নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
(বরিশালের উজিরপুর উপজেলা পরিষদের সামনে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের এই ভাস্কর্য নির্মাণ করছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।) পৌরসভার মেয়র মোঃ গিয়াস উদ্দিন বেপারী জানিয়েছেন, ‘এ উপজেলায় এই প্রথম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।
নামকরণঃ
প্রাচীন বাকলা চন্দ্রদ্বীপের সবচেয়ে পুরাতন জনপদ। ১৯৮৩ সালে উজিরপুর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় । ১৯১৫ খৃস্টাব্দের প্রতিবেদনে দেখা যায় বরিশাল সদর উত্তর মহকুমার ৬টি থানার একটি হলো উজিরপুর। ১৪/৯/১৯৮৩ তারিখে থানাটি উপজেলায় উন্নীত হয়। বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার আয়তন ৯৫.৮১ বর্গমাইল বা ২৪৯.৩২ বর্গ কিলোমিটার। এ উপজেলার দক্ষিনে ঝালকাঠি, পশ্চিমে বানারীপাড়া ও কোটালীপাড়া, উত্তরে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া এবং পূর্বে বাবুগঞ্জ থানা অবস্থিত।এ উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে ইতিহাসের পাতা থেকে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। সম্রাট জাহাঙ্গীরের উজির সৈয়দ উলফত গাজী সতের শতকের প্রথমভাগে চন্দ্রদ্বীপ পরগণা হতে সৃষ্ট নাজিরপুর পরগণার জমিদারী লাভ করেন। তার বংশধর সৈয়দ কুতুবশাহ গেৌরনদী থানার নলচিড়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। উজির উলফত গাজীর নামনুসারে উজিরপুরের নামকরণ হয়েছে। অনেকে বলেন মুর্শিদাবাদ নবারেবর উজির ফকির মোহম্মদ এর নামে নামকরণ হয়েছে। বানারীপাড়া থানার লবনসারার সৈয়দ পরিবারের আদিপুরুষ এবং মসজিদ বাড়ি গ্রামের প্রাচীন মসজিদের নির্মাতা সৈয়দ ফকির যে নবাবের উজির ছিলেন হয়ত সেই সৈয়দ ফকিরের নামে উজিরপুর নামকরণ হয়েছে। কিন্তু ফকির মোহাম্মদ ও সৈয়দ ফকির যে বনাব বা সম্রাটের উজির ছিলেন তার কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। উজিরপুর থানা সদরে একটি বাড়ি উজির বাড়ি নামে খ্যাত ছিল। কিন্তু কেন উজির বাড়ি বলা হতে তার কোন তথ্যাদি নেই। কিন্তু সৈয়দ উলফত গাজী দিল্লীর সম্রাটের উজির ছিলেন তার স্বপক্ষে প্রমাণিত তথ্য আছে। তাই বলা যেতে পারে সম্র্রাট জাহাঙ্গীরের উজিররের নামানুসারে উজিরপুর নামকরণ হয়েছে। একসময় এ উপজেলা ;দা ও কাস্তের জন্য বিখ্যাত ছিলো।
উজিরপুর উপজেলার আয়তনঃ ২৪৯.৩২ বর্গ কিলোমিটার আয়তন ১২৫ টি গ্রাম ও ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে উজিরপুর উপজেলা গঠিত যার সীমানাঃ উত্তরে গেৌরনদী উপজেলা, পূর্বে বাবুগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে বানারীপড়া ও ঝালকাঠী সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে নাজিরপুর ও কোটালীপাড়া উপজেলা। এ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২,৩৪,৯৫৯ জন (প্রায়) যার মধ্যে পুরুষ ১,১৬,৪৯২ জন এবং মহিলা ১,১৮,৪৬৭ জন। এই উপজেলায় মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোকজন বসবাস করে। অধীবাসীদের অধিকাংশ ই মুসলমান। উপজেলার নির্বাচনী এলাকা ১২০ বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানরীপাড়া) উজিরপুর উপজেলার ই্বুনিয়ন সমূহঃ ১নং সাতলা, ২নং হারতা, ৩নং জল্লা, ৪নং ওটরা, ৫নং শোলক, ৬নং বরাকোঠা, ৭নং বামরাইল, ৮নং শিকারপুর উজিরপুর, ৯নং গুঠিয়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৩ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৭টি, কলেজ ১২ টি, মাদ্রাসা ২৪ টি। শিক্ষার হার শহরে ৭৭.২% এবং গ্রামে ৬০.৩%। বাংলাদেশের মফস্বল থানার মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশী কলেজ এই উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উজিরপুর উপজেলার সাক্ষরতার হার ৬২.৫%।
উজিরপুরেরসংস্কৃতিঃ
১৭, ১৮ ও ১৯ শতকে উজিরপুরে সংস্কৃত ভাষার চর্চা হত। শিকারপুরের কালীকান্ত শিরোমনি শুম্ভনিশুম্ভ বধ নামক সংস্কৃত মহাকাব্য রচনা করেন। উজিরপুরের গৌরীনাথ বংগ বিখ্যাত সংস্কৃত পন্ডিত ছিলেন। উজিরপুরের শম্ভুচদ্র বাসেপতি কলকাতায় সংস্কৃত কলেজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষক ছিলেন। উনিশ শতকে রাজনীতিকে কেন্দ্র করে যে পুনর্জাগরন শুরু হয় সে জাগরনে উজিরপুরের কয়েকটি পরিবার সাড়া দেয়। সমাজ ছিল বর্নাশ্রিত ও সামন্ত প্রথায় বন্দী। জমিদারদের শাসন - শোষনে সমাজের মানুষ ছিল নিষ্পেষিত। উনিশ শতকের শেষ ভাগে এ থানায় ইংরেজী শিক্ষার বিস্তার ঘটে। থানার প্রথম স্কুল " উজিরপুর ডব্লিউ বি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় " ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
পর্যটন স্থানঃ
উজিরপুরের সাতলা বিলের লাল শাপলার স্বর্গরাজ্য, সাতলার ডাকবাংলা, ঘন্টেশ্বর ছবিখার পুল, তারাবাড়ী তারামন্দীর, শিকারপুর সেতু, জল্লার টাকাবাড়ীর বিল, গুঠিয়ার মসজিদ কমপ্লেক্স অন্যতম পর্যটন স্থান।
স্বদেশী আন্দোলনঃ
১৯০৫ সনে বংগভংগ কে কেন্দ্র করে স্বদেশী ও বিপ্লবী আন্দোলন শুরু হয়। স্বদেশী আন্দোলনের নেতা ছিলেন অশ্বিনীকুমার দত্ত। তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন উজিরপুরের সতীশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। তিনি ১৯০৬ সনে বরিশালে ইংরেজ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সশস্র বিপ্লবী দল গঠন করেন। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে এ থানার কৃষক সমাজ জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেন। এছাড়া ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্বশাসন আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ এ উজিরপুরের জনগন বিশেষ অবদান রেখেছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বরিশাল ৯নং সেক্টর
মুক্তিযুদ্ধে উজিরপুরঃ
মহান মুক্তিযুদ্ধে বরিশাল বিভাগ ছিল ৯নং সেক্টরে। এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর এমএ জলিল। নদীবেষ্টিত বরিশাল বিভাগের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস এ অঞ্চলের মানুষের বীরত্বের মহিমায় ভাস্বর। কিন্তু এই ইতিহাসের প্রতিটি পাতা রঞ্জিত পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হাজারও মানুষের রক্তে, তাদের স্বজনদের চোখের জলে। ৯ নং সেক্টরের প্রধান ঘাটি ছিল উজিরপুরের বরাকোঠা দরগাহ বাড়ী। সেখান থেকে পরিচালিত হত ৯ নং সেক্টরের যুদ্ধ। পাক হানাদার বাহিনী ঘাটি আক্রমণ চালানোর জন্য উজিরপুরে ১৯৭১ সালের ১৭অক্টোবর ৭১ জন নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। উপজেলার ধামুরা বন্দরসহ বেশকয়েকটি বন্দর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। উজিরপুরের বীর সন্তানরা সশস্র মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার ১১ দিন আগে ৫ ডিসেম্বর উজিরপুর থেকে পাকবাহিনী কে বিতাড়িত করে জন্মভূমিতে বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে উল্লাস করেন।
মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় উজিরপুর উপজেলার কৃতিসন্তান
উজিরপুরের কৃতিসন্তানঃ
১. কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন মহামহোপাধ্যায় (১৮৪৮ - ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩০), প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক। ২. সরোজিনী দেবী (১৮৮১ - ১৯৬০) বিপ্লবী ও স্বদেশাত্মক গানের রচয়িতা। ৩. সতীশচন্দ্র রায় (১৮৮২ - ১৯০৪) শান্তিনিকেতনের শিক্ষক। ৪. নগেন্দ্র বিজয় ভট্টাচার্য (১৮৮৫ - ১৩ই নভেম্বর ১৯৬৭) জগদীশ সারস্বত বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি। ৫. খন্দকার সিরাজুর রহমান (১৯০১ - ১৫ ডিসেম্বর ১৯৮৯) বাংলাদেশ ফায়ার ব্রিগেডের আদি ও বিকাশ পর্যায়ের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ৬. রত্বেশ্বর মুখোপাধ্যায় (১৯০৮ - ১৩ নভেম্বর ১৯৮০), সংগীতশিল্পী; মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের পিতৃব্য। ৭. সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায় (১৯১২-৮.৭.১৯৯৯), কাজী নজরুল ইসলামের ছাত্র ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী এবং নজরুল-সংগীতের বিশিষ্ট শিল্পী। ৮. মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১১.৮.১৯২৯-১৯.১.১৯৯২), প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ও সুরকার।[ ৯. মেজর এম এ জলিল (৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২ - ১৫ নভেম্বর ১৯৮৮) মুক্তিযুদ্ধের ৯ম সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার। ঐহিত্যবাহী উরিরপুরে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:১২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
মাথা মোটা পণ্ডিত আমার এই পোম্টে বলা হয়েছে,
"বাংলাদেশের মফস্বল থানার মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে
বেশী কলেজ এই উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়"।
ছাত্র ভূতে যোগায় !
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০২
রাজীব নুর বলেছেন: উজির পুরের গল্প আমার শ্বশুরের মুখে শুনেছি।
০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:১৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
খালি শুনলে হবে ?
দেখতে হবে জানতেও হবে।
৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৪২
চাঁদগাজী বলেছেন:
লেখক বলেছেন, " ... ছাত্র ভূতে যোগায় !
-ভুতে ভুত যোগায়; উজিরপুরে ভুত বাড়ছে?
০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৩৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনার লেজ বোধ হয়
আর সোজা হবার নয় !!
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:২২
চাঁদগাজী বলেছেন:
লোক সংখ্যা ২লাখ ৩৫ হাজার; কলেজের সংখ্যা ১২টি; ছাত্র কোথা থেকে?
আপনি কোন কলেজে গিয়েছিলেন, ছাত্র মাত্র আছে?