নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম রাজনীতিক নেতা, ভাষাসৈনিক অলি আহাদ। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা অগ্রগণ্য। ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার কারণে ২৯ মার্চ, ১৯৪৮ তারিখে তৎকালীন সরকার তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিলো। দীর্ঘ ৫৮ বছর পর ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৪৭-১৯৭৫ সময়কালীন জাতীয় রাজনীতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। চিরসংগ্রামী অলি আহাদ একাধারে একজন ভাষা সৈনিক, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও লেখক। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রথমে মুসলিগ লীগ ও পরে আওয়ামী লীগে ছিলেন। এরপর আমৃত্যু তিনি ডেমোক্রেটিক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর অভিজ্ঞতা সম্বলিত গ্রন্থ জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-১৯৭৫ এর প্রণেতা তিনি। আজ এই রাজনীতিবিদের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভাষা সৈনিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা অলি আহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অগ্রপথিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামের বলিষ্ঠ কণ্ঠ ভাষাসৈনিক অলি আহাদ ১৯২৮ মতান্তবের ১৯২৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সদর উপজেলার ইসলামপুরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন ৷ তার পিতা মরহুম আবদুল ওহাব ছিলেন ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার ৷ মো. আব্দুল ওহাবের ৬ পুত্রসন্তানের মধ্যে অলি আহাদ ছিলেন চতুর্থ। ১৯৪৪ সালে প্রথম বিভাগে ম্যট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে গণভোটে তিনি ত্রিপুরা জেলার ৪ সদস্য বিশিষ্ট ওয়ার্কাস ক্যাম্পের অন্যতম সদস্য ছিলেন ৷ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনের কারণে ১৯৪৬ সালে আই, এস-সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারেন নি ৷ শিক্ষাজীবনের একটি বছর তাকে বিসর্জন দিতে হয়েছে ৷ ১৯৪৭ সালে প্রথম বিভাগে আই, এস- সি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়শুনা করেন ৷ কলেজ জীবনেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মুসলিম ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন৷ জনাব অলি আহাদ ছিলেন ১৯৪৮ সালে ৪ জানুয়ারিতে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলীম ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৫২ এর রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনে অন্যতম নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক৷১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের জন্য তিনি প্রথম কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন । ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. কম পরীক্ষায় প্রথম হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তত্কালীন কর্তৃপক্ষ তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম, কম পড়ার সুযোগ না দিয়ে চিরতরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করে।
পরবর্তীতে এক সময় আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ৷ ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনৈতিক মেরুকরণের সময় তিনি মাওলানা ভাসানীর সাথে প্রগতিশীলদের পক্ষে যোগ দেন ৷ তিনি চিরদিন গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্বপক্ষে সংগ্রাম করেন ৷ সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন কালে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী জনমত গঠন করেন ৷ তাঁর রচিত 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-৭৫' নামক গ্রন্হটি এ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল ৷ যে কোনো অত্যাচারের বিরুদ্ধে অলি আহাদ আজীবন সোচ্চার ছিলেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এ দেশের প্রতিটি আন্দোলন অলি আহাদের কাছে ঋণী। আশির দশকে সামরিক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে আপসহীন ভূমিকার কারণেও তাকে একাধিকবার গ্রেফতার করে কারাগারে আটকে রাখা হয়। তিনিই একমাত্র রাজনীতিবিদ যাকে তত্কালীন এরশাদ সরকার সামরিক ট্রাইবুনালে তার বিচার করে। শুধু তাই নয়, ওই সময় তাঁর জনপ্রিয় জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ইত্তেহাদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে পরিচালিত সকল সংগ্রামে অকুতোভয় এই লড়াকু জননায়ক আজীবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জনাব অলি আহাদকে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০০৪ প্রদান করা হয়৷
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে অলি আহাদ ছিলেন রাজপথে। এসব সংগ্রামে সফলতা এসেছে। তিনি জয়ী হয়েছেন। শেষ বয়সে মৃত্যুর সাথেও করেছেন সংগ্রাম। কিন্তু এ সংগ্রামে তিনি হেরে গেলেন। বরেণ্য এই ভাষাসৈনিক বিগত কয়েক বছর ধরেই অসুস্থ ছিলেন। গত বছরের অক্টোবরের প্রথম থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ২০ অক্টোবর ৮৩ বছর বয়সে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী অধ্যাপক রাশিদা বেগম ও একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার নমিন ফারহানাকে রেখে গেছেন। বাক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে সদা সংগ্রামী এই ব্যক্তিত্বকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে বনানী কবরাস্থানে সমাহিত করা সমাহিত করা হয়। ডেমোক্রেটিক লীগের চেয়ারম্যান অলি আহাদের মৃত্যুতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো.জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করেছিলেন।
‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে জীবনবাজী রেখে যারা লড়াই করেছেন তাদের সামনের কাতারে থাকা এই সৈনিকের আজ ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে চিরসংগ্রামী অলি আহাদকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
২| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:৩০
চাঁদগাজী বলেছেন:
সঠিক কোন ভাবনা ছিলো না উনার রাজনীতিতে।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:০২
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: ‘চির বিদ্রোহী’ উনি কার কার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।