেন কিন্তু হযরত মুহাম্মদ [সঃ] বিছানায় দেখতে পেলেন না। তিনি মহানবীকে [সঃ] খুঁজতে বের হলেন এবং তাঁকে জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে দেখতে পেলেন। মহানবী [সঃ] বললেন, ১৫ শাবানের রাতে আল্লাহ সর্বনিম্ন আকাশে নেমে আসেন এবং [আরবের] কালব্‌ উপজাতির ছাগলের গায়ের পশমের থেকে বেশি লোককে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা করেন। উল্লেখ্য, সেসময় কালব্ গোত্র ছাগল পালনে প্রসিদ্ধ ছিল এবং তাদের প্রচুর ছাগল ছিল। এই হাদিসের নিচে ইমাম তিরমিযী উল্লেখ করেন, "হযরত আবু বকরও [রাঃ] এরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন বলে জানা যায়। আমি (ইমাম তিরমিয়ী) শুনেছি ইমাম বুখারীকে [রঃ] বলতে এই হাদিসের বর্ণনাকারীদের মাঝে একজন জায়েফ (দূর্বল বা কম গ্রহণযোগ্য) ছিলেন।" এর ভিত্তিতে বলা হয়, এই হাদিসটি সম্পুর্ণরূপে গ্রহণযোগ্য না হলেও মিথ্যা নয়। এটি সত্য হবার সম্ভবনা আছে। ফিকাহ্‌ বিশারদদের মতে জায়েফ‌ হাদিস যদি কুর'আন পরিপন্থী না হয় তবে তা মানা যায়।

পবিত্র শবে বরাত পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করে পরবর্তী দিনে পবিত্র রোযা রেখে মহান আল্লাহ পাক তাঁহার ও তঁহার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জন করা। পবিত্র শবে বরাতে কোন কোন ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তাঁহাদের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য তাকীদ ও নির্দেশ মুবারক করা হয়েছে। যেমন-
১। পবিত্র শবে বরাতের নামায পড়বে। ৪, ৮, ১২ রাকায়াত। দুই দুই রাকায়াত করে।
২। পবিত্র ছলাতুত তাসবীহ এর নামায পড়বে, যার দ্বারা মানুষের গুনাহখাতা ক্ষমা হয়।
৩। পবিত্র তাহাজ্জুদের নামায পড়বে, যা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক এর নৈকট্য হাছিল হয়।
৪। পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।
৫। ক্বিয়াম শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল, হযরত মুহাম্মদ [সঃ] এর খাছ সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।
৬। যিকির-আযকার করা, যার দ্বারা দিল ইছলাহ হয়।
৭। কবরস্থান যিয়ারত করা, যার দ্বারা মৃত্যুর কথা স্মরণ হয় এবং পবিত্র সুন্নত আদায় হয়।
৮। গরিব-মিসকীনকে দান ছদকা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়ানো।
সর্বোপরি পুরো রাত্রিই অতিবাহিত করতে হবে পবিত্র যিকির-ফিকির, তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে। যাতে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক হযরত মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। আর পবিত্র শবে বরাতে আল্লাহ পাকের পূর্ণ নিয়ামত লাভের জন্য সর্বোত্তম উসীলা বা মাধ্যম হযরত মুহাম্মদ [সঃ] আলাইহিস সালাম। তাঁর পবিত্রতম ছোহবত মুবারকে থেকে সারারাত্রি জাগরণ ও পবিত্র সুন্নত মুতাবিক মক্ববুল দোয়া, মক্ববুল মুনাজাত শরীফ তাঁর মধ্যে শরীক হওয়া, অতি উত্তম ও সহজ পদ্ধতিতে পবিত্র রাত্র ইবাদত বন্দেগীতে অতিবাহিত করা এবং পরবর্তী দিনে রোযা রাখা। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ১৪ শাবানের রাতে নামাজ আদায় করে, তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং সদ্য প্রসূত নবজাত শিশুর মতো গুনাহ থেকে পবিত্র হবে। যে ব্যক্তি ১৫ শাবানের দিন রোজা রাখবে, সে দোজখের আগুন থেকে মুক্তি পাবে। এ রাতের ইবাদতের কোনো সীমারেখা বা নির্ধাতির কোনো নিয়ম নেই। অন্যান্য নফল নামাজের মতো ২ রাকায়াত করে নফল নামাজের নিয়তে নামাজ আদায় করলেই শব-ই-বরাতের নামাজ আদায় হয়ে যাবে। পুণ্যময় শবে বরাতের নামাজের সঙ্গে সঙ্গে পবিত্র কোরআন-হাদীস পাঠ ও বিভিন্ন রকম দোয়া-দুরুদ এবং তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির করলেও যথেষ্ট নেকী পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন পবিত্র কোরআন মজিদের অনেক সূরায় ঘোষণা করেছেন, ‘আমি সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা এবং মহাপরাক্রমশালী। আবার বলেছেন, ‘আমি পরম দয়ালু এবং ক্ষমাশীল।’ আল্লাহ পাক প্রতিনিয়ত আমাদের গোনাহ মাফ করে দিচ্ছেন। তবে যে গোনাহার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়েছে আল্লাহর দরবারে মানুষ হিসেবে আমরা বুঝতেও পারছি না মহান আল্লাহ সেই অপরাধ মার্জনা করে দিয়েছেন। কিন্তু যে অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়েছে বা হচ্ছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী যদি পুনরায় সেই অপরাধ কর্মটি করেন; তাহলে তার পূর্বের ক্ষমা তো বাতিল করাই হবে এবং এজন্য সেই ক্ষমা প্রার্থনাকারী ব্যক্তির গোনাহের পাল্লা আরও বেশি ভারী হবে। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের দরবারে সেই ব্যক্তির ক্ষমা প্রার্থনার দরজা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এবার মুসলিম সমাজে সবেবরাত এসেছে এক ভয়ঙ্কর অস্থির সময়ে। বিশ্ব আজ করোনা মহামারীতে নাস্তানাবুদ। হিমসীম খাচ্ছে এর থেকে পরিত্রানের। এই দূর্যোগ মূহুর্তে আমাদের জন্য শান্তির পরশ নিয়ে আসবে শবেবরাত। মহা দয়ালু আল্লাহ তায়ালা নিজ বান্দাদের ওপর দয়া ও ক্ষমার কেবল অসিলা তালাশ করেন, যেকোনো পথেই হোক ক্ষমা করার বাহানা খোঁজেন। তাই দয়াময় আল্লাহ তায়ালা তাঁর গুনাহগার বান্দাদের ক্ষমা করার জন্য বিভিন্ন স্থান ও সময়-সুযোগ বাতলে দিয়েছেন, যাতে বান্দা নিজ কৃতকর্মে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চায়, আর আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেবেন। তাই আসুন, এই বরকতময় রজনীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আমরা আমাদের গোনাহ মাফের সর্বোচ্চ সুযোগ কাজে লাগাই। এই রাতে অনেকে আতশবাজি করেন। এটা অনুচিত কাজ। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি বেদআদ কাজ। এই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে নিয়োজিত করুন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সব মানুষের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করছি। সেই সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার/আপনাদের শত্রুদের ক্ষমা করে দিয়ে তাদের সুপথে চালিত করুন। এই রাতে ঘুমিয়ে থাকা অনেক ফজিলতের তাদের জন্য যারা এই রাতে আল্লাহর নাফরমানি, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ঘুষ দুর্নিতে লিপ্ত থাকেন। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে পবিত্র শবে বরাত যথাযথ আদায় করার তাওফীক দান করুন। বিশ্বের সকল মুসলিমের পবিত্র শবে বরাতে সকল নিয়ামত অর্জিত হোক এবং করোনা মহামারী থেকে বিশ্ব মুক্তি লাভ করুক এই কামনায়..আমীন!

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম :-& ফেসবুক-১ :-& ফেসবুক-২
[email protected]

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: করোনার ভয়ে তো মসজিদে যেতে ইচ্ছা করে না।

২৯ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৫৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান ও
বিশ্বাস রেখে সাধ্যমতো এবাদত
বন্দেগী করে তার কাছ থেকে
ক্ষমা প্রাপ্ত হতে হবে। তিনিই
সকল মুসকিলের আসান !

২| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৪৯

রানার ব্লগ বলেছেন: সবে বরাতে আল্লাহের নবী মুহাম্মাদ লম্বা সেজদা করতেন, তিনি নামাজ পড়তেন, তার সেজদা এতোটাই লম্বা ছিলো যে বিবি আয়শা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে নবী মুহাম্মাদ হয়তো ইন্তেকাল করেছেন তাই তিনি নবীর পায়ের আঙ্গুল ধরে নারা দিয়েছিলেন।
সবে বরাতে নবী মুহাম্মাদ স্রেফ নামাজ পড়তেন এবং একটু লম্বা সেজদা করতেন এর বেশি কিছুই না।

আপনি যে বিশাল লিস্ট দিলেন ভাই এই গুলা নিয়া তো ভ্যাজালে পরে যাচ্ছি।

২৯ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বানার ব্লগ ভাই
ইসলামি তমুদ্দুন তথা মুসলিম কৃষ্টিতে যেসব দিবস ও রজনী বিখ্যাত,
এর মধ্যে একটি হলো শবে বরাত।
হাদিস শরিফে আছে, হজরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.)
বলেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন
এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে
হিব্বান: ৫৬৬৫)। হজরত আবু সালাবা (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে,
তখন আল্লাহ তাআলা মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান; মুমিনদের ক্ষমা করে দেন,
কাফিরদের ফিরে আসার সুযোগ দেন এবং হিংসুকদের হিংসা পরিত্যাগ ছাড়া ক্ষমা করেন না।
(কিতাবুস সুন্নাহ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: যখন শাবানের মধ্যরাত আসে, তখন তোমরা রাতে নফল
ইবাদত করো এবং দিনে রোজা পালন করো। তাই শবে বরাত উপলক্ষে নফল রোজা রাখা,
নফল নামাজ পড়া, কিরাত ও রুকু-সিজদা দীর্ঘ করা; কোরআন তিলাওয়াত করা; দরুদ শরিফ
বেশি বেশি পড়া; ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা; দোয়া-কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির
আসকার ইত্যাদি করা; কবর জিয়ারত করা; নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন,
বন্ধুবান্ধব ও সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও
সমৃদ্ধি কামনা করা। এই রাতে যেসব ইবাদত করা হবে সবই নফল ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।
আর নফল ইবাদত নীরবে আপন আপন ঘরে একাগ্রচিত্তে করা উত্তম।

৩| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:১৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: পবিত্র লায়লাতুল বরাতে শুভেচ্ছা্‌ার শুভকামনা রইলো
সমাপনী প্রার্থনায় সহমত।

আপনার শুভ প্রার্থনায় আমাকে রাখলে কৃতজ্ঞ হবো।




৩০ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:০২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ ভৃগু দাদা।
শবেবরাতের সমবেত প্রার্থনায়
সবাই ছিলেন। আশা করি আমিও
ছিলাম সবার প্রার্থনায়। আল্লাহ আমাদের
বিগত দিনের সকল পাপ মার্জনা করুন। আমিন

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৩৪

চাঁদগাজী বলেছেন:




প্রতিটি রাত এই রকম হোক, তাতে যদি টোকাইদের বরাত খোলে ৩৬৫ দিন।

৩০ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:০৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এই রাতে সবার জন্যই রিজিকের বন্দোবস্ত
করে থাককেন। টোকাই কেন শুধু, আমি আপনি
মন্ত্রী গরীব আমির সবাই থাকে এর আওতায়।

৫| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১০:০১

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: প্রার্থনায় কোন উপকার হয়না বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত।এটা বিশ্বাসিদের একটা সান্তনা।

৩০ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:০৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বিশ্বাসে মিলায় বস্ত
তর্কে বহু দূর।

৬| ৩০ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১২:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন:

আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান ও
বিশ্বাস রেখে সাধ্যমতো এবাদত
বন্দেগী করে তার কাছ থেকে
ক্ষমা প্রাপ্ত হতে হবে। তিনিই
সকল মুসকিলের আসান !

ঠিক আছে। তিনি মুশোকিল আসান করবেন। কিন্তু মুশকিল দেয় কে?

৩০ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:০৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

খানসাব, মুসকিল যিনি যেন
আসানও তিনি করেন। তবে
তার জন্য চাইতে হবে।
জানেনতো না কাঁদেলে মা ও
সন্তানদের দুধ দেয়না !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.