নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুই বাংলায় সমান বিখ্যাত সঙ্গীতকার কবীর সুমনের ৭১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৬ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৫৩


প্রতিবাদে, প্রেমে, বিপ্লবে ভারতীয় বাঙালি গায়ক কবীর সুমন। একই সাথে তিনি একজন গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, কবি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, টিভি উপস্থাপক ও নৈমিত্তিক অভিনেতা। এছাড়াও সুমন একজন বিশিষ্ট আধুনিক ও রবীন্দ্রসংগীত গায়ক। অনেকে তাকে ডাকেন ‘নাগরিক কবিয়াল’। অনেকে তার গানকে বলেন ‘জীবনমুখী’। ১৯৯২ সালে তার তোমাকে চাই অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি বাংলা গানে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। অনেকে তাকে বাংলার বব ডিলানও বলে থাকেন। বব ডিলানের ‘ব্লোইং ইন দ্যা উইন্ড’ এর বাংলা রুপান্তর ‘কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়’ দিয়ে বব ডিলানকে বাংলায় একটা অতি চেনা নামে পরিণত করেছেন কবীর সুমন। বাংলা গানে পশ্চিমা প্রভাবের সংমিশ্রণে এক নতুন ধাঁচের গান প্রবর্তনের জন্য বিখ্যাত তিনি। সুমনের বেশিরভাগ গানই শুধু পিয়ানো, গিটার বা সিনথেসাইজার এর একক তানে তৈরি। ’৯০ এর পরে গায়ক ও গীতিকারদের একটা পুরো প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছেন কবীর সুমন। তার অনুসারীদের মধ্যে আছেন নচিকেতা, অঞ্জন দত্ত, লোপামূদ্রা মিত্র, শ্রীকান্ত আচার্য্যসহ আরও অনেকেই। তার স্বরচিত গানের অ্যালবামের সংখ্যা পনেরো। সঙ্গীত রচনা, সুরারোপ, সংগীতায়োজন ও কণ্ঠদানের পাশাপাশি গদ্যরচনা ও অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তিনি স্বকীয় প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। তিনি একাধিক প্রবন্ধ, উপন্যাস ও ছোটোগল্পের রচয়িতা এবং হারবার্ট ও চতুরঙ্গ প্রভৃতি মননশীল ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের রূপদানকারী। বিশিষ্ট বাংলাদেশি গায়িকা সাবিনা ইয়াসমিন তার বর্তমান সহধর্মিনী। নন্দীগ্রাম গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষিজমি রক্ষার ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন এবং সেই সূত্রে সক্রিয় রাজনীতিতে তার আবির্ভাব ঘটে। ২০০৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দেশের পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ও জয়লাভ করে উক্ত কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০৯ এর মে থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিনি ইন্ডিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আজ সঙ্গীতকার কবীর সুমনের ৭১তম জন্মবার্ষিকী। আধুনিক বাংলা গানের কিংবদন্তি সঙ্গীতকার কবীর সুমনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

কবীর সুমন ১৯৪৯ সালের ১৬ মার্চ ওড়িষার কটকে এক বাঙালি হিন্দু ব্রাহ্মন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বনাম সুমন চট্টোপাধ্যায়। ২০০০ সালে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে তিনি তার পুরনো নাম পরিত্যাগ করেন। তার বাবা সুধীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মা উমা চট্টোপাধ্যায়। বাবার কাছে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের তালিম নেয়া সেই ছোট্টবেলাতেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক শেষ করে ফ্রেঞ্চ ও জার্মান ভাষায় ডিপ্লোমা নেন সুমন। এরপর কিছুদিন অল ইন্ডিয়া রেডিও আর ইউনাইটেড ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতে কাজ করেন। সত্তরের মাঝামাঝি সুমন গুয়াতেমালায় চলে যান। এক জায়গায় বেশিদিন তিনি থিতু হননি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তিনি স্থান বদল করেছেন। দেখেছেন বিভিন্ন ধাঁচের মানুষ, এসেছেন ভিন্ন ভিন্ন সাংস্কৃতিক ধারার সংস্পর্শে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল অবধি তিনি ভয়েস অব জার্মানীর বাংলা বিভাগে কাজ করেন। ফ্রান্সে থাকাকালে সুমন বব ডিলানের গানের ছোঁয়ায় আসেন। সে ছিল তার জন্য এক যুগান্তকারী অভিজ্ঞতা। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত কবীর সুমন আমেরিকায় ছিলেন। সেখানে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগে কাজ করেছেন। এখানে কাজ করার সময় তিনি পিট সিগার, মায়া অ্যাঞ্জেলোসহ বেশ কিছু গুণী সাহিত্যিক ও সঙ্গীত বিষয়ক ব্যক্তিত্বের সাথে পরিচিত হন। আশির দশকের মাঝামাঝিতে সুমন নিকারাগুয়ায় স্যান্ডিনিস্টা বিপ্লব নিয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে পড়েন। পিট সিগারের বদৌলতেই সুমনের পরিচয় হয় আর্নেস্টো কার্ডেনালের সাথে। একইসাথে ধর্মযাজক, কবি ও মুক্তিসংগ্রামী আর্নেস্টো কার্ডেনাল ছিলেন সেসময় নিকারাগুয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রী। কার্ডেনালের আমন্ত্রনেই সুমন ১৯৮৫ সালে নিকারাগুয়ায় যান। সেখানে গিয়ে ল্যাটিন আমেরিকার সঙ্গীত জগতে যে নতুন বিপ্লব চলছিল, তার সংস্পর্শে আসেন সুমন।

১৯৮৯ সালে জার্মান ইন্টারন্যাশনাল রেডিওর সাথে দ্বিতীয় চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ করে সুমন কলকাতায় ফিরে আসেন। কলকাতায় তিনি প্রথম যোগ দিয়েছিলেন ‘নাগরিক’ ব্যান্ডের সাথে। এই ব্যান্ডের সাথে বের হয় তার দু’টি অ্যালবাম- ‘অন্য কথা অন্য গান ১’ ও ‘অন্য কথা অন্য গান ২’। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল প্রকাশিত হয় তার প্রথম অ্যালবাম ‘তোমাকে চাই’। বাংলা গানে নতুন মাত্রা যোগ করলো এই অ্যালবাম। এখনও দুই বাংলায় সমান আবেদনময়ী ‘তোমাকে চাই’সহ এই অ্যালবামের বাঁকি গানগুলো। ২০১০ সাল অবধি সুমনের কুড়িটির বেশি অ্যালবাম বের হয়েছে। তার গানগুলো বাংলা গানের ক্রমবিবর্তনে এক বিশাল প্রভাব রেখেছে। ‘চন্দ্রবিন্দু’র মতো বেশ কিছু ব্যান্ড তার দ্বারা সম্যক প্রভাবিত হয়ে পথ চলেছে, চলছে। বলা যায়, আধুনিক বাংলা গানে একটা চিরস্থায়ী প্রভাব রাখা বিপ্লব ঘটে গেছে কবীর সুমনের হাত ধরে। কবীর সুমনের মন কেড়ে নেওয়া সব অ্যালবামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো তোমাকে চাই (১৯৯২), ইচ্ছে হলো (১৯৯৩), গানওয়ালা (১৯৯৪), ঘুমাও বাউন্ডুলে (১৯৯৫), চাইছি তোমার বন্ধুতা (১৯৯৬), জাতিস্মর (১৯৯৭), নিষিদ্ধ ইশতেহার (১৯৯৮), যাবো অচেনায় (২০০১), লালমোহনের লাশ (২০১০) ইত্যাদি। ২০১২ এ বের হয় সুমনের ‘৬৩ তে’। এরপর থেকে তিনি প্রতিবাদে, বিপ্লবে ও রাজনৈতিক ইস্যুতে বেশী নিমগ্ন হয়ে পড়েন।

ব্যাক্তিগত জীবনে সুমন চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে প্রখ্যাত বাংলাদেশি গায়িকা সাবিনা ইয়াসমিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। তাকে বিয়ে করার সময়ই সুমন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নাম পরিবর্তন করে কবীর সুমন রাখেন। তার ভাষ্যমতে কবীর নামটি ‘বৈষ্ণব পদাবলি’র রচয়িতা মধ্যযুগীয় বাঙালি কবি শেখ কবীরের নাম থেকে নেয়া। নিজের আলাদা চিন্তাধারার জন্যে বহুবার আলোচিত- সমালোচিত হয়েছেন সুমন। কবীর সুমন মানে শুধুই কী গান? শুধুই সুর? শুধুই লিরিক? অবশ্যই না। কবীর সুমন আসলে একটা অধ্যায়। গানও যে হয়ে উঠতে পারে প্রতিবাদের ভাষা, বিপ্লবের স্লোগান-- নজরুল, রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা গানের জগতে তা বোধহয় এই একটি মানুষের ক্ষেত্রেই বলা যায়। গানের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছিলেন প্রত্যক্ষ রাজনীতির হাত ধরতে। ধরেছেন, সাংসদও হয়েছেন। নিজের দলের সঙ্গেই মনোমালিন্যে দূরে চলে গিয়েছেন অনেকটাই। আবার 'প্রয়োজন মাফিক' ফিরে গেছেন নিজের 'চেনা সীমানায়'। অনেকেই তাঁকে বলেছেন 'সুবিধাবাদী', তিনি নিজেও নিজেকে তা বলেছেন একাধিকবার। কিন্তু একজন কবীর সুমনের মধ্যে দিয়েই গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন- পৃথিবীর এক প্রান্তের সাথে আরেক প্রান্তের। সমাজ ও সংস্কার থেমে যাওয়ার হাত থেকে নিস্কৃতি পায়।আজ তিনি ৭১এ। আরও অনেকদিন বেঁচে থাকুন আধুনিক বাংলা গানের এই কিংবদন্তী। তার বন্ধনহীন চিন্তাধারা আর উচ্চতর জীবনবোধ নিয়ে আরও প্রভাবিত করতে থাকুন পরবর্তী প্রজন্মকে।

আজ সঙ্গীতকার কবীর সুমনের ৭১তম জন্মবার্ষিকী। আরও একটা ধাপ বয়স বাড়ল শরীরের। কিন্তু আপনার মন তো চিরতরুণ, চিরসবুজের মতো সতেজ। তাই কথা, শব্দ, সুর আর কবীর সুমন নামক এক মহীরুহ গানের জগতে বেঁচে থাক শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। আধুনিক বাংলা গানের কিংবদন্তি সঙ্গীতকার কবীর সুমনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:০৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আপনি লিখে ফেললেন! জানতাম আপনারই লেখার কথা।:)
এইমানুষটা আমার জীবন একই সেটা বোঝাতে পারবো। কোনদিন হয়তো গান ই শোনা হতোনা , কবীর সুমন না গেয়ে উঠলে। ব্লগে স্বপ্নবাজ সৌরভ নাম কাউকে পেতেন না হয়তো।

অসম্ভব প্রিয় মানুষটার জন্য শুভকামনা। আমার জীবনে আরাধ্য একজন কবির সুমন।

শ্রদ্ধাভাজন প্রিয় মানুষকে নিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় প্রিয় ব্লগার।

১৬ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ধন্যবাদ স্বপ্নবাজ সৌরভ
আমার উপর আস্থা রাখার জন্য।
বিখ্যাত সঙ্গীতকার কবীর সুমনের
জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।

২| ১৬ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: স্যলুট।

১৬ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ।
মাথা ঠান্ডা হইছে
নাকি বিয়ে করার
হাউস এখনো আছে?

৩| ১৬ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৫৪

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই নূরু দা

১৬ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে লিটন ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.