নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
আগের পর্ব
RECAP: ধর্ম হল লিপিবদ্ধ সুবিন্যস্ত প্রত্যাদেশসমূহ, যেগুলো সাধারণত ঈশ্বর-প্রত্যাদিষ্টদের মাধ্যমে বাহিত ও প্রচারিত। ধর্ম বলতে ঈশ্বরাজ্ঞা ও ধর্মানুষ্ঠান-নির্ভর আচার, আচরণ ও প্রথাসমূহের প্রতি বিশ্বাস-নির্ভর আনুগত্য; যা সাধারনত "আধ্যাত্মিক" ব্যাপারে "দৃঢ় বিশ্বাস" এঁর সাথে সম্পর্ক যুক্ত; এবং বিশেষ পূর্বপুরুষ হতে প্রাপ্ত ঐতিহ্য, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা, রীতি-নীতি ও প্রথা কে মানা এবং সে অনুসারে মানবজীবন পরিচালনাকে বোঝায়। মানবসভ্যতার সূচনালগ্নে সাম্য-মৈত্রী ও জীবননির্দেশনা নিয়ে পৃথিবীতে ধর্মের আগমন ঘটে। আল্লাহ প্রদত্ত বা আসমানি ধর্ম ছাড়াও পৃথিবীতে মানবরচিত অনেক ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছে। তবে কালের বিবর্তনে টিকে আছে খুব অল্পসংখ্যক ধর্মই। ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে বর্তমানে চার হাজার ৩০০ ধর্মের অস্তিত্ব রয়েছে; যদিও সব ধর্মের অনুসারী ও বিস্তৃতি সমান নয়। ইসলাম ধর্মএকটি একেশ্বরবাদী এবং ইব্রাহিমীয় ধর্মবিশ্বাস যার মূল শিক্ষা হল, এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই এবং মুহাম্মদ হলেন আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূল। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল। প্রধান ধর্মঅনুসারীর সংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীর প্রধান ১০টি ধর্ম হলো ১। খ্রীষ্ট ধর্ম, ২। ইসলাম ধর্ম, ৩। হিন্দু ধর্ম, ৪। বৌদ্ধ ধর্ম, ৫। হান ধর্ম, ৬। শিখ ধর্ম, ৭। ইহুদি ধর্ম, ৮। বাহাই ধর্ম. ৯। জৈন ধর্ম এবং ১০। শিন্তো ধর্ম। আজ দ্বিতীয় পর্বে পরবর্তী প্রধান ৫চি ধর্ম নিয়ে প্রকাশিত হলো ২য় পর্ব।
৬। শিখ ধর্মঃ
ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবর্তিত ধর্মগুলোর অন্যতম শিখ ধর্ম। এই অঞ্চলের অন্যান্য ধর্মের মতো এর শক্তিশালী দার্শনিক ভিত্তি আছে। একেশ্বরবাদী ধর্মটি খ্রিষ্টীয় ১৫ শতকে পাঞ্জাব অঞ্চলে প্রবর্তিত হয়। এই ধর্মের মূল ভিত্তি গুরু নানক দেব ও তার উত্তরসূরি দশজন গুরুর ধর্মোপদেশ। এর মধ্যে ধর্মগ্রন্থ ‘গ্রন্থসাহেব’ দশম গুরু হিসেবে বিবেচিত। অনুসারী বিবেচনায় শিখ ধর্মের অবস্থান ষষ্ঠ। বিশ্বজুড়ে আনুমানিক তিন কোটি মানুষ শিখ ধর্মে বিশ্বাস করে। একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী এই ধর্মানুসারীদের নেতাকে বলা হয় গুরু। শিখ শব্দটির অর্থই শিষ্য। শিখরা বিশ্বাস করে, পৃথিবীতে প্রচলিত কোনো ধর্মই পরম সত্য নয়, কিংবা কোনো ধর্মই পূর্ণাঙ্গ মিথ্যা নয়। নানক ও তার পশ্চাতে তার উত্তরসূরিগণ সূফী ছিল, সেখান থেকে তাদেরকে শিখ বলা হয়, শিখ অর্থ সায়্যেদ অথবা ফারুক (অর্থাৎ পৃথককারী)। শিখরা এগারো হিজরি শতাব্দীতে নানকের জনৈক নাতির আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত সূফীবাদ তরিকা প্রতিপালন করছিল, কিন্তু সে তাদেরকে সুগঠিত যুদ্ধবাজ সংগঠনে রূপ দেয় এবং শিখ নাম পরিবর্তন করেন সিং গ্রহণ করে, যার অর্থ সিংহ, তবে তাদের পুরনো নামই অধিক প্রসিদ্ধ। তখন থেকে শিখরা আক্রমণাত্মক ও যুদ্ধংদেহী জাতিতে পরিণত হয়। তারা তাদের প্রতিবেশী হিন্দু ও মুসলিমদের সাথে বিরতিহীন যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
শিখদের বিশ্বাসঃ
নানক যার বিধান দিয়েছে তার সাথে তার উত্তরসূরিগণ অনেক আকিদা ও ইবাদত যোগ করেছে। তন্মধ্যে কিছু হিন্দু ধর্মের সাথে সামঞ্জস্যশীল, কিছু ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যশীল। তারা শিখকে আলাদা জাতিতে রূপ দেয়, এমনকি প্রতীক ও পোশাকেও তারা আলাদা। তাদের গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় আকিদা:
১. সৃষ্টিকারী এক রবের ইবাদত করা ও মূর্তিপূজা অস্বীকার করা।
২. তারা বিশ্বাস করে, তাদের ইমাম (যাদেরকে তারা গুরু বলে), রব ও সৃষ্টির মাঝে মধ্যস্থতাকারী।
৩. তাদের পবিত্র কিতাব বিশ্বাস করা, যার নাম (গ্রন্থ)।
৪. পুনর্জন্মে বিশ্বাস করা, যেমন হিন্দুদের নিকট প্রসিদ্ধ।
৫. স্বর্ণখচিত ইবাদত গৃহের (অমৃতসর শহরের) হজ করা, তার হাউজে গোসল করা। হাউজ সম্পর্কে তারা সে আকিদা পোষণ করে যেরূপ পোষণ করে হিন্দুরা গঙ্গা সম্পর্কে।
৭। ইহুদি ধর্মঃ
ইহুদি ধর্ম অত্যন্ত প্রাচীন, একেশ্বরবাদী ধর্ম। ধারণাগত মিল থেকে ধর্মতাত্ত্বিকগণ ধারণা করেন যে, ইহুদি ধর্মের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে খ্রিস্ট ধর্ম, ইসলাম ধর্ম ইত্যাদি ইব্রাহিমীয় ধর্ম। এই ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রথম পাঁচটি বইকে গণ্য করা হয়: জেনেসিস, এক্সোডাস, লেভিটিকাস, নাম্বারস, এবং ডিউটেরোনমি। এই পাঁচটি বইকে একত্রে "তোরাহ"ও (Torah) বলা হয়ে থাকে। মুসলমানগণ মোজেসকে মূসা নবী হিসেবে মানেন। এবং মুসা নবীর উপর নাজিলকৃত ধর্মগ্রন্থকে তাওরাত নামে অভিহিত করেন। ইহুদি ধর্মবিশ্বাসমতে, ঈশ্বর এক, আর তাঁকে জেহোবা (Jehovah, YHWH) নামে আখ্যায়িত করা হয়। মোসেয হলেন ঈশ্বরের একজন বাণীবাহক। ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের মতোই ইহুদিগণ পূর্বতন সকল বাণীবাহককে বিশ্বাস করেন, এবং মনে করেন মোজেসই সর্বশেষ বাণীবাহক। ইহুদিগণ যিশুকে ঈশ্বরের বাণীবাহক হিসেবে অস্বীকার করলেও, খ্রিস্টানগণ ইহুদিদের সবগুলো ধর্মগ্রন্থ (ওল্ড টেস্টামেন্ট)কে নিজেদের ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মান্য করে থাকেন। ইহুদি ধর্ম সেমেটিক ধর্ম হিসেবেও অভিহিত।
অনুসারীর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ ধর্ম ইহুদি। এই ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা এক কোটির বেশি, যার ৪৩ শতাংশই ইসরায়েলে বসবাস করে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বাস করে আরো ৪৩ শতাংশ ইহুদি। বাকিরা লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ায় বসবাস করে। এই ধর্মের ইতিহাস তিন হাজার বছরেরও পুরনো। ব্রোঞ্জ যুগে মধ্যপ্রাচ্যে এই ধর্মের আবির্ভাব হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত, যাকে হিব্রু বাইবেল ও তানাখও বলা হয়।
৮। বাহাই ধর্মঃ
বাহাই ধর্ম বা বাহাই বিশ্বাস হচ্ছে বাহাউল্লাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একেশ্বরবাদী একটি ধর্ম বা বিশ্বাস। বাহাই ধর্মাবলম্বীরা পৃথিবীর অষ্টম বৃহৎ ধর্মীয় জনগোষ্ঠী। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মির্জা হুসাইন আলী তথা বাহাউল্লাহ তৎকালীন পারস্যে (বর্তমান ইরান) এই ধর্মের প্রচার করেন। অনেকেই একে ধর্ম না বলে একটি বিশেষ বিশ্বাস হিসেবেও উল্লেখ করেন। ‘কিতাবুল আকদাস’ এই ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ। মানবজাতির ঐক্য ও মেলবন্ধনই এই ধর্মের মূল লক্ষ্য। বিশ্বের দুই শরও বেশি দেশে ৭০ লাখের বেশি মানুষ বাহাই মতবাদে বিশ্বাস করে।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে পারস্যে (বর্তমানে ইরান) এই ধর্মের উৎপত্তি। মূলত মানবজাতির আত্মিক ঐক্য হচ্ছে এই ধর্মের মূল ভিত্তি। বিশ্বে বর্তমানে ২০০-এর বেশি দেশ ও অঞ্চলে এই ধর্মের আনুমানিক প্রায় ৬০ লক্ষ অনুসারী রয়েছে। বাহাই বিশ্বাস অনুসারে ধর্মীয় ইতিহাস স্বর্গীয় দূতদের ধারাবাহিক আগমণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। এইসব দূতদের প্রত্যেকে তাদের সময়কার মানুষদের সামর্থ্য ও সময় অনুসারে একটি ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই সকল স্বর্গীয় দূতদের মাঝে আছেন ইব্রাহিম, গৌতম বুদ্ধ, যীশু, মুহাম্মাদ ও অন্যান্যরা। সেই সাথে খুব সাম্প্রতিককালে বাব ও বাহাউল্লাহ। বাহাই ধর্ম মতে এসকল দূতগণ প্রত্যেকেই তাদের পরবর্তী দূত আসার ব্যাপারে, ও তাদেরকে অনুসরণ করতে বলে গেছেন। এবং বাহাউল্লার জীবন ও শিক্ষার মাধ্যমে দূতগণের এই ধারা ও পূববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলোর অঙ্গীকার সম্পূর্ণ হয়েছে। মানবতা সমষ্টিগত বিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে ধরা হয়েছে, এবং বৈশ্বিক মাপকাঠিতে সার্বিকভাবে শান্তি, সুবিচার ও ঐক্য প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে বর্তমান সময়ের প্রয়োজনীয়তা।
৯। জৈন ধর্মঃ
জৈনধর্ম হলো ভারতীয় উপমহাদেশের একটি প্রাচীন ধর্ম। এই ধর্ম বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মমতগুলোর অন্যতম। জৈন শব্দটি এসেছে সংস্কৃত জিন শব্দ থেকে। সংস্কৃতিতে জিন অর্থ জয়ী। যে মানুষ আসক্তি, আকাঙ্ক্ষা, ক্রোধ, অহংকার, লোভ ইত্যাদি জয়ের মাধ্যমে পবিত্র অনন্ত জ্ঞান লাভ করেছে, তাকে জিন বলা হয়। জিনদের আচরিত ও প্রচারিত পথের অনুগামীদের বলে জৈন। এরা তাদের প্রধান ধর্মগুরুকে বলতেন তীর্থঙ্কর। জৈনরা তাদের ইতিহাসে চব্বিশজন তীর্থঙ্করের কথা উল্লেখ করেছেন। এঁদের শিক্ষাই জৈনধর্মের মূল ভিত্তি। প্রথম তীর্থঙ্করের নাম ঋষভনাথ এবং সর্বশেষ তীর্থঙ্করের নাম মহাবীর। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে জৈনধর্মের সর্বাধিক প্রভাবশালী প্রচারক ছিলেন মহাবীর। তিনি জৈনধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর। মহাবীরকে অনেক সময় ভুলবশত জৈনধর্মের প্রবর্তক মনে করা হয়। প্রকৃতপক্ষে জৈনধর্ম তাঁর আগে থেকে প্রচলিত ছিল এবং তিনি গোড়া থেকেই এই ধর্মের অনুগামী ছিলেন।সংস্কৃত শব্দ ‘জৈন’ অর্থ বিজয়ী। জৈন ধর্মের মূল বিশ্বাস হলো, পৃথিবীতে ২৪ জন ‘তীর্থঙ্কর’ বা বিজয়ী মহাপুরুষের আগমন ঘটেছিল, যাঁরা নিজ নিজ সময়ে মানবজাতির ত্রাণকর্তা ও শিক্ষক ছিলেন। এই ২৪ জনের মধ্যে সর্বপ্রথম পৃথিবীতে এসেছিলেন ঋষভ, যাঁর আগমন ঘটেছিল লাখ লাখ বছর আগে। সর্বশেষ ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীরের আগমন ঘটে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে। এটি একটি ভারতীয় ধর্ম। অহিংসা ও আত্মসংযমের মাধ্যমে জন্ম-মৃত্যু-জন্মের চক্র থেকে মোক্ষ তথা মুক্তিলাভই জৈন ধর্মের মূল সাধনা। আধুনিক বিশ্বে জৈনধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম হলেও এই ধর্ম বেশ প্রভাবশালী। বিশ্বে ৪০ লাখ মানুষ জৈন ধর্মের অনুসারী, যাদের এক-তৃতীয়াংশের বসবাস ভারতে। ভারতে জৈন ধর্মবলম্বীদের সংখ্যা প্রাায় ১০,২০০,০০০ জন। এ ছাড়া উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও বিশ্বের অন্যত্র অভিবাসী জৈনদের দেখা মেলে।
১০। শিন্তো ধর্মঃ
জাপানের স্থানীয় এবং অনানুষ্ঠানিক একটি রাষ্ট্রীয় ধর্ম শিন্তো। শিন্তৌ জাপান রাষ্ট্র এবং জাপানি জাতির জাতীয় আধ্যাত্মিকতা এবং প্রচলিত ধর্ম। এটিকে আচারনির্ভর ধর্ম বলা হয়। এটা এমন একটি ধর্ম, যার কোনো ঈশ্বর নেই, প্রচারক নেই, ধর্মগ্রন্থ নেই, পরকাল নেই, নেই কোনো বিধিবদ্ধ রীতিনীতি। শিন্তো ধর্মের মূলকথা হলো, সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ নেই, তবে কিছু স্বাধীন আত্মা বা স্বর্গীয় সত্তা আছেন, যাঁদের নাম ‘কামি’। এই কামিরা পৃথিবীর মানুষের কল্যাণকামী। যেকোনো ধর্মের মানুষই শিন্তো মন্দিরে যাতায়াতের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রথা এবং আচারের মাধ্যমে এই ধর্ম পালিত হয় যা বর্তমান এবং অতীতের মাঝে যোগসূত্র স্থাপন করেছে। জাপানী পুরাণ খ্রিস্টের জন্মের ৬৬০ বছর পূর্বে শিন্তো ধর্ম উৎপত্তি লাভ করে খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকে কোজিকি এবং নিহন শকি'র ঐতিহাসিক দলিলে শিন্তো আচারের কথা লিপিবদ্ধ আছে। শিন্তো শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দেবতার পথ। শিন্তো শব্দটি শিন্দো শব্দ থেকে এসেছে।শিন্ডো শব্দটির মূল খুঁজে পাওয়া যায় চীনা শব্দ শেন্ডো থেকে। শিন্তো শব্দটি দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত। শিন অর্থ ইংরেজি স্পিরিট বা আধ্যাত্বিক শক্তি এবং তো অর্থ পথ। শিন্তো জাপানের প্রধান ধর্ম। দেশটির ৮০% মানুষ বিভিন্ন ভাবে শিন্তো রীতিনীতি পালন করে কিন্তু আদমশুমারীর সময় খুব অল্প সংখ্যক লোক নিজেদেরকে শিন্তো ধর্মানুসারী বলে পরিচয় দেয়। প্রকৃতপক্ষে, জাপানে শিন্তো একটি পরম্পরাগত ব্যাপার। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে শিন্ট ধর্মাবলম্বী হওয়ার মতো কোন ব্যাপার নেই । কিছু প্রথাগত বিশ্বাস এবং তার ভিত্তিতে বিশেষ বিশেষ উতসব অনুষ্ঠান উপলক্ষে শিন্ট ধর্মস্থান গুলিতে মানুষের জমায়েত হওয়া থেকেই সাখ্যাতা অনুমান করে নিতে হয় ।জাপানে ৮১০০০ শিন্ত ধর্মস্থান এবং ৮৫০০০ ধর্মগুরু রয়েছেন ।ধারণা করা হয়, পৃথিবীর ৪০ লাখ মানুষ শিন্তো মতবাদে বিশ্বাস করে।
উপসংহারঃ
পৃথিবীতে মুসলিম জনগষ্ঠি বিপুল বৃদ্ধির অনেক কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে উচ্চ জন্মহার। ইউরোপ, রাশিয়া, চীনসহ আমেরিকার দেশগুলোতে ধর্মহীন জীবন-যাপন করা, লিভটুগেদার আর বিয়ে বা সংসার করে বাচ্চা-কাচ্চা নেয়ার প্রবণতা অনেক কম। তাছাড়া টোটাল ফার্টিলিটিও কম। তাই এসব অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা নিতান্ত অপ্রতুল (বৃদ্ধির হার – ০.৫ থেকে ০.৯)। অন্যদিকে মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলোতে ধর্মীয় প্রভাব আর পারিবারিক অবকাঠামো অটুট থাকার পাশাপাশি উচ্চ জন্মহারের কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক বেশী (বৃদ্ধির হার ১.০ থেকে > ২.০)। পিআরসি বলে, বিশ্বের ১৭৫টি দেশের ২ হাজার ৫০০ জরিপ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে এই বিশ্লেষণ করেছে পিউ। তবে তারা এটাও বলেছে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বড় ধরণের সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক পরিবর্তন, সশস্ত্র যুদ্ধ, ইত্যাদি বিষয়গুলো এই স্বাভাবিক প্রবণতাকে ব্যাহতও করতে পারে। তা না হলে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ধর্মভিত্তিক মানচিত্র হবে এ রকমই। পিউ রিসার্চের ২০১৭ সালের তথ্যেও দেখা যায়, ইসলাম হচ্ছে সর্বাধিক জনপ্রিয় রাষ্ট্রীয় ধর্ম। শিয়া ও সুন্নি ইসলাম মিলিয়ে ২৭টি দেশে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। পিউ-র গবেষণায় বলা হয়, ২০৫০ সালে ইউরোপের ১০ শতাংশ মানুষ মুসলমান হয়ে যাবে। একই সময় নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়াবে ২.১ শতাংশ। সেখানে মুসলমানদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ৪৮ শতাংশ মার্কিনির। অন্যদিকে দলীয় ভিত্তিতে ৫৬ শতাংশ ডেমোক্র্যাট মুসলিমদের পছন্দ করে। তবে রিপাবলিকানদের মধ্যে মুসলিমদের পছন্দ করে ৩৯ শতাংশ। এদিকে চীনে প্রতিনিয়তই মুসলিম নির্যাতনের খবর শোনা যায়। কিন্তু চীনা তরুণদের মধ্যে দেখা গেছে এর বিপরীত চিত্র। নতুন এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, চীনা তরুণদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। সেখানকার মুসলিমদের রোজা রাখা, নারীদের হিজাব পরাসহ ইসলাম পালন নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষাপটে এই তথ্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বেইজিংয়ের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত ‘চীনা ধর্ম জরিপ’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, ৩০ বছরের নীচের তরুণদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। এর আগে ২০১০ সালে পিউ রিসার্চ জানায় যে ‘নাস্তিক’ চীনে ২ কোটি ৩৩ লাখ মুসলমান বাস করেন, যা মোট জনসংখ্যার ১.৮ শতাংশ।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
১২ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে
-কাজী নজরুল ইসলাম
খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে
ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ এল যে এই পথ ধরে।।
দুনিয়াদারীর শেষে আমার নামাজ বদলাতে
চাই না বেহেশত খোদার কাছে নিত্য মোনাজার ক’রে।।
কায়েস যেমন লায়লী লাগি’ লভিল মজনু খেতাব,
যেমন ফরহাদ শিরীর প্রেমে হ’ল দিওয়ানা বেতাব,
বে-খুদীতে মশগুল আমি তেম্ খোদার তরে।।
পুড়ে মরার ভয় না রাখে, পতঙ্গ আগুনে ধায়,
সিন্ধুতে মেটে না তৃষ্ণা চাতক বারি বিন্দু চায়,
চকোর চাহে চাঁদের সুধা, চাঁদ সে আসমানে কোথায়
সুরুয থাকে কোন্ সুদূরে সূর্যমুখী তারেই চায়,
তেমনি আমি চাহি খোদায়, চাহিনা হিসাব ক’রে।।
২| ১২ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
চীনের তরুণরা কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না, ওরা কম্প্যুটারে বিশ্বাস করে; আপনি বেঠিক পরিসংখ্যন ব্যবহার করছেন।
১২ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:২৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
শতকরা হারের দিক থেকে চীনে নাস্তিকের হার সবচেয়ে বেশি।
দেশটির ৬৭ শতাংশ মানুষই ধর্মে বিশ্বাস করেন না। প্রতি ১০
জনের মধ্যে ৭ জনই নিজেকে নাস্তিক বলে পরিচয় দেয়।
২৩ শতাংশ চীনা ধর্মে বিশ্বাস করলেও, ধর্মীয় বিধান পালন
করেন না। মাত্র ৯ শতাংশ নিজেকে ধার্মিক বলে পরিচয় দেয়।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের হিসাবে, ২০৬০ সালে সারা বিশ্বে নাস্তিক এবং
ধর্মে অবিশ্বাসীদের সংখ্যা বেড়ে ১২০ কোটিতে দাঁড়াবে।
তবে আশার কথা ধর্মে বিশ্বাসীদের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি হারে বাড়বে।
৩| ১২ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মব্যবসায়ী হওয়া যত সোজা, ধর্মকে ধারণ করে ধার্মিক হওয়া ততোটাই কঠিন।
১২ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৪৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
তর্ক করে জেতা গেলেও
মনের শান্তি পাওয়া দূরহ।
মুর্খের সাথে তর্ক করলে -
তাতে হবেই সর্বনাশ ।
যুক্তি নাহি মানবে সে-তো -
গাঁয়ের জোরেই প্রকাশ ।।
৪| ১৩ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:০০
রাজীব নুর বলেছেন: আজ জুম্মার নামাজটা পড়া হয় আমার।
১৩ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৩১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এর পর থেকে প্রতি শুক্র্ববার জুম্মর নামাজ পড়ার
চেষ্টা করবেন। জুম্মার নামাজ গরীবদের হজ্বের মতো।
৫| ১৩ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৪০
ছদ্মবেশী ভূত বলেছেন: বাংলায় সব ধর্ম সম্পর্কে নিরপেক্ষ তথ্যের কোন ওয়েবসাইট খুঁজে পাই না। তাই, আমি ধর্মবিষয়ক তথ্য নামে একটি ব্লগ লিখছি। সেখানে বিভিন্ন ধর্ম, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, নাস্তিকতা এগুলো নিয়ে নিরপেক্ষ তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছি। আপনার পরামর্শ পেলে কৃতার্থ হবো। এখানে যা লিখতে চেয়েছিলাম আপনি অনেক তথ্য দিয়ে তা লিখেছেন, আমি আর লিখছি না। আপনাকে ধন্যবাদ।
১৩ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ ভুত ভাই
উভয় পর্বে আপনার মন্তব্য পেয়ে খুশী হলাম।
আপনার ধর্মবিয়ক তথ্য নামে লেখা ব্লগটি বেশ
হৃদ্ধ। চমৎকার সব তথ্য সংযোজন করে জ্ঞানপিপাসুদের
কৌতুহল মিটিেযেছেন। আশা করি পাঠক তার জানার আগ্রহ
মিটিয়ে নিতে পারবেন। শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: বেশির ভাগ ধার্মিকেরা ধর্ম বিশ্বাস করে বেহেশতে যাওয়ার জন্য। বেহেশতে যদি হুর না পাওয়া যেত তাহলে অনেকেই বেহেশতে যাওয়ার জন্য রাজী হতো না।