নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালজয়ী দেশাত্মকবোধক গানের গীতিকার নয়ীম গহরের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৪১


বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিয়েছেন তাদেরই একজন নয়ীম গহর। জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো, নোঙ্গর তোলো তোলো সময় যে হলো হলো, ‘পূবের ঐ আকাশে সূর্য উঠেছে’ এমন সব কালজয়ী দেশাত্মকবোধক গানের গীতিকার ছিলেন নয়ীম গহর। তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, ঔপন্যাসিক, গায়ক, নায়ক, নাট্যকার, বিবিসি বাংলার ভাষ্যকার ও সংবাদ পাঠক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে দেশাত্ববোধক গান লিখে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে বিশেষ ভূমিকা ছিল এ গীতিকবির। তিনি মুক্তিযুদ্ধের আগেই নিজের লেখা দেশাত্মবোধক গানগুলো গোপনীয়তার সঙ্গে রেকর্ড করেছিলেন করাচী গিয়ে। তার সঙ্গে ছিলেন সুরস্রষ্টা আজাদ রহমানও। দেশাত্মবোধক গানের পাশাপাশি তিনি দুই শতাধিক গানের কথা লিখেছেন। সঙ্গীতের পাশাপাশি সংস্কৃতির অন্যান্য শাখাতেও নিজস্ব সৃষ্টিকর্ম নিয়ে প্রশংসা পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নয়ীম গহরের। নয়ীম গহর ঊনসত্তরের গণ–আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতাদের বিশেষ দূত হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা গ্রহণ করেন। তিনি জীবন বাজি রেখে বঙ্গবন্ধুর জরুরি বার্তা অতিগোপনে ২৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রামে এম আর সিদ্দিকীর কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমতো নয়ীম গহর জীবন বাজি রেখে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে তা পৌঁছে দিয়েছিলেন।বার্তাটি ছিল, ‘রাত ১২টায় অস্ত্র সমর্পণ করো না। চিটাগাং মুক্ত করো এবং কুমিল্লার দিকে অগ্রসর হও। আমি যদি মরেও যাই তাহলে আমার পূর্বের নির্দেশ পালন করো।’স্বাধীনতার জন্য শুধু গান রচনা করেউ মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেননি, এই দেশ ও জাতির জন্য অনেক অবদান রেখেও পরিণত বয়সে নয়ীম গহর আজ নিভৃতচারী। মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও নয়ীম গহর ইচ্ছে করেই মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র সংগ্রহ করেননি।পারিবারিকভাবে নয়ীম গহর ছিলেন অবস্থাসম্পন্ন। পরোপকারী এই মানুষটি একসময় সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়েন। নিজের অর্থ সম্পত্তি যা ছিল সবই মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। অনেকে তার সরলতার আশ্রয় নিয়ে প্রারণাও করে। শেষ বয়সে তার চিকিৎসা চালাতেও হিমশিম খেতে হয় পরিবারকে। সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৩ সালে তাকে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়। আজ গীতিকার নয়ীম গহরের মৃত্যুবার্ষিকীতেমুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের কালজয়ী দেশাত্মকবোধক গানের গীতিকার, স্বাধীনতা পদক বিজয়ী গীতিকবি নয়ীম গহরের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৫ সালের আজকের দিনে তিনি রাজধানীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমএসএসইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। কালজয়ী দেশাত্মকবোধক গানের গীতিকার নয়ীম গহরের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নয়ীম গহর ১৯৩৭ সালের ১৫ আগস্ট বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। কলেজ জীবনেই প্রথম শ্রেণির ইংরেজি পত্রিকা ‘অবজারভার’ এ ইংরেজি কবিতা দিয়ে তিনি নিজের প্রতিভা প্রকাশ করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকে প্রথম স্থান অধিকার করেন। একটা সময় চাকরি নিয়ে তিনি দেশের বাইরে গেলেও ফিরে এসেছেন মাটির টানে। যোগ দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন যোদ্ধা হিসেবে। আর সৃষ্টি করেছেন বহু আধুনিক ও মুক্তিযুদ্ধের হৃদয়স্পর্শী গান। একজন ভালোমানের চিত্রকরও ছিলেন তিনি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিদগ্ধ এই শিল্পমানব আজন্ম সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। সর্বমহলে পরিচিতি পেয়েছিলেন আধুনিক ও মুক্তিযুদ্ধের গণজাগরণী গান রচনার মধ্য দিয়ে। ১৯৭১ সালে অগ্নিঝরা দিনগুলোতে তার লেখা ‘নোঙ্গর তোলো তোলো’, ‘সাগর পাড়িতে ঝড় জাগে যদি’, ‘পূবের ঐ আকাশে সূর্য উঠেছে’, ‘জয় জয় জয় জয় বাংলা’সহ অন্যান্য গান একটি মুক্ত-স্বাধীন দেশ গড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছে। নয়ীম গহর বাংলাদেশে টেলিভিশনে প্রচারিত প্রথম নাটকের রচয়িতা। স্বাধীন বাংলাদেশে তার রচিত প্রথম নাটক ‘পাখি আমার জয়ন্ত’ বিটিভিতে প্রচারিত হয়। নাটকটি তিনি রচনা করেছিলেন নিজের ছেলের নামে। প্রসঙ্গত, জয়ন্ত তার ছেলের নাম। নাটকটির পরিচালক ছিলেন আবদুল্লাহ-আল-মামুন। প্রধান অভিনেতা-অভিনেত্রী ছিলেন সুজাতা ও গোলাম মুস্তাফা। এছাড়া দেশের প্রথম সর্বাধিক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানও শুরু হয় তার হাত ধরে। ফজলে লোহানী ও নয়ীম গহর মিলে একটি নতুন ধারার টিভি অনুষ্ঠান করেন ‘যদি কিছু মনে না করেন’ শিরোনামে। ‘ইচ্ছে করেই যারা ভুল করেন, জেনেও না জানার ভান করেন, তাদের কিছু ভুল বুঝিয়ে দেব’ এ গানটিও তারই রচনা। অনেক কবিতা ও ছোট গল্প রচনা করেছেন যা বিভিন্ন সময় অনেক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। তার প্রকাশিত সাহিত্যকর্মের মধ্যে ‘শব ও স্বগতোক্তি’ এবং ‘নিষিদ্ধ বিছানা’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ‘রাহুগ্রাস’ নামে তার একটি গল্পগ্রন্থ রয়েছে। গুণী এই গীতিকারের অসংখ্য লেখা এখনো অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। ২০১২ সালে এই গুণী শিল্পীকেদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ দেওয়া হয়।

ব্যক্তিগত জীবনে নয়ীম গহর বেগম রিজিয়া গহর এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সঙ্গীতশিল্পী তাজরীন গহর এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণী অভিনয়শিল্পী ইলোরা গহর তাদের কন্যা। স্ব স্ব অবস্থানে তারা খ্যাতিমান। ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর রাজধানীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমএসএসইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। বরেণ্য এ গীতিকার বেশ কিছু দিন ধরেই গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। উপরন্ত স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) করার কারণে তার স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। এছাড়াও তার ‍উরুতে একটি অস্ত্রোপচারের পর সেখানে পচন ধরে। দীর্ঘদিন বিছানায় থাকায় তার পিঠেও ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল। সবমিলিয়ে তার শারিরীক অবস্থা বেশ গুরুতর আকার ধারণ করেছিল। উল্লেখ্য নয়ীম গহরের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে, ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহযোগিতায় নয়ীম গহরের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল। মৃত্যুর পর তার মেয়ে অভিনেত্রী ইলোরা গহরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। কিংবদন্তিরা যুগে যুগে জন্ম নেন না। সে কারণে তাদের চলে যাওয়াটা হয় অনেক কষ্টের। সে কষ্টের অনুভূতি কেমন, তা মুখের কথায় বলে বোঝানো যাবে না। তেমনি বোঝানো যাবে না নয়ীম গহরের বিদায় বেদনার কথা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা ও সাহস জাগানো গীতিকার নয়ীম গহর আমাদের মাঝে নেই। তার মতো এমন সৃষ্টিশীল মানুষের চলে যাওয়া সংস্কৃতি অঙ্গনে এক শূন্যতা সৃষ্টি করেছে, যা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। গুণী এই গীতিকবির প্রয়াণদিনে তার বর্ণিল স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:১৫

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: কতো গুনীজন যে নিভৃতে চলে যায় তার খবর কেউ রাখে না। আপনাকে ধন্যবাদ

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
জুয়ান বয়সে উনার আমার মতো চুল ছিলো।

৩| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৩০

ঢুকিচেপা বলেছেন: খুব সুন্দর একটা আধুনিক গান।


গুণী এই গীতিকবির প্রয়াণদিনে তার বর্ণিল স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

৪| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৩৬

শায়মা বলেছেন: বাহ! এই গানটা তার লেখা!

মানে সোনার কাঁঠি রুপার কাঁঠি!!!

৫| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০২

জগতারন বলেছেন:
গুণী এই গীতিকবির প্রয়াণদিনে তার বর্ণিল স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

সহমত!!!!


৬| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১১

জগতারন বলেছেন:
শ্রদ্ধেয় গুনী গীতিকার নয়ীম গহরের-এর
স্মৃতি স্মরন করে (আমার পূর্বে না শোনা)
অসাধর একটি গান এখানে তুলে দেওয়ার জন্য
প্রিয় ব্লগার ঢুকিচেপা প্রতি অভিন্দন জানাই।

৭| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৪১

ঢুকিচেপা বলেছেন: @জগতারন ভাই অভিনন্দন জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
মূলতঃ এই গানটা রেডিওতে বাজতো, হয়তো আপনি দেশ থেকে চলে যাওয়ার পরে হতে পারে।
গানটা আমিও আগে শুনিনি, এটা আমার কালেকশনে ঢুকেছে গত বছর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.