নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
‘কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে মিলি যবে পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরি কুঁড়ে ঘরে।’
কবিতার রচয়িতা কবি শেখ ফজলুল করিম সাহিত্য বিশারদ। বাঙালি মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয় হয়ে রয়েছেন তাদের মধ্যে শেখ ফজলল করিম হলেন অন্যতম। সমকালীন মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে তার অবস্থান ছিল প্রথম সারিতে। গদ্য ও পদ্য উভয় শাখায় তার সমুজ্জল উপস্থিতি। ভাবের গভীরতাকে সরলভাবে উপস্থাপন করা ফযলল করিমের লেখনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে কাজ করে গেছেন। তার সাহিত্যিক জীবনের উন্মেষ ছোট বেলা থেকেই। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি “সরল পদ বিকাশ” কবিতা গুচ্ছ প্রকাশ করেন। এরপর থেকে তিনি আজীবন সাহিত্য সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তার সাহিত্যকর্মে ধর্ম ও নীতি শাস্ত্র বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে। নৈতিক আদর্শে সমৃদ্ধ কবিতা ও গদ্য লিখে তিনি প্রভুত সুনাম অর্জন করেন। মুসলিম ইতিহাস, মুসলিম উপাখ্যান, মুসলিম জীবন ইত্যাদি ছিল তার সাহিত্যের মূল উপজীব্য বিষয়, ছাত্রাবস্থায় ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘আহমেদিয়া লাইব্রেরী’ নামক একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছিলেন। স্কুলের বাধা ধরা নিয়ম কানুন তার কখনোই ভালো লাগেনি। তবে বাইরের প্রচুর বই অধ্যয়নে তার অনীহা ছিল না। বিশেষ করে ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থের প্রতি তার আকর্ষণ ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রচুর জ্ঞান পিপাসা ও অনুশীলন তার লেখার জগতকে সমৃদ্ধি করেছে। শেখ ফজলল করিমের সাহিত্যের উপজীব্য বিষয় ধর্মীয় হলেও দৃষ্টি ভঙ্গির উদারতা ও সাহিত্যিক প্রসাদ গুণে তার সৃষ্টি সার্বজনীন হয়ে উঠেছে। শেখ ফজলল করিমের পরিচিতি মূলতঃ একজন কবি হিসেবে কিন্তু আমরা দেখি তিনি কবিতা ও কাব্য ছাড়াও লিখেছেন অসংখ্য প্রবন্ধ, নাট্যকাব্য, জীবনী গ্রন্থ, ইতিহাস গবেষণামূলক নিবন্ধ, সমাজ গঠন মূলক তত্ত্বকথা, গল্প, শিশুতোষ সাহিত্য, নীতি কথা, চরিত্র গ্রন্থ এবং বিবিধ সমালোচনামূলক রচনা, সাহিত্যের সকল শাখায় ছিল তার প্রবল পদচারণা। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে অবিভক্ত বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমানদের অবস্থান মোটেও সুদৃঢ় ছিল না। ব্রিটিশ ভারতে তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা ছিল সুস্থ মননশীল সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। কবি শেখ ফজলল করিম সে সময়ে কবি বা গদ্য লেখক হিসেবে তিনি তার সাহিত্যের মাধ্যমে সুপরিচিত হয়েছিলেন। এটা তার অসীম কৃতিত্বের পরিচয়। সাহিত্য বিশারদ, কাব্য রত্নাকার, নীতিবাদী সাহিত্যিক শেখ ফজলল করিমের ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৩৬ সালের আজকে দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বরেণ্য কবি ও সাহিত্যিক শেখ ফজলল করিমের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
কবি শেখ ফজলল করিম লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় ১৮৮৩ সালের ১লা মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আমীর উল্লাহ সরদার ও মাতার নাম কোকিলা বিবি। শৈশবে কাকিনা স্কুল থেকে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে শেখ ফজলল করিম মধ্য ইংরেজি পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে রংপুর জেলা স্কুল থেকে তিনি মাইনর পরীক্ষায় পাস করেন। শৈশবে কাকিনা স্কুল থেকে ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে শেখ ফজলল করিম মধ্য ইংরেজী পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে রংপুর জেলা স্কুল থেকে তিনি মাইনর পরীক্ষায় পাশ করেন। অত:পর নানা কারণে তার স্কুল জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। কবি শেখ ফজলল করিম তিনি লেখালেখি শুরু করেন মাত্র ১২ বছর বয়সে। এ সময় তিনি ‘সরল পদ্য বিকাশ’ নামে একটি শিশুপাঠ্য কবিতার বই প্রকাশ করেন। ফলে সেই বাল্যকালেই তার কবিশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। এরপর থেকে একে একে তিনি লিখেছেন তৃষ্ণা, পরিত্রাণ, অগ্রবীণা বা ইসলাম চিত্র, লাইলি-মজনু, মহর্ষি হযরত খাজা মইনউদ্দীন চিশতি (রহঃ), মুন্সী মেহেরুল্লাহ্ শোক গাথা, রাজা মহিমারঞ্জন শোকগাথা, সরদার বংশ চরিত, মুন্সী মোহাম্মাদ সাহেবের স্বর্গাবোহানে মর্মগাথা, মহর্ষি হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ), পরশমণি (হজরত জীবনী), ছোটদের কবিতা উচ্ছ্বাস, রাজর্ষি মহিমারঞ্জন, মাথার মণি, রাজা মহিমা রঞ্জনের পশ্চিম ভ্রমণ, পান্থশালা, আফগানিস্তানের ইতিহাস, ভক্তি পুষ্পাঞ্জলি, পথ ও পথের গাথা, হারুন-অর-রশীদের গল্প, চিন্তার চাষ, সোনার জাতি, বিবি খাদিজা, প্রেমের স্মৃতি, যীশুখ্রিষ্টের জীবনী সমালোচনাসহ বিভিন্ন গ্রন্থ। ওমর খৈয়ামের অনুবাদও তিনি করেছেন। লিখেছেন ছেলেদের শেক্সপিয়ার। তবে তার অনেক পাণ্ডুলিপি অপ্রকাশিত অবস্থায় রয়ে গেছে। অনেক পাণ্ডুলিপি কলকাতার নূর লাইব্রেরিতে প্রকাশের অপেক্ষায় ছিল। হয়তো এখনো সেই অবস্থাতেই রয়েছে। কবি ফজলল করিমের সাহিত্যকর্মে রয়েছে সুফিবাদের সুর। তার সম্পর্কে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অগণিত সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের ধারণা যে কতটা উজ্জ্বল তা কবির বাড়িতে সংরক্ষিত পরিদর্শন খাতা দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু কবির রেখে যাওয়া সবকিছু অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
কর্মজীবনে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি পাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমডি. কোম্পানিতে চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন। স্বাধীনচেতা ফজলল করিম কোম্পানির মন যুগিয়ে কাজ করতে না পারায় স্বীয় চাকরি থেকে স্বেচ্ছায়, পদত্যাগ করেন। সাহিত্যের প্রতি তার প্রচন্ড আগ্রহের কারণে কর্মজীবন ফজলুল করিমকে তেমন ভাবে আকর্ষণ করতে পারে নি। তবে ছোটবেলাতেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আয়ত্ত করেছিলেন যা তিনি কাজে লাগাতেন গ্রামের দরিদ্র মানুষের সেবায়। তিনি বাড়িতে বসেই দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা করতেন। সাহিত্য সৃষ্টি, প্রকাশনা ও সাধনার পথে ধাবমান শেখ ফজলুল করিম কাকিনায় নিজ বাড়িতে তার পীর সাহেব হযরত মওলানা মহম্মদ শাহ সাহাব উদ্দীনের নামানুসারে তৎকালীন প্রায় দেড় হাজার টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘সাহাবিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস’। তিনি শেষ জীবন পর্যন্ত লেখার জগত নিয়ে জীবন অতিবাহিত করেন। তার জীবনী ও প্রকাশনা অনুসন্ধান করলে দেখা যায় তিনি কবিতা বা কাব্য ছাড়াও বহু প্রবন্ধ, নাট্যকাব্য, জীবনগ্রন্থ, ইতিহাস, গবেষণামূলক নিবন্ধ, সমাজ গঠনমূলক ও তত্ত্বকথা গল্প, শিশুতোষ সাহিত্য এবং অন্যান্য সমালোচনামূলক রচনা লিখেছেন। তার প্রকাশিত অপ্রকাশিত প্রায় ৫৫টি গ্রন্থ রয়েছে। শেখ ফজলল করিমের পরিচিত মূলত কবি হিসেবে হলেও তার জীবনী ও প্রকাশনা অনুসন্ধান করলে দেখা যায় তিনি কবিতা বা কাব্য ছাড়াও বহু প্রবন্ধ, নাট্যকাব্য, জীবনগ্রন্থ, ইতিহাস, গবেষণামূলক নিবন্ধ, সমাজ গঠনমূলক ও তত্ত্বকথা গল্প, শিশুতোষ সাহিত্য, নীতি কথা চরিত গ্রন্থ এবং অন্যান্য সমালোচনামূলক রচনা লিখেছেন। পুঁথি সম্পাদনার ক্ষেত্রেও তার পরিচিত পাওয়া যায়। তার প্রকাশিত অপ্রকাশিত প্রায় ৫৫টি গ্রন্থ রয়েছে। ফজলল করিম রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে তৃষ্ণা (১৯০০), পরিত্রাণ কাব্য (১৯০৪),ভগ্নবীণা বা ইসলাম চিত্র (১৯০৪), ভুক্তি পুষ্পাঞ্জলি (১৯১১) অন্যতম। অন্যান্যের মধ্যে উপন্যাস লাইলী-মজনু, শিশুতোষ সাহিত্য হারুন-আর-রশিদের গল্প, নীতিকথা চিন্তার চাষ, ধর্মবিষয়ক পথ ও পাথেয় প্রভৃতি অন্যতম। এছাড়া প্রচারক, নবনূর, কোহিনূর, বাসনা, মিহির ও সুধাকর, ভারতবর্ষ, সওগাত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, আরতি, কম্পতারু শিশু সাথী, মোসলেম ভারত মাসিক মোহাম্মদী, বসুমতী ইত্যাদি পত্রপত্রিকায় শেখ ফজলল করিমের অসংখ্য কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, উপন্যাস, অনুবাদ প্রকাশিত হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে ছাত্রাবস্থায় কাকিনা স্কুলে ৭ম শ্রেণীতে পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয় কালীগঞ্জ উপজেলার বিন বিনিয়া গ্রামের গনি মোহাম্মদ সর্দারের মেয়ে বসিরণ নেসা খাতুনের সঙ্গে। দাম্পত্য জীবনে দু’ পুত্রের জনক ছিলেন কবি। তাঁর প্রথম পুত্র মাত্র ৩ দিন জীবিত ছিল। দ্বিতীয় পুত্রের নাম মতিয়ার রহমান। সাহিত্যের স্বীকৃতিসরুপ জীবনকালেই তিনি বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন। বাসনা সম্পাদনার সময় রোমিও-জুলিয়েট সম্পর্কিত তার একটি কবিতা পাঠ করে তৎকালীন হিন্দু সাহিত্যিকেরা তাকে বাংলার শেক্সপিয়র আখ্যা দেন। পথ ও পাথেয় গ্রন্থের জন্য তিনি রৌপ্যপদক লাভ করেন। ১৩২৩ বঙ্গাব্দে নদীয়া সাহিত্য সভা তাকে সহিত্যবিশারদ উপাধিতে ভূষিত করেন। চিন্তার চাষ গ্রন্থের জন্য তিনি নীতিভূষণ, কাশ্মীর শ্রীভারত ধর্ম মহামন্ডল তাকে রৌপ্যপদকে ভূষিত করে। এ ছাড়া তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাকে কাব্য ভূষণ, সাহিত্যরণ, বিদ্যাবিনোদ, কাব্যরত্নাকর, ইত্যাদি উপাধিত ও সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৩৬ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর তার নিজ গ্রাম লালমনিরহাটের কাকিনায় তাকে সমাহিত করা হয়। সাহিত্য বিশারদ, কাব্য রত্নাকার, নীতিবাদী সাহিত্যিক শেখ ফজলল করিমর ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বরেণ্য কবি ও সাহিত্যিক শেখ ফজলল করিমের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সাচু ভাই তাতে আপনার আমার কি লাভ হতো বলেন !!!
২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: স্বনামধন্য বাঙালি সাহিত্যিক ও কবি শ্রদ্ধা জানাই।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
স্বনামধন্য বাঙালি সাহিত্যিক ও কবি
শেখ ফজলল করিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানােনোর
জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই যুগে সপ্তম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় বিয়ের বিধান থাকলে ভালো হত।