নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
মরমি সাধক ও সঙ্গীত রচয়িতা পাগলা কানাই। কানাই ছিলেন স্বভাবকবি।
জিন্দা দেহে মরার বসন, থাকতে কেন পর না,
মন তুমি মরার ভাব জান না/
মরার আগে না মরিলে, পরে আর কিছুই হবে না।
এমন শত শত গানের স্রষ্টা মরমী কবি পাগলা কানাইতিনি মুখে মুখে গান রচনা করতেন এবং নিজেই গেয়ে তা প্রচার করতেন। বাল্যকালে পিতৃহারা পাগলা কানাইয়ের টাকার অভাবে লেখাপড়া হয়নি। তিনি মানুষের বাড়ি রাখালের কাজ করেছেন। গরু চড়াতে গিয়ে ধুয়ো জারি গান গাইতেন। নিরক্ষর হলেও তার স্মৃতি, মেধা ছিল প্রখর। তিনি উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গান রচনা করে নিজ কণ্ঠে পরিবেশন করতেন। তার সঙ্গীতে যেমন ইসলাম ধর্মের তত্ত্বকে প্রচার করেছেন, তেমনি হিন্দু-পুরান রামায়ণ ও মহাভারত থেকেও নানা উপমার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। এ কারণেই তার গান সর্বজনীনতা লাভ করে। তার মধ্যে বাউল ও কবিয়াল এ দুয়ের যথার্থ মিলন ঘটেছে।প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক গান রচনা ও পরিবেশনায় তিনি পারদর্শী ছিলেন। শিষ্যদের সহযোগে তিনি যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী, বগুড়া প্রভৃতি অঞ্চলে গান পরিবেশন করতেন। তিনি কিছুকাল স্থানীয় নীলকুঠিতে খালাসির কাজ করেন। বিবাহিত জীবন যাপন করলেও তিনি ক্রমশ আধ্যাত্মিকতার প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে কালাচাঁদ বয়াতি, হাকিম শাহ, করিম বিশ্বাস, ইন্দু বিশ্বাস ও করমদ্দী ছিলেন প্রধান। কানাই মূলত দেহতত্ত্ববিষয়ক মরমি ও ভাবগান রচনা করেন। তাঁর কিছু পালাগান ও কবিগানও আছে। দেহতত্ত্ব, গুরুতত্ত্ব, যোগতত্ত্ব, সংসারের অনিত্যতা, জীবনরহস্য, নবীতত্ত্ব, কৃষ্ণবন্দনা ইত্যাদি তাঁর গানের বিষয়বস্ত্ত। ১৯৫৯ সালে ড. মযহারুল ইসলাম রচিত কবি পাগলা কানাই গ্রন্থে তাঁর ২৪০টি গান সঙ্কলিত হয়েছে। আজ আধ্যাত্নিক চিন্তা চেতনার সাধক-অসংখ্য দেহতত্ত্ব, জারি, বাউল, মারফতি, ধূয়া, মুর্শিদি গানের স্রষ্টা পাগলা কানাইয়ের ২১১তম জন্মবার্ষিকী। ১৮০৯ সালের আজকের দিনে তিনি যশোহরে জন্মগ্রহণ করেন। মরমি সাধক ও সঙ্গীত রচয়িতা পাগলা কানাইয়ের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
পাগলা কানাই ১৮০৯ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার, বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার, লেবুতলা গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর শিশুকাল কেটেছে বেড়বাড়ি বোনের বাড়িতে। কানাইয়ের প্রকৃত নাম কানাই শেখ, কিন্তু পাগলা কানাই নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। বাবার নাম কুড়ন শেখ, মায়ের নাম মোমেনা বিবি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে কানাই সবার বড়। ভাইয়ের নাম উজ্জ্বল শেখ, বোন স্বরনারী। পাঠশালায় পড়াকালে তাঁর বাবা কুড়ন শেখ মারা যান। পিতৃহারা হয়ে কানাই ভবঘুরে হয়ে যান। জীবনের তাগিদে মোমেনা বিবি কোনো উপায়ান্তর না দেখে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চেউনে ভাটপাড়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে কিছুদিনের মধ্যে তিনিও মারা যান। মা হারিয়ে কানাই ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ড উপজেলার বলরামপুরে ভরস মণ্ডলের বাড়িতে রাখালির কাজ নেন। বোন স্বরনারী দুই ভাইকে সেখান থেকে নিজের আশ্রয়ে শ্বশুরবাড়ি পার্শ্ববর্তী মাগুরা জেলায় বেড়াতে নিয়ে আসেন। বোনের শ্বশুরবাড়ির অবস্থা ভালো হওয়াতে কানাইয়ের গান চর্চার রাস্তা আরও সহজ হয়। কানাই বোনের বাড়ির গরুর পাল চরাতেন আর গান বাঁধতেন, তাতে সুর দিতেন। ছোটবেলা থেকেই পাগলাকানাই দুরন্ত প্রকৃতির, পাগলাটে স্বভাবের এবং আধ্যাত্ম প্রেমে উদ্বুদ্ধ ছিলেন। এ খেয়ালীপনার জন্যে শৈশবে স্নেহবশতঃ লোকে তাঁর নামের সাথে "পাগলা' অভিধাটি (উপনাম) যুক্ত করে। তাঁর কর্মকীর্তির সাথে এ পাগলা উপাধিটি অভিন্ন সূত্রে গ্রথিত হয়েছে।
দরদি কানাই মরমীবাদী চিন্তাকে নিয়ে গেছেন বিশ্বদরবারে। দেহতত্ত্ব, জারি, বাউল, মারফতি, ধুয়া, মুর্শিদী সহ প্রায় তিন সহস্রাধিক গানের স্রষ্টা তিনি। মূলত দেহতত্ত্ব নিয়ে মরমী ও ভাবগান রচনা করেছেন। তবুও সমাজ -সমকালের ভাবনা, বর্ষার রূপ, আশ্বিনের ঝড়, মানুষের কষ্ট, দরিদ্রতা, বানবাসীর কান্না সমাজপতিদের করাল থাবা আর সাম্প্রদায়িকতার ছোবল কোনোটাই বাদ পড়েনি পাগলা কানাইয়ের গানে।গেলো দিন/শুন মুসলমান মোমিন/পড় রাব্বুল আলামিন/দিন গেলে কি পাবি ওরে দিন/দিনের মধ্যে প্রধান হলো মোহাম্মদের দ্বীন। কানাই যেমন ইসলামের সত্যকথা গানে গানে বলেছেন, তেমনি হিন্দু পুরাণ, রামায়ণ ও মহাভারত থেকে উপমার সংমিশ্রণও ঘটিয়েছেন।কী মজার ঘর বেঁধেছে/হায়রে ঘর বাইন্ধাছে দুই খুঁটির উপর/পাগল কানাই বলে, ভাই সকলে যখন আসবে ঝড়/ছয় রিপু ছেড়ে যাবে/সারথী নাহি রবে/পড়ে রবে এইতো সাধের ঘড়। সংঘাতময় পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় মৌলবাদ রুখতে পারে বাউল মতবাদ। একশ্রেণির মানুষের মধ্যে বাউলদের সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েছে। অথচ শান্তিপ্রিয় বাউলেরা কোনো ধর্মকেই খাটো করে দেখেন না। তারা চান সব ধর্মের মানুষ ধর্ম ও মানবতাবাদ দুইয়ের চর্চা করুক। তৎকালীন সামাজিক প্রতিকূলতার প্রেক্ষাপটে মানুষের জন্য বাংলার ভাবদর্শনে মরমীবাদের উৎকর্ষ সাধনে পাগলা কানাই বলেনঃ
কত ফকির বৈষ্ণব আছে রে ভাই,সেই ঘরের ভিতর
পাগল কানাই বসে বাংলা ঘরে, সদায় করে ভয় আমার
/সে ঘরের সারথীর নাম, মন পবন তাই শুনিলাম/
ঘরের মধ্যে ষোলজনা করতেছে কারবার।
অজানা সেই ভয়কে জয় করা হলোনা পাগলা কানইয়ের।
১৮৮৯ সালের ১২ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন পাগলা কানাই। 'দুঃখের বিষয় চর দখলের ন্যায় কবি পাগলাকানাইকে দলীয় আবরনে আবদ্ধ করে- এখন পর্যন্ত স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদ গড়ে বড় বড় পদ আঁকড়ে থেকে শুধুই ব্যাক্তি ইমেজ বাড়ানো ছাড়া কবির স্মৃতিকে সংরক্ষনের কোনো প্রচেষ্টা সাধারনের নজরে আসেনি। কবি পাগলা কানাই এর সমাধিস্থল ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে সামান্য দূরে বেড়বাড়ী গ্রামে।আর বেড়বাড়ী গ্রাম থেকে জেলা শহর পর্যন্ত যে সড়ক সেই সড়কটি কবির সামানুসারে পরিচিতি পেয়েছে পাগলা কানাই সড়ক হিসাবে। আজ পাগলা কানাইয়ের ২১১তম জন্মবার্ষিকী। মরমি সাধক ও সঙ্গীত রচয়িতা পাগলা কানাইয়ের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
০৯ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:১৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
তাকে চিনে কি খুব মন খারাপ লাগছে !!
দুঃখ বোধ হচ্ছে !!
ভালো লাগলে ধন্যবাদ জানান।
২| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৫৫
জাহিদ হাসান বলেছেন: আমাদের দেশে কত গুণীজন যে জন্মেছেন তার হিসাব নেই।
০৯ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:১৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমরা প্রাতঃস্মরণীয় সেইসব
গুনী জনদের ভুলেযেতে বসেছি।
আমরা সত্যিই অকৃতজ্ঞ !!
৩| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৪৪
নীলসাধু বলেছেন: অতল শ্রদ্ধা।
ধন্যবাদ নুরু ভাই। ভালো থাকবেন।
০৯ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৪৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ নীল দা
আধ্যাত্নিক চিন্তা চেতনার সাধক
পাগলা কানাইয়ের জন্মবার্ষিকীতে
সাধককে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
শুভেচ্ছা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:১১
রাজীব নুর বলেছেন: পাগলা কানাই কে তো আজই প্রথম চিনলাম। হায় হায়---