নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
অবিভক্ত ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন উৎখাত করার অন্যতম প্রভাবশালী ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী ভগৎ সিং। তাঁকে শহীদ ভগৎ সিংহ নামে অভিহিত করা হয়। ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ড তার মনে গভীর রেখাপাত করে। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল ভগৎ সিং সেই মর্মান্তিক ঘটনা শোনেন, এরপর তিনি বাসে করে ৪০/৫০ মাইল দূরে অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে ছুটে যান। সেখানকার ত্রাস ও দুর্যোগের পরিবেশ উপেক্ষা করে কুড়িয়ে আনেন সেই রক্তরঞ্জিত মাটি। এই মাটি তাঁর কাছে সোনার চেয়েও খাঁটি। এ মাটি বিদ্রোহের প্রতীক। এভাবে ভগৎ সিং ছেলেবেলা থেকেই ব্রিটিশদের প্রতি ঘৃণা ও বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রর্দশন করেছেন। আর দেশকে মুক্ত করার জন্য জীবন বাজী রেখে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদের দেয়া ফাঁসির রজ্জু হাসিমুখে বরণ করেছেন। ১৯০৭ সালের আজকের দিনে তিনি পাঞ্জাবের লায়ালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। আজ এই মহান বিপ্লবীর ১১৩তম জন্মবার্ষিকী। শহীদ বিপ্লবী ভগৎ সিং এর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
১৯০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিম পাঞ্জাবের লায়লপুর জেলার বংগা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ভগৎ সিং। ভগৎ সিংহের এর পিতার নাম সর্দার কিসান সিংহ সান্ধু ও মায়ের নাম বিদ্যাবতী। ভগৎ সিংয়ের প্রাথমিক পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর স্কুলে পড়ার পালা। কিন্তু ভগৎ সিং তাঁর সমবয়সী ছেলেদের মতো লাহোরের খালসা হাইস্কুলে পড়াশোনা করেননি। কারণ এই স্কুলে পড়াশুনা করলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য দেখাতে হয়। যে কারণে তাঁর ঠাকুরদাদা তাঁকে এখানে পড়াশুনা করাতে রাজি ছিলেন না। তিনি ভগৎ সিংকে অন্য একটি স্কুলে পড়াশুনা করানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাই ভগৎ সিংয়ের বাবা তাঁকে আর্যসমাজের বিদ্যালয় দয়ানন্দ অ্যাংলো-বৈদিক স্কুলে ভর্তি করান। মেট্রিক পাসের পর ভগৎ সিং ন্যাশনাল কলেজে (স্বদেশী বিদ্যালয়) ভর্তি হন। ওই কলেজে পড়াকালে আজীবন সংগ্রামের সাথী শুকদেব, যশপাল ও ভগবতীচরণ ভোরার সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি খুব মনোযোগী ও পরিশ্রমী ছাত্র ছিলেন। ইতিহাস ও রাজনীতি বিষয়ক পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। সহপাঠীদেরকে নিয়ে নিয়মিত পাঠচক্র করতেন। ইতালির দেশপ্রেমিক ম্যাৎসিনি ও গ্যারিবল্ডি, আয়ারল্যান্ডের বিপ্লবী ইমন-ডি-ভ্যালেরা ও রুশ বিপ্লবী ক্রোপটকিনের ঘটনাবহুল জীবনের নানা দিক নিয়ে এ সময় পড়েন। আরও পড়লেন ভলতেয়ার আর রুশোর রচনাবলী। লাহোরের ন্যাশনাল ড্রামাটিক ক্লাবের সদস্য হয়ে যুবকদের মধ্যে স্বদেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার জন্য অভিনয় করলেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত, রাণাপ্রতাপ, ভারত দুর্দশা নাটকে। ভগৎ সিং কিশোর বয়সে লাহরের ন্যাশনাল কলেজে পড়াশুনা আরম্ভ করেন কিন্তু বাল্য বিবাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং ‘নওজাওয়ান ভারাত সাভা’ (ভারত যুব সভা) এর সদস্য হন। এই সংস্থায় ভগৎ সিং এবং তার আর বিপ্লবী সহকর্মীরা যুবকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
ভগৎ সিং যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সেটি ছিল এক দেশপ্রেমিক শিখ পরিবার। এই পরিবারের কোনো কোনো সদস্য ভারতের বিভিন্ন স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কৈশোরেই ভগৎ ইউরোপীয় বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে পড়াশোনা করেন এবং নৈরাজ্যবাদ ও কমিউনিজমের প্রতি আকৃষ্ট হন। এরপর তিনি একাধিক বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।মাত্র ১৩ বছর বয়সে ভগৎ মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। এই সময় তিনি প্রকাশ্যে ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরোধিতা করেন এবং তাঁর সরকারি স্কুলবই ও বিলিতি স্কুল ইউনিফর্ম পুড়িয়ে ফেলেন। ১৯২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী হঠাৎ উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর জেলার চৌরীচেরা গ্রামে কৃষকদের শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন হঠিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ জনতার উপর গুলি চালায়। এতে কয়েকজন কৃষক মারা যায়। ফলে বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘেরোও করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। থানার ভিতর ২২ জন পুলিশ পুড়ে মারা যায়। এই ঘটনার কারণে গান্ধীজী অসহযোগ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান। এতে হতাশ হয়ে ভগৎ যুব বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন এবং সশস্ত্র বিপ্লবের পন্থায় ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন উৎখাত করার কথা প্রচার করতে থাকেন। ব্রিটিশ সরকার বিপ্লবীদেরকে দমনের জন্য পুলিশকে অধিক ক্ষমতা প্রদান করে ভারত প্রতিরক্ষা আইন পাশ করার সমস্ত প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করে। ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলিতে আইনটির অধ্যাদেশ পাশ হবার সিদ্ধান্ত হয়। এই আইনকে রুখে দেওয়ার জন্য ভগৎ সিং এর ‘হিন্দুস্থান সোসালিস্ট রিপাবলিকান এসোসিয়েশন’ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। দলের নেতা ভগৎ সিং এর নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত হয় ৮ এপ্রিল সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলিতে এর প্রতিবাদে বোমা নিক্ষেপ করা হবে। উদ্দেশ্যটা রক্তপাত ঘটানো ছিল না; তাঁরা চেয়েছিলেন, ভগৎ সিং এর ভাষায় ‘বধিরের কানের কাছে আওয়াজ তুলতে’। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত বোমা নিক্ষেপ করবেন আর দলের অন্যরা তাঁদেরকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিবেন। ৮ এপ্রিল যথাসময়ে ‘বধিরের কানের কাছে আওয়াজ পৌঁছানোর’ জন্য ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর বোমা নিক্ষেপ করে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’, ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ শ্লোগান দেন, যে-আওয়াজ ওইভাবে এর আগে কখনো শোনা যায়নি। পলায়নের চেষ্টা না-করে তাঁরা নির্ভয়ে ইস্তাহার বিলি করতে থাকেন। এসময় পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে।
জেলে বন্দী থাকাকালে ভগৎ সিং ব্রিটিশ ও ভারতীয় বন্দীদের সমানাধিকারের দাবিতে ৬৪ দিন অনশন করেন। সে সময় ভারতীয় বন্দীদের চেয়ে ব্রিটিশ চোর ও খুনিদের প্রতি অধিকতর ভাল আচরণ করা হত। ৬৪ দিন অনশনের ফলে ব্রিটিশ সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। ভগৎ সিং জেলে থাকার সময় ডায়রী লিখতেন। তিনি প্রচুর বই পড়তেন। যে কথাগুলো ভালো লাগত, সেগুলো টুকে রাখতেন নিজের ডায়েরিতে। ১৯৩০-৩১ সালে জেলের মধ্যে ফাঁসির অপেক্ষায় যখন ভগৎ সিং এর দিন কাটছিল সে সময় তিনি ‘Why I am an Atheist’ প্রবন্ধটি লিখেছিলেন। ফাঁসির কয়েক মাস পরে ‘The People’ (Lahore, 27 Sept. 1931) নামক পত্রিকায় প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। ১৯৩০ সালের ৭ অক্টোবর। তিন ব্রিটিশ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত এক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরুকে অপরাধী সাব্যস্ত করে এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় প্রদান করে। অবশেষে ১৯৩১ সালের ২৩ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায় এই তিন বিপ্লবীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আজ ২৭ সেপ্টেম্বর, ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বাপেক্ষা বলিষ্ঠ ধারার অন্যতম পথিকৃৎ 'শহীদ-ই-আজম্' ভগৎ সিং এর ১১৩তম জন্মবার্ষিকী। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী ভগৎ সিং এর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
একাল-সেকাল ভাই
দেশপ্রেম আর ধর্ম দু্টি আলাদা বিষয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ
হয়েছেন ইতিহাস স্বাক্ষী আর তা বিশ্বজনীনভাবে
স্বীকৃত। এই ৩০ লক্ষ শহীদ যাদের বলা হয় তারা কি
সবাই মুসলমান? যা হোক কে জান্নাতে প্রবেশ করবেন
তা একমাত্র আল্লহ ভালো জানেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: হুম! কত শহীদের রক্তে রঞ্জিত আমাদের এ ভূখন্ড! কত মানুষের আত্মত্যাগে আমরা ভোগ করছি স্বাধীনতা! আর কষ্টে অর্জিত সে স্বাধীনতাকেও অর্থহীন করে তুলছে কিছু অর্থগৃধ্নু, ক্ষমতাপিপাসু, ধর্ষকামী নরপিশাচ!
আমাদের 'অন্ধ ও বধির'গুলোর চোখ ও কানের কাছে "আওয়াজ" শোনাবে কে????
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ খায়রুল ভাই। ক্ষৃদিরাম, মাষ্টারদা
সূর্যসেন, প্রতিলতাদের মতো এমন
বীরদের আজ একান্ত প্রয়োজন আমাদের দেশে।
৩| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১০
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
ভগৎ সিং এর মুভি দেখেছি।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ খানসাব
মুভি দেখেন ভালো থাকেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০০
একাল-সেকাল বলেছেন:
অমুসলিমরাও কি শহীদের মর্যাদা সম্পন্ন নাকি শহীদ শব্দটা শুধু মাত্র মুসলিমদের জন্য ই সংরক্ষিত !
ইসলামে শহীদ দের জন্য আছে জান্নাত, অবিশ্বাসীরা জান্নাতে প্রবেশ করবেনা।