নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশ বরেণ্য নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যশিক্ষক রাহিজা খানম ঝুনুর তৃতীয় মৃত্যু্বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৩


বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি এবং বুলবুল ললিতকলা একাডেমির নৃত্যশিক্ষক রাহিজা খানম ঝুনু। যিনি নৃত্যগুরু হিসেবে সমাধিক পরিচিত। পাকিস্তান আমলে পায়ে নূপুর জড়িয়ে ভেঙ্গেছিলেন অচলায়তন। অবরোধবাসিনীর জীবনকে উপেক্ষা করে হয়েছিলেন নৃত্যশিল্পী। নাচের আশ্রয়ে এগিয়ে গেছেন সংগ্রামমুখর প্রগতির পথে। হয়েছেন দেশের নৃত্যশিল্পের পথের দিশারী। ঝুনু জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন নৃত্য নিয়ে। মেয়েদের নাচ-গানের প্রতিকূল সময়ে তিনি নিজেকে জড়িয়েছিলেন নাচের সঙ্গে। সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের চোখরাঙানিকে তুচ্ছ করে মনেপ্রাণে ভালোবেসে গেছেন এই শিল্পটিকে। দেশের প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পীদের বেশিরভাগই এ খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পীর হাত ধরে এসেছেন। যার মধ্যে রয়েছেন সেলিনা হক, লুবনা মরিয়ম, মৌ, তারিন, রতন, বাবু, মুনমুন প্রমূখ। তার মেয়ে বেবীও একজন গুণী নৃত্যশিল্পী। বুলবুল ললিতকলা একাডেমি বাফার প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। নৃত্যকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ১৯৯০ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে। নাচের সঙ্গে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পার করে ২০১৭ সালের
আজকের দিনে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপতালে মৃত্যুবরণ করেন এই গুণী শিল্পী। আজ তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। দেশ বরেণ্য নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যশিক্ষক রাহিজা খানম ঝুনুর মৃত্যু্বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৯৪৩ সালের ২১ জুন তৎকালীন পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) মানিকগঞ্জ জেলায় এক শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাহিজা খানম ঝুনু। তার পিতা আবু মোহাম্মদ আবদুল্লাহ খান ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার এবং মাতা সফরুন নেছা। ১৯৫৫ সাল, ঝুনু তখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। প্রধান শিক্ষিকা বাসন্তী গুহঠাকুরতা ঠিক করেন ছাত্রীদের দিয়ে একটি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করাবেন। 'ঘুমন্ত রাজকন্যা' নামের সেই নৃত্যনাট্যের বিভিন্ন চরিত্রের জন্য মেয়েদের বাছাই করা হলো। কিন্তু বিপত্তি বাধল একটি পুরুষ চরিত্র নিয়ে। মেয়ে হয়ে পুরুষ চরিত্র করতে সবাই নারাজ। সাহস করে এগিয়ে এলেন ঝুনু। রাখালের পুরুষ চরিত্রটি দিয়েই বাজিমাত করলেন তিনি। দর্শকরা নাটক পছন্দ করল। তার চেয়েও বেশি পছন্দ করল রাখাল চরিত্রটিকে। বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর শিক্ষক অজিত সান্যাল তার নাচ দেখে নিজেই উৎসাহ দেখালেন তাকে নাচ শেখানোর। বললেন, 'নাচ শিখলে বাফায় ভর্তি হয়ে যাও, আমি তোমাকে ফ্রি শেখাব।' কিন্তু সেবার রাহিজা খানম ঝুনুর বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে ভর্তি হওয়া হয়নি। ১৯৫৬ সালে ঝুনু নৃত্যে তালিম নিতে বাফায় ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বাফার প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার সাথে তার ভাই মোজাম্মেল হোসেন সেতার, বোন রুনু রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং নীনা ধ্রুপদী সঙ্গীত বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমী থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্সে উত্তীর্ণ হন এবং শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী হিসেবে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ওই বছরই তিনি বাফার নৃত্যকলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তারপর দীর্ঘদিন বাফার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে লায়লা হাসান, জিনাত বরকত উল্লাহ, কাজল ইব্রাহীম, লুবনা মারিয়াম, শামীম আরা নীপা, তারানা হালিম, দীপা খন্দকার, সোহেল রহমান, কবিরুল ইসলাম রতন, আবদুর রশিদ স্বপন, আনিসুল ইসলাম হিরুসহ অনেকে তার ছাত্র। তিনি পরিচালনা করেন নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা, মায়ার খেলা, শ্যামা, অরুণাচলের পথে, উত্তরণের দেশে, দি মেলোডি, দেখব এবার জগৎটাকে, সৃজন ছন্দে, জলকে চল, সুর ও ছন্দ, সোনালি আঁশ এবং ঝুমুর ঝংকার। রাহিজা খানম কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬১ : বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর নৃত্যকলা বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বর এবং শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী হিসেবে স্বর্ণপদক, একুশে পদক, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী পদক, বাংলা একাডেমীর সম্মানসূচক ফেলোশিপ অর্জন করেন। 'নৃত্যশিল্প' ও 'নৃত্যের রূপরেখা' নামে তার দুটো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে রাহিজা খানম ঝুনু ১৯৬৬ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি আমান উল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আমান উল্লাহ ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে তিন বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তাদের দুই মেয়ে লোপা ও ফারহানা চৌধুরী বেবী দুজনেই লোক ও আধুনিক ধারার নৃত্যশিল্পী। লোপা ১৯৯০ সালে হঠাৎ মারা যান। এছাড়া তাদের দুই ছেলে আহসান উল্লাহ চৌধুরী ও আকরাম উল্লাহ চৌধুরী। নাচের সঙ্গে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পার করে ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৪ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ফুসফুসজনিত সমস্যা ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী আমানুল্লাহ চৌধুরী এবং দুই মেয়ে ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। রাফিজা খানম ঝুনু শিল্পের অনন্য মাধ্যম হিসেবে নৃত্যশিল্পকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়েছিলেন। রাহিজা খানম ঝুনু একজন খ্যাতিমান শিল্পী হিসেবে তাঁর মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে করেছিলেন সমৃদ্ধ। নৃত্যশিল্পী হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল কিংবদন্তিতূল্য। নৃত্যশিল্পী হিসেবে মরহুমা রাহিজা খানম ঝুনু যে প্রসিদ্ধিলাভ করেছিলেন যা দেশের সাংস্কৃতিক জগৎকে উচ্চমাত্রা দান করেছিল। তাঁর জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে নৃত্যশিল্পের জগত হয়েছিল প্রসারিত। আজ নৃত্যুগুরু রাহিজা খানম ঝুনুর ৩য় মৃত্যু্বার্ষিকী। দেশ বরেণ্য নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যশিক্ষক রাহিজা খানম ঝুনুর মৃত্যু্বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.