নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিব্রাজক ও সাহিত্যিক উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়

১২ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৮


উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক ও পরিব্রাজক। স্যার আশুতোষের তৃতীয় পুত্র, হিমালয়-পরিব্রাজক উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রধান বিচরণক্ষেত্রটি হল বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ধারা, ভ্রমণ-কাহিনী। ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে কতদূর গেলে তাকে ভ্রমণ বলা যাবে , এমন কোনও নির্দিষ্ট অঙ্ক নেই৷ কোনওদিন ছিলও না৷ অজানাকে জানার জন্য মন যখন ব্যাকুল হয় , সেই অচেনা পথ পেরিয়ে মনের আনন্দে কাছে বা দূরে গেলেই পাওয়া যাবে ভ্রমণের স্বাদ৷ অন্তরাত্মার আকুলতা মানুষকে ঘর থেকে বাইরে নিয়ে গিয়েছে বারবার৷ যেন সাত রাজার ধন একটি মাণিক সেখানেই৷ ঘরছাড়ার নেশায় পাগল বিশ্ববণিক রবীন্দ্রনাথও না বলে পারেন নি-‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে ’৷ সেই ঘরের চাবি ভেঙ্গে ১৮৪০ সাল৷ হিমালয় পরিব্রাজক ও সাহিত্যিক উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রপিতামহ বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় স্রেফ ভ্রমণের উদ্দেশে কালনা থেকে নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন৷প্রপিতামহের মতো উমাপ্রসাদও ছিলেন এক অক্লান্ত পরিব্রাজক। যৌবনের প্রারম্ভে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে মাতৃদেবীকে নিয়ে প্রথম হিমালয় দর্শনে যান। তারপর অকৃতদার এই পরিব্রাজক দীর্ঘদিন হিমালয়ের পথে পথে ঘুরেছেন- পরনে গেরুয়া ফতুয়া আর লুঙ্গি, কাঁধে ঝোলা নিয়ে। পরে ঘুরে বেড়িয়েছেন গহন জঙ্গলে,রুক্ষ মরুভূমিতে, নৌকার যাত্রী হয়ে ভ্রমণ করেছেন সমুদ্রে। চিত্রাঙ্কন এবং চিত্রগ্রহণে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। অগণিত স্থিরচিত্র ছাড়াও ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কৈলাশ-মানস সরোবর ভ্রমণের তিনি একটি চলচ্চিত্র তুলেছিলেন। ১৯২৮ থেকে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তোলা তাঁর ছবির অ্যালবাম 'আলোকচিত্রে হিমালয়' ওই সময়ের হিমালয়ের ভৌগলিক বৈশিষ্টের এক অমূল্য দলিল। তাঁর ছবির প্রদর্শনীতে শুধু হিমালয় নয়, সৌরাষ্ট্রের গিরনার বা এলাহাবাদের কুম্ভমেলার মতো বিষয় স্থান পেত। আজ পরিব্রাজক উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯০২ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কলকাতার ভবানীপুরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৭ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ১১৮তম জন্মবার্ষিকী এবং ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। পরিব্রাজক ও সাহিত্যিক উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

( উমাপ্রসাদ মাঝে দন্ডায়মান)
উমাপ্রসাদ ১৯০২ সালের ১২ই অক্টোবর কলকাতার ভবানীপুর অঞ্চলের রসা রোডের বিখ্যাত মুখোপাধ্যায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং মাতা ছিলেন যোগমায়া দেবী। আশুতোষ এবং যোগমায়ার সাতটি সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। বিজয়াদশমীর দিন জন্ম বলে, তার ডাকনাম ছিল বিজু। মা যোগমায়া দেবী ছিলেন অত্যন্ত সুন্দরী এবং সুরুচি সম্পন্না প্রগতিশীলা নারী, যাঁর প্রভাব অবধারিতভাবেই পড়েছিল সমস্ত সন্তানদের উপরে। হাতেখড়ির পরে, বাড়ির বিশাল লাইব্রেরীতেই শুরু হয় উমাপ্রসাদের প্রথম পাঠ। তার প্রথম শিক্ষক ছিলেন প্রিয়নাথ বসু এবং মহেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। শিশুকাল থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী, অন্তর্মুখী, পশুপ্রেমী এবং দরদী মনের মানুষ। তাঁর ছেলেবেলার বিবরণ পাওয়া যায় তার রচিত প্রবন্ধ "আমার ছেলেবেলা" তে। সাত বছর বয়সে ভবানীপুর মিত্র ইন্স্টিটিউশনে শুরু হয় তার প্রথাগত শিক্ষাজীবন। ১৯১৯ সালে উমাপ্রসাদ এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে। এরপর ১৯২১ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে আই এ পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন। এই পরীক্ষায় বাংলা রচনায় দক্ষতার জন্যে বঙ্কিমচন্দ্র রৌপ্য পদক এবং দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বৃত্তি ও পারিতোষিক, ভাষা ও অঙ্কে ভালো নম্বরের জন্যে ডাফ বৃত্তি, ইংরাজি ও অঙ্কের জন্যে সারদাপ্রসাদ পুরস্কার এবং পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার জন্যে স্টিফেন বিনে পদকপ্রাপ্ত হন। এরপর ঐ কলেজ থেকেই ১৯২৩ সালে ইংরাজিতে অনার্স সহ বি এ পাশ করেন প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে। এরপরে ১৯২৫ সালে "প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি" বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এম এ পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর আইন পড়া শুরু করেন এবং ১৯২৮ সালে বি এল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। ভ্রমণ এবং পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা নিয়েও তার সবিশেষ উৎসাহ ছিল। তিনি বেঙ্গল লন টেনিস আসোশিয়েশনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং নিজে একজন টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। এছাড়াও ১৯৩২ সালে রেফারি ট্রেনিং নিয়ে পাশ করেন আই এফ এ থেকে এবং পরবর্তীকালে রেফারি আসোশিয়েশনের সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোয়িং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। তিনি ভারতের প্রথম পর্বতারোহণ সংস্থা 'হিমালয়ান অ্যাসোসিয়েশন' এর প্রতিষ্ঠাতা। দার্জিলিঙের "হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট" এবং 'হিমালয়ান ক্লাব'-এর আজীবন সদস্য ছিলেন তিনি। খেলাধূলার পাশাপাশি সঙ্গীতেও তাঁর দক্ষতা ছিল।

কর্মজীবনের প্রথমে তিনি উচ্চতম ন্যায়ালয়ের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে অধ্যপনা করেছেন দীর্ঘ কুড়ি বছর। অত্যন্ত আত্মগম্ভীর কিন্তু রসবোধে পূর্ণ লেখক আজীবন ছিলেন কর্তব্যনিষ্ঠায় অবিচল এবং অত্যন্ত নিয়মানুবর্তি ব্যক্তিত্ব। তার প্রখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম প্রাক্তন ভারতীয় শিক্ষামন্ত্রী প্রতাপ চন্দ্র চন্দ্র এবং সাংবাদিক অরুণ বাগচী। অধ্যাপনা ছাড়াও আইনজ্ঞ হিসেবেও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন তিনি। আলিপুর কোর্ট, বিড়লা কোম্পানীর লিগ্যাল আডভাইসার, বেঙ্গল লাইব্রেরির অর্থ দপ্তরের কাউন্সিল মেম্বার, চেয়ারম্যান, লিকুইডেটার এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যট্রিকুলেশন পরীক্ষার ট্যাবুলেটর হিসেবেও দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন তিনি। কর্মক্ষেত্রে নেতাজী সুভাষচন্দ্র, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সংস্পর্শে আসেন। উমাপ্রসাদ সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। তাঁরই উদ্যোগে তাঁদের বাড়ি থেকে প্রকাশিত 'বঙ্গবাণী' পত্রিকায় শরৎচন্দ্রের "পথের দাবী" ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে পুস্তকাকারেও বইটি তিনি প্রকাশ করেন। সরকার বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হলে দ্বিতীয় সংস্করণ ও তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেন। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন শরৎ রচনার 'ভাণ্ডারী', তাঁর কাগজপত্র, পাণ্ডুলিপি এমনকি উইলের রক্ষক পর্যন্ত। পরিব্রাজক হিসাবে উমাপ্রসাদের নিজের দেখা নিজের বিষয়কে নিয়ে সহজ ভাষায় যে সমস্ত বই লিখেছেন সেগুলি বিশিষ্ট সাহিত্য হয়ে উঠেছে। হিমালয় ও ভারতের গিরিপথ ও গিরিশৃঙ্গ বিষয়ে লেখা বইয়ের সংখ্যা বেশি। তিনি তার মণিমহেশ নামক ভ্রমণকাহিনীর জন্যে, ১৯৭১ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। আজ পরিব্রাজক ও সাহিত্যিক উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী এবং ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। পরিব্রাজক ও সাহিত্যিক উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:০২

প্রামানিক বলেছেন: উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

১২ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:১১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
প্রামানিক ভাই আমাদের সহ ব্লগার
বাবেয়া রাহীম আপুকে তো প্রায় মেরেই
ফেলছিলাম !!

বহুদিন পরে আপনি ফিরে আসার জন্য
আপনাকেও শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানাই।
আবার কবে আসবেন ভাই !!!

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:১০

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

৩| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১:২৮

জগতারন বলেছেন:
লেখক বলেছেন:
প্রামানিক ভাই আমাদের সহ ব্লগার
বাবেয়া রাহীম আপুকে তো প্রায় মেরেই
ফেলছিলাম !!

বহুদিন পরে আপনি ফিরে আসার জন্য
আপনাকেও শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানাই।
আবার কবে আসবেন ভাই !!!


সে প্রশ্নটি আমারও !

আমিও অনেক দিন যাবত ব্লগে প্রিয় প্রামানিক ভাই-এর অভাব অনুভব করতে ছিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.