নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
উনিশ শতকের বাঙালি রেনেসাঁ ঐতিহ্যের শেষ বুদ্ধিজীবী হিসেবে অভিহিত স্বনামধন্য বাঙালি কবি ও লেখক অন্নদাশঙ্কর রায়। সাহিত্যের সব শাখায় তার অবাধ বিচরণ থাকলেও তিনি ছড়াকার হিসেবে বেশি পরিচিত। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অন্নদাশঙ্কর রায় ২০ বছর বয়সে ওড়িয়া সাহিত্যিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বাংলা, ইংরেজি, ওড়িয়া, সংস্কৃত, হিন্দি-সব ভাষায় পারদর্শী হলেও বাংলাকেই তিনি সাহিত্যচর্চার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। বাড়ির ও কলেজের গ্রন্থাগারে তিনি ভারতীয় এবং ইউরোপীয় সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হন। তার অনেক লেখা লীলাময় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল। অন্নদাশঙ্কর রায়ের প্রথম কবিতা ওড়িয়া ভাষায় রচিত। কম বয়সে প্রভা নামে ওড়িয়া ভাষায় হাতে লেখা একটি পত্রিকাও বের করেন তিনি। ওড়িয়া ভাষায় অন্নদাশঙ্করের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকৃত ও আলোচিত হয়। স্কুলে তিনি শিশু, সন্দেশ, মৌচাক, সবুজপত্র, প্রবাসী, মডার্ন রিভিউ প্রভৃতি পত্রিকা পড়ার সুযোগ পান। তেরো বছর বয়সে অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত পত্রিকার গ্রাহক হন এবং সে পত্রিকায় লেখা ছাপেন। দীর্ঘজীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রায় সত্তর বছর ধরে তিনি প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, ছড়া, কবিতা, নাটক, পত্রসাহিত্য, আত্মজীবনীমূলক রচনা প্রভৃতি লিখে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন। বাংলা ভাষা ও বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রতি অন্নদাশঙ্কর রায়ের দরদ ও সমমর্মিতা আজীবন অটুট ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর অন্নদাশঙ্কর ১৯৭৪ এবং ১৯৯৬ সালে দু’বার এদেশে আসেন সরকারের অতিথি হিসেবে। তার অনেক সাহিত্যকর্ম বাংলাদেশে বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। আজ ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি, চিন্তাবিদ অন্নদাশঙ্কর রায়ের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯০৫ সালের আজকের দিনে তিনি ওড়িশার দেশীয় রাজ্য ঢেঙ্কানালে জন্মগ্রহণ করেন। স্বনামধন্য বাঙালি কবি ও লেখক অন্নদাশঙ্কর রায়ের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছ।
বাঙালী লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় ১৯০৪ সালের ১৫ মার্চ ব্রিটিশ ভারতে বর্তমান উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নিমাইচরণ রায় এবং মাতা হেমনলিনী। পিতা নিমা্ই চরণ ছিলেন ঢেঙ্কানল রাজ স্টেটের কর্মী এবং মা কটকের প্রসিদ্ধ পালিত বংশের কন্যা। অন্নদাশঙ্করের শিক্ষাজীবনের শুরু হয় ঢেঙ্কানলে। ১৯২১ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি কটকের র্যাভেনশ কলেজ থেকে আই.এ পরীক্ষা দেন এবং তাতে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পরীক্ষাতেও তিনি ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯২৭ সালে এমএ পড়াকালে আইসিএস পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয়বারে আগের রেকর্ড ভেঙে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে এ গৌরব লাভ করেন। ওই বছরে তিনি সরকারি খরচে আইসিএস হতে ইংল্যান্ড যান। সেখানকার দুই বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী ‘পথে প্রবাসে’ নামে বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়। অন্নদাশঙ্কর রায় ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন কন্যা অ্যালিস ভার্জিনিয়া অনফোর্ডকে বিবাহ করে তাঁর নাম দেন লীলা রায় । লীলা রায় বহু বই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। অন্নদাশঙ্করের অনেক লেখা লীলাময় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল।
কর্মজীবনে অন্নদাশঙ্কর রায় ১৯৩৬ সালে নদীয়া জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দেন। তিন বছর এই পদে থেকে কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কাজ করে কুমিল্লা জেলায় জজ হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৫০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিচার বিভাগের সেক্রেটারি হন। ১৯৫১ সালে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন। চাকরি ছাড়ার পর অন্নদাশঙ্কর রায় শান্তিনিকেতনে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বাঙালির আত্মদান তাঁর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। পরের বছর ১৯৫৩ সালে তিনি এক ঐতিহাসিক “সাহিত্য মেলা”র আয়োজন করেন শান্তিনিকেতনে। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এই সাহিত্য মেলায় যোগ দেন কাজী মোতাহার হোসেন, মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, শামসুর রাহমান, কায়সুল হক এবং আরো অনেকে। অন্নদাশঙ্করের শান্তিনিকেতনের বাড়িতে নিয়মিত “সাহিত্য সভা” হতো এবং সেখানে আশ্রমের সাহিত্য রসিকদের সমাবেশ ঘটত। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি বহু পণ্ডিত তাঁর বাড়িতে অতিথি হয়ে আসতেন। নানা দেশের নানা ভাষার মানুষের সমাগমে সেখানে এক আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল তৈরী হতো। শান্তিনিকেতনে অবস্থানকালে অন্নদাশঙ্কর বিশ্বভারতীর কর্মসমিতির সদস্য ছিলেন। ষাট দশের শেষ দিকে পারিবারিক কারণে কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে থেকে যান।
অন্নদাশঙ্করের সাহিত্যসৃষ্টি বৈচিত্র্যপূর্ণ। তিনিই বাংলায় প্রথম লিমেরিক রচনা করেন। আধুনিক বাংলা ছড়ায় যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তার সূত্রপাত করেন অন্নদাশঙ্কর। কেবল আঙ্গিকে নয়, ভাববৈচিত্র্যেও তাঁর রচনা কালোত্তীর্ণ। বহুমুখী ভাবানুভূতি তাঁর রচনার বিশেষত্ব। বিষয়বৈচিত্র্যে তাঁর রচনা সমৃদ্ধ। ইতিহাস, সাহিত্যতত্ত্ব, দর্শন, সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমকালীন বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ তাঁর গদ্যের বিষয়। প্রবন্ধসাহিত্যে অন্নদাশঙ্কর ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের সার্থক উত্তরসূরি। তবে রবীন্দ্রযুগের লেখক হলেও তাঁর স্টাইল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি ছিলেন মুক্তচিন্তা, আদর্শবাদ ও শুভবুদ্ধির প্রতীক। দেশভাগ, দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাঁর লেখনী ছিল আজীবন সোচ্চার। প্রায় সত্তর বছর ধরে অন্নদাশঙ্কর গদ্য ও পদ্য উভয় ক্ষেত্রেই ভুমিকা রেখেছেন। ছড়া, কবিতা, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী মিলিয়ে তার গ্রন্থের সংখ্যা বাংলা ১২৩, ইংরেজী ৯ এবং ওড়িয়া ভাষায় ৩। তিনি প্রবন্ধ লিখেছেন যেমন সমাজ সংস্কৃতির সঙ্কট নিয়ে, তেমনি লিখেছেন রাজনৈতিক বিষয়-আশয় নিয়ে। শিল্পীর স্বাধীনতা ও নন্দনতত্ত্বের জটিল জিজ্ঞাসা নিয়ে লিখেছেন। মিল্টন, ভলতেয়ার, রুশো, রমা রলাঁ, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী, টলস্টয়, বঙ্গবন্ধু, নজরুলকে নিয়েও লিখেছেন। তার প্রথম উপন্যাস 'আগুন নিয়ে খেলা' (১৯৩০), প্রথম কবিতার বই 'রাখী' (১৯২৯), প্রথম ছড়ার বই 'ইড়কি ধানের মুড়কি' (১৯৪২), ছোটদের বই 'রাঙা ধানের খই' (১৯৫০), প্রথম গল্পগ্রন্থ 'প্রকৃতির পরিহাস' (১৯৩১), প্রথম কাব্য নাটক 'রাতের অতিথি' (১৯৫৪), প্রথম ভ্রমণ কাহিনী 'পথে প্রবাসে' (১৯৩১)। অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- উপন্যাসঃ সত্যাসত্য (৬টি উপন্যাস), অসমাপিকা, পুতুল নিয়ে খেলা, না ও কন্যা। প্রবন্ধঃ তারুণ্য, আমরা, জীবনশিল্পী, জীয়নকাঠি, দেশকালপাত্র, প্রত্যয়, নতুন করে বাঁচা ও আধুনিকতা। আত্মজীবনীঃ বিনুর বই, ও জাপানে। ছোটগল্পঃ দু কান কাটা, হাসন সখী, মন পাহন ও গল্প। অন্নদাশঙ্কর রায়ের ইংরেজি রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: Bengali Literature (1942) Flight and Pursuit (1968), Yes, I Saw Gandhi (1976), Companion on the Road কবিতার অনুবাদ— (1976), A Writer Speaks (1977) Woman and Other Stories গল্পের অনুবাদ— (1977), An Outline of Indian Culture 1978 Aspects of Indian Culture (1983), In Restrospect (1989), Tolstoy Goethe and Tagore (1999), Selected Short Stories (গল্পের অনুবাদ—1999)|
সাহিত্যকর্মের জন্য বহু পুরস্কারে ভূষিত হন অন্নদাশঙ্কর রায়। ১৯৭৯ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘জগত্তারিণী’ পুরস্কারে ভূষিত করে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে প্রদান করে ‘দেশিকোত্তম’ সম্মান। বর্ধমান, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধি প্রদান করে। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৬২), আনন্দ পুরস্কার (দুইবার- ১৯৮৩, ১৯৯৪), বিদ্যাসাগর পুরস্কার, শিরোমণি পুরস্কার (১৯৯৫), রবীন্দ্র পুরস্কার, নজরুল পুরস্কার, এবং বাংলাদেশের জেবুন্নিসা পুরস্কার। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অকাদেমির জন্মকাল ১৯৮৬ সাল থেকে তিনি ছিলেন এর আজীবন সভাপতি ও পথিকৃৎ। এছাড়াও তিনি সাহিত্য আকাদেমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ফেলো ছিলেন। ২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর কলকাতায় পরলোকগমন করেন অবিভাজ্য বাঙালি অন্নদাশংকর রায়। বাঙালির দেশ বাংলা দেশ ভাগ হবার পরও যিনি ভাগ হন নি। দেশবিভাগ জনিত বেদনা তীর্যকভাবে প্রকাশ পেয়েছে তার 'খোকা ও খুকু’ (১৯৪৭) ছড়ায়- ‘তেলের শিশি ভাঙল বলে/খুকুর পরে রাগ করো,/তোমরা যে সব বুড়ো খোকা/ভারত ভেঙে ভাগ করো। তার বেলা?’ ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি, চিন্তাবিদ অন্নদাশঙ্কর রায়ের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী আজ। শতাব্দীর অতন্দ্র প্রহরী ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি, চিন্তাবিদ অন্নদাশঙ্কর রায়ের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
১৫ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৫০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আর, আপনাকে ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
২| ১৫ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৩
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আকাদেমি না একাডেমি?
১৫ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৫৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বাংলাদেশে যেটা একাডেমি
ভারতে সেটা্ই আকাদেমি
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: অন্নদাশঙ্কর রায়ের জন্য শ্রদ্ধা।