নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
আজ ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। রাষ্ট্রসংঘ বার্ধক্যকে মানবজীবনের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে এ সমস্যা সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতি বছর ১ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালন করে আসছে সদস্য রাষ্ট্রগুলো। জীবন সায়াহ্নে তাদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান যেমন আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব তেমনি রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের সামাজিক সুরক্ষার জন্যও সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য তৈরী করা হয়েছে জাতীয় প্রবীণ নীতি। সংবিধানের ৪১ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রবীণ নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বলা হয়েছে ‘রাষ্ট্র তার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার মধ্যে থেকে প্রবীণদের ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য পাওয়ার সুনিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।’ সমতার অধিকারকে সংবিধানে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সমাজে প্রবীণদের গুরুত্বের কথা মনে, আজকের একক পরিবারে তাঁদের একাকিত্ব দূর করতে আমাদের সকলের উচিত তাঁদের প্রতি সহমর্মী হওয়া এবং তাঁদের সমস্যা বুঝে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস সেই দায়িত্ববোধের কথা মনে করিয়ে দেয়। সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টি কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিংশ শতাব্দীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি, সচেতনতা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন মৃত্যু হার যেমন হ্রাস করেছে তেমনি মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। ফলে, বিশ্ব সমাজে বয়স্কদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য ৬০ বছর ও তদূর্ধ্ব এবং উন্নত অঞ্চলের জন্য ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের প্রবীণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ বছর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্য "বৈশ্বিক মহামারির বার্তা, প্রবীণদের সেবায় নতুন মাত্রা’"। আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে বিশ্বের সকল প্রবীণদের জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।
প্রবীণ শব্দ উচ্চারণ মাত্র আমাদের চোখের সামনে যে-ছবিটা ভেসে ওঠে তাহলো একজন শুভ্রকেশধারী মানুষ যিনি বয়সের ভারে এবং বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় কাতর। কেউ কেউ অত্যন্ত অসহায়ভাবে জীবন যাপন করে থাকেন। পৃথিবীতে বাড়ছে প্রবীণদের সংখ্যা। উন্নত বিশ্বে প্রবীণদের মূল্যায়ন হলেও, শেষ জীবনে হতাশা বাড়ছে উন্নয়নশীল দেশের নাগরিকদের। বার্ধক্যে যৌবনের মত কাজের ক্ষমতা থাকে না, বেড়ে যায় নির্ভরশীলতা। প্রত্যাশা অনুযায়ি প্রাপ্তি না হলে অসহায় মনে হয় নিজেকে। তাই মানুষের জীবনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ বার্ধক্য। উন্নয়নশীল বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয় কারণঃ বাংলাদেশে বাড়ছে প্রবীণের সংখ্যা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ প্রবীণ নাগরিক রয়েছেন। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রবীণদের সংখ্যা হবে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। ২০৫০ সালে এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি এবং ২০৬১ সালে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি প্রবীণ জনগোষ্ঠী হবে। আর ২০৫০ সালে বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজনে একজন প্রবীণ হবেন, যা ওই সময়ের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। সবচেয়ে উদ্বেগের কথা ২০৫০ সারে বাংলাদেশে ২০৫০ শিশুর চেয়ে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা এক শতাংশ বেশি হবে। ওই সময়ে শিশুর সংখ্যা হবে ১৯ শতাংশ এবং প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা হবে ২০ শতাংশ। একথা অনস্বকার্য যে -প্রবীণরা নাগরিক হিসেবে বেশি অবহেলার শিকার, আর আধুনিক পরিবারে মনের কথা ভাগাভাগির সুযোগ পাননা প্রবীণরা। তা ছাড়া -প্রবীণদের সময় কাটানোর সুযোগ কম। তাই প্রবীণদের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নীতি-নির্ধারকের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এখনই। কারণ সময়ের সাথে নগরায়ন, শিল্পায়ন, চাকুরীগত কারণে বাঙালির ঐতিহ্যমন্ডিত যৌথ পারিবারিক ব্যবস্থা এখন আর নেই। সামাজিক মূল্যবোধের কিছু ফাটলের কারণে কারো বাবা-মায়ের জায়গা হচ্ছে ঘরের বাহিরে। আর কেউ তাদের আশ্রয়ে আপন মূল্যবোধের তাগিদে তৈরি করছে বৃদ্ধাশ্রম। হিসেব অনুযায়ী সেখানে আশ্রয় প্রার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে নারী প্রবীণরা দীর্ঘজীবী হলেও তাদের অধিকাংশই মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হন। আমাদের দেশে সরকারীভাবে বর্তমানে ২৪ লক্ষ ৭৫ হাজার দুঃসহ নারী ও পুরুষকে বয়স্কভাতা হিসেবে মাসে তিনশত টাকা দেয়া হয়। ছয়টি সেভ হোম বা শান্তিনিবাস আছে, তবে অব্যবস্থাপনায় ভরা। বেসরকারীভাবে দেশে কিছু বৃদ্ধাশ্রম আছে, যেখানে সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবারের অবহেলা, সন্তানদের উপক্ষোয় অশ্রপাত ও হৃদরোগে মৃত্যু প্রবীণদের একমাত্র নিয়তি।এ দুঃসহ জীবন যাপন শুধুমাত্র আসহায়ত্ব ও দূর্ভাগ্যজনক ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রবীণ মানুষগুলোর সুস্থজীবন যাপনের জন্য তাদের বার্ধক্যকে সম্মানজনকভাবে কাটানোর ব্যবস্থা করা প্রতিটি সন্তানদের দায়িত্ব হওয়া উচিত। কারণ তাদের বাদ দিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সামাজিক সম্মানবোধ ও মানব মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে, করুণা করে নয় বরং ভালোবাসা আর সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমেই সকল সন্তান তথা দায়িত্বপ্রাপ্তদের তাদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। অধিকারের প্রশ্নে নয় বরং তাদের জীবনের শেষভাগ যেন সফল, সার্থক, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও আপনজনের সান্নিধ্যে কাটে তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হতে হবে। কারো জীবনের শেষ সময়টা যেন পরিবারহীন বৃদ্ধাশ্রমে না কাটে। আজ যাদের প্রবীণ বলা হচ্ছে, তাদের জীবনে আমরাও একদিন প্রবেশ করবো। আজকের সন্তান আগামী দিনের পিতা বা মাতা হবে। তাদের জগত আমাদের দেখানো পথেই চলবে। বৃদ্ধাশ্রম যেন কোন বাবা-মায়ের শেষ বয়সের ঠিকানা না হয়। মূলত আর্থিক অসচ্ছলতার কারণেই প্রবীণরা পরিবারে ও সমাজে উপেক্ষা, অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হন। কারণ এই বয়সে তাদের যত্ন নেওয়াকে অনেকে বড় সমস্যা মনে করে। বোঝা হিসেবে বিবেচিত করায় কখনো কখনো ভিক্ষাবৃত্তি বা অন্যের করুণার পাত্র হয়ে বাকিজীবন অতিবাহিত করতে হয়। সুতরাং প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের থেকে পাওয়া ভালোবাসা প্রয়োজনের সময় তাদের দিতে হবে। রাখতে হবে তাদের স্বাস্থ্য, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক বিষয়ের খবরাখবর। নতুন প্রজন্মের এই শিক্ষক-অভিভাবক, পথের দিশারীদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে জাতিকে তথা দেশকে। প্রবীণদের প্রতি তরুণ প্রজন্মের অসম্মান কখনও বাঙালির মূল্যবোধ হতে পারে না। কারণ প্রবীণরা অভিজ্ঞতার সম্পদ, আমাদের কাছে উজ্জীবনী শক্তি হিসেবে চলমান ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবীণ নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার লক্ষ্যে সংবিধানে সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদ সংযুক্ত করেন। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার বয়স্কভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করে যার আওতায় বর্তমানে মাসিক ৫০০ টাকা হারে প্রান্তিক পর্যায়ে ৪৪ লক্ষেরও অধিক প্রবীণ নাগরিক ভাতা পাচ্ছেন। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ৪৯ লক্ষ প্রবীণ নাগরিককে এ সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রবীণদের মর্যাদাসম্পন্ন, দারিদ্র্যমুক্ত, কর্মময়, সুস্থ ও নিরাপদ পারিবারিক ও সামাজিক জীবন নিশ্চিত করতে ‘সিনিয়র সিটিজেন নীতিমালা’, ‘জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩’ এবং ‘পিতামাতার ভরণ-পোষণ আইন-২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রবীণদের মৌলিক ও মানবিক অধিকার অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়াসে প্রণীত হয়েছে প্রবীণ বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা। সরকারের গৃহীত এসকল পদক্ষেপ প্রবীণদের কল্যাণে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে প্রবীণদের সম্মান করা, শ্রদ্ধা করা, মর্যাদা দেয়া ও সহায়তা করা আমাদের কর্তব্য। আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে বিশ্বের সকল প্রবীণদের জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
০১ লা অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৩০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনার ধারণা কি?
আমি প্রবীন না নবীন?
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:১০
রাজীব নুর বলেছেন: মুরুব্বী আপনি কি প্রবীণদের কাতারে আছেন?