নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতীয় নাট্যকার, নাট্য পরিচালক এবং অভিনেতা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:১৩


ভারতীয় বাঙালি নাট্যকার, নাট্য পরিচালক এবং অভিনেতা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুদূর শিল্পাঞ্চল থেকে কলকাতায় আসার পর অল্প দিনের মধ্যেই বাংলা থিয়েটারে তাঁর নাম জুড়ে গিয়েছিল শম্ভু মিত্র এবং উৎপল দত্তের সঙ্গে। একের পর এক মঞ্চসফল প্রযোজনার পাশাপাশি চলচ্চিত্র, যাত্রা, রেডিও— অভিনয় শিল্পের প্রতিটি মাধ্যমেই নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। নাট্যকার হিসেবেও তিনি খ্যাত। বাংলা নাট্যমঞ্চে তিনি, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও মিথ। ছাত্রজীবন থেকে তিনি নাটক রচনা ও অভিনয়ে আগ্রহী ছিলেন। ১৯৫০ থেকে ৫৪-এই পাঁচ বছরে ৯টি নাটকে নির্দেশনা ও অভিনয় সূত্রে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৪ তে লিখেছেন মৌলিক পূর্ণাঙ্গ নাটক 'সংঘাত'। ২ বছর পরে ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দেন। এই সংঘে ১৫টি নাটকে অংশ নেন তিনি। ১৯৬০ সালে ২৯ শে জুন প্রতিষ্ঠা করেন 'নান্দীকার'। প্রায় ৪০টি নাটকে নির্দেশক বা অভিনয় অথবা উভয় ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করেন। তিন পয়সার পালা নাটকে নির্দেশনা ওসঙ্গীত পরিচালনার জন্য তিনি সুনাম অর্জন করেন। সেতু বন্ধন, সওদাগরের নৌকা তার রচিত নাটক। ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ এ নান্দীমুখ নামে নামে এক নতুন নাট্যগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। এদের বিখ্যাত নাটক পাপপুণ্য। আজ এই গুণী অভিনেতার ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৩ সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবারণ করেন। নাট্যকার, নাট্য পরিচালক এবং অভিনেতা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৩৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভারতের মানভূম জেলার রোপো গ্রামে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। বেশ কয়েক বছর পরে কলকাতায় পা রেখে যে নাম পরিবর্তিত হবে অজিতেশে। নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত মজা করে বললেন, “সে সময় বাংলা রঙ্গমঞ্চে বেশ কয়েক জন অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ করছেন। আমার মনে হয়, অজিত বুঝতে পেরেছিল, ওর খুব নাম হবে। ভবিষ্যতে যাতে দর্শক বাকি অজিতদের সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলে তাই ও অজিতেশ হয়েছিল। তার পিতার নাম ভুবনমোহন ও মায়ের নাম লক্ষ্মীরানির। বাবা কোলিয়ারিতে কাজ করেন। আসানসোল শিল্পাঞ্চলের রামনগরে। একটু বড় হতেই অজিত দেখলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেটা ১৯৪২, তখন তার বয়স বছর নয়েক। জাপানি বোমার ভয়ে ভুবনমোহন তাঁকে পুরুলিয়ার ঝালদায় এক আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে অজিত তিনটি বিষয়ের প্রেমে পড়ে গেলেন ফুটবল, রাজনীতি এবং থিয়েটার। প্রথমটির ঘোর অল্প দিনের মধ্যেই কেটে যায়। দ্বিতীয়টিতে প্রভাবিত করে গাঁধীজির লেখা। কিন্তু পরের দিকে কমিউনিজমের দিকে ঝুঁকেছিলেন। বেশ কিছু কাল সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিলেন। তবে থিয়েটারের মগ্নতা আমৃত্যু কাটাতে পারেননি অজিত। ঝালদা থেকে বছরখানেকের মধ্যেই ফিরে এলেন রামনগর। কুলটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হলেন। অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর ভুবনমোহন বদলি হয়ে গেলেন ঝরিয়ার কাছে চাসনালায়। সেখানেই নাট্যগুরুর দেখা পেলেন অজিত। নাম প্রবোধবিকাশ চৌধুরী। তাঁর সঙ্গেই পাথরডি রেলওয়ে ইনস্টিটিউটে ‘টিপু সুলতান’-এ জীবনের প্রথম অভিনয় করেন অজিত। হস্টেলে থেকে চলতে থাকে পড়াশোনা এবং নাটক। স্কুল শেষে অজিত ভর্তি হলেন আসানসোলের বিবি কলেজে। সেখান থেকে আইএ পাশ করে কলকাতা এলেন ১৯৫৩ সালে। ভর্তি হলেন মণীন্দ্র কলেজে। ১৯৫৭ সালে কলকাতার মনীন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষায় অনার্স সহ পাশ করেছিলেন। ঐ বছরেই তিনি ভারতীয় গননাট্য সংঘে যোগ দিয়েছিলেন।

(তিন পয়সার পালা’য় অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কেয়া চক্রবর্তী)
ইংরেজির স্নাতক অজিত শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দিলেন। পাশাপাশি তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। বাগুইআটির হিন্দু বিদ্যাপীঠের ইংরেজির শিক্ষক, পার্টি কর্মী, তথা গণনাট্য সঙ্ঘ পাতিপুকুর শাখার শিল্পী অজিতকে তখন সবাই এক ডাকে চেনে। দমদম আঞ্চলিক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর দায়িত্ব পড়ে গণনাট্য সঙ্ঘের চারটি শাখাকে মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা তৈরি করার। মঞ্চস্থ হল ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’। তার পর ধারাবাহিক ভাবে সঙ্ঘের কাজ করেছেন তিনি, মূলত থিয়েটারকে আঁকড়ে। প্রথম দিকে তারই শাখা হিসেবে কাজ করত ‘নান্দীকার’। কিন্তু সঙ্ঘের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব আর বিচ্ছিন্নতা বাড়তে থাকে। তাই গণনাট্য সঙ্ঘ থেকে সরে এসে ১৯৬০-এর ২৯ জুন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে, দীপেন্দ্র সেনগুপ্ত এবং অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তায় স্বতন্ত্র সত্তায় আত্মপ্রকাশ করল ‘নান্দীকার’। এর পর প্রায় ১৭ বছর এই সংগঠনের সঙ্গে থিয়েটারকে নিয়ে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছিলেন অজিতেশ। অজিতেশ ১৯৬৫ সালে ছুটি চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে মোট ৬৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তপন সিংহ পরিচালিত হাটে বাজারে সিনেমায় অভিনয় করে সকলের নজর কাড়েন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।

১৯৮৩ সালের ১৩ অক্টোবর মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাংলা অভিনয় জগতের প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পী। সেটা ছিল সপ্তমীর রাত। ওই সন্ধেতেই দক্ষিণ কলকাতার ‘সুজাতা সদন’-এ ‘সেই অরণ্যে’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। নাটক শেষে বাড়ি ফিরে একটু রাত করেই খেয়েছিলেন খাবার। তার পর হঠাৎ বুকে ব্যথা। ডাক্তার ডেকে আনার আগেই সব শেষ। সে বছরের অষ্টমীর দিন নিমতলা শ্মশানে পুড়ে শেষ হয়ে যায় বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নটের দেহ। আজ এই গুণী অভিনেতার ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। নাট্যকার, নাট্য পরিচালক এবং অভিনেতা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৪৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: উনি মনে হয় উৎপল দত্তের সমসাময়িক ছিলেন। নাটক ও সিনেমা জগতে উৎপল দত্ত একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। অজিতেশ মনে হয় সিনেমা কম করেছেন বলে মানুষ তাকে কম চেনে।

১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:২১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ধন্যবাদ আপনাকে সাচু ভাই
উৎপল দত্ত, তৃপ্তি মিত্র, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়,
বিজন ভট্টাচার্য, দিগিন্দ্র চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, তুলসী লাহিড়ী,.
মনােরঞ্জন ভট্টাচার্য, প্রমুখ নাট্যকার ছিলেণ সমসাময়িক।
অজিতেশ বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে মোট ৬৩টি চলচ্চিত্রে
অভিনয় করেছেন। তার প্রথম সিনেমা ছুটি যা ১৯৬৫ সালে
মুক্তি পায়।

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: অজিতেশকে ভারতীয় মনে রেখেছে কিনা জানি না।আপনি রেখেছেন। এজন্য আপানকে ধন্যবাদ।

১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৪৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আজ থেকে আপনিও মনে রাখবেন।
যদি স্মৃতি ঠিক মতো কাজ করে !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.