নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
ইউরি আলেক্সেইভিচ্ গ্যাগারিন একজন সোভিয়েত বৈমানিক এবং নভোচারী।তিনি সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি মহাকাশ ভ্রমণ করেন। গ্যাগারিন পেশায় ছিলেন ফাউন্ড্রি ইঞ্জিনিয়ার। যুদ্ধবিমানের চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। মহাকাশযাত্রার জন্য তাঁকে নির্বাচন করা হয়৷তিনি ১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল, ভস্টক নভোযানে করেপৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করেন। গ্যাগারিন এর ফলে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। ভূপৃষ্ঠে ফেরার পর স্বভাবতই গ্যাগারিন একজন সেলিব্রিটি হয়ে ওঠেন ও সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচির দূত হিসেবে সারা বিশ্বে যাত্রা করেন এবং দেশে বিদেশে বহু পুরস্কার এবং পদক লাভ করেন। শীতল যুদ্ধ চলা সত্ত্বেও গ্যাগারিন পূর্ব ও পশ্চিমে সমান খ্যাতি ও স্বীকৃতি পেয়েছেন। ৫ ফুট ২ ইঞ্চির শারীরিক কাঠামোর পাশাপাশি গ্যাগারিনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল তার মুখের হাসি। সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচির শুরুর দিকের অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী সারগেই করলেভ পরবর্তীকালে বলেন যে, গ্যাগারিন এমন এক হাসির অধিকারী ছিলেন "যা শীতল যুদ্ধকে হালকা করে দিয়েছিল"। অপরদিকে তাঁর সাফল্য মার্কিনিদের মহাকাশ কর্মসূচি ত্বরান্বিত করার প্রেরণা জুগিয়েছে। ভস্টক-১ তার একমাত্র মহাকাশ যাত্রা হলেও, তিনি সুয়োজ ১ মিশনের ব্যাকআপ হিসেবে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। গ্যাগারিন পরবর্তীতে মস্কোর বাইরে অবস্থিত মহাকাশচারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি ট্রেইনিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, পরে যা তার নিজের নামানুসারে নামকরণ করা হয়।পেশাগতভাবে তাঁর ভবিষ্যৎ নভোচারীদের প্রশিক্ষণ দেবার কথা ছিল, কিন্তু গ্যাগারিন যুদ্ধবিমানের বৈমানিক হিসেবে তাঁর প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করতে চেয়েছিলেন৷গ্যাগারিন শিশুকাল থেকে অর্থডক্স চার্চের বাপ্টিস ছিলেন। জানা যায় গ্যাগারিন বলেছিলেন: "যে ব্যক্তি পৃথিবীতে ইশ্বরের দেখা পায়নি, সে কখনই মহাকাশে তার দেখা পাবে না। কিন্তু মহাকাশ যাত্রার সাত বছর পরে, ১৯৬৮ সালের ২৭শে মার্চ তারিখে একটি মহড়া চলার সময় তাঁর মিগ-১৫ জঙ্গিজেট ভূপাতিত হওয়ায় প্রাণ হারান গ্যাগারিন৷ ট্রেনিং ফ্লাইটে সম্ভবত কোনো ঝুঁকিপূর্ণ মহড়া নেবার সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে গ্যাগারিন প্রাণ হারান। আজ মহাশূন্যে প্রথম মানব নভোচারী ইউরি গ্যাগারিনের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৪ সালের আজকের দিনে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্লুশিনোতে জন্মগ্রহণ করেন। নভোচারী ইউরি গ্যাগারিনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
গ্যাগারিন ১৯৩৪ সালের ৯ই মার্চ জাটস্কের কাছে ক্লুসিনো গ্রামে (বর্তমানে রাশিয়ার মোলেনস্ক ওবলাস্ট) জন্মগ্রহণ করেন। তার সম্মানে ১৯৬৮ সালে নিকটস্থ জাটস্ক শহরের নাম পরিবর্তন করে তার নামানুসারে রাখার হয়। তার পিতামাতা, অ্যালেক্সে ইয়ানোভিচ গ্যাগারিন এবং আন্না তিমোফিয়েভনা গ্যাগারিন একটি কৃষি খামারে কাজ করতেন। যদিও তার পিতামাতাকে "ছোট চাষী" বলা হয়েছে তবে জানা যায় তার মা ছিলেন খুবই উৎসুক পাঠক এবং তার বাবা ছিলেন একজন দক্ষ সূত্রধর। ইউরি তাদের চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন, তার বাবা মা যখন কাজ করতেন তখন তার বড় বোন তাকে লালন পালন করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষের মত, গ্যাগারিন পরিবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎজি দখলদারিত্বের ভুক্তোভোগী। এক জার্মান অফিসার তাদের বাড়ি দখল করে নিলে, পুরো পরিবার এক বছর নয় মাস একটি মাটির ঘরে বসবাস করেন। ১৯৪৩ সালে তার দুই সহোদরকে নাৎজি জার্মানরা দাস হিসেবে ধরে নিয়ে যায়, তারা যুদ্ধের পরে ফিরে আসেন। ১৯৪৬ সালে পুরো পরিবার জাটস্কে চলে আসেন। অল্প বয়স থেকেই গ্যাগারিনের মহাকাশ ও গ্রহ সম্পর্কে প্রবল আগ্রহ ছিল। কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ‘এরোক্লাবে’ যোগ দেন এবং সেখানে হালকা বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৫৫ সালে কারিগরি বিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে ওরেনবার্গে পাইলটস স্কুলে যুদ্ধবিমান চালনা প্রশিক্ষণে ভর্তি হন। গ্যাগারিন ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত বিমানবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট পদ লাভ করেন এবং ১৯৫৯ সালে তিনি সিনিয়র লেফটেন্যান্টে পদোন্নতি পান।
১৯৬০ সালে ২০ জন বৈমানিকের মধ্যে ইউরি গ্যাগারিনকে সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচির জন্য নির্বাচন করা হয়। ১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল তারিখে, ভস্টক ৩কেএ-৩ (ভস্টক ১) উৎক্ষেপন করা হয়, গ্যাগারিন পরিণত হন পৃথিবী প্রথম মানুষ যিনি প্রথম মহাকাশ ভ্রমণ করে এবং একই সাথে প্রথম মানুষ যিনি পৃথিবী থেকে ৩২৭ কিলোমিটার দূরে একাকী মহাকাশের ১০৮ মিনিটের কক্ষপথ ভ্রমণ করেন। মহাকাশ ভ্রমণের জন্য ২৭ বছর বয়সেই তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের নায়কে পরিণত হন। ১৯৬২ সালে, তিনি সুপ্রিম সোভিয়েত অফ দ্যা সোভিয়েত ইউনিয়নের ডেপুটি হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি মহাকাশচারি সুযোগ সুবিধার জন্য স্টার সিটিতে ফিরে আসেন, যেখানে তিনি পুনব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান নকশার উপরে সাত বছর কাজ করেন। তিনি ১৯৬২ সালের ১২ই জুন তারিখে সোভিয়েত বিমান বাহিনীর লেফটেনেন্ট কর্নেল (বা পদপলকোভনিক) পদে এবং ১৯৬৩ সালের ৬ই নভেম্বরে সোভিয়েত বিমান বাহিনীর কর্নেল (পলকোভনিক) র্যাংক লাভ করেন। সোভিয়েত অফিসারেরা তাদের নায়ককে দুর্ঘটনাজনিত কারণে হারানোর ভয়ে তাকে নতুন কোন ফ্লাইট থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। সুয়োজ ১ ফ্লাইটের জন্য ভ্লাদিমির কোমারভের ব্যাকআপ বৈমানিক হিসেবে গ্যাগারিনকে রাখা হয়েছিল। কোমারভের ফ্লাইট দুর্ঘটনার কারণে শেষ হলে, গ্যাগারিন তাতে মহাকাশ ভ্রমণের জন্য প্রশিক্ষণ বা অংশগ্রহণে নিষিদ্ধ হন। পরে গ্যাগারিন স্টার সিটি মহাকাশচারী প্রশিক্ষণ বেইজের ডেপুটি ট্রেইনিং ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন। একই সাথে তিনি ফাইটার পাইলট হিসেবে পুনরায় শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন।
১৯৬৮ সালের ২৭শে মার্চ চকালভস্কি এয়ার বেইজে একটি রুটিন প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের সময় কিরঝাচ শহরের কাছে,গ্যাগারিন এবং তার প্রশিক্ষক ভ্লাদিমির সেরিওগিন মিগ-১৫ইউটিআই বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। গ্যাগারিন এবং সেরিওগিনের মৃতদেহ রেড স্কয়ারে ওয়ালস অফ দা ক্রিমলিনে সমাহিত করা হয়। ইউরি গ্যাগারিনের মৃত্যুর ৫২ বছর কেটে গেছে। কিন্তু তার মৃত্যুর সঠিক কারণটি এখনো রহস্যই রয়ে গেছে। ক্রেমলিন গ্যাগারিনকে খুন করেছে, তিনি মদ্যপ অবস্থায় বিমান চালনা করছিলেন, এমনকি তাকে এলিয়েনরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল—এমন অনেক গুজব রয়েছে ইউরি গ্যাগারিনের মৃত্যুর কারণ নিয়ে। সোভিয়েত স্পেস ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে গবেষণা করা ইতিহাসবিদ গ্লাশকোর মতে, সোভিয়েত স্পেস সেক্টরের বিভিন্ন ত্রুটি ঢাকতেই ইউরি গ্যাগারিনের মৃত্যুর সঠিক কারণ প্রকাশ করা হয়নি। তবে রাশিয়ার বিখ্যাত নভোচারী আলেক্সেই লেওনভের থেকে গ্যাগারিনের মৃত্যুর একটি কারণ জানা যায়, যা অন্যান্য গুজবের চেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য। আলেক্সেই লেওনভ ছিলেন প্রথম স্পেস ওয়াক করা মানুষ। গ্যাগারিনের মৃত্যু নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিশনেরও সদস্য ছিলেন তিনি। তার ভাষ্য অনুযায়ী, গ্যাগারিন যখন আকাশে ছিলেন তখন তার ২০ মিটারেরও কাছ দিয়ে আরেকটি বিমান যায়। এ কারণে পথচ্যুত হয়ে ক্র্যাশ করেন গ্যাগারিন। লেওনভের মতে, অন্য প্লেনটির পাইলটকে বাঁচাতেই আসলে এই তথ্য প্রকাশ করেনি তদন্ত কমিশন। যদিও পাইলটের নাম তিনি প্রকাশ করেননি। তবে লেওনভ জানান, ওই পাইলট ছিলেন বিখ্যাত একজন ব্যক্তি। আজ মহাশূন্যে প্রথম মানব নভোচারী ইউরি গ্যাগারিনের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী। নভোচারী ইউরি গ্যাগারিনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
০৯ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আর একটু লম্বা কথায় শ্রদ্ধা জানানো যায়না ?
কিপ্টামি আর কত? সব সময় ২/১ কথায় শেষ !
২| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:২১
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: নভোচারী ইউরি গ্যাগারিনের ৮৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
০৯ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:২৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দেশ প্রেমিক বাঙালী আপনাকে ধন্যবাদ
মহাশূন্যে প্রথম মানব নভোচারী ইউরি গ্যাগারিনের
জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।